মুমিন, দরুদ, ছবিযুক্ত কাপড় ও হাউজে কাউসার হাদিস
মুমিন, দরুদ, ছবিযুক্ত কাপড় ও হাউজে কাউসার হাদিস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৩৫, অনুচ্ছেদঃ (১৪-৩২)=টি
১৪. অনুচ্ছেদঃ হাওযে কাওসারের বর্ণনা
১৫. অনুচ্ছেদঃ হাওযের পানপাত্রের বর্ণনা
১৬. অনুচ্ছেদঃ এই উম্মাতের সত্তরহাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে
১৭. অনুচ্ছেদঃ কতই না নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি
১৮. অনুচ্ছেদঃ মুমিনকে সাহায্য করার সাওয়াব
১৯. অনুচ্ছেদঃ বৈধ অক্ষতিকর বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ফাযীলত
২০. অনুচ্ছেদঃ আমার কাছে এলে তোমাদের যে অবস্থা হয় তা বহাল থাকলে
২১. অনুচ্ছেদঃ প্রতিটি জিনিসের উত্থান-পতন আছে
২২. অনুচ্ছেদঃ মানুষ কামনা-বাসনা ও বিপদাপদে বেষ্টিত
২৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উপর কত সময় দরুদ পড়বে
২৪. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্কে যথাযথ লজ্জা করা
২৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি বুদ্ধিমান
২৬. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যুকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করার ফাযীলাত
২৭. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়া প্রসঙ্গে
২৮. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়াবী আসক্তি ধ্বংসের কারণ হইবে
২৯. অনুচ্ছেদঃ গ্রহণকারীর চাইতে প্রদানকারী উত্তম
৩০. অনুচ্ছেদঃ —
৩১. অনুচ্ছেদঃ ওজন করায় বারাকাত চলে গেল
৩২. অনুচ্ছেদঃ ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে পর্দা না বানানো
১৪. অনুচ্ছেদঃ হাওযে কাওসারের বর্ণনা
২৪৪২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার হাওযে কাওসারের পাশে আকাশের তারকার সমসংখ্যক পানপাত্র রয়েছে।
হাউজে কাউসার হাদিস-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪৩০৪], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪৩. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি করে হাওয হইবে। আর এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর গর্ববোধ করবেন যে, কার হাওযে কত বেশি লোক অবতরণ করিবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে, আমার হাওযেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক আসবে।
হাউজে কাউসার হাদিস-সহীহ, তাখরীজু তাহাভীয়া [১৯৭], মিশকাত [৫৫৯৪], সহীহাহ্ [১৫৮৯]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি আশআস ইবনি মালিক [রাহঃ] হাসান বাসরীর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এই সূত্রে সামুরার [রাদি.] উল্লেখ নেই এবং এটিই সহিহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ হাওযের পানপাত্রের বর্ণনা
২৪৪৪. আবু সাল্লাম আল-হাবশী [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাহঃ] এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন আমাকে তাহাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সে একটি খচ্চরের পিঠে আমাকে বহন করিয়ে নিয়ে চললো। তারপর তিনি [আবু সাল্লাম] খালীফার দরবারে হাযির হয়ে বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন! আমাকে এই খচ্চরের পিঠে সাওয়ার হয়ে আসতে খুবই কষ্ট সহ্য করিতে হয়েছে। তিনি বলিলেন, হে আবু সাল্লাম! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে এখানে আনিনি, বরং আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি হাওযে কাওসার সম্পর্কে সাওবান [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন? অতএব, আমি পছন্দ করলাম যে, আপনি আমার সামনে তা বর্ণনা করবেন। আবু সাল্লাম বলেন, সাওবান [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইয়ামান দেশের আদান হইতে সিরিয়ার অন্তর্গত বালকা শহরের আম্মান নামক জায়গার দূরত্বের সমান হইবে আমার হাওযের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমান। এর পানির রং দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং পানপাত্রের সংখ্যা হইবে আকাশের তারকার সমসংখ্যক। যে ব্যক্তি তা হইতে এক ঢোক পানি পান করিবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হইবে না। সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করিবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের মাথার চুল উষ্কখুষ্ক, পোশাক ধূলিমলিন, যারা ধনীর দুলালীদের বিয়ে করেননি এবং যাদের জন্য বন্ধ দরজা খোলা হতো না। উমার [রাহঃ] বলেন, কিন্তু আমি তো সুখ-স্বাচ্ছন্দে লালিতা-পালিতাকে বিয়ে করেছি, আমার জন্য বন্ধ দরজা খোলা হয়, আমি খালীফা আবদুল মালিকের আদরের দুলালী ফাতিমাকে বিয়ে করেছি। আমার মাথার চুল ধূলিমলিন হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধুবো না এবং আমার পরনের জামা ময়লাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধুবো না।
হাউজে কাউসার হাদিস-হাদীসের মারফূ অংশটুকু সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪৩০৩]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি এই সূত্রে গারীব। এ হাদীসটি মাদান ইবনি আবী তালহা হইতে সাওবান [রাদি.] এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে। আবু সাল্লাম আল-হাবশীর নাম মামতূর, তিনি সিরিয়ার অধিবাসী এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
২৪৪৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! হাওযে কাওসারের পানপাত্রের সংখ্যা কত হইবে? তিনি বললেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ ও তারকারাজির সংখ্যার চেয়েও বেশি হইবে এর পানপাত্রের সংখ্যা। আর সেগুলো হইবে জান্নাতের পাত্র। তা হইতে যে লোক একবার পান করিবে, সে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আর কখনো তৃষ্ণার্ত হইবে না। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান যা সিরিয়ার অন্তর্গত আম্মান হইতে ইয়ামানের আইলার [দূরত্বের] সমান। এর পানি হইবে দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।
হাউজে কাউসার হাদিস-সহীহ, আয্যিলাল [৭২১], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ গারীব। হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবু বারযা আল-আস্লামী, ইবনি উমার, হারিসা ইবনি ওয়াহ্ব ও আল-মুসতাওরিদ ইবনি শাদ্দাদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসে এ কথাটুকু উল্লেখ আছেঃ “কূফা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যকার দূরত্বের সমান হইবে আমার হাওযের বিস্তৃতি”।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ এই উম্মাতের সত্তরহাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে
২৪৪৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিরাজের রাত্রিতে যখন ঊর্ধারোহণ করিলেন, তখন তিনি নাবী ও নাবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখিতে পেলেন তাহাদের সাথে আছে তাহাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নাবী ও তাহাঁর সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নাবীর সাথে কেউ নেই। অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা [আঃ] ও তাহাঁর উম্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করিলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেনঃ যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থ্যাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাহাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হইবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনি মিহসান [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! আমি কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলিল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বলিলেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।
সহীহ, বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি মাসউদ ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ কতই না নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি
২৪৪৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা দ্বীনের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে যে অবস্থায় ছিলাম বর্তমানে তো সেগুলো দেখিতেই পাচ্ছি না। [বর্ণনাকারী বলেন] আমি বললাম, বর্তমানে নামাযের অবস্থা কি? তিনি বলিলেন, তোমরা কি নামাযের ভিতর এমন সব কাজ কর নি যা তোমরা জান [প্রতিটি আমলে নতুন নতুন নিয়ম প্রবেশ করেছে]?
সহীহ, বুখারী [৫২৯, ৫৩০]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং এই সুত্রে আবু ইমরান আল-জাওনীর রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব। আনাস [রাদি.] হইতে ভিন্ন সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত আছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪৮. আসমা বিনতু উমাইস আল-খাসআমিয়্যা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে নিজেকে বড় মনে করে এবং অহংকার করে আর আল্লাহ্ তাআলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে যালিম হয়ে যুলুম করে এবং পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাআলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে সত্যবিমুখ হয়ে অনর্থক কাজে লিপ্ত হয় এবং গোরস্থান ও মাটিতে মিশে যাওয়ার কথা ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে বিদ্রোহী হয়ে অবাধ্যতা করে এবং তার সূচনা ও পরিণতিকে ভুলে যায়। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে দ্বীনের বিনিময়ে দুনিয়া হাসিল করার পথ অবলম্বন করে। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে সন্দেহজনক বিষয়ের উপর আমল করে দ্বীনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে লালসার গোলাম হয়ে যায়, লালসা তাকে টেনে নিয়ে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে তার প্রবৃত্তি ভুল পথে পরিচালিত করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে প্রবৃত্তির চাহিদা লাঞ্ছিত করে।
যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী [৫১১৫], যঈফা [২০২৬] যিলাল [৯-১০]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। এর সনদ তেমন মজবুত নয়।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ মুমিনকে সাহায্য করার সাওয়াব
২৪৪৯. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত ঈমানদার ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মুমিন ব্যক্তিকে পানি পান করাবে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সীলমোহর করা খাঁটি “রাহীক মাখতূম” পান করাবেন। যে মুমিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মুমিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন।
যইফ, মিশকাত [১৯১৩], যঈফ আবু দাঊদ [৩০০]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি আতিয়্যা হইতে আবু সাঈদ [রাদি.] সূত্রে মাওকূফরূপে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মতে মাওকূফ বর্ণনাটি অনেক বেশী সহীহ ও সমাঞ্জস্যপূর্ণ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪৫০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক ভয় পায় সে ভোররাতেই যাত্রা শুরু করে, আর ভোররাতেই যে লোক যাত্রা শুরু করে, সে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলার পণ্য খুবই দামী। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলার পণ্য হল জান্নাত।
সহীহ, সহীহাহ্ [৯৫৪, ২৩৩৫], মিশকাত তাহকীক ছানী [৫৩৪৮]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র আবুন নাযরের সুত্রেই জেনেছি।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ বৈধ অক্ষতিকর বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ফাযীলত
২৪৫১. রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী আতিয়্যা আস-সাদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দা ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত মুত্তাকীদের পর্যায়ে উন্নীত হইতে পারবে না।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪২১৫]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ আমার কাছে এলে তোমাদের যে অবস্থা হয় তা বহাল থাকলে
২৪৫২. হানযালা আল-উসাইদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আমার সামনে এসে যেরূপ অবস্থায় থাক, সদা-সর্বদা যদি এভাবেই থাকতে, তাহলে নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তাহাদের ডানা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করে রাখত।
হাসান সহীহ, সহীহাহ্ [১৯৭৬], মুসলিম অনুরূপ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এ হাদীসটি হানযালা আল-উসাইদী [রাদি.] হইতে অন্য সূত্রেও বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২১. অনুচ্ছেদঃ প্রতিটি জিনিসের উত্থান-পতন আছে
২৪৫৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল কাজের পিছনে থাকে প্রেরণা ও উদ্দীপনা, আর উদ্দীপনার পিছনেই লুকিয়ে থাকে অলসতা ও কর্মবিমুখতা। কাজেই যে লোক সোজা পথে চলে এবং নিজেকে মাঝামাঝি পর্যায়ে সোজাভাবে কাজে অটল রাখতে পারে তার সফলতা অর্জনের আশা করিতে পার। আর যদি তার দিকে আঙ্গুলে ইঙ্গিত করা হয় [লোক দেখানো আমল করলে] তাহলে তাকে সফলকাম ব্যক্তিদের মধ্যে গন্য করো না।হাসান, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৩২৫], তালীকুর রাগীব [১/৪৬], আয্যিলাল [১/২৮]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “কারো অনিষ্টতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তার দিকে তার দ্বীন কিংবা দুনিয়ার ব্যাপারে আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়। তবে যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা হিফাযাত করেন তার কথা আলাদা।”কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ মানুষ কামনা-বাসনা ও বিপদাপদে বেষ্টিত
২৪৫৪. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন আমাদেরকে [বুঝানোর] উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি বর্গাকৃতির চতুর্ভুজ আঁকলেন, তারপর এর মাঝ বরাবর একটি লম্বারেখা টানলেন, তারপর একটি লম্বারেখা টানলেন চতুর্ভুজের বাইরে দিয়ে, তারপর মাঝের লম্বারেখার চারিদিকে অনেকগুলো রেখা টানলেন এবং বললেনঃ এটি হলো আদম-সন্তান এবং বেষ্টনী হলো তার জীবনকালের সীমা, যা তাকে বেষ্টন করে রেখেছে। মাঝের লম্বারেখাটি হলো মানুষ, এর চারপাশের রেখাসমূহ হলো তার বিপদাপদ। এর একটি হইতে সে মুক্তি পেলে অন্যটি তাকে দংশন করে। আর বাইরের রেখাটি হলো তার কামনা-বাসনা।
সহীহ, বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৫৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম-সন্তান বৃদ্ধ হওয়ার পরেও তার দুটি স্বভাব যুবকই থাকেঃ সম্পদের লোভ ও বেঁচে থাকার লালসা।
সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪২৩৪], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেল, এ হাদীদটি হাসান সহী্হ্।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৫৬. আবদুল্লাহ ইবনিশ শিখখীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম-সন্তানকে নিরানব্বইটি [অসংখ্য] বিপদাপদ দ্বারা বেষ্টন করেই সৃষ্টি করা হয়। বিপদসমূহ অতিক্রান্ত হলেও সে বার্ধক্যে উপনীত হয়।
হাসান, ২০৫৮ নং হাদীসে পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উপর কত সময় দরুদ পড়বে
২৪৫৭. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলিতেনঃ হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। উবাই [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করবো? তিনি বলিলেন, তুমি যতক্ষণ ইছা কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বলিলেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করিতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হইবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বলিলেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বলিলেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হইবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হইবে।
হাসানঃ সহীহাহ [৯৫৪], ফাযলুস নামাজ আল্লান্নাবী [১৩,১৪]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৪. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্কে যথাযথ লজ্জা করা
২৪৫৮. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তাআলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার জন্য। তিনি বললেনঃ তা নয়, বরং আল্লাহ্ তাআলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষন করিবে এবং পেট ও এর এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাযত করিবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পঁচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করিবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাঁকজমক পরিহার করে। যে লোক এইসকল কাজ করিতে পারে সে-ই আল্লাহ্কে যথাযথভাবে লজ্জা করে।
হাসানঃ রাওযুন নাযীর [৬০১], মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [১৬০৮]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা এই হাদীসটি শুধুমাত্র আব্বাস ইবনি ইসহাক হইতে আস-সাব্বাহ ইবনি মুহাম্মদের সূত্রেই এভাবে জেনেছি।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি বুদ্ধিমান
২৪৫৯. শাদ্দাদ ইবনি আওস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে। আর সেই ব্যক্তি নির্বোধ ও অক্ষম যে তার নাফসের দাবির অনুসরণ করে আর আল্লাহ্ তাআলার নিকটে বৃথা আশা পোষণ করে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪২৬০]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। “মান দানা নাফসাহু” বাক্যাংশের তাৎপর্য এই যে, কিয়ামাতের দিন আত্মাকে হিসাবের সম্মুখীন করার পূর্বেই যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিজের নাফসের হিসাব-নিকাশ নেয়। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলেন, “হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব নাও এবং মহাসমাবেশে হাযির হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার হিসাব-নিকাশ নেয়, কিয়ামাতের দিন তার হিসাব অত্যন্ত হালকা ও সহজ হইবে”। মাইমূন ইবনি মিহরান বলেন, কোন ব্যক্তি খাঁটি মুত্তাকী হইতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে আত্মসমালোচনা করিবে। যেমন কোন ব্যক্তি তার শরীকের নিকট হইতে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নেয় যে, সে খাদ্যদ্রব্য ও কাপড়-চোপড় কোথা থেকে কত মূল্যে সংগ্রহ করেছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৬. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যুকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করার ফাযীলাত
২৪৬০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাযে [জানাযার] এসে দেখেন যে, কিছু লোক হাসাহাসি করছে। তিনি বলিলেন, ওহে! তোমরা যদি জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী মনে করিতে তাহলে আমি তোমাদের যে অবস্থায় দেখছি অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে। তোমরা জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ কর। কেননা কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলিতে থাকে, আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা। তারপর কোন ঈমানদারকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, মারহাবা, স্বাগতম, আমার পিঠের উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাহাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে প্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে, আর তুমি আমার কাছেই এসেছ। সুতরাং তুমি শীঘ্রই দেখবে যে, আমি তোমার সাথে কেমন সৌজন্যমূলক ব্যবহার করি। তারপর কবর তার জন্য দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের দিকে তার একটি দরজা খুলে দেয়া হইবে। আর অপরাধী পাপী কিংবা কাফিরকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, তোমার আগমন অশুভ ও তোমার জন্য স্বাগতম নেই। কেননা আমার উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাহাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে ঘৃণিত ও অপ্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট ফিরে এসেছ। সুতরাং শীঘ্রই দেখবে, আমি তোমার সাথে কেমন জঘন্য আচরণ করি। এই বলে সে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং তার উপর একেবারে চেপে যাবে, ফলে তার পাঁজরের হাড়সমূহ পরষ্পরের মধ্যে ঢুকে যাবে। রাবী বলেন, এ সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক হাতের আংগুলসমূহ অপর হাতের আংগুলে ঢুকিয়ে বলিলেন, এভাবে। তিনি আরও বলিলেন, তার জন্য এরূপ সত্তরটি অজগর সাপ নিয়োগ করা হইবে, তার মধ্যে একটি সাপও যদি যমিনে একবার ফুঁ দেয় তাহলে এতে কোন কিছুই উৎপন্ন হইবে না। তারপর হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত সে অজগরগুলো তাকে দংশন করিতে থাকিবে, খামচাতে থাকিবে। রাবী [আবু সাঈদ] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কবর হল জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান, অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত।
খুবই দুর্বল, যঈফা [৪৯৯০], স্বাদ কর্তনকারী অংশটুকু সহীহ, সহীহা [২৪০৯]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
২৭. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়া প্রসঙ্গে
২৪৬১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বর্ণনা করেছেনঃ কোন এক সময় আমি রাসূল্লুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে দেখলাম একটি মাদুরের উপর তিনি কাৎ হয়ে শুয়ে আছেন। আমি তাহাঁর শরীরের পিঠের অংশে মাদুরের দাগ দেখিতে পেলাম।
সহীহঃ তাখরীজুত তারগীব [৪/১১৪], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। হাদীসটিতে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়াবী আসক্তি ধ্বংসের কারণ হইবে
২৪৬২. আমর ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ [রাদি.]-কে [বাহরাইনে] প্রেরণ করেন। পরে তিনি বাহরাইন হইতে কিছু ধন-দৌলত নিয়ে মাদীনায় ফিরে আসেন। আনসারগণ আবু উবাইদাহ [রাদি.]-এর ফিরে আসার খবর পেয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ফজরের নামাযে উপস্থিত হন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় শেষে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। আনসারগন তখন তার নিকটে এসে গেলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের দেখে সামান্য হেসে বলিলেন, আমার ধারনা তোমরা হয়তো শুনেছো যে, আবু ঊবাইদাহ কিছু ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা বলিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! তিনি বলিলেন তাহলে তোমরা সুখবর গ্রহণ কর। তোমারা যাতে সন্তুষ্ট হইবে এমন বিষয়ের আশা পোষণ কর। আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের গরিবী ও অভাব-অনটনের ভয় করি না, বরং ভয় করি পৃথিবীটা তোমাদের জন্য সম্প্রসারিত করা হইবে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেভাবে করা হয়েছিল। তারপর তোমরা পৃথিবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাবে, যেভাবে তারা অনুরক্ত হয়েছিল। ফলে পৃথিবী তোমাদের বিনাশ করে দিবে, যেভাবে তাহাদেরকে বিনাশ করেছিল।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৯৯৭], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯. অনুচ্ছেদঃ গ্রহণকারীর চাইতে প্রদানকারী উত্তম
২৪৬৩. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আমি কিছু ধন-সম্পদ চাইলাম। তিনি আমাকে [সেটা] দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন, তারপর বলিলেন, হে হাকীম! ধন-দৌলত হলো সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয় বস্তু। সুতরাং যে লোক এটাকে উদার মনে গ্রহণ করিবে, তার জন্যে এতেই মঙ্গল ও রাহমত প্রদান করা হইবে। আর যে লোক তা লোভাতুর মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করিবে, সে তাতে বারকাত ও মঙ্গল্প্রাপ্ত হইবে না। সে এমন লোকের সাথে তুলনীয়, যে খাদ্য গ্রহণ করে প্রচুর কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত [দাতার হাত] নিচের [প্রার্থনাকারীর] হাত হইতে উত্তম। হাকীম [রাদি.] বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করিয়াছেন! আমি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আপনার পর আর কারো নিকট প্রার্থনা করে তার সম্পদে কমতি করবো না। তারপর আবু-বাকর [রাদি.] তার আমলে হাকীম [রাদি.]-কে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর উমার [রাদি.]-ও তাকে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি কিছু নিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। অতঃপর উমার [রাদি.] বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি হাকীমের ব্যাপারে তোমাদেরকে সাক্ষী করছি যে, আমি তাকে গানীমাতের সম্পদ হইতে তার প্রাপ্য উপস্থাপন করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর হাকীম [রাদি.] মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পরে আর কারো নিকট হইতে কোন কিছুই নেননি।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৪. আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা এতে ধৈর্য ধারণ করেছি। তাহাঁর মৃত্যুর পরে সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়িশ দ্বারা আমাদেরকে পরীক্ষা করা হলে আমরা ধৈয্য ও সহনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারিনি।
সনদ সহীহ।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০. অনুচ্ছেদঃ —
২৪৬৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হইবে পরকাল, আল্লাহ্ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে। আর যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হইবে দুনিয়া, আল্লাহ্ তাআলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না।
সহীহঃ সহীহা [৯৪৯-৯৫০]।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৪১০৭]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। আবু খালিদ আল-ওয়ালিবীর নাম হুরমুয।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১. অনুচ্ছেদঃ ওজন করায় বারাকাত চলে গেল
২৪৬৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর সময় আমাদের ঘরে সামান্য কিছু যব ছিল। আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছানুযায়ী আমরা তা থেকে খেতে থাকলাম। আমি একদিন দাসীকে বললাম, এগুলো কৌটা দ্বারা পরিমাপ কর। সে তা পরিমাপ করিল। এরপর কিছু দিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে গেল। তিনি {আয়িশাহ [রাদি.]} বলেন, আমরা এগুলো এমনি রেখে দিলে [যদি না পরিমাপ করতাম] আরো অধিক দিন খেতে পারতাম।
সহীহঃ বুখারী [৬৪৫১], মুসলিম [৮/২১৮] সংক্ষেপিত।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। শাতরুন শব্দের অর্থ সামান্য কিছু।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস৩২. অনুচ্ছেদঃ ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে পর্দা না বানানো
২৪৬৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের ঘরের দরজায় একটি পাতলা রঙিন পর্দা ঝুলানো ছিল, এতে কিছু ছবি ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা দেখে বললেনঃ এটা খুলে নামিয়ে ফেলো। যেহেতু, এটা আমাকে দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি {আয়িশাহ [রাদি.]} আরো বলেন, আমাদের নিকট একটি রেশমি বুটিদার চাদর ছিল, আমরা তা পরিধান করতাম।
সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম [১৩৬], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপযুক্ত সূত্রে গারীব।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘুমানোর বালিশটি ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভিতর ছিল খেজুর গাছের ছাল-বাকলে ভরা।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [২৮২], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ।কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply