হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় ও আসনে বসার নিয়ম
হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় ও আসনে বসার নিয়ম >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৪১, অনুচ্ছেদঃ (১-১৩)=১৩টি
অনুচ্ছেদ-১ঃ হাঁচিদাতার জবাব দেয়া
অনুচ্ছেদ-২ঃহাঁচি দিলে হাঁচিদাতা যা বলবে
অনুচ্ছেদ-৩ঃ হাঁচিদাতার জবাবে যা বলিতে হইবে
অনুচ্ছেদ-৪ঃ হাঁচিদাতা আল-হামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া কর্তব্য
অনুচ্ছেদ-৫ঃ হাঁচিদাতার জবাব কতবার দিতে হইবে
অনুচ্ছেদ-৬ঃ হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখবে এবং আওয়াজ যথাসম্ভব নিচু করিবে
অনুচ্ছেদ-৭ঃ আল্লাহ তাআলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন।
অনুচ্ছেদ-৮ঃ নামাযে হাঁচি আসে শাইতানের পক্ষ থেকে
অনুচ্ছেদ-৯ঃ কাউকে তার আসন থেকে তুলে সেই আসনে বসা মাকরুহ
অনুচ্ছেদ-১০ঃ প্রয়োজনবশতঃ কেউ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে ব্যক্তিই সে আসনের বেশি হক্বদার
অনুচ্ছেদ-১১ঃ বিনা অনুমতিতে দুজনের মাঝখানে বসা মাকরূহ
অনুচ্ছেদ-১২ঃ বৈঠকের মাঝখানে বসা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-১ঃ হাঁচিদাতার জবাব দেয়া
২৭৩৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক মুসলমানের সাথে অন্য মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় আছেঃ [১] তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করিবে, [২] সে কোন ব্যাপারে আহ্বান করলে তাতে সাড়া দিবে, [৩] সে হাঁচি দিলে উত্তর দিবে [তার আলহামদুলিল্লাহ্র উত্তরে বলবে ইয়ারহামুকাল্লাহ], [৪] সে রোগাক্রান্ত হলে তাকে দেখিতে যাবে, [৫] সে ইন্তেকাল করলে তার জানাযায় শারীক হইবে এবং [৬] নিজের জন্য যা ভালোবাসবে পরের জন্যও তাই ভালোবাসবে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৩৩], এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আবু আইয়ূব, বরাআ ও আবু মাসউদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। অন্য সূত্রেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীস বর্ণিত আছে। কেউ কেউ আল-হারিস আল-আওয়াবের সমালোচনা করিয়াছেন। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৭৩৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক মুমিনের জন্য আরেক মুমিনের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছেঃ [১] সে অসুস্থ হলে তাকে দেখিতে যাবে , [২] মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হইবে , [৩] ডাকলে তাতে সাড়া দিবে ,[৪] তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করিবে [৫] সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে এবং [৬] তার অনুপস্হিতিতে কিংবা উপস্থিতি সকল অবস্হায় তার শুভ কামনা করিবে।
সহীহঃ সহীহাহ [৮৩২] , মুসলিম অনুরুপ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । মুহাম্মাদ ইবনি মুসা আল-মাখযুমী আল-মাদানী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী । আবদুল আযীয ইবনি মুহাম্মাদ ও ইবনি আবী-ফুদাইক তার সুত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-২ঃহাঁচি দিলে হাঁচিদাতা যা বলবে
২৭৩৮. নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈক ব্যক্তি ইবনি উমর [রাদি.]এর পাশে হাঁচি দিয়ে বলিল,
الْحَمْدُ لِلَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ
“আলহামদু লিল্লাহি ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ”। ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, আমিও তো বলি,
الْحَمْدُ لِلَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ
“আলহামদু লিল্লাহ ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ” [সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত এবং তাহাঁর রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক]। কিন্তু রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ]আমাদেরকে এ রকম বলিতে শিখাননি , বরং তিনি আমাদেরকে
الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ
“ আলহামদু লিল্লাহ আলা কুল্লি হাল “ [সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা] বলিতে শিখিয়েছেন।
হাসানঃ মিশকাত [৪৭৪৪] ইরওয়াহ [৩/২৪৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব । আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র যিয়াদ ইবনির রাবীর সুত্রেই জেনেছি । হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
অনুচ্ছেদ-৩ঃ হাঁচিদাতার জবাবে যা বলিতে হইবে
২৭৩৯. আবু মুসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইয়াহুদীগন রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে হাঁচি দিত এবং আশা করত যে, তিনি তাহাদের জন্য হাঁচির জবাবে বলবেনঃ
يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ
ইয়ারহামুকুল্লাহ “। কিন্তু তিনি বলিতেনঃ
يَهْدِيكُمُ اللَّهُ
” ইয়াহদীকুমুলাহ ওয়াইউসলিহু বা-লাকুম [আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে হিদায়াত করুন এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করুন]।
সহীহঃ মিশকাত [৪৭৪০] আলী আবু আইয়ূব , সালিম ইবনি উবায়দ , আবদুল্লাহ ইবনি জাফার ও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত রয়েছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৪০. সালিম ইবনি উবাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একদল লোকের সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলেন। তাহাদের একজন হাঁচি দিয়ে বলিল, আসসালামু আলাইকুম। একথা শুনে সালিম বলিলেন, আলাইকা ওয়া আলা উম্মিকা [তোমার উপর ও তোমার মায়ের উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক]। এ উত্তরে মনে হল যেন সে অসন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং তিনি বলিলেন, এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন, আমি তো তাই বললাম জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে হাঁচি দিয়ে বলেছিল,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেনঃ
عَلَيْكَ وَعَلَى أُمِّكَ
আলাইকা ওয়া আলা উষ্মিকা। কাজেই তোমাদের কেউ যেন হাঁচি দিয়ে বলে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আর যে ব্যক্তি তার জবাব দিবে সে যেন বলে,
يَرْحَمُكَ اللَّهُ
ইয়ারহামুকাল্লাহ [আল্লাহ তাআলা আপনাকে রহম করুন]। হাঁচিদাতা আবার বলবে,
يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ
ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম [আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে মাফ করুন]।
যঈফ, ইরওয়া [৩/২৪৬, ২৪৭], মিশকাত তাহকীক ছানী [৪৭৪১], আবু ঈসা বলেন, মানসূর হইতে এ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবীগণ মতের অমিল করিয়াছেন। তারা হিলাল ইবনি ইসাফ ও সালিম [রঃ]-এর মাঝখানে আরো এক ব্যক্তির উল্লেখ করিয়াছেন। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৭৪১. আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ যখন হাঁচি দিবে তখন সে যেন বলে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ
আল-হামদু লিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। উত্তরদাতা বলবে ,
يَرْحَمُكَ اللَّهُ
ইয়ারহামুকাল্লাহ। হাঁচিদাতা আবার বলবে ,
يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ
ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়াইউসলিহু বা-লাকুম।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭১৫],মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না –মুহাম্মাদ ইবনি জাফার হইতে, তিনি শুবাহ হইতে , তিনি আবু লাইলা [রঃ] হইতে এই সনদসুত্রে উপরের হাদীসের একি রকম হাদীস বর্ণিত হয়েছে। শুবাহও এ হাদীসটি ইবনি আবু লাইলার সুত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ ইবনি আবী লাইলা এই হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ইযতিরাব করিয়াছেন । কখনো বলেছেনঃ আবু আইয়ূব নাবী [সাল্লালাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম] এর সুত্রে বর্ণিত । কখনো বলেছেনঃ আবু আইয়ূব নাবী [সাঃআঃ]হইতে, আবার কখনো বলেছেন, আলী [রাদি.]–রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] সুত্রে বর্ণিত । মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া আস-সাকাফী আল-মারওয়াযী তারা উভয়ে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান হইতে, তিনি ইবনি আবী লাইলা হইতে, তিনি তার ভাই ঈসা হইতে , তিনি আবদুর রাহমান ইবনি আবী লাইলা হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে, তিনি রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মতো বর্ণনা করিয়াছেন । হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৪ঃ হাঁচিদাতা আল-হামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া কর্তব্য
২৭৪২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে দুজন লোক হাঁচি দিলো। তিনি তাহাদের একজনের হাঁচির জবাবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলিলেন, কিন্তু অন্যজনের জবাব দিলেন না। তিনি যার হাঁচির জবাব দেননি সে প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দেননি। রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সে তো [আল-হামদু লিল্লাহ বলে] আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছে, কিন্তু তুমি তো “আল-হামদু লিল্লাহ “ বলনি।
সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাদীসটি সহীহ। হাদীসটি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] এর সুত্রেও নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৫ঃ হাঁচিদাতার জবাব কতবার দিতে হইবে
২৭৪৩. ইয়াস ইবনি সালামাহ [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে হাঁচি দিল। আমিও তখন উপস্থিত ছিলাম। রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন,
يَرْحَمُكَ اللَّهُ
“ইয়ারহামুকাল্লাহ”। সে আরেকবার হাঁচি দিলে রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ লোকটি সর্দিতে আক্রান্ত।
সহীহ ; ইবনি মা-জাহ [৩৭১৪], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। রাসুলাল্লাহ [সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি ইকরিমাহ ইবনি আম্মার হইতে, তিনি ইয়াস ইবনি সালামাহ হইতে তার বাবার বর্ণনা করিয়াছেন। তবে বর্ণনায় তৃতীয়বার হাঁচি দেয়ার পর তিনি বলেছেনঃ তুমি সর্দিতে আক্রান্ত। ইবনিল মুবারাকের হাদীসের চাইতে এ হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ। শুবাহ [রঃ] ইকরিমাহ ইবনি আম্মারের সুত্রে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের হাদীসের একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আহমাদ ইবনিল হাকাম আল-বাস্রী-মুহাম্মাদ ইবনি জাফার হইতে, তিনি শুবাহ হইতে, তিনি ইকরিমাহ ইবনি আম্মার [রঃ] হইতে এই সুত্রেও উক্ত হাদীস অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রাহমান ইবনি মাহদী ইকরিমা ইবনি আম্মার হইতে ইবনি মুবারাকের বর্ণনায় মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে আছে যে, তৃতীয়বারে রাসুলাল্লাহ [সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ তুমি সর্দিতে আক্রান্ত। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৪৪. উমার ইবনি ইসহাক ইবনি আবু তালহা [রঃ]এর নানা হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনবার পর্যন্ত হাঁচির উত্তর দাও। এরপরও সে যদি হাঁচি দেয় তবে তুমি চাইলে তার উত্তর দিতেও পার নাও দিতে পার।
যঈফ, যঈফা [৪৮৩০], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব এবং এর সনদসূত্র অপরিচিত। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-৬ঃ হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখবে এবং আওয়াজ যথাসম্ভব নিচু করিবে
২৭৪৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যখন হাঁচি দিতেন, তখন তাহাঁর হাত কিংবা কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে রাখতেন এবং এর মাধ্যমে তাহাঁর আওয়াজ নীচুঁ করিতেন।
হাসান সহীহঃ রাওযুন নাযীর [১১০৯], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
অনুচ্ছেদ-৭ঃ আল্লাহ তাআলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন।
২৭৪৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হাঁচি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর হাই শাইতানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমাদের মাঝে কেউ হাই তুললে সে যেন মুখের উপর হাত রাখে। আর সে যখন আহ আহ বলে, তখন শাইতান তার ভিতর হইতে হাসতে থাকে। আল্লাহ –তাআলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্ধ করেন। কাজেই কেউ যখন আহ আহ শব্দে হাই তোলে , তখন শাইতান তার ভিতর হইতে হাসতে থাকে।
হাসান সহীহঃ তালীক আলা ইবনে খুযাইমাহ [৯২১ ,৯২২] , ইরওয়াহ [৭৭৯] , বুখারী অনুরুপ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৭৪৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের মাঝে কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলার সময় সকল শ্রোতার জন্য ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা খুবই জরুরী হয়ে যায়। আর তোমাদের মাঝে কারও হাই উঠার সময় যথাসম্ভব সে যেন তা ফিরিয়ে রাখে এবং আহ্ আহ্ না বলে। কেননা এটা শাইতানের পক্ষ হইতে এবং সে তাতে হাসতে থাকে।
সহীহঃ ইরওয়াহ্ [৭৭৬], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। ইবনি আজলানের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের চাইতে এ হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ। সাঈদ আল-মাক্ববুরী হইতে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ইবনি আবু যিব [রঃ] ইবনি আজলানের চাইতে অনেক হিফাযাতকারী ও নির্ভরযোগ্য। আমি তিরমিযী আবু বাক্র আল-আত্তার আল-বাসরীকে আলী ইবনিল মাদীনীর সূত্রে আলোচনা করিতে শুনিয়াছি, তিনি ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদকে বলিতে শুনেছেন, মুহাম্মাদ ইবনি আজলান বলেন, সাঈদ আল-মাক্ববুরী তার রিওয়ায়াতসমূহের কতগুলো আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং কতগুলো জনৈক ব্যক্তির সূত্রে আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তাই আমার নিকট এগুলো একটি অন্যটির সাথে মিলে যাবার কারণে আমি সবগুলো রিওয়ায়াত সাঈদ-আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করেছি। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৮ঃ নামাযে হাঁচি আসে শাইতানের পক্ষ থেকে
২৭৪৮. আদী ইবনি সাবিত [রঃ] হইতে পালাক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
আদী ইবনি সাবিত [রঃ] হইতে পালাক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে মারফূ হিসেবে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ নামাযের মধ্যে হাঁচি, তন্দ্রা ও হাই তোলা এবং হায়িয, বমি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া শাইতানের পক্ষ হইতে।
যঈফ, মিশকাত [৯৯৯], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র শারীক হইতে ইয়াকযান সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল [বুখারী]-কে আদী ইবনি সাবিত-তার পিতা-তার দাদা এই সনদসূত্র প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। আমি বললাম, আদীর দাদার নাম কি? তিনি বলিলেন, আমি জানি না। ইয়াহ্ইয়া ইবনি মাঈন প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে, তিনি আদীর দাদার নাম দীনার বলেছেন। হাঁচির জবাবে কি বলতে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-৯ঃ কাউকে তার আসন থেকে তুলে সেই আসনে বসা মাকরুহ
২৭৪৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যেন তার কোন ভাইকে তার আসন থেকে তুলে দিয়ে সেই আসনে না বসে।
সহীহঃ বুখারী [৬২৬৯], মুসলিম [৭/৯-১০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৫০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইকে তার আসন থেকে তুলে দিয়ে সে সেখানে না বসে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা ইবনি উমারের জন্য জায়গা ছেড়ে দিত কিন্তু তিনি তাতে বসতেন না।
সহীহঃ বুখারী [৬২৭০], মুসলিম [৭/১০]। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১০ঃ প্রয়োজনবশতঃ কেউ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে ব্যক্তিই সে আসনের বেশি হক্বদার
২৭৫১. ওয়াহ্হাব ইবনি হুযাইফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ আসনের বেশি হক্বদার। সে ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলে এ জায়গার জন্য সেই বেশি হক্বদার।
সহীহঃ ইরওয়াহ্ [২/২৫৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু বাক্রাহ্, আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১১ঃ বিনা অনুমতিতে দুজনের মাঝখানে বসা মাকরূহ
২৭৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আম্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ অনুমতি ব্যতীত দুজন লোককে ফাঁক করে বসা কারো জন্য বৈধ নয়।
হাসান সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৭৪০৩], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি আম্র ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে আমির আল-আহ্ওয়ালও বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
অনুচ্ছেদ-১২ঃ বৈঠকের মাঝখানে বসা নিষেধ
২৭৫৩. আবু মিজলায [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
কোন এক লোক বৈঠকের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফা [রাদি.] বলেন, যে ব্যক্তি বৈঠকের মাঝখানে বসে, সে মুহাম্মাদের ভাষায় লানত প্রাপ্ত অথবা আল্লাহ মুহাম্মাদের জবানীতে তাকে অভিশাপ দিয়েছেন।
যঈফ, যঈফা [৬৩৮], মিশকাত [৪৭২২], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু মিজলাযের নাম লাহিক ইবনি হুমাইদ। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়
২৭৫৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাহাবীদের নিকট রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না।
সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল [২৮৯], যঈফা ৩৪৬ নং হাদীসের অধীনে, মিশকাত [৪৬৯৮], নাকদুল কাত্তানী পৃষ্ঠা [৫১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, এই সূত্রে গারীব। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭৫৫. আবু মিজলায [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুআবিয়াহ্ [রাদি.] বাইরে বের হলে তাকে দেখে আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর ও ইবনি সাফ্ওয়ান দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বলিলেন, তোমরা দুজনেই বস। আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ এতে যে লোক আনন্দিত হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।
সহীহঃ মিশকাত [৪৬৯৯], আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। হান্নাদ-আবু উসামাহ্ হইতে, তিনি হাবীব ইবনিশ্ শাহীদ হইতে, তিনি আবু মিজলায হইতে, তিনি মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ তিরমিযী শরীফ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply