হারামকৃত কাজ, ক্রয়, যাদু, পোশাক, মহামারী ইত্যাদি

হারামকৃত কাজ, ক্রয়, যাদু, পোশাক, মহামারী ইত্যাদি

হারামকৃত কাজ, ক্রয়, যাদু, পোশাক, মহামারী ইত্যাদি >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

হারামকৃত কাজ, ক্রয়, যাদু, পোশাক, মহামারী ইত্যাদি

পরিচ্ছেদ – ৩৫৫ঃ ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত কিছু বিধি-নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩৫৬ঃ শরীয়ত-সম্মত খাত ছাড়া, অন্য খাতে ধন-সম্পদ নষ্ট করা নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ – ৩৫৭ঃ কোন মুসলমানের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা হারাম, তা সত্যিসত্যি হোক অথবা ঠাট্টা ছলেই হোক। অনুরূপভাবে নগ্ন তরবারি দেওয়া-নেওয়া করা নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ – ৩৫৮ঃ আযানের পর বিনা ওযরে ফরয নামায না পড়ে মসজিদ থেকে চলে যাওয়া মাকরূহ
পরিচ্ছেদ – ৩৫৯ঃ বিনা কারণে সুগন্ধি উপহার প্রত্যাখ্যান করা মাকরূহ
পরিচ্ছেদ – ৩৬০ঃ কারো মুখোমুখি প্রশংসা করা মাকরূহ
পরিচ্ছেদ – ৩৬১ ঃমহামারী-পীড়িত গ্রাম-শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩৬২ঃ যাদু-বিদ্যা কঠোরভাবে হারাম
পরিচ্ছেদ – ৩৬৩ঃ অমুসলিম দেশে বা অঞ্চলে কুরআন মাজীদ সঙ্গে নিয়ে সফর করা নিষেধ; যদি সেখানে তার অবমাননা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে
পরিচ্ছেদ – ৩৬৪ঃ পানাহার, পবিত্রতা অর্জন তথা অন্যান্য ক্ষেত্রে সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার করা হারাম
পরিচ্ছেদ – ৩৬৫ঃ পুরুষের জন্য জাফরানী রঙের পোশাক হারাম
পরিচ্ছেদ – ৩৬৬ঃ রাত পর্যন্ত সারাদিন কথা বন্ধ রাখা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩৬৭ঃ নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা বা নিজ মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব বলে দাবী করা হারাম
পরিচ্ছেদ – ৩৬৮ঃ আল্লাহ আয্যা অজাল্ল ও তাহাঁর রসূল সাঃআঃ কর্তৃক নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ
পরিচ্ছেদ – ৩৬৯ঃ হারামকৃত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়লে কী বলা ও করা কর্তব্য

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

 ﴿ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠ ﴾ [الاعراف: ١٩٩] 

অর্থাৎ যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা ফুস্স্বিলাত ৩৬ আয়াত]

তিনি আরও বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [الاعراف: ٢٠٠] 

অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা সাবধান হয়, যখন শয়তান তাহাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আত্ম-সচেতন হয় এবং তৎক্ষণাৎ তাহাদের চক্ষু খুলে যায়। [সূরা আরাফ ২০১ আয়াত]

তিনি আরও বলেছেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ أُوْلَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَجَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ١٣٦ ﴾ [ال عمران: ١٣٥،  ١٣٦] 

অর্থাৎ যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না। ঐ সকল লোকের প্রতিদান তাহাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা এবং জান্নাত; যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা  চিরকাল থাকিবে। এবং [সৎ]কর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম। [সূরা আলে ইমরান ১৩৫ -১৩৬ আয়াত]

তিনি আরও বলেছেন,

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]

অর্থাৎ তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তওবা [প্রত্যাবর্তন] কর, যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার। [সূরা নূর ৩১ আয়াত]

পরিচ্ছেদ – ৩৫৫: ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত কিছু বিধি-নিষেধ

১৭৮৪. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাঃআঃ নিষেধ করিয়াছেন, যেন কোন শহুরে লোক কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে; যদিও সে তার সহোদর ভাই হয়।’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৬১, মুসলিম ১৫২৩, নাসাঈ ৪৪৯২-৪৪৯৪, আবু দাঊদ ৩৪৪০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৮৫. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘বাজারে নামার পূর্বে কোন পণ্য (বাজারের বাইরে) আগে বেড়ে ক্রয় করিবে না।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৪৯, ২১৫০, ২১৬৪, মুসলিম ১৫১৮, তিরমিজী ১২২০, ইবনু মাজাহ ২১৮০, ২২৪১, আহমাদ ৪০৮৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৮৬. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘(বাজারের) বাইরে গিয়ে পণ্য নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাৎ করিবে না। আর কোন শহুরে লোক যেন কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে।’’ ত্বাউস তাঁকে বললেন, ‘কোন শহুরে লোক যেন কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে’ এর অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘সে যেন তার দালালি না করে।’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৫৮, ২১৬৩, ২২৭৪, মুসলিম ১৫২১, নাসাঈ ৪৫০০, আবু দাঊদ ৩৪৩৯, ইবনু মাজাহ ২১৭৭, আহমাদ ৩৪৭২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৮৭. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ গ্রাম্য লোকের পণ্যদ্রব্য বেচতে শহুরে লোককে নিষেধ করিয়াছেন। (তিনি বলেছেন,) ‘‘ক্রেতাকে প্রতারিত ক’রে মূল্য বৃদ্ধির জন্য দালালি করো না। কোন ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করিবে না। আর কোন ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর নিজের প্রস্তাব দেবে না। কোন মহিলা তার বোনের [সতীনের] তালাক চাইবে না; যাতে সে তার পাত্রে যা আছে তা ঢেলে ফেলে দেয়। (এবং একাই স্বামী-প্রেমের অধিকারিণী হয়।)’’

অন্য বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ পণ্য ক্রয় করার জন্য (বাজারের) বাইরে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে, মুহাজির হয়ে মরুবাসীর পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করতে, (বিয়ের সময়) মহিলার তার বোনের (সতীনকে) তালাক দিতে হবে এরূপ শর্তারোপ করতে এবং (মুসলিম) ভাইয়ের দর-দাম করার উপর দর-দাম করতে বারণ করিয়াছেন। আর তিনি (প্রতারণার দালালি ক’রে) পণ্যের দাম বাড়াতে এবং কয়েকদিন ধরে পশুর স্তনে দুধ জমা রেখে তা ফুলিয়ে রাখতে নিষেধ করিয়াছেন।

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৪০, ২১৪৮, ২১৫০, ২১৫১, ২১৬০, ২১৬০, ২১৬২, ২৭২৩, ২৭২৭, ৫১৫২, ৬৬০১, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫, তিরমিজী ১১২৪, ১১৯০, ১২২১, ১২২২, ১২৫১, ১২৫২, ১৩০৪, নাসাঈ ৩২৩৯-৩২৪২, ৪৪৮৭-৪৪৮৯, ৪৪৯১, ৪৪৯৬, ৪৫০২, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবু দাঊদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৩৪৪৪, ৩৪৪৫, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, ২১৭৫, ২১৭৮, ২২৩৯, আহমাদ ৭২০৭, ৭২৬৩, ৭২৭০, ৭৩৩৩, ৭৪০৬, ৭৪৭১, ৭৬৪১, ৮০৩৯, ৯০১৩, ৯০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১১১১, দারেমী ২১৭৫, ২৫৫৩, ২৫৬৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৮৮. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তার মুসলিম ভাইয়ের বিবাহ প্রস্তাবের উপর নিজের বিবাহ-প্রস্তাব না দেয়। কিন্তু যদি সে তাকে সম্মতি জানায় (তবে তা বৈধ)।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৩৯, ২১৬৫, ১৫৪২, মুসলিম ১৪১২, তিরমিজী ১২৯২, নাসাঈ ৩২৪৩, ৪৫০৪, আবু দাঊদ ২০৮১, ৩৪৩৬, ইবনু মাজাহ ২১৭১, আহমাদ ৪৭০৮, মুওয়াত্তা মালিক ১১১২, ১৩৯০, দারেমী ২১৭৬, ২৫৬৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৮৯. উক্ববাহ ইবনে আমের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। কোন মু’মিনের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিজের ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলবে। আর এটাও বৈধ নয় যে, সে ভাইয়ের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর নিজের বিবাহ-প্রস্তাব দেবে; যতক্ষণ না সে বর্জন করে।’’

(মুসলিম ১৪১৪, ইবনু মাজাহ ২২৪৬, আহমাদ ১৬৮৭৬, দারেমী ২৫৫০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৫৬: শরীয়ত-সম্মত খাত ছাড়া, অন্য খাতে ধন-সম্পদ নষ্ট করা নিষিদ্ধ

১৭৯০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পছন্দ করেন এবং তিনটি জিনিস অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পছন্দ করেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন করো না এবং আল্লাহর রজ্জুকে জামাআতবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না। আর তিনি তোমাদের জন্য যা অপছন্দ করেন তা হল, অহেতুক আলোচনা-সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া, অধিকাধিক প্রশ্ন করা এবং ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা।’’

(মুসলিম ১৭১৫, আহমাদ ৮১৩৪, ৮৫০১, ৮৫৮১, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৬৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৯১. মুগীরাহ ইবনে শু‘বাহর লেখক অর্রাদ হইতে বর্ণিতঃ

মুআবিয়া রাঃআঃ-এর নামে একটি পত্রে মুগীরা আমার দ্বারা এ কথা লেখালেন যে, নবী সাঃআঃ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর এই দো‘আ পড়তেন,

اَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللهم لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ

‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ্।’’ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না।

(তাছাড়া তাতে এ কথাও লিখালেন যে,) ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ অহেতুক কথাবার্তা বলতে, ধন-সম্পদ বিনষ্ট করতে এবং অধিকাধিক প্রশ্ন করতে নিষেধ করতেন। আর তিনি মাতা-পিতার সাথে অবাধ্যাচরণ করতে, মেয়েদেরকে জীবন্ত প্রোথিত করতে এবং প্রাপকের ন্যায্য অধিকার রোধ করতে ও অনধিকার বস্তু তলব করতেও নিষেধ করতেন।’ (সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯০৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসাঈ ১৩৪১-১৩৪৩, আবু দাঊদ ১৫০৫, আহমাদ ১৭৬৭৩, ১৭৬৮১, ১৭৬৯৬, ১৭৭১৪, ১৭৭১৮, ১৭৭৩৪, ১৭৭৬৬, দারেমী ১৩৪৯, ২৭৫১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৫৭: কোন মুসলমানের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা হারাম, তা সত্যি সত্যি হোক অথবা ঠাট্টা ছলেই হোক। অনুরূপভাবে নগ্ন তরবারি দেওয়া-নেওয়া করা নিষিদ্ধ

১৭৯২.আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন তার কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন ক’রে ইশারা না করে। কেননা, সে জানে না হয়তো শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে দেবে, ফলে (মুসলিম হত্যার অপরাধে) সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭০৭২, মুসলিম ২৬১৭, তিরমিজী ২১৬৩, আহমাদ ২৭৪৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৯৩. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নগ্ন তরবারি পরস্পর দেওয়া-নেওয়া করতে নিষেধ করিয়াছেন। (কারণ, তাতে হাত-পা কেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে)।

[আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান] (তিরমিজী ২১৬৩, আবু দাঊদ ২৫৮৮, আহমাদ ১৩৭৮৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৫৮: আযানের পর বিনা ওযরে ফরয নামায না পড়ে মসজিদ থেকে চলে যাওয়া মকরূহ

১৭৯৪. আবু শা’সা’ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা (একবার) আবু হুরাইরা রাঃআঃ-এর সঙ্গে মসজিদে বসে ছিলাম। (এমন সময়) মুআয্-যিন আযান দিল। তখন একটি লোক মসজিদ থেকে চলে যেতে লাগল। আবু হুরাইরা রাঃআঃ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, শেষ পর্যন্ত সে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। অতঃপর আবু হুরাইরা রাঃআঃ বললেন, ‘এই লোকটি আবুল কাসেম সাঃআঃ-এর অবাধ্যাচরণ করল।’

(মুসলিম ৬৫৫, তিরমিজী ২০৪, নাসাঈ ৬৮৩, ৬৮৪, আবু দাঊদ ৫৩৬, ইবনু মাজাহ ৭৩৩, আহমাদ ৯১১৮, ১০৫৫০, দারেমী ১২০৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৫৯: বিনা কারণে সুগন্ধি উপহার প্রত্যাখ্যান করা মকরূহ

১৭৯৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যার কাছে সুগন্ধি পেশ করা হবে, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা হাল্কা বহনযোগ্য সুবাস।’’

(মুসলিম ২২৫৩, নাসাঈ ৫২৬০, আবু দাঊদ ৪১৭২, আহমাদ ৮০৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৯৬. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ কখনো সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৮২, ৫৯২৯, তিরমিজী ২৭৮৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬০: কারো মুখোমুখি প্রশংসা করা মকরূহ

১৭৯৭. আবু মুসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির (সামনা-সামনি) অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বললেন, ‘‘তুমি লোকটার পৃষ্ঠ কর্তন করলে অথবা তাকে ধ্বংস ক’রে দিলে।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬৬৩, ৬০৬০, মুসলিম ৩০০১, আহমাদ ১৯১৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৯৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ-এর নিকট এক ব্যক্তি অন্য একজনের (তার সামনে) ভাল প্রশংসা করলে নবী সাঃআঃ বললেন, ‘হায় হায়! তুমি তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে!’ এরূপ বার-বার বলার পর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কাউকে একান্তই তার সাথীর প্রশংসা করতে হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি ওকে এরূপ মনে করি’ – যদি জানে যে, সে প্রকৃতই এরূপ – ‘এবং আল্লাহ ওর হিসাব গ্রহণকারী। আর আল্লাহর (জ্ঞানের) সামনে কাউকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র ঘোষণা করা যায় না।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬৬২, ৬০৬১, ৬১৬২, মুসলিম ৩০০০, আবু দাঊদ ৪৮০৫, আহমাদ ১৯৯০৯, ১৯৯৪৯, ১৯৯৫৫, ১৯৯৭১, ২৭৫৩৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৭৯৯. হাম্মাম ইবনে হারেস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মিক্বদাদ রাঃআঃ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন; এক ব্যক্তি উসমান রাঃআঃ-এর সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করলে মিক্বদাদ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছিটাতে শুরু করলেন। তখন উসমান তাঁকে বললেন, ‘কী ব্যাপার তোমার?’ তিনি বললেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা (মুখোমুখি) প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ো।’’

(মুসলিম ৩০০২, তিরমিজী ২৩৯৩, আবু দাঊদ ৪৮৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৭৪২, আহমাদ ২৩৩১১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬১ : মহামারী-পীড়িত গ্রাম-শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন করা নিষেধ

১৮০০. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃআঃ সিরিয়ার দিকে যাত্রা করলেন। অতঃপর যখন তিনি ‘সার্গ্’ (সউদিয়া ও সিরিয়ার সীমান্ত) এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সাথে সৈন্যবাহিনীর প্রধানগণ – আবু উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ ও তাঁর সাথীগণ – সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানান যে, সিরিয়া এলাকায় (প্লেগ) মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ইবনে আব্বাস রাঃআঃ বলেন, তখন উমার আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক পর্যায়ে যারা হিজরত করেছিলেন সেই মুহাজিরদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। উমার রাঃআঃ তাঁদেরকে শাম দেশে প্রাদুর্ভূত মহামারীর কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে সুপরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। কেউ বললেন, ‘আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন। তাই তা থেকে ফিরে যাওয়াকে আমরা পছন্দ করি না।’ আবার কেউ কেউ বললেন, ‘আপনার সাথে রয়েছেন অবশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নবী সাঃআঃ-এর সাহাবীগণ। কাজেই আমাদের কাছে ভাল মনে হয় না যে, আপনি তাঁদেরকে এই মহামারীর মধ্যে ঠেলে দেবেন।’ উমার রাঃআঃ বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর তিনি বললেন, ‘আমার নিকট আনসারদেরকে ডেকে আনো।’ সুতরাং আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম এবং তিনি তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই তাঁরাও মতভেদ করলেন। সুতরাং উমার রাঃআঃ বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর আমাকে বললেন, ‘এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যারা মক্কা বিজয়ের বছর হিজরত করেছিলেন তাঁদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তখন তাঁরা পরস্পরে কোন মতবিরোধ করলেন না। তাঁরা বললেন, ‘আমাদের রায় হল, আপনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাদেরকে এই মহামারীর কবলে ঠেলে দেবেন না।’ তখন উমার রাঃআঃ লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, ‘আমি ভোরে সওয়ারীর পিঠে (ফিরে যাওয়ার জন্য) আরোহণ করব। অতএব তোমরাও তাই কর।’ আবু উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ রাঃআঃ বললেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তকদীর থেকে পলায়ন করার জন্য ফিরে যাচ্ছেন?’ উমার রাঃআঃ বললেন, ‘হে আবু উবাইদাহ! যদি তুমি ছাড়া অন্য কেউ কথাটি বলত।’ আসলে উমার তাঁর বিরোধিতা করতে অপছন্দ করতেন। বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা আল্লাহর তকদীর থেকে আল্লাহর তকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তুমি বল তো, তুমি কিছু উঁটকে যদি এমন কোন উপত্যকায় দিয়ে এস, যেখানে আছে দু’টি প্রান্ত। তার মধ্যে একটি হল সবুজ-শ্যামল, আর অন্যটি হল বৃক্ষহীন। এবার ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ প্রান্তে চরাও, তাহলে তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে। আর যদি তুমি বৃক্ষহীন প্রান্তে চরাও তাহলেও তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে?’ বর্ণনাকারী (ইবনে আব্বাস রাঃআঃ) বলেন, এমন সময় আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃআঃ এলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে পলায়ন ক’রে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।’’ সুতরাং (এ হাদীস শুনে) উমার রাঃআঃ আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং (মদিনা) ফিরে গেলেন।

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭২৯, ৫৭৩০, ৬৯৭৩, মুসলিম ২২১৯, আবু দাঊদ ৩১০৩, আহমাদ ১৬৬৯, ১৬১৮, ১৬৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৫, ১৬৫৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮০১. উসামা ইবনে যায়েদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা কোন ভূখণ্ডে প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়তে শুনবে, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভূখণ্ডে তোমরা যদি থাক, তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৪৭৩, ৫৭২৮, ৬৯০৪, মুসলিম ২২১৮, তিরমিজী ১০৬৫, আহমাদ ২১২৪৪, ২১২৫৬, ২১২৯১, ২১২৯৯, ২১৩০৪, ২১৩১১, ২১৩২০, ২১৩৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬২: যাদু-বিদ্যা কঠোরভাবে হারাম

১৮০২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা সাত প্রকার সর্বনাশী কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘সেগুলো কী কী হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, (১) ‘‘আল্লাহর সাথে শির্ক করা। (২) যাদু করা। (৩) অন্যায়ভাবে এমন জীবন হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করিয়াছেন। (৪) সুদ খাওয়া। (৫) এতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা। (৬) ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন ক’রে পলায়ন করা। (৭) সতী-সাধ্বী উদাসীনা মু’মিনা নারীদের চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক আরোপ করা।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৬৬, ২৭৬৭, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, মুসলিম ৮৯, নাসাঈ ৩৬৭১, আবু দাঊদ ২৮৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৩: অমুসলিম দেশে বা অঞ্চলে কুরআন মাজীদ সঙ্গে নিয়ে সফর করা নিষেধ; যদি সেখানে তার অবমাননা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে

১৮০৩. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ শত্রুর দেশে কুরআন সঙ্গে নিয়ে সফর করতে নিষেধ করিয়াছেন।’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯০, মুসলিম ১৮৬৯, আবু দাঊদ ২৬১০, ইবনু মাজাহ ২৮৭৯, ২৮৮০, আহমাদ ৪৪৯৩, ৪৫১১, ৪৫৬২, ৫১৪৮, ৫২৭১, ৫৪৪২, ৬০৮৯, মুওয়াত্তা মালিক ৯৭৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৪: পানাহার, পবিত্রতা অর্জন তথা অন্যান্য ক্ষেত্রে সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার করা হারাম

১৮০৪. উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে তার উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান করে।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৬৩৪, মুসলিম ২০৬৫, ইবনু মাজাহ ৩৪১৩, আহমাদ ২৬০, ২৮, ২৬০৪২, ২৬৫৫, ২৬০৭১, মুওয়াত্তা মালিক ১৭১৭, দারেমী ২১২৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮০৫. হুযাইফাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ আমাদেরকে নিষেধ করিয়াছেন, মোটা ও পাতলা রেশমের বস্ত্র পরিধান করতে এবং সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে। আর তিনি বলেছেন, ‘‘উল্লিখিত সামগ্রীগুলো দুনিয়াতে ওদের (কাফেরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের (মুসলমানদের) জন্য।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৮৩১, ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩৭, মুসলিম ২০৬৭, তিরমিজী ১৮৭৮, নাসাঈ ৫৩০১, আবু দাঊদ ৩৭২৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১৪, ৩৫৯০, আহমাদ ২২৭৫৮, ২২৮০৩, ২২৮৪৮, ২২৮৫৫, ২২৮৬৫, ২২৮৯২, ২২৯২৭, দারেমী ২১৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮০৬. আনাস ইবনে সীরীন হইতে বর্ণিতঃ

‘‘অগ্নিপূজক সম্প্রদায়ের কিছু লোকের কাছে আনাস ইবনে মালেক রাঃআঃ-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় রূপার পাত্রে ‘ফালূযাজ’ (নামক এক প্রকার মিষ্টান্ন) আনা হল। তিনি (আনাস ইবনে মালেক) তা খেলেন না। তাদেরকে বলা হল যে, ওটার পাত্র পাল্টে দাও। সুতরাং তা পাল্টে কাঠের পাত্রে রাখা হল এবং তা তাঁর নিকট হাজির করা হল। তখন তিনি তা খেলেন।’’

(বাইহাকী হাসানসূত্রে) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৫: পুরুষের জন্য জাফরানী রঙের পোশাক হারাম

১৮০৭. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘নবী সাঃআঃ পুরুষদের জন্য জাফরানী রঙ্গের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করিয়াছেন।’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৮৪৬, মুসলিম ২১০১, তিরমিজী ২৮১৫, নাসাঈ ৫২৫৬, ৫২৫৭, আবু দাঊদ ৪১৭৯, আহমাদ ১১৫৬৭, ১২৫৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮০৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে ‘আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ আমার পরনে দুটো হলুদ রঙের কাপড় দেখে বললেন, ‘‘তোমার মা কি তোমাকে এ কাপড় পরিধান করতে আদেশ করেছে?’’ আমি বললাম, ‘আমি কি তা ধুয়ে ফেলব?’ তিনি বললেন, ‘‘বরং তা পুড়িয়ে ফেলো।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন, ‘‘এ হল কাফেরদের পোশাক। সুতরাং তুমি এ পরিধান করো না।’’

(মুসলিম ২০৭৭, নাসাঈ ৫৩১৬, ৫৩১৭, আহমাদ ৬৪৭৭, ৬৫০০, ৬৭৮২, ৬৮৯২, ৬৯৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৬: রাত পর্যন্ত সারাদিন কথা বন্ধ রাখা নিষেধ

১৮০৯. আলী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূল সাঃআঃ-এর এই বাণী মনে রেখেছি যে, ‘‘সাবালক হবার পর ইয়াতীম বলা যাবে না এবং কোন দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাক্ বন্ধ রাখা যাবে না।’’

[আবু দাঊদ হাসান সূত্রে] (আবু দাঊদ ২৮৭৩, ইবনু মাজাহ ২৭১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮১০. কায়েস ইবনে আবু হাযেম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর সিদ্দীক রাঃআঃ আহ্মাস গোত্রের যয়নাব নামক এক মহিলার নিকট এসে দেখলেন যে, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, ‘ওর কি হয়েছে যে, কথা বলে না?’ তারা বলল, ‘ও নীরব থেকে হজ্জ করার সংকল্প করেছে।’ তিনি বললেন, ‘কথা বল। কারণ, এ (নীরবতা) বৈধ নয়। এ হল জাহেলী যুগের কাজ।’ সুতরাং সে কথা বলতে লাগল।

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৮৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৭: নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা বা নিজ মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব বলে দাবী করা হারাম

১৮১১. সা’দ বিন আবী অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করে, অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৩২৭, ৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩, আবু দাঊদ ৫১১৩, ইবনু মাজাহ ১৬১০, আহমাদ ১৪৫৭, ১৫০০, ১৫৫৬, ১৯৮৮৩, ১৯৯৫৩, দারেমী ২৫৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮১২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন; ‘‘তোমরা তোমাদের পিতাকে অস্বীকার করো না। কারণ, নিজ পিতা অস্বীকার করা হল কুফরী।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৭৬৮, মুসলিম ৬২, আহমাদ ১০৪৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮১৩. ইয়াযীদ ইবনে শারীক ইবনে ত্বারেক হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আলী রাঃআঃ-কে মিম্বরের উপর খুতবা দিতে দেখেছি এবং তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহর কিতাব ব্যতীত আমাদের কাছে আর কোন কিতাব নেই যা আমরা পাঠ করতে পারি। তবে এ লিপিখানা আছে।’ এরপর তা তিনি খুলে দিলেন। দেখা গেল তাতে (রক্তপণে প্রদেয়) উটের বয়স ও বিভিন্ন যখমের দণ্ডবিধি লিপিবদ্ধ আছে। তাতে আরও লিপিবদ্ধ আছে যে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আইর থেকে সওর পর্যন্ত মদীনার হারাম-সীমা। এখানে যে ব্যক্তি (ধর্মীয় বিষয়ে) অভিনব কিছু (বিদআত) রচনা করিবে বা বিদআতীকে আশ্রয় দেবে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা দল এবং সকল মানুষের অভিশাপ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করিবেন না। সমস্ত মুসলিমদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা-দানের মর্যাদা এক। তাদের কোন নিম্নশ্রেণীর মুসলিম (কাউকে আশ্রয় প্রদানের) কাজ করতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি মুসলিমের ঐ কাজকে বানচাল করে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা ও সকল মানুষের লানত। কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করিবেন না। আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বাপ ছাড়া অন্যকে বাপ বলে দাবী করে বা প্রকৃত মনিব ছাড়া অন্য মনিবের সাথে সম্বন্ধ জুড়ে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা ও সমস্ত মানুষের অভিশাপ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত গ্রহণ করিবেন না।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ১১১, ১৮৭০, ৩০৪৭, ৩১৭২, ৩১৮০, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৬৩০০, মুসলিম ১৩৭০, তিরমিজী ১৪১২, ২১২৭, নাসাঈ ৪৭৩৪, ৪৭৩৫, ৪৭৪৪, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, আবু দাঊদ ২০৩৪, ৪৫৩০, ইবনু মাজাহ ২১৬৫৮, আহমাদ ৬০০, ৬১৬, ৭৮৪, ৮০০, ৮৬০, ৮৭৬, ৯৫৭, ৯৬২, ৯৯৪, দারেমী ২৩৫৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৮১৪. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে অন্যকে নিজের বাপ বলে দাবী করে, সে কুফরী করে। যে ব্যক্তি এমন কিছু দাবী করে, যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আর সে যেন নিজস্ব বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি কাউকে ‘কাফের’ বলে ডাকে বা ‘আল্লাহর দুশমন’ বলে, অথচ বাস্তবে যদি সে তা না হয়, তাহলে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৫০৮, মুসলিম ৫১, ইবনু মাজাহ ২৩১৯, আহমাদ ২০৯৫৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ ৩৬৮: আল্লাহ আযযা অজাল্ল ও তাঁর রসূল সাঃআঃ কর্তৃক নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ

১৮১৫.আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহর ঈর্ষা আছে এবং আল্লাহর ঈর্ষা জাগে, যখন মানুষ আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত কোন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২২৩, ৫২২২, তিরমিজী ১১৬৮, আহমাদ ২৬৪০৩, ২৬৪২৯, ২৬৪৩১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ৩৬৯: হারামকৃত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়লে কি বলা ও করা কর্তব্য

১৮১৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কসম ক’রে বলে, ‘লাত ও উয্-যার কসম’, সে যেন

لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলে, ‘এস তোমার সাথে জুয়া খেলি’, সে যেন সাদকাহ করে।’’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮৬০, ৬১০৭, ৬৩০১, ৬৬৫০, মুসলিম ১৬৪৭, তিরমিজী ১৫৪৫, নাসাঈ ৩৭৭৫, আবু দাঊদ ৩২৪৭, ইবনু মাজাহ ২০৯৬, আহমাদ ৮০২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply