হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত – ইফরাদ, তামাততু, ইহরাম ও মুহরিম
হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত – ইফরাদ, তামাততু, ইহরাম ও মুহরিম >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৭, অনুচ্ছেদঃ (১-২৮)=২৮টি
১. অনুচ্ছেদঃ মক্কা মুকাররমার মর্যাদা প্রসঙ্গে
২. অনুচ্ছেদঃ হজ্জ ও উমরা আদায়ের সাওয়াব প্রসঙ্গে
৩. অনুচ্ছেদঃ হাজ্জ পরিত্যাগ করা প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি
৪. অনুচ্ছেদঃ পাথেয় ও বাহন থাকলে হাজ্জ ফরজ হয়
৫. অনুচ্ছেদঃ কতবার হাজ্জ করা ফরজ?
৬. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার হজ্জ করিয়াছেন?
৭. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার উমরা করছেন?
৮. অনুচ্ছেদঃ কোন জায়গা হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইহরাম বেঁধেছেন?
৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখন ইহরাম বাঁধেন?
১০. অনুচ্ছেদঃ ইফরাদ হাজ্জ
১১. অনুচ্ছেদঃ হজ্জ ও উমরা দুটি একসাথে আদায় করা
১২. অনুচ্ছেদঃ তামাত্তু হাজ্জ
১৩. অনুচ্ছেদঃ তালবিয়া পাঠ করা
১৪. অনুচ্ছেদঃ তালবিয়া ও কুরবানীর ফযিলত
১৫. অনুচ্ছেদঃ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ
১৬. অনুচ্ছেদঃ ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা
১৭. অনুচ্ছেদঃ বিভিন্ন এলাকার লোকদের ইহরাম বাঁধার জায়গা [মীকাত]
১৮. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পোশাক পরা ইহরামধারী লোকের জন্য বৈধ নয়
১৯. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তি লুঙ্গি ও জুতা জোগাড় করিতে না পারলে পাজামা ও মোজা পরতে পারে
২০. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির পরনে জামা বা জুব্বা থাকলে
২১. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তি যে প্রাণী হত্যা করিতে পারে
২২. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির রক্তক্ষরণ করানো
২৩. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী লোকের বিয়ে করানো মাকরূহ
২৪. অনুচ্ছেদঃ ইহরাম পরিহিত অবস্থায় বিয়ের অনুমতি প্রসঙ্গে
২৫. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির শিকারের গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
২৬. অনুচ্ছেদঃ মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত খাওয়া মাকরূহ
২৭. অনুচ্ছেদঃ মুহ্রিমের জন্য সমুদ্রের শিকার বৈধ
২৮. অনুচ্ছেদঃ মুহুরিমের জন্য ভুল্লোক শিকার করা
১. অনুচ্ছেদঃ মক্কা মুকাররমার মর্যাদা প্রসঙ্গে
৮০৯. আবু শুরাইহ্ আল-আদাওবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন মদীনার গভর্নর আমার ইবনি সাঈদ [আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইরের বিরুদ্ধে] মক্কাতে সৈন্যবাহিনী পাঠাচ্ছিলেন তখন তিনি [আবু শুরাইহ্] তাকে বললেনঃ হে আমীর ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন একটি হাদীস বর্ণনা করার। মক্কা বিজয়ের পরদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই হাদীসটি বলেছিলেন। তখন তা আমার কর্ণদ্বয় শুনিয়াছিলো, আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছিল এবং আমার চক্ষুদ্বয় তা প্রত্যক্ষ করেছিল। তিনি আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান করিলেন, তারপর বললেনঃ মক্কাকে আল্লাহ্ তাআলা “হারাম” ঘোষণা করিয়াছেন, তাকে কোন মানুষ “হারাম” করেনি। অতএব, আল্লাহ্ তাআলা ও আখিরাতের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে এখানে সে লোকের জন্য রক্তপাত করা বা এখানকার কোন বৃক্ষ কাটা বৈধ নয়। যদি কোন লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কর্তৃক এখানে [মক্কা বিজয়কালে] যুদ্ধ করার অজুহাত তুলে এখানে কোন রকম যুদ্ধাভিযান চালানোর সুযোগ খোঁজ করে তাহলে তোমরা সে লোককে বলে দিবে, আল্লাহ্ তাআলা বিশেষভাবে অনুমতি দিয়েছেন কেবল তাহাঁর রাসূলকেই, এর অনুমতি তোমাকে দেননি। শুধু দিনের কিছু সময়ের জন্য তিনি আমাকেও এর অনুমতি দিয়েছেন। যেমনি গতকাল তা হারাম ছিল তেমনিভাবে আজও সেটা হারাম। তোমাদের উপস্থিত লোক যেন [একথা] অনুপস্থিত লোকের কাছ পৌঁছে দেয়।
-সহীহ, বুখারী, মুসলিম।আবু শুরাইহ্ [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হল, তখন আমর ইবনি সাঈদ আপনাকে কি বলেছিল? তিনি বলিলেন, সে বলেছিল, হে আবু শুরাইহ! আমি এই হাদীস প্রসঙ্গে আপনার চেয়ে বেশি অবগত। কোন পাপী, পলাতক খুনী ও পলাতক অপরাধীকে হারাম শারীফ আশ্রয় দেয় না।আবু ঈসা বলেন, ওয়ালা ফাররান বিখারবাতিন -এর স্থল ওয়ালা ফাররান-ও বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু শুরাইহ বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু শুরাইহ্ আল-খুযাঈর মূল নাম খুওয়াইলিদ ইবনি আমর আল-আদাওবী আল-কাবী। ওয়ালা ফাররান বিখারবাতিন–এর অর্থ অপরাধী। বাক্যটির অর্থ হল, কোন লোক কোন ফৌজদারী অপরাধ করে অথবা খুন করে হারাম শরীফে আশ্রয় নিলে সে লোকের উপর হাদ্দ [নির্ধারিত শাস্তি] কার্যকর হইবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২. অনুচ্ছেদঃ হজ্জ ও উমরা আদায়ের সাওয়াব প্রসঙ্গে
৮১০. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরপর একত্রে আদায় করো। কেননা, এ হজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ্ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি ক্ববূল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।
-হাসান সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৮৮৭]।উমার, আমির ইবনি রাবীআ, আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ্ ইবনি হুবশী, উম্মু সালামা ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ গারীব বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৮১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি হজ্জ করে এবং তাতে কোনো রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
-সহিহ, হাজ্জাতুন নাবী [সাঃআঃ] [পৃঃ ৫], বুখারী, মুসলিম।আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আবু হাযিম আল- কূফীই হলেন আল-আশজাঈ, তাহাঁর নাম সালমান। তিনি আযযা আল-আশজাঈয়ার আযাদকৃত গোলাম ছিলেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩. অনুচ্ছেদঃ হাজ্জ পরিত্যাগ করা প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি
৮১২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার ঘর পর্যন্ত পৌছার মত সম্বল ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হাজ্জ না করে তবে সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক তাতে [আল্লাহ তাআলার] কোন ভাবনা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে বলেনঃ
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً
“মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য”। [সূরাদি. আল-ইমরান – ৯৭]।
যঈফ, মিশকাত [২৫২১], তালীকুর রাগীব [২/১৩৪]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। এ সূত্র ব্যতীত এটি প্রসঙ্গে আমরা কিছু জানিনা। এটির সনদ প্রসঙ্গে সমালোচনা আছে। হিলাল ইবনি আবদুল্লাহ অপরিচিত লোক এবং হারিসকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলা হয়েছে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪. অনুচ্ছেদঃ পাথেয় ও বাহন থাকলে হাজ্জ ফরজ হয়
৮১৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রাসুল! কিসে হাজ্জ ওয়াজিব হয়? তিনি বলিলেন ঃ সম্বল ও বাহন [থাকলে]।
খুবই দুর্বল, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৮৯৬]।আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান। আলিমগণ এই হাদীসের আলোকে বলেন, কোন বাক্তি সম্বল ও বাহন সংগ্রহে সক্ষম হলেই তার উপর হাজ্জ ফরজ হয়। ইবরাহীম ইবনি ইয়াযীদ আল-খুওযী আল-মক্কীর স্মৃতিশক্তি প্রশ্নবিদ্ধ।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৫. অনুচ্ছেদঃ কতবার হাজ্জ করা ফরজ?
৮১৪. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ মানুষের মধ্যে যার সেখানে গমনের ক্ষমতা আছে আল্লাহ্ তাআলার স্মরণে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অপরিহার্যভাবে করণীয়, তখন সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রতি বছরই কি? তিনি নীরব হয়ে রইলেন। তারা আবার বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রতি বছরই কি? তিনি বলিলেন ঃ না, আমি যদি বলতাম হ্যাঁ, তবে তোমাদের উপর তা[প্রতি বছর] ফরয হয়ে যেত। তারপর আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করেন ঃ
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً
হে মুমিনগণ ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করনা যা জাহির হলে তোমরা দুঃখিত হইবে।[সূরা মাঈদা-১০১]
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৮৮৪]।এই অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা[রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণীত আছে। আবু ঈসা বলেন, আলী বর্ণীত হাদীসটি হাসান গারীব।আবুল বাখতারীর নাম সাঈদ ইবনি আবু ইমরান। ইনি হলেন সাঈদ ইবনি ফাইরোয।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৬. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার হজ্জ করিয়াছেন?
৮১৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হজ্জ করিয়াছেন তিনবারঃ দুবার হিজরাতের আগে এবং এক বার হিজরাতের পর। তিনি এই [শেষোক্ত] হজ্জের সাথে উমরাও করিয়াছেন। তিনি তেষট্টিটি কুরবানীর উট এনেছিলেন এবং ইয়ামান হইতে আলী [রাদি.] অবশিষ্ট [৩৭টি] উটগুলি এনেছিলেন। আবু জাহালের একটি উটও ছিল এই উটগুলির মধ্যে। একটি রূপার শিকল এর নাসারন্ধ্রে [নাকের ছিদ্রে] পরানো ছিলো। তিনি এটাকেও যবেহ করেছিলেন। প্রতিটি কুরবানীর উট হইতে এক টুকরো করে গোশত আনার জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলেন। এগুলো রান্না করা হলে তিনি এর শুরুয়া [ঝোল] পান করেন।
সহীহ, হাজ্জাতুন নাবী [সাঃআঃ] [৬৭-৮৩], মুসলিম, হিজরাতের পূর্বে ২ হজ্জ এবং আবু জাহল এই বাক্যাংশ ছাড়া।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। শুধুমাত্র যাইদ ইবনি বাবের সূত্রেই আমরা এ হাদীসটি জানতে পেরেছি। আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রাহমানের পুস্তকে — তিনি এটি আব্দুল্লাহ ইবনি আবু যিয়াদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীস সম্বন্ধে আমি মুহাম্মদ আল-বুখারীকে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু এই হাদীস উপরোক্ত সনদে বর্ণিত আছে বলে তিনি জানতে পারেননি। আমি দেখেছি এই হাদীসটিকে তিনি সংরক্ষিত বলে গণ্য করিতেন না। তিনি বলেন, এটি সাওরী-আবু ইসহাক-মুজাহিদের সনদে মুরসালভাবে বর্ণিত আছে।৮১৫/২. কাতাদা [রঃ] বলেন, আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] -কে আমি বললাম,রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার হজ্জ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার হজ্জ এবং চারবার উমরা করিয়াছেন। যিলকাদ মাসে একটি উমরা, হুদাইবিয়ার উমরা, হজ্জের সাথে একটি এবং হুনাইন যুদ্ধের গানীমাত বন্টনকালে জিরানা হইতে একটি উমরা।-সহীহ, বুখারী, মুসলিম।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। হাব্বান ইবনি হিলাল [আবু হাবীব আল-বাসরী] একজন মর্যাদাসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তাঁকে ইয়াহহিয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বলে মন্তব্য করিয়াছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার উমরা করছেন?
৮১৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] চারবার উমরা করেছেনঃ হুদাইবিয়ার উমরা, দ্বিতীয় উমরা এর পরের বছর, যিলকাদ মাসে কাযা উমরা হিসাবে ছিলো এটি, জিরানা নামক জায়গা হইতে হচ্ছে তৃতীয় উমরা এবং তাহাঁর হজ্জের সাথে আদায় করেন চতুর্থ উমারা
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০০৩]।
আনাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এই হাদীসটি ইবনি উআইনা আমর ইবনি দীনার-ইকরিমার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] চারবার উমরা করছেন। তিনি এই সনদে ইবনি আব্বাস [রাদি.] -এর উল্লেখ করেননি। উক্ত সনদটি নিম্নরূপঃসাঈদ ইবনি আব্দুর রহমান আল-মাখযুমী সুফিয়ান ইবনি উআইনা হইতে, তিনি আমর ইবনি দীনার হইতে, তিবি ইকরিমা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮. অনুচ্ছেদঃ কোন জায়গা হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইহরাম বেঁধেছেন?
৮১৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হজ্জ করিতে মনস্থ করিলেন তখন লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন। তারা একত্র হল। অতঃপর তিনি যখন বাইদা নামক জায়গায় পৌঁছুলেন তখন ইহরাম বাঁধলেন।
-সহীহ, হাজ্জাতুন নাবী [সাঃআঃ] [৪৫/২]।ইবনি উমার, আনাস ও মিসওয়ার ইবনি মাখরামা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮১৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তারা বাইদা নামক জায়গাকে কেন্দ্র করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জড়িয়ে [ইহরাম প্রসঙ্গে] মিথ্যারোপ করেছে। আল্লাহ্র শপথ ! মসজিদের নিকটেই একটি গাছের পাশে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইহরামের তাকবীর ধ্বনি করেছিলেন।
-সহীহ, বুখারী, মুসলিম।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখন ইহরাম বাঁধেন?
৮১৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] নামাযের পর ইহরাম এর তাকবীর উচ্চারণ করিয়াছেন।
যঈফ, যঈফ আবু দাঊদ ৩১২।আবু ঈসা বলেন ঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আব্দুস সালাম ইবনি হারব ব্যতীত আর কেউ এটি বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই।[ইহরামের] নামাযের পর ইহরাম বাঁধা আলিমগণ মুস্তাহাব বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১০. অনুচ্ছেদঃ ইফরাদ হাজ্জ
৮২০. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইফরাদ হাজ্জ করিয়াছেন।
শাজ, ইবনি মাজাহ ২৯৬৪, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ]এ অনুচ্ছেদে জাবির ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণীত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। একদল আলিম এ হাদীস মুতাবিক আমাল করার কথা বলেছেন। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইফরাদ হাজ্জ করিয়াছেন এবং আবু বাকর, উমার ও উসমান [রাদি.]-ও ইফরাদ হাজ্জ করিয়াছেন। [সনদ সহীহ, কিন্তু তা শাজ, দেখুন পরবর্তী হাদীস বিশেষ করে ৮২৩ নং হাদীস।]ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায
১১. অনুচ্ছেদঃ হজ্জ ও উমরা দুটি একসাথে আদায় করা
৮২১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আমি উমরা ও হজ্জ উভয়ের একত্রে ইহরাম বেঁধে লাব্বায়িক বলিতে শুনিয়াছি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯৬৮, ২৯৬৯]।উমার ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী কতিপয় আলিম আমল করিয়াছেন। এই মতকে পছন্দ করিয়াছেন কূফাবাসী ফাকীহগণ ও অপরাপর আলিম।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২. অনুচ্ছেদঃ তামাত্তু হাজ্জ
৮২২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকর, উমার ও উসমান [রাদি.] তামাত্তু হাজ্জ করিয়াছেন। মুআবিয়া [রাদি.]-ই সর্বপ্রথম তা করিতে নিষেধ করেন।
সনদ দুর্বল।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৮২৩. মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হারিস ইবনি নাওফাল [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি হাজ্জের সাথে উমরা একত্রে করে তামাত্তু হাজ্জ প্রসঙ্গে সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস ও যাহহাক ইবনি কাইস [রাদি.]- কে আলোচনা করিতে শুনেছেন। যাহহাক ইবনি কাইস [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ প্রসঙ্গে জ্ঞানহীন ব্যক্তি ছাড়া কেউ এটা করিতে পারেনা। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি বড় অপ্রীতিকর কথা বললে। যাহহাক বলিলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] তো এটা করিতে মানা করিয়াছেন। সাদ [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা করিয়াছেন এবং আমরাও তাহাঁর সাথে তা করেছি।
সনদ দুর্বল।ঈমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ তালবিয়া পাঠ করা
৮২৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিম্নরূপ তালবিয়া পাঠ করিতেনঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
“আমি হাযির, হে আল্লাহ্ ! আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির; সকল প্রশংসা ও সকল নিয়ামাত তোমারই, সমস্ত বিশ্বের রাজত্ব তোমারই; তোমার কোন শরীক নেই।“
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯১৮], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, ইবনি মাসউদ, জাবির, আইশা, ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি আরও বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী ও অপরাপর আলিম আমল করার কথা বলেছেন। এই অভিমত সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] -এর। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, কোন লোক যদি আল্লাহ্ তাআলার মহত্ব ব্যঞ্জক কোন শব্দ নিজের পক্ষ হইতে তালবিয়াতে বাড়িয়ে নেয় তবে ইনশাআল্লাহ্ এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পাঠকৃত তালবিয়াতে সন্তুষ্ট থাকাই বেশী প্রিয়।ঈমাম শাফি বলেন, “তালবিয়ার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার মহত্ব ব্যঞ্জক কোন শব্দ যুক্ত করাতে কোন সমস্যা নেই” ইবনি উমার [রাদি.] -এর এই রিওয়ায়াতটি হল আমার এই কথার দলীল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে তিনি তালবিয়ার শব্দ সংরক্ষণ করিয়াছেন। এরপরও তিনি এতে নিজের পক্ষ হইতে বাড়িয়েছেন [নিম্নের হাদীস]।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮২৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইহরাম বাঁধার সময় উচ্চস্বরে বলিতেনঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
“লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাত লাকা ওয়াল মুলকা, লা-শারীকা লাকা” বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, এটা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর তালবিয়া। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর তালবিয়ার সাথে নিজের পক্ষ হইতে তিনি এটুকু অংশ বাড়িয়ে পাঠ করিতেনঃ লাব্বাইকা, লাব্বাইকা ও সাদাইকা ওয়াল খাইরু ফী ইয়াদাইকা, লাব্বাইকা ওয়ার রাগবা-উ ইলাইকা ওয়াল আমালু।
আমি হাযির, আমি হাযির, আমি ভাগ্যবান, সকল প্রকার কল্যাণ তোমারই হাতে, আমি হাযির, সকল প্রকার আশা-আকাংক্ষা তোমার প্রতিই, আমলও তোমার [সন্তুষ্টির] জন্যই”।-সহীহ, প্রাগুক্ত, বুখারী, মুসলিম।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ তালবিয়া ও কুরবানীর ফযিলত
৮২৭. আবু বাকর সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে প্রশ্ন করা হল, কোন প্রকার হজ্জ সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেনঃ চিৎকার করা [উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ] ও রক্ত প্রবাহিত করা [কুরবানী দেওয়া]।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯২৪]।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮২৮. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হইতে ও প্রান্ত পর্যন্ত [তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা] পূর্ণ হয়ে যায়।
-সহীহ, মিশকাত [২৫৫০]।ইসমাঈল ইবনি আইয়্যাশের হাদীসের ন্যায় উবাইদা ইবনি হুমাইদের বরাতে সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] -এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে। ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু বাকরের হাদীসটিকে গারীব বলেছেন। তিনি বলেন, ইবনি আবু ফুদাইক-দাহহাক ইবনি উসমানের সূত্র ব্যতীত এটি বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। আর আব্দুর রাহমান ইবনি ইয়ারবূর নিকট হইতে মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির কোন হাদীস শুনেননি। বরং অন্য একটি হাদীস তিনি সাঈদ ইবনি আব্দুর রাহমান ইবনি ইয়ারবূর মাধ্যমে তাহাঁর পিতার সূত্রে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। আবু নুআইম আত-তাহহান-যিরার ইবনি সুরাদ এই হাদীসটিকে ইবনি আবু ফুদাইক-যাহহাক ইবনি উসমান হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি আব্দুর রাহমান ইবনি ইয়ারবূ হইতে, তিনি তার পিতার সূত্রে- আবু বাকর [রাদি.] -এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু যিরার তাহাঁর বর্ণনায় ভূল করিয়াছেন।আহমাদ ইবনি হাম্বল [রঃ] বলেছেন, বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির-ইবনি আব্দুর রাহমান ইবনি ইয়ারবূ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে যিনি হাদীসটির সূত্র এইভাবে উল্লেখ করিয়াছেন তিনি ভুল করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, আমি যিরার ইবনি সুরাদ-ইবনি আবু ফুদাইকের সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি মুহাম্মাদ আল-বুখারীর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এটি ভুল। আমি বললাম, ইবনি আবু ফুদাইক হইতে যিরার ছাড়াও অন্যান্য বর্ণনাকারী এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, এগুলো কিছু নয়। এরা ইবনি আবু ফুদাইক হইতে বর্ণনা করিয়াছেন অথচ এতে সাঈদ ইবনি আব্দুর রাহমানের নাম উল্লেখ করেননি। যিরার ইবনি সুরাদকে ঈমাম বুখারী দুর্বল বর্ণনাকারী সাব্যস্ত করিয়াছেন।আল-আজ্জ অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং আস-সাজ্জ” অর্থ পশু কুরবানী করা।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ
৮২৯. খাল্লাদ ইবনিল সাইব [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জিবরাঈল [আ] আমার নিকট এসে বলেন যে, আমার সাহাবীদেরকে যেন আমি উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ প্রদান করি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯২২]।যাইদ ইবনি খালিদ, আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। খাল্লাদ হইতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীসটিকে কেউ কেউ খাল্লাদ ইবনি সাইব হইতে, তিনি যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এটি সহিহ নয়। খাল্লাদ ইবনিস সাইব তার পিতার সূত্রে এই বর্ণনাটি সঠিক।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা
৮৩০. যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তিনি ইহরামের উদ্দেশ্যে [সেলাই করা] পোশাক খুলতে ও গোসল করিতে দেখেছেন।
-সহীহ, তালীকাতুল জিয়াদ, মিশকাত তাহকীক ছানী, আল হাজ্জুল কাবীর [২৫৪৭]।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করাকে একদল আলিম মুস্তাহাব বলেছেন। এই মত ঈমাম শাফির।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭. অনুচ্ছেদঃ বিভিন্ন এলাকার লোকদের ইহরাম বাঁধার জায়গা [মীকাত]
৮৩১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কোথা হইতে আমরা ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেনঃ যুল-হুলাইফা হইতে মদানীবাসীগণ, জুহফা হইতে সিরিয়াবাসীগণ, কারন হইতে নাজদবাসীগণ এবং ইয়ালামলাম হইতে ইয়ামানবাসীগণ ইহরাম বাঁধবে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯১৪], বুখারী, মুসলিম।ইবনি আব্বাস, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিতে বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] পূর্ব এলাকার লোকদের জন্য আকীক নামক জায়গাকে মীকাত হিসেবে স্থির করিয়াছেন।
মুনকার; ইরওয়া [১০০২], যঈফ আবু দাঊদ[৩০৬], সহীহ হল যাতু ইরক।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। মুহাম্মাদ ইবনি আলী ইনি হলেন আবু জাফর।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার
১৮. অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের পোশাক পরা ইহরামধারী লোকের জন্য বৈধ নয়
৮৩৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমাদেরকে ইহরাম অবস্থায় আপনি কি ধরণের পোশাক পরার নির্দেশ দেন? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ জামা, পাজামা, টুপি, পাগড়ী ও মোজা পরবে না। তবে কোন লোকের জুতা না থাকলে সে চামড়ার মোজা পরবে যা পায়ের গোছার নিচে থাকে। যাফরান ও ওয়ারাস রং-এ রঙ করা কোন পোশাক তোমরা পরবে না। ইহরামধারী মহিলারা মুখ ঢাকবে না এবং হাতে দস্তানা [হাত মোজা] পরবে না।
-সহিহ, ইরওয়া, সহিহ আবু দাঊদ [১৬০০- ১৩০৬], আল হাজ্জুল কাবীর, বুখারী, মুসলিম।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করার কথা বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তি লুঙ্গি ও জুতা জোগাড় করিতে না পারলে পাজামা ও মোজা পরতে পারে
৮৩৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ ইহরামধারী ব্যক্তি লুঙ্গি যোগাড় করিতে না পারলে সে পাজামই পরবে এবং জুতা জোগাড় করিতে না পারলে মোজা পরবে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৯৩১], বুখারী, মুসলিম।ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করার কথা বলেছেন। তারা বলেন, ইহরামধারী ব্যক্তি [সেলাইবিহীন] লুঙ্গি জোগাড় করিতে না পারলে পাজামাই পরবে এবং জুতা জোগাড় করিতে না পারলে মোজা পরবে। এটা আহমাদ [রঃ]-এর মন্তব্য। ইবনি উমার [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী অপর একদল আলিম বলেন, জুতা না পেলে সে মোজার উপরিভাগ পায়ের গোড়ালি নিম্নভাগ বরাবর কেটে পড়তে পারবে। এই মত সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ এ মালিক [রঃ]-এর।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির পরনে জামা বা জুব্বা থাকলে
৮৩৫. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক বেদুঈনকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইহরাম অবস্থায় জুব্বা পরিহিত দেখলেন। তিনি তাকে তা খুলার নির্দেশ দিলেন।
সহিহ, সহীহ আবু দাঊদ [১৫৯৬, ১৫৯৯], বুখারী, মুসলিম পূর্ণরূপে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৩৬. ইবনি আবী উমার হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আবী উমার সুফিয়ান হইতে, তিনি আমর ইবনি দীনার হইতে, তিনি আতা হইতে, তিনি সাফওয়ান ইবনি ইয়ালা হইতে এই সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বক্তব্য সম্বলিত হাদীস ইয়ালা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এই শেষোক্ত সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে অধিক সহিহ বলেছেন। এ হাদীসের পটভূমিতে একটি ঘটনাও আছে। আতা-ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যা [রাদি.] -এর সূত্রে কাতাদা-হাজ্জাজ ইবনি আরতাত প্রমুখ এইরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু আমার ইবনি দীনার ও ইবনি জুরাইজ-আতা হইতে, তিনি সাফওয়ান ইবনি ইয়ালা হইতে তিনি তার পিতা ইয়ালা [রাদি.] -এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে যা বর্ণনা করিয়াছেন তাই সঠিক।
ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২১. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তি যে প্রাণী হত্যা করিতে পারে
৮৩৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হারাম শারীফের ভিতরেও পাঁচটি অনিষ্টকারী প্রাণীকে মারা যায়ঃ ইঁদুর, বিচ্ছু, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর।
– সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০৮৭], মুসলিম।ইবনি মাসউদ, ইবনি উমার, আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৩৮. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, ইহরামধারী ব্যক্তি আক্রমণকারী হিংস্র জীব, হিংস্র কুকুর, ইঁদুর, বিছা, চিল ও কাক হত্যা করিতে পারে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩০৮৯],আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। আলিমগণ এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা বলেন, ইহরামধারী ব্যাক্তি আক্রমণকারী হিংস্র জীব হত্যা করিতে পারে। সুফিয়ান সাওরী ও শাফিঈ এই অভিমত দিয়েছেন। ঈমাম শাফি[রঃ] আরও বলেন, যে কোন হিংস্র জীব, যদি তা মানুষ বা তার পশুর উপর আক্রমন করে তবে সেটিকে ইহরামধারী ব্যাক্তি হত্যা করিতে পারবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির রক্তক্ষরণ করানো
৮৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইহরাম পরিহিত অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রক্তক্ষরণ করিয়েছেন।
— সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৮২], বুখারীআনাস, আবদুল্লাহ ইবনি বুহাইনা ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। ইহরাম অবস্থায় রক্তক্ষরণ করানোর ব্যাপারে একদল আলিম অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। তারা বলেন, এ অবস্থায় চুল ফেলা যাবে না। ঈমাম মালিক [রঃ] বলেন, ইহরাম পরিহিত অবস্থায় প্রয়োজন ব্যতীত রক্তক্ষরণ করানো যাবে না। সুফিয়ান সাওরী ও শাফিঈ [রঃ] বলেন, ইহরাম পরিহিত ব্যক্তির রক্তক্ষরণ করানোতে কোন সমস্যা নেই, তবে চুল কাটা যাবে না।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী লোকের বিয়ে করানো মাকরূহ
৮৪০. নুবাইহ ইবনি ওয়াহব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি মামার তার [ইহরামধারী] ছেলেকে বিয়ে করাতে মনস্থ করিলেন। তাই তিনি আমাকে আমীরুল হজ্জ আবান ইবনি উসমানের নিকট পাঠালেন। তাহাঁর নিকট এসে আমি বললাম, আপনার ভাই তাহাঁর ছেলেকে বিয়ে করাতে চান। এই বিষয়ে তিনি আপনাকে সাক্ষী রাখতে চান। তিনি বলিলেন, আমি দেখছি সে তো এক মূৰ্খ বেদুঈন! ইহরামধারী ব্যক্তি না নিজে বিয়ে করিতে পারে আর না অন্যকে বিয়ে করাতে পারে, অথবা এরকমই বলেছেন। নুবাইহ বলেন, এরপর তিনি হাদীসটিকে উসমান [রাদি.]-এর মারফতে মারফূভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
— সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৯৬৬], মুসলিম।আবু রাফি ও মাইমূনা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর একদল সাহাবী আমল করার কথা ব্যক্ত করিয়াছেন। উমার ইবনিল খাত্তাব, আলী ইবনি আবু তালিব ও ইবনি উমার [রাদি.] তাহাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কিছুসংখ্যক তাবিঈ ফিকহবিদের বক্তব্যও তাই। ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর মতও তাই অর্থাৎ ইহরাম পরিহিত অবস্থায় কোন লোক বিয়ে করিতে পারে না। তারা বলেন, ইহরাম অবস্থায় কোন লোক বিয়ে করলে তা বাতিল বলে গণ্য হইবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৪১. আবু রাফী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ইহরামমুক্ত অবস্থায় মায়মূনা [রাদি.]-কে বিয়ে করেন এবং ইহরামমুক্ত অবস্থায়ই তাহাঁর সাথে বিবাহরজনী যাপন করেন। আমি ছিলাম তাহাদের মধ্যকার দূত [ঘটক]।
যঈফ, ইরওয়া[১৮৪৯], হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ যাহা ৮৮৭ নং হাদীসের অংশ।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। হাম্মাদ ইবনি যাইদ-মাতার আল-ওয়াররাক হইতে তিনি রাবীয়া [রঃ]-এর সূত্র ব্যতীত অন্য কেউ এটিকে মুসনাদ হিসেবে রিওয়াত করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। মালিক ইবনি আনাস [রঃ]-রাবীয়া হইতে তিনি সুলাইমান ইবনি ইয়াসারের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাইমুনা [রাদি.]-কে হালাল [ইহরামমুক্ত] অবস্থায় বিয়ে করিয়াছেন। মালিক এই রিওয়াত মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। এটিকে সুলাইমান ইবনি বিলালও রাবীয়া হইতে এটি মুরসালরুপে বর্ণনা করিয়াছেন।আবু ঈসা বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনি আসাম্ম হইতে মাইমূনাহ [রাদি.]-এর সূত্রে বর্নীত আছে যে,তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হালাল অবস্থায় আমাকে বিয়ে করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন ঃ ইয়াযীদ ইবনি আসাম্ম [রঃ] মাইমুনাহ [রাদি.]-এর বোনের ছেলে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪. অনুচ্ছেদঃ ইহরাম পরিহিত অবস্থায় বিয়ের অনুমতি প্রসঙ্গে
৮৪২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ইহরাম অবস্থায় মাইমুনাহ [রাদি.] কে বিয়ে করেন।
শাজ, ইবনি মাজাহ ১৯৬৫, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। একদল আলিম এ হাদীস অনুসারে আমালের [ইহরাম অবস্থায় বিয়ে করা বৈধ হওয়ার] অভিমত গ্রহণ করিয়াছেন। সুফইয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের অভিমতও অনুরূপ।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায
৮৪৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ইহরাম অবস্থায় মাইমূনাহ [রাদি.]-কে বিয়ে করিয়াছেন।
[শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস]ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায
৮৪৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ইহ্রাম অবস্থায় মাইমূনা [রাদি.]-কে বিয়ে করিয়াছেন।
শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। রাবী আবুশ্ শাসা-এর নাম জাবির ইবনি যাইদ। মাইমূনা [রাদি.]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ইহ্রাম অবস্থায় না ইহ্রামমুক্ত অবস্থায় বিয়ে করিয়াছেন, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলিমগণের মাঝে মতদ্বৈততার কারণ এটা যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]তাঁকে মক্কার পথে বিয়ে করেছিলেন। তাই কেউ কেউ বলেন, তিনি মাইমূনা [রাদি.]-কে নিজের ইহ্রামমুক্ত অবস্থায়ই বিয়ে করিয়াছেন। কিন্তু এই বিয়ের বিষয়টি তাহাঁর ইহ্রাম বাঁধার পরে প্রকাশিত হয়। এরপর মক্কার পথে সারিফ নামক জায়গায় তিনি ইহ্রামমুক্ত অবস্থায় তাহাঁর সাথে বিবাহরজনী যাপন করেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে মাইমূনা [রাদি.]-এর যেখানে বিবাহরজনী হয়েছিল পরবর্তীতে সেই সারিফ নামক জায়গাতেই তিনি [মাইমুনা] মারা যান এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায
৮৪৫. মাইমূনা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাকে বিয়ে করেন তিনি তখন ইহরামমুক্ত অবস্থায় ছিলেন এবং একই অবস্থায় তিনি তার সাথে বাসর যাপন করেন। পরবর্তী কালে মাইমূনা [রাদি.] সারিফেই মারা যান এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সাথে যে ঝুপড়িতে [কুঁড়ে ঘরে] বাসর যাপন করেন আমরা তাকে সেই স্থানেই দাফন করি।
– সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৯৬৪], মুসলিম সংক্ষিপ্তভাবে।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। ইয়াযীদ ইবনি আসান্ম হইতে একাধিক বর্ণনাকারী এই হাদীসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হালাল অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাইমূনা [রাদি.]-কে বিয়ে করেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ ইহরামধারী ব্যক্তির শিকারের গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
৮৪৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, ইহ্রাম অবস্থায়ও স্থলভাগের শিকারকৃত প্রাণীর গোশ্ত তোমাদের জন্য বৈধ, যদি না তোমরা নিজেরা তা শিকার করে থাক বা তোমাদের উদ্দেশে তা শিকার করা হয়।
যঈফ, মিশকাত, তাহক্বীক্ব ছানী [২৭০০],এ অনুচ্ছেদে আবু ক্বাতাদা ও তালহা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, জাবির [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি একটি বিস্তারিত বর্ণনা। মুত্তালিব জাবির [রাদি.]-এর হাদীস শুনেছেন কি-না তা আমাদের জানা নেই। একদল আলিমের মতে যদি মুহরিম ব্যক্তি নিজে শিকার না করে বা তার উদ্দেশে শিকার না করা হয় তবে তার জন্য এর গোশ্ত খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, এ অনুচ্ছেদে যতগুলো হাদীস বর্ণিত আছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে উত্তম এবং খুব বেশী যুক্তিসম্মত। এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিতে হইবে। ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ]-এরও উক্ত অভিমত।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৮৪৭. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে [সফরে] ছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে তার কিছু সঙ্গীসহ মক্কার কোন এক পথে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পিছনে পড়ে গেলেন। তার সঙ্গীরা ইহরাম অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে মুহরিম ছিলেন না। তিনি একটি বন্য গাধা দেখলেন। তিনি সেই মুহূর্তে তার ঘোড়ায় উঠে বসলেন এবং তার চাবুকটি সঙ্গীদেরকে দিতে বলিলেন। কিন্তু তা দিতে তারা অস্বীকার করিলেন। তিনি তার বর্শাটি চাইলে তাও দিতে তারা অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর তিনি নিজেই সেটাকে উঠিয়ে নেন এবং গাধাটিকে আক্রমণ করে মেরে ফেলেন। কিছু সাহাবী তার গোশত খেলেন এবং সেটা খেতে কেউ কেউ অস্বীকার করিলেন। ইতোমধ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তারা মিলিত হয়ে তাকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ এটি এমন খাবার যা আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে খাইয়েছেন।
সহীহ, ইরওয়া [১০২৮], সহীহ আবু দাউদ [১৬২৩], বুখারী, মুসলিম।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮৪৮. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবুন নাযরের হাদীসের মতই আবু কাতাদা [রাদি.] -এর সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এই রিওয়ায়াতে আরো আছেঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের নিকট এর গোশত অবশিষ্ট আছে কি?
-সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬. অনুচ্ছেদঃ মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত খাওয়া মাকরূহ
৮৪৯. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাকে অবহিত করিয়াছেন এবং সাব ইবনি জাসসামা [রাদি.] ইবনি আব্বাস [রাদি.] -কে অবহিত করিয়াছেন যে, আবওয়া বা ওয়াদদান নামক জায়গাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি একটা বন্য গাধা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে উপহার দিলেন। কিন্তু তাঁকে তিনি তা ফেরত দিলেন। তাহাঁর চেহারাতে মালিন্যের ভাব দেখিতে পেয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি তোমার এই উপহার ফিরিয়ে দিতাম না। কিন্তু আমরা যে এখন ইহরাম অবস্থায় আছি।
-সহীহ।
এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী এবং অপরাপর আলিমগণ মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত খাওয়া মাকরূহ বলেছেন। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কর্তৃক ফেরতদানের তাৎপর্য এই যে, তিনি অনুমান করেছিলেন যে, হয়ত তার উদ্দেশ্যেই এটিকে শিকার করা হয়েছে। তাই এটা হইতে বাচতেই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ঈমাম যুহরী [রঃ]-এর কিছু শাগরিদ তার হইতে বর্ণনা করেন যে, বন্য গাধার গোশত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে উপহার দেয়া হয়। কিন্তু এই রিওয়ায়াতটি সংরক্ষিত নয়।আলী ও যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭. অনুচ্ছেদঃ মুহ্রিমের জন্য সমুদ্রের শিকার বৈধ
৮৫০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাজ্জ অথবা উমরাহ্ করিতে বের হলাম। আমাদের সামনে এক ঝাঁক পঙ্গপাল এসে পড়ল। আমরা আমাদের চাবুক ও ছড়ি দিয়ে এগুলো মারতে শুরু করলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এটা তোমরা খেতে পার। কারণ এটা জলজ শিকারের অন্তর্ভুক্ত।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২২২]।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আবুল মুহায্যিম ব্যতীত এটিকে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবুল মুহায্যিমের নাম ইয়াযীদ ইবনি সুফিয়ান। শুবা তার সমালোচনা করিয়াছেন। একদল আলিম মুহ্রিমের জন্য পঙ্গপাল শিকার করা এবং তা খাওয়ার সম্মতি দিয়েছেন। অন্য একদল আলিম বলেছেন, তা শিকার করলে বা খেলে মুহ্রিমের উপর সাদাকা [দম] নির্ধারিত হইবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮. অনুচ্ছেদঃ মুহুরিমের জন্য ভুল্লোক শিকার করা
৮৫১. ইবনি আবু আম্মার [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে আমি বললাম, ভুল্লোক কি শিকার [করার মত প্রাণী]। তিনি বলেন, হ্যা। আমি বললাম, সেটা কি খেতে পারবো? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি এ কথা বলেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ।
– সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০৮৫]।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রঃ] বলেন, এই হাদীসটি জারীর ইবনি হাযিম [রঃ] রিওয়ায়ত করিয়াছেন এবং তিনি সনদের উল্লেখ করিয়াছেন এভাবে “জাবির হইতে তিনি উমার হইতে”। কিন্তু ইবনি জুরাইজ [রঃ]-এর বর্ণনাটি বেশি সহীহ। এই মত ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর। একদল আলিম মুহুরিমের ক্ষেত্রে বলেন, সে যদি ভুল্লোক শিকার করে তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করিতে হইবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply