তিরমিজি শরীফ বাংলা – যুদ্ধাভিযান অধ্যায়

তিরমিজি শরীফ বাংলা – যুদ্ধাভিযান অধ্যায়

তিরমিজি শরীফ বাংলা – যুদ্ধাভিযান অধ্যায় এই অধ্যায়ে মোট ৭২ টি হাদীস (১৫৪৮-১৬১৮) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-১৯ঃ যুদ্ধাভিযান, অনুচ্ছেদঃ (১-৪৮)=৪৮টি

১. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধ শুরুর পূর্বে [শত্রুদেরকে] ইসলামের দাওয়াত দেয়া
২. অনুচ্ছেদঃ [আযান শুনলে বা মাসজিদ দেখলে আক্রমণ না করা]
৩. অনুচ্ছেদঃ রাতের বেলা অথবা অতর্কিতে হামলা
৪. অনুচ্ছেদঃ অগ্নিসংযোগ ও [বাড়িঘর] ধ্বংস সাধন
৫. অনুচ্ছেদঃ গনিমত [যুদ্ধলব্ধ মাল] বিষয়ে
৬. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের মধ্যে ঘোড়ার প্রাপ্য পরিমাণ
৭. অনুচ্ছেদঃ সারিয়্যা [ ক্ষুদ্র অভিযান ] প্রসঙ্গে
৮. অনুচ্ছেদঃ ফাই-এর প্রাপক কে?
৯. অনুচ্ছেদঃ গোলামকে [গনিমতের] অংশ দেওয়া হইবে কি?

১০. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে যিম্মী [অমুসলিম নাগরিক] অংশ নিলে তাকে গনিমতের অংশ দেওয়া হইবে কি না ?
১১. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার প্রসঙ্গে
১২. অনুচ্ছেদঃ কোন যোদ্ধাকে নফল [অতিরিক্ত] প্রদান
১৩. অনুচ্ছেদঃ হত্যাকারী নিহইতের মালপত্র পাবে
১৪. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ বণ্টনের আগে বিক্রয় করা নিষেধ
১৫. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী বন্দিনীদের সাথে সহবাস করা নিষেধ
১৬. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের খাবার প্রসঙ্গে
১৭. অনুচ্ছেদঃ কয়েদীদের একে অপর থেকে আলাদা করা নিষেধ
১৮. অনুচ্ছেদঃ বন্দীদের মেরে ফেলা বা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত করে দেওয়া [বা বিনিময় আদায় করা]
১৯. অনুচ্ছেদঃ নারী ও শিশুদের মেরে ফেলা নিষেধ
২০. অনুচ্ছেদঃ [কোন লোককে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা বৈধ নয়]
২১. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করা
২২. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ
২৩. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের উপহার নেয়া
২৪. অনুচ্ছেদঃ মুশ্‌রিকদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করা প্রসঙ্গে
২৫. অনুচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞতার সিজদা
২৬. অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোক বা ক্রীতদাস কর্তৃক [কাউকে] নিরাপত্তা দান
২৭. অনুচ্ছেদঃ বিশ্বাসঘাতকতা প্রসঙ্গে
২৮. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের হাতে কিয়ামাতের দিন একটি করে পতাকা থাকিবে
২৯. অনুচ্ছেদঃ সালিশ মেনে আত্মসমর্পণ
৩০. অনুচ্ছেদঃ বন্ধুত্বের চুক্তি প্রসঙ্গে
৩১. অনুচ্ছেদঃ অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে কর আদায় প্রসঙ্গে
৩২. অনুচ্ছেদঃ যিম্মীদের [অমুসলিম নাগরিক] সম্পদ হইতে যা নেওয়া যাবে
৩৩. অনুচ্ছেদঃ হিজরাত প্রসঙ্গে
৩৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর শপথের বর্ণনা
৩৫. অনুচ্ছেদঃ শপথ [বাইআত] প্রত্যাখ্যানের পরিণতি
৩৬. অনুচ্ছেদঃ গোলামের শপথ প্রসঙ্গে
৩৭. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের শপথ প্রসঙ্গে
৩৮. অনুচ্ছেদঃ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহীবীদের সংখ্যা
৩৯. অনুচ্ছেদঃ খুমুস [এক-পঞ্চমাংশ]-এর এ বিবরণ
৪০. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ হইতে বন্টনের আগে নেওয়া নিষেধ
৪১. অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাবদের সালাম প্রদান প্রসঙ্গে
৪২. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের সাথে বসবাস করা নিষেধ
৪৩. অনুচ্ছেদঃ আরব উপদ্বীপ হইতে ইয়াহূদী-নাসারাদের বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে
৪৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রেখে যাওয়া সম্পত্তি প্রসঙ্গে
৪৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন বললেনঃ এ শহরে আজকের দিনের পর আর যুদ্ধ করা যাবে না।
৪৬. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধের সঠিক সময়
৪৭. অনুচ্ছেদঃ কুলক্ষণ প্রসঙ্গে
৪৮. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] ওয়াসিয়াত [উপদেশ]

১. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধ শুরুর পূর্বে [শত্রুদেরকে] ইসলামের দাওয়াত দেয়া

১৫৪৮. আবুল বাখতারী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

মুসলমানদের কোন এক সেনাবাহিনী পারস্যের একটি দুর্গ অবরোধ করে। সালমান ফারসী [রাদি.] এই বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। সেনাবাহিনীর মুজাহিদগণ বলিলেন, হে আবদুল্লাহর পিতা! আমরা কি তাহাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব না? তিনি বলিলেন, আমি যেভাবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাদের [ইসলাম গ্রহণের] দাওয়াত দিতে শুনিয়াছি, তোমরা আমাকেও সেভাবে দাওয়াত দিতে দাও। সালমান [রাদি.] তাহাদের নিকট এসে বলিলেন, আমি তোমাদের মাঝেরই একজন পারস্যবাসী। তোমরা দেখিতে পাচ্ছ, আরবরা আমার আনুগত্য করছে। তোমরা যদি ইসলাম গ্রহণ কর তবে তোমরাও আমাদের মতই অধিকার পাবে এবং আমাদের উপর যে দায় আসে তোমাদের উপরও সেরকম দায় আসবে। তোমরা যদি এ দাওয়াত ক্ববূল করিতে অসম্মত হও এবং তোমাদের ধর্মের উপর অবিচল থাকতে চাও, তবে আমরা তোমাদেরকে তোমাদের ধর্মের উপর ছেড়ে দিব। কিন্তু এক্ষেত্রে তোমরা আমাদের অনুগত্য স্বীকার করে আমাদেরকে জিয্ইয়া দিবে। রাবী বলেন, তিনি তাহাদেরকে এ কথাগুলো ফারসী ভাষায় বলেন। [তিনি আরো বলেন] এই অবস্থায় তোমরা প্রশংসিত হইবে না। তোমরা যদি এটাও [জিয্ইয়া প্রদান] অস্বীকার কর তবে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমানভাবে লড়বো। তারা বলিল, আমরা জিয্ইয়া প্রদানে সম্মত নই, বরং আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। মুসলিম সেনানীগণ বলিলেন, হে আবদুল্লাহর পিতা! আমরা কি তাহাদেরকে আক্রমণ করব না? তিনি বলিলেন, না। রাবী বলেন, তিনি এভাবে তাহাদেরকে তিন দিন যাবত আহ্বান করিতে থাকেন। তারপর তিনি মুসলিম বাহিনীকে নির্দেশ দিলেন, প্রস্তুত হও এবং তাহাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়। রাবী বলেন, আমরা তাহাদেরকে আক্রমণ করে সেই দুর্গ দখল করলাম।

যঈফ, ইরওয়া [৫/৮৭]। এ অনুচ্ছেদে বুরাইদা, নুমান ইবনি মুকাররিন, ইবনি উমার ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সালমান [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান। আমরা শুধু আতা ইবনিস সায়িবের সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আবুল বাখতারী সালমান [রাদি.]-এর দেখা পাননি। কেননা তিনি আলী [রাদি.]-এর দেখা পাননি। আর সালমান [রাদি.] আলী [রাদি.]-এর পূর্বে মারা যান। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তার পরবর্তীগণ এ হাদীসের মতই মত দিয়েছেন। তাহাদের মতে, যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে ইসলামের দাওয়াত দিতে হইবে। ইসহাক ইবনি ইবরাহীমেরও এই মত। তিনি বলেন, যদি আক্রমণ করার পূর্বে শত্রুবাহিনীকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয় তবে তা উত্তম এবং তা তাহাদের মনে প্রভাব ও ভীতির সঞ্চার করিবে। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম বলেন, আজকাল আর এরূপ দাওয়াত দেয়ার প্রয়োজন নেই। ঈমাম আহমাদ বলেন, বর্তমানে এ ধরনের আহ্বান করার কোন প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। ঈমাম শাফি বলেন, শত্রুকে ইসলামের দাওয়াত না দেয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু করা যাবে না। কিন্তু তাহাদেরকে তাড়াতাড়ি দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য বলিতে হইবে। অবশ্য দাওয়াত না দিলে কোন সমস্যা নেই। কেননা তাহাদের কাছে ইতিপূর্বেই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ [আযান শুনলে বা মাসজিদ দেখলে আক্রমণ না করা]

১৫৪৯. ইবনি ইসাম আল-মুযানী [রঃ] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [ইসাম] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছোট বা বড় কোন যুদ্ধাভিযানে প্রেরণকালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে বলিতেনঃ তোমরা কোন মাসজিদ দেখলে অথবা মুয়াযযিনের আযান শুনলে সেখানকার কাউকে হত্যা করিবে না।

যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [৪৫৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এটি ইবনি উআইনার রিওয়ায়াত। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ রাতের বেলা অথবা অতর্কিতে হামলা

১৫৫০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবার অভিযানের যাত্রা করে সেখানে রাতের বেলা গিয়ে পৌছান। তিনি রাতের বেলা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় পৌছালে ভোর না হলে হামলা করিতেন না। ইয়াহূদীরা ভোর হলে তাহাদের চিরাচরিত অভ্যাস মোতাবিক কোদাল ও ঝুড়িসহ [কৃষিকাজে] বের হল। তাঁকে দেখে এরা বলিল, মুহাম্মাদ এসে গেছেন। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদ তাহাঁর সমস্ত বাহিনীসহ এসে গেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহু আকবার! খাইবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় যাই তখন সতর্ককৃত লোকদের ভোর বেলাটা খুবই শোচনীয় হয়ে থাকে।

সহীহ্‌, নাসা-ঈ, তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫১. আনাস [রাদি.] হইতে আবু তালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ] বিজয়ী হলে তাহাদের এলাকায় তিন দিন অবস্থান করিতেন।

সহীহ্‌, সহীহ আবু দাঊদ [২৪১৪], নাসা-ঈ, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আনাসের সূত্রে হুমাইদের হাদীসটিও হাসান সহীহ। রাতে শক্রর এলাকায় গিয়ে অতর্কিত হামলার পক্ষে একদল অভিজ্ঞ আলিম সম্মতি প্রদান করিয়াছেন। এটাকে অন্য একদল অভিজ্ঞ আলিম মাকরূহ বলেছেন। ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাক বলেন, রাতের বেলা শক্রর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় কোন সমস্যা নেই। ওয়াফাকা মুহাম্মাদ আল-খামীস -এর অর্থ মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর সাথে রহিয়াছে তার পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনী। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ অগ্নিসংযোগ ও [বাড়িঘর] ধ্বংস সাধন

১৫৫২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বানূ নাযীরের বুওয়ায়রাস্থ খেজুর বাগানে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অগ্নিসংযোগ করেন এবং গাছগুলো কেটে ফেলেন। আল্লাহ তাআলা এই বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তোমরা যেসব খেজুরের গাছ কেটেছ বা এদের কাণ্ডের উপর যেগুলোকে স্বঅবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ, তা সবই আল্লাহ্ তাআলার অনুমতিক্রমেই করেছ, যাতে তিনি ফাসেকদের লাঞ্ছিত করিতে পারেন”[সূরাদি. হাশর- ৫]।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৪৪], নাসা-ঈ, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম মত দিয়েছেন। যুদ্ধাবস্থায় গাছপালা কর্তন এবং দুর্গসমূহের ধ্বংস করায় কোন সমস্যা নেই বলে তারা মনে করেন। কিছু আলিম তা মাকরূহ বলেছেন। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আওযাঈও। তিনি বলেন, ফলবান বৃক্ষ কাটতে এবং জনপদ ধ্বংস করিতে আবু বাক্‌র [রাদি.] বারণ করিয়াছেন। মুসলমানগণও তাহাঁর পরবর্তী সময়ে এই নীতির অনুসরণ করিয়াছেন। ঈমাম শাফি বলেন, শক্র বাহিনীর কৃষিক্ষেত্রে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং ফলবান বা যে কোন ধরনের গাছ কাটাতে কোন সমস্যা নেই। ঈমাম আহ্‌মাদ বলেন, প্রয়োজনবোধে তা করা যাবে, কিন্তু বিনা প্রয়োজনে আগুন লাগানো যাবে না। ঈমাম ইসহাক বলেন, শক্রর প্রতি প্রবল আক্রমণের উদ্দেশ্যে এরূপ করাই সুন্নাত। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ গনিমত [যুদ্ধলব্ধ মাল] বিষয়ে

১৫৫৩. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে আল্লাহ তাআলা সকল নাবীদের উপর মাৰ্যাদা দিয়েছেন; অথবা তিনি বলেছেনঃ সকল উম্মাতের উপর আমার উম্মাতকে মার্যাদা দিয়েছেন এবং গনিমতের সম্পদকে আমার জন্য বৈধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৪০০১], ইরওয়া [১৫২, ২৮৫] আলী, আবু যার, আব্দুল্লাহ ইবনি আমর, আবু মূসা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। সাইয়্যারের ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি বানূ মুআবিয়ার মুক্তদাস ছিলেন। তার নিকট হইতে সুলাইমান আত-তাইমী, আবদুল্লাহ ইবনি বুহাইর এবং আরো কয়েকজন বর্ণনাকারী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে সকল নাবীর উপর ছয়টি বিষয়ে শ্ৰেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। ব্যাপকার্থক ভাবকে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশের যোগ্যতা আমাকে দেওয়া হয়েছে, প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, গনিমত [যুদ্ধলন্ধ সম্পদ] আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্য সকল যমীন মাসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করা হয়েছে, সকল সৃষ্টির জন্য আমাকে নাবী করে পাঠানো হয়েছে এবং নাবীদের আগমণধারা আমাকে দিয়ে শেষ করা হয়েছে। সহীহ্‌, ইরওয়া [২৮৫], মুসলিম, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৬. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের মধ্যে ঘোড়ার প্রাপ্য পরিমাণ

১৫৫৪. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] গনিমতের মধ্যে দুই অংশ ঘোড়ার জন্য এবং এক অংশ সৈনিকের জন্য নির্ধারণ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৫৪], নাসা-ঈ, মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার আব্দুর রাহমান ইবনি মাহদী হইতে, তিনি সুলাইম ইবনি আখযার হইতে এই সূত্রেও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মুজাম্মি ইবনি জারিয়া, ইবনি আব্বাস ও ইবনি আবু আম্‌রাহ্‌ হইতে তার বাবার সূত্রে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বেশির ভাগ অভিজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। একই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, আওযাঈ, মালিক ইবনি আনাস, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। তারা বলেন, গনিমতের মধ্যে অশ্বারোহী যোদ্ধা তিন অংশ পাবে। তার নিজের জন্য এক অংশ এবং তার ঘোড়ার জন্য দুই অংশ। আর পদাতিক যোদ্ধা এক অংশ পাবে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ সারিয়্যা [ ক্ষুদ্র অভিযান ] প্রসঙ্গে

১৫৫৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সফরসঙ্গী চার জন হওয়া উত্তম , চার শত সৈনিক নিয়ে গঠিত ক্ষুদ্র বাহিনী উত্তম, চার হাজার সৈনিক নিয়ে গঠিত পূর্ণ বাহিনী উত্তম এবং বার হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত বাহিনী সংখ্যাসল্পতার কারণে পরাজিত হইবে না। [পরাজিত হলে তা ঈমানের দুর্বলতার কারনেই]।

যঈফ, সহিহাহ নতুন সংস্করণ[ ৯৮৬]। এ হাদীসটি হাসান গারীব। জারীর ইবনি হাযিম ব্যতীত আর কোন প্রবীন রাবী এটাকে মুসনাদ হিসেবে বর্ণনা করেননি। যুহরী হইতে এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবেই বর্ণিত হয়েছে। হাব্বান ইবনি আলী আল–আনাযী–উকাইল হইতে , তিনি যুহরী হইতে , তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ হইতে তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। অপরদিকে লাইস ইবনি সাদ–উকাইল সূত্রে, তিনি যুহরীর সূত্রে , তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বরাতে এটাকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ ফাই-এর প্রাপক কে?

১৫৫৬. ইয়াযীদ ইবনি হুরমুয [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে হারূরা এলাকার [খারিজী নেতা] নাজদা চিঠির মাধ্যমে প্রশ্ন করে যে, মহিলাদেরকে কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধের মাঠে নিয়ে যেতেন এবং তাহাদের জন্য কি গনিমতে অংশ নির্ধারণ করিতেন? উত্তরে ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাকে লিখলেন, তুমি আমাকে চিঠির মাধ্যমে প্রশ্ন করেছ যে, মহিলাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধের মাঠে অংশগ্রহণ করাতেন কি-না এবং গানীমতের অংশ তাহাদের জন্য নির্ধারণ করিতেন কি-না। তিনি তাহাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন। তারা অসুস্থ যোদ্ধাদের সেবাযত্ন করত। গনিমতের সম্পদ হইতে তাহাদেরকে প্রদান করা হত, কিন্তু তিনি তাহাদের জন্য অংশ নির্ধারণ করেননি।

সহীহ্‌, সহীহ আবু দাঊদ [২৪৩৮], মুসলিম, আনাস ও উন্মু আতিয়্যা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীস মোতাবিক বেশির ভাগ অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী এবং শাফিঈও [গনিমতের কোন অংশ মহিলারা পাবে না]। কয়েকজন আলিম বলেছেন, গনিমতের ভাগ মহিলা এবং শিশুদেরকেও প্রদান করিতে হইবে। আওযাঈর এই মত। তিনি বলেন, খাইবারের যুদ্ধে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শিশুদেরকে গনিমতের ভাগ প্রদান করিয়াছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিষ্ঠ শিশুদেরকে মুসলিম নেতৃবৃন্দ গনিমতের ভাগ প্রদান করিয়াছেন। আওযাঈ আরো বলেন, খাইবারের যুদ্ধে মহিলাদের জন্যও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] গনিমতে অংশ নির্ধারন করিয়াছেন। মুসলমানগণ পরবর্তীতে এ নীতিই অনুসরণ করিয়াছেন। ঈমাম তিরমিযী বলেন, আমাদের নিকট একথাগুলো আলী ইবনি খাশরামের সূত্রে, তিনি ঈসা ইবনি ইউনুসের সূত্রে, তিনি আওযাঈর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। “ইউহ্যাইনা মিনাল গানীমাহ”-এর অর্থ “তাহাদেরকে [মহিলাদেরকে] গনিমত হইতে অল্প কিছু দেয়া হল, তাহাদেরকে কিছু দেয়া হল”। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ গোলামকে [গনিমতের] অংশ দেওয়া হইবে কি?

১৫৫৭. আবুল লাহমের মুক্তদাস উমাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি খাইবারের যুদ্ধে আমার মনিবদের সাথে অংশগ্রহন করি। তারা আমার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে কথা বলিলেন। তারা তাঁকে আরো জানান যে, আমি ক্রীতদাস। বর্ণনাকারী উমাইর [রাদি.] বলেন, আমার ব্যপারে তাহাঁর হুকুম মোতাবিক আমার গলায় তরবারি ঝুলিয়ে দেয়া হল। তরবারিটিকে আমি মাটিতে হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে হাটছিলাম। তিনি গনিমতের মধ্য হইতে কিছু তৈজসপত্র আমাকে দিতে বলিলেন। আমি তাঁকে কয়েকটি মন্ত্র শুনালাম, যেগুলো দিয়ে আমি পাগলদের ঝাড়ফুঁক করতাম। তিনি এর কিছু বাদ দেয়ার এবং কিছু রাখার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন।

সহীহ্‌, সহীহ আবু দাঊদ [২৪৪০], ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন গোলামের জন্য গনিমতের সম্পদে কোন নির্ধারিত অংশ নেই, তবে অল্পপরিমাণ দেওয়া যায়। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহ্মাদ এবং ইসহাকও। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে যিম্মী [অমুসলিম নাগরিক] অংশ নিলে তাকে গনিমতের অংশ দেওয়া হইবে কি না ?

১৫৫৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদরের যুদ্ধে রাওনা হলেন। তিনি ওয়াবরার প্রস্তরময় এলাকায় পৌঁছলে মুশরিক সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি তাহাঁর সাথে মিলিত হল। তার সাহসিকতা ও বীরত্বের খ্যাতি ছিল। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাসী নও? সে বলিল, না। তিনি বলিলেন, তুমি ফিরে যাও, আমি কখনো কোন মুশরিকের সাহায্য নিব না।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৩২], মুসলিম, এ হাদীসে আরো বক্তব্য আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী আমাল করিয়াছেন। তারা বলেন, যিম্মীদেরকে গনিমতের অংশ দেওয়া যাবে না যদিও তারা শত্রুর বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। অপর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, তারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহন করলে তাহাদেরকে গনিমতের অংশ দেওয়া হইবে। যেমন যুহরীর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়হূদী এক গোষ্ঠী অমুসলিমকে গনিমতের অংশ দিয়েছিলেন, যারা তাহাঁর সাথে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন কুতাইবা ইবনি সাঈদ আব্দুল ওয়ারিস ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি আযরা ইবনি সাবিত হইতে, তিনি যুহরী হইতে। সনদ দুর্বল। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৫৯. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি খাইবার নামক অঞ্চলে আশআরী বংশের একদল লোকের সাথে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হাযির হই। তিনি খাইবারের যুদ্ধের বিজয়দের সাথে আমাদেরকেও [গনিমতের] ভাগ দিয়েছেন।

সহীহ্‌, সহীহ আবু দাঊদ [২৪৩৬], নাসা-ঈ, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীস মোতাবিক কিছু অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। আওযাঈ বলেন, গনিমতের অংশ যোদ্ধাদের মাঝে বণ্টিত হওয়ার পূর্বে যারা মুসলমানদের সাথে মিলিত হইবে তাহাদেরকেও গনিমতের অংশ প্রদান করা হইবে। বুরাইদের উপনাম আবু বুরাইদাহ। তিনি একজন বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। সুফিয়ান সাওরী, ইবনি উয়াইনা এবং আরো অনেকে তার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার প্রসঙ্গে

১৫৬০. আবু সালাবা আল-খুশানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাজূসীদের [অগ্নি উপাসক] হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ এগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নাও, তারপর এতে রান্নাবান্না কর। তিনি নখর ও শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র প্রাণীও [খেতে] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩২০৭, ৩২৩২], নাসাঈ, এ হাদীসটি আবু সালাবা [রাদি.]-এর নিকট হইতে অন্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি আবু সালাবা [রাদি.] হইতে আবু ইদরীস আলা খাওলানীও বর্ণনা করিয়াছেন। আবু সালাবা [রাদি.]-এর নিকট হইতে আবু কিলাবা [রঃ] কখনো হাদীস শুনেননি। বরং এ হাদীসটি তিনি আবু আসমার মাধ্যমে আবু সালাবা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু সালাবা আল খুশানী [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা আহলে কিতাবের এলাকায় থাকি। আমরা কি তাহাদের পাত্রে আহার করব? তিনি বললেনঃ তোমরা তাহাদের পাত্র ব্যতীত অন্য পাত্র সেটাতে খাওয়া-দাওয়া করা থেকে বিরত থাক। আর অন্য পাত্র যোগাতে না পারলে এগুলো পানি দিয়ে পারিস্কার করে নাও, তারপর এতে খাও। সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩২০৭], নাসাঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ কোন যোদ্ধাকে নফল [অতিরিক্ত] প্রদান

১৫৬১. উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] আক্রমনের প্রথম ভাগে এক-চতুর্থাংশ এবং ফিরতি আক্রমনের ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ নফল [অতিরিক্ত] দান করিতেন।

সহীহ্‌, হাদীসটির সনদ দুর্বল, কিন্তু সহীহ্‌ আবু দাঊদে এর শাহিদ আছে। হাদীস নং [২৪৫৫ ] এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, হাবীব ইবনি মাসলামা, মাআন ইবনি ইয়াযীদ, ইবনি উমার ও সালামা ইবনিল আকওয়া [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, উবাদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান। উল্লেখিত হাদীসটি আবু সাল্লাম হইতে নাবী [সাঃআঃ] এর এক সাহাবীর বরাতে নাবী [সাঃআঃ] বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, বদর যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নাফল [নির্দিষ্ট অংশ হইতে অতিরিক্ত] হিসাবে তাহাঁর যুল-ফাকার নামক তলোয়ারখানা তাকে দিয়েছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধের দিন এ বিষয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সনদ হাসান, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই ইবনি আবিয যিনাদের হাদীস হিসাবে জেনেছি। অভিজ্ঞ আলিমগনের মধ্যে গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ থেকে পুরস্কার হিসাবে অতিরিক্ত দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। মালিক ইবনি আনাস [রঃ] বলেন, কোন বর্ণনা আমার নিকট পৌছেনি যে, সকল যুদ্ধেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পুরস্কার দিয়েছেন। আমি এ ধরণের বর্ণনাই পেয়েছি যে, তিনি যোদ্ধাদের কোন কোন যুদ্ধে পুরস্কৃত করিয়াছেন। ইমামের বিশেষ বিবেচনার উপর বিষয়টি নির্ভরশীল। তিনি চাইলে প্রাথমিকভাবে অথবা শেষ গনিমত হিসাবে তা দিতে পারেন। ইসহাক ইবনি মানসূর বলেন, আমি ঈমাম আহ্মাদকে বললাম সন্দেহহীনভাবে বলা যায় যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক-পঞ্চমাংশের পর এক-চতুর্থাংশ যুদ্ধের প্রারম্ভভাগে এবং এক-পঞ্চমাংশের পর এক-তৃতীয়াংশ প্রত্যাবর্তনের সময় দান করিয়াছেন। ঈমাম আহ্মাদ বলেন, হ্যাঁ, প্রথমে গনিমত হইতে খুমুস [এক-পঞ্চমাংশ] আলাদা করিতে হইবে। তারপর বাকি সম্পদ হইতে পুরস্কার [নাফল] দেওয়া যায় এবং তা যেন এই পরিমানকে ছাড়িয়ে না যায়। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসে ইবনিল মুসাইয়্যিবের উক্তির উপর এই কথা বলা যায় যে, খুমুস হইতে পুরস্কার প্রদান করা হইবে। ইসহাকও একই কথা বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

১৩. অনুচ্ছেদঃ হত্যাকারী নিহইতের মালপত্র পাবে

১৫৬২. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শত্রু পক্ষের কোন সৈনিককে কোন লোক হত্যা করলে এবং এর প্রমাণ তার নিকট থাকলে সে নিহইতের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিসপত্র পাবে।

সহীহ্‌, ইরওয়া [৫/৫২-৫৩], সহিহ আবু দাঊদ [২৪৩], নাসা-ঈ, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সাথে আরও ঘটনা আছে।

ইবনি আবী উমার হইতে সুফিয়ানের বরাতে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের সূত্রেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আওফ ইবনি মালিক, খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ, আনাস ও সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু মুহাম্মাদের নাম নাফি, তিনি আবু কাতাদা [রাদি.]-এর আযাদকৃত গোলাম। এ হাদীস মোতাবিক একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। এই অভিমত [হত্যাকারী নিহইতের মালপত্র পাবে] দিয়েছেন ঈমাম আওযাঈ, শাফিঈ এবং আহ্মাদও। আরেকদল অভিজ্ঞ আলিম বলেন, দলনেতার এই মালপত্র হইতে খুমুস বের করে নেওয়ার অধিকার আছে। সুফিয়ান সাওরী বলেন, যে লোক যা পেয়েছে তা তারই হইবে এবং শত্রুপক্ষের কোন লোককে যে ব্যক্তি খুন করিল সে তার মালপত্রের অধিকারী হইবে। দলনেতার এরূপ ঘোষনাই হল নাফল [পুরস্কার] এবং তাতে কোন খুমুস নেই। ইসহাক [রঃ] বলেছেন, হত্যাকারী নিহইতের মালপত্রের অধিকারী হইবে। তবে যদি মালপত্রের পরিমাণ অধিক হয় তবে দলনেতা চাইলে সেটা হইতে খুমুস বের করিতে পারেন, যেভাবে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বের করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ বণ্টনের আগে বিক্রয় করা নিষেধ

১৫৬৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, গনিমতের মাল ভাগ করার আগে তা বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, মিশকাত তাহকীক ছানী [৪০১৫-৪০১৬] আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ গর্ভবতী বন্দিনীদের সাথে সহবাস করা নিষেধ

১৫৬৪. উম্মু হাবীবা বিনতু ইরবায ইবনি সারিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাকে তার বাবা [ইরবায] জানিয়েছেন যে, গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সন্তান প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত সহবাস করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারণ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, দেখুন হাদীস নং [১৪৭৪] আবু ঈসা বলেন, রুয়াইফি ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আর ইরবাযের হাদীসটি গারীব। এ হাদীস অনুসারে আলিমগণ আমল করিয়াছেন। ঈমাম আওযাঈ বলেন, গর্ভবতী বন্দিনী দাসী কোন লোক কিনলে সেই ব্যাপারে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, সন্তান প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা যাবে না। আওযাঈ আরো বলেন, মুক্ত যুদ্ধবন্দিনীর বিষয়ে বিধান হল, তাহাদের সাথে ইদ্দাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সহবাস করা যাবে না। আলী ইবনি খাশরাম ঈসা ইবনি ইউনুসের সূত্রে আওযাঈ হইতে এই উক্তিটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের খাবার প্রসঙ্গে

১৫৬৫. কাবীসা ইবনি হুল্ব [রঃ] হইতে তার বাবার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [পিতা] বলেন, নাসারাদের বানানো খাবারের প্রসঙ্গে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তোমার মনে কোন খাবারের ব্যাপারে [অযথা] সন্দেহ ও দ্বিধা-সংকোচ সৃষ্টি হওয়া ঠিক নয়। তুমি এরকম অমূলক সংশয়ে পড়ে গেলে নাসারাদের অনুরূপ হয়ে গেলে।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৮৩০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমি মাহমূদকে বলিতে শুনিয়াছি উবাইদুল্লাহ ইবনি মূসা বলেছেন, ইসরাঈল সিমাক হইতে, তিনি কাবীসা হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ওয়াহাব ইবনি জারীর বলেন, শুবা সিমাক হইতে, তিনি মুরাই ইবনি ক্বাত্বারী হইতে, তিনি আদী ইবনি হাতিম হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা কারেছেন। এ হাদীস মোতাবিক আলিমগণ আমল করিয়াছেন। ইয়াহূদী-নাসারাদের খাদ্য খাওয়ার অনুমতি আছে বলে তারা মনে করেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ কয়েদীদের একে অপর থেকে আলাদা করা নিষেধ

১৫৬৬. আবু আইয়্যূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ [বন্দিনী] মা ও তার সন্তানকে একে অপর হইতে যে লোক আলাদা করিল, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে তার এবং তার প্রিয়জনদের পরস্পর হইতে আলাদা করবেন।

হাসান, মিশকাত [৩৩৬১] আবু ঈসা বলেন, আলী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আর এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তৎপরবর্তীগণ আমল করিয়াছেন। বন্দিনী মা-সন্তান, পিতা-পুত্র এবং ভাইদেরকে পরস্পর হইতে আলাদা করাকে তারা নিষিদ্ধ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ বন্দীদের মেরে ফেলা বা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত করে দেওয়া [বা বিনিময় আদায় করা]

১৫৬৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন যে, জিবরাঈল [আঃ] তাহাঁর নিকট এসে বলেন, বদরের বন্দীদের ব্যাপারে তাহাদেরকে অর্থাৎ আপনার সাহাবীদেরকে ইখতিয়ার [স্বাধীনতা] দিন। হয় তাহাদেরকে তারা মেরে ফেলুক অথবা তাহাদের [সাহাবীদের] সমান সংখ্যক লোক আগামী বছর নিহত হওয়ার শর্তে মুক্তিপণ গ্রহণ করে তাহাদেরকে মুক্ত করে দিক। তারা [সাহাবীগণ] বলিলেন, আমাদের মধ্য হইতে সম-সংখ্যক লোক মারা গেলেও আমরা তাহাদেরকে মুক্তিপণ গ্রহণ করে ছেড়ে দিব।

সহীহ্‌, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৭৩], ইরওয়া [৫/৪৮-৪৯] ইবনি মাসউদ, আনাস, আবু বারযা ও জুবাইর ইবনি মুতঈম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা সাওরীর সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। আমারা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ইবনি আবী যাইদা বর্ণিত হাদীস হিসাবেই জেনেছি। আবু উসামা-হিশাম হইতে, তিনি ইবনি সীরীন হইতে, তিনি উবাইদা হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একইরকম বর্ণিত হয়েছে। এটি মুরসাল হাদীসরূপে ইবনি আওন-ইবনি সীরীন হইতে, তিনি উবাইদা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু দাঊদ আল-হাফারীর নাম উমার, পিতা সাদ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৮. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দুজন মুসলমান বন্দীকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন মুশ্‌রিক বন্দীর সাথে বিনিময় করিয়াছেন।

সহীহ্‌, মুসলিম [৫/৭৮] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু কিলাবার চাচার নাম আবুল মুহাল্লাব আবদুর রাহমান ইবনি আমর, মতান্তরে তার নাম মুআবিয়া ইবনি উমার। আর আবু কিলাবার নাম আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ আল-জারমী। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈগন আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে নেতা চাইলে কোন বন্দীকে অনুগ্রহ প্রদর্শনপূর্বক মুক্তি দিতে পারেন, মেরে ফেলতে পারেন অথবা বিনিময় গ্রহণ করে ছেড়েও দিতে পারেন। বিনিময় নিয়ে মুক্তি দেওয়ার পরিবর্তে মেরে ফেলাকেই কিছু অভিজ্ঞ আলিম উত্তম মনে করেন। আওযাঈ বলেন, আমি জানতে পেরেছি, নিম্নলিখিত আয়াত মানসূখ [বাতিল] হয়ে গেছেঃ “তারপর হয় অনুগ্রহ করিবে অথবা বিনিময় গ্রহণ করে মুক্ত করে দিবে” [সূরাদি. মুহাম্মাদ- ৪]। নাসিখ [বাতিলকারী] আয়াত হলঃ “তাহাদেরকে যে জায়গাতেই পাও সেখানেই মেরে ফেল [সূরাদি. বাকারা- ১৯১, সূরাদি. নিসা- ৯১]। ইবনিল মুবারাক আওযাঈ হইতে এই উক্তি বর্ণনা করিয়াছেন। ইসহাক ইবনি মানসুর বলেন, আহ্‌মাদকে আমি প্রশ্ন করলাম, কাফির যোদ্ধা বন্দী অবস্থায় এলে আপনি তাকে মেরে ফেলা পছন্দ করেন না বিনিময় নিয়ে মুক্তি দেওয়া পছন্দ করেন ? তিনি উত্তরে বলিলেন, বিনিময় দিতে রাযি হলে তা নিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়াতেও কোন সমস্যা নেই অথবা মেরে ফেলতেও কোন আপত্তি নেই। ইসহাক বলেন, তাকে মেরে ফেলাটাই আমি উত্তম বলে মনে করি। তবে সে প্রসিদ্ধি লাভ করলে এবং তার ব্যাপারে নানাবিধ আশা করার সুযোগ থাকলে [তাকে মুক্তি দেওয়াই উচিত]। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ নারী ও শিশুদের মেরে ফেলা নিষেধ

১৫৬৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একজন মহিলাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কোন এক যুদ্ধে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এতে খুবই অসুন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং নারী ও শিশুদের মেরে ফেলতে বারণ করেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৪১], নাসা-ঈ, বুরাইদা, রাবাহ তাকে রিয়াহ ইবনির রাবীও বলা হয়। আসওয়াদ ইবনি সারী , ইবনি আব্বাস ও সাব ইবনি জাস্‌সামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। নারী ও শিশুদের মেরে ফেলাকে তারা জঘন্য কাজ বলেছেন। এই মতটি দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও শাফিঈও। রাতের বেলা আক্রমণ এবং এমতাবস্থায় নারী ও শিশুদের মেরে ফেলার পক্ষে অন্য একদল অভিজ্ঞ আলিম সম্মতি প্রদান করিয়াছেন। এই অভিমত দিয়েছেন আহ্‌মাদ ও ইসহাক। রাতের বেলা অতর্কিত আক্রমণের সুযোগ তারা দুজনেই রেখেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

সাব ইবনি জাসসামা [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মুশ্‌রিকদের নারী ও শিশুদেরকে আমাদের অশ্বারোহী বাহিনী পদদলিত করেছে। তিনি বললেনঃ তারা তাহাদের বাপ-দাদার সাথেই সম্পৃক্ত।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৮৩৯], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ [কোন লোককে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা বৈধ নয়]

১৫৭১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি যুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি বলে দেন, তোমরা কুরাইশ বংশের অমুক অমুক লোকের নাগাল পেলে তাহাদের দুজনকেই আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। যখন আমরা যাত্রা শুরু করলাম তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবার বললেনঃ আমি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, অমুক অমুক লোককে তোমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়ার অধিকারী আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ নয়। অতএব তোমরা অমুক ও অমুকের নাগাল পেলে তবে তাহাদের দুজনকেই মেরে ফেলবে।

সহীহ্‌ বুখারী, ইবনি আব্বাস ও হামযা ইবনি আমর আল-আসলামী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। এই হাদীসের সনদে সুলাইমান ইবনি ইয়াসার ও আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর মাঝখানে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক আরও একজন বর্ণনাকারীর উল্লেখ করিয়াছেন। এই হাদীসটি একাধিক বর্ণনাকারী লাইসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। লাইস ইবনি সাদের হাদীস অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সহিহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করা

১৫৭২. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক তিনটি বিষয়ে অর্থাৎ অহংকার, গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ ও ঋণ হইতে মুক্ত অবস্থায় মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৪১২] আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৩. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তিনটি বিষয় হইতে মুক্ত থাকা অবস্থায় তার রুহ তার দেহ হইতে আলাদা হলে সে জান্নাতে যাবেঃ সম্পদ পুঞ্জীভূত করা, গানীমতের মাল আত্মসাৎ করা ও ঋণ।

হাদীসে বর্ণিত শব্দ শাজ, সহীহা [২৭৮৫]। সাঈদ তাহাঁর বর্ণনায় আল–কানয এবং আবু আওয়ানা তাহাঁর বর্ণনায় আল-কিবর [অহংকার] শব্দের উল্লেখ করিয়াছেন। আবু আওয়ানার বর্ণনায় “মাদান” রাবীর উল্লেখ করেননি। সাঈদের বর্ণনাটি অনেক বেশী সহীহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায

১৫৭৪. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! অমুক লোক শহীদ হয়েছে। তিনি বললেনঃ কোন অবস্থাতেই নয়, গনিমতের একটি আলখাল্লা [লম্বা ঢিলা জামা] আত্মসাৎ করায় আমি তাকে জাহান্নামে দেখিতে পাচ্ছি। তিনি বললেনঃ হে উমার! উঠ এবং তিনবার ঘোষণা দাও- ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।

সহীহ্‌, মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ গারীব বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ

১৫৭৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উম্মু সুলাইম [রাদি.] ও তার সাথের আনসার মহিলাদের নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তারা পানি পান করাতেন এবং আহতদের জখমে ঔষধ লাগিয়ে দিতেন।

সহীহ্‌, সহীহ্‌ আবু দাঊদ [২২৮৪], মুসলিম, আবু ঈসা বলেছেন, রুবাই বিনতি মুআওয়্যিয [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আর এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের উপহার নেয়া

১৫৭৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য কিসরা [পারস্য সম্রাট] উপহার পাঠালে তিনি তা নেন। বিভিন্ন দেশের রাজা–বাদশাগণ তাহাঁর জন্য উপহার পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করিয়াছেন।

খুবই দুর্বল, তালীক আলার রাওযাতুন নাদিয়্যাহ [২/১৬৩]। এ অনুচ্ছেদে জাবির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেছেন , এ হাদীসটি হাসান গারীব। সুওয়াইর ইবনি আবু ফাখিতার নাম সাঈদ, পিতার নাম ইলাকা। সুওয়াইব–এর উপনাম আবু জাহম। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২৪. অনুচ্ছেদঃ মুশ্‌রিকদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করা প্রসঙ্গে

১৫৭৭. ইয়ায ইবনি হিমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার একটি উষ্ট্রী বা অন্য কিছু উপহার হিসাবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে উপস্থাপন করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি কি ইসলাম ধর্ম ক্ববূল করেছ? তিনি বলেন, না [পরে তিনি ইসলাম ধর্ম ক্ববূল করেন]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ মুশরিকদের উপহার নিতে আমাকে বারণ করা হয়েছে।

হাসান সহিহ, প্রাগুক্ত [২/১৬৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। যাব্‌দুল মুশ্‌রিকীন অর্থ মুশরিকদের দেওয়া উপহার। অবশ্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এও বর্ণিত আছে যে, মুশ্‌রিকদের উপহার তিনি নিতেন। এ হাদীসে মাকরূহ্ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটাও হইতে পারে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আগে উপহার নিতেন। তারপর তা নিতে তাঁকে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৫. অনুচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞতার সিজদা

১৫৭৮. আবু বাক্‌রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এমন একটি সুখবর আসে যে, তিনি তাতে খুবই আনন্দিত হন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [১৩৯৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা শুধুমাত্র উল্লেখিত সনদ সূত্রেই বাক্কার ইবনি আবদুল আযীযের বর্ণিত হাদীসে তা জেনেছি। এ হাদীস মোতাবিক বেশির ভাগ আলিম আমল করিয়াছেন। কৃতজ্ঞতার সিজদা বৈধ হওয়ার পক্ষে তারা অভিমত দিয়েছেন। বাক্কার ইবনি আব্দুল আজীজ ইবনি আবী বাকরাহ হাদীসের [বর্ণনার] উপযোগী। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৬. অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোক বা ক্রীতদাস কর্তৃক [কাউকে] নিরাপত্তা দান

১৫৭৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহিলারাও তাহাদের সম্প্রদায়ের পক্ষে [কাউকে] আশ্রয় দিতে পারে।

হাসান, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৭৮] উম্মু হানী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। ঈমাম বুখারীর নিকট আমি প্রশ্ন করলে তিনি এটিকে সহীহ হাদীস বলেন। কাছীর ইবনি যাইদ আল-ওয়ালীদ ইবনি রাবাহ-এর নিকট হাদীস শুনেছেন। আর আল-ওয়ালীদ ইবনি রাবাহ আবু হুরাইরার নিকট হাদীস শুনেছেন। তিনি হাদীস বর্ণনা করার উপযোগী। আবু তালিবের কন্যা উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়দের মধ্যে দুইজন লোককে আমি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে লোককে তুমি নিরাপত্তা প্রদান করেছ আমরাও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। সহিহ, সহিহ আবু দাঊদ [২৪৬৮], সহীহা [২০৪৯], নাসা-ঈ সংক্ষিপ্তভাবে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। নারীরাও কোন লোককে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে বলে তারা মনে করেন। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। নারী ও গোলামদের দ্বারা কোন লোকের নিরাপত্তা দানকে তারা দুজনেই বৈধ বলেছেন। অন্যান্য সূত্রেও উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আবু মুররা [রঃ] আকীল ইবনি আবু তালিবের মুক্ত দাস, তাকে উম্মু হানী [রাদি.]-এর মুক্তদাসও বলা হয়। তার নাম ইয়াযীদ। উমার [রাদি.]-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, গোলাম কর্তৃক নিরাপত্তা দান করাকে তিনি অনুমোদন করিয়াছেন। আলী ইবনি আবু তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “মুসলমানদের যিম্মা এক সমান, তাহাদের সাধারণ লোকও [কাউকে] নিজ দায়িত্বে নিরাপত্তা দেওয়ার অধিকারী”। আবু ঈসা বলেনঃ অভিজ্ঞ আলিমগণের মতে এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে কোন মুসলমান লোক যদি [শত্রু পক্ষের] কোন লোককে মুসলমানদের পক্ষে নিরাপত্তার ওয়াদা দেয় তবে তা সমগ্র মুসলিম সমাজের পক্ষে গণ্য হইবে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

২৭. অনুচ্ছেদঃ বিশ্বাসঘাতকতা প্রসঙ্গে

১৫৮০.সুলাইম ইবনি আমির [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

একটি সন্ধিচুক্তি মুআবিয়া [রাদি.] ও রুমবাসীদের মধ্যে কার্যকর ছিল। তিনি [মুআবিয়া] তাহাদের জনপদে [সৈন্যসহ] চলাফেরা করিতেন। এমতাবস্থায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে অতর্কিতে তাহাদেরকে আক্রমণ করেন। এমন সময় শোনা গেল, পশুর পিঠে অথবা ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে একজন লোক বলছে, আল্লাহু আকবার। চুক্তির সময় পূর্ণ কর, বিশ্বাসঘাতকতা কর না। আমর ইবনি আবাসা [রাদি.] ছিলেন এই আরোহী ব্যক্তি। এ বিষয়ে মুআবিয়া [রাদি.] তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ কোন জাতির সাথে যে লোকের চুক্তি আছে সে যেন এই চুক্তি ভঙ্গ না করে এবং তার বিপরীত কিছু না করে। চুক্তির সময় শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত অথবা প্রতিপক্ষকে পরিষ্কারভাবে জানানোর আগ পর্যন্ত এটা ভঙ্গ করা যাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর মুআবিয়া [রাদি.] নিজের লোকদের নিয়ে ফিরে আসেন।

সহিহ, সহিহ আবু দাঊদ [২৪৬৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের হাতে কিয়ামাতের দিন একটি করে পতাকা থাকিবে

১৫৮১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে কিয়ামাত দিবসে একটি করে পতাকা স্থাপন করা হইবে।

সহিহ, সহিহ আবু দাঊদ [২৪৬১] আলী, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আবু সাঈদ আল-খুদরী ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিনি আরও বলেনঃ “প্রত্যেক বিশ্বাস ঘাতকের জন্য পতাকা থাকিবে” আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীস সম্পর্কে আমি মুহাম্মদ [বুখারী]-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ হাদীসটি মারফূ হিসাবে আমার জানা নেই। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯. অনুচ্ছেদঃ সালিশ মেনে আত্মসমর্পণ

১৫৮২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনি মুআয [রাদি.] আহ্‌যাব যুদ্ধের দিন তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এতে তার বাহুর মাঝখানের রগ কেটে যায়। তার ক্ষতস্থানে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আগুনের সেঁক দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। তারপর তার হাত ফুলে যায়। আগুনের সেঁক দেওয়া বন্ধ করলে আবার রক্তক্ষরণ হইতে থাকে। আবার তিনি তার ক্ষতস্থানে আগুনের সেঁক দেন। তার হাত পুনরায় ফুলে উঠে। তিনি [সাদ] নিজের এ অবস্থা দেখে বলেন, হে আল্লাহ! আমার জীবনকে কেড়ে নিও না বানূ কুরাইযার চরম পরিণতি দেখে আমার চোখ না জুড়ানো পর্যন্ত। ” তার জখম হইতে সাথে সাথে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আর একটি ফোঁটাও বের হয়নি। সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-কে তারা [বানূ কুরাইযা] সালিশ মানতে রাজী হয়। তিনি [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]] তার [সাদের] নিকট লোক পাঠালেন [সমাধানের জন্য]। তিনি সমাধান দিলেন যে, বানূ কুরাইযা গোত্রের পুরুষদেরকে মেরে ফেলা হইবে এবং মহিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা হইবে। মুসলমানগণ তাহাদের দ্বারা বিভিন্ন রকম কাজ আদায় করিতে পারবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহাদের ব্যাপারে তোমার মত সম্পূর্ণ আল্লাহ্ তাআলার মতের অনুরূপ হয়েছে। তারা [পুরুষগণ] সংখ্যায় ছিল চার শত। লোকেরা তাহাদেরকে মেরে ফেলা সমাপ্ত করলে, তার ক্ষতস্থান হইতে আবার রক্ত পড়া আরম্ভ হল এবং তিনি মৃত্যু বরণ করিলেন।

সহিহ, ইরওয়া [৫/৩৮-৩৯] আবু সাঈদ ও আতিয়্যা আল-কুরাযী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৩. সামুরা ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “বয়স্ক মুশরিকদের হত্যা কর এবং তাহাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকদের জীবিত রাখ।”

যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৫২] যঈফ আবু দাউদ [২৫৯]। শারখঃ যার এখনও লজ্জাস্থানের লোম গজায়নি সে বালক। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। হাজ্জাজ ইবনি আরতাতও কাতাদার সূত্রে এ হাদীস এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫৮৪. আতিয়্যা আল-কুরাযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে বানূ কুরাইযার যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আনা হল। যাদের লজ্জাস্থানের লোম উঠেছে [বালেগদের] তাহাদেরকে হত্যা করা হল, আর যাদের তা উঠেনি [নাবালেগদের] তাহাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হল। আমার লজ্জাস্থানে তখনও লোম উঠেনি। একারণে আমাকে মুক্ত করে দেওয়া হল।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৪১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, যে লোকের বয়স এবং বীর্যপাতের ব্যাপারে সঠিকভাবে অনুমান করা না যাবে- তার নাভির নীচের লোম উঠাই বয়ঃপ্রাপ্তির লক্ষণ বলে গণ্য হইবে। এই অভিমত দিয়েছেন ঈমাম আহ্‌মাদ এবং ইসহাকও। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০. অনুচ্ছেদঃ বন্ধুত্বের চুক্তি প্রসঙ্গে

১৫৮৫. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর এক খুতবায় বলেনঃ জাহিলী আমলের চুক্তিসমূহকে তোমরা পূর্ণ কর। কেননা ইসলাম এটাকে আরো মজবুত করিবে। তোমরা আর নতুন করে ইসলামে একইরকম চুক্তি করিবে না।

হাসান, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৮৩] আবদুর রাহ্‌মান ইবনি আওফ, উম্মু সালামা, জুবাইর ইবনি মুতঈম, আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস ও কাইস ইবনি আসিম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩১. অনুচ্ছেদঃ অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে কর আদায় প্রসঙ্গে

১৫৮৬. বাজালা ইবনি আবদা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মানাযির নামক অঞ্চলে আমি জায ইবনি মুআবিয়ার সচিব ছিলাম। আমাদের নিকট উমার [রাদি.]-এর চিঠি আসল। তিনি লিখেছেন, তোমাদের এ অঞ্চলের অগ্নিপূজকদের দেখ এবং তাহাদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ কর। আমাকে আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] জানিয়েছেন যে, হাজার এলাকার অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কর আদায় করিয়াছেন।

সহিহ, ইরওয়া [১২৪৯], বুখারী, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৭. বাজালা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অগ্নিপূজকদের হইতে উমার [রাদি.] কর সংগ্রহ করিতেন না যে পর্যন্ত না তাকে আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] জানান যে, হাজার এলাকার অগ্নিপূজকদের নিকট হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কর সংগ্রহ করিয়াছেন।

সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস. এ হাদীসে আরো অনেক কথা আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৮. সাইব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাহরাইনের মাজূসীদের নিকট হইতে জিযইয়া গ্রহণ করেন। উমার [রাদি.] পারস্যের মাজূসীদের নিকট হইতে এবং উসমান [রাদি.] ফুরস-এর মাজূসীদের নিকট হইতে তা আদায় করেন।

ঈমাম তিরমিযী বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তিনি বলেনঃ মালিক যুহরীর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। অতএব হাদীসটি মুরসাল, ইরওয়া [৫/৯০]। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুরসাল

৩২. অনুচ্ছেদঃ যিম্মীদের [অমুসলিম নাগরিক] সম্পদ হইতে যা নেওয়া যাবে

১৫৮৯. উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন একটি সম্প্রদায়ের এলাকা দিয়ে আমরা চলাচল করি যারা আমাদের মেহমানদারীও করে না এবং তাহাদের উপর আমাদের প্রাপ্য অধিকারও আদায় করে না। আমরাও তাহাদের নিকট হইতে জোরপূর্বক আমাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করি না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা তোমাদের বল প্রয়োগ ব্যতীত মেহমানদারী করিতে না চাইলে তোমরা জোরপূর্বকই তা আদায় কর।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩৬৭৬], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এটিকে ইয়াযীদ ইবনি হাবীবের সূত্রেও লাইস ইবনি সাদ বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসের তাৎপর্য হল, মুসলিম যোদ্ধারা অভিযানে গমন করত। তখন এমন সব যিম্মীদের লোকালয় পেরিয়ে যেতে হত যেখানে ইচ্ছা করলেও খাবার-দাবার কিনতে পাওয়া যেত না। এরূপ ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নির্দেশ ছিলঃ তারা খাবার বিক্রয় করিতে অস্বীকার করলে এবং জোরখাটিয়ে আদায় করা ছাড়া আর কোন উপায় না থাকলে তবে তাহাদের নিকট হইতে শক্তি খাটিয়েই তা কিনে নাও। কয়েকটি হাদীসে এরূপ ব্যাখ্যার উল্লেখ আছে। এরকম পরিস্থিতিতে উমার [রাদি.]-ও এরূপ নির্দেশই দিতেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩. অনুচ্ছেদঃ হিজরাত প্রসঙ্গে

১৫৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এই বিজয়ের পর আর হিজরাত নেই। হ্যাঁ জিহাদ ও [তার] সংকল্প বজায় থাকিবে। অতএব যখন জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য তোমাদেরকে ডাকা হইবে তখন তোমরা তার জন্যে বেরিয়ে পড়।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৭৭৩], নাসা-ঈ আবু সাঈদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবদুল্লাহ ইবনি হুবশী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি সুফিয়ান সাওরীও মানসূরের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর শপথের বর্ণনা

১৫৯১, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে আল্লাহ্‌ তাআলার এই বাণী প্রসঙ্গে বর্ণিত আছেঃ “আল্লাহ্‌ তাআলা অবশ্যই মুমিন লোকদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন গাছের নীচে তোমার নিকট তারা শপথ করছিল। তাহাদের অন্তরের অবস্থা তাহাঁর জানা ছিল। এজন্যই তাহাদের উপর তিনি প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন এবং তাহাদেরকে নিকটবর্তী বিজয় দান করেন” [সূরাদি. ফাত্‌হ-১৮]। জাবির [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আমরা শপথ করলাম [প্রতিজ্ঞা করলাম] যে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পালাবো না। কিন্তু আমরা তাহাঁর নিকট মৃত্যুর বাইআত করিনি।

সহীহ্‌, মুসলিম আয়াতের উল্লেখ ব্যতীত. সালামা ইবনিল আকওয়া, ইবনি উমার, উবাদা ও জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত আছে। কিন্তু আবু সালামার নাম তাতে উল্লেখ নেই। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯২. ইয়াযীদ ইবনি আবু উবাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সালামা ইবনিল আকওয়া [রাদি.]-কে আমি প্রশ্ন করলামঃ হুদাইবিয়ার দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আপনারা কি বিষয়ে শপথ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, মৃত্যুর শপথ করেছিলাম [যে পর্যন্ত জীবন থাকিবে যুদ্ধ করিতে থাকব, পালিয়ে যাবো না]।

সহীহ্‌, নাসা-ঈ, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট [নির্দেশ] শুনার ও সে মোতাবিক আনুগত্যের শপথ নিতাম। তিনি আমাদের বলিতেনঃ তোমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব।

সহীহ্‌, সহীহ্‌ আবু দাঊদ [২৬০৬], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। উভয় হাদীসের অর্থই সঠিক। কেননা তাহাঁর নিকট প্রয়োজনবোধে মৃত্যুবরণের জন্য তাহাঁর একদল সাহাবী শপথ [বাইআত] করিয়াছেন। তারা বলেছেন, আমরা মৃত্যুবরণ করার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আপনার আগে আগে প্রতিরক্ষা রচনা করে চলব। সাহাবীদের অন্য দল তাহাঁর নিকট প্রাণভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে না পালানোর শপথ করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আমরা কোন সময়ই মৃত্যুর শপথ করিনি, বরং আমরা তাহাঁর নিকট যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পালিয়ে না যাওয়ার শপথ করেছি।

সহীহ্‌, মুসলিম ১৫৯১ নং হাদীসটি উল্লেখ হয়েছে, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ শপথ [বাইআত] প্রত্যাখ্যানের পরিণতি

১৫৯৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামাত দিবসে কথা বলবেন না, তাহাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাহাদের জন্য রয়েছে খুবই বেদনাদায়ক শাস্তি। এদের মধ্যকার একজন হলঃ ইমামের নিকট যে লোক আনুগত্যের শপথ করেছে। ঈমাম [রাষ্ট্রপ্রধান] তাকে কোন সুযোগ-সুবিধা দিলে তবে সে শপথ ঠিক রাখে। তিনি তাকে কোন সুযোগ-সুবিধা না দিলে তবে সে শপথ পূর্ণ করে না।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২০৭], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসের বক্তব্য সম্পর্কে কোন মতবিরোধ নেই। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ গোলামের শপথ প্রসঙ্গে

১৫৯৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট একজন গোলাম এসে হিজরাতের শপথ নিল। সে যে গোলাম তা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানতেন না। তার মনিব এসে উপস্থিত হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ আমার নিকট একে বিক্রয় করে দাও। তিনি দুটি কালো গোলামের বিনিময়ে তাকে কিনলেন। এরপর হইতে তিনি কোন লোককে শপথ করাতেন না সে গোলাম কি-না তা প্রশ্ন না করা পর্যন্ত।

সহীহ্‌, মুসলিম, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব সহীহ্‌ বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবুয যুবাইরের সূত্রে জেনেছি। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের শপথ প্রসঙ্গে

১৫৯৭. মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রুকাইকার মেয়ে উমাইমা [রাদি.] কে বলিতে শুনেছেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট কয়েকজন মহিলার সাথে শপথ গ্রহণ করি। তিনি আমাদেরকে বললেনঃ তোমাদের যোগ্যতা ও শক্তি মোতাবিক [দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করিবে]। আমি বললাম, আমাদের নিজেদের চাইতে আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রাসূল আমাদের উপর অনেক বেশি অনুগ্রহশীল। আমি আরো বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদেরকে শপথ করান। সুফিয়ান বলেন, তার কথার অর্থ ছিল, আমাদের হাত স্পর্শ করুন [যেভাবে পুরুষদের হাত স্পর্শ করে শপথ করা হয়]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার বক্তব্য একজন মহিলার প্রতি যেমন একশত জন মহিলার উপরেও ঠিক তেমনই।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৭৪] আইশা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্নিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদিরের সূত্রেই জেনেছি। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ও অন্যান্যরা মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদিরের সূত্রে এ হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আমি এ হাদীস বিষয়ে মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, উমাইমা বিনতু রুকাইকা [রাদি.] হইতে বর্ণিত এটি ব্যতীত আর কোন হাদীস আছে কি-না তা আমার জানা নেই। উমাইমা [রাদি.] নামক আরো একজন মহিলা আছেন যিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহীবীদের সংখ্যা

১৫৯৮. বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা একে অপরের সাথে বলাবলি করতাম যে, বদরের যুদ্ধে বাদরী বাহিনীতে সাহাবীগণের পরিমাণ ছিল তালূত বাহিনীর মত তিন শত তেরজন।

সহীহ্‌, বুখারী, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি আবু ইসহাকের সূত্রে সুফিয়ান সাওরী এবং অন্যান্যরাও বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ খুমুস [এক-পঞ্চমাংশ]-এর এ বিবরণ

১৫৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল কাইস বংশের প্রতিনিধি দলকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছি, তোমরা গনিমতের যে সম্পদ লাভ করিবে তার মধ্য হইতে এক এক-পঞ্চামাংশ [বাইতুল মালে] দিয়ে দেবে।

সহীহ্‌, সংক্ষিপ্ত বুখারী [৪০], আল ঈমান, আবু উবাইদ [৫৯/১], নাসা-ঈ, এ হাদীসের সাথে একটি ঘটনা আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। উপরোক্ত হাদীসের মত অন্য একটি সূত্রেও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০. অনুচ্ছেদঃ গনিমতের সম্পদ হইতে বন্টনের আগে নেওয়া নিষেধ

১৬০০. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক [যুদ্ধের] ভ্রমণে আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। কয়েকটি দ্রুতগামী লোক আগে চলে গেল। তারা দ্রুততার সাথে গনিমতের সম্পদ হইতে কিছু নিয়ে তা রান্না করা শুরু করে দিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পিছনের দলের সাথে ছিলেন। এই হাঁড়িগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি নির্দেশ দিলেন এবং সে অনুযায়ী সেগুলো উলটিয়ে দেওয়া হল। তারপর তিনি গনিমতের সম্পদ বন্টন করিলেন এবং দশ দশটি বকরীর সমান ধরলেন এক একটি উটকে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩১৩৭], নাসা-ঈ, আবু ঈসা বলেন, সুফিয়ান সাওরী তার পিতা হইতে, তিনি আবাইয়া হইতে, তিনি তার দাদা রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.]-এর সূত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, এতে আবাইয়ার পরে তার পিতা রিফাআর কোন উল্লেখ নেই। মাহ্‌মূদ ইবনি গাইলান-ওয়াকী হইতে, তিনি সুফিয়ানের সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং এটি অনেক বেশি সহিহ। সালাবা ইবনিল হাকাম, আনাস, আবু রাইহানা, আবুদ দারদা, আবদুর রাহমান ইবনি সামুরা, যাইদ ইবনি খালিদ, জাবির, আবু হুরাইরা ও আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে অধিক সহীহ্‌ বলেছেন। আর আবাইয়া ইবুন রিফাআ ভাবে তার দাদা রাফি [রাদি.] হইতে হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বন্টনের পূর্বে যে ব্যক্তি গনিমতের সম্পদ হইতে কিছু গ্রহণ করে সে আমাদের দল ভুক্ত নয়।

সহীহ্‌, মিশকাত তাহকীক ছানী [২৯৪৭ ]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ এবং আনাস [রাদি.]-এর রিওয়াত হিসাবে গারীব বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১. অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাবদের সালাম প্রদান প্রসঙ্গে

১৬০২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদী-নাসারাদের প্রথমে সালাম প্রদান করো না। তোমরা রাস্তায় চলাচলের সময় তাহাদের কারো সাথে দেখা হলে তাকে রাস্তার কিনারায় ঠেলে দিও।

সহীহ্‌, সহীহা [৭০৪], ইরওয়া [১২৭১], মুসলিম, বুখারী আদাবুল মুফরাদ, ২৮৫৫ নং হাদীসটির আলোচনা আসবে। ইবনি উমার, আনাস ও আবু বাসরা আল-গিফারী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমাদেরকে কোন ইয়াহূদী সালাম করে তখন বলে, আসসামু আলাইকুম [তোমার মৃত্যু হোক]। তুমি উত্তরে বল, “আলাইকা” [তোমার হোক]।

সহীহ্‌, ইরওয়া [৫/১১২], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪২. অনুচ্ছেদঃ মুশরিকদের সাথে বসবাস করা নিষেধ

১৬০৪. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

খাসআমদের অঞ্চলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি ছোট বাহিনী প্রেরণ করেন। সিজদার মাধ্যমে সেখানকার জনগণ আত্মরক্ষা করিতে চাইল। কিন্তু দ্রুততার সাথে তাহাদেরকে মেরে ফেলা হয়। এ সংবাদ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলে তিনি তাহাদের অর্ধেক দিয়াত [রক্তপণ] দেওয়ার জন্য হুকুম দেন। তিনি আরো বলেন, মুশ্‌রিকদের সাথে যে সকল মুসলমান বসবাস করে আমি তাহাদের দায়িত্ব হইতে মুক্ত। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তা কেন? তিনি বললেনঃ এইটুকু দূরে থাকিবে যেন উভয়ের আগুন না দেখা যায়।

“অর্ধেক দিয়াত দেওয়ার হুকুম দেন” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ্‌, ইরওয়া [১২০৭], সহীহ্‌ আবু দাঊদ [২৩৭৭] তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৫. কাইস ইবনি আবু হাযিম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তবে এই সূত্রে জারীর [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই এবং এটিই অনেক বেশি সহিহ। সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইসমাঈলের বেশিরভাগ সঙ্গী তার হইতে, তিনি কাইস ইবনি আবু হাযিমের সূত্রে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি ছোট বাহিনী পাঠান। এ সূত্রেও জারীরের উল্লেখ নেই। আবু মুআবিয়ার হাদীসের মত হাদীস হাম্মাদ ইবনি সালামা-হাজ্জাজ ইবনি আরতাত হইতে, তিনি ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ হইতে, তিনি কাইস হইতে, তিনি জারীর [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আমি ঈমাম বুখারীকে বলিতে শুনিয়াছি, সঠিক কথা হল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে কাইস এর বর্ণনাটি মুরসাল। সামুরা ইবনি জুনদাব [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস কর না, তাহাদের সংসর্গেও যেও না। যে মানুষ তাহাদের সাথে বসবাস করিবে অথবা তাহাদের সংসর্গে থাকিবে সে তাহাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হইবে। ”

তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪৩. অনুচ্ছেদঃ আরব উপদ্বীপ হইতে ইয়াহূদী-নাসারাদের বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে

১৬০৬. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইনশাআল্লাহ আমি জীবিত থাকলে ইয়াহূদী-নাসারাদের অবশ্যই আরব উপদ্বীপ হইতে বের করে দিব।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস, তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৭. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ আমি ইহূদী ও নাসারাদের আরব উপদ্বীপ হইতে অবশ্যই বহিষ্কার করব। মুসলমান ব্যতীত অন্য কাউকে সেখানে বসবাস করিতে দিব না।

সহীহ্‌, সহীহা [১১৩৪], সহীহ্‌ আবু দাঊদ, মুসলিম. এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রেখে যাওয়া সম্পত্তি প্রসঙ্গে

১৬০৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর [রাদি.]-এর নিকট ফাতিমা [রাদি.] এসে বলিলেন, আপনার উত্তরাধিকারী কে হইবে? তিনি বলিলেন, আমার স্ত্রী এবং সন্তানগণ। তিনি [ফাতিমা] বলিলেন, তাহলে আমার পিতার উত্তরাধিকারী আমি হব না কেন? আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ “আমাদের [নাবীদের] কোন উত্তরাধিকারী হয় না। ” তবে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাদের ভরণ-পোষণের যোগার করিতেন আমিও তাহাদের ভরণ-পোষণের যোগার করে যাব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাদের খরচপাতি বহন করিতেন আমিও তাহাদের খরচপাতি বহন করিতে থাকব।

সহীহ্‌, মুখতাসার শামাঈল মুহাম্মাদীয়া [৩৩৭] উমার, তালহা, যুবাইর, আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, সাদ ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদ সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। এই হাদীস আবদুল ওয়াহ্‌হাব ইবনি আতা হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি আমর হইতে তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে হাম্মাদ ইবনি সালামা বর্ণনা করিয়াছেন। আমি এই হাদীস প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ বুখারীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ হাদীস মুহাম্মাদ ইবনি আমর হইতে, তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে হাম্মাদ ইবনি সালামা ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.]-এর কাছে ফাতিমা [রাদি.] এসে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে তার প্রাপ্য উত্তরাধিকারস্বত্ব দাবি করেন। তারা দুজুনেই বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে আমরা বলিতে শুনেছিঃ “আমার কেউ ওয়ারিস হয় না”। ফাতিমা [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আর কোন সময় [উত্তরাধিকারস্বত্ব বিষয়ে] আপনাদের উভয়ের সাথে আলোচনা করব না। অতঃপর মৃত্যু পর্যন্তু তিনি আর তাহাদের সাথে [এ ব্যাপারে] কথা বলেননি।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস। আলী ইবনি ঈসা বলেন, আমি তোমাদের সাথে কথা বলবনা। এর অর্থ হল উত্তরাধিকার বিষয়ে তোমরা সত্যবাদী। আবু বাকার [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১০. মালিক ইবনি আওস ইবনি হাদাসান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]–এর সামনে আসলাম। উসমান ইবনি আফফান, যুবাইর ইবনিল আওয়াম, আবদুর রাহমান ইবনি আওফ ও সাদ ইবনি ওয়াক্কাস [রাদি.]-ও তার সামনে আসলেন। তারপর আলী ও ইবনি আব্বাস [রাদি.]-ও আসলেন। তারা দুজনেই তাহাদের অভিযোগ উপস্থাপন করিলেন। তাহাদের সবাইকে উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি যাঁর হুকুমে আকাশ এবং যমীন সুপ্রতিষ্ঠিত আছে! আপনারা কি জানেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “আমাদের [নাবীদের] কোন উত্তরাধিকারী হয় না, আমরা যে সব [সম্পদ] রেখে যাই তা সাদকা বলে বিবেচিত”? তারা সকলেই বলিলেন, হ্যাঁ। আবার উমার [রাদি.] বলিলেন, আবু বকর [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মৃত্যুর পর বলিলেন, আমি এখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছি। [উমার বলেন] তখন আপনি [আব্বাস] ও ইনি [আলী] আবু বকর [রাদি.] এর নিকট এসেছিলেন। আপনার ভাইয়ের ছেলের সম্পত্তিতে আপনি নিজের উত্তরাধিকার দাবি করিলেন এবং ইনি তার শ্বশুরের সম্পত্তিতে নিজের উত্তরাধিকার দাবি করিলেন। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “আমাদের কোন উত্তরাধিকারী হয় না, আমরা যা কিছু রেখে যাই তা সাদকা বলে বিবেচিত”। আল্লাহ তাআলা জানেন, তিনি [আবু বাক্‌র] সত্যবাদী, সৎকর্মশীল, সৎপথের পথিক এবং সত্য-ন্যায়ের অনুসারী ছিলেন।

সহীহ্‌, মুখতাসার শামাইল [৩৪১], নাসা-ঈ, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সাথে দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব এবং মালিক ইবনি আনাস [রঃ]-এর রিওয়াত হিসাবে গারীব। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের দিন বললেনঃ এ শহরে আজকের দিনের পর আর যুদ্ধ করা যাবে না।

১৬১১. হারিস ইবনি মালিক ইবনি বারসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে মক্কা বিজয়ের দিন বলিতে শুনেছিঃ আজকের পর কিয়ামাত পর্যন্ত এখানে আর যুদ্ধ করা যাবে না।

সহীহ্‌, সহীহা [২৪২৭] ইবনি আব্বাস, সুলাইমান ইবনি সুরাদ ও মুতী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। যাকারিয়া ইবনি আবু যাইদা-শাবী [রঃ]-এর সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণিত। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র এই সূত্রেই জেনেছি। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধের সঠিক সময়

১৬১২. নুমান ইবনি মুকাররিন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। ফজর হয়ে গেলে সূর্য না উঠা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ হইতে বিরত থাকতেন এবং সূর্য উঠার পর যুদ্ধ শুরু করিতেন। দিনের অর্ধেক চলে যাবার পর তিনি যুদ্ধ স্থগিত করিতেন এবং সূর্য পশ্চিমে ঢলে না পড়া পর্যন্ত তা বন্ধ রাখতেন। সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিনি আবার যুদ্ধ শুরু করিতেন এবং আসর পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতেন। তারপর আসর নামাজ আদায়ের জন্য তা বন্ধ করিতেন। নামাজ শেষে তিনি আবার যুদ্ধে নেমে যেতেন। বলা হত, এ সময় [আল্লাহ তাআলার] সাহায্যের বায়ু প্রবাহিত হয় এবং মুমিনগণ তাহাদের নামাযের মাঝে তাহাদের সেনাবাহিনীর জন্য দুআ করিতেন।

যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৩৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি নুমান ইবনি মুকাররিন [রাদি.] হইতে আরও একের অধিক অবিচ্ছিন্ন [মুত্তাসিল] সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কাতাদা [রঃ] নুমান ইবনি মুকাররিনের দেখা পাননি। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর খিলাফত কালে নুমান [রাদি.] মারা যান। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৬১৩. মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হুরমুযানের বিরুদ্ধে নুমান ইবনি মুকাররিন [রাদি.]-কে প্রেরণ করেন। তারপর এ হাদীসের বিস্তারিত ঘটনা [অন্যত্র] বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। নুমান ইবনি মুকাররিন [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে [বিভিন্ন যুদ্ধে] অংশগ্রহণ করেছি। তিনি দিনের প্রথম ভাগে যুদ্ধ আরম্ভ না করলে সূর্য [পশ্চিমাকাশে] ঢলে পড়ার, বাতাস প্রবাহিত হওয়ার এবং সাহায্য অবতীর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করে যুদ্ধ আরম্ভ করিতেন।

সহীহ্‌, সহীহ আবু দাঊদ [২৩৮৫], মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৯৩৩] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আলকামা ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ] বাক্‌র ইবনি আবদুল্লাহ আল-মুযানীর ভাই। নুমান ইবনি মুকাররিন উমার [রাদি.]-এর খিলাফাতকালে মারা যান। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭. অনুচ্ছেদঃ কুলক্ষণ প্রসঙ্গে

১৬১৪, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরকের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। এমন কেউই আমাদের মধ্যে নেই যার মনে এর ধারণা আসে না। তবে আল্লাহ্‌ তাআলা তাহাঁর উপর [মুমিন লোকের] ভরসার কারণে তা দূর করে দেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩৫৩৮] আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা, হাবিস আত-তামীমী, আইশা, ইবনি উমার ও সাদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আমরা শুধুমাত্র আলামা ইবনি কুহাইলের সূত্রেই এটি জেনেছি। এটি সালামা [রঃ] হইতে শুবা [রঃ]-ও বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে আমি বলিতে শুনিয়াছি, এ হাদীস প্রসঙ্গে সুলাইমান ইবনি হারব বলিতেনঃ “আমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই যার মনে এর ধারণা আসে না তবে আল্লাহর উপর ভরসার কারণে তা দূর করে দেন। ” কথাটুকু ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কথা নয়]। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সংক্রমণ এবং কুলক্ষণ বলিতে কিছু নেই। তবে আমি ফাল পছন্দ করি। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ফাল কি জিনিস? তিনি বললেনঃ পবিত্র ও উত্তম কথা।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [৩৫৩৭], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন দরকারে বের হওয়ার সময় [কারো মুখে] হে সঠিক পথের পথিক, হে সফলকাম বাক্য শুনতে পছন্দ করিতেন।

সহীহ্‌, রাওযুন নাযীর [৮৬] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮. অনুচ্ছেদঃ যুদ্ধের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] ওয়াসিয়াত [উপদেশ]

১৬১৭. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রাদি.] হইতে তার বাবার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [বুরাইদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন বাহিনীর অধিনায়ক মনোনীত করে কাউকে পাঠানোর সময় বিশেষভাবে তার নিজের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় করার এবং অধীনস্থ মুসলিম যোদ্ধাদের কল্যাণ কামনা করার পরামর্শ দিতেন। তিনি বলিতেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার নামে যুদ্ধ শুরু কর, আল্লাহ্‌ তাআলার রাস্তায় জিহাদ কর, আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে অবাধ্যাচরণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ কর না, বিশ্বাসঘাতকতা করা হইতে বিরত থাক, [শত্রুসৈন্যের] মৃতব্যক্তির নাক-কান ইত্যাদি কেটে মৃতদেহ বিকৃত কর না এবং শিশুদের হত্যা কর না। তুমি মুশরিক শত্রুদের সাথে মুখোমুখি হওয়াকালে তাহাদেরকে তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের যে কোন একটি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাবে। তারা এ তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি মেনে নিলে তা গ্রহণ কর এবং তাহাদেরকে হমলা করা হইতে বিরত থাক। তুমি তাহাদেরকে ইসলাম ধর্ম ক্ববূল করার জন্য আহ্বান জানাবে এবং হিজরত করে মুহাজিরদের এলাকায় চলে আসতে বলবে। তাহাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, তারা এ প্রস্তাব গ্রহণ করলে তারা মুহাজিরদের সমপরিমাণ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করিবে এবং যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য মুহাজিরদের উপর অর্পিত হইবে অনুরূপ তাহাদের উপরও অর্পিত হইবে। তারা নিজস্ব অবস্থান পরিবর্তন করিতে সম্মত না হলে তুমি তাহাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, তারা বেদুঈনদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হইবে। যা বেদুঈনদের বেলায় কার্যকর হইবে তাহাদের বেলায়ও তাই প্রযোজ্য হইবে। তারা জিহাদে যোগ না দিলে গনিমত ও ফাই হইতে কিছুই পাবে না। তারা ইসলাম ধর্ম ক্ববূল করিতে রাজি না হলে তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্‌ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাহাদের বিপক্ষে যুদ্ধ কর। তুমি কোন দুর্গ ঘেরাও করার পর তারা তোমার নিকট আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর নাবীর যিম্মাদারি [নিরাপত্তা] চাইলে তুমি তাহাদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলার যিম্মাদারিও অনুমোদন করিবে না আর তাহাঁর নাবীর যিম্মাদারিও নয়, বরং তাহাদের জন্য তোমার এবং তোমার সাথীদের যিম্মাদারি মঞ্জুর করিবে। কেননা আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রসূলের যিম্মাদারির খেলাপ করার চেয়ে তোমার ও তোমার সাথীদের যিম্মাদারির খেলাপ করাই তোমাদের জন্য উত্তম। তুমি কোন দুর্গবাসীদের অবরোধ করার পর তারা তোমার নিকট আল্লাহ্‌ তাআলার ফায়সালা মোতাবিক দুর্গ হইতে বের হয়ে আত্নসমর্পণ করিতে চাইলে তুমি তা অনুমোদন করিবে না, বরং তুমি তাহাদেরকে তোমার নিজের ফায়সালা মতো দুর্গ হইতে বের করে আত্নসমর্পণ করাবে। কারণ তুমি তাহাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলার সঠিক ফায়সালায় পৌঁছাতে পেরেছ কি-না তা তোমার জানা নেই। অথবা তিনি একই রকম কোন কথা বলেছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৮৫৮], মুসলিম, আবু ঈসা বলেন, নুমান ইবনি মুকাররিন [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু বুরাইদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ আলকামা ইবনি মারসাদ [রঃ] হইতেও বর্ণিত হয়েছে। এই বর্ণনায় আরো আছেঃ তারা [ইসলাম ধর্ম ক্ববূল করিতে] অস্বীকার করলে তাহাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় কর। তারা তাও ফিরিয়ে দিলে তাহাদের বিরুদ্ধে [যুদ্ধ করার জন্য] আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রর্থনা কর। সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি ওয়াকী ও একাধিক বর্ণনাকারী সুফিয়ানের নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্‌দীর সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীগণ এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতেও জিয্‌রার [খাজনা] উল্লেখ আছে। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ফজরের সময়ই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [কোন জনপদে] নৈশ হামলা করিতেন। তিনি আযান শুনলে হামলা হইতে বিরত থাকতেন, অন্যথায় হামলা করিতেন। একদিন তিনি কানকে সজাগ রাখলেন। তিনি বললেনঃ ফিতরাতের [ইসলামের] উপর আছে। ঐ লোকটি আবার বলিল, “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” [আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই]। তিনি বললেনঃ তুমি জাহান্নাম হইতে বেরিয়ে গেলে।

সহিহ, সহীহ্‌ আবু দাঊদ [২৩৬৮], মুসলিম, হাসান [রঃ] বলেন, আবুল ওয়ালীদ-হাম্মাদ ইবনি সালামা [রঃ]-এর এই সূত্রে একইরকম বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। তিরমিজি শরীফ বাংলা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “তিরমিজি শরীফ বাংলা – যুদ্ধাভিযান অধ্যায়”

Leave a Reply