শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান
শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান , এই অধ্যায়ে মোট ২৯ টি হাদীস (১১৪৬ -১১৭৪)>> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১০ঃ শিশুর দুধপান, অনুচ্ছেদঃ (১-১৯)=১৯টি
১. অনুচ্ছেদঃ যে সকল লোক বংশগত সূত্রে হারাম সে সকল লোক দুধপানের কারণেও হারাম
২. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের মাধ্যমে নারী দুগ্ধবতী হয়
৩. অনুচ্ছেদঃ এক-দুই চুমুক দুধ পান করলেই বিয়ে হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয় না
৪. অনুচ্ছেদঃ দুধপান প্রসঙ্গে একজন মহিলার সাক্ষ্য
৫. অনুচ্ছেদঃ দুই বছরের কম বয়সের শিশু দুধপান করলেই বিয়ের সম্পর্ক হারাম হয়
৬. অনুচ্ছেদঃ দুধপানের বিনিময় কিভাবে শোধ করা যায়
৭. অনুচ্ছেদঃ সধবা মহিলাকে দাসত্বমুক্ত করা হলে
৮. অনুচ্ছেদঃ বাচ্চার মালিক বিছানা
৯. অনুচ্ছেদঃ কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের ভাল লাগলে
১০. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
১১. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার
১২. অনুচ্ছেদঃ গুহ্যদ্বারে সংগম করা নিষেধ
১৩. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের সাজসজ্জা করে বাড়ির বাইরে যাতায়াত নিষেধ
১৪. অনুচ্ছেদঃ আত্মমর্যাদাবোধ প্রসঙ্গে
১৫. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের একাকী সফর করা মাকরূহ
১৬. অনুচ্ছেদঃ যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ
১৭. অনুচ্ছেদঃ [শাইতান প্রবাহিত রক্তের ন্যায় বিচরণ করে]
১৮. অনুচ্ছেদঃ [শাইতান মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করে]
১৯. অনুচ্ছেদঃ [স্বামীকে কষ্ট দেয়া নিষেধ]
১. অনুচ্ছেদঃ যে সকল লোক বংশগত সূত্রে হারাম সে সকল লোক দুধপানের কারণেও হারাম
১১৪৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সকল লোককে আল্লাহ তাআলা বংশগত সম্পর্কের কারণে [বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে] হারাম করিয়াছেন, একইভাবে সে সকল লোককে দুধপানের কারণেও [বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে] হারাম করিয়াছেন।
সহিহ, ইরওয়া [৬/২৮৪]। আইশা, ইবনি আব্বাস ও উম্মু হাবীব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসায়ামের বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও আলিমগণ আমল করিতে সন্মতি দিয়েছেন। তাহাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন রকম মতভেদ আছে বলে আমাদের জানা নেই। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সকল লোককে আল্লাহ তাআলা জন্মসূত্রে [বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে] হারাম করিয়াছেন, সে সকল লোককে দুধপানের কারণেও হারাম করিয়াছেন।
সহিহ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৩৭], বুখারী, মুসলিম । এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। নাৰী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও অন্যান্য বিদ্বানগণ এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। এ বিষয়ে তাহাদের মাঝে কোন মতভেদ আছে বলে আমাদের জানা নেই। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ পুরুষের মাধ্যমে নারী দুগ্ধবতী হয়
১১৪৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কের চাচা এসে ভিতরে প্রবেশের জন্য আমার নিকট অনুমতি চাইলেন। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত তাকে ভিতরে আসতে অনুমতি প্রদানে সম্মত হইনি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তিনি তোমার চাচা, তিনি তোমার নিকট আসতে পারেন। আইশা [রাদি.] বলিলেন, আমাকে তো স্ত্রীলোক দুধপান করিয়েছেন, পুরুষ লোক তো আমাকে দুধ পান করাননি। তিনি বললেনঃ তিনি তোমার চাচা, তিনি তোমার নিকট আসতে পারেন।
সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৪৮], বুখারী, মুসলিম এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবী ও বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিতে বলেছেন। পুরুষ আত্মীয়কেও তারা দুধপান প্রসঙ্গে মাহরাম বলেছেন। আইশ [রাদি.]-এর হাদীসই এই ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি। এই বিষয়ে একদল আলিম সুযোগ রেখেছেন [দুধ-মা ও দুধ-বোন ছাড়া অন্য কেউ মাহরাম নয়]। কিন্তু প্রথম মতটিই অনেক বেশি সহিহ। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাকে প্রশ্ন করা হল, এক ব্যক্তির কাছে দুইজন দাসী আছে। তাহাদের মধ্যে একজন একটি কন্যা সন্তানকে দুধ পান করিয়েছে এবং অন্যজন একটি ছেলে সন্তানকে দুধ পান করিয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে এই ছেলেটি কি ঐ মেয়েকে বিয়ে করিতে পারবে। তিনি বলেন, না। কেননা, তারা দুইজন তো একজন পুরুষের দ্বারাই দুগ্ধবতী হয়েছে।
সনদ সহিহ। লাবনুল ফাহল [পুরুষের মাধ্যমে দুধ] কথার তাৎপর্য এই [অর্থাৎ বীর্য পতনের মাধ্যমে নারীর স্তনে দুধের সঞ্চার হয়]। আর ইহাই হচ্ছে এ অনুচ্ছেদের মূল ভিত্তি। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ এক-দুই চুমুক দুধ পান করলেই বিয়ে হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয় না
১১৫০. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক-দুই চুমুক দুধ পান [বিয়ের বৈধতাকে] হারাম করে না।
সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৪১], মুসলিম। উন্মুল ফাদল, আবু হুরাইরা, যুবাইর ইবনিল আউয়াম ও ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। সূত্রগুলো এই- ১। হিশাম ইবনি উরওয়া তার পিতা হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনিয্ যুবাইর হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। ২। মুহাম্মাদ ইবনি দীনার হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনিয যুবাইর হইতে, তিনি যুবাইর হইতে, তিনি নাৰী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রটি অরক্ষিত। হাদীস বিশারদদের মতানুসারে আব্দুল্লাহ ইবনিয যুবাইরের মারফতে আইশ [রাদি.]-এর সূত্রে ইবনি আবী মুলাইকা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সহিহ। আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। তিনি আরও বলেন, আমি মুহাম্মাদ বুখারীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, যুবাইরের সূত্রে আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিই সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসারামের একদল সাহাবী ও বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। আইশা [রাদি.] বলেন, কুরআনে “সুনির্দিষ্টভাবে দশ চুমুক” মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল, পরে পাঁচবার রহিত হয়েছে এবং পাঁচবার -এর বিধান কার্যকর থাকে। এটাই কার্যকর থাকল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু পর্যন্ত । আইশা [রাদি.] হইতে আরো একটি সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ ফাতাওয়াই প্রদান করিতেন আইশা [রাদি.] এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য স্ত্রী।
— সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৪২] এই কথা বলেন ঈমাম শাফি ও ইসহাক [রঃ]-ও। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে ঈমাম আহমাদ [রঃ] বলেন, হুরমাত সাধারণতঃ এক-দুইবার দুধ পান করাতে প্রতিষ্ঠিত হইবে না। তিনি আরো বলেন, যদি আইশা [রাদি.]-এর হাদীস অনুযায়ী কোন লোক পাঁচ চুমুক দুধ পানের মত গ্রহণ করে তবে এটা সবচেয়ে শক্তিশালী মত হইবে। এ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করা তার দুর্বলতা বলে বিবেচিত হইবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর একদল সাহাৰী ও তাবিদ বলেছেন, দুধের পরিমাণ কম অথবা বেশি যেটাই হোকনা কেন তা শিশুর পেটে যাওয়া মাত্রই বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যাবে। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, আওযাঈ, আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক, ওয়াকী [রঃ] এবং কূফাবাসীগণ। আবদুল্লাহ ইবনি আবু মুলাইকার উপনাম আবু মুহাম্মাদ, পিতার নাম উবাইদুল্লাহ এবং দাদার নাম আবু মুলাইকা। তাকে তাইফের বিচারপতি হিসেবে ইবনি যুবাইর [রাদি.] নিয়োগ করেন। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ত্রিশজন সাহাবীকে পেয়েছি। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ দুধপান প্রসঙ্গে একজন মহিলার সাক্ষ্য
১১৫১. উকবা ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এক মহিলাকে বিয়ে করলাম। তারপর আমাদের নিকট একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এসে বলিল, তোমাদের দুজনকেই আমি দুধ পান করিয়েছি। আমি [উকবা] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললাম, অমুকের কন্যা অমুককে আমি বিয়ে করেছি। আমাদের নিকট এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এসে বলিল, “তোমাদের দুজনকেই আমি দুধ পান করিয়েছি”। সে মিথ্যাবাদিনী। বর্ণনাকারী বলেন, [এ কথায়] তিনি আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি ঘুরে গিয়ে তাহাঁর সামনে এলাম, তিনি আমার কাছ থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি বললাম, সেতো মিথ্যাবাদিনী। তিনি বললেনঃ “তুমি কিভাবে এর সাথে বিয়ে বহাল রাখতে পার ! অথচ সে বলেছে, সে দুধ পান করিয়েছে তোমাদের দুজনকেই। সুতরাং তুমি তাকে ছেড়ে দাও [তালাক দাও]।
সহিহ, ইরওয়া [২১৪৬], বুখারী। এই অনুচ্ছেদে ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, উকবা ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীসটি উকবা [রাদি.] হইতে আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উবাইদা ইবনি আবু মারইয়ামের নাম সেখানে উল্লেখ নেই এবং “তুমি তাকে ছেড়ে দাও” এ কথাটিরও উল্লেখ নেই। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈ মত প্রকাশ করিয়াছেন। তারা একজন মহিলাকে দুধপানের সম্পর্ক প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য অনুমোদন করিয়াছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, একজন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য দুধপান প্রমাণের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায়, তবে সেই মহিলাকে শপথও করাতে হইবে। এই মত গ্রহণ করিয়াছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]। আর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ একজনের বেশি সাক্ষী না পাওয়া যায়। এই অভিমত ঈমাম শাফির। ওয়াকী [রঃ] বলেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য দুধপানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তবে দুজনকেই সতর্কতার জন্য আলাদা করে দিতে হইবে। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫. অনুচ্ছেদঃ দুই বছরের কম বয়সের শিশু দুধপান করলেই বিয়ের সম্পর্ক হারাম হয়
১১৫২. উম্মু সালাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুধ ছাড়ানোর বয়সের পূর্বে স্তনের বোঁটা হইতে শিশুর পাকস্থলীতে দুধ না গেলে দুধপানের নিষিদ্ধতা কার্যকর হয় না [অর্থাৎ দুধপান জনিত কারণে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ হয় না]।
সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৯৪৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্যরা আমল করার কথা বলেছেন। তাহাদের মতে, কোন শিশু দুই বছরের কম বয়সে দুধ পান করলেই বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন হারাম হইবে। কিন্তু দুই বছরের পর দুধ পান করলে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন হারাম হইবে না। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ দুধপানের বিনিময় কিভাবে শোধ করা যায়
১১৫৩. হাজ্জাজ আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে দুধপান করেছি তার হাক্ব কিভাবে মিটাতে পারি? তিনি বলেনঃ [দুধমাকে] একটি ক্রীতদাস অথবা একটি দাসী দান করে [এ দাবি মিটাতে পার]।
যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [৩৫১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ, হাতিম ইবনি ইসমাঈল, এবং আরও অনেকে হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি হাজ্জাজ ইবনি হাজ্জাজ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আর সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা বর্ণনা করিয়াছেন হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি হাজ্জাজ ইবনি আবু হাজ্জাজ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এর মধ্যে ইবনি উয়াইনার সূত্রটি অরক্ষিত এবং হিশামের সূত্রটি সহীহ। হিশাম [রাহঃ] জাবির [রাদি.]-এর দেখা পেয়েছেন। “আমি যে দুধপান করেছি তার হাক্ব কিভাবে চোকাতে পারি” এ কথার তাৎপর্য হল, আমার [দুধ] মা দুধ পান করানোর মাধ্যমে আমার যে সেবা করিলেন এর বদলা আমি কিভাবে দিতে পারি? এর উত্তরে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তোমার দুধমাকে একটি ক্রীতদাস অথবা একটি দাসী দান করলে এর বিনিময় আদায় হইবে। বর্ণিত আছে যে, আবুত তুফাইল [রাদি.] বলেন, এক সময় আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] সাথে বসে ছিলাম। এক মহিলা এসে হাযির হলে নাবী [সাঃআঃ] তার জন্য নিজের চাদর পেতে দিলেন এবং তিনি তার উপর বসলেন। এই মহিলা চলে গেলে বলা হল, এই মহিলাই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দুধপান করিয়েছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭. অনুচ্ছেদঃ সধবা মহিলাকে দাসত্বমুক্ত করা হলে
১১৫৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বারীরার স্বামী একজন ক্রীতদাস ছিল। বারীরাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বাধীনতা দান করিলেন [দাসত্ব হইতে মুক্তির পর বিয়ের বন্ধন অক্ষুন্ন রাখার বা ছিন্ন করার]। বারীরা নিজের স্বাধীনতা প্রয়োগ করেন [বিয়ের বন্ধন ছিন্ন করেন]। যদি সে লোকটি [স্বামী] স্বাধীন হতো তাহলে তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] কখনও তাকে [বারীরাকে] এ স্বাধীনতা প্রদান করিতেন না।
সহিহ, ইরওয়া [১৮৭৩], সহিহ, আবু দাউদ [১৯৩৫], স্বামী যদি স্বাধীন হতো ব্যাক্যাংশটি উরওয়ার নিজস্ব । হাদীসের প্রথম অংশটি বুখারীতেও আছে। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বারীরার স্বামী ছিল স্বাধীন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে [বারীরাকে] ইখতিয়ার প্রদান করিলেন।
“বারীরার স্বামী স্বাধীন ছিল” এই শব্দে হাদীসটি শাজ। দাস ছিল এই বর্ণনাটি সংরক্ষিত। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২০৭৪] আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। হিশাম ইবনি উরওয়া তার পিতার সূত্রে আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন বারীরার স্বামী দাস ছিল। ইকরিমা বর্ণনা করিয়াছেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, আমি বারীরার স্বামীকে দেখেছি, সে ছিল গোলাম, তাকে মুগীস নামে ডাকা হত। ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও একইরকম বর্ণিত হয়েছে। একদল আলিম এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। তারা বলেন, কোন বাঁদী কোন আযাদ ব্যক্তির বিবাহধীন থাকলে এই অবস্থায় তাকে দাসত্বমুক্ত করে দিলে সে [স্ত্রী] বিয়ে ঠিক রাখা বা না রাখার ইখতিয়ার পাবে না। হ্যাঁ তার স্বামী যদি গোলাম হয় এবং সে [স্ত্রী] দাসত্বমুক্ত হয় তবে সে ইখতিয়ার পাৰে। ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাকের মত এটাই। একাধিক রাবী আমাশ হইতে, তিনি ইবরাহীম হইতে, তিনি আসওয়াদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, আইশা [রাদি.] বলেন, “বারীরার স্বামী স্বাধীন ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ অবস্থায় বারীরাকে [বিয়ে ঠিক রাখা বা না রাখার] ইখতিয়ার দেন।” আসওয়াদও বলেছেন, বারীরার স্বামী আযাদ ছিল। একদল বিশেষজ্ঞ তাবিঈ ও তাহাদের পরবর্তীগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের মত এটাই । শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১১৫৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বারীরাকে গোলাম হইতে মুক্তি দেয়ার সময় তার কৃষ্ণাঙ্গ স্বামী মুগীরা গোত্রের গোলাম ছিল। আল্লাহ্র শপথ! আমি যেন মাদীনার রাস্তায় ও অলিতে-গলিতে তাকে [মুগসিকে] বেড়াতে দেখছি আর তার চোখের পানি তার দাঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। সে যেন তাকে ফিরিয়ে না দেয় সেই উদ্দেশ্যে বারীরাকে সম্মত করাতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু বারীরা তা করেনি।
সহিহ বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। সাঈদের পিতার নাম মাহ্রান এবং তার উপনাম আবুন নাযর। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ বাচ্চার মালিক বিছানা
১১৫৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিছানার মালিকই বাচ্চার মালিক এবং ব্যভিচারীর জন্য রহিয়াছে পাথর।
সহিহ বুখারী, মুসলিম। উমার, উসমান, আইশা, আবু উমামা, আমর ইবনি খারিজা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, বারাআ ইবনি আযিব এবং যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ আমল করিয়াছেন। উপরোক্ত হাদীসটি যুহরী-সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব ও আবু সালামা হইতে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের ভাল লাগলে
১১৫৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একটি মহিলাকে দেখার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাইনাব [রাদি.] –এর ঘরে যান এবং নিজের চাহিদা পূর্ণ করেন [সহবাস করেন]। তারপর বাইরে এসে বলেনঃ কোন মহিলা যখন আগমন করে সে শাইতানের বেশে আগমন করে। অতএব, কোন মহিলাকে দেখার পর তোমাদের কোন লোকের যদি তাকে ভাল লাগে তবে সে যেন নিজ স্ত্রীর নিকট যায়। কেননা, ঐ মহিলার যা আছে তার [স্ত্রীর]-ও তা আছে।
সহিহ, সহীহা [২৩৫] ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ গারীব। হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈর পিতার নাম সানবার। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ ন্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
১১৫৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি যদি কাউকে অন্য কোন লোকের প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।
হাসান সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৮৫৩] মুআয ইবনি জাবাল, সুরাকা ইবনি মালিক ইবনি জুশুম, আইশা, ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা, তাল্ক ইবনি আলী, উন্মু সালামা, আনাস ও ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখিত সনদ সূত্রে হাসান গারীব। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১১৬০. তলক ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও।
সহিহ, মিশকাত [৩২৫৭], সহীহা [১২০২] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৬১. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কোন নারী তার স্বামীকে খুশী রেখে মারা যায় সে জান্নাতে যাবে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৮৫৪] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব । শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১১. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার
১১৬২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম।
হাসান সহিহ, সহীহা [২৮৪] আইশা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১১৬৩. সুলাইমান ইবনি আমর ইবনিল আহওয়াস [রঃ] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান করিলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করিলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। তোমাদের নিকট তারা বন্দীর মত। তাছাড়া তোমাদের আর কোন অধিকার নেই তাহাদের উপর, কিন্তু তারা যদি সুস্পষ্ট চরিত্রহীনতায় লিপ্ত হয় [তবে ভিন্ন কথা]। তারা যদি তাই করে তাহলে তাহাদের বিছনাকে আলাদা করে দাও এবং সামান্য প্রহার কর, মারাত্মক প্রহার নয়। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাহাদেরকে নির্যাতনের অজুহাত খুঁজতে যেও না। জেনে রাখ! তোমাদের যেমন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি অধিকার আছে, তাহাদেরও তোমাদের প্রতি ঠিক সেরকমই অধিকার আছে। তাহাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে, তোমরা যাদেরকে পছন্দ কর না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা পদদলিত না করায় এবং যেসব লোককে তোমরা মন্দ বলে জান তাহাদেরকে যেন অন্দর মহলে ঢুকার অনুমতি না দেয়। জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাহাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাহাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে।
এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। “আওয়ানুন ইনদাকুম” অর্থাৎ তোমাদের নিকট বন্দী। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১২. অনুচ্ছেদঃ গুহ্যদ্বারে সংগম করা নিষেধ
১১৬৪. আলী ইবনি ত্বালক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, এক বিদুঈন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের মধ্যে কোন লোক মাঠেঘাটে বা জংগলে থাকে। এ অবস্থায় যদি তার পেট হইতে বায়ু বের হয় এবং [তার নিকটে] সামান্য পানি থাকে [তবে সে কি করিবে]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কারো বায়ু বের হলে সে যেন ওযূ করে। তোমরা নারীদের পশ্চাৎদ্বারে সহবাস কর না। আল্লাহ্ তাআলা হক কথা বলিতে লজ্জাবোধ করেন না।
যঈফ, মিশকাত [৩১৪, ১০০৬] এ অনুচ্ছেদে উমার, খুযাইমা ইবনি সাবিত, ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বণির্ত আছে । আবু ঈসা বলেন, আলী ইবনি ত্বালক [রাদি.] বণির্ত হাদীসটি হাসান । আমি ঈমাম বুখারীকে বলিতে শুনিয়াছি, আলী ইবনি ত্বালকের বর্ণিত এই একটি মাত্র হাদীস ছাড়া তার সূত্রে বর্ণিত আর কোন হাদীস আছে কি-না তা আমি জানি না । এটি ত্বালক ইবনি আলী আস-সুহাইমীর হাদীসও নয় । তার মতে তিনি অন্য কোন সাহাবী হইবেন । ওয়াকীও এ হাদীস বণর্না করিয়াছেন । শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১১৬৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোকের মলদ্বরে সংগম করে [কিয়ামাতের দিন] আল্লাহ তাআলা তার দিকে [দয়ার দৃষ্টিতে] তাকাবেন না।
হাসান, মিশকাত [৩১৯৫]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। ওয়াকীও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১১৬৬. আলী ইবনি ত্বালক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ বায়ু ত্যাগ করলে ওযূ করে। তোমরা নারীদের গুহ্যদ্বারে সহবাস কর না।
যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [২৬], হাদীসে বণির্ত রাবী আলী, ইনি হলেন আলী ইবনি ত্বালক্ । যঈফ আবু দাউদ [২৬] শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের সাজসজ্জা করে বাড়ির বাইরে যাতায়াত নিষেধ
১১৬৭. মাইমূনা বিনতু সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর খাদিমা [সেবিকা] ছিলেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্বামী ব্যতীত অন্য লোকের সামনে যে নারী সাজগোজ করে আকষর্ণীয় পোশাকে প্রকাশিত হয় সে কিয়ামতের দিনের অন্ধকার সমতুল্য। সেদিন তার জন্য কোন আলোর ব্যবস্থা থাকিবে না। যঈফ, যঈফা [১৮০০]
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র মূসা ইবনি উবাইদার সূত্রেই জেনেছি। কিন্তু তাকে স্মরণশক্তির দিক হইতে হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল বলা হয়েছে, যদিও তিনি একজন সত্যবাদী লোক হিসেবে স্বীকৃত। এ হাদীসটি শুবা, সুফিয়ান ও অন্যরাও তার নিকট হইতে বণর্না করিয়াছেন, কোন কোন বণর্নাকারী উক্ত হাদীসটি মূসা ইবনি উবাইদা হইতেও বণর্না করেছন, কিন্তু তারা কেউই এটা মারফূ হিসেবে বণর্না করেননি [মূসার উক্তি হিসাবেই বণর্না করিয়াছেন]। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ আত্মমর্যাদাবোধ প্রসঙ্গে
১১৬৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার গাইরাত [সূক্ষ্ম আত্মমর্যাদাবোধ] আছে এবং মুমিনেরও গাইরাত আছে। আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য যা হারাম করে দিয়েছেন, সে তাতে লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলার গাইরাতে আঘাত লাগে। -সহীহ, বুখারি-মুসলিম।
আইশা ও আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আসমা বিনতু আবু বাকর [রাদি.] হইতেও অন্য একটি সূত্রে বর্ণিত আছে এবং এ সূত্রটিও সহিহ। আল হাজাজ আস্-সাওয়াফের পিতার নাম মইসারাহ, ডাক নাম আবু উসমান আর হাজ্জাজের ডাক নাম আবুস সাল্ত, ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান বলেছেন, হাজ্জাজ আস-সাওয়াফ একজন জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের একাকী সফর করা মাকরূহ
১১৬৯. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ ও আখিরাতের উপর যে সকল মহিলা ঈমান রাখে, তার সাথে তার পিতা অথবা তার ভাই অথবা তার স্বামী অথবা তার ছেলে অথবা তার কোন মাহরাম আত্মীয় না থাকলে সে সকল মহিলার জন্য তিন দিন বা তার বেশি সময় [একাকী] সফর করা বৈধ নয়।
সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৮৯৮], বুখারী, মুসলিম আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস ও ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হইতে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “কোন মহিলা যেন এক দিন ও এক রাতের পথও অতিক্রম না করে তার সাথে কোন মাহরাম আত্মীয় না নিয়ে [একাকী]”। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। কোন মাহরাম আত্মীয় ব্যতীত কোন মহিলার একাকী ভ্রমণকে তারা মাকরূহ বলেছেন। কোন মহিলার ধন-সম্পদ আছে কিন্তু কোন মাহরাম আত্মীয় নেই, সে মহিলা এরকম পরিস্থিতিতে হাজ্জের সফরে বের হইতে পারবে কি-না এই বিষয়ে আলিমদের মধ্যে দ্বিমত আছে। একদল আলিম বলেন, হাজ্জ আদায় করা সে মহিলার জন্য ফরজ নয়। কেননা, রাস্তা অতিক্রমের যোগ্যতা থাকার শর্তের মধ্যে মাহরাম আত্মীয় সাথে থাকার শর্ত অন্তর্ভুক্ত আছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এই ঘরে পৌছানো পর্যন্ত যে লোকের সামর্থ আছে”। অতএব, তারা বলেন, যখন তার কোন মাহরাম আত্মীয় নেই তখন এই ঘর [কাবা] পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্যও তার নেই। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের। আর একদল আলিম বলেছেন, যাতায়াতের রাস্তা যদি বিপদ মুক্ত হয় তবে সে ভিন্ন লোকের সাথে হাজ্জ আদায়ের উদ্দেশ্যে যেতে পারে। এই মত দিয়েছেন ঈমাম মালিক ও শাফিঈ। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মাহরাম আত্মীয় ব্যতীত একাকী যেন কোন মহিলা এক দিন ও এক রাতের দূরত্বও অতিক্রম না করে।
-সহীহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৮১১], বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ
১১৭১. উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করিবে না। আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বললেনঃ সে তো মৃত্যু [সমতুল্য]। সহিহ, গায়াতুল মারাম [১৮১], বুখারী, মুসলিম
উমার, জাবির ও আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। অবাধে স্ত্রীলোকদের সাথে মেলা-মেশার খারাপ পরিণতি সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের একইরকম হাদীস আরও আছে। তিনি বলেনঃ একজন স্ত্রীলোকের সাথে একজন পুরুষ একাকী থাকলে তাহাদের মধ্যে শাইতান তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে যোগ দেয়”। “হাম্উ” অর্থ হচ্ছে স্বামীর ভাই। তিনি [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভাবীর সাথে দেবরকেও একাকী থাকতে নিষেধ করিয়াছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ [শাইতান প্রবাহিত রক্তের ন্যায় বিচরণ করে]
১১৭২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসায়াম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান [প্রবাহিত] রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করিয়াছেন, তাই আমি নিরাপদ।
সহিহ, এই হাদীসের প্রথম অংশকে পূর্বের হাদীস সমর্থন করে। পূর্ণ হাদীসটি সহীহইতে আছে। সহিহ, আবু দাউদ [১১৩৩-২১৩৪], তাখরীজু ফিকহিস সীরাহ [৬৫]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব বলেছেন। মুজালিদ ইবনি সাঈদের স্মরণশক্তি সম্পর্কে একদল মুহাদ্দিস সমালোচনা করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী “কিছু আল্লাহ তাআলা আমাকে সাহায্য করিয়াছেন, তাই আমি নিরাপদ”-এর ব্যাখ্যায় সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা বলেন, তার নিকট হইতে আমি নিরাপদে থাকি বা আত্মরক্ষা করিতে পারি। কারণ, আল্লাহ তাআলা আমাকে সাহায্য করেন। সুফিয়ান আরো বলেন, কেননা, শাইতান কখনও অনুগত হয় না বা ইসলাম গ্রহণ করে না। যে সকল মহিলাদের স্বামী তাহাদের নিকট উপস্থিত নেই এমন স্ত্রীলোকদেরকেই মুগীবাত বলে। মুগীবাহ শব্দের বহুবচন মুগীবাত। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ [শাইতান মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করে]
১১৭৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত [আবরণীয় বস্তু]। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।
সহিহ, মিশকাত [৩১০৯], ইরওয়া [২৭৩], তালীক আলা ইবনি খুযাইমা [১৬৮৫] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ [স্বামীকে কষ্ট দেয়া নিষেধ]
১১৭৪. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই [জন্নাতের] বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার [ভাবী] স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না। তোমাকে আল্লাহ তাআলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন।
সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২০৪১] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। শুধুমাত্র উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা এটি জেনেছি। ইসমাঈল ইবনি আইয়্যাশের সিরিয়ার মুহাদ্দিসগণ হইতে বর্ণিত হাদীসগুলো অনেক বেশি সহিহ, কিন্তু হিজায ও ইরাকের মুহাদ্দিসদের নিকট হইতে তার বর্ণনার মধ্যে অনেক প্রত্যাখ্যাত রিওয়ায়াত আছে। শিশুকে মায়ের দুধ পানে ইসলামের বিধান – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply