কুরবানির হাদিস । আকীকা করার নিয়ম কানুন

কুরবানির হাদিস । আকীকা করার নিয়ম কানুন

কুরবানির হাদিস । আকীকা করার নিয়ম কানুন এই অধ্যায়ে মোট ৩১ টি হাদীস (১৪৯৩-১৫২৩) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-১৭ঃ কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ (১-২৪)=২৪টি

১. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর ফাযীলত
২. অনুচ্ছেদঃ দুটি মেষ কুরবানী করা
৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে কুরবানী করা
৪. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পশু কুরবানীর জন্য উত্তম
৫. অনুচ্ছেদঃ যে ধরণের পশু কুরবানী করা জায়িয নয়
৬. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পশু কুরবানী করা মাকরূহ
৭. অনুচ্ছেদঃ ছয় মাসের মেষকে [ভেড়া, দুম্বা, ছাগল] কুরবানী করা প্রসঙ্গে
৮. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর পশুতে অংশগ্রহণ করা
৯. অনুচ্ছেদঃ শিংভাঙ্গা ও কানফাটা পশু দিয়ে কুরবানী করা
১০. অনুচ্ছেদঃ একটি ছাগলই একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট
১১. অনুচ্ছেদঃ কুরবানী করা সুন্নাত
১২. অনুচ্ছেদঃ কুরবানী করিতে হইবে ঈদের নামাজ আদায়ে পর
১৩. অনুচ্ছেদঃ তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া মাকরূহ
১৪. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর গোশত তিন দিনের পরেও খাওয়ার সম্মতি প্রসঙ্গে
১৫. অনুচ্ছেদঃ ফারাআ ও আতীয়াহ বিষয়ে
১৬. অনুচ্ছেদঃ আকীকা প্রসঙ্গে
১৭. অনুচ্ছেদঃ সদ্য প্রসূত শিশুর কানে আযান দেওয়া
১৮. অনুচ্ছেদঃ [কুরবানীর উত্তম পশু ও উত্তম কাফন]
১৯. অনুচ্ছেদঃ [প্রতি বছর প্রতিটি পরিবার কুরবানী করিবে]
২০. অনুচ্ছেদঃ একটি ছাগল দ্বারা আকীকা।
২১. অনুচ্ছেদঃ [ঈদের নামাজ আদায়ের পর কুরবানী করা প্রসঙ্গে]
২২. অনুচ্ছেদঃ [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর উম্মাতের পক্ষে কুরবানী]
২৩. অনুচ্ছেদঃ [শিশুর জন্মের সপ্তম, চতুর্দশ বা একবিংশ দিনে আকীকা করা]
২৪. অনুচ্ছেদঃ যে লোক কুরবানীর আশা রাখে যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর তার চুল না কাটা।

১. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর ফাযীলত

১৪৯৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরবানীর দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা [কুরবানী করা]। কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ হাযির হইবে। তার [কুরবানীর পশুর] রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ্‌ তাআলার নিকটে এক বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানী কর।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩১২৬], এ অনুচ্ছেদে ইমরান ইবনি হুসাইন ও যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। শুধু উল্লেখিত সনদ সুত্রেই আমরা এ হাদীসটি হিশাম হইতে বর্ণিত হিসেবে জেনেছি। আবুল মুসান্নার নাম সুলাইমান, পিতা ইয়াযীদ। ইবনি আবু ফুদাইক তার সুত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এক বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “কুরবানীকারীর জন্য প্রতিটি লোমের বিনিময়ে সাওয়াব আছে। অপর এক বর্ণনায় আছে প্রতিটি শিং-এর বিনিময়ে। খুবই দুর্বল,মিশকাত[১৪৭৬] কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ দুটি মেষ কুরবানী করা

১৪৯৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুই শিংযুক্ত ধূসর রং-এর দুটি মেষ কুরবানী করিয়াছেন। তিনি এ দুটিকে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতে যবেহ করিয়াছেন- এর পাঁজরে নিজের পা রেখে চেপে ধরে।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১২০], নাসা-ঈ, আলী, আইশা, আবু হুরাইরা, আবু আইয়ূব, জাবির, আবুদ দারদা, আবু রাফি, ইবনি উমার ও আবু বাকরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে কুরবানী করা

১৪৯৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি দুটি মেষ কুরবানী করিতেন, একটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পক্ষ হইতে এবং অপরটি নিজের পক্ষ হইতে। এ ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এই হুকুম করিয়াছেন। অতএব আমি কখনও তা বাদ দেব না।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধু শারীকের সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। একদল আলিম মৃতের পক্ষ হইতে কুরবানী করার অনুমতি দিয়েছেন এবং অপর একদল তা জায়িয মনে করেন না। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক [রঃ] বলেন, মৃতের পক্ষ হইতে কুরবানী করার পরিবর্তে দান-খাইরাত করাই আমি পছন্দ করি। তবে মৃতের পক্ষ হইতে কুরবানী করা হলে তার সম্পূর্ণ গোশত দান করে দিতে হইবে, নিজেরা খেতে পারবে না। সনদ দুর্বল। মুহাম্মাদ [বুখারী] বলেনঃ আলী ইবনি আল মাদীনী বলেছেনঃ এ হাদীসটি শারীক ছাড়া অন্যরাও বর্ণনা করিয়াছেন। আমি [তিরমিযী] বললাম আবুল হাসনার নাম কি? তিনি তাকে চিনতে পারলেন না। মুসলিম বলেছেন তার নাম হাসান। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পশু কুরবানীর জন্য উত্তম

১৪৯৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শিং বিশিষ্ট ও মোটাতাজা [শক্তিশালী] একটি মেষ কুরবানী করিয়াছেন। এর চেহেরা, পা ও চোখ ছিল মিটমিটে কালো।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১২৮] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ গারীব বলেছেন। আমরা শুধু হাফ্‌স ইবনি গিয়াসের সূত্রেই তা জেনেছি। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ যে ধরণের পশু কুরবানী করা জায়িয নয়

১৪৯৭, বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মারফূ হাদীস [রসুলুল্লাহ সদাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী] হিসাবে বর্ণনা করেছেনঃ খোঁড়া জন্তু যার খোঁড়ামী স্পষ্টভাবে প্রকাশিত; অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত; রুগ্ন পশু যার রোগ দৃশ্যমান এবং ক্ষীণকায় পশু যার হারের মজ্জা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে- তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে না।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৪৪] হান্নাদ-ইবনি আবু যাইদা হইতে, তিনি শুবা হইতে, তিনি সুলাইমান ইবনি আবদুর রাহমান হইতে, তিনি উবাইদ ইবনি ফাইরূয হইতে, তিনি আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে উক্ত মর্মে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আমরা শুধুমাত্র উবাইদ ইবনি ফাইরূযের সূত্রেই বারাআর এ হাদীসটি জেনেছি। এ হাদীস মোতাবিক আমল করার পক্ষে আলিমগণ মতামত দিয়েছেন। অর্থাৎ এ ধরণের ক্রটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী আদায় হইবে না। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পশু কুরবানী করা মাকরূহ

১৪৯৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন- আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ-কান ভালো করে দেখে নেই। তিনি আমাদের আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমরা যেন এমন পশু দিয়ে কুরবানী না করি যার কানের অগ্রভাগ বা গোড়ার অংশ কাটা; যার কান ছিদ্র করে দেয়া হয়েছে বা যার কান লম্বালম্বিভাবে ফেড়ে দেয়া হয়েছে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩১৪২]। অন্য একটি সূত্রেও আলী [রাদি.]-এর বরাতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে অতিরিক্ত আছে, মুকাবিলা, অর্থাৎ যার কান অগ্রভাগ কাটা, মুদাবারা অর্থ যার কানের গোড়ার অংশ কাটা, শারকা অর্থ কান ফাটা খারকা অর্থাৎ যার কান ছিদ্র করে দেয়া হয়েছে। যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। তিনি আরও বলেনঃ শুরাইহ ইবনি নুমান কুফার অধিবাসী আলী [রাদি.]-এর শাগরিদ, শুরাইহ ইবনি হানী তিনিও কুফার অধিবাসী এবং আলী [রাদি.]-এর শাগরিদ তার পিতা সাহাবী ছিলেন। শুরাইহ ইবনিল হারিস আল-কিনদী তিনিও আলী [রাদি.] হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এরা সকলেই একই যুগের এবং সকলেই আলী [রাদি.]-এর শাগরিদ। আন-নাস তাশ্‌রিফা” শব্দের অর্থ হল আমরা ভালভাবে দেখি”। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ ছয় মাসের মেষকে [ভেড়া, দুম্বা, ছাগল] কুরবানী করা প্রসঙ্গে

১৪৯৯. আবু কিবাশ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ছয়মাস বয়সের কিছু সংখ্যক মেষ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মাদীনায় আনলাম। কিন্তু সেগুলো বাজারে বিক্রয় হল না [মূল্য কমে গেল]। আমি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সাথে দেখা করে তাকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ ছয় মাস বয়সের মেষ কুরবানীর জন্য কতই না উত্তম!” রাবী বলেন, [এ কথা শুনে] লোকেরা মেষগুলো সাথে সাথে ছিনিয়ে নিল [তাড়াহুড়া করে কিনে নিল]।

যঈফ, যঈফা [৬৪], মিশকাত [১৪৬৮], ইরওয়া [১১৪৩]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, উম্মু বিলাল বিনতি হিলাল তার পিতার সূত্রে, জাবির, উকবা ইবনি আমির [রাদি.] এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আরো একজন সাহাবী হইতে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান গারীব। এটি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে মাওকূফ হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে। উসমান ইবনি ওয়াকিদ, তিনি হলেন ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি যিয়াদ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি উমার ইবনিল খাত্তাব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী ও তার পরবর্তী আলিমগণ এ হাদীসের অনুসারে আমল করিয়াছেন। তাঁদের মতে কুরবানীর জন্য ছয়মাস বয়সের ছাগল-ভেড়া যথেষ্ট। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫০০. উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে কয়েকটি ছাগল দিলেন কুরবানীর উদ্দেশ্যে তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। বিলিয়ে দেওয়ার পর ছয় মাস বা এক বছর বয়সের একটি বাচ্চা রয়ে গেল। আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বিষয়টি জানালে তিনি বলিলেন, তুমিই এটাকে কুরবানী কর।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৩৮] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। ওয়াকী বলেছেন, এক ৰৎসর অথচ সাত মাসের বাচ্চাকে জাযাআ বলে। অন্য সূত্রে উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] [সাহাবীদের মধ্যে] কুরবানীর পশু বন্টন করে দিলেন। একটি ছয় মাস বয়সের বাচ্চা রয়ে গেলে আমি [এ প্রসঙ্গে] রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ তুমিই এটাকে কুরবানী কর। এটা বর্ণনা করিয়াছেন মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ইয়াযীদ ইবনি হারুন ও আবু দাঊদ হইতে, তারা উভয়ে হিশাম দাসতুয়াঈ হইতে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর হইতে, বাজাহ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি বাদর হইতে, তিনি উকবা ইবনি আমির হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর পশুতে অংশগ্রহণ করা

১৫০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ভ্রমণে আমরা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে ছিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হল। তখন আমরা একটি গরুতে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি উটে দশজন অংশীদার হয়ে কুরবানী আদায় করলাম।

সহিহ, পূর্বে ৮৯৮ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবুল আসাদ আস-সুলামী পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে এবং আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীস বিষয়ে শুধুমাত্র ফাযল ইবনি মূসার সূত্রেই জেনেছি। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫০২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা হুদাইবিয়া নামক জায়গাতে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে কুরবানী সম্পন্ন করেছি।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৩২], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুসারে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অভিজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগণ আমল করিয়াছেন। একই অভিমত সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের [সাতজন পর্যন্ত উট-গরুতে অংশীদার হওয়া যায়]। ইসহাক [রঃ] আরো বলেন, দশজন মানুষও একটি উটে অংশীদার হইতে পারে। তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর হাদীসকে তার এ মতের সমর্থনে দলীল হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ শিংভাঙ্গা ও কানফাটা পশু দিয়ে কুরবানী করা

১৫০৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাতজন ব্যক্তি পর্যন্ত একটি গরুতে অংশীদার হওয়া যায়। আমি [হুযাইয়্যা] বললাম, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে [অর্থাৎ পেটে বাচ্চা পাওয়া গেলে]? তিনি বলিলেন, বাচ্চাটিকেও এর সাথে যবেহ কর। আমি বললাম, গরুটি খোঁড়া হলে? তিনি বলিলেন, তা যদি কুরবানীর স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে [তবে তা কুরবানী করা যাবে]। আমি বললাম, তার শিং ভাঙ্গা হলে? তিনি বলিলেন, এতে কোন সমস্যা নেই। আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অথবা আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আদেশ করিয়াছেন- আমরা যেন কুরবানীর পশুর [কেনার সময়] দুই চোখ ও দুই কান ভালভাবে দেখে নেই।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [৩১৪৩] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীসটিকে সুফিয়ান সাওরী ও সালামা ইবনি কুহাইলের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৫০৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শিং ভাঙ্গা ও কান কাটা পশু কুরবানী করিতে মানা করিয়াছেন। কাতাহা [রঃ] বলেছেন, আমি এ প্রসঙ্গে সাঈদ ইবনিল মুসাইয়িব [রঃ]-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আল-আযব দ্বারা শিং-এর অর্ধেক বা তার বেশী ভাঙ্গাকে বুঝায়।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩১৪৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ একটি ছাগলই একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট

১৫০৫. আতা ইবনি ইয়াসার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবু আইয়ূব [রাদি.]-কে আমি প্রশ্ন করলাম, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর যামানায় কুরবানীর বিধান কেমন ছিল। তিনি বলিলেন, কোন লোক তার ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে একটি ছাগল দ্বারা কুরবানী আদায় করত এবং তা নিজেরাও খেত, অন্যান্য লোকদেরকেও খাওয়াত। অবশেষে মানুষেরা গর্ব ও আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তা তুমি নিজেই দেখিতে পাচ্ছ।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৪৭] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। উমারা ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ] মাদীনার বাসিন্দা ছিলেন। তার সূত্রে মালিক ইবনি আনাস [রঃ] হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস মোতাবেক কিছু অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। এই অভিমত দিয়েছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [পুরো পরিবারের জন্য একটি কুরবানীই যথেষ্ট]। তারা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর এ হাদীসটিকে নিজেদের মতের সমর্থনে দলিল হিসেবে পেশ করেছেনঃ “তিনি একটি মেষ কুরবানী করিলেন এবং বলিলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে যারা কুরবানী করিতে অক্ষম তাহাদের পক্ষে এই কুরবানী”। অপর একদল অভিজ্ঞ আলিম বলেছেন, একটি ছাগল শুধু একজনের পক্ষে যথেষ্ট। এই মতটি দিয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক এবং অন্যান্য আলিমগণ । কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ কুরবানী করা সুন্নাত

১৫০৬. জাবালা ইবনি সুহাইম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি ইবনি উমার [রাদি.]-কে কুরবানী প্রসঙ্গে প্রশ্ন করিল, এটা কি ওয়াজিব। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরবানী করিয়াছেন এবং মুসলমানগণও [কুরবানী করিয়াছেন]। সে আবার [একই বিষয়ে] প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, তুমি কি বুঝেছো। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরবানী করিয়াছেন এবং মুসলমানগণও।

যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী [১৪৭৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমগণ এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে কুরবানী ওয়াজিব নয়, বরং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাতসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি সুন্নাত। তিনি এ কাজটি করা পছন্দ করিতেন। সুফিয়ান সাওরী ও ইবনিল মুবারাকের এই মত। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫০৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদীনায় দশ বছর থেকেছেন এবং বরাবর [প্রতি বছর] কুরবানী করছেন।

যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ কুরবানী করিতে হইবে ঈদের নামাজ আদায়ে পর

১৫০৮. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সামনে খুৎবা প্রদান করিলেন। তিনি বললেনঃ [ঈদের] নামাজ আদায়ের আগে তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন কুরবানী না করে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মামা দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজকের দিন তো এমন যে, পরে গোশত অপছন্দ লাগে। তাই আমি আমার পরিবারের সদস্যদের এবং প্রতিবেশীদেরকে খাওয়ানোর জন্য কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বলিলেন, তুমি আবার একটি পশু যবেহ করে দাও। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুধ খায় এমন একটি বকরীর বাচ্চা এখনও আমার নিকট আছে, যা দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও উত্তম। আমি কি এটাকে যবেহ করে দেব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তোমার জন্য এটা উত্তম কুরবানী। তবে বকরীর এরূপ বাচ্চা কুরবানী করা তোমার পর আর কারো জন্য বৈধ হইবে না।

সহিহ, ইরওয়া [২৪৯৫], সহিহ আবু দাউদ [২৪৯৫-২৪৯৬], মুসলিম, বুখারী অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। জাবির, জুনদাব, আনাস, উয়াইমির ইবনি আশকার, ইবনি উমার ও আবু যাইদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক বেশির ভাগ অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তাহাদের মত অনুযায়ী শহরবাসী জনগণের জন্য ইমামের নামাজ সমাপ্তির পূর্বে কুরবানী করা বৈধ নয়। একদল আলিম গ্রামবাসীদের জন্য ফজরের নামাযের সময় হওয়ার পরই কুরবানীর সম্মতি দিয়েছেন। এই মত দিয়েছেন ইবনিল মুবারাকও। এ বিষয়ে আলিমদের মধ্যে ঐকমত্য রহিয়াছে যে, ছয় মাসের বকরীর বাচ্চা কুরবানী করা হলে তা যথেষ্ট হইবে না। কিন্তু ছয় মাসের মেষের বাচ্চা কুরবানী করলে তা বৈধ হইবে। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া মাকরূহ

১৫০৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি তার কুরবানীর গোশত যেন তিন দিনের অধিক না খায়।

সহিহ, ইরওয়া [১১৫৫], বুখারী, মুসলিম অনুরূপ এই বিধান পরবর্তী হাদীসের দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে। আইশা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিন দিনের পরে কুরবানীর গোশত খেতে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এক সময় নিষেধ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা [বেশি দিন] খাওয়ার সম্মতি দেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

 ১৪. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর গোশত তিন দিনের পরেও খাওয়ার সম্মতি প্রসঙ্গে

১৫১০. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [বুরাইদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ কুরবানীর গোশত তিন দিনের পরেও রাখতে [খেতে] আমি তোমাদেরকে বারণ করেছিলাম, যেন সম্পদশালীরা উদারহস্তে তাহাদের গোশত দরিদ্রদের মধ্যে দান করে। এখন তোমরা ইচ্ছামত তৃপ্তিসহকারে তা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং জমা করেও রাখতে পার।

সহিহ, ইরওয়া [৪/৩৬৮-৩৬৯], মুসলিম ইবনি মাসউদ, আইশা, নুবাইশা, আবু সাঈদ, কাদাতা ইবনি নুমান, আনাস ও উন্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। বুরাইদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অভিজ্ঞ সাহাবী এবং অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ ফারাআ ও আতীয়াহ বিষয়ে

১৫১২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ [এখন আর কোন] ফারাআ নেই, আতীরাহ্ও নেই।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৬৮], নাসা-ঈ,উট বা ছাগল-ভেড়ার প্রথম বাচ্চাকে ফারাআ বলে। আরব মুশরিকরা এটাকে তাহাদের দেব-দেবীর নামে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে যবেহ করত। নুবাইশা, মিখনাফ ইবনি সুলাইম ও আবিল উশারার পিতা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। রজাব মাস হারাম মাসগুলোর মধ্যে প্রথম মাস হওয়ার কারণে এর সম্মানার্থে আরব মুশরিকরা পশু যবেহ করত। এ উদ্দেশ্যে যবেহকৃত পশুকে আতীরাহ বলে। হারাম মাসগুলো হচ্ছেঃ রজব, যিলকাদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররাম। হাজ্জের মাসগুলো হচ্ছেঃ শাওয়াল, যিলকাদ ও যিলহাজ্জের প্রথম দশদিন। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কয়েকজন সাহাবী ও তৎপরবর্তীদের হইতে হাজ্জের মাসগুলি প্রসঙ্গে এমতই বর্ণিত আছে। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ আকীকা প্রসঙ্গে

১৫১৩. ইউসুফ ইবনি মাহাক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তারা কয়েকজন একত্রিত হয়ে আবদুর রাহমানের মেয়ে হাফসার নিকট গেলেন। তারা তাকে আকীকার ব্যপারে প্রশ্ন করলে তিনি তাহাদেরকে জানান যে, তাকে আইশা [রাদি.] জানিয়েছেন, ছেলে সন্তানের পক্ষে একই বয়সের দুটি বকরী এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি বকরী আকীকা দেওয়ার জন্যে তাহাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নির্দেশ দিয়েছেন।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৩৬] আলী, উম্মু কুর্য, বুরাইদা, সামুরা, আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আনাস, সালমান ইবনি আমির ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] -এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। হাফসা হচ্ছেন আবু বাকর [রাদি.] -এর ছেলে আবদুর রাহমানের মেয়ে। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ সদ্য প্রসূত শিশুর কানে আযান দেওয়া

১৫১৪. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু রাফি [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আবু রাফি] বলেন, ফাতিমা [রাদি.] হাসান ইবনি আলী [রাদি.]- কে প্রসব করলে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে হাসানের কানে আযানের মতই আযান দিতে দেখেছি।

যঈফ, যঈফা নতুন সংস্করণ [১/৪৯৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আকীকা প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীস “ছেলে সন্তানের পক্ষ হইতে সমবয়সী দুটি বকরী এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ হইতে একটি বকরী যবেহ করিতে হইবে” অনুযায়ী আমল করিতে হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি একটি বকরী দিয়ে হাসান ইবনি আলীর আকীকা করিয়াছেন। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম এ হাদীস অনুযায়ী আমল করার পক্ষে মত দিয়েছেন।কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫১৫. সালমান ইবনি আমির আয-যাব্বী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ প্রত্যেক শিশুর পক্ষেই আকীকা করা দরকার। অতএব তার পক্ষ হইতে তোমরা রক্ত প্রবাহিত কর [পশু যবেহ কর] এবং তার হইতে ময়লা [বা কষ্টদায়ক বস্তু, যেমন চুল] দূর কর।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৬৪] রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর এরূপ হাদীস আল-হাসান ইবনি আইয়ান-আবদুর রাযযাক হইতে, তিনি ইবনি উয়াইনা হইতে, তিনি আসিম ইবনি সুলাইমান আল-আহওয়াল হইতে, তিনি হাফসা বিনতু সীরীন হইতে, তিনি আর-রিবাব হইতে, তিনি সালমান ইবনি আমির [রাদি.] হইতে এইসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫১৬. উন্মু কুরয [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট তিনি আকীকার ব্যপারে প্রশ্ন করেন। তিনি বললেনঃ ছেলে সন্তানের পক্ষে দুটি বকরী এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি বকরী [আকীকা দিতে হইবে]। আকীকার পশু নর বা মাদী যাই হোক না কেন তাতে তোমাদের কোন অসুবিধা নেই।

সহিহ, ইরওয়া [৪/৩৯১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ [কুরবানীর উত্তম পশু ও উত্তম কাফন]

১৫১৭. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরবানীর জন্য উত্তম পশু হল মেষ এবং উত্তম কাফন হল হুল্লা [হুল্লা অর্থ- নতুন কাপড় অথবা সমস্ত শরীর আবৃত করে এমন কাপড়]।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩১৬৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। উফাইর ইবনি মাদানকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল সাব্যস্ত করা হয়েছে। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ [প্রতি বছর প্রতিটি পরিবার কুরবানী করিবে]

১৫১৮. মিখনাফ ইবনি সুলাইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের মাঠে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ হে জনসমষ্টি! প্রতি বছর প্রতিটি পরিবারের পক্ষ হইতে কুরবানী ও আতীরা রয়েছে। তোমরা কি জান, আতীরা কী? তোমরা যাকে রাজাবিয়া বল এটা তাই।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১২৫] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উল্লেখিত সূত্রেই ইবনি আওনের রিওয়ায়াত হিসবে জেনেছি। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ একটি ছাগল দ্বারা আকীকা।

১৫১৯. আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একটি বকরী দ্বারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাসানের আকীকা করেন এবং বলেনঃ হে ফাতিমা! তার মাথা নেড়া করে দাও এবং তার চুলের ওজনের অনুরূপ রূপা দান কর। তদানুযায়ী আমি তার চুল ওজন করলাম এবং তার ওজন এক দিরহাম বা তার কাছাকাছি হয়।

হাসান, ইরওয়া [১১৭৫] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এর সনদ পরস্পর সংযুক্ত [মুত্তাসিল] নয়। বর্ণনাকারী আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনি আলী ইবনিল হুসাইন [রঃ] আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] -এর সাক্ষাত পাননি। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ [ঈদের নামাজ আদায়ের পর কুরবানী করা প্রসঙ্গে]

১৫২০. আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকরা [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] ঈদের নামাযের [পর] খুৎবা প্রদান করিলেন। তারপর মিম্বার হইতে নেমে দুটি মেষ আনতে বলিলেন। তারপর এ দুটোকে তিনি যবেহ করিলেন।

সহিহ, মুসলিম [৫/১০৮] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর উম্মাতের পক্ষে কুরবানী]

১৫২১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাঠে হাযির হলাম নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে। তিনি খুৎবা সমাপ্তির পর তাহাঁর মিম্বার হইতে নামলেন। তারপর একটি ভেড়া আনা হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা নিজ হাতে যবেহ করিলেন এবং বললেনঃ “আল্লাহ্ তাআলার নামে, আল্লাহ মহান, এই কুরবানী আমার পক্ষ হইতে এবং আমার উম্মাতের যে সকল ব্যক্তিরা কুরবানী করিতে পারেনি তাহাদের পক্ষ হইতে।”

সহিহ, ইরওয়া [১১৩৮], সহিহ আবু দাউদ [২৫০১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদ সূত্রে গারীব বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে] এর অভিজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন যবাহের সময় “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলিতে হইবে। এই মত দিয়েছেন ইবনিল মুবারাকও। মুত্তালিবের পুত্র আবদুল্লাহ ইবনি হানতাব প্রসঙ্গে কথিত আছে যে, জাবির [রাদি.] -এর নিকট হইতে তিনি কিছু শুনার সুযোগ লাভ করেননি। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩. অনুচ্ছেদঃ [শিশুর জন্মের সপ্তম, চতুর্দশ বা একবিংশ দিনে আকীকা করা]

১৫২২. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল শিশুই তার আকীকার সাথে বন্ধক [দায়বদ্ধ] অবস্থায় থাকে। জন্মগ্রহণ করার সপ্তম দিনে তার পক্ষে যবেহ করিতে হইবে, তার নাম রাখতে হইবে এবং তার মাথা নেড়া করিতে হইবে।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৬৫] আল-হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল-ইয়াযীদ ইবনি হারূন হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি আবু আরূবা হইতে, তিনি কাতাদা হইতে, তিনি আল হাসান হইতে, তিনি সামুরা ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও উপরে বর্ণিত হাদীসের মতো বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন শিশু জন্মগ্রহণ করার সপ্তম দিনে তার পক্ষে আকীকা করাটা মুস্তাহাব, সপ্তম দিনে অক্ষম হলে চৌদ্দতম দিনে এবং সেই তারিখেও অক্ষম হলে একুশতম দিনে। তারা আরো বলেন, যে ধরনের বকরী কুরবানীর জন্য বৈধ সেই ধরনের বকরী আকীকার জন্যও বৈধ। কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪. অনুচ্ছেদঃ যে লোক কুরবানীর আশা রাখে যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর তার চুল না কাটা।

১৫২৩. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক যিলহাজ্জের নতুন চাঁদ দেখেছে এবং কুরবানীর নিয়াত করেছে সে যেন নিজের চুল ও নখ [কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত] না কাটে।

সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩১৪৯], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। সহিহ বর্ণনামতে নামটি হইবে আমর ইবনি মুসলিম [উমার ইবনি মুসলিম নয়]। তার নিকট হইতে মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি আলকামা ও অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি একাধিকভাবে সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব হইতে, তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। একদল আলিমের এই অভিমত [তারা কুরবানী করার আগে নখ-চুল না কাটার কথা বলেছেন]। এ কথা বলেছেন সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিবও। এ হাদীস মোতাবিক আহমাদ ও ইসহাকও আমল করিয়াছেন। নখ-চুল কাটার পক্ষে অন্য একদল আলিম সম্মতি প্রদান করিয়াছেন। তারা বলেছেন, [কুরবানী করার পূর্বে] নখ-চুল কাটায় সমস্যা নেই। একথা বলেছেন শাফিঈ। তিনি দলীল হিসাবে আইশা [রাদি.] -এর বর্ণিত হাদীস দেখিয়েছেন। “মাদীনা হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মক্কায়] কুরবানীর পশু পাঠাতেন। কিন্তু যেসব কাজ হইতে মুহরিম লোক বিরত থাকে তিনি তা হইতে বিরত থাকতেন না।” কুরবানির হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

One response to “কুরবানির হাদিস । আকীকা করার নিয়ম কানুন”

Leave a Reply