পানপাত্র ও পানীয় । মদ হারামের হাদিস । মদ পানকারী প্রসঙ্গে

পানপাত্র ও পানীয় । মদ হারামের হাদিস । মদ পানকারী প্রসঙ্গে

পানপাত্র ও পানীয় । মদ হারামের হাদিস । মদ পানকারী প্রসঙ্গে , এই অধ্যায়ে মোট ৩৬ টি হাদীস ( ১৮৬১-১৮৯৬) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-২৪ঃ পানপাত্র ও পানীয়, অনুচ্ছেদঃ (১-২১)=২১টি

১. অনুচ্ছেদঃ মদ পানকারী প্রসঙ্গে
২. অনুচ্ছেদঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই হারাম
৩. অনুচ্ছেদঃ যে দ্রব্য পরিমাণ বেশি হলে নেশার সৃষ্টি করে তার অল্প পরিমানও হারাম
৪. অনুচ্ছেদঃ মাটির কলসে বানানো নাবীয সম্পর্কে
৫. অনুচ্ছেদঃ দুব্বা, নাকীর ও হানতামে নাবীয বানানো মাকরূহ
৬. অনুচ্ছেদঃ উল্লেখিত পাত্রসমূহে নাবীয বানানোর সম্মতি প্রসঙ্গে
৭. অনুচ্ছেদঃ [চামড়ার] মশকের মধ্যে নাবীয বানানো
৮. অনুচ্ছেদঃ যেসব শস্য, ফল ও পানীয় হইতে মদ বানানো হয়
৯. অনুচ্ছেদঃ কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশানো পানীয়
১০. অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণের অথবা রুপার তৈরী পাত্রে পান করা নিষেধ
১১. অনুচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পানি পান করা নিষেধ
১২. অনুচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করার সম্মতি
১৩. অনুচ্ছেদঃ পাত্র হইতে পান করার সময় নিঃশ্বাস নেওয়া
১৪. অনুচ্ছেদঃ দুই নিঃশ্বাসে পান করা
১৫. অনুচ্ছেদঃ পানীয় দ্রব্যের মধ্যে ফুঁ দেওয়া নিষেধ
১৬. অনুচ্ছেদঃ পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা নিষেধ
১৭. অনুচ্ছেদঃ মশকের মুখ উল্টা অবস্থায় রেখে পান কার নিষেধ
১৮. অনুচ্ছেদঃ মশকের মুখ উল্টা অবস্থায় রেখে তা হইতে পানি পানের সম্মতি প্রসঙ্গে
১৯. অনুচ্ছেদঃ ডান পাশের মানুষেরা পান করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে
২0. অনুচ্ছেদঃ সবার পান করা শেষে পরিবেশনকারী পান করিবে
২১. অনুচ্ছেদঃ কোন ধরণের পানীয় দ্রব্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে বেশি প্রিয় ছিল?

১. অনুচ্ছেদঃ মদ পানকারী প্রসঙ্গে

১৮৬১.ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য মদের অন্তর্ভূক্ত এবং সকল নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই হারাম। পৃথিবীতে যে লোক মদ পান করে এবং মদ পানে আসক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে পরকালে তা পান করিতে পারবে না।

সহীহ্‌, ইরওয়া [৮/৪১], আবু হুরাইরা, আবু সাইদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, ইবনি আব্বাস, উবাদা ও আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। নাফি হইতে ইবনি উমারের বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি মালিক ইবনি আনাস [রাহঃ] নাফি হইতে ইবনি উমারের সূত্রে মাওকূফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, মারফূভাবে নয়। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মদ পানকারী ব্যক্তির চল্লিশ দিনের নামাজ ক্ববূল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা ক্ববূল করেন। যদি আবার সে মদ পান করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার চল্লিশ দিনের নামাজ ক্ববূল করেন না। যদি সে তাওবা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদ পানে লিপ্ত হয় তাহলে তার চল্লিশ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবূল করেন। সে চতুর্থ বারে মদ পানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর চল্লিশ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা ক্ববূল করবেন না এবং তাকে নাহ্‌রুল খাবাল হইতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হল, হে আবু আবদুর রাহমান [ইবনি উমার]! খাবাল নামক ঝর্নাটি কি? তিনি বলিলেন, জাহান্নামীদের পূঁজের ঝর্ণা।

সহীহ্‌, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৭৭]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি আমর এবং আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-ও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই হারাম

১৮৬৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মধু দ্বারা বানানো মদ সম্বন্ধে নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী পানীয়ই হারাম।

সহীহ্‌, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৮৬], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই হারাম।

সহীহ্‌, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৮৭], মুসলিম।

উমার, আলী, ইবনি মাসউদ, আনাস, আবু সাঈদ, আবু মূসা, আশাজজুল আসারী, দাইলাম, মাইমূনা, ইবনি আব্বাস, কাইস ইবনি সাদ, নুমান ইবনি বাশীর, মুআবিয়া, ওয়াইল ইবনি হুজর, কুররাতুল মুযানী, আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল, উম্মু সালামা, বুরাইদা, আবু হুরাইরা ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। আবু সালামা হইতে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতেও একইরকম বর্ণিত হয়েছে। দুটো রিওয়ায়াতই সহিহ। একাধিক বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনি আমরের সূত্রে, তিনি আবু সালামার সূত্রে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু সালামা হইতে ইবনি উমার [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ যে দ্রব্য পরিমাণ বেশি হলে নেশার সৃষ্টি করে তার অল্প পরিমানও হারাম

১৮৬৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দ্রব্যের বেশি পরিমাণ [পান করলে] নেশার সৃষ্টি করে, তার অল্প পরিমাণও [পান করা] হারাম।

হাসান সহীহ, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৯৩]। সাদ, আইশা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, ইবনি উমার ও খাওওয়াত ইবনি জুবাইর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীস হিসেবে এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৮৬৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল প্রকার নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম। যে দ্রব্যের এক ফারাক [মশক] পরিমাণ [পানে] নেশা সৃষ্টি হয় তার এক আঁজল পরিমাণও হারাম।

সহীহ্‌, ইরওয়া [২৩৭৬]। আবু ঈসা বলেন, অপর বর্ণনায় আছে, তার এক ঢোক পরিমাণও হারাম। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। মাহ্‌দী ইবনি মাইমূনের হাদীসের মতো লাইস ইবনি আবু সুলাইম ও আর-রাবী ইবনি সাবীহ-আবু উসমান আল-আনসারী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু উসমান আল-আনসারীর নাম আমর ইবনি সালিম, তাকে উমার ইবনি সালিমও বলা হয়। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ মাটির কলসে বানানো নাবীয সম্পর্কে

১৮৬৭. তাঊস [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট একজন লোক এসে প্রশ্ন করিল, সবুজ কলসে বানানো নাবীয পান করিতে কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তাঊস [রাহঃ] বলেন, আল্লাহ তাআলার শপথ! আমি এটা ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকটেই শুনিয়াছি।

সহীহ্‌, মুসলিম। ইবনি আবী আওফা, আবু সাঈদ, সুয়াইদ, আইশা, ইবনিয যুবাইর ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ দুব্বা, নাকীর ও হানতামে নাবীয বানানো মাকরূহ

১৮৬৮. আমর ইবনি মুররা [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি যাযানকে বলিতে শুনিয়াছি, ইবনি উমার [রাদি.]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, কোন কোন ধরনের পাত্র ব্যবহার করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারণ করিয়াছেন এ বিষয়ে আমাকে আপনাদের ভাষায় জানিয়ে দিন এবং তা আমাদের ভাষায় ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হানতামাহ ব্যবহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এটা মাটি দ্বারা বানানো এক প্রকার সবুজ কলস। দুব্বা ব্যবহার করিতেও তিনি নিষেধ করিয়াছেন। এটা কদুর খোল দ্বারা বানানো পাত্রবিশেষ। তিনি নাকীর-এর ব্যবহারকেও নিষেধ করিয়াছেন। এটা খেজুর গাছের মূল-কান্ড খুঁড়ে বানানো কাঠের পাত্রবিশেষ। তিনি মুযাফফাত ব্যবহার করিতেও নিষেধ করিয়াছেন। এটা আলকাতরার প্রলেপযুক্ত পাত্রবিশেষ। তিনি মশকের মধ্যে নাবীয বানানোর আদেশ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, সহীহা [২৯৫১], মুসলিম। উমার, আলী, ইবনি আব্বাস, আবু সাঈদ, আবু হুরাইরা, আবদুর রাহমান ইবনি ইয়ামার, সামুরা, আনাস, আইশা, ইমরান ইবনি হুসাইন, আইয ইবনি আমর, হাকাম আল-গিফারী ও মাইমূনা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ উল্লেখিত পাত্রসমূহে নাবীয বানানোর সম্মতি প্রসঙ্গে

১৮৬৯. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রাহঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [বুরাইদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি এসব পাত্র কাজে লাগাতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে পাত্র কোন জিনিসকে হালালও করিতে পারে না এবং হারামও করিতে পারে না। তবে সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম।

সহীহ্‌, তালীক আলা ইবনি মাজাহ্‌, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭০. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদের পাত্রসমূহ ব্যবহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আনসারগণ তাহাঁর কাছে কিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের আর কোন পাত্র নেই। তিনি বললেনঃ আচ্ছা! তাহলে [এগুলো ব্যবহার করিতে] আপত্তি নেই।

সহীহ্‌, বুখারী।এ অনুচ্ছেদে ইবনি মাসউদ, আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ ও আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ ।

মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ [চামড়ার] মশকের মধ্যে নাবীয বানানো

১৮৭১. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মশকের মধ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য নাবীয [খেজুরের শরবত] বানাতাম। এর উপরিভাগে যে ছিদ্র ছিল দড়ি দ্বারা তা বেঁধে দেওয়া হত। আমরা সকালে তাহাঁর জন্য নাবীয বানাতাম। তিনি রাতে তা পান করিতেন। আবার তাহাঁর জন্য আমরা রাতে নাবীয বানাতাম। তিনি ভোরে তা পান করিতেন।

সহীহ্‌, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৯৮]। জাবির, আবু সাঈদ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আইশা হইতে ইউনুসের হাদীস হিসেবে এই সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে জানতে পারিনি। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ যেসব শস্য, ফল ও পানীয় হইতে মদ বানানো হয়

১৮৭২, নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মদ বানানো হয় গম দিয়ে, মদ বানানো হয় যব দিয়ে, মদ বাননো হয় খেজুর দিয়ে, মদ বানানো হয় আঙ্গুর দিয়ে এবং মদ বানানো হয় মধু দিয়ে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৩৭৯]। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব করিয়াছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৩. হইতে বর্ণীতঃ

হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি আদাম হইতে তিনি ইসরাঈল [রাহঃ] হইতে উপরের বর্ণিত হাদীসের মতোই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মাজাহ্‌ [৩৩৭৯]। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৪. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

গম দিয়ে মদ উৎপাদন করা হয়… উপরের হাদীসের মতোই পরের বর্ণনা।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস। ইবরাহীম ইবনি মুহাজিরের বর্ণনার চাইতে এ বর্ণনাটি অনেক বেশি সহিহ। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ বলেছেন, ইবরাহীম ইবনি মুহাজির তেমন বলিষ্ঠ বর্ণনাকারী নন। এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে নুমান ইবনি বাশীরের বরাতেও শাবী হইতে বর্ণিত আছে। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুইটি গাছের ফল দিয়ে মদ বানানো হয়-খেজুর ও আঙ্গুর।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৩৭৮], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু কাসীর আস-সুহাইমী আল-গুবারী হিসাবেও পরিচিত। তার নাম ইয়াযীদ ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি গুফাইলা। ইকরিমা ইবনি আম্মার হইতে শুবা এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশানো পানীয়

১৮৭৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কাঁচা ও পাকা খেজুর একসাথে মিশিয়ে নাবীয বানাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৩৯৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন । মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৭. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[নাবীয বানানোর উদ্দেশ্যে] কাঁচা ও পাকা খেজুর একসাথে মিশাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। তিনি কিশমিশ ও পাকা খেজুর একসাথে মিশাতেও নিষেধ করিয়াছেন। মাটির কলসে নাবীয বানাতেও তিনি নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, মুসলিম [৬/৮৮, ৯৪]। জাবির, আনাস, আবু কাতাদা, ইবনি আব্বাস, উম্মু সালামা [রাদি.] ও মাবাদ ইবনি কাব হইতে তার মায়ের সূত্রে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণের অথবা রুপার তৈরী পাত্রে পান করা নিষেধ

১৮৭৮. হাকাম [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আবী মাইলাকে আমি বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি, হুযাইফা [রাদি.] পানি চাইলেন। একজন লোক তার জন্য রুপার পাত্রে পানি আনলেন। পাত্রটি তিনি ছুড়ে ফেলে দেন এবং বলেন, আমি এটা হইতে তাকে বিরত থাকতে বলেছিলাম, কিন্তু সে বিরত থাকতে সম্মত হয়নি। স্বর্ণের অথবা রুপার পাত্রে পান করিতে এবং রেশমী পোশাক পরতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ এ সকল জিনিস তাহাদের [কাফিরদের] জন্য দুনিয়াতে এবং তোমাদের জন্য আখিরাতে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৪১৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। উম্মু সালামা, বারাআ ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পানি পান করা নিষেধ

১৮৭৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। দাঁড়িয়ে খাওয়া-দাওয়া করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ এটাতো অত্যধিক খারাপ।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৪২৪], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন । মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যামানায় আমরা হাঁটতে হাঁটতে খাবার খেতাম এবং দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পানি পান করতাম।

সহীহ্‌, মিশকাত [৪২৭৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ্‌ এবং উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার-নাফি হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে গারীব। এ হাদীসটি ইমরান ইবনি হুদাইর আবুল বাযারীর বরাতে ইবনি উমার হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবুল বাযারীর নাম ইয়াযীদ, পিতা উতারিদ। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮১. আল-জারূদ ইবনিল মুআল্লা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহিহ। আবু সাঈদ, আবু হুরাইরা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি সাঈদ-কাতাদা হইতে, তিনি আবু মুসলিম হইতে, তিনি আলজারূদ হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। কাতাদা-ইয়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনিশ শিখখীর হইতে, তিনি আবু মুসলিম হইতে, তিনি জারূদ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “মুসলমানের হারানো বস্তু জাহান্নামের লেলিহান [অগ্নি] শিখা সমতুল্য”। জারূদ আল-মুআল্লা আল-আবদীর ছেলে। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী। তাকে আল-জারূদ ইবনিল আলাও বলা হয় । তবে ইবনিল মুআল্লাই সঠিক। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করার সম্মতি

১৮৮২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যমযমের পানি দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৪২২]। আলী, সাদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন । মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮৩. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমর ইবনি শুআইব [রাহঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি [দাদা] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দাঁড়িয়ে ও বসে পান করিতে দেখেছি।

হাসান, মিশকাত [৪২৭৬], মুখতাসার শামা-ইল [১৭৭]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন । মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ পাত্র হইতে পান করার সময় নিঃশ্বাস নেওয়া

১৮৮৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাত্র হইতে পানি পানের সময় তিনবার নিঃশ্বাস নিতেন। তিনি বলিতেনঃ এভাবে পান করা অধিক স্বাচ্ছন্দকর ও তৃপ্তিদায়ক।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ্‌ [৩৪১৬], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। হিশাম দাস্‌তুয়াঈ এ হাদীসটি আবু আসিমের সূত্রে আনাস হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আযরা ইবনি সাবিত সুমামার সূত্রে আনাস হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] পানি পান করার সময় তিনবার নিঃশ্বাস ফেলতেন। সহীহ্‌, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ । মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা এক চুমুকে উটের মত পানি পান করো না; বরং দুই–তিনবারে [শ্বাস নিয়ে] পান কর। তোমরা যখন পান করিবে তখন আল্লাহ্‌ তাআলার নাম নিবে [বিসমিল্লাহ বলবে] এবং যখন শেষ করিবে তখন আল্লাহ্‌ তাআলার প্রশংসা করিবে [ আলহামদুলিল্লাহ বলবে]।

যঈফ, মিশকাত, তাহকিক ছানী [৪২৭৮]। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। ইয়াযীদ ইবনি সিনান আল–জাযারীর উপনাম আবু ফারওয়া আর–রুহাবী, মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ দুই নিঃশ্বাসে পান করা

১৮৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন পান করিতেন তখন দুইবার নিঃশ্বাস নিতেন।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৪১৭]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু রিশদীন ইবনি কুরাইবের সূত্রেই এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। তিনি আরও বলেছেন, আমি আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমানের নিকট রিশদীন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম– রাবী হিসেবে রিশদীন ও মুহাম্মাদ ইবনি কুরাইবের মধ্যে কে বেশী শক্তিশালী? তিনি বলিলেন, এরা খুব কাছাকাছি, তবে আমার মতে রিশদীন অগ্রগণ্য। তিনি আরও বলেছেন, আমি এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈলকে প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, রিশদ্বীনের তুলনায় মুহাম্মদ অগ্রগণ্য। আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনি আব্দুর রহমানের মত আমারও অভিমত এই যে, তাহাদের উভয়ের মধ্যে রিশদীন বেশী অগ্রগণ্য ও প্রকৃষ্টতর। তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]–এর দেখা পেয়েছেন। তারা উভয়ে সহোদর ভাই এবং তাহাদের অনেক মুনকার রিওয়ায়াতও আছে। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ পানীয় দ্রব্যের মধ্যে ফুঁ দেওয়া নিষেধ

১৮৮৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

পানীয় দ্রব্যের মধ্যে ফুঁ দিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। একজন বলিল, পানির পাত্রে ময়লা দেখিতে পেলে? তিনি বলেনঃ তা ঢেলে ফেলে দাও। লোকটি বলিল, আমি এক নিঃশ্বাসে তৃপ্ত হইতে পারি না। তিনি বললেনঃ পাত্রটিকে নিঃশ্বাসের সময় তোমার মুখ হইতে সরিয়ে রাখ।

হাসান, সহীহাহ্ [৩৮৫]. এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৮৮৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তাতে ফুঁ দিতে বারণ করিয়াছেন।

সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৪২৯]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা নিষেধ

১৮৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি আবী কাতাদা [রাহঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি পান করার সময় যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে।

সহিহ, সহিহ আবু দাউদ [২৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ মশকের মুখ উল্টা অবস্থায় রেখে পান কার নিষেধ

১৮৯০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মশকের মুখ উল্টা অবস্থায় রেখে তা হইতে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৪১৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। জাবির, ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ মশকের মুখ উল্টা অবস্থায় রেখে তা হইতে পানি পানের সম্মতি প্রসঙ্গে

১৮৯১. ঈসা ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [পিতা] বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি একটি ঝুলন্ত মশকের দিকে উঠে যান এবং এর মুখ উল্টে ধরে তা থেকে পানি পান করেন।

মুনকার, যঈফ আবু দাউদ। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সুলাইম হইতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদ সহীহ নয়। [অধঃস্তন রাবী] আবদুল্লাহ ইবনি উমারের স্মৃতিশক্তি দুর্বল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি ঈসার নিকটে হাদীস শুনার সুযোগ পেয়েছেন কি-না তা আমি [তিরমিযী] জানি না। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

১৮৯২. কাবশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরে আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় একটি ঝুলন্ত মশকের মুখ হইতে পানি পান করিলেন। আমি পরে উঠে গিয়ে মশকের মুখের সেই অংশ [বারকাতের আশায়] কেটে রেখে দেই।

সহিহ, মিশকাত [৪২৮১], মুখতাসার শামা-ইল [১৮২]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। ইয়াযীদ ইবনি ইয়াযীদ ইবনি জাবির হলেন আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদের সহোদর ভাই এবং তিনি তার আগে মৃত্যুবরণ করেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ ডান পাশের মানুষেরা পান করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে

১৮৯৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, পানি মিশানো দুধ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে হাযির করা হল। একজন বেদুঈন লোক ছিল তাহাঁর ডান পাশে এবং আবু বকর [রাদি.] ছিলেন বাম পাশে। তা তিনি প্রথমে নিজে পান করিলেন, তারপর বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ প্রথমে ডান পাশের মানুষেরা পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার পাবে।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৪২৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। ইবনি আব্বাস, সাহল ইবনি সাদ, ইবনি উমার ও আবদুল্লাহ ইবনি বসুর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২0. অনুচ্ছেদঃ সবার পান করা শেষে পরিবেশনকারী পান করিবে

১৮৯৪. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকদেরকে পানীয় পরিবেশনকারী সবার পান করা শেষে পান করিবে।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৪৩৪], মুসলিম। ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ কোন ধরণের পানীয় দ্রব্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে বেশি প্রিয় ছিল?

১৮৯৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঠান্ডা মিষ্টি শরবত বেশি পছন্দ করিতেন।

সহিহ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৪২৮২], সহীহা [৩০০৬], মুখতাসার শামা-ইল [১৭৫]। আবু ঈসা বলেন, একাধিক বর্ণনাকারী ইবনি উয়াইনা হইতে, তিনি মামার হইতে, তিনি যুহ্রী হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আইশা [রাদি.] হইতে এ হাদীসটি একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। তবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে যুহরীর সূত্রে মুরসাল বর্ণনাটিই সহীহ। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৯৬. যুহরী [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করা হল, কোন প্রকার পানীয় দ্রব্য বেশি ভাল? তিনি বললেনঃ ঠান্ডা মিষ্টি শরবত।

সহিহ, দেখুন পূর্বের হাদীস

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আবদুর রাযযাক [রাহঃ] মামার হইতে, তিনি যুহরী হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে একইভাবে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। এটি ইবনি উয়াইনার রিওয়ায়াতের চাইতে অনেক বেশি সহীহ। মদ হারামের হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

One response to “পানপাত্র ও পানীয় । মদ হারামের হাদিস । মদ পানকারী প্রসঙ্গে”

Leave a Reply