ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা

ইসতিহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা

ইসতিহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, চতুর্থ অনুচ্ছেদ – হায়য ও ইসতিহাযা

চতুর্থ অনুচ্ছেদ – হায়য ও ইসতিহাযা

হায়যের সর্বনিম্ন মুদ্দত হলো তিনদিন তিনরাত। এর চেয়ে কম হলে সেটা হবে ইসতিহাযা। কেননা রাসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলিয়াছেন-
কুমারী ও বিবাহিতা নারীর হায়েযের সর্বনিম্ন মুদ্দত হলো তিনদিন ও তিনরাত এবং তার সর্বোচ্চ মেয়াদ দশদিন।
এ হাদীস একদিন একরাত্র মেয়াদ নির্ধারণের ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর বিপক্ষে দলীল।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তার মেয়াদ দুইদিন এবং তৃতীয় দিনের অধিকাংশ। এ হল অধিকাংশকে সমগ্রের স্থলবর্তী করার ভিত্তি অনুযায়ী।

আমাদের দলীল এই যে এটা শরীআত নির্ধারিত সময়সীমা হ্রাস করার শামিল। তার সর্বোচ্চ মেয়াদ হলো দশদিন। এর অতিরিক্ত হবে ইসতিহাযা।
এর দলীল হল আমাদের পূর্ব বর্ণিত হাদীস। আর এ হাদীস পনের দিন মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ[রঃআঃ] এর বিপক্ষে প্রমাণ। পূর্ববর্তী মেয়াদের অতিরিক্ত বা এর কম রক্ত স্রাব হচ্ছে ইসতিহাযা। কেননা শরীআতের নির্ধারিত মেয়াদ অন্য কিছুকে তার সাথে যুক্ত করতে বাধা দেয়। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

স্বচ্ছ-শুভ্রতা দেখার পূর্ব পর্যন্ত ৠতুগ্রস্ত নারী লাল বা হলদে বা ঘোলা রংয়ের যে কোন স্রাব দেখতে পাবে, তা হায়য।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, ঘোলা বর্ণের স্রাব হায়য বলে গণ্য হবে না রক্ত প্রবাহের না হলে। কেননা, উক্ত রক্ত জরায়ু থেকে নির্গত হলে অবশ্যই ঘোলা স্রাব স্বচ্ছ রক্ত প্রবাহের বের হতো। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল হলো আইশা রাঃআঃ সম্পর্কে এই বর্ণনা যে, তিনি স্বচ্ছ-শুভ্রতা ব্যতীত সব কিছুকে হায়য বলে গণ্য করিয়াছেন। আর এ ধরণের বিষয় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে শ্রবণ ছাড়া অবগত হওয়া সম্ভব নয়। আর [আবূ ইউসূফ রাঃআঃ এর দলীলের জবাব এই যে] জরায়ুর মুখ যেহেতু নিম্নগামী, সেহেতু খোলা রক্তটাই আগে বের হয়, কলসের নীচ দিক দিয়ে ফুটো করলে যেমন[নীচের গাদ আগে বের হয়]।

সবুজ রংয়ের স্রাব সম্পর্কে বিশুদ্ধ মত এই যে, স্ত্রী লোকটি ৠতুমতী হলে তা হায়য বলে গণ্য হবে আর রঙের পরিবর্তন খাদ্যের দোষের কারণে হয়েছে বলে ধরা হবে। আর যদি অধিক বয়স্কা হয় যে, সবুজ রং ছাড়া কিছু দেখে না, তাহলে তা উত্সর দোষ বলে ধরা হবে। সুতরাং তা হায়য বলে গণ্য হবে না।
হায়য হায়যগ্রস্তর যিম্মা থেকে নামাজ রহিত করে দেয় এবং সিয়াম পালন তার উপর হারাম করে দেয়। ফলে সাওমের কাযা করিবে এবং সালাতের কাযা করিবে না। কেননা, আইশা রাঃআঃ বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যামানায় আমাদের কেউ যখন হায়য থেকে পবিত্র হতো তখন সে সাওমের কাযা করতো কিন্তু সালাতের কাযা করত না।
আর এ কারণে যে, দ্বিগুণ হওয়ার কারণে সালাতের কাযা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সিয়ামের কাযা করা তেমন কষ্টসাধ্য নয়।

আর ৠতুমতী মসজিদে প্রবেশ করিবে না। জুনুবী ব্যক্তিরও একই হুকুম। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- হায়যগ্রস্ত ও জুনুবী এর জন্য মসজিদে প্রবেশ আমি হালাল রাখি না।
শুধু পার হওয়া ও অতিক্রম করার জন্য প্রবেশের বৈধতা দানের ব্যাপারে এ হাদিসের ব্যাপক ভাষ্য ইমাম শাফিঈ রাঃআঃ এর বিপক্ষে দলীল। আর সে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিবে না। কেননা তাওয়াফ মসজিদের অভ্যন্তরে হয়ে থাকে।
আর তার স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন- আর তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত তোমরা স্ত্রী সঙ্গম করিবে না।
হায়য, জানাবাত ও নিফাসগ্রস্তদের জন্য কুরআন পাঠ করা বৈধ নয়। কেননা, নবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- হায়যগ্রস্ত ও জুনুবী কুরআনের কোন অংশ পাঠ করিবে না। হায়যগ্রস্তকে অনুমতি দানের ব্যাপারে এ হাদীস ইমাম মালিক [রঃআঃ] এর বিপক্ষে দলীল। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

আর এ হাদিসের ব্যাপক ভাষ্য এক আয়াতের কম পরিমাণকেও শামিল করে। সুতরাং উক্ত পরিমাণ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে এ হাদীস তাহাবীর বিপক্ষে দলীল।
এদের জন্য গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করার অনুমতি নেই। আর যে মুদ্রায় কুরআনের কোন সূরা লিখিত রয়েছে, খুতি ছাড়া তা স্পর্শ করা বৈধ নয়। তেমনি যার ওজু নেই, তার জন্য গিলাফ ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ করা বৈধ নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করিবে না। যেহেতু হাদাছ ও জানাবাত দুটোই হাতে অনুপ্রবেশ করে থাকে, তাই স্পর্শের বিধানের ব্যাপারে দুটোই সমান। আর জানাবাত মুখে প্রবেশ করে, কিন্তু হাদাছ প্রবেশ করে না। তাই পাঠের বিধানে দুটোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

আর এ ক্ষেত্রে গিলাফ তা-ই, যা কুরআন থেকে আলাদা থাকে। তা নয়, কুরআনের সাথে জড়িত থাকে। যেমন, বাঁধাই কৃত চামড়া। এ-ই বিশুদ্ধ মত।
আস্তিন দ্বারা কুরআন শরীফ স্পর্শ করা মাকরূহ। এ-ই সহীহ্। কেননা, আস্তিন তো ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত। শরীআত সম্পর্কিত [হাদীস ও ফিকাহ] গ্রন্থাদির বিধান এর বিপরীত। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আস্তিন দ্বারা স্পর্শ করার অনুমতি রয়েছে। এর কারণ, এতে প্রয়োজন রয়েছে। আর [ওজু না থাকা সত্তেও নাবালকের] হাতে কুরআন তুলে দেওয়ায় কোন দোষ নেই। কেননা, তাদের বেলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হিফযে কুরআন আর পবিত্রতার নির্দেশ তাদের জন্য কষ্টকর। এটাই সহীহ্ মত।

হায়যের রক্তস্রাব যদি দশ দিনের কম সময়ে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গোসল করা পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা জাইয নয়। কেননা, রক্ত কখনো নামে কখনো থামে, সুতরাং থামার দিকটির অগ্রাধিকারের জন্য গোসল করা জরুরী।
আর যদি সে গোসল না করে আর তার উপর সালাতের সর্বনিম্ন সময় অতিবাহিত হয়, এ পরিমাণ যে, সে গোসল করে তাহরীমা বাধতেঁ সক্ষম হতো, তাহলে তার সাথে সহবাস করা বৈধ। কেননা, উক্ত সালাতের ৠণ তার যিম্মায় আরোপিত হয়ে গেছে। বিধান অনুযায়ী সে পবিত্র বলে সাব্যস্ত।
যদি তিন দিনের উপরে কিন্তু পূর্ব অভ্যাসের কম সময়ে রক্তস্রাব বন্ধ হয়, তাহলে অভ্যস্ত সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বামী তার সাথে সঙ্গম করিবে না, যদিও সে গোসল করে থাকে। কেননা, অভ্যস্ত সময়ের ভিতরে পুনঃ স্রাব হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। সুতরাং পরিহার করার মধ্যেই সতর্কতা। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

আর যদি দশদিন পূর্ণ হয়ে রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে গোসলের পূর্বেই তার সাথে সহবাস জাইয। কেননা, হায়য দশদিনের অতিরিক্ত হতে পারে না। তবে গোসলের পূর্বে সহবাস পসন্দনীয় নয়। কেননা তাশদীদযুক্ত কিরাতের প্রেক্ষিতে এ অবস্থাও নিষেধের আওতাভূক্ত হায়যের মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়ে দুই রক্তস্রাবের মাঝে যদি পবিত্রতা দেখা দেয় তাহলে তা অব্যাহত রক্তস্রাব বলে গণ্য।
আল হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার বলেন, ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত রিওয়ায়াতসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম।
এর কারণ এই যে, সর্বসম্মত মত অনুযায়ী হায়যের পূর্ণ মেয়াদব্যাপী রক্তস্রাব অব্যাহত থাকা শর্ত নয়। সুতরাং মেয়াদের শুরু ও শেষটাই বিবেচ্য; যেমন, যাকাতের মাসআলায় নিসাবের হুকুম।

ইমাম আবূ ইউসূফ সূত্রে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] হতে বর্ণিত অন্য এক রিওয়ায়াত মতে যদি পনের দিনের কম হয়, তাহলে তা [উভয় স্রাবকে] বিচ্ছিন্নকারী হবে না। বরং পূর্ণ মেয়াদ অব্যাহত স্রাব বলে গণ্য হবে। কেননা, এটা তুহুরে ফাসিদ। সুতরাং তা স্রাবের স্থলবর্তী হবে। এ মতামত গ্রহণ আমলের জন্য অধিকতর সহজ। কেউ কেউ বলিয়াছেন যে, এটি আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর সর্বশেষ মত। এ মাসআলার পূর্ণ বিবরণ হায়য অধ্যায়ে জানা যাবে।
তুহুর এর সর্ব নিম্ন মেয়াদ পনের দিন।

ইবরাহীম নাখঈ থেকে এরূপই বর্ণিত। আর এ বিষয়ে শারে [আ.] এর নিকট থেকে অবহিত করণ ব্যতীত জানা সম্ভব নয়।
আর তার সর্বোচ্চ মুদ্দতের সীমা নেই। কেননা, তা এক বছর দুবছর পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। সুতরাং তা কোন মেয়াদের দ্বারা নির্ণয় করা যাবে না। তবে যে মহিলার স্রাব অব্যাহত ভাবে প্রবাহিত হতে থাকে তার জন্য মেয়াদ ধার্য করা হয়। এ সম্পর্কিত বিধি-বিধান। কিতাবুল হায়যে জানা যাবে।
ইসতিহাযার রক্ত স্রাবে হুকুম নাক থেকে রক্তক্ষরণের অনুরূপ। যা সিয়াম, নামাজ ও সহবাস কোনটিকেই বাধা দেয় না। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [ইসতিহাযাগ্রস্তকে] বলিয়াছেন-চাটাইয়ে রক্তের ফোঁটা পড়তে থাকলেও তুমি ওজু করিবে ও নামাজ আদায় করিবে।

সালাতের হুকুম যখন জানা গেল, তখন ইজমাই ফয়সালার ফলশ্রুতিতে সিয়াম ও সহবাসের হুকুমও সাব্যস্ত হয়ে যায়।
রক্তস্রাব যদি দশদিনের বেশী হয়, আর যদি তার দশদিনের কম প্রচলিত অভ্যাস জানা থেকে থাকে তাহলে তার হায়যকে অভ্যস্ত দিনগুলোতেই সীমিত রাখা হবে। আর অভ্যাসের অতিরিক্ত যা তা ইসতিহাযা হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-
মুসতাহায নারী তার হায়যেরে নির্দিষ্ট দিনিগুলোতে নামাজ বর্জন করিবে। তা ছাড়া অভ্যাসের অতিরিক্ত দিনগুলো দশের অতিরিক্ত দিনগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং তার সাথেই তা যুক্ত হবে।
আর যদি বালেগ হওয়ার নিদর্শন স্বরূপ কোন মেয়ের রক্ত স্রাব আরম্ভ হওয়ার পর সে মুসতাহাযা হয়ে যায় [অর্থাত্ দশদিন থেকে বেশী স্রাব দেখা যায়] তবে প্রতি মাসের দশদিন তার হায়য গণ্য হবে, অবশিষ্ট দিনগুলো হবে ইতিহাযা। কেননা, তার প্রারম্ভের রক্তস্রাবকে আমরা হায়য হিসাবে জেনেছি, সুতরাং সন্দেহের কারণে [পরবর্তী দিনগুলো] হায়য থেকে বহির্ভূত হবে না। আল্লাহই উত্তম জানেন।

 পরিচ্ছেদঃ মুসতাহাযা

মুসতাহাযা নারী, অব্যাহত মূত্রক্ষরণ নাক থেকে রক্তক্ষরণের রোগী এবং এমন ক্ষতগ্রস্ত ব্যক্তি, যার ক্ষতস্থান থেকে নিঃসরণ থামে না। এরা সকলে প্রত্যেক সালাতের ওয়াক্তের জন্য আলাদা ওজু করিবে। তারপর সে ওয়াক্তের ভিতরে ঐ ওজু দ্বারা যত ইচ্ছা ফরয ও নফল পড়বে।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, মুসতাহাযা নারী প্রত্যেক ফরয সালাতের জন্য ওজু করিবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, মুসতাহাযা প্রত্যেক সালাতের জন্য ওজু করিবে।

তাছাড়া তার তাহারাতের গ্রহণ যোগ্যতা হচ্ছে ফরয আদায়ের প্রয়োজনে। সুতরাং ফরয থেকে ফারিগ হওয়ার পর তা বহাল থাকবে না।
আমাদের দলীল এই যে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ
মুসতাহাযা নারী প্রত্যেক সালাতের ওয়াক্তের জন্য ওজু করিবে।
শাফিঈ [রঃআঃ] কর্তৃক বর্ণিত প্রথম হাদিসের উদ্দেশ্যও এটাই। কেননা, অব্যয়কে ওয়াক্তের অর্থেও ব্যবহার করা হয়। বলা হয় অর্থাত্ আমি তোমাদের কাছে আসবো যুহরের সালাতের সময়। তাছাড়া সহজসাধ্য করার লক্ষ্যে ওয়াক্তকে আাদায় এর স্থলবর্তী করা হয়েছে। সুতরাং তার উপরই বিধান আবর্তিত হবে। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

যখন ওয়াক্ত শেষ হবে, তখন তাদের ওজু বাতিল হয়ে যাবে। এবং অন্য সালাতের জন্য নতুন ওজু করিবে। এ হলো তিন ইমামের মাযহাব। আর ইমাম যুফার [রঃআঃ] বলেন, সময় প্রবেশ করার পর নতুন ওজু করিবে।
সুতরাং সূর্যোদয়ের সময় যদি তারা ওজু করে তাহলে যুহরের সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত এ ওজু তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। এ ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ রাঃআঃ বলেন, সময় প্রবেশ করার পর নতুন ওজু করিবে।
সুতরাং সূর্যোদয়ের সময় যদি তারা ওজু করে তাহলে যুহরের সময় শেয় হওয়া পর্যন্ত এ ওজু তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। এ ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ রাঃআঃ এর মত। আর ইমাম আবূ ইউসূফ ও যুফার [রঃআঃ] বলেন, যুহরের সময় প্রবেশ করা পর্যন্ত তাদের জন্য ওজু কার্যকর হবে।

আলোচ্য মাসআলার খোলাসা এই যে, ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে পূর্ববর্তী হাদাছ দ্বারা মাযূরের তাহারাত ভেংগে যায় ওয়াক্ত শেষ হওয়ার কারণে। আর ইমাম যুফার [রঃআঃ] এর মতে ওয়াক্ত শুরূ হওয়ার কারণে। আর ইমাম আবূ ইউসূফের মতে দুটোর যে কোন একটির কারণে।
এ মতপার্থক্যের ফলাফল ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই শুধু প্রকাশ পাবে, যে মধ্যহ্নের পূর্বে ওজু করিয়াছে, যেমন আমারা আগে উল্লেখ করেছি, কিংবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ওজু করিয়াছে।
ইমাম যুফার [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, বিপরীত অবস্থা সত্ত্বেও তাহারাতের গ্রহণযোগ্যতা হচ্ছে নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে, আর ওয়াক্তের আগে সে প্রয়োজন নেই। সুতরাং ওয়াকতের আগের তাহারাত গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, প্রয়োজন ওয়াকতের সাথে সীমিত। সুতরাং ওয়াকতের পূর্বে ও পরে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ রাঃআঃ এর দলীল হলো; ওয়াকতের আগে তাহারাত অর্জন করা জরুরী, যাতে সময় হওয়া মাত্র নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়। আর ওয়াকত শেষ হয়ে যাওয়া প্রয়োজন শেষ হওয়ার প্রমাণ। সুতরাং ওয়াকত শেষ হও্রয়ার পূর্ববর্তী হাদাছের ক্রিয়া প্রকাশ পাবে।
এখানে ওয়াক্ত দ্বারা ফরয নামাজ ওয়াক্ত উদ্দেশ্য। সুতরাং মাযূর ব্যক্তি যদি ঈদের সালাতের জন্য ওজু করে থাকে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে উক্ত ওজু দ্বারা সে যুহরের নামাজ আদায় করতে পারবে। এটিই বিশুদ্ধ মত। কেননা, ঈদের নামাজ চাশতের সালাতের ন্যায়।

আর কেউ যদি একবার যুহরের ওয়াকতে যুহরের সালাতের জন্য ওজু কর আর যুহরের সময় থাকতে আরেকবার আসরের সালাতের জন্য ওজু করে, তাহলে ইমামদ্বয়ের মতে সে ওজু দ্বারা সে আসরের নামাজ আদায় করতে পারবে না। কেননা, ফরয সালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার কারণে তার ওজু ভেংগে গিয়েছে।
মুসতাহাযা হচ্ছে ঐ স্ত্রীলোক যার উপর দিয়ে সালাতের পূর্ণ ওয়াক্ত হাদাছ আক্রান্ত অবস্থা ছাড়া অতিক্রান্ত হয় না। মুসতাহাযার সমগোত্রীয় অন্যান্য মাযূরদেরও একই হুকুম অর্থাত্ যাদের আলোচনা পূর্বে আমরা করেছি। আর বিরামহীন দাস্ত ও বাতকর্মের রোগীরও ঐ হুকুম । কেননা, এ সকল ওযর দ্বারা প্রয়োজন সাব্যস্ত হয় আর প্রয়োজনই সকল ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত।

পরিচ্ছেদঃ নিফাস সম্বন্ধে

নিফাস হচ্ছে প্রসব পরবর্তী সময়ে নির্গত রক্তস্রাব। কেননা, শব্দটি হয় জরায়ু রক্ত ত্যাগ করিয়াছে কিংবা সন্তান বের হওয়া থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে; অথবা এর অর্থ রক্ত।
গর্ভবতী প্রসব পূর্ব সময়ে কিংবা প্রসবকালে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে যে রক্ত দেখতে পায়, তা ইসতিহাযা, যদিও তা দীর্ঘ সময় প্রবাহিত হয়।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] নিফাসের উপর কিয়াসের করে এটাকে হায়য বলেন। কেননা-উভয় রক্তই জরায়ু থেকে নির্গত হয়।

আর আমাদের দলীল হল, প্রাকৃতিক নিয়মে গর্ভসণ্চার দ্বারা জরায়ুর মুখ বন্ধ হয়ে যায়।আর নিফাস হয়ে থাকে সন্তান নির্গমনের মাধ্যমে জরায়ু-মুখ উন্মুক্ত হওয়ার পরে। এজন্যই ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর বর্ণনা মতে সন্তান আংশিক বের হয়ে আসার পর নির্গত রক্ত নিফাস রূপে গণ্য। কেননা জরায়ু-মুখ উন্মুক্ত হওয়ার ফলে তা রক্ত ত্যাগ করে। গর্ভপাতিত পিণ্ড যা আংশিক আকৃতি স্পষ্ট হয়েছে, তা সন্তান রূপে গণ্য। সুতরাং এর মাধ্যমে স্ত্রী লোকটি নিফাসগ্রস্ত গণ্য হবে এবং উম্মু ওয়ালদ [মনিব সন্তানের মাতা] সাব্যস্ত হবে। তদ্রুপ এ ভূমিষ্ট হওয়া দ্বারা সমাপ্তি হবে।
নিফাসের সর্বনিম্ন সময়ের কোন সীমা নেই। কেননা, ভূমিষ্ঠ সন্তানের অগ্রবর্তিতা স্রাব জরায়ু থেকে নির্গত হওয়ার প্রমাণ। সুতরাং সময়ের দীর্ঘতাকে প্রমাণ হিসাবে নির্ধারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। হায়যের বিষয় এর ব্যতিক্রম।
নিফাসের সর্বোচ্চ মুদ্দত হলো চল্লিশ দিন এবং এর অতিরিক্ত হলে ইসতিহাযা। কেননা, উম্মু সালামা রাঃআঃ বর্ণিত হাদীছে রয়েছে নবী করিম [সাঃআঃ] নিফাসগ্রস্ত নারীদের জন্য চল্লিশ দিন সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ষাটদিন ধার্য করার ব্যাপারে এ হাদীস ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর বিপক্ষে দলীল। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )

রক্তস্রাব যদি চল্লিশ দিন ছাড়িয়ে যায় আর স্ত্রী লোকটি ইতোপূর্বে সন্তান প্রসব করে থাকে এবং নিফাসের ব্যাপারে তার নির্ধারিত অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে নিফাসকে তার অভ্যস্ত সংখ্যক দিনগুলোতে প্রত্যাবৃত্ত করা হবে। এর কারণ আমরা হায়য প্রসংগে বর্ণনা করেছি।
আর যদি তার পূর্ব অভ্যাস না থেকে খাকে তাহলে তার এই প্রথম নিফাসকে ধরা হবে চল্লিশ দিন। কেননা, উক্ত সময়কে নিফাস সাব্যস্ত করা সম্ভব।

আর যদি একই গর্ভে দুই সন্তান প্রসব করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] ও ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে তার নিফাস গণ্য হবে প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে। এমন কি দুই সন্তানের মাঝে চল্লিশ দিনের ব্যবধান থাকলেও। ইমাম মুহাম্মদ[রঃআঃ] বলেন, শেষ সন্তানটির পর থেকে।

এটি ইমাম যুফার [রঃআঃ] এরও মত। কেননা প্রথম প্রসবের পর তো সে গর্ভবতী রয়ে গেছে। সুতরাং সে নিফাসগ্রস্ত বলে গণ্য হবে না। যেমন গর্ভবতী হায়যগ্রস্ত হয় না। এ জন্যই ইজমায়ী মতে শেষ প্রসব দ্বারাই তার ইদ্দত শেষ হবে।
বড় ইমামদ্বয়ের দলীল হল, আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, গর্ভবতী ৠতুগ্রস্ত হয় না জরায়ুর মূখ বন্ধ থাকার কারণে। আর সেটা তো প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং রক্তক্ষরণ শুরূ করিয়াছে, সুতরাং তা নিফাস রূপেই গণ্য হবে। পক্ষান্তরে ইদ্দতের সম্পর্ক হলো তার সাথে সম্পর্কিত গর্ভের সাথে। সুতরাং গর্ভ শব্দটি সমগ্রকেই অন্তর্ভূক্ত করিবে। ( ইসতিহাযা মুসতাহাযা নিফাস ও হায়েযের মাসআলা )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply