আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস বাংলা 40 Hadith

আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস

বইঃ আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস
সংকলকঃ ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু শরফ আন্‌-নওয়াবী
জন্মস্থানঃ দামেস্ক, সিরিয়া
জন্মঃ ৬৩১ হিজরি
মৃত্যুঃ ৬৭৬ হিজরি
অনুবাদঃ নিযামুদ্দিন মোল্লা
সম্পাদনাঃ মোহাম্মাদ মতিউল ইসলাম
ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
islamhouse.com (2011- 1432)
আপনারা আরও পড়তে পারেন আন নওয়াবীর রিয়াদুস সালেহীন

ⓕ ফেসবুক পেজ/ 🛒/ ফোন করে বই অর্ডার করুন নিম্নের টেবিলে এবং ফ্রিতে পড়ুন

আন নওয়াবীর ৪০ হাদিস

চল্লিশ হাদিস – ১. আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস্ উমার ইবনু আল-খাত্তাব রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেন— আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি—

“সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া [পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।”

[সহিহ আল-বুখারীঃ ১, সহিহ মুসলিমঃ ১৯০৭। মুহাদ্দিসগণের দুই ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু ইব্রাহীম ইবনু মুগীরা ইবনু বারদেযবাহ্ আল-বুখারী এবং আবুল হাসান মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ ইবনু মুসলিম আল-কুশায়রী আন্-নিশাপুরী আপন আপন সহিহ গ্রন্থে উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। যা সবচেয়ে সহিহ গ্রন্থদ্বয় বলে বিবেচিত হয়।]

চল্লিশ হাদিস – ২. এটাও উমার রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন, একদিন আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেনঃ “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।

রসুলুল্লাহ রাঃসাঃ বললেনঃ “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে [আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”

তিনি [লোকটি) বললেনঃ “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বললঃ “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।

তিনি [রাসূল) বললেনঃ “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ, তাহাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাহাঁর কিতাবসমূহ, তাহাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”

সে [আগন্তুক) বললঃ “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বললঃ “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।

তিনি বলেনঃ “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।

সে [আগন্তুক) বললঃ “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”।

তিনি [রাসূল) বললেনঃ “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”।

সে [আগন্তুক) বললঃ “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।

তিনি [রাসূল) বললেনঃ “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করিবে”।

তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি [রাসূল) আমাকে বললেনঃ “হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললামঃ “আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেনঃ “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।”

[সহিহ মুসলিমঃ ৮]

চল্লিশ হাদিস – ৩. আবু আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনু উমার ইবনু আল-খাত্তাব রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেছেন- আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, “পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে— সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং রমাদানের সওম পালন করা।”

[বুখারীঃ ৮, মুসলিমঃ ২১]

হাদিস – ৪. আবূ আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেন— রসুলুল্লাহ সাঃআঃ— যিনি সত্যবাদী ও যার কথাকে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়— তিনি আমাদেরকে বলেছেনঃ তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন মাংসপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।

অতএব, আল্লাহর কসম-যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই-তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে[1]– এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।

এবং তোমাদের মধ্যে অপর এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে।

[বুখারীঃ ৩২০৮, মুসলিমঃ ২৬৪৩]

চল্লিশ হাদিস – ৫. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন- রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করিবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে [অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)।

[বুখারীঃ ২৬৯৭, মুসলিমঃ ১৭১৮] মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হলো এই যে, যে ব্যক্তি এমন কাজ করিবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না [অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে)।

চল্লিশ হাদিস – ৬. আবু আব্দিল্লাহ্ আন্-নুমান ইবনু বশীর রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেছেন- আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছিঃ নিঃসন্দেহে হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর এ দুয়ের মধ্যে কিছু সন্দেহজনক বিষয় আছে যা অনেকে জানে না। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দিহান বিষয় হতে নিজেকে রক্ষা করেছে; সে নিজের দ্বীনকে পবিত্র করেছে এবং নিজের সম্মানকেও রক্ষা করেছে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হয়েছে; সে হারামে পতিত হয়েছে। তার অবস্থা সেই রাখালের মত যে নিষিদ্ধ চারণ ভূমির চারপাশে [গবাদি) চরায়, আর সর্বদা এ আশংকায় থাকে যে, যে কোন সময় কোন পশু তার মধ্যে প্রবেশ করে চরতে আরম্ভ করিবে।

সাবধান! প্রত্যেক রাজা-বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাহাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় -এটা হচ্ছে কলব [হৃদপিণ্ড)।

[বুখারীঃ ৫২, মুসলিমঃ ১৫৯৯]

চল্লিশ হাদিস – ৭. আবু রুকাইয়্যা তামীম ইবনু আওস আদ্-দারী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

নাবি সাঃআঃ বলেছেনঃ দ্বীন হচ্ছে শুভকামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ কার জন্য? তিনি বললেনঃ আল্লাহ, তাহাঁর কিতাবের, তাহাঁর রাসূলের, মুসলিম নেতাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য।

[মুসলিমঃ ৫৫]

চল্লিশ হাদিস – ৮. ইবনে উমার রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত,

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে লড়াই করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ) আল্লাহর রাসূল। আর তারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। যদি তারা এরূপ করে তবে তারা আমার হাত থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে নেবে, অবশ্য ইসলামের হক যদি তা দাবী করে তবে আলাদা কথা; আর তাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।

[বুখারীঃ ২৫, মুসলিমঃ ২২]

হাদিস – ৯. আবু হুরাইরা আব্দুর রহমান ইবনু সাখর রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেন- আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছিঃ আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন করা আর নাবিদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে।

[বুখারীঃ ৭২৮৮, মুসলিমঃ ১৩৩৭]

চল্লিশ হাদিস – ১০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেন- রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করার হুকুম তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ [[হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন।)) আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ [[হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।))

তারপর তিনি [রসুলুল্লাহ) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলেঃ হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দোআ কবূল হতে পারে।

[মুসলিমঃ ১০১৫]

চল্লিশ হাদিস – ১১. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহাস্পদ দৌহিত্র আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনু আলী ইবনু আবী তালিব রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেনঃ “আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে এ কথা শুনে স্মরণ রেখেছিঃ  সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করে সন্দেহমুক্ত বিষয় গ্রহণ কর।”

[তিরমিযীঃ ২৫২০, নাসায়ীঃ ৫৭১১, আর ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ হাদিসটি হাসান সহীহ]

চল্লিশ হাদিস – ১২. আবু হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন-রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “অনর্থক অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই একজন ব্যক্তির উত্তম ইসলাম।”

[হাদিসটি হাসান। তিরমিযীঃ ২৩১৮, ইবনে মাজাহঃ ৩৯৭৬]

হাদিস – ১৩. আবু হামযাহ্ আনাস ইবনু মালেক রাঃআঃ- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম-থেকে বর্ণিত হয়েছে,

নাবি সাঃআঃ বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারিবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করিবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।”

 [বুখারীঃ ১৩, মুসলিমঃ ৪৫]

الحديث الرابع عش

ر

” لا يحل دم امريء مسلم إلا بإحدى ثلاث”

عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَঃ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمঃ

“لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍঃ الثَّيِّبُ الزَّانِي، وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ”.

 [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ, رقمঃ 6878، وَمُسْلِمٌ, رقمঃ 1676]

হাদিস – ১৪. ইবনে মাসউদ রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন- রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “কোন মুসলিমের রক্তপাত করা তিনটি কারণ ব্যতীত বৈধ নয়- বিবাহিত ব্যক্তি যদি ব্যভিচার করে, আর যদি প্রাণের বদলে প্রাণ নিতে হয়। আর যদি কেউ স্বীয় দ্বীনকে পরিত্যাগ করে মুসলিম জামাআত হতে আলাদা হয়ে যায়।”

 [বুখারীঃ ৬৮৭৮, মুসলিমঃ ১৬৭৬]

চল্লিশ হাদিস – ১৫. আবু হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত হয় উত্তম কথা বলা অথবা চুপ থাকা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত আপন প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, তার উচিত আপন অতিথির সম্মান করা।”

 [বুখারীঃ ৬০১৮, মুসলিমঃ ৪৭]

হাদিস – ১৬. আবূ হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বললঃ আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ রাগ করো না। লোকটি বার বার রাসূলের নিকট উপেদশ চায় আর রাসূল সাঃআঃ বলেনঃ রাগ করো না।

[বুখারীঃ ৬১১৬]

চল্লিশ হাদিস – ১৭. আবূ ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনু আওস রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত জিনিস উত্তম পদ্ধতিতে করার বিধান করে দিয়েছেন। সুতরাং যখন তুমি হত্যা করিবে, তখন উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করিবে আর যখন তুমি যবেহ্ করিবে, তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ্ করিবে। তোমাদের প্রত্যেকের আপন ছুরি ধারালো করে নেয়া উচিত ও যে জন্তুকে যবেহ্ করা হবে তার কষ্ট লাঘব করা উচিত।

[মুসলিমঃ ১৯৫৫]

হাদিস – ১৮. আবূ যার জুনদুব ইবনু জুনাদাহ্ এবং আবূ আব্দুর রহমান মু’আয ইবনু জাবাল রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত আছে,

তারা বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ কর, যা তাকে মুছে দেবে; আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর।

[তিরমিযীঃ ১৯৮৭, এবং [তিরমিযী) বলেছেন যে, এটা হচ্ছে হাসান হাদিস। কোন কোন সংকলনে এটাকে হাসান সহিহ বলা হয়েছে।]

হাদিস – ১৯. আবূ আব্বাস আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রাঃআঃ বর্ণনা করিয়াছেন-

একদিন আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ)-এর পিছনে ছিলাম, তিনি আমাকে বললেনঃ “হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাবো- আল্লাহকে সংরক্ষণ করিবে[2] তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করিবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোন উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোন উপকার করতে পারিবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোন অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোন অনিষ্ট করতে পারিবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে।”

[তিরমিযীঃ ২৫১৬, হাদিসটি সহিহ [হাসান) বলেছেন।] তিরমিযী ছাড়া অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “আল্লাহকে স্মরণ করিবে তো তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে, তুমি স্বচ্ছল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করিবে তো তিনি তোমাকে কঠিন অবস্থায় স্মরণ করিবেন। মনে রেখো- যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না, আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না। আরো জেনে রাখো- ধৈর্য্য ধারণের ফলে [আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে।”

হাদিস – ২০. আবূ মাসউদ উকবাহ্ ইবনু আমর আল-আনসারী আল-বদরী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয়েছে-

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ) বলেছেনঃ “অতীতের নাবিগণের কাছ থেকে মানুষ একথা জানতে পেরেছে- যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই কর।”

[বুখারীঃ ৩৪৮৩]

হাদিস – ২১. আবূ আমরকে আবূ আমরাহ্ও বলা হয়- সুফিয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ্ হতে বর্ণনা করিয়াছেন-

আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু বলে দিন যেন আপনাকে ব্যতীত আর কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়। তিনি বললেনঃ বল- ‘আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’; তারপর এর উপর দৃঢ় থাক।”

[মুসলিমঃ ৩৮] আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস

হাদিস – ২২. আবূ আব্দুল্লাহ্ জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ্ আল-আনসারী [রাঃআঃমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে-

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি কি মনে করেন যদি আমি ফরয নামায আদায় করি, রমযানে রোযা রাখি, হালালকে হালাল বলে ও হারামকে হারাম বলে ঘোষণা করি, আর এর বেশী কিছু না করি, তাহলে কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? তিনি বললেনঃ হাঁ।

[মুসলিমঃ ১৫]

হাদিস – ২৩. আবূ মালেক আল-হারেস ইবনু আসেম আল-আশ’আরী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ) বলেছেনঃ “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক; আল-হামদুলিল্লাহ্ [সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) [বললে] পাল্লা পরিপূর্ণ করে দেয় এবং “সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ্ [আল্লাহ কতই না পবিত্র! এবং সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) উভয়ে অথবা এর একটি আসমান ও যমীনের মাঝখান পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে আলো, সাদকা হচ্ছে প্রমাণ, সবর উজ্জ্বল আলো, আর কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আত্মার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সকাল শুরু করে- আর তা হয় তাকে মুক্ত করে দেয় অথবা তাকে ধ্বংস করে দেয়।”

[মুসলিমঃ ২২৩]

হাদিস – ২৪. আবূ যর আল-গিফারী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বর্ণনা করিয়াছেন, নাবি সাঃআঃ তাহাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ বলেছেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।

হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গোনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করিবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করিবে।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করিবে না।

আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারিবে না।

হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।

হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে [কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত।”

[মুসলিমঃ ২৫৭৭]

হাদিস – ২৫. আবূ যর রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহর কিছু সাহাবী নাবি সাঃআঃকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল! বিত্তবান লোকেরা প্রতিফল ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামায পড়ি তারাও সেরকম নামায পড়ে, আমরা রোযা রাখি তারাও সেরকম রোযা রাখে, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সদকা করে।

তিনি বলেনঃ আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে তোমরা সদকাহ্ দিতে পার। প্রত্যেক তাসবীহ্ [সোবহান আল্লাহ) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাকবীর [আল্লাহু আকবার) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহমীদ [আলহামদুলিল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহলীল [লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সদকাহ্। আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্।

তারা জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্খা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে?

তিনি বলেনঃ তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গোনাহ্গার হয় কি না! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।”

[মুসলিমঃ ১০০৬]

হাদিস – ২৬. আবূ হুরাইরা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের [শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ্ দেয়া অবশ্য কর্তব্য। দু’জন মানুষের মাঝে ইনসাফ করা হচ্ছে সাদকাহ্, কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ্, ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ্, সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ্ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ্।”

[বুখারীঃ ২৯৮৯, মুসলিমঃ ১০০৯] আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস

হাদিস – ২৭. আন-নওয়াস ইবনু সাম’আন রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি নাবি সাঃআঃ হতে বর্ণনা করিয়াছেন, নাবি সাঃআঃ বলেনঃ “উত্তম চরিত্র হচ্ছে নেকী, আর গোনাহ্ তাকে বলে যা তোমার মনকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে এবং তা লোকে জানুক তা তুমি অপছন্দ কর।”

[মুসলিমঃ ২৫৫৩] ওয়াবেসা ইবনু মা’বাদ রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ আমি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলে তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি কি নেকী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?” আমি বলিঃ জী হাঁ। তিনি বললেনঃ “নিজের মনকে জিজ্ঞাসা কর; যা সম্পর্কে তোমার আত্মা ও মন আশ্বস্ত থাকে তা হচ্ছে নেকী, আর গোনাহ্ হচ্ছে তা যা যদিও লোক [তার স্বপক্ষে) ফাতাওয়া দিয়ে দেয় তবুও তোমার আত্মাকে অশ্বস্তিতে রাখে ও মনে সংশয় সৃষ্টি করে।” [-এটি হচ্ছে হাসান হাদিস যা আমি দুই ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল ও আদ্-দারেমীর মুসনাদ থেকে উৎকৃষ্ট সদনে উদ্ধৃত করেছি।]

চল্লিশ হাদিস – ২৮. আবূ নাজীহ্ আল-‘ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ্ রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এক বক্তৃতায় আমাদের উপদেশ দান করেন যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে ও আমাদের চোখে পানি এসে যায়। আমরা নিবেদন করিঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে অসীয়াত করুন। তিনি বললেনঃ “আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে অসীয়াত করছি, আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়াত করছি; যদি কোন গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি মেনে চল, তা দাঁত দিয়ে [অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; আর অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হচ্ছে গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।”

[-আবূ দাউদ[৪৬০৭) ও তিরমিযী[২৬৬) হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন যে, এটা সহিহ [হাসান) হাদিস।]

হাদিস – ২৯. মু’আয ইবনু জাবাল রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেছেনঃ আমি নিবেদন করিঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

তিনি বললেনঃ তুমি এক বৃহৎ বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। এটা তার জন্য খুবই সহজ আল্লাহ যার জন্য সহজ করে দেন। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাহাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও, রমযানে রোযা রাখ এবং [কা’বা) ঘরে হজ্জ কর।

তারপর তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাদের কল্যাণের দরজা দেখাব না? রোযা হচ্ছে ঢাল, সাদকাহ্ গোনাহকে নিঃশেষ করে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়; আর কোন ব্যক্তির গভীর রাতের নামায।

তারপর তিনি পড়েনঃ تتجافي جنوبهم عن المضاجع হতে يعلمون পর্যন্ত। যার অর্থ হলোঃ তারা শয্যা পরিত্যাগ করে তাদের রবকে ভয়ে ও আশায় ডাকে এবং আমরা তাদেরকে যে রিয্‌ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তাদের কর্মের জন্য যে চক্ষু শীতলকারী প্রতিফল রক্ষিত আছে তা তাদের কেউই জানে না। [সূরা আস্-সাজদাহ্ঃ ১৬-১৭]

তিনি আবার বলেনঃ আমি তোমাদের কর্মের মূল এবং তার স্তম্ভ ও তার সর্বোচ্চ চূড়া বলবো কি?

আমি নিবেদন করিঃ হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।

তিনি বললেনঃ কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।

তারপর তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে এসব কিছু আয়ত্তে রাখার জিনিস বলবো না?

আমি নিবেদন করিঃ হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।

তিনি নিজের জিভ ধরে বললেনঃ এটাকে সংযত কর।

আমি জিজ্ঞেস করিঃ হে আল্লাহর নাবি! আমরা যা বলি তার হিসাব হবে কি?

তিনি বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু’আয! জিভের উৎপন্ন ফসল ব্যতীত আর কিছু এমন আছে কি যা মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে?

[তিরমিযীঃ ২৬১৬ এবং তিনি বলেছেনঃ এটা হাসান [সহিহ) হাদিস।]

চল্লিশ হাদিস – ৩০. আবূ সা’লাবাহ্ আল-খুশানী জুরসূম ইবনু নাশিব রাঃআঃ বর্ণনা করিয়াছেন,

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা ফরযসমূহকে অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন, সুতরাং তা অবহেলা করো না। তিনি সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সুতরাং তা লঙ্ঘন করো না। এবং কিছু জিনিস হারাম করিয়াছেন, সুতরাং তা অমান্য করো না। আর তিনি কিছু জিনিসের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করিয়াছেন-তোমাদের জন্য রহমত হিসেবে; ভুলে গিয়ে নয়-সুতরাং সেসব বিষয়ে বেশী অনুসন্ধান করো না।”

[হাদিসটি হাসান [সহিহ), আদ্-দারা কুতনীঃ ৪/১৮৪ ও অন্যান্য কয়েকজন বর্ণনা করিয়াছেন।]

হাদিস – ৩১. আবুল আব্বাস সাহল ইবনু সা’দ আস্-সা’ইদী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেছেনঃ “এক ব্যক্তি নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন, লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।

তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হবে না, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন; আর মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।”

[ইবনে মাজাহ্ঃ ৪১০২]

হাদিস – ৩২. আবু সাঈদ সা’দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান আল-খুদরী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়।”

[হাদিসটি হাসান। এটিকে ইবনে মাজাহ [দেখুন হাদিস নংঃ ২৩৪১), আদ্-দারা-কুতনী [হাদিস নংঃ ৪/২২৮) এবং অন্যান্যগণ সনদসহ বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম মালেক মুয়াত্তা গ্রন্থে [হাদিস নংঃ ২/৭৪৬) একে মুরসাল সনদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি সনদের মধ্যে যে আমর ইবনু ইয়াহ্ইয়া নিজের পিতা হতে যিনি নাবি সাঃআঃ হতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তিনি আবু সাঈদকে বাদ দিয়েছেন। তবে হাদিসটির আরও বহু বর্ণনায় এসেছে যার কোনো কোনোটি অপর কোনো কোনোটির দ্বারা শক্তিশালী হয়েছে।]

হাদিস – ৩৩. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

রাসূল সাঃআঃ বলেছেনঃ যদি মানুষকে কেবল তাদের দাবী অনুযায়ী দিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা অন্যের সম্পদ ও জীবন দাবী করে বসবে। তবে নিয়ম হচ্ছে দাবীদারকে প্রমাণ পেশ করতে হবে, আর যে অস্বীকার করিবে তাকে শপথ করতে হবে।

[এ হাদিসটি হাসান। এটাকে বায়হাকী ও অন্যান্যগণ এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং এর কিছু অংশ সহিহ হাদীসের অনুরূপ।]

হাদিস – ৩৪. আবূ সাঈদ খুদরী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করিবে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করিবে, তাও যদি না করতে পারে তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করিবে। আর এ হচ্ছে [অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান।”

[মুসলিমঃ ৪৯]

হাদিস – ৩৫. আবূ হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তিনি বলেন- রাসূল সাঃআঃ বলেছেনঃ পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করিবে, একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না, একজনের ক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয় করো না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর যুলুম করে না এবং তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না। তাকওয়া হচ্ছে- এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। কোন মানুষের জন্য এতটুকু মন্দ যথেষ্ট যে, সে আপন মুসলিম ভাইকে নীচ ও হীন মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।

[মুসলিমঃ ২৫৬৪]

হাদিস – ৩৬. আবূ হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

নাবি সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে বান্দা আপন ভাইকে সাহায্য করিবে, আল্লাহ সে বান্দাকে সাহায্য করিবেন। যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। যেসব লোক আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন ঘরে [অর্থাৎ মসজিদে) সমবেত হবে, কুরআন পড়বে, সকলে মিলিত হয়ে তার শিক্ষা নেবে ও দেবে, তাদের উপর অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে, রহমত তাদের ঢেকে নেবে, ফিরিশ্‌তাগণ তাদের ঘিরে থাকবে আর আল্লাহ তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ করিবেন যারা তাহাঁর কাছে উপস্থিত। যে ব্যক্তি তার আমলের কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ পরিচয় তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিবে না।

[মুসলিমঃ ২৬৯৯]

হাদিস – ৩৭. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

রাসূল সাঃআঃ তাহাঁর রব হতে বর্ণনা করেন যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ভাল ও মন্দ কাজকে লিখে রেখেছেন। তারপর তিনি এ ব্যাখ্যা করেনঃ যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্য দৃঢ় সংকল্প করে কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারে না, তবু আল্লাহ তার জন্য পরিপূর্ণ নেকী লেখেন; আর দৃঢ় সংকল্প করে সে যদি তা সম্পন্ন করে তবে আল্লাহ নিজের কাছে তার জন্য দশ নেকী থেকে সাতশ’ পর্যন্ত; বরং তার চেয়েও বেশী নেকী লেখেন। এর বিপরীত, যদি কারো মন্দা কাজের বাসনা জাগে কিন্তু তা কাজে পরিণত না করে, আল্লাহ তার জন্য পরিপূর্ণ নেকী লেখেন; কিন্তু যদি সে তার কামনা বাসনাকে কাজে পরিণত করে, তবে তার জন্য একটি মন্দ কাজ লেখেন।

[বুখারীঃ ৬৪৯১, মুসলিমঃ ১৩১]

চল্লিশ হাদিস হাদিস – ৩৮. আবূ হোরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন- রাসূল সাঃআঃ বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমি যা তার উপর যা ফরয করেছি আমার বান্দাহ্ তা ব্যতীত অন্য কোন পছন্দসই জিনিসের দ্বারা আমার অধিক নিকটবর্তী হতে পারে না। আর আমার বান্দাহ্ নফলের সাহায্যে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, এমনকি আমি তাকে ভালবাসতে থাকি। সুতরাং আমি যখন তাকে ভালবাসতে থাকি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই; যা দ্বারা সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই; যার দ্বারা সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই; যার দ্বারা সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই; যার দ্বারা সে চলে[3]। সে যদি আমার কাছে কিছু চায় আমি অবশ্যই তাকে তা দেই। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দান করি।

[বুখারীঃ ৬৫০২] আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস

হাদিস – ৩৯. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে-

রাসূল সাঃআঃ বলেছেনঃ আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে।

[এ হাদিসটি হাসান। ইবনে মাজাহ্ [নং-২০৪৫), বায়হাকী [সুনান, হাদিস নং-৭) ও আরো অনেকেই এ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন।]

চল্লিশ হাদিস হাদিস – ৪০. ইবনে উমার রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার কাঁধ ধরে বললেনঃ দুনিয়াতে অপরিচিত অথবা ভ্রমণকারী মুসাফিরের মত হয়ে যাও। ইবনে উমার রাঃআঃমা বলতেন, সন্ধ্যা বেলায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করো না। আর সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। অসুস্থতার জন্য সুস্থতাকে কাজে লাগাও, আর মৃত্যুর জন্য জীবিত অবস্থা থেকে [পাথেয়) সংগ্রহ করে নাও।

[বুখারীঃ ৬৪১৬]

চল্লিশ হাদিস হাদিস – ৪১. আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃআঃমা থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না আমি যা এনেছি তার প্রতি তার ইচ্ছা-আকাঙ্খা অনুগত না হয়ে যায়।

[হাদিসটি হাসান। এটাকে আমি কিতাবুল হুজ্জাহ্ থেকে সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছি।]

চল্লিশ হাদিস – ৪২. আনাস রাঃআঃ থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন- রাসূল সাঃআঃকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে [ক্ষমা) প্রত্যাশা করিবে, তুমি যা-ই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে [আখেরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।

[তিরমিযী [নং-৩৫৪০) এ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।]


[1] অর্থাৎ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার কাজটি সবার নিকট জান্নাতবাসীদের কাজ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতের কাজ করেনি। কারণ, তার ঈমান ও ইখলাসের মধ্যে কোথাও কোন ঘাটতি ছিল। [সম্পাদক]

[2]  আল্লাহ্‌কে সংরক্ষণ করার অর্থ, আল্লাহ্‌র তাওহীদ ও অধিকার সংরক্ষণ। আল্লাহ্‌র আদেশ নিষেধ ও শরী‘আতের বিধি-বিধানের সীমারেখা সংরক্ষণ। [সম্পাদক]

[3]  অর্থাৎ তার কর্মকাণ্ড কেবল আমার সন্তুষ্টিবিধানেই পরিচালিত হয়। সে তখন তা-ই শোনে, দেখে, ধরে বা চলে যাতে আমার সন্তুষ্টি রয়েছে। তাকে আমি আল্লাহই এ তাওফীক দিয়ে থাকি। [সম্পাদক] আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস

আন নওয়াবীর চল্লিশ হাদিস ক্রয় বিক্রয়

প্রকাশনীমুল্য
মাকতাবাতুন নূর২০০

মাকতাবাতুন নূরঃ ইমাম নববীর চল্লিশ হাদিস, লেখক : ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া আন-নববী (র), বিষয় : আল হাদিস, অনুবাদক: ইমরান ইবনে আনওয়ার, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২০৮, কভার: হার্ড কভার

বইটির PDF/ মুল কপি পেতে হলে নিচে Comment/ কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদেরকে জানান, তাহলে আমরা আপনাদেরকে পাঠিয়ে দিতে পারব। ইনশাআল্লাহ।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply