যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হওয়া
যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হওয়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হওয়া এবং দুর্গের অধিবাসীদের কোন ন্যায়পরায়ণ ক্ষমতা প্রদত্ত বিচারকের নির্দেশে অবতরণ বৈধ হওয়া
৪৪৮৭. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বানূ কুরাইযার অবরুদ্ধ লোকেরা সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত হলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদ [রাদি.]-এর নিকট লোক পাঠালেন। সুতরাং তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি মাসজিদের কাছাকাছি আসলেন তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আনসারদের বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার অথবা বলিলেন, উত্তম ব্যক্তির দিকে উঠে যাও। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ সমস্ত অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মান্য করিতে সম্মত হয়েছে। তখন তিনি বলিলেন, তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের উপযুক্ত [যুবক] লোকদেরকে হত্যা করা হোক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো। বর্ণনাকারী কখনো বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] বলেন, তুমি রাজাবিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ। বর্ণনাকারী ইবনি মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কোন কোন সময় তিনি বলেছেনঃ তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো কথাটি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৪৬]
৪৪৮৮. .শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর কাছ থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
আর তিনি এ কথাটুকু তাহাঁর হাদীসে বর্ণনা করিয়াছেন যে, “রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার করেছ।” আর একবার বলেছেন, “তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর হুকুমনুযায়ী বিচার করেছ।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৪৭]
৪৪৮৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন সাদ [রাদি.] আঘাতপ্রাপ্ত হন। কুরায়শের ইবনিল আরিকা নামক এক ব্যক্তি তাহাঁর শিরায় তীর নিক্ষেপ করেছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদ [রাদি.]-এর জন্য মাসজিদে একটি তাঁবু স্থাপন করে দিলেন, যেন নিকট থেকে তাঁকে দেখাশোনা করা যায়। যখন তিনি [রসূল [সাঃআঃ] ] খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে অস্ত্র রেখে সবেমাত্র গোসলের কাজ সমাপ্ত করিয়াছেন এমন সময় জিবরাঈল [আঃ] স্বীয় মাথা থেকে ধূলিবালি ঝাড়তে ঝাড়তে আগমন করিলেন। এরপর বলিলেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন? আল্লাহর শপথ! আমরা তো অস্ত্র রাখিনি। তাদের দিকে গমন করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, কোন্ দিকে? তখন তিনি বানূ কুরাইযার দিকে ইঙ্গিত করিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের সাথে যুদ্ধ করিলেন। তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর নির্দেশে দূর্গ থেকে অবতরণ করলো। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের বিচারের ভার [তাদের নেতা] সাদ [রাদি.] এর উপর অর্পণ করিলেন। সাদ [রাদি.] বললেনঃ তাদের মধ্যে যুদ্ধের উপযুক্ত [যুবক] লোকদেরকে হত্যা করা হোক, নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক এবং তাদের সম্পদগুলো ভাগ করা হোক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৪৮]
৪৪৯০. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমাকে খবর দেয়া হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তাদের সম্পর্কে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৪৯]
৪৪৯১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সাদ [রাদি.] বলেছেন, তাহাঁর আঘাত শুকিয়ে গেল এবং তিনি ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমার নিকট আপনার রসূলকে যে সম্প্রদায় অস্বীকার করেছে, তাঁকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আপনার পথে যুদ্ধ করার চাইতে অধিক পছন্দনীয় বিষয় আর নেই। হে আল্লাহ! যদি কুরায়শদের সাথে যুদ্ধ করা এখনও বাকী থাকে তবে আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, যেন আমি আপনার পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে পারি। হে আল্লাহ! আমি মনে করি যে, আমাদের এবং তাদের মধ্যে আপনি যুদ্ধ সমাপ্ত করিয়াছেন। যদি তাই হয়, তবে আপনি আমার ক্ষতস্থান উন্মুক্ত করে দিন এবং এতেই আমাকে শাহাদাত নসীব করুন। অতঃপর তাহাঁর ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হইতে লাগল। মাসজিদে বানূ গিফারের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহের কারণে তারা ঘাবড়িয়ে গেল। তখন তারা বলিল, হে তাঁবুবাসী! তোমাদের দিক থেকে এ কী আসছে? আশ্চর্যের ব্যাপার যে, সাদ [রাদি.] – এর ক্ষতস্থান থেকে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল এবং এতেই তিনি ইন্তিকাল করেন।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৫০]
৪৪৯২. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এটুকু ব্যতিক্রম বলেছেন যে, “সে রাত থেকেই রক্ত প্রবাহিত হইতে লাগলো। এভাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। অবশেষে তিনি মারা যান। তিনি [হিশাম] তাহাঁর হাদীসে আরো কিছু বাড়তি বর্ণনা করিয়াছেন। এ সম্পর্কে একজন কবি বলেনঃ
“ হে সাদ ইবনি মুআয!
তোমার ব্যাপারে বানূ কুরাইযাহ ও বানূ নাযীর কী করেছে?
তোমার জীবনের শপথ! নিশ্চয় সাদ ইবনি মুআয যে প্রভাতে
তোমরা তার জন্য কষ্টানুভব করছিলে, সে আজ নিশ্চুপ।
[হে আওস সম্প্রদায়] তোমরা তোমাদের হাঁড়িগুলো খালি রেখে দিয়েছ,
তাতে আজ কোন কিছু নেই, অর্থাৎ-তোমাদের অধঃপতন হয়েছে।
অথচ তোমাদের বিপক্ষের [খাজরাজ] সম্প্রদায়ের ডেগগুলো গরম, তা টগবগ করছে অর্থাৎ- তারা আজ প্রভাবশালী ধনী।
আর একজন সম্ভ্রান্ত আবু হুবাব বলেছিলেন,
তোমরা বানূ কাইনূকা গোত্রকে অবস্থান করিতে দাও, তাদেরকে যেতে দিও না।
আর তারা তাদের শহরে ছিল ধনাঢ্য
যেমন গেড়ে থাকে মায়তান অর্থাৎ বঞ্চিত নিস্তব্ধ পাথর।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৫১]
Leave a Reply