সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – তাফসিরুল কুরআন
সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – তাফসিরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন
সুরা ইমরান আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অনুচ্ছেদ-৪: সূরা আ –লি ইমরান
২৯৯৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে “যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘনের প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিতনা সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশে মুতাশাবিহাত-এর অনুসরণ করে” – [সূরা আলি ইমরান ৭] আয়াত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাহাদের দেখলে চিনে রাখবে। অধঃস্তন বর্ণনাকারী ইয়াযীদের বর্ণনায় আছে : তোমরা তাহাদের দেখলে চিনে রাখবে। তিনি দুই অথবা তিনবার এ কথা বলেছেন।
সহীহ : বোখারি, মুসলিম। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এ আয়াত বিষয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হলঃ “তিনিই তোমাদের উপর এ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যার কিছু আয়াত মুহকাম, এগুলো কিতাবের মূল এবং অন্যগুলো মুতাশাবিহাত। যাদের মনে কুটিলতা আছে, তারাই ফিতনা সৃষ্টি এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে …. শুধু বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাই শিক্ষা গ্রহণ করে” – [সূরা আলি ইমরান ৭]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কুরআনের মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের অনুসারীদের দেখলে অনুধাবন করে নিবে যে, আল্লাহ তাআলা এদেরই নামোল্লেখ করিয়াছেন। কাজেই তোমরা তাহাদের পরিহার করিবে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৭৪], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি আইয়ূব [রঃ]এর বরাতে ইবনি আবু মুলাইকাহ সূত্রেও আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি ইবনি আবী মুলাইকাহ হইতে আয়িশাহ [রাদি.] সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তারা তাতে “আল –কাসিম ইবনি মুহাম্মদ হইতে এ কথাটি উল্লেখ করেননি । ইয়াযীদ ইবনি ইবরাহীমই এ হাদীসে “আল –কাসিম ইবনি মুহাম্মদ”-এর নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি আবী মুলাইকাহ হলেন আবদুল্লাহ ইবনি উবাইদুল্লাহ ইবনি আবী মুলাইকাহ। তিনি আয়িশাহ [রাদি.] এর নিকট হইতেও হাদীস শুনেছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নাবীগণের মধ্য হইতে প্রত্যেক নাবীরই কিছু সংখ্যক বন্ধু থাকেন। আমার বন্ধু হচ্ছেন আমার বাবা ও আমার প্রতিপালকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু {ইবরাহীম [আঃ]}। তারপর তিনি পাঠ করিলেন : “মানুষের মধ্যে তারাই ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতর যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নাবী ও যারা ঈমান এনেছে তারা। আর আল্লাহ তাআলা মুমিনদের অভিভাবক” – [সূরা আল –ইমরান ৬৮]।
সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৫৭৬৯]। মাহমূদ-আবু নুআইম হইতে, তিনি সুফইয়ান হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবুয যুহা হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতে মাসরূক্বের উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেন, এটি আবুয যুহা-মাসরূক্ব সূত্রে বর্ণিত হাদীসের চাইতে অনেক বেশি সহীহ। আবুয যুহার নাম মুসলিম ইবনি সুবাইহ। আবু কূরাইব-ওয়াকী হইতে, তিনি সুফইয়ান হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবুয যুহা হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে আবু নুআইমের হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এ সূত্রেও মাসরূক্বের উল্লেখ নেই। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯৬. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের মাল-সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা শপথ করিবে, সে আল্লাহ তাআলার সাথে এরূপ অবস্থায় মিলিত হইবে যে, তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট। আশআস ইবনি কাইস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! এ হাদীস আমার সাথে সংশ্লিষ্ট। আমার ও এক ইয়াহূদীর এক খন্ড শরীকানা জমি ছিল। সে আমার মালিকানা অস্বীকার করে বসে। আমি তাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হাযির করলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তোমার কি কোন সাক্ষী প্রমাণ আছে? আমি বললাম, না। তিনি ইয়াহূদীকে বললেনঃ তুমি শপথ কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে এভাবে [মিথ্যা] শপথ করে তো আমার মাল নিয়ে যাবে। তখন বারকাতময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “যারা আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে আখিরাতে তাহাদের জন্যে কোন অংশ নেই। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা না তাহাদের সাথে কথা বলবেন, না তাহাদের প্রতি তাকাবেন এবং না তাহাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। তাহাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি” – [সূরা আ-লি ইমরান ৭৭]।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [২৩২৩], বোখারি [৪৫৫০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “তোমরা যা ভালোবাস তা হইতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্যলাভ করিবে না” – [সূরা আ-লি ইমরান ৯২] অথবা “কে সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করিবে? তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ২৪৫] আয়াত অবতীর্ণ হলে আবু তালহা [রাদি.], যার একটি ফলের বাগান ছিল, বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাগানটি আল্লাহ তাআলার পথে দান করে দিলাম। আমি গোপনে এটি দান করিতে পারলে এর প্রকাশ্য ঘোষণা দিতাম না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তা বন্টন করে দাও।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [১৪৮২], বোখারি [৪৫৫৪], মুসলিম।.আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাদীসটি মালিক ইবনি আনাস [রঃ]ইসহাক্ব ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আবী তালহা হইতে, তিনি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ এক লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহ্র রাসূল! [উত্তম] হাজ্জী কে? তিনি বলেনঃ যার মাথার চুল অগোছাল ও জামা কাপড় ধুলি-মলিন হয়েছে। অপর ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! উত্তম হাজ্জ কি? তিনি বললেনঃ উচ্চস্বরে [তালবিয়া] পাঠ ও রক্ত প্রবাহিত [কুরবানী] করা। অপর ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! সাবীল [রাস্তা] বলিতে কি বুঝায়? তিনি বললেনঃ পাথেয় ও যানবাহন।
অত্যন্ত দুর্বল, “আল-আজ্জু ওয়াস্সাজ্জু” “উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ ও রক্ত প্রবাহিত করা” এই অংশটুকু সহীহ। ইবনি মাজাহ [২৮৯৬], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি আমরা শুধু ইবরাহীম ইবনি ইয়াযীদ আল-খূযী আল-মক্কীর সূত্রে ইবনি উমার হইতে জেনেছি। বিশেষজ্ঞ আলিমগণের কেউ কেউ ইবরাহীম ইবনি ইয়াযীদের স্মৃতিশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
২৯৯৯. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্বক্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “আসো, আমরা ডাকি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে, আমাদেরর নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে ….” – [সূরা আ-লি ইমরান ৬১] আয়াত অবতীর্ণ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী, ফাতিমা ও হাসান-হুসাইন [রাদি.] কে ডাকলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিজন।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০০. আবু গালিব [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু উমামা [রাদি.] দামিশকের সিঁড়ির উপর [খারিজীদের] কতগুলো মুন্ড পড়ে থাকতে দেখলেন। আবু উমামা [রাদি.] বলিলেন, এগুলো জাহান্নামের কুকুর এবং আসমানের চামড়ার [ছাদের] নিচে নিকৃষ্টতম নিহত এরা। আর এরা যাদেরকে হত্যা করেছে তারা উত্তম লোক। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করিলেন [অনুবাদ] : “সেদিন কিছু মুখ উজ্জল হইবে এবং কিছু মুখ কালো হইবে। যাদের মুখ কালো হইবে তাহাদের বলা হইবে, তোমরা ঈমান আনার পরও কি কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর”- [সূরা আ-লি ইমরান ১০৬]। আবু গালিব [রঃ]বলেন, আমি আবু উমামাহ [রাদি.] কে বললাম, আপনি কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এটা শুনেছেন? তিনি বলিলেন, আমি যদি এটা এক, দুই, তিন, চার, এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে তোমাদের নিকট তা বর্ণনা করতাম না।
হাসান সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৭৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আবু গালিবের নাম হাযাওওয়ার এবং আবু উমামা আল- বাহিলী [রাদি.] এর নাম সুদাই ইবনি আজলান, তিনি বাহিলা গোত্রের নেতা। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০০১. বাহয ইবনি হাকীম [রঃ]পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে” – [সূরা আল- ইমরান ১১০] আয়াত প্রসঙ্গে বলিতে শুনেছেন : অবশ্যই তোমরাই দুনিয়াতে সত্তর [৭০] সংখ্যা পূর্ণকারী দল। তোমরাই আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বোত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন।
হাসান : ইবনি মাজাহ [৪২৮৭]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি একাধিক বর্ণনাকারী বাহ্য ইবনি হাকীম [রঃ]হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তারা “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে” আয়াতের উল্লেখ করেননি। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০০২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উহূদের যুদ্ধের দিন নাবী [সাঃআঃ] এর সামনের মাড়ির দাঁত ভেঙ্গে যায়। তাহাঁর চেহারা যখম হয়, এমনকি কপালে যখম হওয়ার কারণে মুখমন্ডলে রক্ত ঝড়ে পড়ে। তখন তিনি বললেনঃ কিভাবে ঐ জাতি সফলকাম হইবে, যারা তাহাদের নাবীর সাথে এহেন আচরণ করেছে, অথচ তিনি তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলার পথে আহবান করিয়াছেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “তিনি তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছু নেই। কারণ তারা যালিম” – [সূরা আ-লি ইমরান ১২৮]।
সহীহ : মুসলিম [৫/১৭৯], বোখারি মুআল্লাকরূপে [৭/৩৬৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[উহূদের দিন] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মুখমন্ডল আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তাহাঁর সামনের মাড়ির দাঁত ভেঙ্গে যায়। তাহাঁর কাঁধের উপর একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। ফলে তাহাঁর মুখমন্ডল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকলে তিনি তা মুছে ফেলছিলেন এবং বলছিলেন : সেই জাতি কিভাবে নাজাত পেতে পারে, যারা তাহাদের নাবীর সাথে এহেন নির্মম আচরণ করে, অথচ তিনি তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলার দিকে আহবান করছেন। তখনি বারকাতময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “তিনি তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছু নেই। কারণ তারা যালিম” – [সূরা আ-লি ইমরান ১২৮]।
সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। আমি আবদ ইবনি হুমাইদকে বলিতে শুনিয়াছি, এই হাদীস বর্ণনায় ইয়াযীদ ইবনি হারূন ভুলের শিকার হয়েছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০৪. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ]হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উহূদের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “হে আল্লাহ! আবু সুফইয়ানের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আল –হারিস ইবনি হিশামের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন”। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “তিনি তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছু নেই….” – [সূরা আ-লি ইমরান ১২৮]। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাহাদের তাওবাহ ক্ববূল করেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে উত্তম মুসলিম হন।
সহীহ : বোখারি [৪০৬৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। উমার ইবনি হামযা কর্তৃক সালিম [রঃ]হইতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসেবে এটিকে গারীব গণ্য করা হয়। যুহরী ও সালিম হইতে, তার পিতার সূত্রে এটি বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল [আল -বোখারি] এটি উমার ইবনি হামযাহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হিসেবে অবহিত নন। তিনি এটি যুহরী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হিসেবে অবহিত আছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, চারজন ব্যক্তিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদদুআ করছিলেন। এ সম্পর্কেই বারকাতময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “তিনি তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাহাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছু নেই। কারণ তারা যালিম” – [সূরা আ-লি ইমরান ১২৮]। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক্ব দান করেছিলেন।
হাসান সহীহ : বোখারি [৪০৬৯, ৪০৭০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। এটিকে নাফি [রঃ]কর্তৃক ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসেবে গারীব গণ্য করা হয়। এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনি আইয়ূবও ইবনি আজলানের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০০৬. আসমা ইবনিল হাকাম আল ফাযারী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি : আমি এমন লোক ছিলাম যে, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট কোন হাদীস শুনলে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় আমি তার দ্বারা প্রভূত উপকৃত হতাম। আর আমার নিকট তাহাঁর কোন সাহাবী হাদীস বর্ণনা করলে আমি তাকে শপথ করিতে বলতাম। আমার কথায় তিনি শপথ করলে, আমি তার সত্যতা স্বীকার করতাম। অতএব আবু বাকর [রাদি.] আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন। বলা বাহুল্য, আবু বাকর [রাদি.] সত্য কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি : কোন লোক যদি গুনাহ করার পর পবিত্রতা অর্জন করে নামায আদায় করে, তারপর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করে তবে তাকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত পড়েন [অনুবাদ] : “যাদের অবস্থা এমন যে, তারা কখনো অশ্লীল কর্ম করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে পরে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করে [তাহাদেরকে ক্ষমা করা হয়]। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কে গুনাহ মাফ করিতে পারে? আর তারা যা করে ফেলেছে জ্ঞাতসারে তার পুনরাবৃত্তি করে না”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৩৫]।
হাসান : ইবনি মাজাহ [১৩৯৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উসমান ইবনিল মুগীরাহ [রঃ]এর সূত্রে শুবাহ প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ মারফূরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। মিসআর ও সুফইয়ানও উসমান ইবনিল মুগীরার সূত্রে এটি রিওয়ায়াত করিয়াছেন, তবে মারফূ হিসেবে নয়। কিছু বর্ণনাকারী এই হাদীসটি মিসআর হইতে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন, আর কিছু বর্ণনাকারী মারফূ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। সুফইয়ান সাওরী তা উসমান ইবনিল মুগীরাহ হইতে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদীস ব্যতীত আসমা ইবনিল হাকাম কর্তৃক বর্ণিত আর কোন হাদীস আমাদের জানা নেই। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০০৭. আনাস [রাদি.] হইতে আবু তালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উহুদের দিন আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম, সকলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নিজ নিজ ঢালের নিচে ঢলে পড়েছেন। আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীর তাৎপর্য তাই : “দুঃখ-কষ্টের পর আবার আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তন্দ্রারূপে প্রশান্তি দান করিলেন”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৫৪]।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদ ইবনি হুমাইদ-রাওহ ইবনি উবাদাহ হইতে, তিনি হাম্মাদ ইবনি সালামাহ হইতে, তিনি হিশাম ইবনি উরওয়াহ হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবুয যুবাইর [রঃ]হইতেও উপরোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু তালহা [রাদি.] বলেন, উহূদের যুদ্ধের দিন যুদ্ধের কাতারে আমরা তন্দ্রাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তিনি বলেন, আমিও সেদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। ফলে বারবার আমার তরবারি আমার হাত হইতে পড়ে যাচ্ছিল আর আমি তা তুলে নিচ্ছিলাম। আবার পড়ে যাচ্ছিল আবার তুলে নিচ্ছিলাম। অপর দলটি ছিল মুনাফিক্বদের। তাহাদের নিজ জানের চিন্তা ব্যতীত আর কোন চিন্তাই ছিল না। এরা ছিল সবচেয়ে কাপুরুষ ও ভীরু এবং সত্যের সাহায্য ত্যাগকারী।
সহীহ : বোখারি [৪০৮৬, ৪৫৬২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০০৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“অন্যায়ভাবে কোন বস্তু আত্মসাৎ করা কোন নাবীর কাজ হইতে পারে না”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৬১] আয়াত বাদর যুদ্ধকালে হারিয়ে যাওয়া একটি লাল চাদর প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। কেউ কেউ বলল যে, হয়ত তা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গেই বারকাতময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন “খিয়ানাত [আত্মসাৎ] করা কোন নাবীর কাজ হইতে পারে না। আর যে ব্যক্তি খিয়ানাত করিবে, কিয়ামাতের দিন সে তার খিয়ানাতসহ হাযির হইবে। তারপর প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কৃতকর্মের পুরাপুরি প্রতিফল লাভ করিবে। কারো প্রতি যুলুম করা হইবে না”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৬১]।
সহীহ : সহীহাহ [২৭৮৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবদুস সালাম ইবনি হারব [রঃ]খুসাইফির সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। কেউ কেউ খুসাইফ হইতে, তিনি মিক্বসাম হইতে এই সূত্রে এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন, কিন্তু তাতে ইবনি আব্বাস [রাদি.]- এর উল্লেখ করেননি। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সাথে সাক্ষাৎ করে আমাকে বললেনঃ হে জাবির ! কি ব্যাপার, আমি তোমাকে ভগ্নহৃদয় দেখছি কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার আব্বা [উহূদের যুদ্ধে] শহীদ হয়েছেন এবং অসহায় পরিবার-পরিজন ও কর্জ রেখে গেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা কিভাবে তোমার আব্বার সাথে মিলিত হয়েছেন আমি কি তোমাকে সেই সুসংবাদ দিব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা কখনো কারো সাথে তাহাঁর পর্দার অন্তরাল ব্যতীত [] কথা বলেননি কিন্তু তিনি তোমার বাবাকে জীবন দান করে তার সাথে কথা বলেছেন। তাকে তিনি বললেনঃ তুমি আমার নিকট [যা ইচ্ছা] চাও, আমি তোমাকে তা দান করব। সে বলল, হে প্রভু! আপনি আমাকে জীবনদান করুন, যাতে আমি আবার আপনার রাহে নিহত হইতে পারি। বারকাতময় আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমার পক্ষ থেকে আগে হইতেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে আছে যে, তারা আবার [দুনিয়ায়] ফিরে যাবে না। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় : “যারা আল্লাহ তাআলার পথে নিহত হয়েছে, তোমরা তাহাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তারা রিযিকপ্রাপ্ত”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৬৯]।
হাসান : ইবনি মাজাহ [১৯০, ২৮০০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উপরোক্ত সনদসূত্রে হাসান গারীব। আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মদ ইবনি আক্বীল [রঃ]জাবির [রাদি.] এর সূত্রে এ হাদীসের অংশবিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন। এটিকে আমরা মূসা ইবনি ইবরাহীমের সূত্রে জেনেছি। আলী ইবনি আবদুল্লাহ আল মাদীনী সহ অপরাপর হাদীসবিদগণ মূসা ইবনি ইবরাহীমের সূত্রে একই রকম রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০১১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নিম্নোক্ত আয়াত বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হল [অনুবাদ] : “যারা আল্লাহ তাআলার পথে নিহত হয়েছে তোমরা তাহাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে রিযিকপ্রাপ্ত”- [সূরা আ-লি ইমরান ১৬৯]। তিনি বলিলেন, আমরাও অবশ্যি এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলাম। আমাদেরকে অবহিত করা হয় যে, জান্নাতের মধ্যে তাহাদের রূহগুলো সবুজ পাখির আকারে যথা ইচ্ছা ঘুরে বেড়ায়, আরশের সাথে ঝুলানো ঝারবাতিসমূহে [বসে] আরাম করে। একবার তোমার প্রভু তাহাদের প্রতি উকি দিয়ে প্রশ্ন করেন : তোমরা আরো কিছু চাও কি? তাহলে আমি তোমাদের আরো বাড়িয়ে দিব। তারা বলল, হে আমাদের প্রভু! আমরা এর চাইতে বেশি আর কি চাইব। আমরা জান্নাতের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আবার উঁকি দিয়ে বলেনঃ তোমাদের আরো কিছু চাওয়ার আছে কি, তাহলে আমি আরো বাড়িয়ে দিব। যখন তারা দেখলো যে, কিছু চাওয়া ব্যতীত তাহাদের রেহাই নেই তখন তারা বলল, আপনি আমাদের দেহে প্রাণ সঞ্চার করে দিন যাতে আমরা আবার দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারি এবং আবার আপনার পথে পুনরায় শহীদ হইতে পারি।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [২৮০১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে লোক তার সম্পদে যাকাত প্রদান করে না, আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামাতের দিন তার [মালকে তার] ঘাড়ে বিষধর অজগর সাপরূপে স্থাপন করবেন। তারপর তিনি এই কথার সত্যতা প্রমাণে আল্লাহ তাআলার কিতাবের এ আয়াত আমাদেরকে শুনান [অনুবাদ] : “তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিজ অনু্গ্রহে যা দান করিয়াছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন মনে না করে যে, এটা তাহাদের পক্ষে কল্যাণকর। না, এটা তাহাদের পক্ষে অকল্যাণকর। যাতে তারা কৃপণতা করে ক্বিয়ামাতের দিন তাই তাহাদের গলার বেড়ি হইবে। আসমান ও যমীনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা তা বিশেষভাবে অবহিত” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৮০]। বর্ণনাকারী কখনো বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সমর্থনে এ আয়াতাংশ পাঠ করেন [অনুবাদ] : “যাতে তারা কৃপণতা করে ক্বিয়ামাতের দিন তা তাহাদের গলায় বেড়ী হইবে”। তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে তার মুসলিম ভাইয়ের মাল আত্মসাৎ করে, সে আল্লাহ তাআলার সাথে এরূপ অবস্থায় মিলিত হইবে যে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট। এর সত্যতার সমর্থনে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলার কিতাবের এ আয়াত পাঠ করেন [অনুবাদ] : “যারা আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথসমূহকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাহাদের জন্য কোন অংশ নেই। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা না তাহাদের সাথে কথা বলবেন, না তাহাদের প্রতি তাকাবেন, আর না তাহাদেরকে পবিত্র করবেন। তাহাদের জন্য রয়েছে উৎপীড়ক শাস্তি” – [সূরা আ-লি ইমরান ৭৭]।
সহীহ : মুশকিলাতুল ফাকর [৬০], তালীকুর রাগীব [১/৬৮] হাদীসের ২য় অংশ বোখারি [৭৪৪৫], মুসলিম [১/৮৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। “শুজাআন আকরাআ” অর্থ সাপ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একটি চাবুক রাখার সমপরিমাণ জান্নাতের জায়গা সমগ্র পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছুর চাইতে উত্তম। তোমরা চাইলে এ আয়াত পাঠ করিতে পারো [অনুবাদ] : “[কিয়ামাতের দিন] যাকে আগুন হইতে দূরে রাখা হইবে এবং জান্নাতে দাখিল করানো হইবে সেই সফলকাম। বস্তুত পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৮৫]
হাসান : সহীহাহ [১৯৮৭], বোখারি।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০১৪. হুমাইদ ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ান ইবনিল হাকাম তার দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, হে আবু রাফি! ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর নিকট যাও এবং তাকে বল, যে লোক তার প্রাপ্তীর জন্য খুশী হয় এবং কোন কাজ না করেও তার জন্য প্রশংসা কুড়াতে চায় সে শাস্তিযোগ্য হলে তো আমরা সকলেই শাস্তিযোগ্য হব। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, এ আয়াতের সাথে তোমাদের কি সম্পর্ক, এ আয়াত তো কিতাবধারীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর ইবনি আব্বাস [রাদি.] তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ], “যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ তাআলা তাহাদের নিকট হইতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন : তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করিবে এবং তা গোপন করিবে না। এরপরও তারা তা অগ্রাহ্য করে এবং তুচ্ছ মূল্যে তা বিক্রয় করে। সুতরাং তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৮৭]। তিনি আরো তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ] : “তুমি কখনো এরূপ ধারণা করো না যে, যেসব লোক স্বয়ং যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং স্বয়ং যা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হইতে ভালোবাসে তারা শাস্তি হইতে মুক্তি পাবে, বরং তাহাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৮৮]। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের [আহলে কিতাব] নিকট কোন বিষয়ে জানতে চাইলে তারা তা গোপন করে তার বিপরীত তথ্য তাঁকে অবহিত করে চলে যায়। তারা তাকে এ ধারণা দেয় যে, তিনি যে বিষয়ে তাহাদের নিকট জানতে চেয়েছেন তারা তাই তাঁকে জানিয়েছেন। বিনিময়ে তারা তাহাঁর নিকট হইতে প্রশংসা কামনা করে এবং তাহাদের কিতাব হইতে তথ্য প্রদানের বিষয়টি ও তাহাদের নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জানতে চাওয়ার বিষয়টিতে সত্য গোপন করে তারা আনন্দ বোধ করে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৬৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ। সূরা আল ইমরান এর তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply