হেবা বা দান, উমরী বা আজীবন দান ও রুকবা দানের বিবরণ
হেবা বা দান, উমরী বা আজীবন দান ও রুকবা দানের বিবরণ >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১৮ঃ হেবা বা দান, উমরী বা আজীবন দান ও রুকবা দানের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ০১. দান করার ক্ষেত্রে সন্তানদের মধ্যে করা তারতম্য নিষেধ
পরিচ্ছেদ ০২. দান করে ফিরিয়ে নেওয়া হারাম
পরিচ্ছেদ ০৩. ছেলেকে দান করা বস্তু পিতার ফিরিয়ে নেওয়া বৈধ
পরিচ্ছেদ ০৫. উমরা এবং রুকবা প্রসঙ্গ {১০০৪}
পরিচ্ছেদ ০৬. সদকা দানকারীর স্বীয় সদকা গ্রহণ করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ০৭. হাদিয়া [উপহার] দেয়া মুস্তাহাব এবং এর প্রভাব
পরিচ্ছেদ ০৮. সাওয়াবের আশায় দান করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০১. দান করার ক্ষেত্রে সন্তানদের মধ্যে করা তারতম্য নিষেধ
৯২৮ -নু`মান ইবনু বাশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা তাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এলেন এবং বলিলেন, আমি আমার এই পুত্রকে একটি গোলাম দান করেছি । তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার সব পুত্রকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ? তিনি বলিলেন, না; তিনি বলিলেন, তবে তুমি তা ফিরিয়ে নাও । {৯৯৭}
অন্যশব্দে এরূপ আছে – আমার পিতা নবী [সাঃআঃ] এর দরবারে হাজির হলেন যাতে করে তাঁকে এ ব্যাপারে সাক্ষী করে নিতে পারেন । নবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তোমার প্রত্যেক ছেলের জন্য কি এরূপ দান করেছ? সাহাবী বলিলেন, না, নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহকে ভয় কর, তোমার সন্তানদের মধ্যে সমভাবে বন্টন কর । ফলে আমার পিতা {বাশীর [রাঃআঃ] } বাড়ি ফিরে এলেন ও ঐ দান ফেরত নিলেন ।{৯৯৮}
মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনায় আছে – নবী [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট হয়ে বলিলেন, তবে তুমি এর জন্য আমাকে ব্যতীত অন্যকে সাক্ষী করে রাখ । তারপর বলিলেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, তোমার প্রতি তার [পুত্রগণ] সমভাবে সদ্ব্যবহার করুক । সাহাবী বলিলেন, হাঁ, তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তুমি এরূপ করো না । {৯৯৯}
{৯৯৭} বুখারি ২৫৮৬, মুসলিম ২৫০০ । {৯৯৮} বুখারি ২৫৮৭, তিরমিজি ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবু দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাযাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, মালিক ১৪৭৩ । {৯৯৯} মুসলিম ১৬২৩ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০২. দান করে ফিরিয়ে নেওয়া হারাম
৯২৯ -ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে এরপর তার বমি খায় ।
বুখারির অন্য একটি বর্ণনায় আছে, খারাপ উপমা দেয়া আমাদের জন্য শোভনীয় নয় তবু যে দান করে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মতো, যে বমি করে তা আবার খায় । {১০০০}
{১০০০} বুখারি ২৫৮৯, ২৬২১, ২৬২২, মুসলিম ১৬২২, তিরমিজি ১২৯৮, নাসায়ী ৩৬৯৩, ৩৬৯৪, আবু দাউদ ৩৫৩৮, ইবনু মাযাহ ২৩৮৫, আহমাদ ১৮৭৫, ৩২৫৯ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. ছেলেকে দান করা বস্তু পিতার ফিরিয়ে নেওয়া বৈধ
৯৩০ -ইবনু উমার ও ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন মুসলিমের জন্য কিছু দান করার পর পুনরায় তা ফেরত নেয়া হালাল নয় । তবে পিতা তার পুত্রকে যা দান করে তা ফেরত নিতে পারে । – তিরমিজি, ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহিহ বলেছেন । {১০০১}
{১০০১} আবু দাউদ ৩৬৩৯, তিরমিজি ২১৩২, ইবনু মাযাহ ২৩৭৭, ২৪৮২, নাসায়ী ৩৬৯০, আহমাদ ২১২০, ৪৭৯৫। ইবনু হিব্বান ৫১০১ এবং হাকিমের [২/৪৬] বর্ণনায় আরো রয়েছে, যে ব্যক্তি কোন কিছু দান করার পর আবার তা ফিরিয়ে নিয়ে নেয় সে ঐ কুকুরের মত যে পেট পূর্ণ করার পর বমি করে এবং কিছুক্ষণ পর আবার সেই বমির দিকে প্রত্যাবর্তন করে [অর্থাৎ আবার তা খায়] । ইমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. উমরা এবং রুকবা প্রসঙ্গ {১০০৪}
৯৩৩ -জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, উমরী বা আজীবন দান তার জন্য সাব্যস্ত হইবে যার জন্য তা হেবা করা হয়েছে । {১০০৫}
মুসলিমে আছে- তোমাদের মাল তোমাদের জন্য রাখ, তা নষ্ট করে ফেল না । যদি কেউ কাউকে জীবনতক দান করে তাহলে এ দান তার জীবন ও মরণতকই হইবে, আর তার মৃত্যুর পর তার সন্তানগণের হইবে ।
অন্য শব্দে এরূপ এসেছে- নবী [সাঃআঃ] বৈধ বলেছেন ঐ উমরী দান যাতে হিবাকারী বলবে যে, এ দান তোমার জন্য ও তোমার সন্তানদের [ওয়ারিসদের] জন্যও । কিন্তু যদি বলে এ দান তোমার জীবনতক মাত্র । তাহলে ঐ দান সিদ্ধ না হয়ে মালিকেরই থেকে যাবে । {১০০৬}
আবু দাউদে ও নাসায়ীতে আছে- তোমরা রুকবা ও উমরা করিবে না । যে কিছু রুকবা বা উমরা করিবে তাহলে তা তার ওয়ারিসদের জন্যও হইবে । {১০০৭}
{১০০৫} বুখারির বর্ণনায় রয়েছে, জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] উমরাহ [বস্তু] সম্পর্কে ফায়সালা দিয়েছেন যে, যাকে দান করা হয়েছে, সে-ই সেটার মালিক হইবে ।{১০০৬} মুসলিমের বর্ণনায় আরো রয়েছে , মা`মার [রঃ] বলেন, ইমাম যুহরী [রঃ] এর উপরই ফতোয়া দান করিতেন । {১০০৭} বুখারি ২৬২৫, মুসলিম ১৬২৫, তিরমিজি ১৩৫০, ১৩৫১, নাসায়ী ৩৭২৭, ৩৭৩১, ৩৭৩৬ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. সদকা দানকারীর স্বীয় সদকা গ্রহণ করা নিষেধ
৯৩৪ -উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, এক লোককে আমি আমার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় আরোহণের জন্য দান করলাম ঘোড়াটি যার নিকট ছিল, সে তার চরম অযত্ন করিল । তাই সেটা আমি তার নিকট হইতে কিনে নিতে চাইলাম । আমার ধারণা ছিলে যে, সে তা কম দামে বিক্রি করিবে । এ সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, এক দিরহামের বিনিময়েও যদি সে তোমাকে তা দিতে রাজী হয় তবু তুমি তা ক্রয় কর না । [এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ] {১০০৮}
{১০০৮} বুখারি ১৪৯০, ২৬২৩, ২৬৩৬, ২৯৭০, মুসলিম ১৬২০, তিরমিজি ৬৩৮, নাসায়ী ২৬১৫, ২৬১৬, আবু দাউদ ১৫৯৩, ইবনু মাযাহ ২৩৯০, ২৩৯২, আহমাদ ১৬৭, ২৬০, ২৮৩, মুয়াত্তা মালেক ৬২৪, ৬২৫ । বুখারিতে রয়েছে ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, খারাপ উপমা দেয়া আমাদের জন্য শোভনীয় নয় তবু যে দান করে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মত যে বমি করে তা আবার খায় । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৭. হাদিয়া [উপহার] দেয়া মুস্তাহাব এবং এর প্রভাব
৯৩৫ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন । নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, অন্যকে হাদীয়া দাও তাহলে আপোষে ভালবাসা সৃষ্টি করিতে পারবে । বুখারি তাহাঁর আদাবুল মুফরাদে ও আবু ইয়া`লা – উত্তম সানাদে । {১০০৯}
{১০০৯} বুখারি ৫৫৩, ৫৯৪, নাসায়ী ৪৭৪, ইবনু মাযাহ ৬৯৪, আহমাদ ২২৪৪৮, ২২৫১৭ । হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৯৩৬ -আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- আপোষে উপঢৌকন দিতে থাকো, কেননা উপঢৌকন দ্বারা মনের হিংসা-বিদ্বেষজনিত গ্লানি দূর হয়ে যায় । – বাযযার দুর্বল সানাদে । {১০১০}
{১০১০} ইমাম সনআনী সুবুলুস সালাম ৩/১৪৫ গ্রন্থে বলেন, এর দুর্বলতা রয়েছে, এর যতগুলো সনদ আছে এর কোনটিই বিতর্কমুক্ত নয় । ইমাম হাইসামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/ ১৪৯ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে আয়িয বিন শুরাইহ নামক দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে । শাইখ আলবানী ইরওয়াউল গালীল ৬/৪৫ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে বকর বিন বাক্কার দুর্বল বর্ণনাকারী । তিনি যঈফুল জামে ২৪৯৩ গ্রন্থে ও একে দুর্বল বলেছেন । বাযযার ১৯৩৭ । হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৯৩৭ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, – হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও । {১০১১}
{১০১১} বুখারি ৬০১৭, মুসলিম ১০৩০, তিরমিজি ২১৩০, আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী “ফাতহুল বারী`তে … শব্দের অর্থ বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন : তা একটি ছোট হাড় যেখানে গোশত কম থাকে ।” হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৮. সাওয়াবের আশায় দান করার বিধান
৯৩৮ -ইবনু উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন । নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন হেবা বা দান করে সেই তার উপর বেশী হকদার, যতক্ষণ তার কোন বিনিময় প্রাপ্ত না হয় । – হাকিম একে সহিহ বলেছেন; মাহফূয [সংরক্ষিত] সানাদ হিসেবে এটা ইবনু `উমার হইতে, উমার [রাঃআঃ] –এর কথা বর্ণিত । {১০১২}
{১০১২} ইমাম দারাকুতনী তাহাঁর সুনান [২/৬৩৭] গ্রন্থে বলেন, এটি মারফু` হিসেবে সাব্যস্ত নয়, বরং সঠিক হচ্ছে এটি মাওকূফ । ইমাম বাইহাকি আসসুনান কুবরা [৬/১৮১] গ্রন্থে বলেন, এর মধ্যে সন্দেহ রয়েছে । শাইখ আলবানী যঈফুল জামে ৫৮৮৩, সিলসিলা যঈফা ৩৬২ গ্রন্থে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন । সহিহ মাওকুফ, তাওযিহুল আহকাম ৫/১৩১ পৃঃ- হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ
Leave a Reply