হায়েজের হাদিস – এ অবস্থায় ইসতিহাযা, নিফাস, সওম, মুসতাহাযা
হায়েজের হাদিস – এ অবস্থায় ইসতিহাযা, নিফাস, সওম, মুসতাহাযা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬, হায়েজ, অধ্যায়ঃ (১-৩০)=৩০টি
৬/১.১. অধ্যায়ঃ হায়েযের ইতিকথা।
৬/১.২. অধ্যায়ঃ ঋতুকালীন ঋতুবতী মহিলাদের প্রতি নির্দেশ।
৬/২. অধ্যায়ঃ হায়েযের সময় স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া ও চুল আঁচড়ে দেয়া।
৬/৩. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তার কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা।
৬/৪. অধ্যায়ঃ যারা নিফাসকে হায়েয এবং হায়েযকে নিফাস বলেন।
৬/৫. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সংস্পর্শ করা।
৬/৬. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় সওম ছেড়ে দেয়া।
৬/৭. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী নারী হজ্জের যাবতীয় বিধান পালন করিবে তবে কাবা গৃহের ত্বওয়াফ ব্যতীত।
৬/৮. অধ্যায়ঃ ইসতিহাযা
৬/৯. অধ্যায়ঃ হায়েযের রক্ত ধুয়ে ফেলা।
৬/১০. অধ্যায়ঃ মুসতাহাযার ইতিকাফ ।
৬/১১. অধ্যায়ঃহায়েয অবস্থায় পরিহিত পোশাকে সালাত আদায় করা যায় কি?
৬/১২. অধ্যায়ঃ হায়েয হইতে পবিত্রতার গোসলে সুগন্ধি ব্যবহার।
৬/১৩. অধ্যায়ঃ হায়েযের পরে পবিত্রতা অর্জনের সময় দেহ ঘষা মাজা করা, গোসলের পদ্ধতি এবং মিশকযুক্ত বস্ত্র খন্ড দিয়ে রক্তের চিহ্ন পরিষ্কার করা।
৬/১৪. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলের বিবরণ।
৬/১৫. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলের সময় চুল আঁচড়ানো।
৬/১৬. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলে চুল খোলা।
৬/১৭. অধ্যায়ঃ “পূর্ণাকৃতি ও অপূর্ণাকৃতি গোশ্ত পিণ্ড।” (সুরা হজ্জ ২২/৫)
৬/১৮. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী কীভাবে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধবে?
৬/১৯. অধ্যায়ঃ হায়েয শুরু ও শেষ হওয়া।
৬/২০. অধ্যায়ঃ হায়েযকালীন সালাতের কাযা নেই।
৬/২১. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী মহিলার সাথে হায়েযের কাপড় পরিহিত অবস্থায় একত্রে শোয়া।
৬/২২. অধ্যায়ঃ হায়েযের জন্য স্বতন্ত্র কাপড় পরিধান করা।
৬/২৩. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী মহিলাদের উভয় ঈদ ও মুসলমানদের দাওয়াতী সমাবেশে উপস্থিত হওয়া এবং ঈদগাহ হইতে দূরে অবস্থান করা।
৬/২৪. অধ্যায়ঃ একই মাসে তিন হায়েয হলে। সম্ভাব্য হায়েয ও গর্ভধারণের ব্যাপারে স্ত্রীলোকের কথা গ্রহণ যোগ্য।
৬/২৫. অধ্যায়ঃ হায়েযের দিন গুলো ছাড়া হলুদ এবং মেটে রং দেখা।
৬/২৬. অধ্যায়ঃ ইস্তিহাযার শিরা।
৬/২৭. অধ্যায়ঃ ত্বওয়াফে যিয়ারাতের পর স্ত্রীলোকের হায়েয শুরু হওয়া।
৬/২৮. অধ্যায়ঃ ইস্তিহাযাগ্রস্তা নারীর পবিত্রতা দেখা।
৬/২৯. অধ্যায়ঃ নিফাস অবস্থায় মৃত স্ত্রীলোকের জানাযার নামায ও তার পদ্ধতি।
৬/৩০. অধ্যায়ঃ
৬/১.১. অধ্যায়ঃ হায়েযের ইতিকথা।
আর আল্লাহর বাণীঃ “তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে রক্তস্রাব সম্বন্ধে। আপনি বলুনঃ তা অশুচি। কাজেই রক্তস্রাব অবস্থায় তোমরা স্ত্রী-গমণ থেকে বিরত থাকবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হইবে না। সুতরাং যখন তারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হইবে তখন তোমরা তাদের কাছে ঠিক সেভাবে গমন করিবে যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালবাসেন।” (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/২২২)
নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহতাআলা আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কারো কারো মতে সর্বপ্রথম হায়য শুরু হয় বনী ইসরাঈলী মহিলাদের। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর হাদীসই গ্রহণযোগ্য।
৬/১.২. অধ্যায়ঃ ঋতুকালীন ঋতুবতী মহিলাদের প্রতি নির্দেশ।
২৯৪. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা হজ্জের উদ্দেশেই (মদীনা হইতে) বের হলাম। সারিফ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার হায়েয আসলো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং বললেনঃ এ তো আল্লাহ তাআলাই আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ ছাড়া হজ্জের বাকী সব কাজ করে নাও। আয়িশা (রাদি.) বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হইতে গাভী কুরবানী করিলেন।
(৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ৩২৮, ১৫১৬, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১২৩৮, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭১, ১৭৭২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০১, ৪৪০৮, ৫৩২৯, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৬১৫৭,৭২২৯; মুসলিম ১৫/১৭, হাদীস ১২১১) (আঃপ্রঃ- ২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯০)
৬/২. অধ্যায়ঃ হায়েযের সময় স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া ও চুল আঁচড়ে দেয়া।
২৯৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি হায়েয অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মাথা আঁচড়ে দিতাম।
২৯৬. উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে (উরওয়াহকে) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঋতুবতী স্ত্রী কি স্বামীর খিদমত করিতে পারে? অথবা গোসল ফরয হওয়ার অবস্থায় কি স্ত্রী স্বামীর নিকটবর্তী হইতে পারে? উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জবাব দিলেন, এ সবই আমার নিকট সহজ। এ ধরনের সকল মহিলাই স্বামীর খিদমত করিতে পারে। এ ব্যাপারে কারো অসুবিধা থাকার কথা নয়। আমাকে আয়িশা (রাদি.) বলেছেন যে, তিনি হায়েযের অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চুল আঁচড়ে দিতেন। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুতাফিক অবস্থায় মসজিদ হইতে তাহাঁর (আয়িশার) হুজরার দিকে তাহাঁর নিকট মাথাটা বাড়িয়ে দিতেন। তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়াতেন অথচ তিনি ছিলেন ঋতুবতী।
৬/৩. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তার কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা।
আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর ঋতুবতী দাসীকে আবু রাযীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে পাঠাতেন, আর দাসী জুযদানে পেঁচিয়ে কুরআন শরীফ নিয়ে আসত।
২৯৭. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। আর তখন আমি হায়েযের অবস্থায় ছিলাম।
৬/৪. অধ্যায়ঃ যারা নিফাসকে হায়েয এবং হায়েযকে নিফাস বলেন।
২৯৮. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েয দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কি নিফাস দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাহাঁর সঙ্গে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম।
(৩২২, ৩২৩, ১৯২৯; মুসলিম ৩/২, হাদীস ২৯৬, আহমাদ ২৬৫৮৭) (আ.প্র. ২৮৯, ই.ফা. ২৯৪)
৬/৫. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সংস্পর্শ করা।
২৯৯. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ও নাবী (সাঃআঃ) জানাবাত অবস্থায় একই পাত্র হইতে পানি নিয়ে গোসল করতাম।
(২৫০) (আ.প্র. ২৯০, ই.ফা. ২৯৫)
৩০০. See previous Hadith. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিলে আমি ইযার পরে নিতাম, আমার হায়েয অবস্থায় তিনি আমার সাথে মেলামেশা করিতেন।
(৩০২, ২০৩০ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ২৯০, ই.ফা. ২৯৫)
৩০১. See previous Hadith. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাছাড়া তিনি ইতিকাফ অবস্থায় মাথা বের করে দিতেন, আর আমি হায়েয অবস্থায় মাথা ধুয়ে দিতাম।
(২৯৫) (আ.প্র. ২৯০, ই.ফা. ২৯৫)
৩০২. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ হায়েয অবস্থায় থাকলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার সাথে মিশামিশি করিতে চাইলে তাকে প্রবল হায়েযে ইযার পরার নির্দেশ দিতেন। তারপর তার সাথে মিশামিশি করিতেন। তিনি [আয়িশা রাযিআল্লাহু আনহা] বলেনঃ তোমাদের মধ্যে নাবী (সাঃআঃ)-এর মত কাম-প্রবৃত্তি দমন করার শক্তি রাখে কে? খালিদ ও জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শায়বানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
(৩০০; মুসলিম ৩/১, হাদীস ২৯৩) (আ.প্র. ২৯১, ই.ফা. ২৯৬)
৩০৩. মাইমূনা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় মিশামিশি করিতে চাইলে তাকে ইযার পরতে বলিতেন। শায়বানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ বর্ণনা করিয়াছেন।
(মুসলিম ৩/১, হাদীস ২৯৪, আহমাদ ২৬৯১৮) (আ.প্র. ২৯২, ই.ফা. ২৯৭)
৬/৬. অধ্যায়ঃ হায়েয অবস্থায় সওম ছেড়ে দেয়া।
৩০৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করিতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হইতে বিরত থাকে না? তারা বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি।
(১৪৬২, ১৯৫১, ২৬৫৮; মুসলিম ১/৩৪, হাদীস ৭৯, ৮০ আহমাদ ৫৪৪৩) (আ.প্র. ২৯৩, ই.ফা. ২৯৮)
৬/৭. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী নারী হজ্জের যাবতীয় বিধান পালন করিবে তবে কাবা গৃহের ত্বওয়াফ ব্যতীত।
ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ (হায়েজ অবস্থায়) আয়াত পাঠে কোন দোষ নেই। ইবন আব্বাস (রাদি.) জুনুবীর জন্য কুরআন পাঠে কোন দোষ মনে করিতেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করিতেন। উম্মে আতিয়্যাহ (রাদি.) বলেনঃ (ঈদের দিন) হায়েজ অবস্থায় মহিলাদের বাইরে নিয়ে আসার জন্য আমাদের বলা হতো, যাতে তারা পুরুষদের সাথে তাকবীর বলে ও দুআ করে। ইবন আব্বাস (রাদি.) আবু সুফিয়ান (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, হিরাক্ব্ল ( রোম সম্রাট) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর পত্র চেয়ে নিলেন এবং তা পাঠ করিলেন। তাতে লেখা ছিলঃ
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। আপনি বলুন! হে কিতাবীগণ! এস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই -যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত না করি। কোন কিছুকেই তাহাঁর শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত রবরূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলুন, তোমরা সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম (৩:৬৪)। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাদি.) হায়েজ অবস্থায় কাবা ত্বওয়াফ ছাড়া হজ্জের অন্যান্য আহকাম পালন করিয়াছেন কিন্তু স্বলাত আদায় করেন নি। হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ আমি জুনুবী অবস্থায়ও যবেহ করে থাকি। অথচ আল্লাহর বাণী হলোঃ
وَلَا تَأْكُلُوْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِاسْمُ اللهِ عَلَيْهِ
অর্থাৎ “তোমরা আহার করো না সে সব প্রাণী, যার উপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি”। (৬:১২১)-
৩০৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হজ্জের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছেলে আমি ঋতুবতী হই। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললামঃ আল্লাহর শপথ! এ বছর হজ্জ না করাই আমার জন্য পছন্দনীয়। তিনি বললেনঃ সম্ভবত তুমি ঋতুবতী হয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এটাতো আদম-কন্যাদের জন্যে আল্লাহ নির্ধারিত করিয়াছেন। তুমি পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য হাজীদের মত সমস্ত কাজ করে যাও, কেবল কাবার তাওয়াফ করিবে না।
(২৯৪) (আ.প্র. ২৯৪, ই.ফা. ২৯৯)
৬/৮. অধ্যায়ঃ ইসতিহাযা
৩০৬. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনতু আবু হুবায়শ (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি কখনও পবিত্র হই না। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এ হলো এক ধরনের বিশেষ রক্ত, হায়েযের রক্ত নয়। যখন তোমার হায়েয শুরু হয় তখন তুমি সালাত ছেড়ে দাও। আর হায়েয শেষ হলে রক্ত ধুয়ে সালাত আদায় কর।[১]
(২২৮) (আ.প্র. ২৯৫, ই.ফা. ৩০০) [১] হায়েয ও নিফাসের মেয়াদের অতিরিক্ত সময়কালীন রজঃস্রাবকে ইসতিহাযা এবং সে মহিলাকে মুস্তাহাযা বলা হয় । (আইনী ৩খ: ১৪২)
৬/৯. অধ্যায়ঃ হায়েযের রক্ত ধুয়ে ফেলা।
৩০৭. আসমা বিনত আবু বক্র সিদ্দীক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক মহিলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কারো কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে কী করিবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের কারো কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে সে তা রগড়িয়ে, তারপর পানিতে ধুয়ে নেবে এবং সে কাপড়ে সালাত আদায় করিবে।
(২২৭) (আ.প্র. ২৯৬, ই.ফা. ৩০১)
৩০৮. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমাদের কারো হায়েয হলে, পবিত্র হওয়ার পর রক্ত গড়িয়ে কাপড় পানি দিয়ে ধুয়ে সেই কাপড়ে তিনি সালাত আদায় করিতেন।
(আ.প্র. ২৯৭, ই.ফা. ৩০২)
৬/১০. অধ্যায়ঃ মুসতাহাযার ইতিকাফ ।
৩০৯. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে তাহাঁর কোন এক স্ত্রী ইস্তিহাযার অবস্থায় ইতিকাফ করেন। তিনি রক্ত দেখিতেন এবং স্রাবের কারণে প্রায়ই তাহাঁর নীচে একটি পাত্র রাখতেন। রাবী বলেনঃ আয়িশা (রাদি.) হলুদ রঙের পানি দেখে বলেছেন, এ যেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর অমুক স্ত্রীর ইস্তিহাযার রক্ত।
(৩১০, ৩১১, ২০৩৭ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ২৯৮, ই.ফা. ৩০৩)
৩১০. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে তাহাঁর কোন একজন স্ত্রী ইতিকাফ করেছিলেন। তিনি রক্ত ও হলদে পানি বের হইতে দেখিতেন আর তাহাঁর নীচে একটা পাত্র বসিয়ে রাখতেন এবং সে অবস্থায় সালাত আদায় করিতেন।
(৩০৯) (আ.প্র. ২৯৯, ই.ফা. ৩০৪)
৩১১. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল-মুমিনীনের একজন ইস্তিহাযা অবস্থায় ইতিকাফ করেছিলেন।
(৩০৯) (আ.প্র. ৩০০, ই.ফা. ৩০৫)
৬/১১. অধ্যায়ঃহায়েয অবস্থায় পরিহিত পোশাকে সালাত আদায় করা যায় কি?
৩১২. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমাদের কারো একটির অধিক কাপড় ছিল না। তিনি হায়েয অবস্থায়ও এই কাপড়খানিই ব্যবহার করিতেন, তাতে রক্ত লাগলে থুথু দিয়ে ভিজিয়ে নখ দ্বারা খুঁটিয়ে নিতেন।
(আ.প্র. ৩০১, ই.ফা. ৩০৬)
৬/১২. অধ্যায়ঃ হায়েয হইতে পবিত্রতার গোসলে সুগন্ধি ব্যবহার।
৩১৩. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ কোন মৃত ব্যক্তির জন্যে আমাদের তিন দিনের অধিক শোক পালন করা হইতে নিষেধ করা হতো। কিন্তু স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশদিন (শোক পালনের অনুমতি ছিল)। আমরা তখন সুরমা লাগাতাম না, সুগন্ধি ব্যবহার করতাম না, ইয়েমেনের তৈরি রঙিন কাপড় ছাড়া অন্য কোন রঙিন কাপড় পরিধান করতাম না। তবে হায়েয হইতে পবিত্রতার গোসলে আজফারের খোশবু মিশ্রিত বস্ত্রখন্ড ব্যবহারের অনুমতি ছিল। আর আমাদের জানাযার পেছনে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এই বর্ণনা হিশাম ইবনু হাস্সান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাফসা (রাদি.) হইতে, তিনি উম্মে আতিয়্যা (রাদি.) হইতে এবং তিনি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বিবৃত করিয়াছেন।
(১২৭৮, ১২৭৯, ৫৩৪০, ৫৩৪১, ৫৩৪২, ৫৩৪৩; মুসলিম ১১/১১, হাদীস ৯৩৮) (আ.প্র. ৩০২, ই.ফা. ৩০৭)
৬/১৩. অধ্যায়ঃ হায়েযের পরে পবিত্রতা অর্জনের সময় দেহ ঘষা মাজা করা, গোসলের পদ্ধতি এবং মিশকযুক্ত বস্ত্র খন্ড দিয়ে রক্তের চিহ্ন পরিষ্কার করা।
৩১৪.আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক মহিলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে হায়েযের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি তাকে গোসলের নিয়ম বলে দিলেন যে, এক টুকরা কস্তুরী লাগানো নেকড়া নিয়ে পবিত্রতা হাসিল কর। মহিলা বললেনঃ কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করব? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তা দিয়ে পবিত্রতা হাসিল কর। মহিলা (তৃতীয়বার) বললেনঃ কীভাবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে তুমি পবিত্রতা হাসিল কর। আয়িশা (রাদি.) বলেনঃ তখন আমি তাকে টেনে আমার নিকট নিয়ে আসলাম এবং বললামঃ তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন বিশেষভাবে মুছে ফেল।
(৩১৫, ৭৩৫৭; মুসলিম ৩/১৩, হাদীস ৩৩২) (আ.প্র. ৩০৩, ই.ফা. ৩০৮)
৬/১৪. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলের বিবরণ।
৩১৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একজন আনসারী মহিলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কীভাবে হায়েযের গোসল করবো? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এক টুকরো কস্তুরীযুক্ত নেকড়া লও এবং তিনবার ধুয়ে নাও। নাবী (সাঃআঃ) অতঃপর লজ্জাবশত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ তা দিয়ে তুমি পবিত্র হও। আয়িশা (রাদি.) বলেনঃ আমি তাকে নিজের দিকে টেনে নিলাম। তারপর তাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর কথার মর্ম বুঝিয়ে দিলাম।
(৩১৪) (আ.প্র. ৩০৪, ই.ফা. ৩০৯)
৬/১৫. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলের সময় চুল আঁচড়ানো।
৩১৬. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলাম। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম যারা তামাত্তুর নিয়্যত করেছিল এবং সঙ্গে কুরবানীর পশু নেয়নি। তিনি বলেনঃ তার হায়েয শুরু হয় আর আরাফা এর রাত পর্যন্ত তিনি পাক হননি। আয়িশা (রাদি.) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আজ তো আরাফার রাত, আর আমি হজ্জের সঙ্গে উমরারও নিয়্যত করেছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ মাথার বেণী খুলে ফেল, চুল আঁচড়াও আর উমরা হইতে বিরত থাক। আমি তাই করলাম। হজ্জ সমাধা করার পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবদুর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে হাসবায় অবস্থানের রাতে (আমাকে উমরা করানোর) নির্দেশ দিলেন। তিনি তানঈম হইতে আমাকে উমরা করালেন, যেখান হইতে আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম।
(২৯৪) (আ.প্র. ৩০৫, ই.ফা. ৩১০). [১] একই সফরে হজ্জ ও উমরা করা।
৬/১৬. অধ্যায়ঃ হায়েযের গোসলে চুল খোলা।
৩১৭. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার সময় নিকটবর্তী হলে বেরিয়ে পড়লাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ যে উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে তা করিতে পারে। কারণ, আমি সাথে কুরবানীর পশু না আনলে উমরার ইহরামই বাঁধতাম। তারপর কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আর কেউ হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। আমি ছিলাম উমরার ইহরামকারীদের মধ্যে। আরাফার দিনে আমি ঋতুবতী ছিলাম। আমি নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট আমার অসুবিধার কথা বললাম। তিনি বললেনঃ তোমার উমরা ছেড়ে দাও, মাথার বেণী খুলে চুল আঁচড়াও, আর হজ্জের ইহরাম বাঁধ। আমি তাই করলাম। হাসবা নামক স্থানে অবস্থানের রাতে নাবী (সাঃআঃ) আমার সাথে আমার ভাই আবদুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.) কে পাঠালেন। আমি তানঈমের দিকে বের হলাম। সেখানে পূর্বের উমরার পরিবর্তে ইহরাম বাঁধলাম। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এসব কারণে কোন দম (কুরবানী), সওম বা সদকা দিতে হয়নি।
(২৯৪) (আ.প্র. ৩০৬, ই.ফা. ৩১১)
৬/১৭. অধ্যায়ঃ “পূর্ণাকৃতি ও অপূর্ণাকৃতি গোশ্ত পিণ্ড।” (সুরা হজ্জ ২২/৫)
৩১৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মাতৃগর্ভের জন্য একজন মালাইকা নির্ধারণ করিয়াছেন। তিনি (পর্যায়ক্রমে) বলিতে থাকেন, হে রব! এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে। হে রব! এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে। হে রব! এখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করিতে চান, তখন জিজ্ঞেস করেনঃ পুরুষ, না স্ত্রী? সৌভাগ্যবান, না দুর্ভাগা? রিয্ক ও বয়স কত? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেয়া হয়।
(৩৩৩৩, ৬৫৯৫; মুসলিম ৪৬/১, হাদীস ২৬৪৬) (আ.প্র. ৩০৭, ই.ফা. ৩১২)
৬/১৮. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী কীভাবে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধবে?
৩১৯. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের সময় বের হয়েছিলাম। আমাদের কেউ ইহরাম বেঁধেছিল উমরার আর কেউ বেঁধেছিল হজ্জের। আমরা মক্কায় এসে পৌঁছলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে ও কুরবানীর পশু সাথে এনেছে, তারা যেন কুরবানী করা পর্যন্ত ইহরাম না খোলে। আর যারা হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে তারা যেন হজ্জ পূর্ণ করে। আয়িশা (রাদি.) বলেনঃ অতঃপর আমার হায়েয শুরু হয় এবং আরাফার দিনেও তা বহাল থাকে। আমি শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) আমাকে মাথার বেণী খোলার, চুল আঁচড়ে নেয়ার এবং উমরার ইহরাম ছেড়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম। পরে হজ্জ সমাধা করলাম। অতঃপর আবদুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.) কে আমার সাথে পাঠালেন। তিনি আমাকে তানঈম হইতে পূর্বের পরিত্যক্ত উমরার পরিবর্তে উমরা পালনের আদেশ করিলেন।
(১৯৪) (আ.প্র. ৩০৮, ই.ফা. ৩১৩)
৬/১৯. অধ্যায়ঃ হায়েয শুরু ও শেষ হওয়া।
মহিলারা আয়েশা (রাদি.) -এর নিকট কৌটায় করে তুলা প্রেরণ করতো। তাতে হলুদ রং দেখলে আয়েশা (রাদি.) বলিতেনঃ তাড়াহুড়া করো না, সাদা পরিস্কার দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। এ দ্বারা তিনি হায়েয পাক হওয়া বোঝাতেন। যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) এর কন্যার নিকট সংবাদ এলো যে, স্ত্রীলোকেরা রাতের অন্ধকারে প্রদীপ চেয়ে নিয়ে হায়েয হইতে পবিত্র হলো কিনা তা দেখিতেন। তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোকেরা (পূর্বে) এমনটি করিতেন না। তিনি তাদের দোষারোপ করেন।
৩২০. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনতে আবু হুবায়শ (রাদি.) এর ইস্তিহাযা হতো। তিনি এ বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এ হচ্ছে রগের রক্ত, হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং হায়েয শুরু হলে সালাত ছেড়ে দেবে। আর হায়েয শেষ হলে গোসল করে সালাত আদায় করিবে।
(২২৮) (আ.প্র. ৩০৯, ই.ফা. ৩১৪)
৬/২০. অধ্যায়ঃ হায়েযকালীন সালাতের কাযা নেই।
জাবির ইবন আবদুল্লাহ ও আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ( স্ত্রীলোক হায়েযকালীন সময়ে) সালাত ছেড়ে দেবে।
৩২১. মুআযাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
জনৈকা মহিলা আয়িশা (রাদি.) কে বললেনঃ হায়েযকালীন কাযা সালাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে আমাদের জন্য চলবে কি-না? আয়িশা (রাদি.) বললেনঃ তুমি কি হারূরিয়্যাহ? (খারিজীদের একদল) [১] আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সময়ে ঋতুবতী হতাম কিন্তু তিনি আমাদের সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি [আয়িশা (রাদি.)] বলেনঃ আমরা তা কাযা করতাম না।
(মুসলিম ৩/১৫, হাদীস ৩৩৫, আহমাদ ২৪৭১৪) (আ.প্র. ৩১০, ই.ফা. ৩১৫). [১] খারিজীদের একটি দল যারা ঋতুবতীর জন্য সালাতের কাযা ওয়াজিব মনে করত। (আইনী, ৩খ ৩০০ পৃ.)
৬/২১. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী মহিলার সাথে হায়েযের কাপড় পরিহিত অবস্থায় একত্রে শোয়া।
৩২২. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শায়িত অবস্থায় আমার হায়েয দেখা দিল। তখন আমি চুপিসারে বেরিয়ে এসে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে ডেকে নিয়ে তাহাঁর চাদরের নীচে স্থান দিলেন। বর্ণনাকারী যায়নাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমাকে উম্মু সালামা (রাদি.) এও বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) রোযা রাখা অবস্থায় তাকে চুমু খেতেন। [উম্মে সালামা (রাদি.) আরও বলেন] আমি ও নাবী (সাঃআঃ) একই পাত্র হইতে পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করতাম।
(২৯৮) (আ.প্র. ৩১১, ই.ফা. ৩১৬)
৬/২২. অধ্যায়ঃ হায়েযের জন্য স্বতন্ত্র কাপড় পরিধান করা।
৩২৩. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক সময় আমি ও নাবী (সাঃআঃ) একই চাদরের নীচে শুয়েছিলাম। আমার হায়েয শুরু হলো। তখন আমি গোপনে বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি হায়েয আরম্ভ হয়েছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি আমাকে ডেকে নিলেন এবং আমি তার সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে পড়লাম।
(২৯৮) (আ.প্র. ৩১২, ই.ফা. ৩১৭)
৬/২৩. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী মহিলাদের উভয় ঈদ ও মুসলমানদের দাওয়াতী সমাবেশে উপস্থিত হওয়া এবং ঈদগাহ হইতে দূরে অবস্থান করা।
৩২৪. হাফসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা আমাদের যুবতীদের ঈদের সালাতে বের হইতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা বনূ কালাফের মহলে এসে পৌঁছলেন এবং তিনি তার বোন হইতে বর্ণনা করিলেন। তার ভগ্নীপতি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বারটি গায্ওয়াহ (বড় যুদ্ধ) –এ অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেনঃ আমার বোনও তার সঙ্গে ছয়টি গায্ওয়ায় শরীক ছিলেন। সেই বোন বলেনঃ আমরা আহতদের পরিচর্যা ও অসুস্থদের সেবা করতাম। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমাদের কারো ওড়না না থাকার কারণে বের না হলে কোন অসুবিধা আছে কি? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তার সাথীর ওড়না তাকে পরিয়ে দেবে, যাতে সে ভাল মজলিস ও মুমিনদের দাওয়াতে শরীক হইতে পারে। যখন উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) আসলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি নাবী (সাঃআঃ) হইতে এরূপ শুনেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমার পিতা তাহাঁর জন্য কুরবান হোক। হ্যাঁ, তিনি এরূপ বলেছিলেন। নাবীর কথা আলোচিত হলেই তিনি বলিতেন, “আমার পিতা তার জন্য কুরবান হোক।” আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যুবতী, পর্দানশীন ও ঋতুবতী মহিলারা বের হইবে এবং ভাল স্থানে ও মুমিনদের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করিবে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলা ঈদগাহ হইতে দূরে থাকবে। হাফসা (রাদি.) বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম ঋতুবতীও কি বেরুবে? তিনি বললেনঃ সে কি আরাফাতে ও অমুক অমুক স্থানে উপস্থিত হইবে না?
(৯৩৫১, ৯৭১, ৯৭৪, ৯৮০, ৯৮১, ১৬৫২; মুসলিম ৮/১, হাদীস ৮৯০) (আ.প্র. ৩১৩, ই.ফা. ৩১৮)
৬/২৪. অধ্যায়ঃ একই মাসে তিন হায়েয হলে। সম্ভাব্য হায়েয ও গর্ভধারণের ব্যাপারে স্ত্রীলোকের কথা গ্রহণ যোগ্য।
কারণ আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেনঃ “তাদের পক্ষে বৈধ নয় গোপন রাখা যা আল্লাহ তাদের জরাযুতে সৃষ্টি করিয়াছেন।” (সুরা আল-বাক্বারা ২ : ২২৮) ।
আলী ও শুরাযহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। যদি মহিলার নিজ পরিবারের দ্বীনদার কেউ সাক্ষ্য দেয় যে, এ মহিলা মাসে তিন বার ঋতুবতী হয়েছে, তবে তার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ মহিলার হায়েযের দিন গণনা করা হইবে তার পূর্ব স্বভাব অনুসারে। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও অনুরূপ বলেন। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেনঃ হায়েয একদিন হইতে পনের দিন পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুতামির তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ আমি ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে এমন মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে তার পুর্ব অভ্যাস অনুযায়ী হায়েযের পাঁচ দিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত দেখে? তিনি জবাবে বললেনঃ এ ব্যাপারে মহিলারা ভাল জানে।
৩২৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনতু আবু হুবায়শ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আমার ইস্তিহাযা হয়েছে এবং পবিত্র হচ্ছি না। আমি কি সালাত পরিত্যাগ করবো? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ না, এ হলো রগ থেকে বের হওয়া রক্ত। তবে এরূপ হওয়ার পূর্বে যতদিন হায়েয হতো সে কয়দিন সালাত অবশ্যই পরিত্যাগ করো। তারপর গোসল করে নিবে ও সালাত আদায় করিবে।
(২২৮) (আ.প্র. ৩১৪, ই.ফা. ৩১৯)
৬/২৫. অধ্যায়ঃ হায়েযের দিন গুলো ছাড়া হলুদ এবং মেটে রং দেখা।
৩২৬. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা মেটে ও হলুদ রং হায়েযের মধ্যে গণ্য করতাম না।
(আ.প্র. ৩১৫, ই.ফা. ৩২০)
৬/২৬. অধ্যায়ঃ ইস্তিহাযার শিরা।
৩২৭. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ উম্মু হাবীবাহ (রাদি.) সাত বছর পর্যন্ত ইস্তিহাযায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি তাঁকে গোসলের নির্দেশ দিলেন এবং বললেনঃ এ রগ থেকে বের হওয়া রক্ত। অতঃপর উম্মু হাবীবা (রাদি.) প্রতি সালাতের জন্য গোসল করিতেন।
(মুসলিম ৩/১৪, হাদীস ৩৩৪, আহমাদ ২৭৫১৬) (আ.প্র. ৩১৬, ই.ফা. ৩২১)
৬/২৭. অধ্যায়ঃ ত্বওয়াফে যিয়ারাতের পর স্ত্রীলোকের হায়েয শুরু হওয়া।
৩২৮. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! সফিয়্যাহ বিনতু হুয়াইয়ের হায়েয শুরু হয়েছে। তিনি বললেনঃ সে তো আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে। সে কি তোমাদের সঙ্গে তাওয়াফে-যিয়ারত করেনি? তাঁরা জবাব দিলেন, হ্যাঁ করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ তা হলে বের হও।
(২৯৪) (আ.প্র. ৩১৭, ই.ফা. ৩২২)
৩২৯. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ (তাওয়াফে যিয়ারতের পর) মহিলার হায়েয হলে তার চলে যাওয়ার অনুমতি রহিয়াছে।
(১৭৫৫, ১৭৬০) (আ.প্র. ৩১৮, ই.ফা. ৩২৩)
৩৩০. See previous Hadith. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এর পূর্বে ইবনু উমার (রাদি.) বলিতেনঃ সে যেতে পারবে না। তারপর তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি যে, সে যেতে পারে। কারণ, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের জন্য (যাওয়ার) অনুমতি দিয়েছিলেন।
(১৭৬১ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩১৮ শেষাংশ, ই.ফা. ৩২৩ শেষাংশ)
৬/২৮. অধ্যায়ঃ ইস্তিহাযাগ্রস্তা নারীর পবিত্রতা দেখা।
ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ ইস্তিহাযাগ্রস্তা নারী দিনের কিছু সময়ের জন্য হলেও পবিত্রতা দেখলে গোসল করিবে ও সালাত আদায় করিবে। আর সালাত আদায় করার পর তার স্বামী তার সাথে মিলতে পারে। কারণ, সালাতের গুরুত্ব অত্যাধিক।
৩৩১. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হায়েয দেখা দিলে সালাত ছেড়ে দাও আর হায়েযের সময় শেষ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নাও এবং সালাত আদায় কর।
(২২৮) (আ.প্র. ৩১৯, ই.ফা. ৩২৪)
৬/২৯. অধ্যায়ঃ নিফাস অবস্থায় মৃত স্ত্রীলোকের জানাযার নামায ও তার পদ্ধতি।
৩৩২. সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একজন প্রসূতি মহিলা মারা গেলে নাবী (সাঃআঃ) তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন। সালাতে তিনি মহিলার দেহের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন।
(১৩৩১, ১৩৩২ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩২০, ই.ফা. ৩২৫)
৬/৩০. অধ্যায়ঃ
৩৩৩. আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আমার খালা নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী মাইমূনা (রাদি.) হইতে শুনিয়াছি যে, তিনি হায়েয অবস্থায় সালাত আদায় করিতেন না; তখন তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সালাতের সিজদার জায়গায় সোজাসুজি শুয়ে থাকতেন। নাবী (সাঃআঃ) তার চাটাইয়ে সালাত আদায় করিতেন। সিজদা করার সময় তাহাঁর কাপড়ের অংশ আমার (মাইমূনাহর) শরীর স্পর্শ করতো।
(৩৭৯, ৩৮১, ৫১৭, ৫১৮ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩২১, ই.ফা. ৩২৬)
Leave a Reply