হিবা
হিবা । পিতা কর্তৃক সন্তানকে দান করে তা ফেরত নেয়া >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩২, হিবা, হাদীস (৩৬৮৮ – ৩৭০৫)
১.পরিচ্ছেদঃ শরীকী বস্তু হিবা করা
২.পরিচ্ছেদঃপিতা কর্তৃক সন্তানকে দান করে তা ফেরত নেয়া এবং এ বিষয়ের হাদীসে বর্ণনাকারীদের বিরোধ
৩.পরিচ্ছেদঃ এ বিষয়ে আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
৪.পরিচ্ছেদঃ দান করে পুনঃগ্রহণকারী সম্পর্কে তাউস [রাঃআঃ] -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
১.পরিচ্ছেদঃ শরীকী বস্তু হিবা করা
৩৬৮৮. আমর ইব্ন শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন ঃ [একদা] আমরা রাসুলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট ছিলাম, এমন সময় হাওয়াবিন গোত্রের এক প্রতিনিধি দল তাহাঁর নিকট এসে বললো ঃ হে মুহাম্মদ! আমরা আরবের একটি গোত্র। আমাদের উপর যে বিপদ আপতিত হইয়াছে, তা আপনার নিকট গোপন নয়। অতএব আপনি আমাদের উপর অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ আপনার উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি বলিলেন ঃ তোমরা দুইটার যে কোন একটা গ্রহণ কর। হয়তো তোমাদের মা-দৌলত নিয়ে যাও, অথবা তোমাদের নারী ও সন্তানদের নিয়ে যেতে পার। তারা বললো ঃ আপনি আমাদেরকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন একটা গ্রহণ করিতে বলেছেন। অতএব আমরা আমাদের নারী ও সন্তানদের নিতে চাই। রাসুলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম] বলিলেন ঃ [গণীমতের মালে] আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের যে অংশ রয়েছে, আমি তা তোমাদেরকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমি যুহরের নামাজ আদায় করলে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে যে, আমরা রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর উসিলায় মুমিনদের [অথবা মুসলমানদের] নিকট আমাদের নারী এবং সম্পদের ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করছি। বর্ণনাকারী বলেন ঃ লোকেরা যুহরের নামাজ আদায় করলে তারা ঐরূপই বললো। তখন রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন ঃ যা আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের অংশ রয়েছে, তা তোমাদের। এ কথা শুনে মুহাজিরগণ বলিলেন ঃ আমাদের অংশ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্য। আনসারগণও বলিলেন ঃ আমাদের অংশও রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্য। আকরা ইবনি হাবিস [রাঃআঃ] বলিলেন ঃ আমি এবং বনূ তামীম এতে রাযী নই। উয়ায়না ইবনি হিসন [রাঃআঃ] বললেনঃ আমি এবং বনু ফাযারাও এতে সম্মত নই। আব্বাস ইবনি মিরদাস [রাঃআঃ] বলিলেন ঃ আমি এবং বনূ সুলায়ম এতে নেই। তখন বনূ সুলায়ম-এর লোক দাঁড়িয়ে বলিল, তুমি মিথ্যা বলছ, আমাদের যা কিছু রয়েছে তা রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্য। তখন রাসুলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ হে লোক সকল! তাহাদের নারীদের এবং সন্তানদের ফেরত দিয়ে দাও। আর যে ব্যক্তি বিনিময় ব্যতীত দিতে না চায়, মহান মহীয়ান আল্লাহ আমাদের সর্বপ্রথম যে গনীমত দিবেন তা থেকে তাকে ছয়টি উট দেয়া হইবে। এই বলে তিনি তাহাঁর বাহনে আরোহণ করিলেন। কিন্তু লোকেরা তাহাঁর পিছু নিল [এবং ঘেরাও করে রাখল] এবং তারা বলিতে লাগলো ঃ আমাদের গণীমতের মাল বন্টন করে দিন। লোকেরা তাঁকে একটি গাছের নিকট নিয়ে গেল এবং গাছে তাহাঁর চাদর আটকে দিল। তিনি বলিলেন ঃ হে লোকসকল! আমার চাদর আমাকে ফিরিয়ে দাও। আল্লাহর শপথ! যদি তিহামার [মরু আরবের] গাছের সমসংখ্যক জন্তু আমার নিকট থাকে, তবে তা আমি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দেব। তোমরা আমাকে কৃপণ, ভীরু ও মিথ্যাবাদী পাবে না। পরে তিনি একটি উটের নিকট এসে তার কুঁজের পশম তুলে নিয়ে বলিলেন ঃ শোন, আমি তোমাদের এই গণীমতের মারের কিছুই নেব না, এমনকি পশমও নেব না; শুধু খুমুসই [পঞ্চমাংশ] নিতে চাই আর এই খুমুস বা পঞ্চমাংশও তোমাদের জন্যই ব্যয় হইবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি কিছু চুলের গুচ্ছ নিয়ে তাহাঁর নিকট এসে বললো ঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি এটা এইজন্য নিয়েছি, যেন এর দ্বারা আমি আমার উটের চাদর ঠিক করিতে পারি। তিনি বলিলেন ঃ যা আমার এবং আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের, তা তোমার। সে ব্যক্তি বললো ঃ যখন ব্যাপারটি এই পর্যন্ত পৌঁছেছে, তখন আমার এর প্রয়োজন নেই। সে চুলের গুচ্ছ ফেলে দিল। এরপর রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন ঃ হে লোক সকল! তোমাদের যাহার কাছে যা আছে, এমন কি সুঁই-সুতা পর্যন্ত ফেরত দাও। কেননা গণীমতের মাল চুরি করা লজ্জার ব্যাপার; আর কিয়ামতের দিন তা তার [চোরের] জন্য লজ্জা ও অপমানের কারণ হইবে।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃপিতা কর্তৃক সন্তানকে দান করে তা ফেরত নেয়া এবং এ বিষয়ের হাদীসে বর্ণনাকারীদের বিরোধ
৩৬৮৯. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতার সূত্রে তাহাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ কেউ যেন কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত না নেয়, কিন্তু পিতা তার সন্তানকে [দান করে তা ফেরত নিতে পারবে]। কেননা, যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ ব্যক্তির মত, যে বমি করে তা পুনরায় ভক্ষণ করে।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩৬৯০. ইব্ন উমার ও ইব্ন আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা হাদীসটি নাবী [সাঃআঃ] পর্যন্ত উন্নীত [মারফু] করিয়াছেন, তিনি {রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]} বলেছেন ঃ কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে কাউকে দান করে তা ফেরত নেবে। কিন্তু পিতা যা সে তার সন্তানকে দান করে [তা নিতে পারে]। কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত নেয়া ঐ কুকুরের মত যে, অত্যাধিক খাওয়ার পর বমি করে, সে বমি আবার খায়।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরৎ নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার খায়।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯২. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ কাউকে কিছু দান করে তা ফেরত নেয়া কারো জন্য বৈধ নয়। কিন্তু [পিতা] পুত্র হইতে [ফেরত নিতে পারে]। তাউস [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি ছোটবেলায় নিজের বমি লেহনকারী কথাটি শুনতাম, কিন্তু বুঝতে পারিনি যে, {রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এটা দান ফেরত গ্রহণকারীর} উপমা স্বরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন ঃ যে এরূপ করে, তার উদাহরণ ঐ কুকুরের ন্যায় যে খেয়ে বমি করে, এরপর সে তা আবার খায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩.পরিচ্ছেদঃ এ বিষয়ে আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
৩৬৯৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যে ব্যক্তি দানের পর তা আবার ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে তা আবার ভক্ষণ করে।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যে ব্যক্তি কিছু দান [প্রদান] করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে পুনরায় সে বমি ভক্ষণ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার ভক্ষণ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ দান করে যে ফেরত নেয়, সে বমি করে সে বমি ভক্ষণকারীর ন্যায়।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী বমি করে তা পুনঃভক্ষণকারীর ন্যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ কু দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী বমি করে সে বমি পুনঃ ভক্ষণকারীর ন্যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৯৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ মন্দ উপমা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী, বমি করে তা পুনঃ ভক্ষণকারী কুকুরের ন্যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭০০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ মন্দ উদাহরণ আমাদের জন্য স্বীকার্য নয়। দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে সে বমি পুনঃভক্ষণ করে।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ দান করে পুনঃগ্রহণকারী সম্পর্কে তাউস [রাঃআঃ] -এর হাদীসে বর্ণনায় বিরোধ
৩৭০১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ দান করে যে ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে সে বমি আবার খায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭০২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ দান করে ফেরত গ্রহণকারী ব্যক্তি ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে সে বমি ভক্ষণ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭০৩. ইবনি উমার ও ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ কারো জন্য বৈধ নয়, যে সে কিছু দান করে তা ফেরত নিবে। তবে পিতা [-র জন্য আলাদা] যা সে তার সন্তানকে দান করে। আর যে ব্যক্তি কিছু দান করে তা ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের মত যে পেটপুরে খাওয়ার পর বমি করে এবং সে বমি আবার খেয়ে ফেলে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭০৪. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ দান করে তা পুনঃ গ্রহণ করা কোন ব্যক্তির জন্যই বৈধ নয়, পিতা ব্যতীত। তাউস [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি ছেলেদেরকে শুনতাম “হে বমি লেহনকারী!” কিন্তু আমার জানা ছিল না যে, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তা উপমা স্বরূপ বলেছেন। পরে আমরা জানিতে পারি যে, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিতেন, দান করে পরে তা ফেরত নেয়। এরপর তিনি একটি কথা বলিলেন, যাহার অর্থ হলো ঃ [দান করে ফেরত গ্রহণকারী] ঐ কুকুরের মত, যে নিজ বমি আবার ভক্ষণ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩৭০৫. হানযালা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছেন, এমন লোক আমাদের অবহিত করিয়াছেন, যিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখিতে পেরেছেন। {তা এই যে, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন} ঃ যে ব্যক্তি দান করে ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায়, যে খেয়ে বমি করে, তারপর আবার সে বমি খেয়ে ফেলে।
হিবা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply