ফারায়েজ হিসাব । জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয়

ফারায়েজ হিসাব । জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয়

ফারায়েজ হিসাব । জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয় , এই অধ্যায়ে মোট ২৬ টি হাদীস (২০৯০-২১১৫) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-২৭ঃ ফারাইয, অনুচ্ছেদঃ (১-২৩)=২৩টি

১. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের প্রাপ্য
২. অনুচ্ছেদঃ ফারাইয শিক্ষা করা
৩. অনুচ্ছেদঃ পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে মেয়ে সন্তানদের অংশ
৪. অনুচ্ছেদঃ ঔরসজাত মেয়ের সাথে নাতনীর মীরাস
৫. অনুচ্ছেদঃ সহোদর ভাইদের মীরাস
৬. অনুচ্ছেদঃ মেয়েদের সাথে ছেলেদের মীরাস
৭. অনুচ্ছেদঃ বোনদের মীরাস
৮. অনুচ্ছেদঃ আসাবার মীরাস
৯. অনুচ্ছেদঃ পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে দাদার অংশ
১০. অনুচ্ছেদঃ দাদী-নানীর অংশ
১১. অনুচ্ছেদঃ দাদীর পুত্রের সাথে একত্রে দাদীর মীরাস
১২. অনুচ্ছেদঃ মামার মীরাস
১৩. অনুচ্ছেদঃ উত্তরাধিকারীহীন অবস্থায় কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে
১৪. অনুচ্ছেদঃ মুক্তদাসের উত্তরাধিকার
১৫. অনুচ্ছেদঃ মুসলমান ও কাফির পরস্পরের উত্তরাধিকার স্বত্ব বাতিল
১৬. অনুচ্ছেদঃ দুটি পৃথক ধর্মের অনুসারী পরস্পরের উত্তরাধিকারী হইবে না।
১৭. অনুচ্ছেদঃ হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী স্বত্ব হইতে বঞ্চিত হইবে
১৮. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর দিয়াতে স্ত্রীর উত্তরাধিকার স্বত্ব
১৯. অনুচ্ছেদঃ মীরাস উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য এবং আকিলা আসাবাদের উপর
২০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কারো হাতে মুসলমান হয় তার মীরাস প্রসঙ্গে
২১. অনুচ্ছেদঃ জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয়।
২২. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালার ওয়ারিস কে হইবে
২৩. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালাআতে মহিলাদের মীরাস

১. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের প্রাপ্য

২০৯০. আবু হুরাইরা [রা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি ধন-সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তা তাহাঁর পরিবারের [উত্তরাধিকারীদের] প্রাপ্য। আর কোন লোক সহায়হীন পরিবার রেখে মৃত্যুবরণ করলে তাহাদের [ভরণ-পোষণের] দায়িত্ব আমার উপর।

সহিহ, এটি পূর্বে বর্ণিত [১০৭০নং] হাদীসের অংশ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ । জাবির ও আনাস [রা] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ঈমাম যুহরী আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রা] তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এ হাদীসটি আরো দীর্ঘ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণনা করিয়াছেন । “মান তারাকা যাইয়াআন” অর্থঃ কেউ যদি সহায়-সম্বলহীন পরিবার রেখে মৃত্যুবরণ করে যাদের কিছুই নেই, তাহাদের দায়-দায়িত্ব আমার উপর । আমি তাহাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করব । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ ফারাইয শিক্ষা করা

২০৯১. আবু হুরাইরা [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা মীরাস বন্টন নীতি ও কুরআন শিক্ষা কর এবং তা অন্য লোকদেরও শিক্ষা দাও। কেননা আমি তো অবশ্যই মরণশীল।

যঈফ, মিশকাত [২৪৪]।ইরওয়া [১৬৬৪] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদে গরমিল আছে। এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন আবু উসামা-আওফ হইতে তিনি জনৈক ব্যক্তি হইতে তিনি সুলাইমান ইবনি জাবির হইতে তিনি ইবনি মাসউদ [রাঃ] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সূত্রে। আল-হুসাইন ইবনি হুরাইস-আবু উসামা হইতে তিনি আওফ হইতে উক্ত মর্মে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনিল কাসিম আল-আসাদীকে আহ্‌মাদ ইবনি হাম্বল [রঃ] প্রমুখ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে মেয়ে সন্তানদের অংশ

২০৯২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনির রাবী [রা]-এর স্ত্রী সাদের ঔরসজাত তাহাঁর দুই মেয়েসহ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে হাযির হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ,এরা সাদ ইবনির রাবীর দুই মেয়ে। এদের বাবা উহুদের যুদ্ধে আপনার সাথে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এদের সমস্ত ধন-সম্পদ এদের চাচা নিয়ে নিয়েছে, এদের জন্য সামান্য কিছুও রাখেনি। এদের কোন ধন-সম্পদ না থাকলে এদের বিয়েও তো হইবে না। তিনি বললেনঃ এ বিষয়টি আল্লাহ্ তাআলাই সমাধান করে দিবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মীরাস বন্টন বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হয়। তাহাদের চাচাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ডেকে এনে বললেনঃ সাদের দুই মেয়েকে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি এবং তাহাদের মাকে এক-অষ্টমাংশ সম্পত্তি দিয়ে দাও, তারপর যেটুকু বাকী থাকে তা তোমার।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৭২০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ । আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আকীলের সূত্রেই জেনেছি । এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদের সূত্রে শারীকও বর্ণনা করিয়াছেন । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ ঔরসজাত মেয়ের সাথে নাতনীর মীরাস

২০৯৩. হুযাইল ইবনি শুরাহ্বীল [রাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু মূসা [রাদি.] ও সালমান ইবনি রাবীআ [রা]-এর নিকট একজন লোক এসে তাহাদের কাছে মেয়ে, নাতনী ও সহোদরা বোনের মীরাসের ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তারা দুজনেই বলিলেন, মেয়ে পাবে অর্ধেক সম্পত্তি এবং সহোদর বোন পাবে বাকী অংশ। তারা আরো বলিলেন, তুমি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রা]-এর কাছে যাও এবং তাকে প্রশ্ন কর। তিনিও আমাদেরই অনুসরণ করবেন। লোকটি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রা]-এর নিকট এসে তাকে ঘটনা বলে এবং তারা দুজনে যা বলেছেন তাও তাকে অবহিত করায়। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, আমি যদি তাহাদের দুজনের অনুসরণ করি তাহলে পথভ্রষ্ট হব এবং সঠিক পথে অটুট থাকতে পারব না। আমি এ বিষয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর অনুরূপ ফায়সালাই প্রদান করব। মেয়ে পাবে অর্ধেক সম্পত্তি এবং নাতনী পাবে এক-ষষ্ঠাংশ সম্পত্তি। এভাবে দুজনের অংশ একত্রে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হইবে। বাকী সম্পত্তি পাবে বোন।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭২১], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ । আবু কাইস আল-আওদীর নাম আবদুর রাহমান, পিতা সারওয়ান আল-কূফী । এ হাদীসটি শুবাও আবু কাইসের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ সহোদর ভাইদের মীরাস

২০৯৪. আলী [রা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাক ঃ

مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ

“যা কিছু তোমরা ওয়াসিয়াত কর বা যে ঋণ রয়েছে তা আদায় করার পর…. “ [সূরা ঃ আন-নিসা-১২]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াসিয়াত পূরন করার পূর্বে ঋণ আদায়ের ফায়সালা দিয়েছেন। বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইদের আগে সহোদর ভাই উত্তরাধিকারী হইবে [ যদি মৃত ব্যক্তির উভয় ধরনের ভাই থাকে]। সহোদর ভাই উত্তরাধিকারী হইবে, বৈমাত্রের ভাইয়ের পূর্বে।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৭১৫]। বুনদার [রাহ] ইয়াযীদ ইবনি হারুন হইতে, তিনি যাকারিয়া ইবনি আবু যাইদা হইতে, তিনি আবু ইসহাক হইতে, তিনি আল-হারিস হইতে, তিনি আলী [রা] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে একইরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২০৯৫. আলী [রা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফায়সালা দিয়েছেন যে, সহোদর ভাইয়েরা একে অপরের উত্তরাধিকারী হইবে, কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাই উত্তরাধিকারী হইবে না। অর্থাৎ সহোদর ভাই থাকাবস্থায় বৈমাত্রের ভাই উত্তরাধিকার হইবে না।

হাসান, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবু ইসহাক হইতে আল-হারিসের বরাতে আলী [রা]-এর সূত্রেই জেনেছি । একদল অভিজ্ঞ মুহাদ্দিস হারিসের সমালোচনা করিয়াছেন । এ হাদীস মুতাবিক সব সাধারণ আলিমগণ আমল করেছন । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ মেয়েদের সাথে ছেলেদের মীরাস

২০৯৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে এলেন। তখন আমি অসুস্থ অবস্থায় সালামা গোত্রে ছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ] আমি কিভাবে আমার ধন-সম্পদ আমার সন্তানদের মাঝে বন্টন করব? তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না। ইতোমধ্যে এ আয়াত নাযিল হলো ঃ

‏يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنْثَيَيْنِ 

“আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেন- একজন পুরুষের অংশ দুইজন মহিলার অংশের সমান…. ” [সূরা ঃ আন-নিসা-১১]।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ । এ হাদীসটি শুবা, ইবনি উয়াইনা আরও অনেক মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির হইতে জাবির [রা]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ বোনদের মীরাস

২০৯৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি অসুস্থ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে এলেন। তিনি আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তাহাঁর সাথে আবু বাকর ও উমার [রাদি.]- ও আমাকে দেখিতে আসেন। তাঁরা দুজনেই পায়ে হেঁটে আসেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওযূ করিলেন এবং ওযূর পানি আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন। আমার হুঁশ ফিরে এল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] আমার ধন-সম্পদের ব্যাপারে আমি কি করব? আমার এ কথায় তিনি কোন জবাব দিলেন না। [অধঃস্তন বর্ণনাকরী বলেন] তার নয়টি বোন ছিল। অবশেষে মীরাস বিষয়ক আয়াতটি অবতীর্ণ হলোঃ

‏يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلاَلَةِ

“লোকেরা তোমার কাছে জানতে চায়। বল! আল্লাহ তাআলঅ তোমাদেরকে কালালা প্রসঙ্গে বিধান দিচ্ছেন…..” [সূরাদি. আন-নিসা-১৭৬]। জাবির [রাদি.] বলেন, আয়াতটি আমার সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭২৮], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ আসাবার মীরাস

২০৯৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নির্ধারিত অংশ তার প্রাপককে [অধিকারীকে] দিয়ে দাও। এরপর যেটুকু অংশ বাকী থাকিবে তার পুরুষ নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বন্টন কর।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭৪০], বুখারী, মুসলিম। আবদ ইবনি হুমাইদ [রাহঃ] আবদুর রাযযাক হইতে, তিনি মামার হইতে, তিনি ইবনি তাঊস হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। কিছু সংখ্যক বর্ণনাকরী এটাকে ইবনি তাঊসের সূত্রে, তিনি তার বাবার বরাতে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে মুরসাল হাদীস হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে দাদার অংশ

২০৯৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বলিল, আমার এক ছেলে [নাতি] মারা গেছে। তার রেখে যাওয়া সম্পদের আমি কি অংশ পাব? তিনি বললেনঃ তুমি এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল, তিনি তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি আরো এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। সে যখন আবার চলে যাচ্ছিল, তিনি তাকে ডেকে বলেনঃ পরবর্তী এক-ষষ্ঠাংশ তোমার জন্য অতিরিক্ত রিফিকস্বরূপ [অতিরিক্ত ওয়ারিস থাকলে তুমি তা পেতে না]।

যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [৫০০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ দাদী-নানীর অংশ

২১০০. কাবীসা ইবনি যুওয়াইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক দাদী অথবা নানী আবু বাকর [রাদি.]-এর নিকটে এসে বলিল, আমার পৌত্র অথবা দৌহিত্র মারা গেছে। আমাকে জানানো হয়েছে যে, কুরআনে আমার জন্য অংশ নির্ধারিত রহিয়াছে। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, আমি কুরআনে তোমার জন্য নির্ধারিত কোন অংশ দেখিতে পাচ্ছি না এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কেও তোমার [দাদীর প্রাপ্য অংশের] ব্যাপারে কোন ফায়সালা দিতে শুনিনি। অতএব আমি লোকদের কাছে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করে নিব। তিনি লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করিলেন। মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] সাক্ষ্য দিলেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে [দাদীকে] ছয় ভাগের এক অংশ দান করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, তোমার সাথে এটা আর কে শুনেছে? তিনি [মুগীরা] বলিলেন, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা [রাদি.]। রাবী বলেন, তিনি [আবু বাকর] তাকে [দাদীকে] ছয় ভাগের এক অংশ দান করিলেন।

পরবর্তী কালে আর এক দাদী বা নানী উমার [রাদি.]-এর নিকটে আসে। সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা বলিলেন, মামার যুহরীর সূত্রে আমাকে আরো বলেছেন, কিন্তু আমি তা যুহরীর সূত্রে কখনো মুখস্ত করিনি, বরং আমি মামারের সূত্রে তা মুখস্ত করেছি। উমার [রাদি.] বলেন, তোমরা [দাদী-নানী] উভয়ে যদি বেঁচে থাক তবে এটা [এক-ষষ্ঠাংশ] তোমাদের উভয়ের মাঝে বণ্টিত হইবে। আর তোমাদের দুইজনের মধ্যে যদি একজন বর্তমান থাকে তবে এটা সে একাই পাবে।

যঈফ, ইরওয়া [১৬৮০] যঈফ আবু দাউদ [৪৯৭] ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২১০১. কাবীসা ইবনি যুওয়াইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক দাদী আবু বাকর [রাদি.]-এর নিকটে এসে তার মীরাস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। তিনি তাকে বলিলেন, তোমার জন্য আল্লাহ্ তাআলার কিতাবে কিছু নির্ধারিত নেই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাতেও তোমার সম্পর্কে কিছু নেই। তুমি চলে যাও, আমি লোকদের নিকটে প্রশ্ন করে ব্যাপারটি জেনে নেই। তিনি লোকদের প্রশ্ন করলে মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে হাযির থাকা অবস্থায় তিনি তাকে [দাদীকে] ছয় ভাগের এক অংশ দান করার ফাইসালা দিয়েছেন। তিনি [আবু বাকর] প্রশ্ন করিলেন, তোমার সাথে আরো কেউ ছিল কি? তখন মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা [রাদি.] উঠে দাঁড়িয়ে মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.]-এর মতই কথা বলিলেন। অতএব আবু বাকর [রাদি.] তাকে ছয় ভাগের এক অংশ দেয়ার বিধান জারি করেন। পরবর্তী কালে অপর এক দাদী এসে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর কাছে তার মীরাস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার কিতাবে তোমার জন্য কোন অংশ নির্ধারিত নেই। তবে তোমার জন্য ঐ ছয় ভাগের এক অংশ নির্ধারিত আছে। তোমরা [দাদী-নানী] যদি উভয়ে বেঁচে থাক তবে এটা [ছয় ভাগের এক অংশ] তোমাদের উভয়ের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হইবে। আর তোমাদের উভয়ের মধ্যে যদি একজন বেঁচে থাকে তবে এটা সে একাই পাবে।

দুর্বল, দেখুন পূর্বের হাদীস, এ অনুচ্ছেদে বুরাইদা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। ইবনি উয়াইনার হাদীসের তুলনায় এটি অনেক বেশী সহীহ। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ দাদীর পুত্রের সাথে একত্রে দাদীর মীরাস

২১০২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এমন এক দাদী সম্পর্কে বলেন যার পুত্রও তার সাথে জীবিত ছিল। সে ছিল প্রথম দাদী, যাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার পুত্রের বর্তমানে তাকে ছয় ভাগের এক অংশ দিয়েছেন।

যঈফ, ইরওয়া [১৬৮৭] আবু ঈসা বলেন, আমরা শুধুমাত্র উল্লেখিত সূত্রেই এ হাদীসটি মারফূ হিসাবে জেনেছি। নাবী [সাঃআঃ]-এর কিছু সাহাবী দাদীকে তার পুত্রের বর্তমানে উত্তোরাধিকারী ঘোষণা করিয়াছেন। তাহাদের অপর দল এক্ষেত্রে তাকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ মামার মীরাস

২১০৩. আবু উমামা ইবনি সাহল ইবনি হুনাইফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] আবু উবাইদা [রাদি.]-কে লিখে পাঠান যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন অভিভাবক নেই, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তার অভিভাবক। যে ব্যক্তির অন্য কোন উত্তরাধিকারী নেই, মামা তার উত্তরাধিকারী।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭৩৭]। আবু ঈসা বলেন, আইশা ও মিকদাম ইবনি মাদীকারিব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১০৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোকের অন্য কোন উত্তরাধিকারী নেই [তার] মামা তার উত্তরাধিকারী হইবে।

সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস,আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসটিকে একদল বর্ণনাকরী মুরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে আইশা [রাদি.] এর উল্লেখ করেননি। একদল সাহাবী মামা, খালা ও ফুফুকে উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত করিয়াছেন। বেশিরভঅগ অভিজ্ঞ আলিম এ হাদীসটিকে যাবিল আরহামকে [যারা আসাবাগণের অবর্তমানে উত্তরাধিকারী হয়] উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে দলীলরূপে গ্রহণ করিয়াছেন। যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] যাবিল আরহামকে উত্তরাধিকারী হিসাবে মেনে নেননা। তার মতে [যাবিল ফুরূয ও আসাবাদের অবর্তমানে] মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি সরকারী কোষাগারে [বাইতুল-মালে] জমা হইবে। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ উত্তরাধিকারীহীন অবস্থায় কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে

২১০৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এর একজন মুক্তদাস খেজুর গাছের মাথা হইতে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা তালাশ করে দেখ তার কোন উত্তরাধিকারী আছে কি না? লোকজন বলিল, কেউ নেই। তিনি বললেনঃ তার রেখে যাওয়া সম্পদ গ্রামের কাউকে দিয়ে দাও।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭৩৩] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ মুক্তদাসের উত্তরাধিকার

২১০৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে এক ব্যক্তি উত্তরাধিকারহীন অবস্থায় মারা যায়। তার একটি মুক্তদাস ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দান করেন।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৭৪১] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আলিমদের মতে, কোন ব্যক্তি আসাবা না রেখে [উত্তরাধিকারহীন অবস্থায়] মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি মুসলমানদের বাইতুল মালে [সরকারী তহবিলে ] জমা হইবে। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ মুসলমান ও কাফির পরস্পরের উত্তরাধিকার স্বত্ব বাতিল

২১০৭. উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তি কাফির ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হইবে না এবং কাফিরও মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হইবে না।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭২৯], বুখারী, মুসলিম। ইবনি আবু উমার-সুফিয়ান হইতে, তিনি যুহ্রী [রাহঃ]-এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, জাবির ও আব্দুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। মামার এবং আরও অনেকে যুহ্রীর সূত্রে একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক [রাহঃ] যুহ্রী হইতে, তিনি আলী ইবনিল হুসাইন হইতে, তিনি উমার ইবনি উসমান হইতে, তিনি উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে এইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। মালিকের বর্ণনা ভ্রান্তিপূর্ণ। এতে মালিকই ভুল করিয়াছেন। এই হাদীসটিকে কোন কোন বর্ণনাকারী মালিকের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এবং [উমার-এর স্থলে] আমর বলেছেন। মালিকের বেশিরভাগ শিষ্য মালিক-উমার হইতে বলেছেন। উসমান [রাদি.] এর সন্তানদের মধ্যে আমর প্রসিদ্ধ। উমার নামে তার কোন সন্তান ছিল বলে জানা যায় না। এ হাদীস অনুসারে অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তবে মুরতাদ [ধর্মত্যাগী] ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি [মীরাস] সম্পর্কে তাহাদের মধ্যে দ্বিমত আছে। একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম বলেছেন, তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি তার মুসলিম উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হইবে। তাহাদের অপর দল বলেছেন, মুসলমানরা তার উত্তরাধিকারী হইবে না। তারা উপরোক্ত হাদীসটি দলীল হিসাবে গ্রহন করিয়াছেন। ঈমাম শাফীঈর এই অভিমত। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ দুটি পৃথক ধর্মের অনুসারী পরস্পরের উত্তরাধিকারী হইবে না।

২১০৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুটি পৃথক ধর্মের অনুসারী পরস্পরের উত্তরাধিকারী হইবে না।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৭৩১]। আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীস সম্বন্ধে শুধুমাত্র ইবনি আবু লাইলার সূত্রে জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হিসাবে জেনেছি। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী স্বত্ব হইতে বঞ্চিত হইবে

২১০৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হত্যাকারী কোন প্রকার উত্তরাধিকারী হইবে না।

ইবনি মা-জাহ [২৭৩৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ নয়। এ হাদীসটি শুধুমাত্র উল্লেখিত সনদসূত্রেই জানা গেছে। ইসহাক ইবনি আবদুল্লাহকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিস পরিত্যক্ত বলে মত প্রকাশ করিয়াছেন। তাহাদের মধ্যে আহ্মাদ ইবনি হাম্বল অন্যতম। এ হাদীস মুতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হইবে না, চাই সে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করুক অথবা ভুলবশতঃ হত্যা করুক। ঈমাম মালিকের মতে, ভুলক্রমে হত্যাকান্ত ঘটে গেলে হত্যাকারী নিহইতের উত্তরাধিকারী হইবে। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৮. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর দিয়াতে স্ত্রীর উত্তরাধিকার স্বত্ব

২১১০. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] বলিলেন, আকিলার উপর দিয়াত [রক্তমূল্য] ধার্য করা হইবে। স্বামীর দিয়াতের মধ্যে স্ত্রী উত্তরাধিকারী হইবে না। তখন যাহ্হাক ইবনি সুফিয়ান আল-কিলাবী [রাদি.] তাকে বলেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে লিখে পাঠিয়েছেনঃ “আশ্ইয়াস আয-যিবাবীর স্ত্রীকে তার স্বামীর দিয়াতের উত্তরাধিকারী বানাও”।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৬৪২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ মীরাস উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য এবং আকিলা আসাবাদের উপর

২১১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

লিহ্ইয়ান বংশের একজন স্ত্রীলোককে তার [অন্যের আঘাতে মৃত্যুজনিত কারণে] গর্ভপাতের দিয়াত হিসাবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি গোলাম অথবা একটি দাসী প্রদানের ফয়সালা দেন। তিনি যে মহিলাটির উপর এই দিয়াত নির্ধারন করেন পরে সে মারা যায়। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফয়সাসলা দেন যে, এটার তার স্বামী ও ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হইবে এবং তার উপর ধার্যকৃত দিয়াত তার আসাবাগণের উপর বর্তাবে।

সহীহ, ইরওয়া [২২০৫], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, ইউনুস [রাহঃ] যুহরী হইতে, তিনি সাইদ ইবনিল মুসাইয়্যিব ও আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সূত্রে একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি মালিক-যুহ্রী হইতে, তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রেও বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদীসটি মালিক-যুহ্রী হইতে, তিনি সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কারো হাতে মুসলমান হয় তার মীরাস প্রসঙ্গে

২১১২. তামীমুদ দারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করলাম, কোন মুসলিম লোকের হাতে কোন মুশরিক লোক ইসলাম ক্ববুল করলে তার কি বিধান রয়েছে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সে [মুসলমান লোকটি] তার [নও-মুসলিম] জীবনে-মরণে অন্য সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।

হাসান সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [২৭৫২] আবু ঈসা বলেন, আমরা শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াহ্বের সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। আবার কেউ তা বর্ণনা করিয়াছেন ইবনি মাত্তহিব হইতে, তিনি তামীমুদ দারী [রাদি.]-এর সূত্রে। এই হাদীসের সনদে আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াহব ও দামীমুদ দারী [রাদি.]-এর মাঝখানে কোন কোন বর্ণনাকারী কাবীসা ইবনি যুআইব [রাহঃ]-কে অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। কিন্তু তা সঠিক নয়। আব্দুল আযীয ইবনি উমারের সূত্রে ইয়াহ্ইয়া ইবনি হামযা এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে কাবীসা ইবনি যুআইবের নাম অন্তর্ভুক্ত কারেছেন। আমি মনে করি এ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়। এ হাদীস অনুযায়ী একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে যার হাতে সে লোকটি মুসলমান হয়েছেন সে তার উত্তরাধিকারী হইবে। বিশেষজ্ঞদের অন্য আরেক দল বলেছেন, তার মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাইতুল মালে জমা করা হইবে। ঈমাম শাফির এই অভিমত। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর এই হাদীসটি তার দলীলঃ “যে লোক গোলাম মুক্ত করে সে-ই ওয়ালার স্বত্বাধিকারী হইবে”। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২১. অনুচ্ছেদঃ জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয়।

২১১৩. আমর ইবনি শুআইব [রাহঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি কোন স্বাধীন স্ত্রীলোক অথবা দাসীর সাথে যিনায় [ব্যভিচারে] লিপ্ত হয় তাহলে [জন্মগ্রহনকারী] সন্তান জারজ সন্তান বলে গণ্য হইবে। সে কারো উত্তরাধিকারী হইবে না এবং তারও কেউ উত্তরাধিকারী হইবে না।

সহিহ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩০৫৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আমর ইবনি শআইবের সূত্রে ইবনি লাহীআ ছাড়াও অন্য বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করিয়াছেন। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ এ হাদীস অনুসারে আমল করিয়াছেন। ব্যভিচারজাত সন্তান তার জন্মদাতা পিতার উত্তরাধিকারী হইবে না। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালার ওয়ারিস কে হইবে

২১১৪. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি মালের উত্তরাধিকারী হইবে সে-ই ওয়ালার উত্তরাধিকারী হইবে [অর্থাৎ যে গোলাম মুক্ত করার মূল্য পরিশোধ করিবে সে-ই গোলামের রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবে]।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩০৬৬], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদ তেমন মজবুত নয়। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৩. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালাআতে মহিলাদের মীরাস

২১১৫. ওয়াসিলা ইবনিল আসকা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্ত্রীলোকেরা [এককভাবে] তিন ধরনের মীরাসী সম্পত্তির ওয়ারিস হইতে পারেঃ নিজের আযাদকৃত গোলামের, যে শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়ে সে তুলে নিয়ে লালন-পালন করেছে তার এবং যে শিশু সম্পর্কে সে লিআন করেছে তার।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৭৪২] আবু ঈসা বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। মুহাম্মাদ ইবনি হারব-এর সূত্রেই আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। ফারায়েজ হিসাব – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

Comments

One response to “ফারায়েজ হিসাব । জারজ সন্তান উত্তরাধিকারী নয়”

Leave a Reply