হজ্জ সম্পর্কীয় বিধি আহকাম ও ঋতুমতী স্ত্রীলোকের মক্কায় প্রবেশ করা

হজ্জ সম্পর্কীয় বিধি আহকাম ও ঋতুমতী স্ত্রীলোকের মক্কায় প্রবেশ করা

হজ্জ সম্পর্কীয় বিধি আহকাম ও ঋতুমতী স্ত্রীলোকের মক্কায় প্রবেশ করা , এই অধ্যায়ে হাদীস=২৫৮ টি ( ৬৯৬-৯৫৩ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ২০ঃ হজ্জ

পরিচ্ছেদঃ ৭৪ -ঋতুমতী স্ত্রীলোকের মক্কায় প্রবেশ করা

৯১৮

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের সময় আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে যাত্রা করি আমরা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, কুরবানীর পশু যার আছে সে যেন হজ্জ ও উমরা উভয়টিরই ইহরাম বেঁধে নেয় এবং কাজ সমাধা না করা পর্যন্ত যেন ইহরাম না খোলে। আয়েশা [রাদি.] বলেন, মক্কায় যখন প্রবেশ করি তখন আমি ঋতুমতী হয়ে পড়ি। ফলে আমি তাওয়াফ এবং সায়ী করিতে পারলাম না। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট আরয করলে তিনি বলিলেন, বিনুনি খুলে আঁচড়িয়ে নাও আর উমরা পরিত্যাগ করে হজ্জে ইহরাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। আমার হজ্জ আদায়ের পর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবদুর রহমান ইবনি আবু বক্‌র [রাদি.]-এর সাথে আমাকে তানয়ীম প্রেরণ করেন। তখন সেই স্থান হইতে আমি উমরা আদায় করি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, পূর্বে পরিত্যক্ত উমরার বদল হল তোমার এই উমরা। যারা কেবল উমরার ইহরাম বেঁধেছিল তারা তাওয়াফ ও সায়ী করার পর হালাল হয়ে যায় এবং মিনা হইতে ফিরে এসে তারা হজ্জের জন্য দ্বিতীয় তাওয়াফ আদায় করিবে। আর যারা কেবল হজ্জের বা হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিল তারা শুধু একবারই তাওয়াফ আদায় করিবে। [বুখারি ২৯৪, মুসলিম ১২১১]

২২৪و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ بِمِثْلِ ذَلِكَ.

উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] আয়েশা [রাদি.] হইতে অনুরূপ রেওয়ায়ত করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯১৯

আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ঋতুমতী অবস্থায় আমি মক্কায় এসেছিলাম। ফলে আমি তাওয়াফ ও সায়ী করিনি। এই কথা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করলে তিনি বলেছেন, একজন হাজী যে সমস্ত কাজ করে তুমি তাই করে যাও। তবে পাক না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ ও সায়ী স্থগিত রাখ। [বুখারি ২৯৪, মুসলিম ১২১১]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উমরার ইহরাম বেঁধে কোন মহিলা মক্কায় এলে আর হজ্জের সময় তার ঋতুস্রাব আরম্ভ হওয়ার দরুন সে যদি তাওয়াফ করিতে না পারে, পাক হইতে হইতে হজ্জের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশষ্কা হলে, সে হজ্জের ইহরাম বেঁধে নিবে এবং একটা কুরবানী করিবে। কিরান হজ্জকারীর মত তাকেও একবার তাওয়াফ করলেই হইবে। তাওয়াফ করে দুই রাকআত তাওয়াফের নামাজ আদায় করার পর যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে সে হজ্জের অন্যান্য আহকাম, যথা সায়ী, আরাফাতে মুযদালিফায় অবস্থান এবং প্রস্তর নিক্ষেপ এই অবস্থায়ই চালিয়ে যেতে পারবে। তবে হায়য হইতে পাক না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফে যিয়ারত করিতে পারবে না।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭৫ -ঋতুমতী মহিলার তাওয়াফে যিয়ারত [ইফাযা]

৯২০

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

[হজ্জের সময়] সফিয়্যা বিন্‌ত হুয়াই [রাদি.]-এর ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট এটা ব্যক্ত করলে তিনি বলিলেন, সফিয়্যা যেন আমাদেরকে এখানেই আটকিয়ে রাখবে। তখন তাহাকে বলা হল, ইনি তাওয়াফে যিয়ারত [ইফাযা] আদায় করে নিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তবে আর আটকাবে না। {১} [সহীহ, বুখারি ১৭৫৭]

{১} কেননা এমতাবস্থায় বিদায়ী তাওয়াফের প্রয়োজন নেই।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯২১

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! সফিয়্যারতো ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। তিনি বলিলেন, মনে হয় সে আমাদের আটকিয়ে রাখবে। সে কি তোমাদের সাথে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেনি? মহিলাগণ বলিলেন, হ্যাঁ, করেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তবে আর কি, তা হলে এখন চল। [বুখারি ২৯৪, মুসলিম ১২১১]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯২২

আমরাহ্ বিন্‌ত আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] অন্য মহিলাদেরকে নিয়ে হজ্জ করিতেন এবং যদি তাঁদের কারো ঋতুস্রাবের আশষ্কা দেখা দিত তবে দশ তারিখেই তাহাকে তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে আসার জন্য পাঠিয়ে দিতেন। তাওয়াফে যিয়ারত করে নেওয়ার পর কারো ঋতুস্রাব হলে তার পাক হওয়ার আর অপেক্ষা করিতেন না, গন্তব্যস্থলে রওয়ানা হয়ে পড়তেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৩

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উম্মুল মুমিনীন সফিয়্যা [রাদি.]-এর কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলিলেন, তাঁর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন হয়তো সে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে। অন্যরা বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি তাওয়াফ করে নিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তবে আর আটকাবে না।

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; তিনি বলেছেন, আমরা উপরিউক্ত বিষয় আলোচনা করেছিলাম। তখন আয়েশা [রাদি.] বলেন, মহিলাগণকে যদি পূর্বে তাওয়াফের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া উপকারী না হয়, তবে মানুষ কেন পাঠায়? মানুষের এই ধারণা যদি ঠিক হত, তবে ছয় হাজারেরও অধিক মহিলাকে ঋতুমতী অবস্থায় বিদায়ী তাওয়াফের অপেক্ষায় মিনায় পড়ে থাকতে হত।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৪

আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু বক্‌র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু সালমা ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] খবর দিয়েছেন উম্মে সুলায়ম বিন্‌ত মিলহান [রাদি.]-এর তাওয়াফে যিয়ারতে ঋতুস্রাব শুরু হলে অথবা তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে চলে যেতে অনুমতি দিলেন। পরে তিনি চলে গেলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মিনায় অবস্থানকালে কারো ঋতুস্রাব শুরু হলে তাওয়াফে যিয়ারত না করা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করিবে। তাওয়াফে যিয়ারত করার পর যদি কারো ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে সে তার দেশে ফিরে যেতে পারে। কারণ এমন ঋতুমতী মহিলা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর তরফ হইতে অনুমতি প্রদানের রেওয়ায়ত আমাদের নিকট পৌঁছেছে। তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বেই যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং তা বন্ধ না হয় তবে ঋতুস্রাবের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত সে অবস্থান করিবে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭৬ -বন্য পশু-পাখি হত্যার ফিদ্‌য়া

৯২৫

আবুয্ যুবায়র মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হায়েনার বেলায় একটি মেষ, হরিণের বেলায় একটি ছাগল এবং খরগোশ হত্যার বেলায় এক বৎসর বয়সের ছাগলছানা, বন্য ইঁদুর হত্যার বেলায় চার মাস বয়সের ছাগলছানা প্রদানের বিধান দিয়েছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৬

মুহাম্মদ ইবনি সীরীন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট এসে বলল, আমি ও আমার সঙ্গী একটি গিরিপথে আমাদের ঘোড়া দৌড়িয়ে ইহরাম অবস্থায় একটি হরিণ শিকার করে ফেলেছি। উমার [রাদি.] তখন পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে বলিলেন, চলুন, আমরা দুজনে এর একটি ফয়সালা করে দেই। শেষে তাঁরা দুজনে ঐ ব্যক্তির উপর একটা বকরী ফিদ্‌য়া প্রদানের বিধান দেন। ঐ ব্যক্তি ফিরে যেতে যেতে বলিতেছিল ইনি আমিরুল মুমিনীন যিনি অন্যের সহযোগিতা ভিন্ন একটি হরিণের ফয়সালা দিতে পারলেন না। উমার [রাদি.] তার উক্তি শুনে ফেললেন। তাকে ডেকে বলিলেন, তুমি কুরআনুল কারীমের সূরা- মায়িদা পড়েছ কি? সে বলল, জি, না। তিনি বলিলেন, যিনি আমার সঙ্গে ফয়সালা দিয়েছেন তাহাকে চিন? সে বলল, জি, না। উমার [রাদি.] তখন বলিলেন, যদি সূরা-ই-মায়িদা পড়েছ বলিতে তবে তোমাকে আমি আজ শাস্তি দিতাম। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবে [সূরা- মায়িদায়] ইরশাদ করিয়াছেন “তোমাদের দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সত্যবাদী ব্যক্তি ফিদ্‌য়া সম্পর্কে ফয়সালা করে দেবে। উহা কুরবানীর জন্য হইবে যা মক্কায় পৌঁছাবে।” আর যিনি আমার সাথে ফয়সালা প্রদানে সহযোগিতা করিয়াছেন ইনি হচ্ছেন আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাদি.]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৭

হিশাম ইবনি উরওয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

একটি বন্য গাভী হত্যা করলে একটি গরু এবং হরিণ হত্যা করলে একটি বকরী ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৮

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মক্কার কোন কবুতর শিকার করলে একটি বকরী ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মক্কার আধিবাসী কোন ব্যক্তি যদি হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধে আর তার ঘরে যদি মক্কার কবুতরের বাচ্চা থাকে আর ঐ ব্যক্তি কবুতরের বাসার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যদি ঐ ছানা মারা যায়, তবে প্রতিটি ছানার পরিবর্তে এক একটি বকরী ফিদ্‌য়া দিতে হইবে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯২৯

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ইহরামরত ব্যক্তি যদি একটি উটপাখি মেরে ফেলে, তবে তার বদলে একটি উট ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। এটাই আমি হামেশা শুনে এসেছি।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উটপাখির ডিম নষ্ট করলে প্রতিটি ডিমের পরিবর্তে একটি উটের মূল্যের এক-দশমাংস হিসেবে ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। যেমন, আযাদ কোন মহিলার গর্ভস্থ সন্তান যদি কেউ মেরে ফেলে তবে এর কাফ্ফারায় [মালিক র. বলেছেন] একটি দাসী বা দাস আযাদ করিতে হয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, পঞ্চাশ দীনার হচ্ছে একটি মানুষের পূর্ণাঙ্গ দিয়্যতের [রক্তপণ] এক-দশমাংশ।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, শকুন, বাজ, ঈগল, রখম [এক প্রকার শকুন জাতীয় প্রাণী] শিকার বলে গণ্য। মুহরিম ব্যক্তি এগুলো হত্যা করলেও বদলা আদায় করিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, প্রাণী ছোট হোক বা বড় হোক যার যে ফিদ্‌য়ার বিধান করা হয়েছে তাই আদায় করিতে হইবে। দিয়্যতের মধ্যে যেমন বড়- ছোটর তারতম্য হয় না, এইখানেও কোন তারতম্য করা হইবে না।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭৭ -ইহরাম অবস্থায় পঙ্গপাল হত্যার ফিদ্‌য়া

৯৩০

যায়দ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট এসে বলল, আমীরুল মুমিনীন! আমি ইহরাম অবস্থায় লাঠি দ্বারা কয়েকটি পঙ্গপাল মেরে ফেলেছি। উমার [রাদি.] তখন বলিলেন, মুষ্টি পরিমাণ খাদ্য কাউকেও দিয়ে দাও। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৩১

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কিছু পঙ্গপাল মেরে ফেলেছিল। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর কাছে সে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কাব [রাদি.]-কে ডেকে বলিলেন, চলুন, আমরা দুজনে মিলে এর একটা ফয়সালা করি। কাব [রাদি.] বলিলেন, এতে এক দিরহাম কাফফারা দিতে হইবে। উমার [রাদি.] কাব [রাদি.]-কে বলিলেন, আপনার নিকট অনেক দিরহাম রয়েছে [তাই এই ধরনের বিধান দিতে পেরেছেন], আমার নিকট একটি পঙ্গপাল হইতে একটা খেজুর অনেক শ্রেয়। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} এক একটি পঙ্গপালের বদলায় একটি খেজুর দিয়ে দিলেই হইবে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭৮ -কুরবানী করার পূর্বে মাথার চুল কামিয়ে ফেললে উহার ফিদ্‌য়া

৯৩২

কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলেন। তাঁর মাথায় উকুন তাহাকে কষ্ট দিচ্ছিল। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন তাহাকে মাথার চুল কামায়ে ফেলতে হুকুম করে বলিলেন, এর পরিবর্তে তিনদিন রোযা বা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে দুই মুদ পরিমাণ খাদ্য কিংবা একটি বকরী কুরবানী দিয়ে দাও। উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের যেকোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট। [বুখারি ১৮১৫, মুসলিম ১২০১]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৩৩

কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বলিলেন, মনে হয় উকুন তাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম হ্যাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ্! তিনি তখন বলিলেন, চুল কামায়ে ফেল এবং তিনদিন রোযা রাখ বা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও বা একটি বকরী কুরবানী দিয়ে দিও। [বুখারি ১৮১৪]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৩৪

কাব ইবনি উজরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার কাছে এলেন। আমি চুলায় আগুন ধরিয়ে সঙ্গীদের জন্য রান্ন-বান্নায় ব্যস্ত ছিলাম। আমার মাথা ও দাড়ি উকুনে ভরা ছিল। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার পেরেশানী অনুভব করে আমার ললাটে হাত রাখলেন এবং বলিলেন, চুল কেটে ফেল এবং তিনদিন রোযা রাখ বা ছয় জন মিসকীনকে খাদ্য দিয়ে দাও। আর আমার নিকট কুরবানী করার মত কিছু ছিল না, এ কথা তিনি জানতেন। [বুখারি ৪১৯০, মুসলিম ১২০১, ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সনদে মুবহাম রয়েছে]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, অপরাধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কিছু ফিদ্‌য়া দিবে না। কারণ অপরাধ করার পরই শুধু কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হয়ে থাকে। কাফ্‌ফারার বেলায় কুরবানী বা রোযা বা মিসকীনকে খাদ্য প্রদান, এই তিনটির যেকোন একটি এবং মক্কা বা মক্কার বাহিরে যেকোন শহরে উহা আদায় করার ইখতিয়ার রয়েছে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইহরাম না খোলা পর্যন্ত মুহরিমের জন্য চুল উপড়ান বা কামানো বা ছাঁটা কিছুই জায়েয নয়। চুলে উকুন ইত্যাদি হয়ে গেলে তা জায়েয। কিন্তু উহার পরিবর্তে আল্লাহর নির্দেশমত ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। মুহরিমের জন্য নখ কাটা, উকুন মারা বা মাথার চুল হইতে উকুন বের করে মাটিতে ফেলে দেওয়া বা শরীর ও কাপড়ের উকুন বের করা জায়েয নয়। এইরূপ করলে এক মুষ্টি খাদ্য খয়রাত করিবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি নাকের চুল বা বগলতলা বা নাভীর নিচের লোম চিমটি দ্বারা উপড়ায় অথবা মাথায় যখম হওয়ার দরুন প্রয়োজনের খাতিরে চুল কামায় বা শিঙ্গা লাগাবার উদ্দেশ্যে গর্দানের চুল কাটে, এসব জেনে করুক বা ভুলবশত করুক, সকল অবস্থায়ই তার জন্য ফিদ্‌য়া দেওয়া ওয়াজিব। শিঙ্গা লাগানো স্থানের চুল কামানো মুহরিমের জন্য জায়েয নয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, অজ্ঞতার দরুন যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই মাথার চুল কামায়ে ফেলে তবে তাকে ফিদ্‌য়া দিতে হইবে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭৯ -হজ্জের কোন রুকনে ভুল করলে কি করিতে হইবে

৯৩৫

সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, যদি কেউ হজ্জে কোন রুকন আদায় করিতে ভুলে যায় বা তা ছেড়ে দেয় তবে তাকে কুরবানী দিতে হইবে। আইয়ূব [আইয়ূব ইবনি আবি তমীমা সখতিয়ানী] [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার মনে নাই সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] ভুলে গেলে বলেছেন, না ছেড়ে দিলে বলেছিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উক্ত কুরবানী মক্কায় পৌঁছাতে হইবে। অন্য কোন ইবাদত হলে যেকোন স্থানেই তা আদায় করা যায়।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৮০ -ফিদ্‌য়া সম্পর্কিত বিবিধ আহকাম

৯৩৬

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ফিদ্‌য়া দেওয়া সহজ মনে করে যদি কেউ ইহরাম অবস্থায় পড়া নাজায়েয এমন ধরনের কাপড় পরে বা চুল কেটে ফেলে বা বিনা প্রয়োজনে সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করে, তবে এটা তার জন্য অনুচিত হইবে। একান্ত প্রয়োজনের খাতিরেই একজন ঐ সমস্ত কাজ করিতে পারে তা করলে তাকে অবশ্যই ফিদ্‌য়া দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন যে ব্যক্তি ফিদ্‌য়া দিবে তার পক্ষে রোযা বা সদকা বা নুসুক এই তিনটির যেকোন একটি দ্বারা ফিদ্‌য়া দেওয়ার ইখতিয়ার আছে কিনা? নুসুক অর্থ কি? সদকা বা মিসকীনদের কতটুকু খাদ্য প্রদান করিতে হইবে এবং কোন ধরনের মুদের [এক প্রকার মাপ] মাপে উহা আদায় করিতে হইবে? রোযা কয়টি রাখতে হইবে? সঙ্গে সঙ্গে রাখতে হইবে, না বিলম্ব করলেও চলবে? মালিক [রাদি.] উত্তরে বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা যত জায়গায় কাফফারা সম্পর্কে ইহা বা উহা এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন সকল স্থানেই উল্লিখিত বিষয়সমূহের যেকোন একটি আদায় করার ইখতিয়ার থাকে। নুসুক অর্থ এইখানে একটি বকরী কুরবানী করা। রোযা তিনটি রাখতে হইবে। ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করিতে হইবে। প্রত্যেক মিসকীনকেই নাবী [সাঃআঃ]-এর মুদে দুই মুদ পরিমাণ খাদ্য প্রদান করিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কতিপয় আলিমের নিকট শুনিয়াছি তাঁরা বলেন, কোন বস্তুকে লক্ষ করে মুহরিম ব্যক্তি যদি কিছু নিক্ষেপ করে আর উহা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোন পশু বা পাখির গায়ে আঘাত করার ফলে যদি তা মারা যায়, তবে উক্ত প্রাণী হত্যা করার ইচছা না থাকা সত্ত্বেও ঐ ব্যক্তিকে ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। এমনিভাবে মুহরিম নয় এরূপ কোন ব্যক্তি হারমের ভিতর কোন বস্তুর প্রতি লক্ষ করে কিছু ছুঁড়লে আর উহা কোন প্রাণীর গায়ে লেগে যদি তা মারা যায়, তবে উহার উপরও ফিদ্‌য়া ধার্য হইবে। এই বিষয়টির ইচ্ছাকৃতভাবে মারা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মারা যাওয়া উভয় অবস্থার হুকুমই এক।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি মিলে যদি একটি শিকার হত্যা করে আর সকলেই যদি মুহরিম হয় অথবা হারাম শরীফে থাকে তবে প্রত্যেককেই সম্পূর্ণভাবে এক একটি ফিদ্‌য়া আদায় করিতে হইবে। কুরবানী দিতে হলে প্রত্যেককেই একটি করে দিতে হইবে। আর রোযা রাখতে হলে প্রত্যেককেই রোযা রাখতে হইবে। যেমন কয়েক ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে একজনকে হত্যা করে ফেলে, তবে হত্যার কাফফারা [অর্থাৎ একটি গোলাম আযাদ করা] প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে ওয়াজিব হয় বা প্রত্যেককেই একাধারে দুই মাস রোযা রাখতে হয়। এইখানেও তদ্রূপ হুকুম হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কেউ যদি তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে এবং কঙ্কর নিক্ষেপ ও মাথার চুল কাটার পর কোন কিছু শিকার করে তবে তাকেও ফিদ্‌য়া দিতে হইবে। কেননা আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন,وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا  তোমরা ইহরাম হইতে যখন হালাল হও তখন শিকার করিতে পার। আর তাওয়াফে যিয়ারত না করা পর্যন্ত মুহরিম থাকে, পুরাপুরি হালাল হয় না। তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে স্ত্রীসহবাস ও সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা বৈধ নয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হারাম শরীফের গাছপালা উপড়ান মুহরিমের জন্য ভাল নয়। তবে এর জন্য কোন ফিদ্‌য়া দিতে হইবে না। কেউ এই কাজের জন্য ফিদ্‌য়া দিতে বলেছেন এমন কথা আমরা শুনি নাই।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হজ্জের সময় যদি তিনদিন রোযা রাখতে কেউ [যার উপর উহা রাখা ওয়াজিব] ভুলে যায় বা অসুস্থতার দরুন রাখতে না পারে আর সে নিজ বাড়ি চলে আসে, তবে সম্ভব হলে সে কুরবানী করিবে। আর তা না পারলে বাড়িতে প্রথমে তিনদিন রোযা রেখে পরে সাতদিন রোযা রাখবে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৮১ -হজ্জ সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম

৯৩৭

আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর ইবনি আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের [হাজ্জাতুল বিদা] সময় রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মানুষের খাতিরে মিনায় দাঁড়ান। বিভিন্ন লোক এসে তাঁর কাছে বিভিন্ন মাসআলা জিজ্ঞেস করিতে লাগল। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামায়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এখন কুরবানী করে নাও। কোন অসুবিধা নাই। অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি কঙ্কর নিক্ষেপ করার পূর্বেই কুরবানী দিয়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এখন কঙ্কর নিক্ষেপ করে নাও; কোন অসুবিধা হইবে না। আবদুল্লাহ্ [রাদি.] বলেন, আগে বা পরে ফেলা সম্পর্কে সেই দিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]কে যত প্রশ্ন করা হয়েছে সকলের বেলায়ই তিনি বলেছেন, এখন করে নাও। কোন অসুবিধা হইবে না। [বুখারি ১২৪, মুসলিম ১৩০৬]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৩৮

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন জিহাদ বা হজ্জ বা উমরা হইতে প্রত্যাবর্তন করিতেন, তখন প্রতিটি উচুস্থান অতিক্রম করার সময় তিনি আল্লাহু আকবার বলে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করিতেন

আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ বা মাবূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর সকল সাম্রাজ্য এবং তাঁরই সকল প্রশংসা এবং তিনি সকল জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদত-গুজার, সিজদা আদায়কারী এবং প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদা পূরণ করিয়াছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং একাই তিনি পরাজিত করিয়াছেন সকল শত্রু বাহিনী। [বুখারি ১৭৯৭, মুসলিম ১৩৪৪]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৩৯

আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

হাওদাজে আরোহিণী এক মহিলার নিকট দিয়ে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পথ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। মহিলাটিকে কেউ তখন বলল, ইনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]। মহিলাটি তখন স্বীয় শিশু সন্তানটির হাত ধারণ করে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এই শিশুটিও হজ্জ আমার সাথে আদায় হইবে কি? রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, হ্যাঁ, আদায় হইবে। আর এর সওয়াব তুমি পাবে। [সহীহ, মুসলিম ১৩৩৬]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৪০

তালহা ইবনি উবায়দুল্লাহ্ ইবনি কারীয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, আরাফাতের দিন হইতে বেশি আর কোনদিন শয়তানকে লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং রাগান্বিত হইতে দেখা যায়নি। কারণ এই দিন সে আল্লাহ্ তাআলার অপার রহমত নাযিল হইতে এবং বড় বড় গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যেতে দেখিতে পায়। বদর যুদ্ধের দিনও তার ঐ অবস্থা হইতে দেখা গিয়েছিল। কেউ জিজ্ঞেস করিল বদরের দিন সে কি দেখেছিল? রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, ঐ দিন সে জিবরাঈল [আ]-কে ফেরেশতা বাহিনীকে কাতারবন্দী করিতে দেখেছিল। [যয়ীফ, ঈমাম হাকিম বর্ণনা করিয়াছেন মুসতাদরাকে, ইবনি আব্বাস [রাদি.] ও আবু দারদা [রাদি.] হইতে। আল্লামা আলবানী জয়ীফ বলেছেন, {মিশকাত ২৬০০}]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯৪১

তালহা ইবনি উবায়দুল্লাহ্ ইবন্ কারীয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, সর্বোত্তম দুআ হল আরাফাতের দুআ। আর আরাফাতের সর্বোত্তম দুআ হল ঐ দুআ যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ করেছিলেন। দুআটি এই

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.

আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ ইলাহ্ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। [ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, সনদ মুরসাল সহীহ, ঈমাম বাইহাকী আবু হুরাইরা হইতে মারফু বলেছেন {সিলসিলাতুস সহীহা ৭/৪}]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৪২

আনাস ইবনি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের সময় রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তিনি মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত ছিলেন। মাথা হইতে উহা যখন খুলে রাখলেন, তখন এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! ইবনি খতল কাবার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তাকে হত্যা কর। ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, ঐদিন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিলেন না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। [বুখারি ১৮৪৬, মুসলিম ১৩৫৭]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৪৩

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছে তিনি মদীনার বিশৃংখলা {১} সম্পর্কে সংবাদ শুনেন। শেষে তিনি পুনরায় মক্কা ফিরে যান এবং ইহরাম ছাড়াই মক্কায় প্রবেশ করেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

২৪৮/৯৪৯-و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ بِمِثْلِ ذَلِكَ.

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এইরূপ রেওয়ায়ত ইবনি শিহাব হইতেও বর্ণনা করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} রেওয়ায়তে উল্লিখিত বিশৃঙ্খলার দ্বারা হিজরী ৬৩ সনে ইয়াযিদের নির্দেশে মদীনায় যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৪৪

মুহাম্মদ ইমরান আনসারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মক্কার পথে একটি বড় গাছের নিচে আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তখন আমার নিকট এসে বলিলেন, এই গাছটির নিচে এসে কেন নেমে পড়লে? আমি বললাম একটু ছায়া লাভের জন্য। তিনি বলিলেন, আর কোন উদ্দেশ্য নয়তো? আমি বললাম না, ছায়ার জন্যই। তখন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, যখন তুমি মিনায় বড় বড় দুটি পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে হইবে, এই বলে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পূর্বদিকে হস্ত দ্বারা ইশারা করলেন, তখন [জানিও যে,] ঐ উপত্যকায় যাকে সিরার বলা হয়, উহার একটি বড় গাছের নিচে সত্তর জন নবীর [জন্মের পর] নাড়ী কর্তন করা হয়েছিল। [যয়ীফ, নাসায়ী ২৯৫৫, আহমাদ ৬২৩৩, আলবানী যয়ীফ বলেছেন, {সিলসিলাতুয যয়ীফা ২৭০১}]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯৪৫

ইবনি আবি মুলায়কা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

বায়তুল্লাহর তাওয়াফরত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত এক মহিলার নিকট দিয়ে উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাহাকে বলিলেন, হে আল্লাহর দাসী, অন্য মানুষকে কষ্ট দিও না। হায়, তুমি যদি তোমার বাড়িতেই বসে থাকতে। পরে উক্ত মেয়েলোকটি নিজের বাড়িতেই বসে থাকত। একদিন একটি লোক তাকে বললঃ যিনি তোমাকে বাড়ির বাহিরে যেতে নিষেধ করিয়াছেন, তিনি ইন্তিকাল করিয়াছেন। এখন তুমি বের হয়ে আসতে পার। মেয়েটি বলল, জীবদ্দশায় তাহাকে মানব, আর মৃত্যুর পর অবাধ্য হব, আমি এমন স্ত্রীলোক নই; [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৪৬

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি জেনেছি, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিতেন, হাজরে আসওয়াদ এবং কাবা শরীফের দরজার মধ্যবর্তী স্থানটি হল মুলতাযাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৪৭

মুহাম্মদ ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি হাব্বান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রবাযা নামক স্থানে আবুযার [রাদি.]-এর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তি পথ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তাহাকে দেখে তিনি বলিলেন, কোথায় যাচ্ছ? তিনি বলিলেন, হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। তিনি বলিলেন, অন্য কোন উদ্দেশ্য তো নেই? তিনি বলিলেন, না। আবুযার [রাদি.] বলিলেন, আচ্ছা যাও, তোমার কাজ তুমি কর।

ঐ ব্যক্তি বলেন, আমি মক্কায় চলে গেলাম। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা হল আমি সেখানে রয়ে গেলাম। একদিন দেখি এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে মানুষ খুবই ভিড় করে আছে। ভিড়ের ভিতরে যেয়ে দেখি, রবাযায় যাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল [আবুযর রা.] তিনি বসে আছেন। তিনি আমাকে দেখে চিনে ফেললেন এবং বলিলেন, তুমি সেই ব্যক্তি না, যাকে আমি হাদীস বর্ণনা করে শুনিয়াছিলাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৯৪৮

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন হজ্জের মধ্যে কোন কিছুর শর্ত আরোপ করা কিরূপ? তিনি বলিলেন, এমনও কেউ করে নাকি? এবং তিনি উক্ত বিষয়টির বিপক্ষে মতপ্রকাশ করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল স্বীয় পশুর [খাদ্যের] নিমিত্তে হারাম শরীফের ঘাস কাটা যেতে পারে কি? তিনি বলিলেন, না।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৮২ -মাহরাম {১} ব্যতিরেকে স্ত্রীলোকের হজ্জ করা

৯৪৯

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যে সকল মহিলার স্বামী বর্তমান নাই এবং সে হজ্জও করেনি, যদি তার কোন মাহরাম আত্মীয় না থাকে বা সফরে সঙ্গী হইতে না পারে তবুও সে ফরয হজ্জ পরিত্যাগ করিবে না। সে মহিলা হজ্জযাত্রীদের সাথে হজ্জে বের হইবে।

{১} যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৮৩ -তামাত্তু হজ্জ সমাপনকারীর রোযা

৯৫০

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি হজ্জে তামাত্তু করিবে আর তার সাথে যদি কুরবানীর পশু জোগাড় না থাকে তবে সে হজ্জের ইহরামের সময় হইতে আরাফাতের দিন পর্যন্ত রোযা রাখবে। আর এই দিনগুলোতে যদি সে রোযা রাখতে না পারে তবে মিনা-র দিনগুলোতে সে উহা আদায় করে নিবে। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মতও উল্লিখিত বিষয়ে আয়েশা [রাদি.]-এর মতের অনুরূপ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} মিনার দিনে রো্যা রাখা মূলতঃ নিষিদ্ধ।

হজ্জ করার পদ্ধতি -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

Comments

Leave a Reply