তিরমিযী শরীফ । হাদ্দ বা দন্ডবিধি অধ্যায়
তিরমিযী শরীফ । হাদ্দ বা দন্ডবিধি অধ্যায় এই অধ্যায়ে মোট ৪১ টি হাদীস (১৪২৩-১৪৬৩) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১৫ঃ হাদ্দ বা দন্ডবিধি, অনুচ্ছেদঃ (১-৩০)=৩০টি
১. অনুচ্ছেদঃ যে লোকের উপর হাদ্দ বাধ্যকর হয় না
২. অনুচ্ছেদঃ দণ্ড পরিহার প্রসঙ্গে
৩. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের দোষ-ক্রুটি গোপন রাখা
৪. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দের অপরাধের ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিকে বারবার বুঝানো
৫. অনুচ্ছেদঃ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলে হাদ্দ বাস্তবায়ন না করা
৬. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দ এর আওতাধীন অপরাধের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা নিষেধ
৭. অনুচ্ছেদঃ রজম [পাথর মেরে হত্যা] -এর প্রমাণ
৮. অনুচ্ছেদঃ বিবাহিত [যিনাকারী] লোকের শাস্তি রজম
৯. অনুচ্ছেদঃ সন্তান জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত গর্ভবর্তী নারীর শাস্তি বিলম্বিত হইবে
১০. অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাবের যিনাকারীকে রজম করা
১১. অনুচ্ছেদঃ নির্বাসন দন্ড বিষয়ে
১২. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দ প্রতিষ্ঠিতহলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়
১৩. অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাসীদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত করা
১৪. অনুচ্ছেদঃ মাদকদ্রব্য সেবনকারীর শাস্তি [হাদ্দ]
১৫. অনুচ্ছেদঃ যে লোক মাদকদ্রব্য সেবন করে তাকে চাবুক পেটা কর। সে চতুর্থবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে তাকে হত্যা করে ফেল
১৬. অনুচ্ছেদঃ যে পরিমাণ [মাল] চুরি করলে হাত কেটে ফেলা বৈধ হইবে
অনুচ্ছেদঃ ১৭ চোরের [কাটা] হাত [তার ঘাড়ে] লটকানো
১৮. অনুচ্ছেদঃ আত্নসাৎকারী, ছিনতাইকারী ও লুন্ঠনকারীদের প্রসঙ্গে
১৯. অনুচ্ছেদঃ ফল ও গাছের মাথার মজ্জা চুরি করার দায়ে হাত কাটার হুকুম নেই
২০. অনুচ্ছেদঃ সামরিক অভিযান চলাকালে হাত কাটা যাবে না
২১. অনুচ্ছেদঃ কোন লোক নিজ স্ত্রীর বাঁদীর উপর পতিত হলে [সংগম করলে]
২২. অনুচ্ছেদঃ জোরপূর্বক যে নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে
২৩. অনুচ্ছেদঃ কোন মানুষ পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত হলে
২৪. অনুচ্ছেদঃ পায়ুকামী বা সমকামীর শাস্তি
২৫. অনুচ্ছেদঃ মুরতাদ্দ [ধর্মত্যাগী] প্রসঙ্গে
২৬. অনুচ্ছেদঃ যে মানুষ [রক্তপাতের উদ্দেশ্যে] অস্ত্র উঠায়
২৭. অনুচ্ছেদঃ যাদুকরের শাস্তি প্রসঙ্গে
২৮. অনুচ্ছেদঃ গানীমাতের মাল আত্মসাৎকারীর শাস্তি
২৯. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি যদি অন্যকে বলে, হে মুখান্নাস [নপুংসক]
৩০. অনুচ্ছেদঃ তাযীর প্রসঙ্গে
১. অনুচ্ছেদঃ যে লোকের উপর হাদ্দ বাধ্যকর হয় না
১৪২৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন প্রকার লোক হইতে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে [শাস্তি থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে] ঘুমিয়ে থাকা লোক জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত; শিশু বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং নিষ্ক্রিয়বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের জ্ঞান না আসা পর্যন্ত।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২০৪১, ২০৪২] আইশা [রাদি.] –এর নিকট হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদ সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। আলী [রাদি.] হইতে আরো একাধিক সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। কোন কোন বর্ণনায় আছেঃ “ওয়া আনিল গুলামি হাত্তা ইয়াহতালিমা” [বালক প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত]। আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] –এর নিকট হইতে হাসান বাসরী [রঃ] হাদীস শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। এ হাদীস আতা ইবনি সাইব-আবু যাবিয়ান হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ সূত্রেও বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি আমাশ-আবু যাবিয়ান হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, তিনি আলী [রাদি.] -এর সূত্রে মাওকূফরূপে বর্ণনা করিয়াছেন, মারফূভাবে বর্ণনা করেননি। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, হাসান বাসরী [রঃ] আলী [রাদি.] -কে জীবদ্দশায় পেয়েছেন কিন্তু তার কাছে কোন কিছু শুনতে পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবু যাবিয়ানের নাম হলো হুসাইন, বাবার নাম জুনদাব। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ দণ্ড পরিহার প্রসঙ্গে
১৪২৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাধ্যানুযায়ী তোমরা মুসলমানদেরকে দণ্ড প্রদান পরিহার করে চল। কোন প্রকার সুযোগ থাকলে তাকে দণ্ড থেকে পরিত্রাণ দাও। কেননা ঈমাম শাস্তি প্রদানে ভুল করার চাইতে মাফ করে দেয়ার ভুল উত্তম।
যঈফ, মিশকাত [৩৫৭০], ইরওয়া [২৩৫৫], হাদীসটি হান্নাদ ওয়াকীর সূত্রে ইবনি যিয়াদ হইতে মুহাম্মাদ ইবনি রাবীয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তা মারফূ হিসেবে নয়। এ বর্ণনাটিও দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা এবং আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনি রাবিয়ার সনদে উরওয়ার সূত্রে বর্ণিত আইশার এই হাদীস ছাড়া আইশার কোন মারফূ হাদীস আমাদের জানা নেই। ওয়াকী তার সনদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু তিনি একে মারফূরুপে বর্ণনা করেন নাই। ওয়াকীর বর্ণনা অধিক সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর অনেক সাহাবী হইতে এরুপ বর্ণিত হয়েছে। ইয়াযিদ ইবনি যিয়াদ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। ইয়াযিদ ইবনি আবী যিয়াদ কুফী অধিক দৃঢ় ও অধিক অগ্রগামী। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের দোষ-ক্রুটি গোপন রাখা
১৪২৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক কোন মুমিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোন একটি অসুবিধা দূর করে দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তাআলা দূর করে দিবেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির দোষ-ক্রুটি যে লোক গোপন রাখে, তার দোষ-ক্রুটি আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করিতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করিতে থাকেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২২৫], মুসলিম, উকবা ইবনি আমির ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, একাধিক বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা [রাদি.] -এর এ হাদীসটি আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে আবু আওয়ানার মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আসবাত ইবনি মুহাম্মাদ আমাশ হইতে, বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ আবু সালিহ এর সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ধারণা করা হয় এই বর্ণনাটি প্রথম বর্ণনায় তুলনায় অধিক সহিহ। উবাইদ ইবনি আসবাত এটা বর্ণনা করিয়াছেন তার বাবা হইতে, তিনি আমাশ হইতে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪২৬. সালিম [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমান একজন অন্যজনের ভাই। সে তার উপর কোনরকম যুলুম-অত্যাচার করিতে পারে না এবং শত্রুর কাছেও তাকে সমর্পণ করিতে পারে না বা তাকে অসহায়ভাবে ছেড়ে দিতে পারে না। কোন লোক তার ভাইয়ের প্রয়োজন মিটানোর কাজে যে পর্যন্ত লেগে থাকে, আল্লাহ তাআলাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির কোন অসুবিধা যে লোক অপসারণ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামাত দিবসে তার অসুবিধাগুলোর মধ্য হইতে একটি অসুবিধা দূর করে দিবেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির দোষ-ক্রটি যে লোক গোপন করে রাখে আল্লাহ তাআলা কিয়ামাত দিবসে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন। সহিহ, সহীহাহ্ [৫০৪], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা ইবনি উমারের হাদীস হিসেবে হাসান সহিহ গারীব বলেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দের অপরাধের ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিকে বারবার বুঝানো
১৪২৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মায়িয ইবনি মালিক [রাদি.] -কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার সম্পর্কে আমি যা কিছু জেনেছি তা কি সত্য? তিনি বলিলেন, আপনি আমার ব্যাপারে কি জেনেছেন? তিনি বললেনঃ আমি জানতে পারলাম, তুমি অমুকের বাঁদীর উপর পতিত হয়েছ [যিনায় লিপ্ত হয়েছ]। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি চারবার স্বীকারোক্তি করেন। তিনি তার ব্যাপারে রায় দিলে সে মোতাবিক তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করা হয়।
সহিহ, ইরওয়া [৭/৩৫৫], মুসলিম, সাইব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীসটি সাঈদ ইবনি জুবাইরের সূত্রে সিমাক ইবনি হারব মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] -এর নাম উল্লেখ করেননি। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলে হাদ্দ বাস্তবায়ন না করা
১৪২৮, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মায়িয আল-আসলামী [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিলেন, এই লোক [মাইয] যিনা করেছে। তিনি তার কাছ থেকে মুখ সরিয়ে নিলেন। মায়িয [রাদি.] -ও অপর দিকে ঘুরে এসে বলিলেন, এই লোক যিনা করেছে। তিনি আবারও তার দিখ থেকে মুখ সরিয়ে নেন। মায়িয [রাদি.] -ও পুনরায় অপর দিক হইতে ঘুরে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই লোক যিনা করেছে। তিনি চতুর্থবাব তার ব্যাপারে হুকুম করিলেন এবং সে মোতবিক তাকে হাররার প্রান্তরে নেওয়া হয় এবং তার উপর পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। সে পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পালিয়ে এক লোককে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। ঐ লোকটির হাতে উটের চোয়ালের হাড় ছিল। সে তাকে তা দিয়ে আঘাত করে এবং অন্যান্য লোকজনও আঘাত করে। ফলে লোকটি মৃত্যুবরণ করে। লোকেরা এ ঘটনাটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট বর্ণনা করে যে, তিনি পাথরের আঘাতে এবং প্রত্যক্ষ মৃত্যুর স্পর্শ পেয়ে ভয়ে পালাচ্ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন?
হাসান সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৫৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আবু সালামা [রঃ] হইতে জাবির [রাদি.] -এর সূত্রে একইরকম হাদীস বর্নিত হয়েছে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৪২৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলাম বংশের একজন লোক এসে ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করে। তিনি তার সামনে থেকে মুখ সরিয়ে নিলেন। সে পুনরায় তার পাপ কর্মের স্বীকারোক্তি করে। পুনরায় তিনি তার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। এমনিভাবে সে তার নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি পাগল নাকি? সে বলিল, না। তিনি প্রশ্ন করেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি তার ব্যাপারে রায় দিলেন এবং সে মোতাবিক তাকে ঈদগাহের ময়দানে নিয়ে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করা হল। পাথরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে সে পালাতে থাকলে তাকে আটক করে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করা হয়। তার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভাল কথা বলেছেন [তার প্রশংসা করিয়াছেন]। কিন্তু তিনি নিজে তার জানাযার নামাজ আদায় করেন নি।
সহিহ, ইরওয়া [৭/৩৫৩], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুসারে একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, যিনাকারী ব্যক্তি নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করলে [স্বীকারোক্তি দিলে] তার উপর যিনার শাস্তি কার্যকর হইবে। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাকও। অন্য আরেক দল অভিজ্ঞ আলিম বলেছেন, যিনার অপরাধ একবার স্বীকার করলেই শাস্তি কার্যকর হইবে। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম মালিক ও শাফিঈ। শেষোক্ত দুইজন ঈমাম আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] -এর বর্ণিত হাদীসটি নিজেরদের মতের অনুকূলে দলীল হিসাবে নিয়েছেন। হাদীসটি এইঃ “দু্জন লোক নিজেদের মধ্যকার ঝগড়া সমাধানের উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট তা উপস্থাপন করে। তাহাদের মধ্যে একজন বলে, হে আল্লাহর রাসূল! এই লোকটি স্ত্রীর সাথে আমার ছেলে যিনা করেছে…… [দীর্ঘ হাদীস]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে উনাইস। তার স্ত্রীর নিকট যাও। সে যিনার পাপকে স্বীকার করলে তবে তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] কর”। এ হাদীসটিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে একথা বলেননি যে, সে চারবার স্বীকারোক্তি করলে তাকে রজম কর। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দ এর আওতাধীন অপরাধের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা নিষেধ
১৪৩০. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাখযূম বংশের একজন মহিলার চুরির ঘটনা কুরাইশদেরকে চিন্তিত করে তুলে। তারা একে অপরের সাথে বলাবলি করিল, এ ব্যাপারটি নিয়ে কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আলোচনা করিতে পারে? তারা বলিল, এ বিষয়ে তাহাঁর সাথে কথা বলার সাহস উসামা ইবনি যাইদ ছাড়া আর কারো নেই। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর খুবই প্রিয়। উসামা [রাদি.] তাহাঁর সাথে কথা বলিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত শাস্তিসমূহের অন্তর্ভূক্ত একটি শাস্তি প্রসঙ্গে তুমি সুপারিশ করছ? তারপর তিনি দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন এবং বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো একারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তাহাদের মধ্যে কোন ধনী-মর্যাদাশালী লোক চুরি করলে তাকে তারা ছেড়ে দিত এবং তাহাদের মাঝে কোন দুর্বল প্রকৃতির লোক চুরি করলে তার উপর শাস্তি কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করত তবে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৪৭], নাসা-ঈ, মাসউদ ইবনিল আজমাআ বা ইবনিল আজম, ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭. অনুচ্ছেদঃ রজম [পাথর মেরে হত্যা] -এর প্রমাণ
১৪৩১. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রজমের আইন বাস্তবায়ন করিয়াছেন, আবু বাকর [রাদি.] -ও রজমের আইন বাস্তবায়ন করিয়াছেন এবং রজমের আইন আমিও বাস্তবায়ন করছি। আল্লাহ তাআলার কিতাবের মধ্যে যদি কোন কিছু যোগ করাকে আমি নিষিদ্ধ মনে না করতাম তবে অবশ্যই এই বিধান মাসহাফে [কুরআনে] লিখে দিতাম। কেননা আমার ভয় হয় যে, পরবর্তী সময়ে মানব জাতির এমন দল আসবে যারা এই হুকুম আল্লাহ তাআলার কিতাবে না দেখিতে পেয়ে তা অস্বীকার করিবে।
সহিহ, তালীক আলা ইবনি মা-জাহ, ইরওয়া [৮/৫০৪]আলী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। উল্লেখিত হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৩২. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] -এর নিকট হইতে ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণনা করেন, তিনি [উমার] বলেন, আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন এবং তাহাঁর উপর কিতাব [কুরআন] নাযিল করিয়াছেন। তিনি যা কিছু তাহাঁর উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন তার মধ্যে রজম বিষয়ক আয়াতও ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রজমের বিধান কার্যকর করিয়াছেন। আমরাও তাহাঁর মৃত্যুর পর রজমের বিধান কার্যকর করেছি। আমার ভয় হচ্ছে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ হয়ত বলবে, আল্লাহ তাআলার কিতাবে তো আমরা রজমের উল্লেখ দেখিতে পাচ্ছি না। তারা এভাবেই আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত একটি বিধান ছেড়ে দিয়ে পথভ্রষ্ট হইবে। সাবধান! যিনাকারীকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করা আল্লাহ তাআলার কিতাব দ্বারা প্রমাণিত, যদি সে সুরক্ষিত [বিবাহিত] হয় এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমাণ থাকে অথবা অন্তঃসত্তা প্রকাশিত হয় অথবা নিজেই এর স্বীকারোক্তি করে।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৫৩], নাসা-ঈ. আলী [রাদি.] হইতেও এ অনু্চ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। উমার [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ বিবাহিত [যিনাকারী] লোকের শাস্তি রজম
১৪৩৩. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আবু হুরাইরা, যাইদ ইবনি খালিদ ও শিবল [রাদি.] -এর নিকট শুনেছেন। তারা নাবী [সাঃআঃ] এর সামনে উপস্থিত ছিলেন। এসময় দুজন লোক ঝগড়া করিতে করিতে [তা সমাধানের উদ্দেশ্যে] তাহাঁর সামনে আসে। তাহাদের একজন দাঁড়িয়ে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের দুজনের মধ্যে আপনি আল্লাহ তাআলার কিতাব মোতাবিক সমাধান করে দিন। তার বুদ্ধিমান প্রতিপক্ষ বলিল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহ তাআলার কিতাব মোতাবিক আমাদের দুজনের মধ্যে সমাধান করে দিন এবং আমাকে কথা বলার সম্মতি দনি। আমার পুত্র তার কাছে মজুর হিসাবে ছিল। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। লোকজন আমাকে বলিল, আমার ছেলের উপর রজম কার্যকর হইবে। আমি এর পরিবর্তে আমার ছেলের পক্ষ হইতে তাকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম প্রদান করি। তারপর কয়েকজন আলিমের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তাহাদের মতে আমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত প্রদান করিতে হইবে। এবং এক বছরের নির্বাসন শাস্তি ধার্য হইবে। আর এই ব্যক্তির স্ত্রীর উপর রজম কার্যকর হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সেই মহান প্রভুর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের দুজনের মাঝে ফায়সালা করব। তুমি একশত বকরী ও গোলাম ফিরত পাবে এবং তোমার ছেলেকে এক শত বেত্রাঘাত করিতে হইবে ও এক বছরের নির্বাসনে পাঠাতে হইবে। হে উনাইস! ভোরে তুমি তার স্ত্রীর কাছে যাবে। সে ব্যভিচার করার কথা স্বীকার করলে তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করিবে। সেই স্ত্রীলোকটির কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলে সে তার পাপের কথা স্বীকার করে এবং তিনি তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৪৯], নাসা-ঈ, ইসহাক ইবনি মূসা আল-আনসারী-মান হইতে, তিনি মালিক হইতে, তিনি ইবনি শিহাব হইতে, তিনি উবা্ইদুল্লাহ উবনু আবদুল্লাহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উপরের হাদীসের মত একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক [রঃ] -এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থের হাদীস কুতাইবা-লাইস হইতে, তিনি ইবনি শিহাব [রঃ] এ সনদ সূত্রে বর্ণিত আছ। আবু বাকরা, উবাদা ইবনিস সামিত, আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ, ইবনি আব্বাস, জাবির ইবনি সামুরা, হাযযাল, বুরাইদা, সালামা ইবনিল মুহাব্বিক, আবু বারযা ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মালিক ইবনি আনাস, মামার, প্রমুখ যুহরী হইতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] -এর সনদসূত্রে বর্ণিত হাদীসে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “ক্রীতদাসী যিনা করলে তাকে চাবুক মার। সে চতুর্থবার যিনা করলে তাকে বিক্রয় করে দাও পশমের একটি দড়ির বিনিময়ে হলেও”। যথার্থ কথা হল, এখানে ভিন্ন দুটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর একটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হইতে আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন। আর দ্বিতীয় সনদে আবদুল্লাহ ইবনি মালিক [রাদি.] এর সূত্রে শিবল ইবনি খালিদ [রঃ] বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রীতদাসী যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হল…..। এই শেষোক্ত সূত্রটিই হাদীস বিশেষজ্ঞদের নিকট সহিহ। উভয় হাদীসের বর্ণনাকারী সুফিয়ান ইবনি উআইনা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হাদীস দুটিকে [একই হাদীস মনে করে] আবু হুরাইরা, যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] ও শিবল [রঃ]-এর সূত্রে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট বসা ছিলাম…..। আসল কথা হল, শিবল [রঃ] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দেখা পাননি। তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মালিক আওসীর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর হাদীস বর্ণনা করেছন। ইবনি উআইনার বর্ণিত হাদীস সুরক্ষিত নয়। তার কাছ থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি নামোল্লেখ করিতে গিয়ে ভুল করে বলেছেন শিবল ইবনি হামীদ। অথচ হইবে শিবল ইবনি খালিদ এবং তিনি শিবল ইবনি খুয়াইলিদ নামেও পরিচিত। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৪. উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার নিকট হইতে তোমরা জেনে নাও। তাহাদের [যিনাকারীদের] জন্য আল্লাহ তাআলা একটি রাস্তা [ব্যবস্থা] করে দিয়েছেন। বিবাহিত পুরুষ ও স্ত্রীলোক পরস্পর যিনা করলে তাহাদের প্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হইবে, তারপর পাথর মেরে হত্যা করিতে হইবে। অবিবাহিত পুরুষ বা স্ত্রীলোক যিনা করলে তাহাদের প্র্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হইবে এবং এক বছরের নির্বাসনে পাঠাতে হইবে।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৫০], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুসারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীদের মধ্যে আলী ইবনি আবী তালিব, উবাই ইবনি কাব, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ আরো কয়েকজন সাহাবী আমল করিয়াছেন। তার বলেছেন, বিবাহিত যিনাকারীকে প্রথমে বেত্রাঘাত করিতে হইবে, তারপর রজম করিতে হইবে। এই মত দিয়েছেন ঈমাম ইসহাকও। আবু বাকর, উমার [রাদি.] এবং আরো কিছু সাহাবী বলেছেন, বিবাহিত যিনাকারীকে রজম করিতে হইবে, তাকে বেতের শাস্তি প্রদান করিবে না। কেননা মায়িযের ঘটনা সস্পর্কিত হাদীসে এবং আরো কিছু হাদীসে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রজম করার [পাথর মেরে হত্যার] হুকুম দিয়েছেন, কিন্তু পূর্বে বেত্রাঘাত করার হুকুম দেননি। এই মত গ্রহণ করিয়াছেন সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ ও আহমাদও। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ সন্তান জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত গর্ভবর্তী নারীর শাস্তি বিলম্বিত হইবে
১৪৩৫. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জুহাইনা বংশের এক মহিলা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট নিজের যিনার কথা স্বীকার করে এবং বলে, আমি গর্ভবতী অবস্থায় আছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার অভিভাবককে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ তার সাথে উত্তম আচরণ কর এবং সে সন্তান প্রসব করার পর আমাকে খবর দিও। তার অভিভাবক তাই করিল। তিনি তার ব্যাপারে আদেশ করিলেন এবং সে মোতাবিক তাহাঁর দেহে তার কাপড় শক্তভাবে বাঁধা হল। তারপর তিনি তাকে রজম করার [পাথর মেরে হত্যার] হুকুম করিলেন। অতএব তাকে রজম করা হল। তারপর তিনি তার জানাযার নামাজ আদায় করেন। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজমের নির্দেশ দিলেন আবার আপনিই তার জানাযার নামাজ আদায় করিলেন! তিনি বললেনঃ সে এরূপ তাওবা করেছে যদি তা মাদীনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বন্টন করা হয়, তবে সেই তাওবা তাহাদের সকলের [গুনাহ মাফের] জন্য যথেষ্ট হইবে। হে উমার! সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য তার জীবনকে কুরবানী করে দিয়েছে। তুমি কি এর চেয়েও উত্তম কিছু পেয়েছ?
এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১০. অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাবের যিনাকারীকে রজম করা
১৪৩৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যিনাকারী একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও একজন ইয়াহূদী মহিলাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রজমের নির্দেশ দেন।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৭৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সাথে আরো বিস্তারিত বিবরণ আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৭. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যিনাকারী একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও একজন মহিলাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করার নির্দেশ দেন।
সহিহ পূর্বের হাদীসের সহায়তায়।
ইবনি উমার, বারাআ, জাবির, ইবনি আবী আওফা, আবদুল্লাহ ইবনি হারিস ইবনি জাযই ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক বেশিরভাগ অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, আহলে কিতাবগণ নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে তার সমাধানের জন্য মুসলিম বিচারকের নিকট এলে তিনি কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলমানদের আইন-কানুন মতো বিচার করবেন। এই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন আহমাদ ও ইসহাকও। অপর একদল অভিজ্ঞ আলিম বলেছেন, যিনার বেলায় তাহাদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত করা হইবে না। প্রথমোক্ত মতই অনেক বেশি সহিহ। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ নির্বাসন দন্ড বিষয়ে
১৪৩৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [যিনাকারীকে] বেত্রাঘাত করিয়াছেন ও নির্বাসন দন্ড দিয়েছেন, আবু বাকর [রাদি.] বেত্রাঘাত করিয়াছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন এবং উমার [রাদি.] -ও বেত্রাঘাত করিয়াছেন এবং নির্বাসন দন্ডও প্রদান করিয়াছেন।
সহিহ,ইরওয়া [২৩৪৪] আবু হুরাইরা, যাইদ ইবনি খালিদ ও উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি একাধিক বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনি ইদরীসের সূত্রে মারফূভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। কিছু বর্ণনাকারী হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনি ইদরীস হইতে, তিনি উবাইদুল্লাহ হইতে, তিনি নাফি হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবু বকর [রাদি.] প্রহার করিয়াছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন, উমার [রাদি.] প্রহার করিয়াছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন। এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনি ইদরীসের তত্ববধান ছাড়াও মুহাম্মাদ ইবনি ইশহাক-নাফি-ইবনি উমার [রাদি.] এর সূত্রে কয়েকজন বর্ণনাকারী এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “আবু বাকর [রাদি.] চাবুক পিটিয়েছেন এবং নির্বাসন শাস্তিও দিয়েছেন। উমার [রাদি.] -ও চাবুক পিটিয়েছেন এবং নির্বাসন শাস্তিও দিয়েছেন।” এ হাদীসে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নাম উল্লেখ নেই। নির্বাসন শাস্তির বিষয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হইতে সহিহ সনদে হাদীস বর্ণিত আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হইতে আবু হুরাইরা, যাইদ ইবনি খালিদ, উবাদা ইবনি সামিত ও অন্যান্য সাহাবীগণ এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস মোতাবিক নাবী [সাঃআঃ] এর অভিজ্ঞ সাহাবী, যেমন আবু বাকর, উমার, আলী, উবাই ইবনি কাব, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আবু যার [রাদি.] প্রমুখ সাহাবী আমল করিয়াছেন। অনেক ফিকহবিদ তাবিঈরও একইরকম অভিমত বর্ণিত আছে। অনুরূপ অভিমত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকও। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ হাদ্দ প্রতিষ্ঠিতহলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়
১৪৩৯. উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সামনে কোন এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা এই কথার উপর আমার নিকট বাইআত করঃ আল্লাহ তাআলার সাথে তোমরা কোন অংশীদার স্থাপন করিবে না, চুরি করিবে না এবং যিনা-ব্যভিচার করিবেনা। তারপর তিনি বাইআত বিষয়ক পূর্ণ আয়াত তাহাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনালেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের যে লোক এই বাইআত পূর্ণ করিবে, আল্লাহ তাআলার নিকট রয়েছে তার জন্য পুরষ্কার। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপরাধে জড়িয়ে পড়লে এবং এর জন্য তাকে শাস্তিও প্রদান করা হলে তাতে তার গুণাহের কাফফারা হয়ে যাবে। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপকর্ম করে বসলে এবং আল্লাহ তাআলা সেটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে দিলে তার প্রসঙ্গটি আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত। তাকে আল্লাহ তাআলা চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন আবার মাফও করে দিতে পারেন।
সহিহ, ইরওয়া [২৩৩৪], নাসা-ঈ, আলী, জারীর ইবনি আবদুল্লাহ ও খুযাইমা ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, “হাদ্দ বাস্তবায়িত হলে তা অপরাধীর গুণাহের কাফফারাস্বরূপ” -আমি এ প্রসঙ্গে এটা হইতে ইত্তম হাদীস আর কখনো শুনিনি। তিনি আরো বলেন, কোন মানুষ গুণাহে লিপ্ত হলে এবং সেটাকে আল্লাহ তাআলা গোপন রাখলে আমি এই নীতি তার জন্য উত্তম মনে করি যে, অপরাধীও সেটাকে গোপন করে রাখবে এবং তার ও প্রভুর মধ্যকার বিষয়টি প্রসঙ্গে তাহাঁর নিকট তাওবা করিতে থাকিবে। আবু বাকর এবং উমার [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে যে, একজন মানুষকে তারা দুজনেই নিজের গুণাহের কথা গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাসীদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত করা
১৪৪০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো দাসী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাকে আল্লাহ তাআলার কিতাবের নির্দেশ মোতাবেক তিনবার চাবুক পেটা কর। যদি এরপরও [চতুর্থবার] সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে বিক্রয় করে দাও একটি পশমের দড়ির পরিবর্তে হলেও।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৬৫], নাসা-ঈ. আবদুল্লাহ ইবনি মালিক [রাদি.] –এর সূত্রে আলী, আবু হুরাইরা, যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] এবং শিবল [রঃ] হইতে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে এ হাদীসটিকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একদল সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন, মালিক তার গোলামের উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রতিষ্ঠিত করিবে, শাসক নয়। এই অভিমত দিয়েছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাকও। তাহাদের অন্য একদল বলেছেন, মালিক নিজে হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত করিতে পারবে না। তাকে শাসকের নিকট সোপর্দ করিতে হইবে। প্রথম মতটিই অনেক বেশি সহিহ। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৪১. আবু আবদুর রাহমান আস-সুলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাদি.] তার বক্তৃতায় বলেন, হে মানব মন্ডলী! তোমাদের গোলামদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত কর, তারা বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত যেটাই হোক। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একজন দাসী যিনা করলে তাকে চাবুক পিটানোর জন্য তিনি আমাকে হুকুম করেন। আমি তার নিকট এসে দেখলাম, সে এইমাত্র সন্তান প্রসব করেছে। আমার ভয় হল, আমি যদি তাকে চাবুক পেটা করি তাহলে হয়ত তাকে হত্যা করে ফেলব অথবা বলেছেন, সে মরে যেতে পারে। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট ফিরে এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ [তার শাস্তি স্থগিত রেখে] তুমি ভালই করেছ।
সহিহ, ইরোয়া [৭/৩৬০], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। সুদ্দীর নাম ইসমাঈল, পিতা আবদুর রাহমান, তিনি তাবিঈদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন এবং হুসাইন ইবনি আলী ইবনি আবী তালিবকে দেখেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ মাদকদ্রব্য সেবনকারীর শাস্তি [হাদ্দ]
১৪৪২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির উপর দুটি জুতা দিয়ে চল্লিশ ঘা হাদ্দ কায়িম করেন।
সনদ দূর্বল, মিসআর বলেন, আমার মনে হয় এটা মাদক সেবনের ঘটনা ছিল। এ অনুচ্ছেদে আলী, আবদুর রহমান ইবনি আযহার, আবু হুরাইরা, সায়িব, ইবনি আব্বাস ও উকবা ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু সাঈদ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান। আবু সিদ্দীকের নাম বাক্র, পিতা আমর, মতান্তরে পিতার নাম কাইস। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৪৪৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একজন লোককে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট নিয়ে আসা হয়। সে মাদক সেবন করেছিল। তিনি দুইটি খেজুরের ডাল দিয়ে তাকে প্রায় চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবু বাকর [রাদি.] -ও একইরকম শাস্তি দেন। উমার [রাদি.] খালীফা হওয়ার পর জনগণের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] তখন বলেন, আশিটি বেত্রাঘাত হল সবচেয়ে হালকা [সর্বনিম্ন] শাস্তি। অতএব উমার [রাদি.] আশিটি বেত্রাঘাতেরই আদেশ দিলেন।
সহিহ, ইরওয়া [২৩৭৭], মুসলিম, বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একদল অভিজ্ঞ সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন মাদকদ্রব্য সেবনকারীকে আশিটি বেত্রাঘাত প্রদান করিতে হইবে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ যে লোক মাদকদ্রব্য সেবন করে তাকে চাবুক পেটা কর। সে চতুর্থবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে তাকে হত্যা করে ফেল
১৪৪৪. মুআবিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক সুরা পান করে তাকে চাবুক পেটা কর। যদি সে লোক চতুর্থবার সুরাপানে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে মেরে ফেল।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৭২, ২৫৭৩] আবু হুরাইরা, শারীদ, শুরাহবিল ইবনি আওস, জারীর, আবুর রামদা আল-বালাবী ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, মুআবিয়ার হাদীসটি অনুরূপভাবে সাওরী বর্ণনা করিয়াছেন আসিম হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি মুআবিয়া হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। ইবনি জুরাইজ এবং আমর বর্ণনা করিয়াছেন সুহাইল ইবনি আবী সালিহ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে একই বিষয়ে আবু সালিহ কর্তৃক মুআবিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীসটি অত্যাধিক সহিহ। আবু ঈসা বলেন, আমি ঈমাম বুখারী [রঃ] -কে একথা বলিতে শুনিয়াছি। তিনি আরো বলেছেন, পূর্বে মদ পানকারীকে মেরে ফেলার হুকুম ছিল। পরে সেটাকে বাতিল করা হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক-মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদিরের সূত্রে, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] -এর সূত্রে, তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ “যে লোক মাদকদ্রব্য সেবন করে সে লোককে চাবুক পেটা কর। যদি সে লোক চতুর্থবার তা সেবন করে তাহলে তাকে মেরে ফেল।” জাবির [রাদি.] বলেন, তারপর একজন লোককে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আনা হল সে লোক চতুর্থবার সুরা পান করেছিল। তাকে তিনি বেত্রাঘাত করিলেন কিন্তু হত্যা করেননি। ঈমাম যুহরীও কাবীসা ইবনি যুয়াইব [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট হইতে একই কথা বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [কাবীসা] বলেছেন, প্রথমে হত্যার হুকুম ছিল, পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়েছে। অভিজ্ঞ আলিমগণ এরূপ আমল করিয়াছেন। আমরা এ বিষয়ে তাহাদের মধ্যে কোনরকম দ্বিমত দেখিতে পাইনি। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের আলিমগণ একমত যে, মদ্য পানকারীকে মেরে ফেলা যাবে না। তাছাড়া এই বক্তব্যকে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীস আরো বেশি মজবুত করেছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “যে লোক এরকম সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই এবং আমি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল -তার রক্তপাত [হত্যা] করা বৈধ হইবেনা। তবে এ ধরণের তিন প্রকার মানুষকে হত্যা করা যাবেঃ কোন মানুষের হত্যাকারী, বিবাহিত যিনাকারী এবং নিজের দ্বীন পরিত্যাগকারী [মুরতাদ]। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ যে পরিমাণ [মাল] চুরি করলে হাত কেটে ফেলা বৈধ হইবে
১৪৪৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি চুরি করার অপরাধে [চোরের] হাত কাটার হুকুম দিতেন।
সহিহ, ইরওয়া [২৪০২], মুসলিম,বুখারী অনুরূপ, আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। আইশা [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে এ হাদীসটি মারফূভাবে বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য তার নিকট হইতে কয়েকজন বর্ণনাকারী এটা মাওকূফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৪৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একটি ঢাল চুরির দায়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [চোরের] হাত কাটার হুকুম দেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৮৪], নাসা-ঈ, সাদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, ইবনি আব্বাস, আবু হুরাইরা ও আইমান[রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক নাবী [সাঃআঃ] এর একদল অভিজ্ঞ সাহাবী আমল করিয়াছেন। তাহাদের মধ্যে আবু বাকর সিদ্দীক [রাদি.] অন্তর্ভুক্ত। তিনি পাঁচ দিরহাম পরিমাণ চুরির দায়ে চোরের হাত কেটেছেন। উসমান ও আলী [রাদি.] সম্বন্ধে বর্ণিত আছে যে, তারা দুজনেই এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ চুরির দায়ে চোরের হাত কেটেছেন। আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ [রাদি.] প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তারা উভয়ে বলেছেন, পাঁচ দিরহাম চুরি করলে হাত কেটে ফেলা বৈধ হইবে। একদল ফিকহবিদ তাইঈ এই বক্তব্য গ্রহণ করিয়াছেন। এই মতটি দিয়েছেন ঈমাম মালিক ইবনি আনাস, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। তারা মনে করেন, এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি চুরি করলে হাত কাটা বৈধ হইবে। ইবনি মাসউদ [রাদি.] সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “এক দীনার অথবা দশ দিরহাম পরিমাণ চুরি করলেই কেবল হাত কাটা যাবে।” এটি মুরসাল হাদীস। এ হাদীসটি ইবনি মাসউদ [রাদি.] -এর নিকট হইতে কাসিম উবনু আবদুর রাহমান বর্ণনা করিয়াছেন বলে উল্লেখ আছে। অথচ ইবনি মাসউদ [রাদি.] -এর নিকট কাসিম [রঃ] কিছুই শুনেননি। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। এই অভিমত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীগণ। তারা বলেছেন, দশ দিরহামের কম পরিমাণ চুরিতে হাত কাটা বৈধ হইবেনা। আলী [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, দশ দিরহামের কম পরিমাণ চুরিতে হাত কাটা যাবেনা। এর সনদসূত্র মুত্তাসিল নয়। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদঃ ১৭ চোরের [কাটা] হাত [তার ঘাড়ে] লটকানো
১৪৪৭. আবদুর রহমান ইবনি মুহাইরীয [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ফাযালা ইবনি উবাইদ [রাদি.]-কে চোরের [কাটা] হাত তার ঘাড়ের সাথে লটকে দেয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম, এটা কি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে একটি চোর ধরে আনা হলে তার হাত কেটে দেয়া হয়। তারপর তাহাঁর নির্দেশ মোতাবিক চোরের [কর্তিত] হাত তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৫৮৭], মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৬০৫] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। উমার ইবনি আলী আল-মুকাদ্দামী- হইতে হাজ্জাজ ইবনি আরতাত-এর সনদসূত্রেই শুধুমাত্র আমরা উক্ত হাদীস জেনেছি। আবদুর রহমান ইবনি মুহাইরীয [রাহঃ] আবদুল্লাহ ইবনি মুহাইরীযের ভাই। তিনি শামের অধিবাসী। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ আত্নসাৎকারী, ছিনতাইকারী ও লুন্ঠনকারীদের প্রসঙ্গে
১৪৪৮, জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারীর ব্যাপারে হাত কেটে ফেলার দণ্ড নেই।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৮৯] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ মনে করেন, এ হাদীস মোতাবিক আমল করিতে হইবে। ইবনি জুরাইজের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মত হাদীস মুগীরা ইবনি মুসলিম-আবু যুবাইর ও জাবির [রাদি.] হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সূত্রে বর্ণিত আছে। আলী ইবনিল মাদীনীর বক্তব্য অনুযায়ী মুগীরা ইবনি মুসলিম আল-বাসরী [রঃ] আবদুল আযীয আল-কাসমালীর ভাই। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ ফল ও গাছের মাথার মজ্জা চুরি করার দায়ে হাত কাটার হুকুম নেই
১৪৪৯. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ গাছের ফল ও গাছের মজ্জা [তাল, খেজুর, নারিকেল ইত্যাদি গাছের মাথার নরম ও কচি অংশ] চুরির দায়ে হাত কাটার বিধান নেই।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৯৩] আবু ঈসা বলেন, কিছু বর্ণনাকারী হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি হাব্বান হইতে, তিনি তার চাচা ওয়াসি ইবনি হাব্বান হইতে, তিনি রাফি ইবনি খাদীজ হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে লাইস ইবনি সাদের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক ইবনি আনাস এবং আরও অনেকে এই হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি হাব্বান হইতে, তিনি রাফি ইবনি খাদীজ হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তারা ওয়াসি ইবনি হাব্বানের নাম উল্লেখ করেন নাই। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ সামরিক অভিযান চলাকালে হাত কাটা যাবে না
১৪৫০. বুসর ইবনি আরতাত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ সামরিক অভিযান চলা অবস্থায় হাত কাটা যাবে না।
সহিহ, মিশকাত [৩৬০১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। এই সনদসূত্রে ইবনি লাহীআ ছাড়া অন্যান্য বর্ণনাকারীগণও একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। বুসর ইবনি আরতাত [রাদি.] বুসর ইবনি আবী আরতাত নামেও পরিচিত। এ হাদীস মোতাবিক কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। আওযাঈ তাহাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন। তারা মনে করেন, যুদ্ধ চলা অবস্থায় এবং শত্রু বাহিনীর উপস্থিতিতে হাদ্দ কার্যকর করা স্থগিত রাখতে হইবে। কেননা অভিযুক্ত লোকটি শাস্তির ভয়ে পালিয়ে শত্রু বাহিনীর সাথে যোগ দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্র হইতে দেশে ফিরার পর ঈমাম শাস্তিযোগ্য লোকের উপর হাদ্দ বাস্তবায়ন করবেন। ঈমাম আওযাঈ এরকমটিই বলেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ কোন লোক নিজ স্ত্রীর বাঁদীর উপর পতিত হলে [সংগম করলে]
১৪৫১. হাবীব ইবনি সালিম [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বাঁদীর সাথে যেনা করলে তাকে নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.]-এর নিকটে আনা হয়। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ফায়সালার মতই ফায়সালা করব। যদি তার স্ত্রী এই বাঁদীকে তার জন্য হালাল করে দিয়ে থাকে তবে আমি এই ব্যক্তিকে এক শত বেত্রাঘাত করব। যদি সে তাকে স্বামীর জন্য হালাল করে না দিয়ে থাকে তবে আমি তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করব।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৫৫১] তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৪৫২. আলী ইবনি হুজর-হুশাইম হইতে বর্ণীতঃ
আলী ইবনি হুজর-হুশাইম হইতে, তিনি আবু বিশর হইতে, তিনি হাবীব ইবনি সালিম হইতে, তিনি নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে [উপরের হাদীসের] একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন।
-দেখুন পূর্বের হাদীস. কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ এ প্রসঙ্গে হাবীব ইবনি সালিমের নিকট লিখা হয়েছিল। আবু বিশর এ হাদীসটি হাবীব ইবনি সালিমের নিকট হইতে শুনেননি। তিনি এটা খালিদ ইবনি উরফুতার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এ অনুচ্ছেদে সালামা ইবনিল মুহাব্বাক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, নুমান [রাদি.] বর্ণিত হাদীসের সনদে অস্থিরতা আছে। তিনি আরও বলেন, আমি মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কাতাদা এ হাদীসটি হাবীব ইবনি সালিম হইতে শুনেননি। তিনি খালিদ ইবনি উরফুতা [রাহঃ] হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করে তার শাস্তি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ আলিমদের মাঝে মতের অমিল আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবী, যেমন আলী ও ইবনি উমার [রাদি.]-এর মতে, তাকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করিতে হইবে। ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, তার উপর হাদ্দ কার্যকর হইবে না, বরং তাকে তাযীরের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হইবে। ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক [রাহঃ] নুমান [রাদি.]-এর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী মত দিয়েছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২২. অনুচ্ছেদঃ জোরপূর্বক যে নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে
১৪৫৩. আবদুল জাব্বার ইবনি ওয়াইল ইবনি হুজর [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [ওয়াইল ইবনি হুজর] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একটি স্ত্রীলোককে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্ত্রীলোকটিকে হাদ্দ [যেনার শাস্তি] হইতে মুক্তি দেন, কিন্তু তার ধর্ষণকারীর উপর হাদ্দ [যেনার শাস্তি] কার্যকর করেন। তিনি তার জন্য মোহর নির্ধারণ করিয়াছেন কি-না রাবী তা বর্ণনা করেন নি।
যঈফ, মিশকাত [৩৫৭১], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এর সনদ পরস্পর সংযুক্ত [মুত্তাসিল] নয়। অন্য সূত্রেও এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আমি ঈমাম বুখারীকে বলিতে শুনিয়াছি, আবদুল জাব্বার তার পিতা ওয়াইলের নিকট হইতে হাদীস শুনার কোন সুযোগই পাননি এবং তাকে দেখেনওনি। কথিত আছে যে, তিনি তার পিতার মৃত্যুর কয়েক মাস পর জন্মগ্রহণ করেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ ও তৎপরবর্তী আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, যে নারীকে জোরপূর্বক যেনায় লিপ্ত হইতে বাধ্য করা হয় অর্থাৎ যাকে ধর্ষণ করা হয় সে হাদ্দমুক্ত [যেনার শাস্তিমুক্ত]। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৪৫৪. আলকামা ইবনি ওয়াইল [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যামানায় একজন মহিলা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় একজন লোক তার সামনে পড়ে এবং সে তাকে তার পোশাকে ঢেকে নিয়ে [জাপটে ধরে] নিজের প্রয়োজন মিটায় [ধর্ষণ করে]। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি পালিয়ে গেল। তারপর আরেকজন লোক তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলিল ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। ইতিমধ্যে মুহাজির সাহাবীদের একটি দলও সে স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলিল, ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। যে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে সে ধারণা করিল, তারা [দৌঁড়ে] গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তাকে নিয়ে তারা মহিলাটির সামনে ফিরে আসলে সে বলিল, হ্যাঁ, এই সেই লোক। তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট তাকে নিয়ে আসেন। তিনি যখন তাকে রজমের [পাথর মেরে হত্যা] হুকুম দিলেন, সে সময় তার আসল ধর্ষণকারী উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার ধর্ষণকারী [ঐ লোকটি নয়]। তিনি মহিলাটিকে বললেনঃ যাও, তোমাকে আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিয়েছেন। তিনি [সন্দেহজনকভাবে] ধৃত লোকটির সম্বন্ধে ভাল কথা বলিলেন। মহিলাটির আসল ধর্ষণকারীর সম্পর্কে তিনি হুকুম করলেনঃ একে রজম কর। তিনি আরও বললেনঃ সে এমন ধরণের তাওবা করেছে, যদি মাদীনার সকল জনগণ এমন তাওবা করে তবে তাহাদের সেই তাওবা ক্ববূল করা হইবে।
হাসান, তাকে রজম কর বাক্য ব্যতীত। সঠিক বক্তব্য হল তাকে রজম করা হয় নাই। মিশকাত [৩৫৭২] সহীহাহ [৯০০] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হসান গারীব সহিহ বলেছেন। আলকামা [রঃ] তার পিতা ওয়াইল [রাদি.] -এর কাছে হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন। তিনি বয়সে তার ভাই আবদুল জাব্বারের চেয়ে বড় ছিলেন। আবদুল জাব্বার [রঃ] তার আব্বা ওয়াইল [রাদি.] –এর কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করার সুযোগ লাভ করেননি। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ কোন মানুষ পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত হলে
১৪৫৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত দেখ, তাকে এবং পশুটিকে হত্যা কর।
হাসান সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৬৪] ইবনি আব্বাস [রাদি.] -কে বলা হল, পশুটির অপরাধ কি? তিনি বলিলেন, এ ব্যাপারে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে কিছু শুনিনি। তবে আমার ধারণামতে যে পশুটির সাথে এরূপ করা হয়েছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার গোশত খাওয়া বা এটাকে কোন কাজে ব্যবহার করাকে লোকদের জন্য পছন্দ করেননি। হাসান, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি ইকরিমা [রঃ] -এর সনদে ইবনি আব্বাস [রাদি.] -এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আমর ইবনি আবী আমর ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। তবে এটাকে সুফিয়ান সাওরী আসিম হইতে, তিনি আবু রাযীন হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনি আব্বাস বলেছেন, যে ব্যক্তি পশুর সাথে কুকর্ম করিল, তার কোন নির্দিষ্ট শাস্তি নেই। এটি পূর্ববর্তী হাদীসের চেয়ে অনেক বেশি সহিহ। এ হাদীস মোতাবেক অভিজ্ঞ আলিমগণ মতামত দিয়েছেন। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৪. অনুচ্ছেদঃ পায়ুকামী বা সমকামীর শাস্তি
১৪৫৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে [সমকামিতায়] নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [৩৫৬১] জাবির ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা জেনেছি। এ হাদীসটি আমর ইবনি আবী আমরের সূত্রে মুহাম্মদ ইবনি ইসহাক এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “যে মানুষ লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম করে সে অভিশপ্ত”।এই বর্ণনায় হত্যা করার উল্লেখ নেই। এতে আরো আছেঃ “যে মানুষ পশুর সাথে কুকর্ম করে সেও অভিশপ্ত”। উপরে উল্লেখিত হাদীসটিকে আসিম ইবনি উমার সুহাইল ইবনি আবু সালিহ -এর সূত্রে, তিনি তার বাবার সূত্রে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] -এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “এ কাজের কর্তা ও কর্ম দুজনকেই মেরে ফেল”। এ হাদীসের সনদ বিতর্কিত। সুহাইলের সূত্রে এ হাদীসটি আসিম ব্যতীত আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। আসিমের স্মরণশক্তি হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলে সমালোচিত। অভিজ্ঞ আলিমদের মধ্যে লাওয়াতাতকারীর [সমকামীর] শাস্তির ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সমকামীকে রজম [পাথর মেরে হত্যা] করিতে হইবে, সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহামাদ ও ইসহাক। অন্য একদল ফিকহবিদ তাবিঈ যেমন হাসান বাসরী, ইবরাহীম নাখঈ, আতা ইবনি আবু রাবাহ প্রমুখ বলেছেন, সমকামীর শাস্তি যিনাকারীর শাস্তির মতই। এই মতে সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীদের। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৫৭. আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আকীল [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাবির [রাদি.] -কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম।
হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৫৬৩] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আকীল ইবনি আবু তালিব হইতে জাবির [রাদি.] -এর সূত্রেই হাদীসটি এভাবে জেনেছি। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ মুরতাদ্দ [ধর্মত্যাগী] প্রসঙ্গে
১৪৫৮. ইকরিমা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
একদল মানুষ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে [মুরতাদ্দ হয়ে গেলে] আলী [রাদি.] তাহাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] -এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলিলেন, আমি সেখানে উপস্থিত থাকলে তাহাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বাণী মোতাবিক হত্যা করতাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “যে মানুষ তার দ্বীন পরিবর্তন করে তাকে মেরে ফেল”। আমি [ইবনি আব্বাস] কখনো তাহাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে মারতাম না। কেননা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহ্ তাআলার আযাব [আগুন] দ্বারা [কাউকে] শাস্তি দিও না।” একথা আলী [রাদি.] -এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলিলেন, ইবনি আব্বাস সঠিক বলেছে।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৩৫]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ ধর্মত্যাগীর হুকুমের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন। কিন্তু কোন মহিলা ইসলাম ধর্ম বর্জন করলে তার কি শাস্তি হইবে এই ব্যাপারে তাহাদের মধ্যে দ্বিমত আছে। একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তাকে মৃতুদন্ড প্রদান করা হইবে। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম আওযাঈ, আহমাদ ও ইসহাক। অপর একদল বলেছেন, তাকে বন্দী করা হইবে, মেরে ফেলা যাবে না। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীদের। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬. অনুচ্ছেদঃ যে মানুষ [রক্তপাতের উদ্দেশ্যে] অস্ত্র উঠায়
১৪৫৯. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের বিপক্ষে যে মানুষ অস্ত্র ধারণ করে সে আমাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৫৭৫, ২৫৭৭], মুসলিম, ইবনি উমার, ইবনিয যুবাইর, আবু হুরাইরা ও সালামা ইবনিল আকওয়া [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭. অনুচ্ছেদঃ যাদুকরের শাস্তি প্রসঙ্গে
১৪৬০. জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাদুকরের শাস্তি হল তরবারির আঘাতে মৃতুদন্ড।
যঈফ, যঈফা [১৪৪৬], মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৫৫১] আবু ঈসা বলেন, শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা এ হাদীস মারফূ হিসেবে জেনেছি। ইসমাঈল ইবনি মুসলিম আল-মক্কীকে তার স্মরণশক্তির দুর্বলতার কারনে হাদীস বিশারদগণ তাকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু ইসমাঈল ইবনি মুসলিম আল-বাসরী প্রসঙ্গে ওয়াকী বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী। হাসান বাসরীর সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। জুনদুব [রাদি.]-এর সূত্রে মাওকূফ হিসেবে বর্ণিত হাদীসটিই সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগন এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। মালিক ইবনি আনাসও এই মত দিয়েছেন। শাফিঈ [রাহঃ] বলেছেন, যাদু যদি কুফরীর পর্যায়ভুক্ত হয় তবে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর কুফরীর চেয়ে নিম্নতর পর্যায়ের হলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যাবে না। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮. অনুচ্ছেদঃ গানীমাতের মাল আত্মসাৎকারীর শাস্তি
১৪৬১. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যাকে আল্লাহ্ তাআলার পথে [গানীমাত] আত্মসাৎ করিতে দেখবে তার মালপত্র সব পুড়িয়ে দিবে। সালিহ [রঃ] বলেছেন, আমি মাসলামার নিকটে গেলাম। এ সময় সালিম ইবনি আব্দুল্লাহ তার নিকটই ছিলেন। তিনি এক আত্মসাৎকারীকে পেলেন। সালিম [রঃ] তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এ হাদীস উল্লেখ করেন। তিনি তার মালপত্র পুড়িয়ে দেয়ার হুকুম দিলে তা পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার মালপত্রের মধ্যে এক জিল্দ কুরআন পাওয়া গেলে সালিম [রঃ] বলেন, তা বিক্রয় করে তার মূল্য দান-খাইরাত করে দাও।
যঈফ, যঈফ আবু দাঊদ [৪৬৮], মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৬৩৩], তাহকীকুল মুখতারাহ [১৯১, ১৯৪] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা এটা জেনেছি। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম এ হাদীস অনুযায়ী মত দিয়েছেন। ঈমাম আওযাঈ, আহ্মাদ ও ইসহাকের এই মত। আমি [তিরমিযী] মুহাম্মাদ বুখারীকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ হাদীসটি সালিহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি যায়িদা বর্ণনা করিয়াছেন। তার ডাকনাম আবু ওয়াকিদ আল-লাইসী। তিনি একজন প্রত্যাখ্যাত রাবী। ঈমাম বুখারী আরো বলেন, গানীমাতের মাল আত্মসাৎকারী প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আরো হাদীস আছে। কিন্তু তিনি তাতে তার মালপত্র পুড়িয়ে ফেলার হুকুম দেননি। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি যদি অন্যকে বলে, হে মুখান্নাস [নপুংসক]
১৪৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে বলে, “হে ইয়াহুদী” তখন তাকে বিশটি চাবুক মার। যখন সে বলে, “হে নপুংসক” তখন তাকে বিশটি চাবুক মার। যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ার সাথে যেনা করে তাকে হত্যা কর।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানি [৩৬৩২], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আমরা শুধু উল্লেখিত সনদেই জেনেছি। এ হাদীসের অধঃস্তন রাবী ইবরাহীম ইবনি ইসমাঈল হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল। আমাদের সমমনা আলিমগন এ হাদীস অনুসারে আমল করিয়াছেন।তাঁরা বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনেশুনে মাহরাম আত্মীয়ার সাথে জেনা করে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ঈমাম আহ্মাদ [রাহঃ] বলেন, যে ব্যক্তি নিজের মাকে বিয়ে করে তাকে হত্যা করিতে হইবে। ইসহাক [রাদি.] বলেন, যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ার সাথে যেনা করে তাকে হত্যা করা হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] ও কুররা ইবনি ইআস আল-মুযানী [রাদি.] বর্ণনা করেছেনঃ এক ব্যক্তি নিজের পিতার স্ত্রীকে [সৎ্মাকে] বিয়ে করলে নাবী [সাঃআঃ] তাকে হত্যা করার হুকুম দেন। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩০. অনুচ্ছেদঃ তাযীর প্রসঙ্গে
১৪৬৩ . আবু বুরদা ইবনি নিয়ার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত হাদ্দের অন্তর্ভুক্ত কোন অন্যায় ছাড়া [অন্য অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে] দশটির বেশি বেত্রাঘাত প্রদান করা যাবে না।
সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৬০১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এ বিষয়ে শুধুমাত্র বুকাইর ইবনিল আশাজ্জ-এর হাদীসের মাধ্যমে জেনেছি। অভিজ্ঞ আলিমগণের মধ্যে তাযীর বিষয়ে দ্বিমত আছে। উপরোক্ত হাদীসটি তাযীর বিষযে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। হাদীস বুকাইরের সূত্রে ইবনি লাহীআ বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি এতে ভুলের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আবদুর রাহমান ইবনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহর সূত্রে, তিনি তার বাবার সূত্রে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তা ভুল। লাইস ইবনি সাদের সনদে বর্ণিত হাদীসটি সহিহ। তা হলঃ আবদুর রাহমান ইবনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ-আবু বুরদা ইবনি নিয়ার [রাদি.] এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে। তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply