আহার ও খাদ্যদ্রব্য বিষয়ক হাদিস সমূহ
আহার ও খাদ্যদ্রব্য বিষয়ক হাদিস সমূহ , এই অধ্যায়ে মোট ৭৩ টি হাদীস (১৭৮৮-১৮৬০) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-২৩ঃ আহার ও খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদঃ (১-৪৮)=৪৮টি
১. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিসের উপর রেখে খাবার খেতেন?
২. অনুচ্ছেদঃ খরগোশের গোশত খাওয়া
৩. অনুচ্ছেদঃ গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে
৪. অনুচ্ছেদঃ দাবু [ভালুক] খাওয়া প্রসঙ্গে
৫. অনুচ্ছেদঃ ঘোড়ার গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
৬. অনুচ্ছেদঃ গৃহপালিত গাধার গোশত প্রসঙ্গে
৭. অনুচ্ছেদঃ কাফিরদের পাত্রে খাওয়া
৮. অনুচ্ছেদঃ ঘিয়ের পাত্রে ইঁদুর পড়ে মারা গেলে
৯. অনুচ্ছেদঃ বাম হাতে খাওয়া ও পান করা নিষিদ্ধ
১০. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে খাওয়া
১১. অনুচ্ছেদঃ খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে
১২. অনুচ্ছেদঃ পাত্রের মধ্যখান হইতে খাওয়া মাকরূহ
১৩. অনুচ্ছেদঃ পিঁয়াজ-রসুন [রান্না ব্যতীত] খাওয়া মাকরূহ
১৪. অনুচ্ছেদঃ রসুন রান্না করে খাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে
১৫. অনুচ্ছেদঃ শোয়ার সময় পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা এবং আগুন ও বাতি নিভিয়ে দেওয়া
১৬. অনুচ্ছেদঃ দুটি খেজুর একসাথে খাওয়া মাকরূহ
১৭. অনুচ্ছেদঃ খেজুর একটি উপকারী ও মানুষের খুব পছন্দের খাবার
১৮. অনুচ্ছেদঃ খাওয়া-দাওয়ার পর আল্লাহ তাআলার কাছে খাদ্যের জন্য প্রশংসা করা
১৯. অনুচ্ছেদঃ কুষ্ঠ রোগীর সাথে একত্রে খাওয়া
২০. অনুচ্ছেদঃ মুমিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে এক পাকস্থলী ভর্তি করে আর কাফির খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে সাতটি ভর্তি করে
২১. অনুচ্ছেদঃ একজনের খাদ্যই দুইজন ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত হইতে পারে
২২. অনুচ্ছেদঃ ফরিং [এক প্রকার পতঙ্গ] খাওয়া প্রসঙ্গে
২৩. অনুচ্ছেদঃ কীট-পতঙ্গকে বদদুআ করা
২৪. অনুচ্ছেদঃ জাল্লালার গোশত খাওয়া ও দুধ পান করা সম্পর্কে
২৫. অনুচ্ছেদঃ মুরগীর গোশত খাওয়া
২৬. অনুচ্ছেদঃ হুবারার গোশত খাওয়া
২৭. অনুচ্ছেদঃ ভুনা গোশত [কাবাব] খাওয়া
২৮. অনুচ্ছেদঃ হেলান দিয়ে বসে খাবার খাওয়া মাকরূহ
২৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ও মধু পছন্দ করিতেন
৩০. অনুচ্ছেদঃ তরকারিতে ঝোলের পরিমাণ বেশি রাখা
৩১. অনুচ্ছেদঃ সারীদের বিশিষ্টতা
৩২. অনুচ্ছেদঃ গোশত দাঁত দিয়ে ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া
৩৩. অনুচ্ছেদঃ গোশত ছুরি দিয়ে কেটে কেটে খাওয়ার সম্মতি প্রসঙ্গে
৩৪. অনুচ্ছেদঃ কোন্ ধরণের গোশত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বেশি পছন্দনীয় ছিল ?
৩৫. অনুচ্ছেদঃ সিরকার বর্ণনা
৩৬. অনুচ্ছেদঃ তরমুজ খেজুরের সাথে একত্রে খাওয়া
৩৭. অনুচ্ছেদঃ শসা খেজুরের সাথে একত্রে খাওয়া
৩৮. অনুচ্ছেদঃ উটের প্রস্রাব পান করা প্রসঙ্গে
৩৯. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার আগে ও পরে ওযূ করা
৪০. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার আগে ওযূ না করার সম্মতি প্রসঙ্গে
৪১. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
৪২. অনুচ্ছেদঃ কদুর [লাউ-এর] তরকারি খাওয়া প্রসঙ্গে
৪৩. অনুচ্ছেদঃ যাইতূনের তেল খাওয়া প্রসঙ্গে
৪৪. অনুচ্ছেদঃ নিজ খাদিমের সাথে একত্রে খাবার খাওয়া
৪৫. অনুচ্ছেদঃ খাবার খাওয়ানোর সাওয়াব
৪৬. অনুচ্ছেদঃ রাতের খাবারের গুরুত্ব
৪৭. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
৪৮. অনুচ্ছেদঃ খাওয়া-দাওয়া শেষে হাতের চর্বি পরিষ্কার না করে রাত অতিবাহিত করা মাকরূহ
১. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিসের উপর রেখে খাবার খেতেন?
১৭৮৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনও উচ্চ দস্তরখানে [টেবিলে] বসে এবং [বিভিন্ন প্রকার চাটনি ও হজমির] ছোট ছোট পেয়ালায় নিয়ে খাননি। কখনো তাহাঁর জন্য পাতলা রুটি বানানো হয়নি। কাতাদা [রঃ]-কে আমি [ইউনুস] প্রশ্ন করলাম, তাহলে কিসের উপর [থালা] রেখে তাঁরা খাওয়া-দাওয়া করিতেন? তিনি বলিলেন, চামড়ার এই সাধারণ দস্তরখানা বিছিয়ে তার উপর।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২৯২], বুখারী এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার বলেন, এই ইউনুস হলেন ইউনুস আল-ইসকাফ। সাঈদ ইবনি আবী আরূবা হইতে, তিনি কাতাদা হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে আবদুল ওয়ারিস ইবনি সাঈদ [রঃ] উপরোক্ত হাদীসের মতো বর্ণনা করিয়াছেন. আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ খরগোশের গোশত খাওয়া
১৭৮৯. হিশাম ইবনি যাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আনাস [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আমরা একটি খরগোশকে মাররায-যাহরানে তাড়া করলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ এর পিছু ধাওয়া করিলেন। আমি এর নাগালে পৌঁছে তা ধরে ফেললাম। আমি আবু তালহা [রাদি.]-এর সামনে খরগোশটি নিয়ে আসলে তিনি একটি ধারালো পাথর দিয়ে তা যবেহ করেন। তিনি আমাকে এর ঊরু অথবা নিতম্বের গোশত দিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পাঠালে তিনি তা খেলেন। আমি [হিশাম] প্রশ্ন করলাম, তিনি কি তা খেয়েছেন? আনাস [রাদি.] বলিলেন, তিনি তা গ্রহণ করিয়াছেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২৪৩], নাসা-ঈ, আবু ঈসা বলেন, জাবির, আম্মার ও মুহাম্মাদ ইবনি সাফওয়ান [রাদি.] [তাকে মুহাম্মাদ ইবনি মাইফীও বলা হয়] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক বেশিরভাগ অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। খরগোশের গোশত খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই বলে তারা মনে করেন। খরগোশের গোশত খাওয়াকে অপর কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আলিম মাকরূহ বলেন। তারা বলেন, খোরগোশের ঋতুস্রাব হয় । আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে
১৭৯০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
গুইসাপ খাওয়ার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ আমি তা খাই না এবং তা হারামও বলি না।
সহীহ্, নাসা-ঈ ,উমার, আবু সাঈদ, ইবুন আব্বাস, সাবিত ইবনি ওয়াদিআ, জাবির ও আবদুর রাহমান ইবনি হাসান নহে্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। গুইসাপ খাওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলিমগণ দ্বিমত পোষণ করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম তা খাওয়ার পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন এবং তাহাদের অন্য এক দল তা খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “গুইসাপের গোশত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দস্তরখানে খাওয়া হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত অরুচির কারণে তা পরিত্যাগ করিয়াছেন”। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ দাবু [ভালুক] খাওয়া প্রসঙ্গে
১৭৯১. ইবুন আবী আম্মার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম, দাবু কি শিকারযোগ্য প্রাণী? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আবার বলিলেন, আমি কি তা খেতে পারি? জাবির [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ। প্রশ্নকারী আবার প্রশ্ন করেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তা বলেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২৩৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। দাবু খাওয়াতে তারা কোন সমস্যা মনে করেন না। এই অভিমত দিয়েছেন ঈমাম আহ্মাদ এবং ইসহাকও। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে দাবু খাওয়া মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারেও একটি হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু তার সনদ খুব একটা জোড়ালো নয়। দাবু খাওয়াকে অপর একদল আলিম মাকরূহ বলেছেন। একথা বলেছেন ইবনিল মুবারাকও। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান বলেছেন, এ হাদীসটিকে আবদুল্লাহ ইবনি উবাইদ ইবনি উমাইর-ইবনি আবী আম্মার হইতে, তিনি জাবির [রাদি.] হইতে, তিনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে উমার [রাদি.]-এর কথা বলে জারীর ইবনি হাযিম বর্ণনা করছেন। এ ক্ষেত্রে ইবনি জুরাইজের হাদীসটিই অনেক বেশি সহিহ। ইবনি আবী আম্মারের নাম আবদুর রাহমান ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি আবী আম্মার। তিনি মক্কার অধিবাসী। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৯২. খুযাইমা ইবনি জাযয়ি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর নিকটে ভালুক খাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ ভালুক কেউ খায় নাকি? আমি তাঁকে নেকড়ে বাঘ খাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ কোন উত্তম লোক নেকড়ে বাঘ খায় নাকি?
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২৩৭]। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসের সনদ মযবুত নয়। আমরা শুধুমাত্র ইসমাঈল ইবনি মুসলিমের মাধ্যমে আব্দুল করিমের সূত্রেই হাদীসটি জানতে পেরেছি। কিছু হাদীস বিশারদ এ হাদীসের রাবী ইসমাঈল ও আবদুল কারীম আবু উমাইয়্যার সমালোচনা করিয়াছেন। তিনি কাইস ইবনিল মুখারিকের পুত্র। কিন্তু মালিক আল-জাযারীর পুত্র আবদুল কারীম সিকাহ রাবী। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ ঘোড়ার গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
১৭৯৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ঘোড়ার গোশত খাইয়েছেন এবং আমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।
সহিহ, ইরওয়া [৮/১৩৮] মুসলিম ও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আসমা বিনতু আবু বাকর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আমর ইবনি দীনারের সূত্রে জাবির [রাদি.] হইতে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি আমর ইবনি দীনার হইতে মুহাম্মাদ ইবনি আলী [রঃ]-এর সূত্রে জাবির [রাদি.] হইতে হাম্মাদ [রঃ] বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উয়াইনার বর্ণনাটি অনেক বেশি সহিহ। আমি [তিরমিযী] ঈমাম বুখারীকে বলিতে শুনিয়াছি, হাম্মাদ ইবনি যাইদ [রঃ]-এর চেয়ে সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা [রঃ] বেশি স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস৬. অনুচ্ছেদঃ গৃহপালিত গাধার গোশত প্রসঙ্গে
১৭৯৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, খাইবারের [যুদ্ধের] সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহিলাদের সাথে মুতআ বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন করিতে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৯৬১], নাসা-ঈ, সাঈদ ইবনি আবদুর রাহমান আল-মাখযূমী-সুফিয়ান হইতে, তিনি যুহ্রী হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ও হাসান [মুহাম্মাদ ইবনিল হানাফিয়ার পুত্রদ্বয়] হইতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। যুহ্রী [রঃ] বলেন, হাসান ইবনি মুহাম্মাদই হলেন এই দুইজনের মধ্যে অনেক বেশি সন্তোষজনক। সাঈদ ইবনি আবদুর রাহমান ছাড়া অন্যান্য বর্ণনাকারী ইবনি উয়াইনা হইতে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ তাহাদের মধ্যে অনেক বেশি সন্তোষজনক। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৯৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, খাইবারের যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে কোন প্রকারের শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র প্রাণী, চাঁদমারির [নিশানার] লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হত্যা করা প্রাণী [মুজাসসামা] এবং গৃহপালিত গাধা হারাম ঘোষণা করিয়াছেন।
হাসান সহিহ, সহীহা [৩৫৮, ২৩৯১], ইরওয়া [২৪৮৮] আলী, জাবির, বারাআ, ইবনি আবী আওফা, আনাস, ইরবায ইবনি সারিয়া, আবু সালাবা, ইবনি উমার ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনি আমর হইতে অপর একটি সূত্রে আবদুল আযীয ইবনি মুহাম্মাদ প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তাহাদের বর্ণনায় তারা একটিমাত্র বিষয় উল্লেখ করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] “শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র প্রাণী হারাম ঘোষণা করিয়াছেন”। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭. অনুচ্ছেদঃ কাফিরদের পাত্রে খাওয়া
১৭৯৬. আবু সালাবা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাজূসীদের [অগ্নি উপাসক] হাঁড়ি-পাতিল সম্বন্ধে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ এগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নাও, তারপর এগুলো রান্নার কাজে লাগাও। শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র প্রাণী তিনি নিষিদ্ধ করিয়াছেন।
সহিহ, [১৫৬০] নং হাদীস পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আবু সালাবা [রাদি.]–এর রিওয়ায়াত হিসাবে মাশহূর। তার সূত্রে অন্যভাবেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আবু সালাবা [রাদি.]-এর নাম জুরসূম, মতান্তরে জুরহুম বা নাশিব। আবু কিলাবা-আবু আসমা আর রাহাবী হইতে, তিনি আবু সালাবা [রাদি.] হইতে এই সূত্রেও উল্লেখিত হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৯৭. আবু সালাবা আল-খুশানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল![সাঃআঃ] আমরা আহ্লে কিতাবের লোকালয়ে বাস করি, তাহাদের হাঁড়ি-পাতিলে রান্না করি এবং তাহাদের থালা-বাটি পানাহারের কাজে লাগাই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এদেরগুলো ব্যতীত অন্য ব্যবস্থা করিতে না পারলে তবে পানি দিয়ে এগুলো ধুয়ে নাও। তিনি আবার বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! শিকারের পশু পাওয়া যায় এমন এলাকায় আমরা বসবাস করি, আমরা কি করব? তিনি বললেনঃ তুমি শিকারের উদ্দেশ্যে তোমার শিকারী কুকুর ছেড়ে থাকলে এবং সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার নাম নিয়ে থাকলে সে শিকার ধরে হ্ত্যা করে ফেললে তুমি তা খেতে পার। কুকুরটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হলে তবে এর শিকার যবেহ করার সুযোগ পাওয়া গেলে তা খাও। তুমি তোমার তীর নিক্ষেপ করলে এবং সাথে সাথে আল্লাহ্ তাআলার নাম নিলে তা শিকারকে মেরে ফেললেও তা খেতে পার।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২০৭], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ ঘিয়ের পাত্রে ইঁদুর পড়ে মারা গেলে
১৭৯৮. মাইমূনা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কোন এক সময় ঘিয়ের মধ্যে একটি ইঁদুর পড়ে মারা গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ ইঁদুরটি তুলে ফেল এবং চারপাশের ঘিও ফেলে দাও, তারপর তা খাও।
সহিহ, বুখারী [২৩৫] আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। যুহ্রী-উবাইদুল্লাহ হইতে ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রেও উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণিত আছে এবং এই সনদসূত্রে মাইমূনা [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। তবে ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই মাইমূনা [রাদি.]-এর সূত্রটি অনেক বেশি সহিহ। পূর্বোক্ত হাদীসের মতো মামার-যুহ্রী হইতে, তিনি সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণিত আছে, কিন্তু এই সূত্রটি অরক্ষিত। আবু ঈসা বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল আল-বুখারীকে বলিতে শুনিয়াছি, মামার-যুহ্রী হইতে, তিনি সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শক্ত হয়ে জমানো ঘি হলে তোমরা ইঁদুরটি এবং তার চারপাশের ঘি ফেলে দাও, আর তরল হলে তার ধারেও যেও না। মামার এতে ভুল করিয়াছেন। নির্ভুল হল যুহ্রী-উবাইদুল্লাহ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, তিনি মাইমূনা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ বাম হাতে খাওয়া ও পান করা নিষিদ্ধ
১৭৯৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাম হাতে যেন তোমাদের কেউ না খায় এবং পান না করে। কেননা বাম হাতে শাইতান পানাহার করে।
সহিহ, সহীহা [১২৩৬], মুসলিম, জাবির, উমার ইবনি সালামা, সালামা ইবনিল আকওয়া, আনাস ইবনি মালিক ও হাফসা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্নিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মামার ও উকাইল [রঃ]-যুহ্রী হইতে, তিনি সালিম হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক ও ইবনি উয়াইনার সূত্রটি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সহিহ। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০০. সালিম [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকে যেন খাওয়ার সময় ডান হাতে খায় এবং ডান হাতে পান করে। কারণ বাম হাতে শাইতান পানাহার করে।
সহিহ, দেখুন পূর্বের হাদীস, আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে খাওয়া
১৮০১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকে যেন খাওয়ার শেষে তার আঙ্গুল চাটে। কেননা তার জানা নেই যে, খাবারের কোন ভাগে বারাকাত নিহিত রয়েছে।
সহিহ, রাওযুন নাযীর [১৯], মুসলিম, জাবির, কাব ইবনি মালিক ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র সুহাইল ইবনি আবু সালিহ-এর সূত্রেই জেনেছি। আমি [তিরমিযী] এ হাদীস সম্বন্ধে মুহাম্মাদকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আবদুল আযীযের হাদীসটি বিরোধপূর্ণ। আমরা এ হাদীসটি শুধুমা্ত্র তার সূত্রেই জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে
১৮০২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কারো খাবারের লোকমা নিচে পড়ে যায় তাহলে সে যেন সন্দেহজনক জিনিস [ময়লা] দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং তা যেন শাইতানের জন্য ফেলে না রাখে।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২৭৯], মুসলিম, আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] খাওয়ার পরে তাহাঁর তিনটি আঙ্গুল চাটতেন। তিনি বলিতেনঃ তোমাদের কারো খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শাইতানের জন্য তা ফেলে না রাখে। [বর্ণনাকারী বলেন,] আমাদেরকে তিনি থালাও চেটে খাওয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেনঃ তোমাদের খাদ্যের কোন্ অংশে বারকাত রয়েছে তা তোমাদের জানা নেই।
সহিহ, মুখাতাসার শামা-ইল [১২০], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০৪. উম্মু আসিম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নুবাইশা আল-খাইর [রাদি.] আমাদের নিকটে এলেন, আমরা একটি পাত্রে খাবার খাচ্ছিলাম। তিনি আমাদের নিকটে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি পাত্রে খাবার পর তা চেটে খেলে পাত্রটি তার জন্য [আল্লাহ তাআলার নিকটে] ক্ষমা প্রার্থনা করে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২৭১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র মুআল্লা ইবনি রাশিদের সূত্রেই আমরা হাদীসটি জানতে পেরেছি। ইবনি হারুন-সহ আরো কিছু রাবী এ হাদীসটি শুধু মুআল্লা ইবনি রাশিদের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ পাত্রের মধ্যখান হইতে খাওয়া মাকরূহ
১৮০৫,ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খাদ্যের মাঝখানে বারকাত নাযিল হয় অতএব তোমরা এর কিনারা হইতে খাওয়া আরম্ভ কর, মাঝখান হইতে খেও না
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩২৭৭] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এটি আতা ইবনিস সাইবের রিওয়ায়াত হিসাবেই পরিচিত। আতার সূত্রে শুবা ও সাওরীও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ পিঁয়াজ-রসুন [রান্না ব্যতীত] খাওয়া মাকরূহ
১৮০৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে এটা হইতে খেলো, বর্ণনানুসারে তিনি প্রথম বার রসুনের কথা বলেছেন, তারপর বলেছেনঃ রসুন, পিয়াজ ও একইরকম দুর্গন্ধ যুক্ত জিনিস খেলো, সে আমাদের মাসজিদের নিকটেও যেন না আসে।
সহিহ, ইরওয়া [৫৪৭], মুসলিম এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। উমার, আবু আইয়্যূব, আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ, জাবির ইবনি সামুরা, কুররা ইবনি ইয়াস আল-মুযানী ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০৭. সিমাক ইবনি হারব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.]-কে তিনি বলিতে শুনেছেন, আবু আইয়্যূব আনসারী [রাদি.]-এর বাড়ীতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পদার্পণ করেন। তিনি খাওয়া-দাওয়ার পর [নিত্য দিনের অভ্যাস মতো] বাকী খাবার আবু আইয়্যূব আনসারীকে দিতেন। একদিন তিনি খাবার পাঠান। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তা হইতে মোটেও খাননি। আবু আইয়্যূব [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে এর কারণ জানতে চাইলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এর মধ্যে রসুন আছে। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল![সাঃআঃ] তা কি হারাম? তিনি বললেনঃ না, তবে আমি এর দুর্গন্ধের কারণে তা অপছন্দ করি।
সহিহ, ইরওয়া [২৫১১], মুসলিম এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ রসুন রান্না করে খাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে
১৮০৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুন রান্না না করে [কাঁচা] খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
সহিহ, ইরওয়া [২৫১২] আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রান্না করা ব্যতীত রসুন খাওয়া ঠিক নয়।
যঈফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসের সনদ খুব একটা মজবুত নয়। আলী [রাদি.]-এর বিবৃতি হিসেবেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। শারীকের এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে। মুহাম্মাদ বলেছেন, আল-জাররাহ ইবনি মালীহ সত্যবাদী এবং আল-জাররাহ ইবনিয যাহহাক হাদীস শাস্ত্রে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮১০. উম্মু আইয়্যূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের মেহমান হলেন। তারা তাহাঁর জন্য সুস্বাদু খাবার রান্না করেন। তার মধ্যে এই [পিয়াজ-রসুনের] সবজীরও কিছু অংশ ছিল। তিনি তা খেতে অপছন্দ করিলেন। তিনি তাহাঁর সাহাবীদের বললেনঃ তোমরা এটা খাও। আমি তোমাদের কারো মতো নই। আমার আশংকা হচ্ছে [এটা খাওয়ার কারণে] আমার সাথীকে [ফেরেশতার] কষ্টে ফেলতে পারি
হাসান, ইবনি মা-জাহ [৩৩৬৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ গারীব বলেছেন। উম্মু আইয়্যূব [রাদি.] হলেন আবু আইয়্যূব আনসারী [রাদি.]-এর স্ত্রী। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১৮১১. আবুল আলিয়া হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুন হালাল খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।
সনদ দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন। আবু খালদার নাম খালিদ ইবনি দীনার। হাদীস বিশারদদের নিকট তিনি বিশ্বস্থ রাবী। তিনি আনাস ইবনি মালিকের দেখা পেয়েছেন এবং তার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবুল আলিয়ার নাম রুফাঈ আর-রিযাহী। আব্দুর রহমান ইবনি মাহদী বলেন, আবু খালদাহ একজন উত্তম মুসলিম ছিলেন।
আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ শোয়ার সময় পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা এবং আগুন ও বাতি নিভিয়ে দেওয়া
১৮১২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [শোয়ার আগে] ঘরের দরজা বন্ধ করে দিও, পানির পাত্রের মুখ ঢেকে বা বেঁধে দিও, থালাগুলো উপুর করে রেখ অথবা ঢেকে দিও এবং আলো নিভিয়ে দিও। কেননা শাইতান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। মশকের বন্ধ মুখ উদম করিতে পারে না এবং পাত্রের মুখ খুলতে পারে না। [আলো না নিভালে] মানুষের ঘরে দুষ্টু ইঁদুর আগুন লাগিয়ে দেয়।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৪১], মুসলিম ,ইবনি উমার, আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীসটি জাবির [রাদি.] হইতে অপরাপর সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮১৩. সালিম [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আবদুল্লাহ] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শোয়ার সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।
সহিহ, সহীহুল আদাব [৯৩৮], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ দুটি খেজুর একসাথে খাওয়া মাকরূহ
১৮১৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একই থালায় একসথে খেতে বসলে] সাথীর সম্মতি ছাড়া একসাথে দুটি খেজুর খেতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৩৩১], সহীহা [২৩২৩], নাসা-ঈ, আবু বাকর [রাদি.]-এর আযাদকৃত দাস সাদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ খেজুর একটি উপকারী ও মানুষের খুব পছন্দের খাবার
১৮১৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খেজুরহীন ঘরের মানুষেরা যেন অনাহারী।
সহিহ, সহীহা [১৭৭৬], মুসলিম, আবু রাফির স্ত্রী সালমা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদসূত্রে হাসান গারীব বলেছেন আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র এই সূত্রে হিশাম ইবনি উরওয়ার রিওয়ায়াত হিসাবে জেনেছি। আমি [তিরমিযী] বুখারী [রঃ]-কে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বলিলেন, ইয়াহইয়া ইবনি হাসসান ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেছে বলে আমার জানা নেই। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ খাওয়া-দাওয়ার পর আল্লাহ তাআলার কাছে খাদ্যের জন্য প্রশংসা করা
১৮১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন কিছু খেয়ে অথবা কিছু পান করে বান্দাহ আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করলে অবশ্যই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৫১], মুসলিম, উকবা ইবনি আমির, আবু সাঈদ, আইশা, আবু আইয়্যূব ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে যাকারিয়্যা ইবনি আবী যাইদা হইতে বর্ণিত হয়েছে। আমরা এ হাদীসটি শুধু যাকারিয়্যা ইবনি আবী যাইদার রিওয়ায়াত হিসাবে জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস ১৯. অনুচ্ছেদঃ কুষ্ঠ রোগীর সাথে একত্রে খাওয়া
১৮১৭, জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক কুষ্ঠ রোগীর হাত ধরে তাকে নিজের সাথে একই পাত্রে খাওয়াতে বসান। অতঃপর তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলার নামে আল্লাহ্ তাআলার উপর আস্থা রেখে এবং [প্রতিটি ব্যাপারে] তার উপর ভরসা করে খাও।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৫৪২]। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু ইউনুস ইবনি মুহাম্মাদ-আল-মুফাযযাল ইবনি ফাযালার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমেই এ প্রসঙ্গে জেনেছি। মুফাযযাল ইবনি ফাযালা [রঃ] বসরার একজন শাইখ [হাদীসের উস্তাদ]। আর অপর একজন আল-মুফাযযাল ইবনি ফাযালা আছেন তিনিও বসরার শাইখ এবং তিনি বসরার এই শাইখের চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। শুবাও এ হাদীসটি হাবীব ইবনিশ শহীদ-ইবনি বুরাইদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে আছে, উমার [রাদি.] জনৈক কুষ্ঠ রোগীর হাত ধরলেন…..। আমার মতে শুবার হাদীসটিই অনেক বেশী সুপ্রমাণিত ও সহীহ। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ মুমিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে এক পাকস্থলী ভর্তি করে আর কাফির খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে সাতটি ভর্তি করে
১৮১৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাত পাকস্থলী ভর্তি করে কাফির খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে, আর একটিমাত্র পাকস্থলী ভর্তি করে মুমিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৫৭], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ, আবু বাসরাহ্ আল-গিফারী, আবু মূসা, জাহ্জাহ্ আল-গিফারী, মাইমূনা ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮১৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একবার একজন কাফির রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাসায় মেহমান হন। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হুকুম করেন। ছাগল দোহনের পর সে সবটুকু দুধ পান করে। আরেকটি ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। তৃতীয় ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। এরকমভাবে সে একটানা সাতটি ছাগলের দুধ পান করে শেষ করে ফেলে।
পরের দিন সকালে সে ইসলাম ক্ববুল করে। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হুকুম দেন। ছাগল দোহনের পর সে তা পান করে। তার জন্য তিনি আরো একটি ছাগলের দোহন করিতে হুকুম দেন। কিন্তু সে তা পান করে আর শেষ করিতে পারল না। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ মুমিন লোক একটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে, আর কাফির লোক সাতটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৫৬], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা সুহাইলের হাদীস হিসেবে হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ একজনের খাদ্যই দুইজন ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত হইতে পারে
১৮২০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুজন ব্যক্তির খাদ্য তিনজনের জন্য পর্যাপ্ত এবং তিনজন ব্যক্তির খাদ্য চারজনের জন্য পর্যাপ্ত হইতে পারে।
সহীহ্, সহীহা[১৬৮৬], নাসা-ঈ, জাবির ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। জাবির ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একজন ব্যক্তির খাদ্য দুজনের জন্য পর্যাপ্ত, দুজন ব্যক্তির খাদ্য চারজনের জন্য পর্যাপ্ত এবং চারজন ব্যক্তির খাদ্য আটজনের জন্য পর্যাপ্ত হইতে পারে। মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্শার আব্দুর রাহমান ইবনি মাহদী হইতে, তিনি সুফিয়ান হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি আবু সুফিয়ান হইতে, তিনি জাবির হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এটি বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ্, প্রাগুক্ত, মুসলিম. আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ ফরিং [এক প্রকার পতঙ্গ] খাওয়া প্রসঙ্গে
১৮২১. আবদুল্লাহ ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ফরিং [খাওয়া] প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি ছয়টি যুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা ফরিং খেয়েছি।
সহীহ্, নাসা-ঈ, আবু ইসা বলেন, এ হাদীসটি আবু ইয়াফূর [রাদি.]-এর সূত্রে সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা [রঃ] একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন এবং ছয়টি যুদ্ধের কথা সেখানে উল্লেখ করিয়াছেন। এই হাদীসটি আবু ইয়াফূর [রঃ]-এর সূত্রে সুফিয়ান সাওরী প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন এবং সেখানে সাতটি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮২২. ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা সাতটি যুদ্ধে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছি। এ সময় আমরা ফরিং খেয়েছি।
সহীহ্, নাসা-ঈ,আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি শুবা আবু ইয়াফুর হইতে, তিনি ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমরা সাতটি যুদ্ধে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অংশগ্রহণ করি। এ সময় আমরা ফরিং খেয়েছি। ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। আবু ইয়াফূরের নাম ওয়াকিদ মতান্তরে ওয়াকদান। অপর এক আবু ইয়াফূরের নাম আবদুর রাহমান, বাবা উবাইদ, দাদা বিসতাস। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ কীট-পতঙ্গকে বদদুআ করা
১৮২৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তারা উভয়ে বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পঙ্গপালকে বদদুআ করলে এভাবে বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَهْلِكِ الْجَرَادَ اقْتُلْ كِبَارَهُ وَأَهْلِكْ صِغَارَهُ وَأَفْسِدْ بَيْضَهُ وَاقْطَعْ دَابِرَهُ وَخُذْ بِأَفْوَاهِهِمْ عَنْ مَعَاشِنَا وَأَرْزَاقِنَا إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
“হে আল্লাহ! পঙ্গপালকে ধ্বংস করুন, এদের বড়গুলোকে হত্যা করুন, ছোটগুলোকে ধ্বংস করুন, এর ডিমগুলো বিনষ্ট করুন এবং তা সমূলে নিশ্চিহ্ন করুন, আমাদের জীবনযাত্রার উপকরণ ও রিযিক হইতে সেগুলোর মুখ ফিরিয়ে রাখুন। অবশ্যই আপনি দুআ শ্রবণকারী”। তখন এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে আল্লাহ্ তাআলার সৈন্যবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত একটি দলের মূলোচ্ছেদের জন্য দুআ করিতে পারেন? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ ওগুলো হচ্ছে সমুদ্রের মাছের ঝাঁকের ন্যায়।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এই হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। মূসা ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহীম আত-তাইমীর সমালোচনা করা হয়েছে। তিনি বহু গারীব ও মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী। তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহীম নির্ভরযোগ্য রাবী এবং তিনি মাদীনার অধিবাসী। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৪. অনুচ্ছেদঃ জাল্লালার গোশত খাওয়া ও দুধ পান করা সম্পর্কে
১৮২৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাল্লালার [পায়খানা খেতে অভ্যস্ত গৃহপালিত প্রাণী] গোশত খেতে ও তার দুধ পান করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩১৮৯] ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি সুফিয়ান সাওরী-ইবনি আবী নাজীহ হইতে, তিনি মুজাহিদ হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮২৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] নিষিদ্ধ করেছেনঃ চাঁদমারির [নিশানার] লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তীর মেরে হত্যা করা প্রাণী খেতে, জাল্লালার [পায়খানা খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া পশু] দুধ পান করিতে এবং কলসের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করিতে।
সহীহ্, ইরওয়া[২৫০৩], সহীহা [২৩৯১] মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন ইবনি আদী, তিনি সাঈদ ইবনি আবী আরূবা হইতে, তিনি কাতাদা হইতে, তিনি ইকরিমা হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ মুরগীর গোশত খাওয়া
১৮২৬. যাহ্দাম আল-জারমী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু মূসা [রাদি.]-এর সামনে গেলাম। তিনি তখন মুরগীর গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমার সামনে এগিয়ে এসো এবং খাবারে অংশগ্রহণ কর। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি মুরগীর গোশত খেতে দেখেছি।
সহীহ্, ইরওয়া [২৪৯৯], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। যাহদাম হইতে একাধিক সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আমরা শুধু যাহ্দামের সূত্রেই উক্ত হাদীসটি বর্ণিত পেয়েছি। আবুল আওয়্যামের নাম ইমরান-আল-কাত্তান। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮২৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি মোরগের গোশত ভক্ষণ করিতে দেখেছি।
সহীহ্, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটিতে আরো লম্বা বক্তব্য আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীসটি আল-কাসিম আত-তামীমী হইতে, তিনি আবু কিলাবা হইতে, তিনি যাহ্দাম [রঃ] হইতে এ সূত্রেও আইয়্যূব আস-সাখতিয়ানী বর্ণনা করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬. অনুচ্ছেদঃ হুবারার গোশত খাওয়া
১৮২৮.ইবরাহীম ইবনি উমার ইবনি সাফীনা [রাদি.] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
সাফীনা [রাদি.] বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সাথে হুবারার গোশত খেয়েছি।
যঈফ, ইরওয়া [২৫০০]। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই উক্ত হাদীস জেনেছি। ইবনি আবু ফুদাইক [রঃ] ইবরাহীম [বুরাইদ ইবনি উমার ইবনি সাফীনাহ বলেও কথিত] ইবনি উমার ইবনি সাফীনার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৭. অনুচ্ছেদঃ ভুনা গোশত [কাবাব] খাওয়া
১৮২৯. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [ছাগলের] পাঁজরের ভুনা গোশত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে রাখলেন। তিনি তা হইতে খেলেন, তারপর নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন কিন্তু [আবার] ওযূ করেননি।
সহীহ্, মুখতাসার শামা-ইল [১৩৮] আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস, মুগীরা ও আবু রাফি [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ এবং এই সনদসূত্রে গারীব বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮. অনুচ্ছেদঃ হেলান দিয়ে বসে খাবার খাওয়া মাকরূহ
১৮৩০. আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি হেলান দিয়ে কখনো খাবার খাই না।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৬২], বুখারী, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধু আলী ইবনিল আকমারের সূত্রে জেনেছি। এ হাদীসটি আলী ইবনিল আকমারের সূত্রে যাকারিয়্যা ইবনি আবু যাইদা, সুফিয়ান ইবনি সাঈদ সাওরী প্রমুখ আলী ইবনিল আকমার হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি আলী ইবনিল আকমারের সূত্রে শুবা-সুফিয়ান সাওরী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আলী, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ও মধু পছন্দ করিতেন
১৮৩১. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিষ্টি ও মধু পছন্দ করিতেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৩২৩], নাসাঈ . এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আলী ইবনি মুসহির-হিশাম ইবনি উরওয়ার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসে আরো অনেক বক্তব্য রয়েছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০. অনুচ্ছেদঃ তরকারিতে ঝোলের পরিমাণ বেশি রাখা
১৮৩২. আলকামা ইবনি আবদুল্লাহ আল-মুযানী [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আবদুল্লাহ] বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ গোশত কিনলে [রান্নার সময়] সে যেন তাতে বেশী ঝোল রাখে। কারো ভাগে গোশত না পড়লেও সে যেন অন্তত ঝোল খেতে পায়। এটাও গোশতের অন্তর্ভুক্ত।
যঈফ, যঈফা [২৩৪১]। এ অনুচ্ছেদে আবু যার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি ফাযাআর হাদীস হিসেবে এটি জেনেছি। তিনি ছিলেন স্বপ্নের ব্যাখ্যাকার। সুলাইমান ইবনি হারব মুহাম্মাদ ইবনি ফাযাআর সমালোচনা করিয়াছেন। আলকামা ইবনি আবদুল্লাহ হলেন বাকর ইবনি আবদুল্লাহ আল-মুযানীর ভাই। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮৩৩. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ন্যায়সংগত ও কল্যাণকর কাজের কোন বিষয়কেই যেন তোমাদের কেউ তুচ্ছ মনে না করে। সে [ভাল করার মতো] কিছু না পেলে অন্তত তার ভাইয়ের সাথে যেন হাসিমুখে মিলিত হয়। তুমি গোশত কিনে তা অথবা অন্য কিছু রান্না করার সময় তাতে ঝোলের পরিমাণ বেশি রাখবে এবং তোমার প্রতিবেশীকেও তা হইতে এক আঁজলা দিবে।
সহীহ্, মুসলিম [৮/৩৭], পৃথকভাবে, সহীহা [১৩৬৮], তালীকুর রাগীব [৩/২৬৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীসটি শুবা বর্ণনা করিয়াছেন আবু ইমরান আল-জাওনী হইতে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১. অনুচ্ছেদঃ সারীদের বিশিষ্টতা
১৮৩৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পুরুষদের মধ্যে অনেক কামিল ব্যক্তি এসেছে। কিন্তু ইমরান-কন্যা মারইয়াম [আঃ] এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া [রাদি.]-এর মতো আর কোন কামিল লোক মহিলাদের মধ্যে আসেনি। অন্য সব খাবারের চাইতে সারীদের যেমন বেশি মর্যাদা [অগ্রাধিকার] রয়েছে, তেমনি মহিলাদের উপর আইশা [রাদি.]-এরও একইরকম মর্যাদা রয়েছে।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৮০], নাসাঈ, আইশা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩২. অনুচ্ছেদঃ গোশত দাঁত দিয়ে ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া
১৮৩৫. আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমার পিতা [হারিস] আমাকে বিয়ে করিয়ে দেন। এ উপলক্ষে তিনি কিছু লোককে দাওয়াত করেন। তাহাদের মধ্যে সাফওয়ান ইবনি উমাইয়া [রাদি.]-ও ছিলেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গোশত দাঁত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে বা কেটে কেটে খাও। কেননা তা খুবই সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক।
যঈফ, যঈফা [২১৯৩]। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আইশ ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। উল্লেখিত হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র আবদুল কারীমের সূত্রেই জেনেছি। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আবদুল কারীমের স্মরণশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন। আইউব সাখতিয়ানী তাহাদের অন্যতম। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৩. অনুচ্ছেদঃ গোশত ছুরি দিয়ে কেটে কেটে খাওয়ার সম্মতি প্রসঙ্গে
১৮৩৬. জাফর ইবনি আমর ইবনি উমাইয়া আয-যাম্রী [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আমর ইবনি উমাইয়া] নাবী [সাঃআঃ]-কে ছুরি দিয়ে একটি ছাগলের কাঁধের [রান্না করা] গোশত কাটতে এবং তা খেতে দেখেছেন। তারপর তিনি নামাজ আদায়ের জন্য চলে গেলেন কিন্তু [নতুন করে] ওযূ করেননি।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৪৯০], নাসাঈ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৪. অনুচ্ছেদঃ কোন্ ধরণের গোশত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বেশি পছন্দনীয় ছিল ?
১৮৩৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য গোশত আনা হল এবং তাঁকে বাহুর গোশত পরিবেশন করা হল। তিনি বাহুর গোশতই বেশি পছন্দ করিতেন। তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে চিবিয়ে খেলেন।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৩০৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, ইবনি মাসউদ, আইশা, আবদুল্লাহ ইবনি জাফর ও আবু উবাইদা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ । আবু হাইয়্যানের নাম ইয়াহ্ইয়া, পিতা সাঈদ ইবনি হাইয়্যান আত-তামীমী । আবু যারআর নাম হারিম । আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮৩৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর নিকটে বাহুর গোশত অন্য সব অংশের গোশতের চেয়ে বেশী প্রিয় ছিল তা নয়, বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, অনেক দিন পরপর তিনি গোশত খাওয়ার সুযোগ পেতেন। এজন্যই তাঁকে বাহুর গোশত পরিবেশন করা হত। কেননা বাহুর গোশত তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় এবং গলে যায়।
মুনকার, মুখতাসার শামায়িল [১৪৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উল্লেখিত [সনদ] সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার
৩৫. অনুচ্ছেদঃ সিরকার বর্ণনা
১৮৩৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [টক ও ঝাঁজযুক্ত পানীয়] কতই না উত্তম তরকারী!
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৩১৬, ৩৩১৭], মুসলিম, আইশা ও উম্মু হানী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮৪০. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সিরকা কতই না উত্তম তরকারী!
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৩১৬, ৩৩১৭], মুসলিম, আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রাহমান আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন ইয়াহইয়া ইবনি হাস্সান হইতে, তিনি সুলাইমান ইবনি বিলাল হইতে উল্লেখিত সনদের অনুরূপ। তবে তাতে নিমাল ইদামু অথবা আলউদমু এভাবে উল্লেখ আছে। সহীহ্, দেখুন পূর্বের হাদীস, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব বলেছেন। আমরা এটিকে হিশাম ইবনি উরওয়ার রিওয়ায়াত হিসাবে শুধু সুলাইমান ইবনি বিলালের সূত্রেই জেনেছি।আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮৪১. আবু তালিবের কন্যা উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরে এসে বললেনঃ তোমাদের [খাওয়ার মতো] কিছু আছে কি? আমি বললাম, কয়টি শুকনা রুটির টুকরা এবং সিরকা ব্যতীত আর কিছু নেই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ [আমাকে] তা-ই দাও। যে ঘরে সিরকা রয়েছে সে ঘর তরকারিশূন্য নয়।
হাসান, “সহীহাহ্” [২২২০] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব বলেছেন। আমরা এই হাদীসটি উম্মু হানী [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসাবে শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই জেনেছি। আবু হামযা আস-সুমালীর নাম সাবিত, পিতা আবু সাফিয়্যা। আলী [রাদি.] শহীদ হওয়ার কিছুকাল পরে উম্মু হানী [রাদি.] মৃত্যুবরণ করেন। আমি [তিরমিযী] মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম, তিনি বলিলেন, উম্মু হানী হইতে শাবীর শ্রুতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি আবার বললাম, আবু হামযাহ্ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি? তিনি বলিলেন আহমাদ ইবনি হাম্বল তার সমালোচনা করিয়াছেন। তবে আমার মতে সে হাদীসের যোগ্য। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১৮৪২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সিরকা কতই না উত্তম তরকারি!
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৩১৭] মুবারাক ইবনি সাঈদ [রঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসের চেয়ে এই হাদীসটি অধিক সহিহ। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬. অনুচ্ছেদঃ তরমুজ খেজুরের সাথে একত্রে খাওয়া
১৮৪৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তরমুজ তাজা খেজুরের সাথে একত্রে খেতেন।
সহীহ্, “সহীহাহ্” [৫৭], মুখতাসার শামা-ইল [১৭০] আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি কয়েকজন বর্ণনাকারী হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে তার বাবার সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে আইশা [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। ইয়াযীদ ইবনি রুমান এই হাদীসটি উরওয়ার সূত্রে আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন । আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭. অনুচ্ছেদঃ শসা খেজুরের সাথে একত্রে খাওয়া
আবদুল্লাহ ইবনি জাফর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] শসা খেজুরের সাথে একত্রে খেতেন।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৩২৫] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধু ইবরাহীম ইবনি সাদের সূত্রে জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৮. অনুচ্ছেদঃ উটের প্রস্রাব পান করা প্রসঙ্গে
১৮৪৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উরাইনা হইতে কয়েকজন লোক মাদীনায় আসল। এ অঞ্চলের আবহাওয়া তাহাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল না হওয়ায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে সাদকার উটের এলাকায় পাঠিয়ে দেন এবং বলেনঃ তোমরা এর দুধ ও প্রস্রাব পান কর।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [২৫৭৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি আনাস [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে আবু কিলাবা [রাদি.] তা বর্ণনা করিয়াছেন। কাতাদা হইতে আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে সাঈদ ইবনি আবী আরূবা [রঃ] তা বর্ণনা করিয়াছেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার আগে ও পরে ওযূ করা
১৮৪৬. সালমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি তাওরাত কিতাবে পড়েছি, খাওয়ার পর ওযূ করার মধ্যেই খাওয়ার বারকাত আছে। আমি ব্যাপারটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর নিকটে বললাম এবং আমি তাওরাত কিতাবে যা পড়েছি তাও তাঁকে জানালাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ খাওয়া-দাওয়ার আগে ও পরে ওযূ করার মধ্যেই বারকাত আছে।
যঈফ, যঈফা [১৬৮], মুখতাসার, শামায়িল [১৫৯]। আবু ঈসা বলেছেন, এ অনুচ্ছেদে আনাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি আরও বলেছেনঃ আমরা শুধু কাইস ইবনির রাবীর সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। কাইস হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। আবু হাশিম আর-রুম্মানীর নাম ইয়াহইয়া, পিতা দীনার। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪০. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার আগে ওযূ না করার সম্মতি প্রসঙ্গে
১৮৪৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পায়খানা হইতে বেরিয়ে এলেন। তাহাঁর সামনে খাবার আনা হল। লোকেরা বলিল, আমরা কি আপনার জন্যে ওযূর পানি আনবো? তিনি বললেনঃ আমাকে নামাযে দাঁড়ানোর জন্য ওযূর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সহীহ্, মুখতাসার শামা-ইল [১৫৮], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীসটি আমর ইবনি দীনারও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে সাঈদ ইবনি হুওয়াইরিসের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ বলেছেন, খাওয়া আরম্ভের আগে হাত ধোয়াকে সুফিয়ান সাওরী মাকরূহ মনে করিতেন। থালার নিচে রুটি রাখাকেও তিনি মাকরূহ মনে করিতেন। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪১. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
১৮৪৮. ইকরাশ ইবনি যুয়াইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, মুররা ইবনি উবাইদ গোত্রের লোকেরা তাহাদের ধন-সম্পদের যাকাতসহ আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর নিকটে পাঠায়। আমি মাদীনায় গিয়ে তাহাঁর নিকটে হাযির হলাম। তখন আমি তাঁকে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি আমার হাত ধরে উম্মু সালামা [রাদি.]-এর ঘরে নিয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করেনঃ কোন খাবার আছে কি? আমাদের সামনে একটি বড় পিয়ালা আনা হল। এর মধ্যে গোশতের টুকরা ও সারদ [ঝোলে ভিজানো রুটি] ভর্তি ছিল। আমরা তা থেকে খেতে লাগলাম। আমি পাত্রের এদিক-সেদিক থেকে নিয়ে খাচ্ছিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সামনে থেকে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি তাহাঁর বাঁ হাত দিয়ে আমার ডান হাত ধরে বললেনঃ হে ইকরাশ! এক জায়গা হইতে খাও। কেননা সম্পূর্ণটাই একই খাদ্য। তারপর আমাদের সামনে আরেকটি পিয়ালা আনা হল। এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের কাঁচা-পাকা খেজুর ছিল। আমি আমার সামনে থেকেই খেতে থাকলাম। কিন্তু রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাত্রের এদিক-সেদিক থেকে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ হে ইকরাশ! তুমি পাত্রের যে কোন জায়গা হইতে খেতে পার। কেননা সব খেজুর এক রকম নয়। তারপর আমাদের জন্য পানি দেয়া হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উভয় হাত ধুলেন এবং ভিজা হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল, দুই হাত ও মাথা মুছলেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে ইকরাশ! আগুন যে জিনিস পরিবর্তন করে দিয়েছে [তা খাওয়ার পর] এটাই হল ওযূ।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২৪০]। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আলা ইবনিল ফাযলের সূত্রে এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। তিনি এককভাবে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটি ব্যতীত ইকরাশ [রাদি.] হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর আর কোন হাদীস বর্ণিত আছে কি-না তা আমাদের জানা নেই। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪২. অনুচ্ছেদঃ কদুর [লাউ-এর] তরকারি খাওয়া প্রসঙ্গে
১৮৪৯. আবু তালুত [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর নিকটে গেলাম। তিনি তখন কদুর তরকারী খাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, হে কদু গাছ, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাকে পছন্দ করিতেন বলেই আমি তোমাকে পছন্দ করি।
সনদ দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে হাকীম ইবনি জাবির [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেছেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি গারীব। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮৫০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কদুর তরকারি পেয়ালা হইতে বেছে বেছে উঠিয়ে খেতে দেখেছি। তাই আমিও সবসময় কদুর তরকারি পছন্দ করি।
সহীহ্, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীসটি আনাস [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আরও বর্ণিত আছে যে, “তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে কদু দেখে তাঁকে প্রশ্ন করেন, এটা কি? তিনি বলিলেন, এটা কদু, আমরা আমাদের খাবারের পরিমাণ এর দ্বারা বর্ধিত করি।” আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩. অনুচ্ছেদঃ যাইতূনের তেল খাওয়া প্রসঙ্গে
১৮৫১. যাইদ ইবনি আসলাম [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [যাইতূনের] তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ কর। কেননা এটা বারকাত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৩১৯]আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদুর রাযযাকের সূত্রেই জেনেছি। এ হাদীসটি বর্ণনা করিতে গিয়ে তিনি সনদের মধ্যে গরমিল করে ফেলেছেন। তিনি কখনো উমার [রাদি.]-রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রের কথা উল্লেখ করিয়াছেন, আবার কখনো এতে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন, এটি উমার [রাদি.]-রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে বর্ণিত হইতে পারে, আবার কখনো এ হাদীসটিকে যাইদ ইবনি আসলামের সূত্রে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ঐ সনদটি এরূপ “আবু দাঊদ সুলাইমান ইবনি মাবাদ আব্দুর রাজ্জাক হইতে, তিনি মামার হইতে, তিনি যাইদ ইবনি আসলাম হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। এতে তিনি উমারের উল্লেখ করেন নাই। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮৫২. আবু উসাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যাইতূনের তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ কর। কেননা এটি একটি কল্যাণময় গাছের তেল।
পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ্, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধু সুফিয়ান সাওরী হইতে আবদুল্লাহ ইবনি ঈসার সূত্রে জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৪. অনুচ্ছেদঃ নিজ খাদিমের সাথে একত্রে খাবার খাওয়া
১৮৫৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদিম তার জন্য খাবার বানানোর সময় তাকে এর গরম ও ধোঁয়া সহ্য করিতে হয়। সে যেন তার [খাদিমের] হাত ধরে তাকে নিজের সাথে একত্রে খেতে বসায়। সে [খাদিম] তার সাথে একত্রে বসে খেতে সম্মত না হলে [সংকোচ বোধ করলে] তবে সে যেন তার মুখে অন্তত একটি লোকমা তুলে দেয়।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৮৯, ৩২৯০], বুখারী এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। ইসমাঈলের পিতা আবু খালিদের নাম সাদ। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫. অনুচ্ছেদঃ খাবার খাওয়ানোর সাওয়াব
১৮৫৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সালাম আদান-প্রদানের ব্যাপক প্রসার ঘটাও, অন্যকে খাবার খাওয়াও এবং মাথার উপর আঘাত কর [জিহাদ কর] যাতে জান্নাতসমূহের উত্তরাধিকারী হইতে পার।
যঈফ, ইরওয়া [৩/২৩৮], যঈফা [১৩২৪]।এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবদুল্লাহ ইবনি উমার, আনাস, আবদুল্লাহ ইবনি সালাম, আবদুর রহমান ইবনি আইশ ও শুরাইহ ইবনি হানী হইতে তার পিতার সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ ও ইবনি যিয়াদ-আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে গারীব। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮৫৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা দয়াময় রাহমানের ইবাদাত কর, [মানুষকে] খাবার খাওয়াও এবং সালামের অধিক প্রচলন ঘটাও, তবেই নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩৬৯৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন, আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬. অনুচ্ছেদঃ রাতের খাবারের গুরুত্ব
১৮৫৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই রাতের খাবার খাবে তা একমুঠ খেজুর হলেও। কেননা রাতের খাবার বাদ দেয়া বার্ধক্যের কারণ।
যঈফ, যঈফা [১১৬]। আবু ঈসা বলেছেন, এটি একটি প্রত্যাখ্যাত [মুনকার] হাদীস। আমরা শুধু উল্লেখিত সূত্রে এটি জেনেছি। রাবী আনবাসাকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া আবদুল মালিক ইবনি আল্লাক একজন অখ্যাত-অপরিচিত রাবী। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪৭. অনুচ্ছেদঃ খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
১৮৫৭. উমার ইবনি আবু সালামা [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে আসলেন। তখন তাহাঁর সামনে খাবার বিদ্যমান ছিল। তিনি বললেনঃ হে বৎস! এগিয়ে আস, বিসমিল্লাহ বল, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনের খাদ্য হইতে খাও।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৬৭], ইরওয়া [১৯৬৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ “এগিয়ে আস” বাক্য ব্যতীত।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হিশাম ইবনি উরওয়া-আবু ওয়াজযা আস-সাদী হইতে, তিনি মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি হইতে, তিনি উমার ইবনি আবী সালামা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের বর্ণনায় হিশাম ইবনি উরওয়ার শাগরিদগণ দ্বিমত পোষণ করিয়াছেন। আবু ওয়াজযা আস-সাদীর নাম ইযায়ীদ, পিতা উবাইদ। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮৫৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি খাওয়া শুরু করে তখন যেন সে বিসমিল্লাহ বলে। সে খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলিতে ভুলে গেলে তবে যেন বলে,
بِسْمِ اللَّهِ فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
“বিসমিল্লাহ ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরাহু” [এর শুরু ও শেষ আল্লাহ তাআলার নামে]।
সহীহ্, ইরওয়া [১৯৬৫], তালীকুর রাগীব [৩/১১৫-১১৬], তাখরীজ-কালিমুত তাইয়্যিব [১১২] আইশা [রাদি.] হইতে একই সনদে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক সময় তাহাঁর ছয়জন সাহাবীকে সাথে নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন বেদুঈন লোক এসে হাযির হল। সে সবগুলো খাবার দুই গ্রাসেই শেষ করে ফেলল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সে যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতে শুরু করত তাহলে তোমাদের সবার জন্যে এই খাবারটুকুই পর্যাপ্ত হত। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। উম্মু কুলসুম [রঃ] হলেন আবু বাক্র সিদ্দীক [রাদি.]-এর ছেলে মুহাম্মাদের মেয়ে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮. অনুচ্ছেদঃ খাওয়া-দাওয়া শেষে হাতের চর্বি পরিষ্কার না করে রাত অতিবাহিত করা মাকরূহ
১৮৫৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শাইতান ঘ্রাণ অনুভব করিতে খুবই দক্ষ এবং লোভী। তোমরা নিজেদের ব্যাপারে এই শাইতান হইতে সতর্ক হও। কোন ব্যক্তি খাদ্যের চর্বি ইত্যাদির ঘ্রাণ হাত থেকে দূর না করে রাত যাপন করলে এবং এতে তার কোন ক্ষতি হলে সে এজন্য নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।
মাওযু, যঈফা [৫৫৩৩] রাওয়ুন নাখীর [২/২২৫]। আবু ঈসা বলেছেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি সুহাইল ইবনি আবু সালিহ-তার পিতা-আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতেও বর্ণিত আছে। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ জাল হাদীস
১৮৬০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক নিজের হাতে [গোশত ইত্যাদি] খাবারের ময়লা নিয়ে রাত অতিবাহিত করিল এবং তাতে তার কোন প্রকার ক্ষতি হলে সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।
সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৩২৯৭] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আমাশের সূত্রেই জেনেছি। আহার ও খাদ্যদ্রব্য – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply