হাঁচির জবাব । করমর্দন আলিঙ্গন কদমবুচি ও চুমা দেয়া এর হাদীস

হাঁচির জবাব

হাঁচির জবাব , এই অধ্যায়ে হাদীস = ৬০ টি হাদীস ( ৯২৭ – ৯৮৬) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ১৪ হাঁচি ও তার জবাবদান

৪১৫. অনুচ্ছেদঃ হাঁচি দেয়া।
৪১৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যা বলবে।
৪১৭. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতার জবাব দেয়া।
৪১৮. অনুচ্ছেদঃ যে হাঁচি দিতে শোনবে সে বলবে, আলহামদু লিল্লাহ।
৪১৯. অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিতে শোনলে কিভাবে জবাব দিবে?
৪২০. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা আল্লাহর প্রশংসা না করলে হাঁচির জবাব দিবে না।
৪২১. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা প্রথমে কি বলবে?
৪২২. অনুচ্ছেদঃ যিনি বলেন, তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে থাকলে তিনি তোমাকে দয়া করুন।
৪২৩. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন হাঁচি দিয়ে ‘আ-ব’ না বলে।
৪২৪. অনুচ্ছেদঃ কেউ বারবার হাঁচি দিলে।
৪২৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ইহুদী হাঁচি দিলে।
৪২৬. অনুচ্ছেদঃ পুরুষ লোকের নারীর হাঁচির জবাব দেয়া।
৪২৭. অনুচ্ছেদঃ হাই তোলা।
৪২৮. অনুচ্ছেদঃ কাউকে ডাকলে জবাবে লাব্বায়েক বলা।
৪২৯. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের সম্মানার্থে কোন ব্যক্তির দাঁড়ানো।
৪৩০. অনুচ্ছেদঃ উপবিষ্ট ব্যক্তির জন্য কারো দাঁড়ানো।
৪৩১. অনুচ্ছেদঃ কারো হাই উঠলে যেন নিজ মুখে হাত দেয়।
৪৩২. অনুচ্ছেদঃ একজন অপরজনের মাথার উকুন বেছে দিবে কি?
৪৩৩. অনুচ্ছেদঃ অবাক-বিস্ময়ে মাথা দোলানো এবং দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরা।
৪৩৪. অনুচ্ছেদঃ হতবাক হয়ে বা অন্য কারণে কারো নিজ উরুতে চপেটাঘাত করা।
৪৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে উপবিষ্ট ব্যক্তি তার সম্মানে অপরের দণ্ডায়মান হওয়াকে অপছন্দ করে।
৪৩৭. অনুচ্ছেদঃ [দুনিয়া কতই না তুচ্ছ]।
৪৩৮. অনুচ্ছেদঃ কারো পায়ে ঝিঝি ধরলে যা বলবে।
৪৩৯.অনুচ্ছেদঃ [প্রথম তিন খলীফাকে জান্নাতের সুসংবাদ]।
৪৪০. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের সাথে মোসাফাহা করা।
৪৪১. অনুচ্ছেদঃ মোসাফাহা [করমর্দন]।
৪৪২. অনুচ্ছেদঃ শিশুর মাথায় কোন মহিলার হাত বুলানো।
৪৪৩. অনুচ্ছেদঃ মুয়ানাকা [আলিঙ্গন]।
৪৪৪. অনুচ্ছেদঃ নিজ কন্যাকে চুমা দেয়া।
৪৪৫. অনুচ্ছেদঃ হাতে চুমা দেয়া।
৪৪৬. অনুচ্ছেদঃ পায়ে চুমা দেয়া [কদমবুচি]।
৪৪৭. অনুচ্ছেদঃ একজনের সম্মানার্থে অপরজনের দাঁড়ানো।

৪১৫. অনুচ্ছেদঃ হাঁচি দেয়া।

৯২৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা করলে এবং যে কোন মুসলমান তা শোনতে পেলে হাঁচির জবাব দেয়া তার কর্তব্য। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব কেউ তা যেন যথাসাধ্য প্রতিহত করে। কোন ব্যক্তি হাই তুলে ‘হা’ [মুখ গহব্বর ফাঁক] করলে তাতে শয়তান [আনন্দে] অট্টহাসি দেয়।

-[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান, ইবনি খুজাইমাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪১৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যা বলবে।

৯২৮.ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে শুধু

الْحَمْدُ لِلَّ

‘আলহামদু লিল্লাহ’

বললে একজন ফেরেশতা বলেন,

رَبَّ الْعَالَمِينَ

‘রব্বিল আলামীন’।

আর সে

رَبَّ الْعَالَمِينَ

‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’

বললে ফেরেশতা বলেন,

 يَرْحَمُكَ اللَّهُ

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ [আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন]।

[তাবারানি] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৯২৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যেন

الْحَمْدُ لِلَّ

‘আলহামদুলিল্লাহ’

বলে। সে الْحَمْدُ لِلَّ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার অপর [মুসলমান] ভাই বা সংগী যেন

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’

বলে। সে তার জবাবে يَرْحَمُكَ اللَّهُ ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললে [শুকরিয়াস্বরূপ] সে যেন বলে,

يَهْدِيكَ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكَ

‘ইয়াহদিকাল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকা’ [আল্লাহ তোমায় সৎপথে চালিত করুন এবং তোমার অবস্থার সংশোধন করুন]।

[বোখারী, আবু দাউদ] ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] এই বিষয়বস্তু সংক্রান্ত হাদিসমূহের মধ্যে উক্ত হাদিসকে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য বলেছেন। হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪১৭. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতার জবাব দেয়া।

৯৩০. আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ ইবনি আনউম আল-ইফরীকী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন যে, তারা মুআবিয়া [রাঃআঃ]-এর আমলে নৌ-যুদ্ধে যোগদান করেন। পথিমধ্যে আমাদের জাহাজ আবু আইউব আনসারী [রাঃআঃ]-র জাহাজের নিকটবর্তী হলে এবং আমাদের সকালের খাবার উপস্থিত হলে আমরা তার নিকট লোক পাঠালাম। তিনি এসে বলেন, তোমরা আমাকে দাওয়াত দিয়েছো। কিন্তু আমি রোযাদার। তবুও আমি তোমাদের দাওয়াত কবুল করেছি। কারণ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ এক মুসলমানের উপর তার অপর মুসলমান ভাইয়ের ছয়টি অনিবার্য দাবি রহিয়াছে। যদি কেউ তার একটিও লংঘন করে তবে সে তার ভাইয়ের প্রতি একটি অপরিহার্য কর্তব্য পালন করলো না। [১] তার সাথে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম দিবে। [২] সে তাকে দাওয়াত দিলে তা কবুল করিবে। [৩] সে হাঁচি দিলে [ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে] তার জবাব দিবে। [৪] সে রোগগ্ৰস্ত হলে তাকে দেখিতে যাবে। [৫] সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করিবে এবং [৬] সে পরামর্শ চাইলে তাকে উত্তম পরামর্শ দিবে। রাবী বলেন, আমাদের সাথে [ঐ অভিযানে] একজন রসিক লোকও ছিলেন। তিনি আমাদের সাথে আহাররত এক ব্যক্তিকে বলেন, আল্লাহ তোমাকে অতিশয় উত্তম প্রতিদান দিন। তাকে বারবার এরূপ বললে সে ক্ষেপে যেতো। রসিক ব্যক্তি আবু আইউব [রাঃআঃ]-কে বলেন, এই লোকটি সম্পর্কে আপনি কি রলেন, আমি তাকে

جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا وَبِرًّا

‘জাযাকাল্লাহু খায়রান ওয়া বাররান’

বললে সে ক্ষেপে যায় এবং আমাকে গালি দেয়। আবু আইউব [রাঃআঃ] বলেন, আমরা বলতাম, কল্যাণ যার জন্য বাঞ্ছনীয় নয় অমঙ্গলই তার জন্য বাঞ্ছনীয়। অতএব তাকে এর উল্টা বলো। ঐ লোকটি তার নিকট এলে রসিক ব্যক্তি তাকে বলেন,

جَزَاكَ اللَّهُ شَرًّا وَعَرًّا

জাযাকাল্লাহু শাররান ওয়া আররান [আল্লাহ তোমাকে অমঙ্গল ও কঠোর প্রতিদান দিন]।

লোকটি হেসে দিলো এবং প্রসন্ন হলো আর বললো, তুমি বুঝি তোমার রসিকতা ত্যাগ করিতে পারো না। তিনি বলেন, আল্লাহ আবু আইউব আনসারী [রাঃআঃ]-কে উত্তম প্রতিদান দিন

[তাহযীবুল কামাল]। হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৯৩১. আবু মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের চারটি কর্তব্য রহিয়াছে। [১] সে অসুস্থ হলে তাকে দেখিতে যাবে। [২] সে মারা গেলে তার জানাযায় শামিল হইবে। [৩] সে তাকে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করিবে। [৪] সে হাঁচি দিলে তার হাঁচির জবাব দিবে।

-[ইবনি মাজাহ, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩২. বারাআ ইবনি আযেব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ [১] অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখিতে যেতে, [২] জানাযায় শরীক হইতে, [৩] হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দিতে, [৪] প্রতিজ্ঞা পালন করিতে, [৫] উৎপীড়িতের সাহায্য করিতে, [৬] সালামের বহুল প্রচলন করিতে এবং [৭] দাওয়াত দানকারীর দাওয়াত কবুল করিতে। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ [১] সোনার আংটি পরতে, [২] রূপার বাসনপত্র ব্যবহার করিতে এবং [৩] নরম তুলতুলে রেশমী বস্ত্র, [৪] [তৎকালে মিসরে উৎপাদিত] এক প্রকার রেশমী বস্ত্র, [৫] মোটা রেশমী বস্ত্র, [৬] রেশম ও সূতা মিশ্রিত রেশমী বস্ত্র ও [৭] মিহি রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করিতে।

[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি কর্তব্য রহিয়াছে। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! সেই কর্তব্যগুলো কি কি? তিনি বলেনঃ [১] তার সাথে তোমার সাক্ষাত হলে সালাম দিবে। [২] সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করিবে। [৩] সে তোমার কাছে পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে পরামর্শ দিবে। [৪] সে হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে তুমি তার জবাব দিবে। [৫] সে অসুস্থ হলে তুমি তাকে দেখিতে যাবে। [৬] সে মারা গেলে তুমি তার জানাযায় ও দাফনে শরীক হইবে

। -[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, আবু আওয়ানাসায়ী, ইবনি হিব্বান] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪১৮. অনুচ্ছেদঃ যে হাঁচি দিতে শোনবে সে বলবে, আলহামদু লিল্লাহ।

৯৩৪. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যে ব্যক্তি কাউকে হাঁচি দিতে শোনে বলে,

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا كَانَ

“আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আল কুল্লি হালিন মাকানা” [সর্বাবস্থায় বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য প্রশংসা], কখনো তার দাঁতের ও কানের অসুখ হইবে না।

-[আহমাদ, তাবারানি, ইবনি শায়বাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪১৯. অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিতে শোনলে কিভাবে জবাব দিবে?

৯৩৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে যেন বলে,

 الْحَمْدُ لِلَّهِ

আলহামদু লিল্লাহ [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর]।

সে  الْحَمْدُ لِلَّهِ আলহামদু লিল্লাহ বললে তার অপর ভাই বা সাথী যেন বলে,

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ [আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন]।

আবার হাঁচিদাতা যেন বলে,

يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

ইয়াহদীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম [আল্লাহ তোমাকে সৎপথে চালিত করুন এবং তোমাকে স্বাচ্ছন্দ প্রদান করুন]।

[বোখারী, আবু দাউদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে

 الْحَمْدُ لِلَّهِ

আলহামদু লিল্লাহ

বললে এবং অপর মুসলমান ব্যক্তি তা শোনতে পেলে

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ [আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন]

বলা তার কর্তব্য হয়ে যায়। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তা যথাসাধ্য চেপে রাখে। কারণ তোমাদের কোন ব্যক্তি হাই তুললে তাতে শয়তান আনন্দের হাসি দেয়

। -[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩৭. আবু জামরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-কে হাঁচির জবাবে বলিতে শুনিয়াছি, “আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের দোযখ থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হোন”।

-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জবাবে বলেনঃ

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ।

অতঃপর আরেক ব্যক্তি হাঁচি দিলো কিন্তু তার জবাবে তিনি কিছুই বলেননি। সে ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি ঐ লোকটির হাঁচির জবাব দিলেন, অথচ আমার জন্য কিছুই বলেননি। তিনি বলেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছে কিন্তু তুমি তো কিছুই বলোনি।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২০. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা আল্লাহর প্রশংসা না করলে হাঁচির জবাব দিবে না।

৯৩৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

দুই ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে হাঁচি দিলো। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের একজনের হাঁচির জবাব দিলেন এবং অপরজনের হাঁচির জবাব দেননি। সে বললো, আপনি ঐ ব্যক্তির হাঁচির জবাব দিলেন, অথচ আমার হাঁচির জবাব দেননি। তিনি বলেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছে কিন্তু তুমি আল্লাহর প্রশংসা করোনি

। [বোখারী, মুসলিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৪০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

দুই ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বসলো। তাহাদের একজন ছিল অপরজনের চেয়ে অধিক সম্মানী। তাহাদের মধ্যকার সম্মানী ব্যক্তিটি হাঁচি দিলো কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করলো না। নাবী [সাঃআঃ]-ও তার হাঁচির জবাব দেননি। অতঃপর অপর ব্যক্তি হাঁচি দিলো এবং আল্লাহর প্রশংসা করলো। নাবী [সাঃআঃ] তার হাঁচির জবাব দিলেন। তখন শরীফ ব্যক্তি বললো, আমি আপনার সামনে হাঁচি দিয়েছি, কিন্তু আপনি আমার কোন জবাব দেননি। অথচ এই ব্যক্তি হাঁচি দিলে আপনি তার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করেছে, তাই আমিও তাকে স্মরণ করেছি। অপরদিকে তুমি আল্লাহকে ভুলে রয়েছো, তাই আমিও তোমাকে ভুলে রয়েছি।

-[বোখারী, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২১. অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা প্রথমে কি বলবে?

৯৪১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি হাঁচি দিলে তার জবাবে যখন বলা হতো,

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ, তখন তিনি প্রত্যুত্তরে বলিতেন,

يَرْحَمُنَا اللَّهُ وَإِيَّاكُمْ، وَيَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ

“আল্লাহ আমাকে ও তোমাদেরকে দয়া করুন এবং আমাকে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন”।

[হাকিম, বাযযার] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৪২. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দিলে যেন বলে,

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”।

আর জবাবদাতা বলবে,

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ।

প্রত্যুত্তরে প্রথম ব্যক্তি যেন বলে,

يَغْفِرُ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ

“ইয়াগফিরুল্লাহু লী ওয়ালাকুম” [আল্লাহ আমাকে ও তোমাদের ক্ষমা করুন]

। -[নাসায়ী, হাকিম, তাবারানি] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ

৯৪৩. ইয়াস ইবনি সালাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে হাঁচি দিলে তিনি বলেনঃ

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ [আল্লাহ তোমায় দয়া করুন]।

সে পুনরায় হাঁচি দিলে তিনি বলেনঃ সে সর্দিতে আক্রান্ত।

[মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ]হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২২. অনুচ্ছেদঃ যিনি বলেন, তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে থাকলে তিনি তোমাকে দয়া করুন।

৯৪৪. মাকহুল আল-আযদী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর পাশে উপস্থিত ছিলাম। মসজিদের এক পাশে এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে থাকলে আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ

৪২৩. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন হাঁচি দিয়ে ‘আ-ব’ না বলে।

৯৪৫. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর এক পুত্র আবু বাকর অথবা উমার হাঁচি দিয়ে ‘আ-ব’ শব্দ করলো। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, আ-ব আবার কি? আ-ব তো শয়তানদের মধ্যকার এক শয়তানের নাম। সে এটিকে হাঁচি ও আলহামদু লিল্লাহর মাঝখানে রেখে দিয়েছে।

-[ইবনি আবু শায়বাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৪. অনুচ্ছেদঃ কেউ বারবার হাঁচি দিলে।

৯৪৬. ইয়াস ইবনি সালামা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমার পিতা বলেছেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

ইয়ারহামুকাল্লাহ।

সে পুনরায় হাঁচি দিলে নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এতো সর্দিতে আক্রান্ত।

-[মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, দারিমি] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

হাঁচিদাতার জবাব দাও, একবার, দুইবার, তিনবার, এরপর যা তা সর্দি।

[আবু দাউদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ইহুদী হাঁচি দিলে।

৯৪৮. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

ইহুদীরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে হাঁচি দিতো এই আশায় যে, তিনি তাহাদের জবাবে

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

“ইয়ারহামুকুমুল্লাহ”

বলবেন। কিন্তু তিনি বলিতেনঃ

يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ، فَكَانَ يَقُولُ: «يَهْدِيكُمُ اللَّهُ، وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ [আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থার পরিবর্তন করুন]। –

[আবু দাউদ, তিরমিজী, আবু দাউদ, হাকিম, তাহাবী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৬. অনুচ্ছেদঃ পুরুষ লোকের নারীর হাঁচির জবাব দেয়া।

৯৪৯. আবু বুরদা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবু মূসা [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর মাতা উম্মুল ফাদল [রাঃআঃ]-এর ঘরে ছিলেন। আমি হাঁচি দিলাম কিন্তু তিনি তার জবাব দেননি। অথচ উম্মুল ফাদল [রাঃআঃ] হাঁচি দিলে তিনি তার জবাব দিলেন। আমি [ফিরে এসে] আমার মাতাকে এই কথা জানালাম। অতঃপর আবু মূসা [রাঃআঃ] আমার মায়ের কাছে এলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে হাঁচি দিয়েছিল, কিন্তু আপনি তার জবাব দেননি। অথচ উম্মুল ফাদল [রাঃআঃ] হাঁচি দিলে আপনি তার জবাব দিয়েছেন। আবু মূসা [রাঃআঃ] বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে তোমরা তার জবাব দিও। আর যদি সে আল্লাহর প্রশংসা না করে তবে তোমরা তার জবাব দিও না”। আমার ছেলেটি [অর্থাৎ আপনার ছেলেটি] হাঁচি দিয়েছে, কিন্তু আলহামদু লিল্লাহ বলেনি, তাই আমিও তার জবাব দেইনি। উম্মুল ফাদল [রাঃআঃ] হাঁচি দিয়েছেন এবং আলহামদু লিল্লাহ বলেছেন। তাই আমিও তার জবাব দিয়েছি। আমার মা বলেন, আপনি ঠিক করিয়াছেন।

[মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৭. অনুচ্ছেদঃ হাই তোলা।

৯৫০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন যথাসাধ্য তা চেপে রাখে

[বোখারী, মুসলিম]। হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৮. অনুচ্ছেদঃ কাউকে ডাকলে জবাবে লাব্বায়েক বলা।

৯৫১. মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমি জন্তুযানে নাবী [সাঃআঃ]-এর পিছনে আরোহিত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে মুআয! আমি বললাম, লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক [আমি হাযির আছি] । তিনি পরপর তিনবার এভাবে ডাকলেন, তুমি কি জানো, বান্দার কাছে আল্লাহর কি দাবি আছে? “তারা তার ইবাদত করিবে এবং তার সাথে অপর কিছু শরীক করিবে না”। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ পথ চলার পর আবার ডাকলেনঃ হে মুআয! আমি জবাব দিলাম, লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক। তিনি বলেনঃ তুমি কি জানো, তারা যদি তাই করে তবে মহামহিম আল্লাহর কাছে তাহাদের কি দাবি আছে? তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না।

-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪২৯. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের সম্মানার্থে কোন ব্যক্তির দাঁড়ানো।

৯৫২. আবদুল্লাহ ইবনি কাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

কাব [রাঃআঃ] অন্ধ হয়ে গেলে তার পুত্রদের মধ্যে তিনি তার পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি বলেন, কাব ইবনি মালেক [রাঃআঃ] তাবুক যুদ্ধে যোগদান না করে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পেছনে থেকে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, অতঃপর আল্লাহ তার তওবা কবুল করিলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের নামায পড়ার পর আল্লাহ কর্তৃক আমাদের তওবা কবুল করার কথা ঘোষণা করিলেন। তাতে দলে দলে লোক এসে আমার তওবা কবুল হওয়ার জন্য আমাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। তারা বলেন, আপনার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ায় আমরা আপনাকে অভিনন্দন জানাই। এমতাবস্থায় আমি গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় সমাসীন। তালহা ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাঃআঃ] উঠে দৌড়ে এসে আমার সাথে মোসাফাহা [করমর্দন] করেন এবং আমাকে অভিনন্দন জানান। আল্লাহর শপথ! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ব্যতীত আর কেউ আমার দিকে উঠে আসেননি। আমি তালহার এ ব্যবহার কখনও ভুলতে পারবো না।

-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৫৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

লোকেরা [ইহুদীরা] সাদ ইবনি মুআয [রাঃআঃ]-এর ফয়সালা মেনে নেয়ার ব্যাপারে তাহাদের সম্মতি জ্ঞাপন করলে তার জন্য লোক পাঠানো হলো। তিনি একটি গাধায় চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদের নিকটে এসে পৌছলে নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তিকে বা তোমাদের নেতাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করো। তিনি বলেনঃ হে সাদ! তারা তোমার ফয়সালা মেনে নেয়ার সম্মতি প্রকাশ করেছে। সাদ [রাঃআঃ] বলেন, তাহাদের ব্যাপারে আমার ফয়সালা এই যে, তাহাদের মধ্যকার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের হত্যা করা হইবে এবং তাহাদের শিশুদের বন্দী করা হইবে। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি আল্লাহর বা মহান মালিকের ফয়সালা অনুযায়ী ফয়সালা করেছো।

-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৫৪. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

সাহাবীগণের নিকট নাবী [সাঃআঃ]-এর দর্শন যতো প্রিয় ছিল, আর কারো দর্শন তাহাদের নিকট এতো প্রিয় ছিলো না। অথচ তারা তাহাঁকে [আসতে] দেখে তাহাঁর [সম্মানার্থে] কখনো উঠে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তা তাহাঁর অপছন্দীয়।

[তিরমিজী, আহমাদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৫৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

কথাবার্তায়, উঠাবসায় ফাতেমার চাইতে নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। তিনি আরও বলেন, নাবী [সাঃআঃ] তাকে দেখলেই অভ্যর্থনা জানাতেন, তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন এবং তাকে চুমা দিতেন, অতঃপর তার হাত ধরে তাকে এনে নিজের বসার স্থানে বসাতেন। অপরদিকে নাবী [সাঃআঃ]-ও তার নিকট গেলে তিনি তাহাঁকে অভ্যর্থনা জানাতেন এবং উঠে গিয়ে তাহাঁকে চুমা দিতেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর অন্তিম রোগের সময় তিনি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে অভ্যর্থনা জানালেন, তাকে চুমা দিলেন এবং তার সাথে গোপনে কথা বলিলেন। ফাতেমা [রাঃআঃ] তাতে কেঁদে দিলেন। তিনি পুনরায় তাকে গোপনে কিছু বললে এবার তিনি [ফাতেমা] হাসেন। আমি উপস্থিত মহিলাগণকে বললাম, আমি মনে করি নারী জাতির মধ্যে এই মহিলা মর্যাদায় অনন্য। তবুও ইনি একজন নারী, কখনো কাঁদেন আবার কখনও হাসেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আপনাকে কী বলেছেন? তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি এখন গোপন রহস্যের সংরক্ষক। নাবী [সাঃআঃ] ইন্তিকাল করার পর তিন বলেন, প্রথমার তিনি গোপনে বলেনঃ “আমার মৃত্যু আসন্ন”। তাই আমি কেঁদেছি। অতঃপর তিনি গোপনে আমাকে বলেনঃ “আমার পরিজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমিই [মৃত্যুবরণ করে] আমার সাথে মিলিত হইবে”। এতে আমি খুশি হই এবং তা আমাকে আনন্দিত করে।

[বোখারী হা/৩৩৫৪, তিরমিজী হা/৩৮০৯, মুসলিম, আবু দাউদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩০. অনুচ্ছেদঃ উপবিষ্ট ব্যক্তির জন্য কারো দাঁড়ানো।

৯৫৬. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা তাহাঁর পেছনে নামায পড়লাম। তিনি বসা অবস্থায় ঈমামতি করেন। আর আবু বাকর [রাঃআঃ] তাহাঁর মুকাব্বির হন। তিনি আমাদের দিকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেন। তিনি আমাদেরকে বসবার জন্য ইঙ্গিত করিলেন। তাই আমরা বসে পড়লাম এবং বসা অবস্থায় তাহাঁর সাথে নামায পড়লাম। তিনি সালাম ফিরানোর পর বলেনঃ তোমরা তো প্রায় পারস্যবাসী ও রোমবাসীদের মত আচরণ করলে। তারা তাহাদের রাজা-বাদশাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, অথচ রাজা-বাদশাগণ থাকে বসা অবস্থায়। তোমরা এরূপ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমামগণের অনুসরণ করো। ঈমাম যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়েন তবে তোমরাও দাড়ানো অবস্থায় নামায পড়ো। আর যদি তারা বসা অবস্থায় নামায পড়েন তবে তোমরাও বসা অবস্থায় নামায পড়ো।

[মুসলিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩১. অনুচ্ছেদঃ কারো হাই উঠলে যেন নিজ মুখে হাত দেয়।

৯৫৭. আবু সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেন তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তার হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। কেননা শয়তান মুখে প্রবেশ করে।

-[মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৫৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

কারো হাই আসলে সে যেন তার হাত তার মুখের উপর রাখে। কেননা তা শয়তানের পক্ষ থেকে।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ

৯৫৯. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন তার মুখ চেপে ধরে। অন্যথায় শয়তান তাতে প্রবেশ করে।

[মুসলিম, আবু দাউদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬০. আবু সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তার হাত দ্বারা তার মুখ চেপে ধরে। অন্যথায় শয়তান তাতে ঢুকে পড়ে।

-[মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩২. অনুচ্ছেদঃ একজন অপরজনের মাথার উকুন বেছে দিবে কি?

৯৬১. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] মিলহন-কন্যা উম্মু হারাম [রাঃআঃ]-এর বাড়িতে যাতায়াত করিতেন এবং তিনি তাহাঁকে আহার করাতেন। তিনি ছিলেন উবাদা ইবনুস সামিত [রাঃআঃ]-এর স্ত্রী। একদা উম্মু হারাম [রাঃআঃ] তাহাঁকে আহার করানোর পর তাহাঁর মাথার উকন বাছতে লাগলেন। নাবী [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন এবং ক্ষণিক পর হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন।

-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬২. কায়েস ইবনি আসেম আস-সাদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেনঃ সে হলো তাঁবুবাসীদের নেতা। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার কি পরিমাণ মাল থাকলে আমার উপর যাঞ্চাকারী বা মেহমানের কোন দায়দায়িত্ব থাকে না? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ চল্লিশটি [পশু সংখ্যা] উত্তম, আর উর্ধ্বতন সংখ্যা ষাট। আর দুই শতের মালিকদের তো বিপদ। তবে যে ব্যক্তি উঠতি বয়সের উট দান করে, দুধ পানের জন্য কাউকে উস্ত্রী ধার দেয় এবং মোটাতাজা উট যবেহ করে নিজেও আহার করে এবং অভাবী ভদ্রলোক ও যাঞ্চাকারীদেরও আহার করায় [তার ভয়ের কোন কারণ নাই]। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! তা তো অতি উত্তম স্বভাব। কিন্তু আমি যে উপত্যকায় বাস করি সেখানে আমার পশুর প্রাচুর্যের বিচারে এটা তো মামুলি ব্যাপার। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কিরূপ দান-খয়রাত করো? আমি বললাম, উঠতি বয়সের উষ্ট্রীও দান করে থাকি। তিনি বলেনঃ তুমি কিভাবে দুধ পানের জন্য উষ্ট্রী ধার দিয়ে থাকো? আমি বললাম, আমি শত সংখ্যক দান করি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ প্রজননের ব্যাপারে তুমি কি করো? আমি বললাম, লোকজন তাহাদের গর্ভ গ্রহণকারিনী উষ্ট্রী নিয়ে আসে এবং আমার উট পালের মধ্যকার যে উটটিকে প্ররোচিত করিতে পারে, তা সাথে নিয়ে যায় এবং তার প্রয়োজন মাফিক তা তার কাছে রেখে দেয়। প্রয়োজন শেষে সে তা ফেরত দিয়ে যায়। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার নিজের মাল তোমার অধিক প্রিয় নাকি তোমার ওয়ারিসদের মাল? রাবী বলেন, আমার মাল। তিনি বলেনঃ তোমার মাল তাই যা তুমি নিজে পানাহার করে শেষ করেছে অথবা কাউকে [আল্লাহর পথে] দান করেছো। তাছাড়া অবশিষ্টটুকু তোমার ওয়ারিসদের মাল। আমি বললাম, এবার ফিরে গিয়ে অবশ্যই উটের সংখ্যা কমিয়ে ফেলবো। অতঃপর তার মৃত্যুর সময় আসন্ন হলে তিনি তার পুত্রদের ডেকে একত্র করেন এবং বলেন, হে পুত্ৰগণ! তোমরা আমার উপদেশ শোনো। কেননা তোমাদের জন্য আমার উপদেশের চেয়ে অধিক কল্যাণকামী উপদেশদাতা আর কাউকে পাবে না। আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য বিলাপ করো না। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পর তাহাঁর জন্য বিলাপ করা হয়নি। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে “বিলাপ করিতে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি”। আর আমার নামায পড়ার বস্ত্র দ্বারা আমার কাফন দিবে। তোমরা তোমাদের মধ্যকার প্রবীণদের নেতা নির্বাচিত করিবে। কেননা যাবৎ তোমরা তোমাদের প্রবীণদের নেতা বানাবে তোমাদের পিতৃপুরুষের প্রতিনিধিত্ব তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকিবে। আর যখন তোমরা তোমাদের মধ্যকার যুবকদের তোমাদের নেতা নির্বাচিত করিবে, তখন লোক সমক্ষে তোমাদের পিতৃপুরুষের অবমাননা হইবে। তোমাদের মধ্যে কৃচ্ছসাধনার প্রেরণা যোগাবে। তোমাদের জীবনযাত্রাকে সমুন্নত করো। কেননা তাতে অন্যের দ্বারস্থ হইতে হয় না। তোমরা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে অবশ্যই বিরত থাকিবে। কেননা তা হচ্ছে সর্বশেষ নিকৃষ্টতর পেশা। যখন তোমরা আমাকে দাফন করিবে তখন আমার কবর মাটির সাথে সমান করে দিবে। কেননা আমার এবং ঐ পার্শ্ববতী জনপদে বসবাসরত বাকর ইবনি ওয়াইল গোত্রের মধ্যে প্রায়ই বিবাদ হতো। পাছে তাহাদের মধ্যকার কোন নিবোধ ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করে বসে যার প্রতিশোধ গ্রহণ তোমাদের বেলায় তোমাদের দীন-ধর্মের জন্য অনিষ্টকর হইবে।

[হাকিম, ইবনি হিব্বান, আহমাদ, তাবারানি, ইস্তীআব] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি

৪৩৩. অনুচ্ছেদঃ অবাক-বিস্ময়ে মাথা দোলানো এবং দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরা।

৯৬৩। আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর উযুর পানি নিয়ে আসলাম। তিনি তাহাঁর মাথা মললেন এবং দাঁত দ্বারা দুই ঠোঁট চেপে ধরলেন। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? তিনি বলেনঃ না। তুমি এমন অনেক আমীর ও ইমামের সাক্ষাত পাবে যারা ওয়াক্তমত নামায পরবে নাসায়ী, নামাযে বিলম্ব করিবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি হুকুম করেন? তিনি বলেনঃ তুমি ওয়াক্তমত নামায পড়বে, তারপর তাহাদের সাথে মিলিত হলে তাহাদের সাথেও নামায পড়বে। কিন্তু তুমি বলবে নাসায়ী, আমি নামায পড়েছি, পুনরায় আর পড়বো না।

[বোখারী, আবু দাউদ, তিরমিজী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩৪. অনুচ্ছেদঃ হতবাক হয়ে বা অন্য কারণে কারো নিজ উরুতে চপেটাঘাত করা।

৯৬৪। আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার এবং ফাতেমার নিকট এসে বলেনঃ তোমরা কি [রাতে নফল] নামায পড়ে না? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদের প্রাণ তো আল্লাহর হাতে, যখন তাহাঁর মর্জি হয় আমরা উঠি। নাবী [সাঃআঃ] আমার কথার কোন প্রতিউত্তর না করে চলে গেলেন। আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে তাহাঁর উরুতে চপেটাঘাত করে বলছেনঃ “মানুষ অতিশয় বিতর্কপ্রিয়”।

[সূরা কাহফ : ৫৪]হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৫। আবু রাযীন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি তার কপালে চপেটাঘাত করে বলছেন, হে ইরাকবাসীরা! তোমরা কি মনে করো যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উপর মিথ্যা আরোপ করি? তোমরা সওয়াবের ভাগী হইবে আর আমি হবো গুনাহর ভাগী? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো এক জুতার ফিতা ছিড়ে গেলে সে যেন অপর জুতাটি পায়ে দিয়ে না হাঁটে, যাবৎ না তা মেরামত করে নেয়।

[মুসলিম,ইবনি মাজাহ,নাসায়ী,আহমাদ, আবু আওয়া নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৬. আবুল আলিয়া আল-বারাআ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত [রাহিমাহুল্লাহ] আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার জন্য একটি চেয়ার রেখে দিলাম। তিনি তাতে বসলে আমি তাকে বললাম, ইবনি যিয়াদ দেরীতে নামায পড়ে। আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি আমার উরুতে সজোরে চপেটাঘাত করেন এবং ফলে তাতে দাগ পড়ে যায়। তারপর তিনি বলেন, তুমি আমাকে যা জিজ্ঞেস করলে হুবহু এই প্রশ্নটি আমি আবু যার [রাঃআঃ]-কে করেছিলাম। তিনি আমার উরুতে চপেটাঘাত করেন, যেমন আমি তোমার উরুতে চপেটাঘাত করলাম। তিনি বলেন, তুমি ওয়াক্তমত নামায পড়ে নাও। যদি পরে তাহাদের সাথে নামায পাও তবে পুনরায় তাহাদের সাথে নামায পড়ে নিও এবং বলো নাসায়ী, আমি তো নামায পড়েছি, এখন আর পড়বো না।

[বোখারী, মুসলিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

উমার [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে একটি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইবনি সাইয়াদ-এর নিকট গেলেন। তারা তাকে [ইবনি সাইয়াদকে] বনু মাগাল দুর্গের পাশে অন্যান্য বালকের সাথে খেলাধুলারত পেলেন। তখন ইবনি সাইয়াদ বলেগ প্রায়। সে নাবী [সাঃআঃ]-এর আগমন অনুভব করার আগেই নাবী [সাঃআঃ] তার হাত ধরে ফেলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আমি আল্লাহর রাসূল? ইবনি সাইয়াদ তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। এরপর সে নাবী [সাঃআঃ]-কে বললো, আপনি কি সাক্ষ্য দিবেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন নাবী [সাঃআঃ] তাকে ছেড়ে দিয়ে বলেনঃ আমি আল্লাহর উপর এবং তাহাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছি। তারপর তিনি ইবনি সাইয়াদকে জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কী দেখে থাকো? ইবনি সাইয়াদ বললো, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। এরপর নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি একটি বিষয়ে তোমার থেকে [আমার মনের মধ্যে] গোপন রেখেছি। বলতো, সেটি কি? ইবনি সাইয়াদ বললো, তা হচ্ছে ‘আদ-দুখখ’। তিনি বলেনঃ তুমি লাঞ্ছিত হও। তুমি কখনো তোমার [জন্য নির্ধারিত] সীমা অতিক্রম করিতে পারবে না। উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমাকে অনুমতি দিন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি সে সেই [দাজ্জাল] হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবু করার সামর্থ্য তোমাকে দেয়া হয়নি। আর যদি সে সেই দাজ্জাল না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার কোন কল্যাণ নেই। রাবী সালেম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং উবাই ইবনি কাব [রাঃআঃ] ঐ খেজুর বাগানের দিকে গেলেন যেখানে ইবনি সাইয়াদ ছিল। ইবনি সাইয়াদ তাহাঁকে দেখে ফেলার আগেই ইবনি সাইয়াদের কিছু কথা তিনি শুনে নিতে চাচ্ছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখলেন, যার ভেতর থেকে তার গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ইবনি সাইয়াদের মা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখিতে পেলো যে, তিনি খেজুর গাছের কাণ্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে অগ্রসর হচ্ছেন। সে তখন ইবনি সাইয়াদকে ডেকে বললো, ও সাফ! [এটি ইবনি সাইয়াদের ডাকনাম] এই যে মুহাম্মাদ! তখন ইবনি সাইয়াদ লাফিয়ে উঠলো। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সে [ইবন সাইয়াদের মা] তাকে স্ব-অবস্থায় থাকতে দিলে [ব্যাপারটি] স্পষ্ট হয়ে যেতো। সালেম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জনসমাবেশে ভাষণ দিতে দাড়িয়ে প্রথমে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করিলেন, অতঃপর দাজ্জালের প্রসংগ উত্থাপন করিলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সতর্ক করছি এবং এমন কোন নাবী আসেননি যিনি তাহাঁর উম্মাতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেননি। নূহ [আঃ]-ও তার উম্মাতকে সতর্ক করিয়াছেন। তবে আমি তার ব্যাপারে এমন একটি কথা বলবো যা পূর্ববতী নাবীগণ বলেননি। জেনে রাখো! সে হইবে কানা। আর আল্লাহ কখনও অন্ধ নন।

[বোখারী, মুসলিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৬৮. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] নাপাক হলে [অর্থাৎ তাহাঁর উপর গোসল ফরজ হলে] তিন অঞ্জলী পানি তাহাঁর মাথায় ঢালতেন। হাসান ইবনি মুহাম্মাদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হে আবু আবদুল্লাহ! আমার মাথার চুল যে অনেক বেশী ঘন। রাবী বলেন, জাবের [রাঃআঃ] হাসানের উরুতে চপেটাঘাত করে বলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র! নাবী [সাঃআঃ]-এর মাথার চুল তোমার মাথার চুলের চাইতে বেশী ঘন ও সরস ছিল।

[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে উপবিষ্ট ব্যক্তি তার সম্মানে অপরের দণ্ডায়মান হওয়াকে অপছন্দ করে।

৯৬৯. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] মদীনায় ঘোড়ার পিঠ থেকে একটি খেজুর গাছের গোড়ার উপর পড়ে যান এবং তাহাঁর পায়ে আঘাত পান। আমরা আয়েশা [রাঃআঃ]-এর ঘরে তাহাঁকে দেখিতে যেতাম। একবার আমরা তাহাঁর নিকট এসে দেখি যে, তিনি বসে নামায পড়ছেন। আমরা তাহাঁর সাথে দাড়িয়ে নামায পড়লাম। আরেকবার আমরা তাহাঁর নিকট এসে দেখি যে, তিনি বসা অবস্থায় ফরজ নামায পড়ছেন। আমরা তাহাঁর পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় নামায পড়লাম। তিনি ইশারায় আমাদেরকে বসতে বলেন। নামায শেষ করে তিনি বলেনঃ ঈমাম বসা অবস্থায় নামায পড়লে তোমরাও বসে নামায পড়বে। আর ঈমাম দাঁড়ানো অবস্থায় নামায পড়লে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। ঈমাম বসা অবস্থায় থাকলে তোমরা [তার সম্মানে] দাঁড়িও নাসায়ী, যেমন পারস্যবাসীরা তাহাদের নেতাহাদের বেলায় দাঁড়ায়।

[আহমাদ হা/১৪২৫৪]। হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৭০. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আনসারদের মধ্যকার এক যুবকের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে তার নাম রাখে মুহাম্মাদ। আনসারগণ বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের নামে তোমাকে ডাকবো না। শেষে আমরা তার নিকট কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাস্তার উপর বসলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা কি আমার কাছে কিয়ামাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে আমার নিকট এসেছো? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ শত বছর বাঁচবে এমন লোক খুব কমই আছে। আমরা বললাম, আনসারদের মধ্যকার এক যুবকের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। সে তার নাম রেখেছে মুহাম্মাদ। আনসারগণ তাকে বলেছেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের নামে তোমাকে ডাকবো না। তিনি বলেনঃ আনসারগণ উত্তম কাজ করেছে। তোমরা আমার নামে নাম রাখো, কিন্তু আমার ডাকনামে কাউকে অভিহিত করো না।

-বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আবু আওয়ানাসায়ী, ইবনি হিব্বান] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩৭. অনুচ্ছেদঃ [দুনিয়া কতই না তুচ্ছ]।

৯৭১. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উভয় পাশে লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোন এক উচ্চভূমি দিয়ে একটি বাজার অতিক্রম করছিলেন। পথিমধ্যে তাহাঁর সামনে ক্ষুদ্র কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগলছানা পড়লো। তিনি সেটির কান ধরে বলেনঃ তোমাদের কেউ এক দিরহামের বিনিময়ে এটি পেতে আগ্রহী হইবে কি? তারা বলেন, কোন কিছুর বিনিময়ে এটি পেতে আমরা আগ্রহী নই। আমরা এটি দিয়ে কি করবো? তিনি বলেনঃ তোমরা কি [বিনামূল্যে] এটি নিতে আগ্রহী হইবে? তারা বলেন, না। তিনি তাহাদেরকে তিনবার একথা জিজ্ঞেস করেন। তারা বলেন, আল্লাহর শপথ! না। জীবিত হলেও তো তা ত্রুটিপূর্ণ হতো। কারণ তা কানবিহীন। [রাবী বলেন] “দুই কানবিহীন পশুকে ‘আসাক্ব’ বলে” [ঈমাম নববী অর্থ করিয়াছেন “ক্ষুদ্র কানবিশিষ্ট”]। অতএব মৃত হওয়াতে তা তো আরো মূল্যহীন। তিনি বলেনঃ আল্লাহর শপথ। এটি তোমাদের নিকট যতোখানি তুচ্ছ, দুনিয়াটা আল্লাহর কাছে তার চেয়েও অধিক তুচ্ছ।

-[মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৭২. উতাই ইবনি দামরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি দেখলাম যে, আমার পিতার নিকট এক ব্যক্তি জাহিলী যুগের মত বিলাপ করছে। আমার পিতা পরোক্ষভাবে না বলে তাকে কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করিলেন। এজন্য তার সাথীরা তার দিকে তাকালে তিনি বলেন, তাকে এভাবে বলা হয়তো তোমরা অপছন্দ করছো। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কখনও কাউকে সমীহ করবো না। নিশ্চয় আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের মতো বিলাপ করিবে, তোমরা তাকে পরোক্ষে না বলে তার প্রতি কঠোর ব্যবহার করিবে”।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৩৮. অনুচ্ছেদঃ কারো পায়ে ঝিঝি ধরলে যা বলবে।

৯৭৩. আবদুর রহমান ইবনি সাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর পা ঝিঝি ধরে অবশ হলে এক ব্যক্তি তাকে বললো, আপনার প্রিয়মত ব্যক্তিকে স্মরণ করুন। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]।

[ইবনুস সুন্নী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩৯.অনুচ্ছেদঃ [প্রথম তিন খলীফাকে জান্নাতের সুসংবাদ]।

৯৭৪. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে মদীনার বাগানসমূহের মধ্যকার এক বাগানে ছিলেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি তা দ্বারা পানি ও কাদা মাটিতে আঘাত করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে [বাগানের প্রবেশদ্বার] খোলার আবেদন করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তার জন্য [প্রবেশদ্বার] খুলে দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি আবু বাকর [রাঃআঃ]। আমি তার জন্য দ্বার খুলে দিলাম এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর আরেক ব্যক্তি প্রবেশদ্বার খোলার আবেদন করিলেন। তিনি বলেনঃ দ্বার খুলে দিয়ে তাকেও বেহেশতের সুসংবাদ দাও। তিনি ছিলেন উমার [রাঃআঃ]। আমি দ্বার খুলে দিয়ে তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর আরেক ব্যক্তি দ্বার খোলার আবেদন করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] তখন হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বলেনঃ তাকেও ফটক খুলে দাও এবং তাকেও বিপদাপদের শিকার হওয়াসহ বেহেশতের সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি তিনি উসমান [রাঃআঃ]। আমি তাকে দ্বার খুলে দিলাম এবং নাবী [সাঃআঃ] যা বলেছেন তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বলেন, আল্লাহই আমার সাহায্যকারী।

[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৪০. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের সাথে মোসাফাহা করা।

৯৭৫. আলম ইবনি ওয়ারদান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আনাস ইবনি মালেক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে লোকজন সাথে মোসাফাহা করিতে দেখলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি লাইস গোত্রের মুক্তদাস। তিনি তিনবার আমার মাথায় হাত বুলান এবং বলেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৪১. অনুচ্ছেদঃ মোসাফাহা [করমর্দন]।

৯৭৬. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যখন ইয়ামনবাসীগণ এসে উপস্থিত হন তখন নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ “ইয়ামনবাসীগণ এসেছে। তাহাদের অন্তর তোমাদের তুলনায় অধিক কোমল” [রাবী বলেন,] তারাই সর্বপ্রথম মোসাফাহা করেন।

-[আবু দাউদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৭৭. বারাআ ইবনি আযেব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার মোসাফাহা [করমর্দন] সালামকে পূর্ণতা দান করে।

-[আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ

৪৪২. অনুচ্ছেদঃ শিশুর মাথায় কোন মহিলার হাত বুলানো।

৯৭৮. ইবরাহীম ইবনি মারযূক আছ-ছাকাফী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-র সমর্থক ছিলেন এবং পরে হাজ্জাজ তাকে তার নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] আমাকে তার মা আসমা বিনতে আবু বাকর [রাঃআঃ]-এর কাছে পাঠাতেন এবং আমি তাকে তাহাদের প্রতি হাজ্জাজের দুর্ব্যবহারের কথা অবগত করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করিতেন এবং আমার মাথায় হাত বুলাতেন। আমি ছিলাম তখন বালক বয়সী।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ

৪৪৩. অনুচ্ছেদঃ মুয়ানাকা [আলিঙ্গন]।

৯৭৯. ইবনি আকীল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

জাবের ইবন আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] তার নিকট বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক সাহাবীর বরাতে একটি হাদিস সম্পর্কে অবহিত হন। আমি [জাবের] একটি উট ক্রয় করে তাতে আরোহণ করে এক মাসের পথ অতিক্রম করে সিরিয়ায় গিয়ে তার নিকট উপস্থিত হই। সেই সাহাবী ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস [রাঃআঃ]। আমি তাকে খবর পাঠালাম যে, জাবের তোমার দ্বারে অপেক্ষমাণ। দূত ফিরে এসে জিজ্জেস করলো, আপনার নাম কি জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]? আমি বললাম, হাঁ। তখন তিনি বাইরে বের হয়ে এসে আমাকে আলিঙ্গন করেন। আমি বললাম, এমন একটি হাদিস আমার নিকট পৌঁছেছে যা আমি ইতিপূর্বে শুনিনি। আমার আশংকা হলো হয়তো আমি মারা যাবো অথবা আপনি মারা যাবেন। তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা বান্দাগণকে বা মানবজাতিকে হাশরের মাঠে উঠাবেন বস্ত্রহীন ও সহায়-সম্বলহীন অবস্থায়। আমরা বললাম, সহায়-সম্বলহীন কি? তিনি বলেনঃ তাহাদের কোন সহায়-সম্বল থাকিবে না। তিনি তাহাদেরকে সশব্দে ডাকবেন, দূরবর্তীগণও তা শুনতে পাবে, যেমন শুনতে পাবে নিকটবর্তীরা, “আমিই রাজাধিরাজ”। কোন বেহেশতবাসী বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন দোযখবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকিবে। আর কোন দোযখবাসীও দোযখে প্রবেশ করিবে না যতক্ষণ তার উপর কোন বেহেশতবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকিবে। আমি বললাম, সে দাবি কিভাবে মিটমাট করিবে, যেখানে আমরা সকলে উথিত হবো আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? তিনি বলেনঃ নেকী এবং গোনাহ দ্বারা।

-[বোখারী, আহমাদ, আবু ইয়ালা, তাবারানি, হাকিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৪৪. অনুচ্ছেদঃ নিজ কন্যাকে চুমা দেয়া।

৯৮০. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

কথাবার্তায় ফাতেমার চাইতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। ফাতেমা [রাঃআঃ] তার নিকট এলে তিনি উঠে তার নিকট যেতেন, তাকে স্বাগত জানাতেন, তাকে চুমা দিতেন এবং তাকে নিজের জায়গায় বসাতেন। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও তার নিকট গেলে ফাতেমা [রাঃআঃ]-ও তাহাঁর নিকট উঠে যেতেন, তাহাঁর হাত ধরে তাকে স্বাগত জানাতেন এবং তাহাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। নাবী [সাঃআঃ] অন্তিমরোগে আক্রান্ত অবস্থায় ফাতেমা [রাঃআঃ] আসলে তিনি তাকে স্বাগত জানান এবং চুমা দেন।

[বোখারী, মুসলিম, দারিমি, তিরমিজী] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৪৫. অনুচ্ছেদঃ হাতে চুমা দেয়া।

৯৮১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমরা একটি যুদ্ধে যোগদান করলাম। [যুদ্ধের ভয়াবহতায়] লোকজন পলায়ন করলো। আমরা বলাবলি করলাম, আমরা কেমন করে নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাত করবো, অথচ আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছি। তখন নাযিল হলো,

إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ [الأنفال: 16]

“অবশ্য যুদ্ধকৌশল অবলম্বনের জন্য পশ্চাৎপদ হলে স্বতন্ত্র কথা” [সূরা আনফাল : ১৬]।

আমরা বলাবলি করলাম, আমরা মদীনায় ফিরে যাবো না। তাহলে লোকজন আমাদেরকে দেখবে না। আমরা আরও বললাম, যদি আমরা মদীনায় ফিরে যাই! নাবী [সাঃআঃ] ফজরের নামায পড়ে কেবল বের হয়েছেন। আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা তো পলাতকের দল। তিনি বলেনঃ তোমরা তো পাল্টা আক্রমণকারী দল। তাহাঁর একথায় আমরা তাহাঁর হাতে চুমা দিলাম। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের দলভুক্ত।

-[আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৯৮২. আবদুর রহমান ইবনি রাজীন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমরা একদা রাবাযা নামক স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের বলা হলো, সালামা ইবনুল আকওয়া [রাঃআঃ] এখানে আছেন। আমরা তার নিকট এসে তাকে সালাম দিলাম। তিনি তার দুই হাত বের করে বলেন, এই দুই হাতে আমি আল্লাহর নাবীর হাতে বায়আত হয়েছি। তিনি তার হৃষ্টপুষ্ট এক হাতের তালু বের করিলেন, যা ছিল উটের পাঞ্জার মত। আমরা উঠে তার নিকট গিয়ে তাতে চুমা দিলাম।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৯৮৩. ইবনি জুদআন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

সাবিত [রাহিমাহুল্লাহ] আনাস [রাঃআঃ]-কে বলেন, আপনি কি নাবী [সাঃআঃ]-কে নিজ হাতে স্পর্শ করিয়াছেন? তিনি বলেন, হাঁ। তখন তিনি তার হাতে চুমা দিলেন।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ

৪৪৬. অনুচ্ছেদঃ পায়ে চুমা দেয়া [কদমবুচি]।

৯৮৪. ওয়াজে ইবনি আমের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমরা [আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল মদীনায়] পৌছলে বলা হলো, ইনিই আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]। আমরা তাহাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে তাতে চুমা দিলাম।

[আবু দাউদ] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৯৮৫. সুহাইব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আলী [রাঃআঃ]-কে আব্বাস [রাঃআঃ]-এর হাত ও উভয় পায়ে চুমা দিতে দেখেছি।

হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ

৪৪৭. অনুচ্ছেদঃ একজনের সম্মানার্থে অপরজনের দাঁড়ানো।

৯৮৬. আবু মিজলায [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

মুয়াবিয়া [রাঃআঃ] বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি আমের ও আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] বসা ছিলেন। ইবনি আমের উঠে দাঁড়ালেন এবং ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] বসে থাকলেন। আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] ছিলেন তাহাদের উভয়ের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। মুয়াবিয়া [রাঃআঃ] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার সম্মানে আল্লাহর বান্দাগণ দাঁড়ালে আনন্দিত হয় সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।

[আবু দাউদ, তিরমিজী, আহমাদ, তাবারানি, হাকিম] হাঁচির জবাব হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


by

Comments

One response to “হাঁচির জবাব । করমর্দন আলিঙ্গন কদমবুচি ও চুমা দেয়া এর হাদীস”

Leave a Reply