হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য – পশু, সহবাস, মহিলা, শিশু, নাহ্‌র ও চুল

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য – পশু, সহবাস, মহিলা, শিশু, নাহ্‌র ও চুল

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য – পশু, সহবাস, মহিলা, শিশু, নাহ্‌র ও চুল , এই অধ্যায়ে হাদীস=২৫৮ টি ( ৬৯৬-৯৫৩ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ২০ঃ হজ্জ

পরিচ্ছেদঃ ৪৫কোন্ ধরনের পশু হাদ্‌য়ীর উপযুক্ত

৮৩৩

আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু বক্‌র ইবনি হাযম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হজ্জ বা উমরাতে একটি উট যাহা পূর্বে [আবু জাহ্‌ল ইবনি হিশামের ছিল] হাদ্‌য়ী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। {১} [হাসান আবু দাঊদ ১৭৪৯, ঈমাম আবু দাঊদ সাহাবী ইবনি আব্বাস এর বরাতে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন {সহীহ, সুনানে আবু দাঊদ} আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

{১} আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্ত হারম শরীফে কুরবানীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত পশুকে হাদয়ী বলা হয়।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৩৪

আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিয়ে যেতে দেখিতে পেয়ে বলিলেন, এর উপর আরোহণ কর। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল, এটা তো কুরবানীর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তোমার অনিষ্ট হোক, আরোহণ কর। এই কথা তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছিলেন। {১} [বুখারি ১৬৮৯, মুসলিম ১৩২২]

{১} তোমার অনিষ্ট হোক, === এই শব্দটি আরবি ভাষায় প্রচলিত শব্দ, তার অনিষ্ট হওয়াটা উদ্দেশ্য নয়। উক্ত ব্যক্তির হাঁটার কষ্ট দেখে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ এই কথা বলেন।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৩৫

আবদুল্লাহ্ ইবনি দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হজ্জের সময় দুটি করে আর উমরার সময় একটি করে কুরবানী দিতেন। আমি তাহাকে খালিদ ইবনি উসাইদের ঘরে বাঁধা তাঁর উমরার কুরবানীর উটটিকে নাহর করিতে দেখেছি। আমি উমরার সময় দেখেছি তাঁর কুরবানীর উটের উপর এমন জোরে বর্শা মেরেছিলেন [নাহর করার জন্য] যে, উহা ভেদ করে অপরদিকে গিয়ে ঘাড়ের নিচ দিকে বের হয়ে গিয়েছিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৩৬

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] হজ্জ কিংবা উমরার সময় একটি উট হাদ্‌য়ী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৩৭

আবু জাফর কারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি আইয়াশ ইবনি আবি রবীআ মাখযুমী দুটি উটের কুরবানী করেছিলেন। এর মধ্যে একটি বুখতী ধরনের উষ্ট্রীও ছিল। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} লম্বা গর্দানওয়ালা অভিজাত উষ্ট্রীকে বুখতী বলা হয়- আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে রয়েছে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৩৮

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, কুরবানীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত উষ্ট্রীর যদি বাচ্চা পয়দা হয় তবে মার সঙ্গে বাচ্চাটিকেও কুরবানীর জন্য নিয়ে যাওয়া হইবে। লইয়া যাওয়ার জন্য যদি কোন যানবাহন না পাওয়া যায় তবে বাচ্চাটিকে মার উপর চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হইবে, যাতে মার সাথে বাচ্চাটিকে নাহর করা যায়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৩৯

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

কুরবানীর উদ্দেশ্যে নীত কুরবানীর পশুর উপর প্রয়োজন হলে আরোহণ করিতে পার। তবে এভাবে ব্যবহার করিবে না যে, উহার কোমর ভেঙে যায়। দুধের প্রয়োজন হলে এর বাচ্চা পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়ার পর [অবশিষ্ট দুধ] পান করিতে পার, আর একে নাহর করার সময় বাচ্চাটিকেও নাহর করিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৪৬হাদ্‌য়ী হাঁকিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি

৮৪০

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] মদীনা হইতে যখন কুরবানীর পশু [হাদ্‌য়ী] নিয়ে যেতেন তখন যুল-হুলায়ফা পৌঁছে এর গলায় চিহ্নের জন্য কিছু একটা লটকিয়ে দিতেন এবং সেখানেই উহার ইশআর [কাঁধের চামড়া যখম করে রক্ত মাখিয়ে দেওয়া] করিতেন। প্রথমে ঐ পশুটির মুখ কিবলার দিকে করে এর গলায় দুটি জুতা লটকিয়ে দিতেন, পরে বাম দিকের কাঁধের চামড়া চিরে তা রক্তাক্ত করিতেন এবং নিজের সঙ্গে তা হাঁকিয়ে নিয়ে চলতেন। আরাফাতে পৌঁছে সকলে যেখানে অবস্থান করিতেন, তিনিও সেখানে অবস্থান করিতেন। সকলেই যখন ফিরে আসত কুরবানীর পশুটিও সঙ্গে ফিরত। ইয়াওমুন নাহরের সকালে মিনায় পৌঁছে মাথা কামানো বা চুল ছাঁটার পূর্বেই কুরবানীর পশুটি নাহর করিতেন। আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] স্বীয় কুরবানীর পশুটি স্বহস্তে নাহর করিতেন। কিবলামুখ করে প্রথমে কুরবানীর পশুগুলো কাতার করে দাঁড় করাতেন, পরে এগুলো নাহর করিতেন এবং এই গোশত নিজেও খেতেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়াইতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪১

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] ইশআর করার উদ্দেশ্যে যখন কুরবানীর উটের কুঁজে যখম করিতেন তখন বিসমিল্লাহি্‌ ওয়াল্লাহু আকবার বলিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

১৪৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُوْلُ: الْهَدْيُ مَا قُلِّدَ وَأُشْعِرَ وَوُقِفَ بِهِ بِعَرَفَةَ.

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, কাদয়ী হল সেই পশু যার গলায় হার লটকানো হয়েছে, যার কুঁজ চিরে যখম করা হয়েছে এবং আরাফাতের ময়দানে নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

১৪৬و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُجَلِّلُ بُدْنَهُ الْقُبَاطِيَّ وَالْأَنْمَاطَ وَالْحُلَلَ ثُمَّ يَبْعَثُ بِهَا إِلَى الْكَعْبَةِ فَيَكْسُوهَا إِيَّاهَا.

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] কুরবানীর উটসমূহকে মিসরীয় কুবাতি ও আনমাত কাপড় পরাতেন। কুরবানীর পর কাপড়সমূহ বায়তুল্লাহর গিলাফ হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

১৪৭و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللهِ بْنَ دِينَارٍ مَا كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ يَصْنَعُ بِجِلَالِ بُدْنِهِ حِينَ كُسِيَتْ الْكَعْبَةُ هَذِهِ الْكِسْوَةَ قَالَ كَانَ يَتَصَدَّقُ بِهَا.

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] আবদুল্লাহ্ ইবনি দীনার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন পরে বায়তুল্লাহ্‌র জন্য যখন আলাদা গিলাফ বানিয়ে নেওয়া হল তখন আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] কুরবানীর উটসমূহের এই কাপড়-চোপড় কি করিতেন? তিনি বলিলেন, এইগুলো তিনি তখন খয়রাত করে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪২

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, কুরবানীর উট পাঁচ বা ততোধিক বৎসর বয়সের হইতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

১৪৯و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَشُقُّ جِلَالَ بُدْنِهِ وَلَا يُجَلِّلُهَا حَتَّى يَغْدُوَ مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَةَ.

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] তাঁর কুরবানীর উটের কাপড়-চোপড় মিনা হইতে আরাফাতে না যাওয়া পর্যন্ত ছিড়তেন না বা পরাতেন না। [মাওকুফ, হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ لِبَنِيهِ يَا بَنِيَّ لَا يُهْدِيَنَّ أَحَدُكُمْ مِنْ الْبُدْنِ شَيْئًا يَسْتَحْيِي أَنْ يُهْدِيَهُ لِكَرِيمِهِ فَإِنَّ اللهَ أَكْرَمُ الْكُرَمَاءِ وَأَحَقُّ مَنْ اخْتِيرَ لَهُ.

হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন তিনি স্বীয় পুত্রগণকে বলিতেন, বৎসগণ আল্লাহর নামে তোমরা এমন উট কুরবানী দিও না একজন দোস্তকে যা দিতে লজ্জা কর। আল্লাহ তাআলা সবচাইতে সম্মানিত। সুতরাং সর্বোত্তম বস্তুই তাঁর জন্য নির্বাচন করা উচিত।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৪৭হাদ্‌য়ীর পশু যদি ক্লান্ত হয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তবে কি করিতে হইবে

৮৪৩

হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর হাদ্‌য়ী নিয়ে যাচ্ছিলেন সে ব্যক্তি তাহাকে বলল, পথে যদি হাদ্‌য়ীর কোন একটি মারা যাওয়ার উপক্রম হয় তবে কি করিবে? তিনি বলিলেন, এমন হইতে দেখলে ঐ পশুটিকে নাহর করে গলায় বাঁধা হারটি রক্ত মেখে রেখে দেবে। এতে লোকগণ এর গোশত খেয়ে নিতে পারবে। {১} [সহীহ, আবু দাঊদ মুত্তাসিল সনদে নাজিয়ার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন, {আবু দাঊদ ১৭৬২, তিরমিজি ৯১০, ইবনি মাজাহ ৩১০৬} আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ সুনানে আবু দাঊদ} এবং ঈমাম মুসলিম মারফু ও মুত্তাসিল সনদে আবু আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন ১৯২৫]

{১} রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর হাদয়ী নিয়ে যে ব্যক্তি যাচ্ছিল তাঁর নাম নাদিয়া ইবনি যুনদুব আসলামী [রাদি.] বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ তাঁর নাম যাকওয়ান বলে উল্লেখ করিয়াছেন।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪৪

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি হাদ্‌য়ী নিয়ে রওয়ানা হয়েছে, সে যদি এটাকে পথে মারা যেতে দেখে, তবে নাহর করে রেখে দেবে, যাতে লোকজন উহা খেয়ে নিতে পারে। ঐ ব্যক্তির কোন বদলা দিতে হইবে না। কিন্তু এর গোশত নিজে খেলে বা অন্য কাউকেও খেতে বললে বদলা দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ الدِّيلِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ مِثْلَ ذَلِكَ.

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] সাওর ইবনি যায়দ দীলি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-ও উপরিউক্ত মত ব্যক্ত করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪৫

ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, কাফফারা, মানত বা হজ্জে তামাত্তুর কুরবানীর উট নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পর পথে যদি মারা যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে এর পরিবর্তে আরেকটি উট কুরবানী দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

১৫৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ: مَنْ أَهْدَى بَدَنَةً ثُمَّ ضَلَّتْ أَوْ مَاتَتْ فَإِنَّهَا إِنْ كَانَتْ نَذْرًا أَبْدَلَهَا وَإِنْ كَانَتْ تَطَوُّعًا فَإِنْ شَاءَ أَبْدَلَهَا وَإِنْ شَاءَ تَرَكَهَا.

১৪১৯-و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَمِعَ أَهْلَ الْعِلْمِ يَقُولُونَ لَا يَأْكُلُ صَاحِبُ الْهَدْيِ مِنْ الْجَزَاءِ وَالنُّسُكِ.

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন, কুরবানীর পশু পথে মারা গেলে বা হারিয়ে গেলে তা মানতের হয়ে থাকলে এর পরিবর্তে আরেকটি কুরবানী দিতে হইবে, আর নফলী হয়ে থাকলে আরেকটি কুরবানী দেওয়া না দেওয়া মালিকের ইচ্ছাধীন থাকিবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তিনি বিজ্ঞ আলিমগণকে বলিতে শুনেছেন, শাস্তিস্বরূপ অথবা ইহরামের পরিপন্থী পরিচ্ছন্নতা ও আরাম-আয়েশ গ্রহণ করার দরুন যে হাদ্‌য়ী [কুরবানী] ওয়াজিব তা হইতে কুরবানী প্রদানকারী আহার করিবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৪৮মুহরিম ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করলে তার কুরবানী

৮৪৬

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.], আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] ও আবু হুরায়রা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইহরাম অবস্থায় কেউ যদি স্ত্রীর সহিত সহবাস করে তবে সে কি করিবে? তাঁরা বলিলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হজ্জের অবশিষ্ট রুকনগুলো আদায় করে হজ্জ পুরা করিবে। আগামী বৎসর তাদেরকে পুনরায় হজ্জ করিতে হইবে এবং কুরবানী দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] বলেছেন, আগামী বৎসর পুনরায় হজ্জের ইহরাম বাঁধলে হজ্জ পুরা না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে আলাদা আলাদা থাকিবে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪৭

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সমবেত লোকদেরকে লক্ষ করে বলিতেছিলেন ইহরাম অবস্থায় যে ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাস করে তার সম্পর্কে তোমরা কি বল? উপস্থিত সকলেই চুপ হয়ে রইলেন। শেষে সাঈদ [রাদি.] নিজেই বলিলেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করেছিল। পরে সে এই সম্পর্কে মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য এক ব্যক্তিকে মদীনা শরীফে প্রেরণ করে। কেউ কেউ জবাব দিলেন স্বামী-স্ত্রী এক বৎসর পর্যন্ত দুজনেই আলাদা হয়ে থাকিবে।

কিন্তু সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, এই বৎসর তারা হজ্জে অবশিষ্ট কাজসমূহ পুরা করিবে। পরের বৎসর জীবিত থাকলে পুনরায় হজ্জ করিবে এবং কুরবানী দিবে। প্রথম হজ্জের ইহরাম যে স্থান হইতে বেঁধেছিল এই হজ্জের ইহরামও সেই স্থান হইতে বাঁধবে। আর কাযা হজ্জ করিতে যখন আসবে তখন দুজনেই তারা হজ্জ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আলাদা আলাদা থাকিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উভয়কেই এক একটি করে কুরবানী করিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আরাফাতে অবস্থানের পর এবং প্রস্তর নিক্ষেপের পূর্বে যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হইবে এবং আগামী বৎসর পুনরায় তাকে হজ্জ করিতে হইবে। রমিয়ে হাজর বা প্রস্তর নিক্ষেপের পর যদি স্ত্রী সহবাস করে, তবে তাকে একটি উমরা এবং একটি কুরবানী করিতে হইবে। পরেরবার পুনরায় হজ্জ করিতে হইবে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, স্খলন না হয়ে শুধু পুরুষাঙ্গ প্রবিষ্ট হলেও হজ্জ ও উমরা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং হাদ্‌য়ী ওয়াজিব হইবে। প্রবিষ্ট না হয়েও যদি রতিলীলায় স্খলন হয়ে যায় তবুও হজ্জ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আর কল্পনা করার দরুন যদি কারো স্খলন হয়ে যায় তবে এতে কিছুই ওয়াজিব হইবে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কেউ স্ত্রীকে চুমা খেলে স্খলন না হলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কোন মুহরিম মহিলার স্বামী যদি তার সম্মতিক্রমে তার সঙ্গে হজ্জ ও উমরার মধ্যে কয়েকবার সহবাস করে তবে ঐ মহিলাকে পরের বৎসর এই হজ্জের কাযা আদায় করিতে হইবে এবং কুরবানী দিতে হইবে। আর এইরূপ সহবাস উমরার মধ্যে হলেও অতি সত্বর উমরা কাযা করিতে হইবে ও কুরবানী দিতে হইবে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৪৯যে ব্যক্তি হজ্জ পেল না তার কুরবানী

৮৪৮

সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু আইয়ুব আনসারী [রাদি.] হজ্জের নিয়তে রওয়ানা হয়েছিলেন। মক্কার পথে নাযিয়া নামক স্থানে পৌঁছার পর তাঁর উটটি হারিয়ে যায়। নাহর দিবস অর্থাৎ দশ তারিখে তিনি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনা বিবৃত করলেন। তখন উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, এখন উমরা করে ইহরাম খুলে ফেল। আগামী বৎসর হজ্জ করে নিও এবং সামর্থ্যানুসারে একটি কুরবানী করো। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৪৯

সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ইয়াওমুন-নাহারে অর্থাৎ দশ তারিখে হাব্বার ইবনি আসওয়াদ [রাদি.] হজ্জের জন্য এসে পৌঁছেন। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] তখন তাঁর কুরবানীর পশুগুলো নাহর করিতেছিলেন। হাব্বার বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন! তারিখের ব্যাপারে আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম আজ আরাফাতের দিন। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, তুমি সঙ্গিগণসহ মক্কায় চলে যাও এবং তাওয়াফ করে নাও। কোন কুরবানীর পশু সঙ্গে থাকলে উহার কুরবানী করে ফেল। পরে মাথা কামায়ে বা চুল ছেঁটে বাড়ি ফিরে যাও। আগামী বৎসর পুনরায় হজ্জ করিবে এবং কুরবানী দিবে। যার কুরবানী করার সমর্থ্য নেই সে তিনদিন হজ্জের সময় এবং বাড়ি ফিরে সাতদিন রোযা রাখবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হজ্জে কিরানের ইহরাম বাঁধার পর যদি হজ্জ পায়, তবে পরের বৎসরও হজ্জে কিরান করিবে এবং তাকে দুটি কুরবানী দিতে হইবে একটি হজ্জে কিরানের আর একটি গত বৎসর হজ্জ না পাওয়ার।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫০তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে তার কুরবানী

৮৫০

আতা ইবনি রাবাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মিনাতে তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করেছে, তিনি তাকে একটি উট কুরবানী করিতে হুকুম দেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫১

ইকরামা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত করার পূর্বে কেউ যদি স্ত্রীসহবাস করে তবে তাকে উমরা এবং কুরবানী করিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫২

ইকরামা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে যেরূপ বর্ণনা করিয়াছেন মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] রবীআ ইবনি আবু আবদুর রহমানকে এ সম্পর্কে অনুরূপ বলিতে শুনেছেন। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই বিষয়ে যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে ইটাই আমার পছন্দনীয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল তাওয়াফে যিয়ারত ভুলে গিয়ে যদি বাড়ি ফিরে আসে তবে সে কি করিবে? তিনি বলিলেন, স্ত্রীসম্ভোগ না করে থাকলে মক্কায় ফিরে যাবে এবং তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করিবে। আর স্ত্রীসম্ভোগ করে থাকলে মক্কায় ফিরে গিয়ে তাওয়াফ আদায় করিবে এবং উমরা করে একটি কুরবানী দিবে। মক্কা হইতে উট ক্রয় করে কুরবানী দিলে হইবে না। সঙ্গে যদি কুরবানীর পশু এনে না থাকে তবে মক্কা হইতে কুরবানীর পশু কিনে এটাসহ হারাম শরীফের বাহিরে চলে যাবে এবং সে স্থান হইতে এটাকে মক্কায় হাঁকিয়ে নিয়া আসবে এবং পশু সেখানে নাহর করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫১সামর্থ্যানুসারে কুরবানী করা

৮৫৩

জাফর ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] বলিতেন, {১} مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ এই কথার অর্থ হল, অন্তত একটি বকরী কুরবানী করা। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} তবে সহজলভ্য কুরবানী করো। [সূরা: আল-বাকারাহ, ১৯৬]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫৪

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ এর অর্থ হল, অন্তত একটি বকরী কুরবানী করা। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই বর্ণনাটি আমার নিকট খুবই প্রিয়। কেননা কুরআনুল করীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমরা যখন ইহরাম অবস্থায় থাক তখন তোমরা কোন প্রাণী বধ করো না। কেউ যদি কোনকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে বধ করে তবে যে ধরনের পশু সে বধ করেছে সেই ধরনের কোন পশু তাকে প্রতিদান [জরিমানা] দিতে হইবে। তোমাদের দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ লোক এর ফয়সালা করে দেবে। এই প্রতিদান বায়তুল্লাহইতে প্রেরিত হাদ্‌য়ী হইবে অথবা কাফ্‌ফারা হিসেবে হইবে যা মিসকীনদেরকে আহার করানো হইবে অথবা তাকে তৎপরিমাণ রোযা রাখতে হইবে যাতে সে তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করে নেয়। যা হোক, শিকারকৃত পশুর পরিবর্তে কোন সময়ে বকরীও ওয়াজিব হইতে পারে। উক্ত আয়াতে উহাকেও হাদ্‌য়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কথায় একজন কি করে সন্দেহ করিতে পারে? কারণ যে পশু উট বা গরুর সমতুল্য নয় উহার প্রতিদানে [জরিমানা] একটি বকরীই ওয়াজিব হইতে পারে। একটি বকরীর সমতুল্যও যেখানে হইবে না সেখানে কাফফারা ওয়াজিব হইবে। সে রোযার মাধ্যমে উহা আদায় করুক বা মিসকীনদেরকে আহার করিয়ে তা আদায় করুক, উভয় অবস্থায় ইহা কাফফারা হিসেবেই গণ্য হইবে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫৫

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ আয়াতটির অর্থ হল অন্ততপক্ষে একটি উট বা গাভী কুরবানী করিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫৬

আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু বক্‌র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আম্‌রাহ বিন্‌ত আবদুর রহমানের আদায়কৃত দাসী রুকাইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] খবর দিয়েছেন তিনি একবার আমরাহ্ বিন্‌ত আবদুর রহমানের সঙ্গে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। তিনি বলেন, যিলহজ্জ মাসের অষ্টম তারিখে তিনি [আমরাহ] মক্কায় গিয়ে উপনীত হন। আমি তাঁর সাথে সাথেই ছিলাম। তিনি কাবা শরীফের তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করে মসজিদে গেলেন। আমাকে বলিলেন, তোমার নিকট কাঁচি আছে কি? আমি বললাম নাই। তিনি বলিলেন, একটি কাঁচি খুঁজে আন। আমি তাই করলাম। তিনি উহা দ্বারা তাঁর চুলের কিছু অংশ কাটলেন। পরে কুরবানীর দিন [ইয়াওমুন-নাহরে] তিনি একটি বকরী যবেহ করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫২কুরবানী হাদ্‌য়ী বিভিন্ন আহকাম

৮৫৭

সাদাকাহ ইবনি ইয়াসার মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ইয়ামনের অধিবাসী এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট আসে। চুলগুলো তার জটপাকানো ছিল। সে বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আমি শুধু উমরার হইরাম বেঁধে এসেছি। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে থাকতে বা আমার নিকট পূর্বে জিজ্ঞেস করিতে তবে তোমাকে আমি হজ্জে কিরান করার কথা বলতাম। লোকটি বললঃ উহার সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমরা এই লম্বা চুলগুলো কেটে ফেল এবং কুরবানী কর। ইরাকের অধিবাসী একজন মহিলা তখন বলল, হে আবু আবদুর রহমান! এই লোকটির হাদয়ী [কুরবানী] কি হইবে? তিনি বলিলেন, উত্তম হাদয়ী সে দিবে। মহিলাটি পুনরায় বলল, ইহা কি হইবে? আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, যবেহ করবার জন্য বকরী ব্যতীত অন্য কিছু যদি না পায় বা দিতে অসমর্থ হয়, তবে আমার কাছে রোযা রাখা অপেক্ষা বকরী হাদয়ী দেওয়াই উত্তম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫৮

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, ইহরামরত স্ত্রীলোক তার চুলের গোছা না কাটা পর্যন্ত সে চুল আচঁড়াবে না। সঙ্গে হাদ্‌য়ী থাকলে তা যবেহ না করা পর্যন্ত সে চুল কাটবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৫৯

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

কতিপয় আলিমের কাছে শুনেছেন স্বামী-স্ত্রী কুরবানীতে একই উটে শরীক হইবে না। প্রত্যেকেরই আলাদা উট কুরবানী করা উচিত।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হজ্জের সময় নাহর করার জন্য যদি কারো সঙ্গে মক্কায় হাদ্‌য়ী পাঠিয়ে দেয় আর সে নিজে উমরার ইহরাম বেঁধে আসে তবে উমরা শেষ হইতেই সে ঐ হাদ্‌য়ীটি নাহর করিতে পারবে কি অথবা উহা নাহর করার জন্য হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে কি অপেক্ষা করিবে? তিনি উত্তরে বলিলেন, উমরা করে সে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং কুরবানীর জন্য হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে। এবং ইয়াওমুন-নাহরের সময় উহাকে সে নাহর করিবে এবং এই কুরবানীকে তার উমরারই অংশবিশেষ জানবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইহরাম অবস্থায় শিকার করার কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি কারো উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়, তবে উহাকে মক্কায় নিয়ে আসা উচিত। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ এমন হাদ্‌য়ী যা কাবায় পৌঁছায়। শিকার করার কারণে বা কুরবানীর পরিবর্তে রোযা বা সাদকা করিতে হলে তার ইখতিয়ার থাকিবে হারাম্ বা হারাম্ শরীফের বাহিরে যেকোন স্থানে ইচ্ছা সে উহা করিতে পারবে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৬০

আবদুল্লাহ ইবনি জাফর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবদুর রহমান ইবনি জাফর [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সহিত মদীনা হইতে যাত্রা করেন, পথে সুক্ইয়া নামক স্থানে হুসায়ন ইবনি আলী [রাদি.]-এর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। তিনি {হুসায়ন [রাদি.]} সেখানে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি জাফরও সেখানে রয়ে গেলেন। হজ্জের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি পুনরায় রওয়ানা হয়ে পড়েন এবং একজন লোককে খবর দিয়ে আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিন্‌ত উমাইসের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা ঐ সময় মদীনায় ছিলেন। তাঁরা খবর পেয়ে সুকইয়ায় অসুস্থ পুত্রের নিকট এলেন। তিনি [হুসায়ন রা.] নিজের মাথার দিকে ইশারা করে দেখালেন। আলী [রাদি.]-এর নির্দেশে তখন সেখানেই তাঁর মাথা কামান হল এবং একটি উট কুরবানী দেওয়া হল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হুসায়ন [রাদি.] ঐ সময় উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর সহিত হজ্জ করিতে রাওয়ানা হয়েছেন।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৩আরাফাত মুযদালিফায় অবস্থান

৮৬১

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, আরাফাতের সারা ময়দানে অবস্থান করা যায়, তবে তোমরা বাতনে উরানায় অবস্থান করো না। এমনিভাবে মুযদালিফার সারা ময়দানে অবস্থান করা যায় তবে তোমরা বাতনে মুহাস্‌সিরে অবস্থান করো না। [সহীহ, ঈমাম মুসলিম জাবের [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন ১২১৮, আর ঈমাম মলিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি, মুরসাল]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৬২

আবদুল্লাহ্‌ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তোমরা বিশ্বাস কর বাতনে উরানা ব্যতীত সমগ্র আরাফাতের ময়দানই অবস্থান করার স্থান, এমনভাবে বাতনে মুহাসসির ব্যতীত মুযদালিফার সারাটা ময়দানেই অবস্থান করা যায়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন

فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ {১}

রাফাস অর্থ হল স্ত্রীসম্ভোগ। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ {২}

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ফুসুক অর্থ হল, দেব- দেবীর নামে পশু উৎসর্গ করা, আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন,

أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ {৩}

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হজ্জে জিদাল বা ঝগড়া-বিবাদ হল, কুরাইশ গোত্রের লোকজন তৎকালে হজ্জের সময় মুযদালিফার কুযাহ্ নামক স্থানে অবস্থান করত। আর অন্যরা আরাফাতে অবস্থান করত। উভয় দল তখন পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হত, একদল বলত, আমরাই সত্যপথের অনুসারী; অপর দল বলত, আমরাই কেবল সত্যপথের অনুসারী। আল্লাহ্ তাআলা আয়াত নাযিল করে ইরশাদ করলেন,

لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ {৪}

হজ্জের সময় ঝগড়া-বিবাদ বলিতে এই কথাই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ অধিক জ্ঞাত। আলিমগণের নিকটও আমি এই ব্যাখ্যা শুনিয়াছি।

{১} হজ্জের সময়ে স্ত্রীসম্ভোগ অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। ২ ঃ ১৯৭

{২} সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। [সূরা: আল-বাকারাহ, ১৮৭]

{৩} অথবা যা অবৈধ, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গের কারণে। [সূরা: আল-মায়িদাহ, ১৪৫]

{৪} আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদত পদ্ধতি যা তারা অনুসরণ করে সুতরাং তারা যেন তোমার সাথে বিতর্ক না করে এই ব্যাপারে। তুমি তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর। তুমিতো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত। [সূরা: হাজ্জ, ৬৭]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৪অপবিত্র অবস্থায় ওয়াকুফ [অবস্থান] করা এবং আরোহী অবস্থায় ওয়াকুফ করা

৮৬৩

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল অপবিত্র কোন ব্যক্তি আরাফাত বা মুযদালিফায় অবস্থান বা প্রস্তর নিক্ষেপ বা সাফা-মারওয়ার সায়ী করিতে পারবে কি? তিনি বলিলেন, ঋতুমতী স্ত্রীলোক হজ্জের যে সমস্ত আহকাম-আরকান আদায় করিতে পারে তার ওযূবিহীন অবস্থায় তাকে আদায় করিতে হয়। তদ্রূপ ওযূ ছাড়া পুরুষ ও স্ত্রীলোক এইগুলো করিতে পারে। এতে দোষের কিছু হয় না। তবে ওযূসহ ঐ সমস্ত বিষয় আদায় করা উত্তম। স্বেচ্ছায় ওযূবিহীন অবস্থায় এইসব কাজ করা ঠিক নয় ।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল কোন ব্যক্তি আরোহী হলে আরাফাতে অবস্থানকালে সে আরোহী অবস্থায় থাকিবে কিনা। তিনি বলিলেন, আরোহী অবস্থায় ওয়াকুফ করিবে। তবে তার বা তার ভারবাহী পশুর কোন অসুবিধা থাকলে আল্লাহ্ তাআলা কবূল করিবেন।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৫যার হজ্জ ছুটে গিয়েছে তার আরাফাতে অবস্থান করা

৮৬৪

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, মুযদালিফার রাত্রির [১০ তারিখের রাত্রি] কিছু অংশ হইতে আরাফাতে অবস্থান না করলে হজ্জ হইবে না। আর যে ব্যক্তি ইয়াওমুন-নাহরের ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরাফাতে অবস্থান করিতে পারবে তার হজ্জ হয়ে যাবে। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার সময় হইতে ইয়াওমুন নাহরের ফজর পর্যন্ত হল ওয়াকুফ বা আরাফাতে অবস্থানের সময়। এই সময়ের ভিতর আরাফাতে অবস্থান না হলে হজ্জ হইবে না।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৬৫

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, মুযদালিফার রাত ফজর হওয়া পর্যন্তও যদি কেউ [কিছু সময়ের জন্য] আরাফাতে অবস্থান না করে থাকে তবে তার হজ্জ বিনষ্ট হইবে। আর যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ইহরাম বেঁধে [কিছু সময়] আরাফাতে অবস্থান করিতে পারবে তার হজ্জ হয়ে যাবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আরাফাতে অবস্থানকালে যদি কোন ক্রীতদাস আযাদ হয়ে যায় তবে এই হজ্জ দ্বারা তার ফরয হজ্জ আদায় হইবে না। কিন্তু আযাদ হওয়ার পূর্বে সে যদি ইহরাম না বেঁধে থাকে এবং আযাদ হওয়ার পর ইয়াওমুন-নাহরের ফজরের পূর্বে ইহরাম বেঁধে আরাফাতে অবস্থান করে নিতে পারে তবে তার ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। আর ইয়াওমুন-নাহরের ফজর পর্যন্ত সে যদি ইহরাম না বাঁধে তবে তার অবস্থা ঐ ব্যক্তির মত হইবে যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রের ফজর পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করে নাই, ফলে তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুতরাং ঐ আযাদ ক্রীতদাসেরও পুনরায় ফরয হজ্জ আদায় করিতে হইবে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৬মহিলা শিশুদেরকে প্রথমে রওয়ানা করে দেওয়া

৮৬৬

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] শিশু ও মহিলাদেরকে প্রথম মুযদালিফা হইতে মিনায় পাঠিয়ে দিতেন, মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করার পরপরই অন্যান্য লোক আসার পূর্বে যেন তারা প্রস্তর নিক্ষেপ করে নিতে পারেন। [বুখারি ১৬৭৬, মুসলিম ১২৯৫]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৬৭

আতা ইবনি রাবা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আসমা বিন্‌ত আবি বক্‌র [রাদি.]-এর আযাদ দাসী বর্ণনা করেন, অন্ধকার থাকতেই আসমা বিন্‌ত আবি বক্‌র [রাদি.]-এর সাথে আমরা মিনায় চলে এলাম। আসমাকে তখন আমি বললাম অন্ধকার থাকতেই যে মিনায় আমরা চলে এলাম? তিনি বলিলেন, তোমাদের হইতে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ], তাঁর আমলেও আমরা এই ধরনের আমল করেছি। [বুখারি ১৬৭৯, মুসলিম ১২১৯]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৬৮

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, তালহা ইবনি উবায়দুল্লাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পরিবারের মহিলা ও শিশুদেরকে মুযদালিফা হইতে মিনায় আগেই পাঠিয়ে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৬৯

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছেন যে, তাঁরা ইয়াওমুন-নাহরের ফজর হওয়ার পূর্বে প্রস্তর নিক্ষেপ করা মাকরূহ বলে মনে করিতেন। যে ব্যক্তি প্রস্তর নিক্ষেপ করেছে তার জন্য নাহর করা হালাল হয়ে গিয়েছে।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৭০

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মুযদালিফা অবস্থানকালে আসমা বিন্‌তে আবি বাক্‌র [রাদি.]-কে দেখেছি, যে ব্যক্তি তাঁদের নামাজ পড়াতেন তাহাকে তিনি বলিতেন, সুবহে সাদিক হওয়ামাত্রই যেন নামাজ পড়িয়ে দেন। পরে নামাজ পড়ামাত্র আর বিলম্ব না করে তিনি মিনায় চলে আসতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৭আরাফাত হইতে প্রত্যাবর্তনের সময় কিরূপে এবং কি গতিতে চলা উচিত

৮৭১

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উসামা ইবনি যায়দ [রাদি.]-এর নিকট বসা ছিলাম। তাহাকে তখন জিজ্ঞেস করা হল বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরাফাতের ময়দান হইতে প্রত্যাবর্তনের সময় কিরূপ গতিতে উট চালাচ্ছিলেন? তিনি বলিলেন, দ্রুত চালিয়ে ফিরছিলেন। একটু ফাঁক পাইলে তখন খুবই দ্রুতগতিতে চালাতেন। [বুখারি ১৬৬৬, মুসলিম ১২৮৬]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হিশাম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, নস জাতীয় গতি আনাক জাতীয় গতি হইতে দ্রুততর। {১}

{১} আরবীতে সামান্য দ্রুত চলাকে আনাক এবং তদপেক্ষা দ্রুত চলাকে নস বলা হয়।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৭২

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বাতনে-মুহাস্‌সির হইতে প্রস্তর নিক্ষেপ করার স্থান পর্যন্ত তাঁর উটের গতি দ্রুত করে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫৮হজ্জের সময় নাহ্‌র করা

৮৭৩

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মিনা সম্পর্কে বলেছেন, মিনার সারাটা ময়দানই নাহর করার স্থান। আর উমরার সম্পর্কে বলেছেন, এর জন্য মারওয়াহ্ উত্তম স্থান। মক্কার প্রতিটি পথ এবং গলিও নাহর করার স্থান। [সহীহ, আবু দাঊদ ১৯৩৭, তিরমিজি ৮৮৫, ইবনি মাজাহ ৩০১০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল-জামে ৬৯৯৭}]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৭৪

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তখন যিলকাদ মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট ছিল, যখন আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সহিত রওয়ানা হলাম। আমাদের এই ধারণাই ছিল যে, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হজ্জের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছেন। যখন আমরা মক্কার নিকটবর্তী হলাম তখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যাদের নিকট হাদ্‌য়ী ছিল না তাদেরকে তাওয়াফ ও সায়ী করে ইহরাম খুলে ফেলতে বলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, ইয়াওমুন্‌নাহরের দিন আমাদের কাছে গরুর গোশত আনা হল। এটা দেখে বললাম এটা কোথা হইতে এসেছে? লোকে বলল, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] স্ত্রীগণের তরফ হইতে কুরবানী দিয়েছেন। ইয়াহইয়া [রাদি.] বলেন, আমি কাসিম ইবনি মুহাম্মদের নিকট উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম, আম্‌রাহ্ বিন্ত আবদুর রহমান এই হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। [বুখারি ১৭০৯, মুসলিম ১২১১]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৭৫

উম্মুল মুমিনীন হাফসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]কে বলিলেন, অন্যরা তো উমরা করে ইহ্‌রাম খুলে ফেলেছে, কিন্তু আপনি খুললেন না? তিনি বলিলেন, আমি আমার চুল জমাট করে নিয়েছি আর হাদ্‌য়ীর গলায় হার লটকিয়ে দিয়েছি। সুতরাং নাহর না করা পর্যন্ত আমি ইহ্‌রাম খুলব না। [বুখারি ১৫৬৬, মুসলিম ১২২৯]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ৫৯নাহ্‌রএর বর্ণনা

৮৭৬

আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] স্বীয় কুরবানীর কিছুসংখ্যক পশু নিজের হাতে নাহর করেন আর বাকিগুলো অন্যরা নাহর করেন। [সহীহ, ঈমাম মুসলিম জাবের [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন ১২১৮]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৭৭

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন, হাদয়ীর কুরবানী করার মানত করলে উহার গলায় একজোড়া জুতা লটকিয়ে দিবে এবং উহার কুঁজ যখমী করে দিবে। পরে দশ তারিখে কাবা শরীফের নিকট বা মিনা ময়দানে উহা নাহর করিবে, এটা দ্বারা নাহর করার আর কোন স্থান নেই। আর যদি কেউ উট বা গরু ইত্যাদি কুরবানী করার মানত করে, তবে সে যে স্থানে ইচ্ছা কুরবানী করিতে পারে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৭৮

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

পিতা উটগুলোকে দাঁড় করিয়ে ঐগুলোর নাহ্‌র করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কুরবানী করার পূর্বে মাথা কামানো জায়েয নয়। দশ তারিখের সুবহে সাদিকের পূর্বে কুরবানী করাও জায়েয নয়। কুরবানী করা, কাপড় বদলান, শরীরের ময়লা সাফ করা, মাথা কামান ইত্যাদি বিষয় যিলহজ্জের দশ তারিখে করিতে হইবে। উহার পূর্বে এই সমস্ত করা জায়েয নয়।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬০মাথা মুণ্ডান

৮৭৯

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুআ করছিলেন হে আল্লাহ্, মাথা মুণ্ডনকারীদের উপর আপনি রহম করুন। {১} সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের জন্যও আল্লাহর রহমতের দুআ করুন।

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, হে আল্লাহ্! মাথা মুণ্ডনকারীদের রহম করুন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের জন্য আল্লাহ্‌র রহমতের দুআ করুন। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, হে আল্লাহ্ ! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের প্রতিও রহমত করুন। [বুখারি ১৭২৭, মুসলিম ১৩০১]

{১} এতে বোঝা যায় হজ্জের পর মাথা মুণ্ডন করা চুল ছাঁটা হইতে উত্তম।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৮০

আবদুর রহমান ইবনি কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [কাসিম ইবনি মুহাম্মদ] উমরার ইহরাম বেঁধে রাত্রে মক্কায় আসতেন, তাওয়াফ ও সায়ী করার পর ভোর পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করার জন্য অপেক্ষা করিতেন। মাথা না কামানো পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিতেন না। নিকটবর্তী মসজিদে এসে কখনও কখনও বিতরের নামাজ আদায় করিতেন বটে তবে বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হইতেন না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাফাস অর্থ হল, হজ্জের পর মাথা কামানো এবং কাপড়-চোপড় বদলান ইত্যাদি।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয় হজ্জের সময় একজন মাথা কামাতে ভুলে গেলে কি মক্কায় এসে মাথা মুণ্ডন করিতে পারবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, পারবে। তবে মিনাতে অবস্থানকালে উহা করা ভাল।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় এই যতক্ষণ পর্যন্ত হাদয়ী যবেহ করেনি ততক্ষণ কেউ মাথা মুণ্ডন করিবে না বা চুল ছাঁটাবে না। আর যতক্ষণ মিনায় পোঁছিয়া যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে ইহরাম না খুলবে, ততক্ষণ তার হারাম বিষয়সমূহ হালাল হইবে না। কারণ আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন কুরবানী যতক্ষণ তার নিজ স্থলে না পৌঁছাবে ততক্ষণ তোমরা মাথা মুণ্ডন করো না।

{১} মাথা মুণ্ডন না করা পর্যন্ত উমরা সম্পর্ণ হয় না। সুতরাং এর পূর্বে তাওয়াফ করলে একই উমরার দুটি তাওয়াফ হয়ে যাবে। আর তা জায়েয নয়।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৬১চুল ছাঁটা

৮৮১

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] যখন রমযানের রোযা সমাপ্ত করিতেন আর ঐ বৎসর হজ্জ করার ইচ্ছা করিতেন তখন হজ্জ সমাধা না করা পর্যন্ত মাথার চুল কাটতেন না ও দাড়ি ছাঁটতেন না। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এ বিষয়টি ওয়াজিব নয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৮২

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হজ্জ ও উমরার পরে যখন মাথা মুণ্ডন করিতেন তখন দাড়ি ও গোঁফ ছেঁটে নিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৮৩

রবীআ ইবনি আবু আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি কাসিম ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট এসে বলল, আমি ও আমার স্ত্রী তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করার পর সহবাস করার ইচ্ছায় আমার স্ত্রীকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে গেলাম। আমার স্ত্রী তখন বলল, হজ্জের পর আমি এখনও আমার চুল ছাঁটাইনি। আমি তখন দাঁত দিয়ে তার চুল কেটে তার সাথে মিলিত হই। এখন কি করব? কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হেসে বলিলেন, যাও, স্ত্রীকে কাঁচির সাহায্যে চুল ছেঁটে নিতে বল। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই অবস্থায় স্বামী যদি একটি কুরবানী দেয় তবে উহা ভাল। কেননা আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, যে কেউ কোন আমল বা রুকন ভুলে বসলে সে এর পরিবর্তে একটি কুরবানী দিবে।

{১} মূলতঃ এখানে হজ্জ সমাধা হয়ে গিয়েছিল। তাই স্বামীর উপর কিছুই ওয়াজিব হইবে না। তবে এতটুকু দোষ হল যে, চুল ছাঁটাবার পূর্বেই সে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছে। তাই ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, স্বামী যদি একটি কুরবানী দেয় তবে আমার মতে এটা উত্তম।

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৮৪

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মুজাব্বার নামক কোন এক নিকট-আত্মীয়ের সঙ্গে আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ হয়। সে তাওয়াফে যিয়ারত করে গিয়েছিল বটে তবে অজ্ঞতার দরুন মাথার চুল ছাঁটায়নি বা কামায়নি। তাকে তখন আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] পুনরায় মক্কায় গিয়ে চুল কামাতে বা ছাঁটাতে এবং পুনরায় তাওয়াফে যিয়ারত করিতে নির্দেশ দেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৮৫

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সালিম ইবনি আবদুল্লাহ্ যখন ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করিতেন তখন উটে আরোহণ এবং ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করার পূর্বেই কাঁচি এনে মোচ এবং দাড়ি ছেঁটে নিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৬২চুল জমাট বাঁধানো

৮৮৬

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, [ইহরাম বাঁধার সময়] যে ব্যক্তি মাথার চুল বেণী করে নিবে সে [ইহ্‌রাম খোলার সময়] যেন এটা কামায়ে ফেলে। তালবীদ [আঠাল কোন পদার্থ দ্বারা মাথার চুল জমাট করা] সদৃশ যেন কেউ চুল জমাট না করে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৮৮৭

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, [ইহ্‌রাম বাঁধার সময়] যে চুল খোঁপা বানিয়ে নেয় বা বেণী গেঁথে নেয় বা আঠালো কিছু দ্বারা জমিয়ে নেয় তার জন্য [ইহ্‌রাম খোলার সময়] মুণ্ডন করা ওয়াজিব। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হজ্জ কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

Comments

Leave a Reply