[রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর] হিজরতের বর্ণনা
[রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর] হিজরতের বর্ণনা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৯. অধ্যায়ঃ [রসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর] হিজরতের বর্ণনা
৭৪১১ বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] আমার পিতার কাছে আসলেন এবং তাহাঁর থেকে একটি সাওয়ারী ক্রয় করিলেন। তারপর তিনি আমার পিতা আযিবকে বলিলেন, তুমি তোমার ছেলেকে আমার সঙ্গে পাঠাও, সে তা আমার সাথে বহন করে আমার বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়ে আসবে। আমার পিতা আমাকে বলিলেন, তুমি তা উঠিয়ে নাও। আমি সেটা উঠিয়ে নিলাম। অতঃপর মূল্য আদায়ের জন্য আমার পিতাও তাহাঁর সঙ্গে বের হলেন। পথিমধ্যে আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আবু বকর! যে রাতে আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সফর করেছিলেন তখন আপনারা কি করেছিলেন, তা আমার কাছে আপনি খুলে বলুন। জবাবে তিনি বলিলেন, তা হলে শোন, আমরা পুরো রাত সফর করেছি। পরিশেষে যখন দিন হলো, ঠিক দুপুরের সময় হলে রাস্তা সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে গেল এবং কোন লোকজন আর রাস্তা অতিক্রম করছে না, তখন আমরা বৃহদাকায় পাথর দেখিতে পেলাম। এর ছায়া মাটিতে পড়ছিল এবং তখন পর্যন্ত সেখানে রৌদ্র আসেনি। তাই আমরা সেখানে গেলাম এবং আমি নিজে পাথরটির নিকট গিয়ে রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘুমানোর জন্য একটু স্থান সমান্তরাল করলাম। এরপর আমি একটি কম্বল তাতে বিছিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন, আমি এলাকাটা একটু পর্যবেক্ষণ করে আসি। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমি তাহাঁর পার্শ্ববর্তী স্থানসমূহে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। হঠাৎ একজন বকরীর রাখালকে দেখিতে পেলাম। সেও আমাদের মতো একই উদ্দেশে পাথরটির দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং তাকে প্রশ্ন করলাম, হে! তুমি কার গোলাম? সে বলিল, আমি শহরবাসী এক লোকের গোলাম। আমি বললাম, তোমার বকরীতে দুধ আছে কি? সে বলিল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তাহলে আমার জন্য দুধ দোহন করিবে কি? সে বলিল, হ্যাঁ করব। তারপর সে একটি বকরী নিয়ে এলো। তখন আমি তাকে বললাম, প্রথমে পশম, মাটি এবং খড়কুটা হইতে স্তনটি একবার ঝেড়ে নাও। রাবী বলেন, এ সময় আমি বারা ইবনি আযিবকে এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে ঝাড়তে দেখেছি। অতঃপর সে কাষ্ঠের একটি পেয়ালাতে আমার জন্য অল্প দুধ দোহন করিল। আবু বকর [রাদি.] বলেন, আমার কাছে একটি পাত্র ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পান করা ও ওযূ করার জন্য তাতে আমি পানি রাখতাম। তারপর আমি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আসলাম। কিন্তু তাকে ঘুম থেকে জাগাতে আমার ইচ্ছা হল না। তবে তাহাঁর প্রতি আমি চেয়ে দেখি যে, তিনি নিজে নিজেই জেগে গেছেন। তারপর দুধের মাঝে আমি পানি মিশালাম। ফলে তা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! এ থেকে একটু দুধ পান করে নিন। তিনি দুধ পান করিলেন, তাতে অত্যন্ত খুশী হলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, এখনো কি যাত্রার সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লে আমরা পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম। এদিকে সুরাকাহ্ ইবনি মালিক আমোদের পিছু ধাওয়া করিল। আমরা তখন এক শক্ত ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমাদেরকে তো ধরে ফেলা হলো। তিনি বলিলেন, চিন্তান্বিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। তখন রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] তার উপর বদ্-দুআ করিলেন। এতে তার ঘোড়া পেট পর্যন্ত জমিনে ধ্বসে গেল। আমি তা দেখিতে পাচ্ছিলাম। তারপর সে বলিল, আমি জানি, তোমরা আমার জন্য বদ্-দুআ করেছ। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তো তোমাদের সন্ধানে বের হয়েছিলাম, এখন আমি তোমাদের সন্ধানকারীকে ফিরিয়ে দিবো। সুতরাং তোমরা আমার জন্য দুআ করো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহর কাছে দুআ করিলেন। এতে সে মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর সে ফিরে গেল এবং যে কোন কাফিরের সাথে সাক্ষাৎ হলে সে বলত, এদিকে আমি সব দেখে এসেছি। এদিকে কোন কিছুই নেই। মোটকথা, যার সাথেই তার দেখা হত সে তাকে ফিরিয়ে দিত। আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] বলেন, সুরাকাহ্ তার ওয়াদা পুরো করেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৫]
৭৪১২ বারা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] আমার পিতার কাছ থেকে তের দিরহামের বিনিময়ে একটি হাওদা কিনেছিলে। তারপর তিনি যুহায়র-এর সানাদে ইসহাক্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ইসরাঈল উসমান ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে বর্ণনা করিয়াছেন যে, সে কাছাকাছি হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বদ্-দুআ করিলেন। এতে পেট পর্যন্ত তার ঘোড়ার পা জমিনে গেড়ে যায়। সুরাকাহ্ সেখান হইতেই লাফিয়ে পড়ল এবং [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উদ্দেশ্য করে] বলিল, হে মুহাম্মাদ! আমি জানি, এটা তোমারই কাজ। আমি যে বিপদে আছি এ থেকে যেন আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেন, এ বিষয়ে তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করো। আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমার পেছনে যারাই তোমার সন্ধানে থাকিবে আমি তাদের থেকে তোমার অবস্থান লুক্কায়িত করব এবং এ হচ্ছে আমার তীরদানী, এ থেকে তুমি একটি তীর নিয়ে যাও। কিছু দূর যেতেই অমুক স্থানে তুমি আমার উট ও গোলামদেরকে দেখিতে পাবে, সেখান থেকে তুমি তোমার প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ে যাবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার উটের আমার কোন দরকার নেই। আবু বকর [রাদি.] বলেন, রাতে আমরা মাদীনায় পৌঁছলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কার গৃহে অবস্থান করবেন, এ নিয়ে লোকেদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হলো। তখন তিনি বলিলেন, আমি আবদুল মুত্তালিবের মামার বংশ বানূ নাজ্জারে অবস্থান করব এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব। অতঃপর পুরুষ লোকেরা ও মহিলাগণ নিজ নিজ গৃহের ছাদে এবং বালক ও ক্রীতদাসগণ পথে পথে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। সকালে অভ্যর্থনা জানিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগল যে, হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রসূল! হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]!
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৬]
Leave a Reply