হজ্জ্বের ফযীলত ও তার অপরিহার্যতা

হজ্জ্বের ফযীলত ও তার অপরিহার্যতা

হজ্জ্বের ফযীলত ও তার অপরিহার্যতা – রিয়াদুছ সালেহিন  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ – ২৩৩: হজ্জ্বের ফযীলত ও তার অপরিহার্যতা ফযীলতমহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧] 

অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার [পক্ষে] অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করিবে [সে জেনে রাখুক যে], আল্লাহ জগতের উপর নির্ভরশীল নন। [সূরা আলে ইমরান ৯৭ আয়াত]

১২৭৯. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাঃআঃ) বলেছেন, “ইসলামের ভিত পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত আছে। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ, (২) নামাজ কায়েম করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) বায়তুল্লাহর হজ্জ করা এবং (৫) মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করা।”

(সহীহুল বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজি ২৬০৯, ইবনু মাজাহ ৫০০১, আহমাদ ৪৭৮৩, ৫৬৩৯, ৫৬৫৯, ৫৬৭৯, ৬২৬৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দানকালে বললেন, “হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর (বায়তুল্লাহর) হজ্জ ফরয করেছেন, অতএব তোমরা হজ্জ পালন কর।” একটি লোক বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! প্রতি বছর তা করতে হবে কি?’ তিনি নিরুত্তর থাকলেন এবং লোকটি শেষ পর্যন্ত তিনবার জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেন, “যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ। তাহলে (প্রতি বছরে) হজ্জ ফরয হয়ে যেত। আর তোমরা তা পালন করতে অক্ষম হতে।” অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা আমাকে (আমার অবস্থায়) ছেড়ে দাও, যতক্ষণ আমি তোমাদেরকে (তোমাদের স্ব স্ব অবস্থায়) ছেড়ে রাখব। কেননা, তোমাদের পূর্বেকার জাতিরা অতি মাত্রায় জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের পয়গম্বরদের বিরোধিতা করার দরুন ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন কিছু করার আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন করবে। আর যা করতে নিষেধ করব, তা থেকে বিরত থাকবে।”

(সহীহুল বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিজি ২৬৭৯, নাসায়ী ২৬১৯, ইবনু মাজাহ ১, ২, আহমাদ ৭৩২০, ৭৪৪৯, ৮৪৫০, ৯২৩৯, ৯৪৮৮, ৯৫৫৭৭, ৯৮৯০, ১০২২৯, ১০৩২৭) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮১. উক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সর্বোত্তম কাজ কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান রাখা।” পুনরায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘অতঃপর কি?’ তিনি বললেন, “মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।”

(সহীহুল বুখারী ২৬, ১৫১৯, মুসলিম ৮৩, তিরমিজি ১৬৫৮, নাসায়ী ২৬২৫, ৩১৩০, আহমাদ ৭৪৫৯, ৭৫৩৬, ৭৫৮৫, ৭৮০৩, ৮০১৪, ৮৩৭৪, ৯৪০৭, দারেমী ২৩৯৩) ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ সেই হজ্জকে বলা হয়, যাতে হাজী কোনো প্রকার আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়নি। হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮২. উক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃআঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি হজ্জ পালন করল এবং (তাতে) কোন অশ্লীল কাজ করল না ও পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক ঐ দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।”

(সহীহুল বুখারী ১৫২১, ১৮১৯, ১৮২০, মুসলিম ১৩৫০, তিরমিজি ৮১১, নাসায়ী ২৬২৭, ইবনু মাজাহ ২৮৮৯, আহমাদ ৭০৯৬, ৭৩৩৪, ৯০৫৬, ৯৯০৪, ১০০৩৭, দারেমী ১৭৯৬) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৩. উক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “একটি উমরাহ পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত ঐ দুয়ের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপরাশির জন্য কাফফারা (মোচনকারী) হয়। আর ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।”

(সহীহুল বুখারী ১৭৭৩, মুসলিম ১৩৪৯, তিরমিজি ৯৩৩, নাসায়ী ২৬২২, ২৬২৩, ২৬২৯, ইবনু মাজাহ ২৮৮৭, ২৮৮৮, আহমাদ ৭৩০৭, ৯৬২৫, ৯৬৩২, মুওয়াত্তা মালিক ৭৭৬, দারেমী ১৭৯৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে সর্বোত্তম কাজ মনে করি, তাহলে কি আমরা জিহাদ করব না?’ তিনি বললেন, “কিন্তু (মহিলাদের জন্য) সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।”

(সহীহুল বুখারী ১৫২০, ১৮৬১, ২৭৮৪, ২৮৭৫, ২৮৭৬, নাসায়ী ২৬২৮) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৫. উক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ সর্বাধিক বেশী সংখ্যায় বান্দাকে দোযখমুক্ত করেন।”

(মুসলিম ১৩৪৮, না৩০০৩, ইবনু মাজাহ ৩০১৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৬. ইবনে আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেন, “মাহে রমযানের উমরাহ একটি হজ্জের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ্জ করার সমতুল্য।”

(সহীহুল বুখারী ১৭৮৬, ১৮৬৩, মুসলিম ১২৫৬, নাসায়ী ২১১০, আবু দাউদ ১৯৯০, ইবনু মাজাহ ২৯৯৪, আহমাদ ২০২৬, ২৮০৪, দারেমী ১৮৫৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৭. উক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একজন মহিলা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর স্বীয় বান্দাদের উপর হজ্জের ফরয আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমতাবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, তিনি বাহনের উপর চড়ে বসে থাকতে অক্ষম। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ পালন করব?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।”

(বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ১৫১৩, ১৮৫৪, ১৮৫৫, ৫৩৯৯, ৬২২৮, মুসলিম ১৩৩৪, ১৩৩৫, তিরমিজি ৯২৮, নাসায়ী ২৬৩৫, ২৬৪১, ২৬৫৩, ৫৩৮৯, ৫৩৯৫, আহমাদ ১৮১৫, ১৮২৫, ১৮৯৩, ২২৬৩, ৩০৩৩, ৩২২৮, ৩৩৬৫, মুওয়াত্তা মালিক ৮০৬) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৮৮. লাক্বীত ইবনে আমের (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আমার পিতা এত বেশী বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি না হজ্জ করতে সক্ষম, না উমরা করতে সক্ষম, আর না সফর করতে পারবেন।’ তিনি বললেন, “তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ ও উমরা সম্পাদন কর।”

(আবু দাউদ ১৮১০, তিরমিজি ৯৩০, নাসায়ী ২৬৩৭, ইবনু মাজাহ ২৯০৭, আহমাদ ১৮৭৫১, ১৮৭৫৭, ১৫৭৬৬) হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১২৮৯. সায়েব ইবনে য়্যাযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘বিদায় হজ্জে নবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আমাকে নিয়ে হজ্জ করা হয়েছে। আমি তখন সাত বছরের শিশু।’

(সহীহুল বুখারী ১৮৫৮, ১৮৫৯, তিরমিজি ৯২৬, ২১৬১, আহমাদ ১৫২৯১) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৯০. ইবনে আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) ‘রাওহা’ নামক স্থানে একটি যাত্রীদলের সাথে সাক্ষাৎকারে বললেন, “তোমরা কোন্‌ জাতি?” তারা বলল, ‘আমরা মুসলমান।’ তারা বলল, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রসূল।” এই সময়ে একজন মহিলা একটি শিশুকে তুলে ধরে বলল, ‘এর কি হজ্জ হবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর (ওকে হজ্জ করানো বাবত) তোমারও সওয়াব হবে।”

(মুসলিম ১৩৩৬, নাসায়ী ২৬৪৫-২৬৪৯, আবু দাউদ ১৭৩৬, আহমাদ ১৯০১, ২১৮৮, ২৬০৫, ৩১৮৫, ৩১৯২, মুওয়াত্তা মালিক ৬৬১) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৯১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বাহনে চড়ে হজ্জ সমাধা করেন। আর ঐ বাহনটিই ছিল প্রয়োজনীয় যাবতীয় সাজ-সরঞ্জামের বাহক।

(বুখারী) (সহীহুল বুখারী ১৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮৯০) * (অর্থাৎ, তিনি যে উটের বাহনে চড়ে হজ্জ করেছেন সেই বাহনেই তাঁর খাদ্য-পানীয় তথা অন্যান্য আনুষঙ্গিক আসবাবপত্রও চাপানো ছিল।) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২৯২. ইবনে আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উকায, মাজিন্নাহ ও যুল-মাজায নামক স্থানগুলিতে (ইসলাম আসার পূর্বে) জাহেলী যুগের বাজার ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরাম হজ্জের মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্যমূলক কাজ-কর্মকে পাপ মনে করলেন। তার জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হল, যার অর্থ, “(হজ্জের সময়) তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ কামনায় (ব্যবসা-বাণিজ্যে) কোন দোষ নেই।”

(সূরা বাক্বারাহ ১৯৮ আয়াত, বুখারী) (সহীহুল বুখারী ১৭৭০, ২০৫০, ৪৫১৯, আবু দাউদ ১৭৩৪) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

Comments

Leave a Reply