সূরা আল বাকারার তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন
সূরা আল বাকারার তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা বাকারা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৩ – সূরা আল বাকারার তাফসীর
২৯৫৫. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বত্র হইতে এক মুঠো মাটি নিয়ে আদম [আঃ]-কে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাই আদম-সন্তানরা মাটির বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন তাহাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের আবার কেউ বা এসবের মাঝামাঝি, কেউ বা নরম ও কোমল প্রকৃতির। আবার কেউ কঠোর প্রকৃতির, কেউ মন্দ স্বভাবের, আবার কেউ বা ভালো চরিত্রের।
সহীহ : মিশকাত [১০০], সহীহাহ [১৬৩০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৫৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার বাণী “তোমরা সিজদাবনত শিরে প্রবেশ করো”- [সূরা বাকারাহ ৫৮]-এর ব্যাখ্যায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তারা [বানী ইসরাঈল] তাহাদের নিতম্বে ভর করে দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিল। একই সনদে “কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তারা তাহাদের যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল- [সূরা আল-বাক্বারাহ ৫৯] এ আয়াত প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তারা [হিত্তাতুন-এর পরিবর্তে] বলেছিল, “হাব্বাতুন ফী শারাতিন” যবের মধ্যকার শস্যদানা”।
সহীহ : বোখারি [৪৪৭৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৫৭. আব্দুল্লাহ ইবনি আমির ইবনি রাবীআহ [রঃ]হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক অন্ধকার রাতে আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে সফরে ছিলাম। আমরা ধারণা করিতে পারছিলাম না ক্বিবলাহ কোন দিকে হইবে। কাজেই আমাদের সকলেই নিজ নিজ ধারণা মোতাবিক ক্বিবলার দিক নির্ধারণ করে নামায আদায় করে। আমরা বিষয়টি সকাল বেলা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট উত্থাপন করলাম। তখন নাযিল হয়ঃ “তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকই আল্লাহ তাআলার চেহারা” – [সূরা বাক্বারাহঃ ১১৫]।
হাসান : ইবনি মাজাহ [১০২০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা আশআস – আসসাম্মান-আবুর রাবী বর্ণনাকারী কর্তৃক আসিম ইবনি উবাইদুল্লাহার হাদীস ব্যতীত আর কারো নিকট হইতে এটিকে অবহিত নই। আর আশআসকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৯৫৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মক্কা হইতে মাদীনায় ফেরার পথে তাহাঁর সাওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে অভিমুখে অগ্রসর হত তিনি সেদিকে ফিরেই নফল নামায আদায় করিতেন। তারপর ইবনি উমার [রাদি.] এই আয়াত পাঠ করেনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ তাআলারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকই আল্লাহ তাআলার চেহারা” – [সূরা আল – বাক্বারাহ ১১৫]। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, এ প্রসঙ্গেই উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।
সহীহ : সিফাতুস সালাত, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ক্বাতাদাহ [রঃ]হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেন যে, এর নির্দেশ রহিত [মানসূখ] হয়ে গেছে। রহিতকারী [নাসিখ] আয়াতটি হল : “অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও” – [সূরা আল – বাক্বারাহ ১৪৪] । শাতরাল মাসজিদিল হারাম” অর্থাৎ “কাবার দিকে”। তার এই মত নিম্নোক্ত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে : মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল মালিক ইবনি আবুশ শাওয়ারিব-ইয়াযীদ ইবনি যুরাইহ হইতে, তিনি সাঈদ হইতে, তিনি ক্বাতাদাহ [রঃ]হইতে। মুজাহিদ [রঃ]হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি “ফাছাম্মা ওয়াজহুল্লাহ” অর্থ করিয়াছেন, “ফাসাম্মা ক্বিবলাতুল্লাহ” [সেদিকেই আল্লাহ তাআলার ক্বিবলাহ রয়েছে]। তার এই মত নিম্নোক্ত সূত্রে বর্ণিতঃ আবু কুরাইব মুহাম্মদ ইবনিল আলা-ওয়াকী হইতে, তিনি নাযর ইবনি আরাবী হইতে, তিনি মুজাহিদ [রঃ]হইতে।সানাদ সহীহ, মাকতূ । সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৫৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যদি মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে নামায আদায় করতাম [তাহলে ভালো হত]। এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয় : “তোমরা মাক্বামে ইবরাহীমকে [ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে] নামাযের জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর”- [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ১২৫]
সহীহ : বোখারি [৪৪৮৩], মুসলিম।.আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মাক্বামে ইবরাহীমকে যদি নামাযের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করিতেন! এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয়ঃ “ওয়াত্তাখিযূ মিম মাক্বামি ইবরাহীমা মুসাল্লা”। তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাযের জায়গা বানিয়ে নাও।
সহীহ : বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬১. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলার বাণী “এভাবে আমি তোমাদেরকে এক ন্যায়নিষ্ঠ জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি” [সূরা বাক্বারাহঃ ১৪৩] প্রসঙ্গে বলেছেনঃ ওয়াসাতান অর্থ আদলান [ন্যায়নিষ্ঠ]।
সহীহ : বোখারি [৪৪৮৭], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [ক্বিয়ামাত দিবসে] নূহ [আঃ]-কে ডেকে বলা হইবে, তুমি কি [তোমার সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলার বাণী] পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ। তারপর তাহাঁর সম্প্রদায়কে ডেকে প্রশ্ন করা হইবে : তিনি কি তোমাদের নিকট [আল্লাহ তাআলার বাণী] পৌছিয়েছিলেন? তিনি কি তোমাদের নিকট [আল্লাহ তাআলার বাণী] পৌছিয়েছিলেন? তারা বলবে, আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী আসেনি। আমাদের নিকট কেউই আসেনি। তখন তাঁকে বলা হইবে, আপনার সাক্ষী কারা? তিনি বলবেন : মুহাম্মদ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর উম্মাতগণ। তারপর তোমাদেরকে ডেকে আনা হইবে। তোমরা সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই তিনি [দাওয়াত] পৌছে দিয়েছিলেন। তার প্রামাণ হচ্ছে বারাকাতময় আল্লাহ তাআলার বাণী : “এভাবে আমি তোমাদেরকে এক ন্যায়নিষ্ঠ জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসূল তোমাদের সাক্ষীস্বরূপ হইবে” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ১৪৩] ।
সহীহ : বোখারি [৪৪৮৭] । মুহাম্মদ ইবনি বাশশার-জাফার ইবনি আওন হইতে, তিনি আমাশ [রঃ]হইতে এই সূত্রেও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬২. আল –বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনায় পদার্পণ করে ষোল বা সতের মাস পর্যন্ত বাইতুল মাকদিসের দিকে [ফিরে] নামায আদায় করেন। কিন্তু রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবার দিকে [মুখ করে] নামায আদায় করার আগ্রহ পোষণ করিতেন। এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ্য করেছি। কাজেই আমি তোমাকে অবশ্যই এমন ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও” – [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ১৪৫]। ফলে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হলো। আর তিনি এটাই পছন্দ করিতেন। এক লোক তাহাঁর সাথে আসরের নামায আদায় করে একদল আনসারীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তখন বাইতুল মাকদিসের দিকে [মুখ করে] আসরের নামাযের রুকূতে ছিল। তিনি বলিলেন, এই লোকটি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে নামায আদায় করে এসেছে। আর প্রকৃত অবস্থা এই যে, [নামাযে] কাবার দিকে মুখ ফিরানো হয়েছে। তারাও তৎক্ষণাৎ রুকূ অবস্থায়ই [কাবার দিকে] ঘুরে যান।
সহীহ : সিফাতুস সালাত, বোখারি [৪৪৯২], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সুফইয়ান সাওরীও এটি আবু ইসহাক হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন যে, তারা [কুবা মাসজিদে] ফজরের নামাযে রুকূ অবস্থায় ছিলেন।
সহীহঃ প্রাগুক্ত, ইরওয়াহ [২৯০], বোখারি [৪৪৮৮], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আমর ইবনি আওফ আল –মুযানী, ইবনি উমার, উমারাহ ইবনি আওস ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] এর বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হলে সাহাবীগণ তাঁকে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের যেসব ভাই বাইতুল মাকদিসের দিকে [ফিরে] নামায আদায় করা অবস্থায় মারা গেছেন তাহাদের কি হইবে? আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা তোমাদের ঈমানকে বিনষ্ট করেন না”- [সূরা আল –বাক্বারাহ : ১৪৩]
সহীহ লিগাইরিহী : তালীকাতু হাসসান [১৭১৪], বোখারি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৫. উরওয়া [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাদি.]-কে বললাম, যে ব্যক্তি সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ [সাঈ] করেনি আমি তাতে সমস্যা মনে করি না। আমি নিজেও এ দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ না করিতে কোন পরোয়া করি না। আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন, হে আমার বোন পুত্র! তুমি যা বললে তা খুবই অন্যায় কথা। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে এই দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ করিয়াছেন, মুসলিমরাও এর তাওয়াফ করিয়াছেন। তবে মুশাল্লাল নামক স্থানে স্থাপিত মানাত নামক প্রতিমার নামে যেসব কাফির ইহরাম বাঁধতো তারা সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ করত না। অতঃপর বারকাতময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “যে লোক বাইতুল্লাহর হাজ্জ করে বা উমরা করে এই পাহাড়দ্বয়ের মাঝে তাওয়াফ করায় তার কোন সমস্যা নেই”- [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ১৫৮]। তোমাদের কথাই যদি সঠিক হত, তাহলে এভাবে বলা হতঃ “ফালা জুনাহা আলাইহি আল –লা ইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা” [এই পাহাড়দ্বয়ের মাঝে তাওয়াফ না করাতে কোন সমস্যা নেই]। যুহরী [রঃ]বলেন, আমি আবু বাকর ইবনি আবদুর রাহমান ইবনিল হারিস ইবনি হিশামের নিকট এটি বর্ণনা করলে তিনি খুবই আনন্দিত হন এবং বলেন, এটা তো হল ইল্মের [জ্ঞানের] কথা! আমি বহু আলিমকে বলিতে শুনিয়াছি, যেসব আরববাসী সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ করে না তারা বলে, এ দুটি পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ করা জাহিলী যুগের প্রথা। অপর দিকে কিছু সংখ্যক আনসারী বলত, আমাদেরকে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করার আদেশ করা হয়েছে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফের আদেশ দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেনঃ “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ১৫৮]। আবু বাকর ইবনি আব্দুর রাহমান বলেন, আমার মতে উপরোক্ত উভয় দলের প্রসঙ্গেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [২৯৮৬], বোখারি [৪৪৯৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৬. আসিম আল –আওয়াল [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে সাফা ও মারওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, এ দুটি [পাহাড়] ছিল জাহিলিয়াতের নিদর্শন। ইসলামের আবির্ভাব হলে আমরা এতদুভয়ের মাঝে সাঈ করা হইতে বিরত থাকলাম। তখন বারকাতময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “সাফা ও মারওয়া হল আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত। অতএব বাইতুল্লাহর হাজ্জকারী বা উমরাকারী ব্যক্তির জন্য এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করাতে কোন সমস্যা নেই”- [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ১৫৮]। আনাস [রাদি.] বলেন, এটা হল নফল ইবাদাত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করলে আল্লাহ তাআলা তো গুণগ্রাহী ও সর্বজ্ঞ”- [সূরা আল –বাক্বারাহ : ১৫৮]।
সহীহ : বোখারি [৪৪৯৬], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কায় এলেন, তখন সাতবার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিলেন। তখন আমি তাঁকে এ আয়াত পাঠ করিতে শুনলাম [অনুবাদ] : “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ কর”- [সূরা আল –বাক্বারাহ : ১২৫]। তারপর তিনি মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে নামায আদায় করিলেন, তারপর হাজরে আসওয়াদের নিকট এসে তাতে চুমু দিলেন, তারপর বললেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রথমে যা উল্লেখ করিয়াছেন আমরা তা হইতে শুরু করব। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন : “সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত”- [সূরা আল –বাক্বারাহ : ১৫৮]।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [২৯৬০], বোখারি ও মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৮. আল –বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এর সাহাবীগণের এ নিয়ম ছিল যে, কোন রোযাদার ইফতারের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়লে তিনি সেই রাত ও পরবর্তী দিনে কিছু খেতেন না, এভাবে পরবর্তী সন্ধ্যা পর্যন্ত অভুক্ত থাকতেন। একবার ক্বাইস ইবনি সিরমাহ আল –আনসারী [রাদি.] রোযা অবস্থায় ছিলেন। ইফতারের সময় উপস্থিত হলে তিনি তার স্ত্রীর নিকট এসে বলিলেন, কোন খাবার আছে কি? তাহাঁর স্ত্রী বলিলেন, না। তবে আমি আপনার জন্য কিছু খুঁজে আনতে যাচ্ছি। কাইস [রাদি.] ঐ দিন কায়িক পরিশ্রম করেছিলেন। তাই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তার স্ত্রী এসে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিতে পেয়ে বলিলেন, আপনার জন্য আফসোস! পরবর্তী দিন দুপুর হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ ঘটনা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট বর্ণনা করা হলে তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ]: “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হল” [সূরাঃ আল –বাক্বারাহঃ ১৮৭]। এতে তারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। আয়াতের শেষাংশ নিম্নরূপ [অনুবাদ] : “রাতের কালো রেখা হইতে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর” – [সূরা আল –বাক্বারাহ : ১৮৭]
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৪], বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৬৯. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলার বাণী “তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সারা দিব”- [সূরা মুমিন ৬০] প্রসঙ্গে বলেছেনঃ দুআও একটি ইবাদাত। তারপর তিনি পাঠ করিলেন : “তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারবশে আমার ইবাদাতে বিমুখ, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে” [সূরা মুমিনঃ ৬০]।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [৩৮২৮]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭০. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হাত্তা ইয়াতাবাইয়্যানা লাকুমুল খাইতুল-আবইয়াযু মিনাল-খাইতিল আসওয়াদি মিনাল-ফাজরি” – [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৭] আয়াত অবতীর্ণ হলে নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ এখানে খাইতুল আবইয়াযি মিনাল খাইতিল আসওয়াদি বলিতে “রাতের অন্ধকার ও দিনের আলো” বুঝানো হয়েছে।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৪], বোখারি [৪৫১০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আহমাদ ইবনি মানী-হুশাইম হইতে, তিনি মুজালিদ হইতে, তিনি শাবী হইতে, তিনি আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭১. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রোযা বিষয়ে [সাহরীর সময়সীমা প্রসঙ্গে] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ কালো সুতা হইতে সাদা সুতা যে পর্যন্ত না স্পষ্ট প্রতিভাত হয়”- [সূরা আল –বাক্বারাহ ১৮৭]। আদী [রাদি.] বলেন, আমি সাদা ও কালো দুটি রশি নিলাম, [শেষ রাতে] আমি উভয়টি দেখিতে লাগলাম [এবং সাদা-কালোর পার্থক্য নিরূপণের চেষ্টা করলাম]। [এ ঘটনা শুনে] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে কিছু বলেন। কি বলেছিলেন তা বর্ণনাকারী সুফইয়ান মনে রাখতে পারেননি। এরপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এর অর্থ হল রাত ও দিন।
সহীহ : প্রাগুক্ত, বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭২. আসলাম আবু ইমরান আত –তুজীবী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রোম সাম্রাজ্যের কোন এক শহরে অবস্থানরত ছিলাম। তখন আমাদেরকে মুকাবিলা করার উদ্দেশে রোমের এক বিশাল বাহিনী যাত্রা শুরু করিল। মুসলিমদের পক্ষ হইতেও একই রকম বা আরো বিশাল একটি বাহিনী যাত্রা শুরু করিল। তখন মিসরবাসীর শাসক ছিলেন উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] এবং বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন ফাযালাহ ইবনি উবাইদ [রাদি.]। একজন মুসলিম সেনা রোমীয়দের উপর প্রচন্ড আক্রমণ করেন। এমনকি বুহ্য ভেদ করে তিনি তাহাদের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তখন মুসলিমগণ সশব্দে চিৎকার করেন এবং বলেন, সুবহানাল্লাহ! লোকটি নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। তখন আবু আইয়ূব আল –আনসারী [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে জনমন্ডলী! তোমরা এ আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা করছ? অথচ এ আয়াতটি আমাদের তথা আনসারদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যখন ইসলামকে বিজয় দান করিলেন এবং ইসলামের বিপুল সংখ্যক সাহায্যকারী হয়ে গেল, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে না শুনিয়ে চুপে চুপে বলল, আমাদের মাল-সম্পদ তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইসলামকে এখন শক্তিশালী করিয়াছেন। তার সাহায্যকারীর সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যদি আমরা আমাদের মাল-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অবস্থান করিতে এবং বিনষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পদের পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করতাম [তাহলে ভাল হতো]। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা আমাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ]-এর প্রতি নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন : “তোমরা আল্লাহ তাআলার পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না” [সূরা আল –বাক্বারাহ ১৯৫]। কাজেই মাল-সম্পদের তত্ত্বাবধান ও তার পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করা এবং জিহাদ ত্যাগ করাই হচ্ছে ধ্বংস। অতএব আবু আইয়ূব আল –আনসারী [রাদি.] বাড়িঘর ছেড়ে সব সময় আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদে ব্যাপৃত থাকতেন। অবশেষে তিনি রোমে [তৎকালীন এশিয়া মাইনর, বর্তমানে তুরস্ক] ইন্তিকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফর করা হয়।
সহীহ : সহীহাহ [১৩]। আবী ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৩. কাব ইবনি উজরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ তাহাঁর শপথ! আমার সম্পর্কেই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাতে আমার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে : “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয়, বা মাথায় ক্লেশ থাকে, তবে রোযা অথবা দান-খাইরাত অথবা কুরবানীর দ্বারা তারা ফিদিয়া দিবে” [সূরা আল –বাক্বারাহ ১৯৬]। কাব ইবনি উজরাহ [রাদি.] বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে হুদাইবিয়াতে ইহ্রাম অবস্থায় ছিলাম। মুশরিকরা আমাদেরকে [হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় যেতে] বাধা দিল। আমার মাথায় বাবরী চুল ছিল। উকুন আমার মুখমন্ডলে পতিত হচ্ছিল। নাবী [সাঃআঃ] আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ তোমার মাথার কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তোমার মাথার চুল মুন্ডন করে ফেল। এ প্রসঙ্গেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। মুজাহিদ [রঃ]বলেন, এক্ষেত্রে তিনটি রোযা রাখতে হইবে অথবা খাদ্য দান করিতে হইবে ছয়জন মিসকীনকে অথবা এক বা একাধিক ছাগল যবেহ করিতে হইবে।
সহীহ : বোখারি [৪৫১৭], মুসলিম, অনুরূপ হাদীস পূর্বে [৯৫৩] নং উল্লেখ হয়েছে। আলী ইবনি হুজর-হুশাইম হইতে, তিনি আশআস ইবনি সাওওয়ার হইতে, তিনি শাবী হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাকিল হইতে, তিনি কাব ইবনি উজরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুর রহমান ইবনিল আসবাহানী [রঃ]আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফালের সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৪. কাব ইবনি উজরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট আসলেন। আমি তখন ডেকচির নিচে আগুন জ্বালাচ্ছিলাম। তখন আমার কপালের উপর অথবা বলেছেন আমার চোখের ভ্রুর উপর দিয়ে উকুন ঝরে পড়ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মাথা কামিয়ে ফেল এবং তার পরিবর্তে একটি পশু যবেহ কর অথবা তিন দিন রোযা রাখ অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও। বর্ণনাকারী আইয়ূব বলেন, তিনি কোন বিষয়টি প্রথমে বলেছেন তা আমি অবগত নই।
সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৫. আবদুর রাহমান ইবনি ইয়ামার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান, হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান, হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। “কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে তবে তার কোন গুনাহ হইবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হইবে না” –[সূরা আল –বাক্বারাহ ২০৩]। ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফাতে পৌছে যায়, সে হাজ্জ পেয়ে গেল।
সহীহ : [৮৮৯] নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ইবনি আবী উমার বলেন, সুফইয়ান ইবনি উয়াইনা বলেছেন : সুফইয়ান সাওরীর বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এটি শুবাহ [রঃ]বুকাইর ইবনি আতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। বুকাইর ইবনি আতার সূত্র ব্যতীত এটি সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ভীষণ কলহপ্রিয় লোক আল্লাহ তাআলার নিকট সবচাইতে ঘৃণ্য।
সহীহ : বোখারি [৪৫২৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের এই নিয়ম ছিল যে, তাহাদের কোন নারীর মাসিক ঋতুস্রাব হলে তারা তার সাথে একত্রে পানাহারও করত না এবং একই ঘরে একত্রে বসবাসও করত না। এ বিষয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হলে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “লোকেরা আপনাকে হায়িয প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। বলুন, তা অশুচি” –[সূরা আল –বাক্বারাহ ২২২]। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের সাথে যথারীতি একত্রে পানাহারের ও ঘরে একসাথে বসবাসের নির্দেশ দেন, শুধু সহবাস প্রসঙ্গ ব্যতীত। এতে ইয়াহূদীরা বলল, এ লোকটি আমাদের কোন একটি বিষয়েরও বিরোধিতা না করে ছাড়ছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আব্বাদ ইবনি বিশর ও উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসেন এবং বিষয়টি তাঁকে জানান। তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি ঋতুস্রাব চলাকালে স্ত্রী-সহবাস করব না? এতে রাসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] -এর চেহারা রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। আমরা অনুমান করলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের উভয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা দুজনে উঠে রাওনা করিলেন। তাহাদের সামনে দিয়েই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জন্যে দুধ হাদিয়া এলো। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে ডেকে পাঠান এবং তাহাদেরকে দুধ পান করান। এতে তারা বুঝতে পারল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হননি।
সহীহ : আদাবুয, যিফাফ [৪৪], সহীহ আবু দাঊদ [২৫০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। মুহাম্মদ ইবনি আবদুল আলা-আবদুর রাহমান ইবনি মাহদী হইতে, তিনি হাম্মাদ ইবনি সালামা হইতে, তিনি সাবিত হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৮. ইবনিল মুনকাদির [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি জাবির [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেনঃ ইয়াহূদীরা বলত, কোন ব্যক্তি স্ত্রীর পেছন দিক হইতে তার জননেন্দ্রিয়ে সহবাস করলে সন্তন হয় টেরা চোখবিশিষ্ট। এ প্রসঙ্গেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। কাজেই তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ২২৩]।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৯২৫], বোখারি [৪৫২৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭৯. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার”- [সূরা আল –বাক্বারাহ ২২৩], এ আয়াত প্রসঙ্গে নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, অর্থাৎ একই রাস্তায় [জননেন্দ্রিয়ে] সহবাস করিবে।
সহীহ : আদাবুয যিফাফ [২৭-২৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি খুসাইম হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনি উসমান ইবনি খুসাইম। ইবনি সাবিত হচ্ছেন আবদুর রাহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি সাবিত আল –জুমাহী আল –মাক্কী। আর হাফসা [রাদি.] হচ্ছেন, আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকর আস –সিদ্দীক-এর কন্যা। এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “উমার [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ কিসে তোমাকে ধ্বংস করিল? উমার [রাদি.] বললেনঃ রাতে আমার বাহনটি উল্টা করে ব্যবহার করেছি [পেছনের দিক হইতে সহবাস করেছি]। বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রতি নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হল : “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার”- [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ২২৩]। সামনের দিক হইতেও বা পেছনের দিক হইতেও [জননেন্দ্রিয়ে] সঙ্গত হইতে পারে, তবে মলদ্বারে অথবা হায়িয অবস্থায় [সহবাস হইতে] বিরত থাক।
হাসান : আদাবুয যিফাফ [২৮-২৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াকূব ইবনি আবদুল্লাহ আল-আশআরী হচ্ছেন ইয়াকুব আল –কুম্মী। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৯৮১. মাক্বিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যামানায় তার বোনকে এক মুসলিমের নিকট বিবাহ দেন। এ মহিলা তার নিকট যত দিন জীবন অতিবাহিত করার করলো। তারপর তার স্বামী তাকে এক তালাক দেয়। ইদ্দাত শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে সে তাকে আবার স্ত্রীত্বে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেনি। এমতাবস্থায় ইদ্দাত শেষ হয়ে যাওয়ার পর লোকটি তার স্ত্রীর প্রতি এবং স্ত্রী স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট হল। তাই সেও এক প্রস্তাবকের মাধ্যমে তাকে পুনর্বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু তার ভাই [মাক্বিল] বলেন, হে ইতর প্রাণী! আমি তোমার সাথে আমার বোনের বিবাহ দিয়ে তোমাকে সম্মানিত করেছিলাম, কিন্তু তুমি তাকে তালাক দিয়েছ। আল্লাহর কসম! সে আর কখনো তোমার নিকট ফিরে যাবে না। এই তোমার সাথে শেষ কথা। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ তাআলা জানতেন ঐ নারীর প্রতি লোকটির আকর্ষণ এবং লোকটির প্রতি নারীর আকর্ষণের কথা। তখন বারকাতময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও এবং তারা তাহাদের ইদ্দাত কাল পূর্ণ করে, তখন তারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয় তবে স্ত্রীরা নিজেদের স্বামীদের বিবাহ করিতে চাইলে তোমরা তাহাদের বাধা দিও না। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ তাআলা ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হচ্ছে। এটা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ তাআলা জানেন, তোমরা জান না”- [সূরা আল –বাক্বারাহ ২৩২]। বর্ণনাকারী বলেন, মাক্বিল [রাদি.] এ আয়াত শোনার পর বলিলেন, আমার প্রভুর আদেশ সর্বোপরি শিরোধার্য। আমি শুনলাম এবং আনুগত্যের শির অবনত করলাম। তিনি ঐ লোককে ডেকে পাঠালেন এবং বলিলেন, [চলো] তোমার সাথে তাকে বিবাহ দিয়ে দিচ্ছি এবং তোমার খাতির সম্মান বহাল করছি।
সহীহ : ইরওয়াহ [১৮৪৩], সহীহ আবু দাঊদ [১৮২০], বোখারি [৪৫২৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাসান [রঃ]হইতে এটি অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। হাসান [রঃ]সূত্রে হাদীসটি গারীব। এ হাদীস হইতে জানা গেল যে, ওয়ালী অর্থাৎ অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ বৈধ হয় না। কারণ মাক্বিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.]-এর বোন প্রাপ্তবয়স্কা তালাক্বপ্রাপ্তা ছিলেন। ওয়ালী ব্যতীত নিজের বিবাহ করার এখতিয়ার থাকলে তিনি নিজেই বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে যেতে পারতেন এবং তার ওয়ালী মাক্বিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] এর প্রয়োজন বোধ করিতেন না। আল্লাহ তাআলাও এ আয়াতে ওয়ালী অর্থাৎ অভিভাবকদেরই সম্বোধন করিয়াছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “তারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয় তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদের বিবাহ করিতে চাইলে তোমরা তাহাদের বাধা দিও না”। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিবাহের ব্যাপারটি নারীদের সম্মতি সাপেক্ষে ওয়ালীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮২. আয়িশাহ [রাদি.] এর মুক্ত দাস আবু ইউনুস [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আয়িশাহ [রাদি.] আমাকে তার জন্য কুরআনের একটি কপি লিখে দেয়ার আদেশ দিয়ে বলেনঃ “তোমরা নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হইবে, বিশেষত মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি” [সূরা বাক্বারাহ ২৩৮] আয়াতে পৌছে আমাকে জানাবে। আবু ইউনুস [রঃ]বলেন, আমি উক্ত আয়াতে পৌছে আয়িশাহ [রাদি.] কে জানালাম। তিনি আমাকে এভাবে লেখার আদেশ দিলেনঃ “তোমরা নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হইবে, বিশেষত মধ্যবর্তী নামাযের তথা আসর নামাযের প্রতি এবং আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে বিনীতভাবে দাঁড়াবে”। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি তা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনিয়াছি।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [৪৩৭], মুসলিম।এ অনুচ্ছেদে হাফসাহ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৩. সামুরাহ ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সালাতুল উসতা [মধ্যবর্তী নামায] হল আসরের নামায।
সহীহ : মিশকাত [৬৩৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আহযাবে যুদ্ধের দিন [এই] দুআ করেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি এদের [কাফিরদের] ক্ববরসমূহ ও ঘরসমূহকে আগুন দিয়ে ভর্তি করে দাও, যেমন তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী নামায হইতে বিরত রেখেছে, এমনকি সূর্য ডুবে গেছে।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [৪৩৬], বোখারি [৪৫৩৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলী [রাদি.] হইতে এটি অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু হাসসান আল –আরাজের নাম মুসলিম। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সালাতুল উসতা [মধ্যবর্তী নামায] হল আসরের নামায।
সহীহ : মিশকাত [৬৩৪]।যাইদ ইবনি সাবিত, আবু হাশিম ইবনি উতবাহ ও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৬. যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যামানায় আমরা নামাযের মধ্যে কথাবার্তা বলতাম। এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়ঃ “তোমরা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে অনুগত সেবকের মত দাঁড়াও” – [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ২৩৮]। এতদ্বারা আমাদেরকে [নামাযে] চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হল।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [৮৭৫]।আহমাদ ইবনি মানী-হুশাইম হইতে, তিনি ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ [রঃ]হইতে এই সূত্রেও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতে আরও আছে : ওয়া নুহীনা আনিল কালাম [আমাদেরকে কথা বলিতে নিষেধ করে দেয়া হয়]। সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [৮৭৫], বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু আমর আশ-শাইবানীর নাম সাদ ইবনি ইয়াস। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৭. আল –বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “তোমরা নিকৃষ্ট বস্তু দান করার ইচ্ছা করিবে না” – [সূরা আল –বাক্বারা ২৬৭] আয়াতটি আমাদের আানসারদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ছিলাম খেজুর বাগানের মালিক। লোকেরা তাহাদের খেজুর বাগান হইতে বেশী বা স্বল্প পরিমাণ অনুসারে খেজুর নিয়ে আসতো। কেউ বা এক দুই ছড়া খেজুর এনে মাসজিদে ঝুলিয়ে রাখতো। সুফফাবাসী সাহাবীগণের খাদ্য সংস্থানের বিশেষ কোন নির্দিষ্ট উৎস ছিল না। তাহাদের কারো ক্ষুধা পেলে তিনি উক্ত খেজুরের ছড়ার নিকট এসে তাতে লাঠি দ্বারা আঘাত করিতেন। ফলে কাঁচা-পাকা খেজুর ঝরে পড়ত এবং তিনি তা খেতেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোকের কল্যাণকর কাজের প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না। তাহাদের কেউ নিকৃষ্ট ও পচা খেজুরের ছড়াও নিয়ে আসতো, আবার কেউ ভেঙ্গে পড়া ছড়াও নিয়ে আসতো এবং তা [মাসজিদে] ঝুলিয়ে রাখতো। কল্যাণময় আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা জমিন হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করি, তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং তা হইতে নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করো না, অথচ তোমরা তা গ্রহণ করিবে যা, যদি না তোমরা চক্ষু বন্ধ করে থাক” [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ২৬৭]। তিনি বলেন, অর্থাৎ দাতা যেরূপ দান করেছে, অনুরূপই যদি তাকে উপহারস্বরূপ দেয়া হয়, তাহলে সে কখনো তা গ্রহণ করিবে না, চক্ষুর লজ্জায় পড়া বা দৃষ্টি এড়িয়ে রাখা ব্যতীত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর হইতে আমাদের কেউ কিছু আনলে তার নিকট যা আছে তার মধ্যকার সর্বোৎকৃষ্টগুলো নিয়ে আসতো।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৮২২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। আবু মালিক হচ্ছেন আবু মালিক আল-গিফারী। তার নাম গাযওয়ান বলেও কথিত আছে। সাওরী [রঃ]সুদ্দীর সূত্রে উক্ত হাদীসের অংশবিশেষ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রতি শাইতানের এক স্পর্শ রয়েছে এবং ফেরেশতারও এক স্পর্শ রয়েছে। শাইতানের স্পর্শ হচ্ছে মন্দ কাজের প্ররোচনাদান ও সত্যকে অস্বীকার করার। ফেরেশতার স্পর্শ হচ্ছে কল্যাণের কাজে উৎসাহিত করা এবং সত্যকে স্বীকার করা। কাজেই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে এরূপ নেকীর স্পর্শ অনুভব করে সে যেন জ্ঞাত হয় যে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে এবং এজন্য সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রতি শুকরিয়া আদায় করে। আর কেউ নিজের মধ্যে এর বিপরীত স্পর্শ উপলব্ধি করলে সে যেন তখন শাইতান হইতে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় চায়। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ] : “শাইতান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাহাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ তাআলা প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ২৬৮]।
সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৭৪]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এটি হচ্ছে আবুল আহওয়াসের রিওয়ায়াত। আমরা আবুল আহওয়াসের সূত্র ব্যতীত এটিকে অন্য কোন সূত্রে মারফূ হিসেবে জানতে পারিনি। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে লোক সকল ! আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছু ক্ববূল করেন না। আল্লাহ তাহাঁর রাসূলদেরকে যেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন, মুমিনদেরকেও সেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হইতে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত” – [সূরা আল-মুমিনূন ৫১]। তিনি আরো বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে রিযিক্ব দিয়েছি তা হইতে পবিত্র বস্তু আহার কর” – [সূরা আল –বাক্বারাহঃ ১৭২]। বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করিলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত এবং সারা শরীর ধূলি মলিন। সে আসমানের দিকে হাত দরায করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দুআ কিভাবে ক্ববূল হইতে পারে।
হাসান : গাইয়াতুল মারাম [২৭], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটিকে ফুযাইল ইবনি মারযূক্বের হাদীস হিসেবে জানি। আবু হাযিম হচ্ছেন আবু হাযিম আল –আশজাঈ। তার নাম সালমান, আজ্জা আল –আশজাইয়্যার মুক্তদাস। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৯৯০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আলী [রাদি.] বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে আমরা সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়লামঃ “তোমাদের মনে যা আছে তা ব্যক্ত কর বা লুকিয়ে রাখ, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব গ্রহণ করবেন। তারপর তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা সাজা দিবেন। আল্লাহ্ তাআলা সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান” [সূরাঃ আল-বাকারা- ২৮৪]। আমরা বললাম, আমাদের কেউ মনে মনে যা কিছু বলে তারও হিসাব গ্রহণ করা হইবে। জানি না, তার মধ্যে কতটুকু ক্ষমা করা হইবে আর কতটুকু ক্ষমা করা হইবে না। তখন পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম বাতিল [মানসূখ] করে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “আল্লাহ্ তাআলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না। সে ভালো যা কামাই করে তা তারই এবং মন্দ যা কামাই করে তাও তারই” [সূরাঃ আল-বাকারা- ২৮৬]।
সনদ দুর্বল। এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৯১. উমাইয়্যা নাম্নী রাবী হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আইশা [রাদি.]-কে বারকাতময় আল্লাহ্ তাআলার বাণী “তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব গ্রহণ করবেন” [সূরাঃ আল-বাকারা- ২৮৪] এবং “কেউ খারাপ কাজ করলে তার প্রতিদান সে পাবে” [সূরাঃ আন-নিসা- ১২৩] প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। আইশা [রাদি.] বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার পর হইতে এ পর্যন্ত আর কেউ আমার নিকট এ প্রসঙ্গে জানতে চায়নি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ তাআলা জ্বর ও বিভিন্ন বালা মুসিবত দ্বারা বান্দাকে যে সাজা দেন এটা হল তাই। এমনকি যে সামান্য জিনিসপত্র সে তার জামার হাতার মধ্যে রাখে তা হারিয়ে গেলে সে যে অস্থির হয় তাও [তাতেও তার গুনাহ মাফ হয়]। অবশেষে লাল সোনা যেমন হাঁপড় হইতে [অগ্নিদগ্ধ হয়ে] নির্মল হয়ে বেরিয়ে আসে তেমনি বান্দাও তার গুনাহসমূহ হইতে [পরিচ্ছন্ন হয়ে] মুক্তা হয়ে যায়।
সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ আইশা [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটিকে হাম্মাদ ইবনি সালামার সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে জানি না। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৯২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন “তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ আল্লাহ তাআলা তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব গ্রহণ করবেন”- [সূরা বাক্বারাহ ২৮৪] এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন মানুষদের অন্তরে এরূপ একটা জিনিস [আশংকা ও খটকা] সৃষ্টি হয় যা অন্য কিছুতে সৃষ্টি হয়নি। তাই তারা নাবী [সাঃআঃ]-কে এ ব্যাপারে জানালেন। তিনি বললেনঃ তোমরা বল “আমরা শুনলাম ও অনুগত্য করলাম”। এতে আল্লাহ তাআালা তাহাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন। তারপর কল্যাণময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “রাসূল ঈমান এনেছে তার প্রতি তার প্রভুর পক্ষ হইতে যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনগণও…..” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ২৮৫]। “আল্লাহ তাআলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব্ চাপান না। সে ভালো যা করে তা তারই এবং মন্দ যা করে তাও তারই। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অন্যায় করে ফেলি, তবে তুমি আমাদের [অপরাধীরূপে] পাকড়াও করো না” – [সূরা আল –বাক্বারাহ ২৮৬]। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তা করলাম। “হে আমাদের প্রভু! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না”। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি ক্ববূল করলাম। “হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন ভার অর্পণ করো না, যা বহনের শক্তি আমাদের নেই। আমাদের গুনাহ মোচন কর, আমাদের ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের জয়যুক্ত কর” –[সূরা আল –বাক্বারাহঃ ২৮৬]। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি ক্ববূল করলাম।
সহীহ : মুসলিম [১/৮১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে অন্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আদম ইবনি সুলাইমান প্রসঙ্গে কথিত আছে যে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনি আদমের বাবা। সূরা আল বাকারার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply