হজ্জের মাসালা মাসায়েল – ফিকাহ আল হিদায়া
হজ্জের মাসালা মাসায়েল – ফিকাহ আল হিদায়া >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, পরিচ্ছেদ: শিকার
জেনে রাখা উচিত যে, স্থলের শিকার মুহরিমের জন্য হারাম। আর পানির শিকার তার জন্য হালাল। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হইয়াছে। স্থলের শিকার বলতে ঐ সমস্ত প্রাণীকে বোঝানো হইয়াছে, যার জন্ম ও বাস পানিতে।
আর শিকার অর্থ আত্মরক্ষাকারী এবং জন্মগতভাবে বন্য প্রাণী। তন্মেধ্যে পাচটি দুষ্ট প্রাণীকে রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) ব্যতিক্রম সাব্যস্ত করেছেন। সেগুলো হলো দংশনকারী কুকুর, নেকড়ে, চিল, কাক ও সাপ-বিচ্ছু। কেননা এগুলো নিজে থেকেই প্রথমে আক্রমণ করে।
আর কাক দ্বারা ঐ কাক উদ্দেশ্য, যা মরা খায়। ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) থেকে একথাই বর্ণীত রহিয়াছে।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, মুহরিম যদি কোন শিকার হত্যা করে কিংবা যে হত্যা করবে তাকে বাতলিয়ে দেয়, তবে তার উপর দন্ড ওয়াজিব হবে।
হত্যা করার ক্ষেত্রে দন্ড ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- ইহরাম অবস্থায় তোমরা শিকার হত্যা কর না। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার হত্যা করল, তার উপর দন্ড ওয়াজিব।
এখানে দন্ড ওয়াজিব হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে বলা রহিয়াছে। শিকার দেখিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। তিনি বলেন, (আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে,) দন্ডের সম্পর্ক হলো হত্যার সাথে। আর শিকার বাতলে দেওয়া হত্যা করা নয়। সুতরাং এটা হালাল ব্যক্তি হালাল ব্যাক্তিকে শিকার দেখিয়ে দেয়ার সদৃশ হলো।
আমাদের দলিল হলো (ইহরাম অধ্যায়ের শুরুতে) বর্ণীত আবূ কাতাদা (রাঃআঃ) এর হাদীস।
আর আতা বলেন, এ বিষয়ে লোকদের ইজমা রহিয়াছে যে, শিকার যে দেখিয়ে দেবে,তার উপর দন্ড ওয়াজিব হবে।
তাছাড়া এই জন্য যে, শিকার দেখিয়ে দেওয়া ইহরামের নিষিদ্ধ কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত। কারণ, তাতে শিকারের নিরাপত্তা নষ্ট করা হয়। কেননা সে তার বন্যতা ও আত্মগোপনতা দ্বারা নিরাপদ ছিলো। সুতরাং দেখিয়ে দেওয়া হত্যা করার মতই হলো।
আরেকটি কারণ এই যে, মুহরিম তার ইহরামের মাধ্যমে শিকারের সাথে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকা নিজের উপর অনিবার্য করে নিয়েছে। সুতরাং অনিবার্যকৃত দায়িত্ব বর্জন করার কারণে ক্ষতিপূরণ দিবে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়ে থাকে।
হালাল ব্যক্তির বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তার পক্ষ থেকে তো কোন দায়িত্ব বদ্ধতা নেই। তদুপরি ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) ও ইমাম যুফার (রঃআঃ) হতে বর্ণীত রহিয়াছে যে, হালাল ব্যক্তির উপরও দন্ড ওয়াজিব হবে।
বাতলিয়ে দেয়ার কারণে দন্ড ওয়াজিব হওয়ার শর্ত এই যে, যাকে দেখিয়ে দেওয়া হলো, সে শিকারের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না আর দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপারে তাকে সে বিশ্বাস করেছে।। সুতরাং যদি সে তাকে অবিশ্বাস করে এবং অন্যকে বিশ্বাস করে তবে যাকে অবিশ্বাস করা হলো, তার উপর কোন ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে না।
আর যে দেখিয়ে দিচ্ছে, ঐ হালাল ব্যক্তি যদি হারামেরও হয় তবুও তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না্। আমরা এর কারণ উপরে বলেছি।
দন্ড ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখিয়ে দেওয়া আর ভুলে দেখিয়ে দেওয়া সমান। কেননা এটা এমন ক্ষতিপূরণ, যার ভিত্তি হলো প্রাণনাশ করা। সুতরাং এটা মাল নষ্ট করার ক্ষতিপূরণ সদৃশ হলো।
আর প্রথমবার অন্যায়কারী এবং দ্বিতীয়বার অন্যায়কারীর হুকুম অভিন্ন। কেননা ওয়াজিব হওয়ার কারণ অভিন্ন।
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে দন্ড এই যে, যে স্থানে শিকার হত্যা করা হইয়াছে, সে স্থানে কিংবা (জঙ্গল এলাকা হলে) তার নিকটতম স্থানে শিকারকৃত প্রাণীর মূল্য নির্ধারণ করা হবে। দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি মূল্য নির্ধারণ করবেন। অতঃপর জাযা আদায় করার ব্যাপারে শিকারীর ইচ্ছার উপর ন্যাস্ত। যদি উক্ত প্রাণীর মূল্য একটি হাদী ক্রয় করার সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে ইচ্ছা করলে উক্ত মূল্য দ্বারা একটি হাদী ক্রয় করে যবাহ্ করবে। কিংবা ইচ্ছা করলে উক্ত মূল্য দ্বারা খাদ্য সামগ্র্যী খরিদ করে প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধ সাআ গম কিংবা একে সাআ খেজুর বা যব সাদাকা করবে। কিংবা চাইলে সিয়াম পালন করবে। যেমন সামনে আমরা বর্ণনা করবো।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) ও শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, যে সকল শিকার কৃত জন্তুর সমতুল্য গঠনের জন্তু রহিয়াছে, সেক্ষেত্রে সমতুল্য জন্তু জাযা রূপে ওয়াজিব হবে। সুতরাং হরিণের ক্ষেত্রে বকরী, হায়েনার ক্ষেত্রে বকরী, খরগোশের ক্ষেত্রে এক বছর বয়স্ক মেষশাবক, বন্য ইদুর এর ক্ষেত্রে চারমাস বয়স্ক মেষশাবক ওয়াজিব হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- যে প্রাণী হত্যা করা হইয়াছে, তার সমতুল্য প্রাণী জাযারূপে ওয়াজিব হবে।
আর শিকারের সমতূল্য প্রাণী সেটাই হবে, যেটা দৃশ্যতঃ হত্যাকৃত প্রাণীর সদৃশ। কেননা মূল্যকে তো বলা যায় না। আর সাহাবায়ে কিরাম আকৃতিগত দিক থেকে সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন।
আর উটপাখি, হরিণ, বন্যগাধা ও খরগোশের সদৃশ প্রাণী সেগুলোই, যা আমরা বর্ণনা করেছি। আর রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) বলেছেন, হায়েনা একটি শিকার এবং তার ক্ষেত্রে বকরী ওয়াজিব হবে।
আর যে সকল প্রাণীর আকৃতিগত সদৃশ প্রাণী নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর মতে মূল্য ওয়াজিব হবে। যেমন চড়ুইপাখি, কবুতর ইত্যাদি। আর যখন মূল্য ওয়াজিব হবে, তখন ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর মতে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মত অনুযায়ী হবে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) কবুতরের ক্ষেত্রে বকরী ওয়াজিব বলে মত প্রকাশ করেন এবং উভয়ের মাঝে সদৃশ প্রমাণ করেন এদিক থেকে যে, উভয়ের প্রতিটি লম্বা চুমুকে পানি পান করে এবং প্রায় অভিন্ন রকম শব্দ করে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও আবূ ই্উসূফ(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, নিঃশর্ত সমতুল্যতা দ্বারা সমতুল্যই গ্রহণ করা হবে। কেননা শরীআতে এর গ্রহণযোগ্যতা রহিয়াছে, যেমন হক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে।
কিংবা এ কারণে যে, সর্বসম্মতভাবে গুণগত সমতুল্যতার অর্থ উদ্দেশ্য। কিংবা এ কারণে যে, গুণগত সমতুল্যতার মধ্যে ব্যাপকতা রহিয়াছে। আর বিপরীত ক্ষেত্রে বিশিষ্টতা রহিয়াছে।
আর আল্লাহ্ অধিক অবগত নাস এর উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ এই যে, জাযা হলো যে বন্যপ্রাণী হত্যা করা হইয়াছে, তার মূল্য।
আর শব্দটি বণ্য ও গৃহপালিত উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। এরূপ বলেছেন, আবূ উবায়দ ও আছমারী। আর যে হাদীস বর্ণনা করা হইয়াছে, তার উদ্দেশ্য মূল্য নিরূপণ করা, নির্দিষ্ট প্রাণী সাব্যস্ত করা নয়।
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে হাদী কিংবা খাদ্য সামগ্রী কিংবা সিয়ামকে ভাষা হিসাবে সাব্যস্ত করার ইখতিয়ার হলো হত্যাকারীর।
ইমাম মুহাম্মাদ ও শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, এ বিষয়ে ইখতিয়ার হলো ন্যায়পরায়ণ বিচারকদ্বয়ের। যদি তারা হাদী এর ফায়সালা করেন, তাহলে আকৃতিগত সমতূল্য প্রাণী ওয়াজিব হবে, যেমন আমরা উল্লেখ করেছি। আর যদি তারা খাদ্য সামগ্রী বা সিয়ামের ফায়সালা করেন, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) যেমন বলেছেন (অর্থাত্ শিকারের মূল্য নির্ধারণ করে তা দ্বারা খাদ্য সামগ্রী খরিদ করে সাদাকা করা হবে।)
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও ইমাম ইউসুফ(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, ইখতিয়ার প্রদানের বিষয়টি শরীআতে অনুমোদিত হইয়াছে দায়গ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি আহসানীর জন্য। সুতরাং শিকারের হাতেই ইখতিয়ার থাকা উচিত, যেমন কাসমের কাফ্ফারার ইখতিয়ারের ব্যাপারে।
ইমাম মুহাম্মাদ ও শাফিঈ(রঃআঃ) এর দলিল হলো আল্লাহ্ তা’আলার বাণী-
তোমাদের মধ্য হতে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যাক্তি তা ফায়সালা করবে অর্থাত্ হাদী যা কাবা পর্যন্ত উপনীত হবে কিংবা মিসকীনদের খাদ্য রুপে কাফ্ফারা কিংবা সেই পরিমাণ রোযা, যাতে সে তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করে।
শব্দটিকে রূপে উল্লেখ করা হইয়াছে। কেননা তা আয়াতের এর ব্যাখ্যা রূপে এবং বিচারকের বা বিচার ক্রিয়ার (ক্রিয়াগত কর্মকারক) রুপে এসেছে। অতঃপর অব্যয় দ্বারা খাদ্য সাদাকা এবং সিয়াম পালনের বিষয় দুদুটিকে উল্লেখ করা হইয়াছে। সুতরাং ইখতিয়ারের বিষয়টি বিচারকদ্বয়ের হাতেই থাকবে।
আমরা বলি শব্দটিকে করা হইয়াছে এর উপর। এর উপর নয়। প্রমাণ এই যে, শব্দটি হইয়াছে। তদ্রুপ শব্দটি হইয়াছে। সুতরাং এ দুটিতে বিচারকদ্বয়ের পশুর মূল্য নির্ধারণের জন্য। অতঃপর ইখতিয়ার থাকবে ঐ ব্যক্তির হাতে, যার উপর জাযা ওয়াজিব হইয়াছে।
ঐ স্থানেই বিচারকদ্বয় মূল্য নির্ধারণ করবেন, যেখানে মুহরিম শিকার হত্যা করেছে। কেননা স্থানের বিভিন্নতার কারণে মূল্য পার্থক্য হয় থাকে।
যদি স্থানটি মরু প্রান্তর হয় যেখানে শিকার বেচাকেনা হয় না, তাহলে তার নিকটতম এমন স্থান বিবেচনায় আনা হবে, যেখানে পশু বেচাকেনা হয়।
মাশায়েখগণ বলেছেন, মূল্য নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে একজন যথেষ্ট তবে দুজন হওয়া উত্তম। কেননা তা অধিক সতর্কতাপর্ণ এবং ভুল হওয়া থেকে অধিক নিরাপদ। যেমন হক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে ।
আর কেউ কেউ বলেছেন, উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে এখানে দুজনের হওয়া আবশ্যক রূপে বিবেচনা করা হবে।
হাদী মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও যবাহ করা যাবে না। কেননা আল্লাহ্ তা্আলা বলেছেন- হাদী যা কাবায় উপনীত হবে।
তবে মিসকীনদেরকে খাদ্য প্রদান মক্কা ছাড়া অন্যত্র জাইয হবে। ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি এটাকেও হাদী এর উপর কিয়াস করেন। উভয়ের মাঝে এ ব্যাপারে সমন্বয় হলো হারামের অধিবাসীদের জন্য সচ্ছলতা বিধান।
আমরা বলি, হাদী যবাহ করা এমন একটি বিশেষ ইবাদত, যা বুদ্ধিগ্রাহ্য নয়। সুতরং তা স্থান ও কালের সাথে বিশিষ্ট হবে। আর ছাদাকা হলো সর্ব সময়ে ও সর্বস্থানে বুদ্ধিগ্রাহ্য একটি ইবাদত।
আর সাওম মক্কায় পালন করা জাইয হবে। কেননা তা সর্বস্থানেই ইবাদত রূপে অনুমোদিত।
যদি কুফায় (অর্থাত্ মক্কা ছাড়া অন্যত্র) যবাহ করে তাহলে তা খাদ্য সামগ্রী প্রদানের বিকল্প হিসাবে জাইয হবে। অর্থাত্ যদি এ পরিমাণ গোশ্ত (প্রতি মিসকীনকে) সাদাকা করে আর তা ওয়াজিব খাদ্য সামগ্রীর মূল্যের সমপরিমাণ হয়। কেননা যবাহ করা খাদ্যসামগ্রী সাদাকা করার স্থলবর্তী হয় না।
যদি শিকারী হাদী যবাহ্ করা গ্রহণ করে নেয়, তাহলে কুরবানী রূপে যা যথেষ্ট তা হাদী রূপে যবাহ্ করবে। কেননা নিঃশর্তভাবে হাদী শব্দটি কুরবানীর পশুকেই বোঝায়।
ইমাম মুহাম্মাদ ও শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, এ ক্ষেত্রে ছোট পশুর জাইয হবে। কেননা, সাহাবায়ে কিরাম (খরগোশের ক্ষেত্রে) এক বছরী মেষশাবক এবং (বন্য ইদুরের ক্ষেত্রে) চার মাস বয়সের মেষশাবক ওয়াজিব করেছেন।
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে খাদ্য সামগ্রী প্রদান হিসাবে ছোট পশু জাইয হবে, যদি তা সাদাকা করে। (যবাহ্ হিসাবে নয়)।
যদি খাদ্যসামগ্রী সাদাকা করাকে গ্রহণ করে নেয় তাহলে আমাদের মতে খাদ্য সামগ্রীর মাধ্যমে হত্যাকৃত পশুটির মূল্য নির্ধারণ করা হবে। কেননা, হত্যাকৃত পশূরই ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব, সুতরাং তার মূল্যই বিবেচনা করা হবে।
যখন মূল্য ছাড়া খাদ্য সামগ্রী খরিদ করবে, তখন প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধ সাআ গম কিংবা এক সাআ খেজুর বা যব সাদাকা করবে। কোন মিসকীনকে অর্ধ সাআ এর কম খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা জাইয হবে না। কেননা কুরআন শরীফে উল্লেখিত দ্বারা শরীআতের নির্ধারিত পরিমাণই উদ্দেশ্য হবে।
আর যদি সিয়াম পালনই গ্রহণ করে তাহলে হত্যাকৃত পশুর মূল্য নির্ধারণ করবে খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে। অতঃপর প্রত্যেক অর্ধ সাআ গম কিংবা এক সাআ খেজুর বা যবের পরিবর্তে একদিন রোযা রাখবে। কেননা, সিয়াম দ্বারা হত্যাকৃত পশুর মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ, সাওমের কোন অর্থমূল্য নেই। তাই আমরা খাদ্য সামগ্রীর দ্বারাই তার মূল্য নির্ধারণ করলাম। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )
আর এইভাবে (অর্ধ সাআ দ্বারা রোযার) মূল্য নির্ধারণ করা শরীআতে প্রচলিত, যেমন, সিয়ামের ফিদইয়ার ক্ষেত্রে।
যদি অর্ধ সাআ এর কম খাদ্য সামগ্রী বেচে যায়, তাহলে সে ইচ্ছাধীন। চাইলে সে অবশিষ্ট খাদ্য (গম) সাদাকা করে দেবে কিংবা চাইলে তার পরিবর্তে একদিনের সাওম পালন করবে। কেননা এক দিনের কম সময়ের সাওম তো শরীআতসম্মত নয়।
একই হুকুম হবে যদি খাদ্য সামগ্রী একজন মিসকীনের খাদ্য পরিমাণ থেকে কম হয় তাহলে ওয়াজিব পরিমাণই দান করবে, অথবা পূর্ণ একদিন রোযা রাখবে।
উপরে আমরা এর কারণ বলেছি। যদি কোন শিকারকে আহত করে কিংবা তার পশম উপড়ে ফেলে কিংবা তার কোন অংগ কর্তন করে,তাহলে একারণে তার যে পরিমাণ ক্ষতি হইয়াছে, সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অংশবিশেষকে সমগ্রের উপর কিয়াস করে এ হুকুম আরোপ করা হইয়াছে। যেমন, হক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে হয়।
যদি কোন পাখীর পালক উপড়ে ফেলে কিংবা কোন শিকারের হাত পা কেটে ফেলে, যার ফলে সে আত্মরক্ষার অবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, তাহলে তার পূর্ণ মূল্য তার উপর ওয়াজিব হবে। কেননা সে আত্মরক্ষার উপায় নষ্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে সে শিকারের নিরাপত্তা বিনষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং সে তার পূর্ণ মূল্য ক্ষতিপূরণ দিবে।
যে ব্যক্তি উটপাখীর ডিম ভেংগে ফেললো তাকে তার মূল্য দান করিতে হবে। আলী ও ইবন আব্বাস (রাঃআঃ) থেকে এরূপ বর্ণীত হইয়াছে। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )
তাছাড়া এই কারণে যে, এ হলো শিকার উটপাখীর মূল এবং তাতে শিকারে (তথা উটপাখীতে) রূপান্তরিত হওয়ার যোগ্যতা রহিয়াছে। সুতরাং যদি তা নষ্ট না হয়ে থাকে তাহলে সতর্কতা হিসাবে সেটিকে শিকারের স্থলবর্তী ধরা হবে।
যদি ডিম থেকে মূতছানা বের হয় তাহলে তাকে উক্ত ছানার মূল্য দান করিতে হবে। এটা হলো সূক্ষ্ম কিয়াসের দানী সাধারণ কিয়াসের দাবী হলো শুধু ডিমের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। কেননা ছানাটির প্রাণ অজ্ঞাত।
সূক্ষ্ম কিয়াসের কারণ এই যে, (কুদরতের পক্ষ হতে) ডিমকে প্রস্তুতই করা হইয়াছে তা থেকে জীবিত ছানা বের হয়ে আসার জন্য। আর সময়ের পূর্বে ভেংগে ফেলাই হচ্ছে (দৃশ্যতঃ) তার মৃত্যুর কারণ। সুতরাং সতর্কতা হিসাবে মৃতুকে ডিম ভাংগার সাথেই সম্পৃক্ত করা হবে।
(বাহিক কারনের সাথে সম্পৃক্ত করার) এই নীতির ভিত্তিতেই (বলা হয় যে) যদি কেউ হরিণের পেটে আঘাত করে, ফলে হরিণ মৃত বাচ্চা প্রসব করে এবং নিজেও মারা যায়, তাহলে তার উপর উভয়ের মূল্য ওয়াজিব হবে।
কাক, চিল, (শকুন) নেকড়ে, সাপ, বিচ্ছু, ইদুর ও দংশনকারী কুকুর হত্যা করার কারণে কোন জাযা আসবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন, পাচটি প্রাণী হলো দুষ্ট প্রকৃতির। এগুলোকে হিল(হরমের বাইরে) হরম সর্বত্র হত্যা করা হবে। এগু্লো হলো চিল, সাপ, বিচ্ছু, ইদুর ও মূল্য ওয়াজিব হবে।
কাক, চিল, (শকুন) নেকড়ে, সাপ, বিচ্ছু ইদুর ও দংশনকারী কুকুর হত্যা করার কারণে কোন জাযা আসবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন, পাচটি প্রাণী হলো দুষ্ট প্রকৃতির। এগুলোকে হিল(হরমের বাইরে) হরম সর্বত্র হত্যা করা হয়। এগুলো হলো চিল, সাপ, বিচ্ছু, ইদুর ও দংশনকারী কুকুর।
অন্য হাদীছে রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন, মুহরিম (তার ইহরামের অবস্থায়) ইদুর,কাক, চিল, বিচ্ছু ও ইদুর এবং দংশনকারী কুকুর হত্যা করিতে পারবে।
কোন কোন বর্ণনায় নেকড়ের কথাও উল্লেখিত হইয়াছে। কারো কারো মতে দংশনকারী কুকুর দ্বারা নেকড়ে উদ্দেশ্য। কিংবা বলা যেতে পারে যে, নেকড়ে দংশনকারী কুকুরের সমপর্যায়ভূক্ত।
হাদীছে উল্লেখিত কাক দ্বারা ঐ কাক উদ্দেশ্য, যে মুর্দার খায় আবার শস্য দানাও খায়। কেননা এই কাক প্রারম্ভেই কষ্ট দেয়। পক্ষান্তরে নামক (ছাতার জাতীয়) পাখি এর অন্তর্ভূক্ত নয়। এটাকে কাক বলা হয় না। এবং তা প্রারম্ভে কষ্ট দেয় না।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, দংশণকারী কুকুর এবং সাধারণ কুকুর তদ্রুপ গৃহপালিত কুকুর এবং বণ্য কুকুর সবই অভিন্ন। কেননা কুকুর শ্রেণীটাই মূলতঃ উদ্দেশ্য। তদ্রুপ গৃহবাসকারী ইদুর ও বন্য ইদুর অভিন্ন। গুই সাপ ও কাঠবিড়ালী ব্যতিক্রমী পাচটি প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা এগুলো নিজে প্রারম্ভে কষ্ট দেয় না।
মশা, পিপড়া, বোলতা ও আঠালি হত্যা করলে দন্ড আসবে না। কেননা, এগুলো শিকার এর অন্তর্ভূক্ত নয় এবং এগুলো শরীর থেকে সৃষ্ট নয়। তাছাড়া এগুলো স্বভাবত ভাবেই কষ্টদানকারী।
পিপড়া দ্বারা কালো ও লাল পিপড়া উদ্দেশ্য, যে গুলো কামড়ায়। যে সমস্ত পিপড়া কামড়ায় না, সেগুলোকে হত্যা করা জাইয হবে না। তবে প্রথমোক্ত কারণে (অর্থাত্ শিকারভূক্ত না হওয়ার কারণে) কোন জাযা ওয়াজিব হবে না।
যে ব্যক্তি উকুন হত্যা করবে সে একমুঠ গমের মতো যত্সাম্য যা ইচ্ছা সাদাকা করে দেবে। কেননা শরীরের ময়লা থেকে সৃষ্ট। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )
জামেউস সাগীরের মতে কিছু খাদ্য দান করবে। এটা প্রমাণ করে যে, একটুকরা রুটির মতো কোন মিসকীনকে সামান্য কিছু খাদ্য দান করাই যথেষ্ট হবে, যদিও তা উদর পূর্তির পরিমাণ না হয়।
যে ব্যক্তি টিড্ডি হত্যা করে সে ইচ্ছা মাফিক কিছু পরিমাণ সাদাকা দিবে। কেননা টিড্ডি হলো স্থলচর শিকার। কেননা শিকার বলা হয় ঐ প্রাণীকে, যাকে কৌশল ছাড়া ধরা যায় না। আর শিকারী ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ধরতে চায়।
একটি খেজুরও একটি টিড্ডি থেকে উত্তম। কেননা উমর (রাঃআঃ) বলেছেন, একটি খেজুর একটি টিড্ডি থেকে উত্তম।
কচ্ছপ ধরে হত্যা করলে কোন দন্ড আসবে না। কেননা তা কীটপতংগভূক্ত। সুতরাং গাদি পোকা ও কাকলাস সমতূল্য। আর এগুলোকে বিনা কৌশলে ধরা যায়, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো কেউ ধরে না। সুতরাং এগুলো শিকার নয়।
যে ব্যক্তি হরমের শিকার ধরে দোহন করলো, তার উপর দুধের মূল্য ওয়াজিব হবে। কেননা দুধ শিকারের অংশ। সুতরাং তা পূর্ণ শিকারের সমতুল্য।
যে ব্যক্তি এমন শিকার হত্যা করলো, যার গোশত খাওয়া হয় না, যেমন(সিংহ বাঘ ও নেকড়ে জাতীয়) হিংস্রপ্রাণী এবং অনুরূপ অন্যান্য প্রাণী (যেমন বাজ, শকুন ইত্যাদি হিংস্রপ্রাণী) তাহলে তার উপর জাযা ওয়াজিব হবে, এগুলো ব্যতীত, যেগুলোকে শরীআত ব্যতিক্রমী সাব্যস্ত করেছে। আর এগুলো (ইতোপূর্বে) আমরা গণনা (বর্ণনা) করেছি।
আর ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, জাযা ওয়াজিব হবে না। কেননা এগুলো স্বভাবগত ভাবে কষ্টদায়ক। সুতরাং এগুলো ব্যতিক্রমধর্মী দুষ্টপ্রাণী সমূহের অন্তর্ভূক্ত হবে। তদ্রুপ আভিধানিক দিক থেকে শব্দটি যাবতীয় হিংস্রপ্রাণীকে অন্তর্ভূক্ত করে।
আমাদের দলিল এই যে, হিংস্রপ্রাণী তার বন্য স্বভাবের কারণে শিকার রূপে গণ্য। তাছাড়া এগুলোকে চামড়া সংগ্রহের উদ্দেশ্য কিংবা এগুলো দ্বারা অন্য শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কিংবা এগুলোর জ্বালাতন রোধ করার উদ্দেশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে ধরা হয়।
(হাদীছে উল্লেখিত) দুষ্ট প্রাণীসমূহের উপর কিয়াস করা সম্ভব নয়। কেননা তাতে হাদীছে বর্ণীত সংখ্যা অকার্যকার করা হয়। আর প্রচলিত ব্যবহারে শব্দটি হিংস্রপ্রাণী সমূহের উপর প্রযুক্ত হয় না। আর প্রচলিত ব্যবহারই অধিক কার্যকর।। আর তার মূল্য একটি বকরীর মূল্যকে অতিক্রম করবে না।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, ভক্ষণযোগ্য প্রাণীর কিয়াস করে এখানেও মূল্য যে পরিমাণই পৌছাক, তাই ওয়াজিব হবে।
আমাদের দলিল হলো রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এর বাণী হায়েনাও শিকারভুক্ত এবং এতে এক বকরী ওয়াজিব।
তাছাড়া এ কারণে যে, যেগুলোর মূল্য বিবেচনা করা হয় মূলতঃ চামড়া থেকে উপকৃত হওয়ার সম্ভাব্যতার কারণে; এ কারণে নয় যে, তা হামলা করে এবং কষ্ট দেয়। এদিক থেকে বাহ্যতঃ তার মূল্য বকরীর মূল্যের অধিক হবে না।
কোন হিংস্রপ্রাণী যদি মুহরিমের উপর হামলা করে আর সে তাকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব নয়।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) হামলাকারী উটের উপর কিয়াস করে বলেন, ওয়াজিব হবে।
আমাদের দলিল হলো, উমরা (রাঃআঃ) হতে বর্ণীত হাদীস যে, তিনি একটি হিংস্রপ্রাণী হত্যা করে একটি মেষ হাদী রুপে যবাহ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমরা আগে বেড়ে তাকে হত্যা করেছি।
আর এ কারণে যে, মুহরিমকে শিকারের পিছনে লাগাতে নিষেধ করা হইয়াছে। কিন্তু তার অত্যাচার রোধ করিতে নিষেধ করা হয়নি। একারণই তো যেগুলোর পক্ষ থেকে অত্যাচারিত হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে, সেগুলোকে রোধ করার অনুমতি দেয়া হইয়াছে, যেমন দুষ্ট প্রকৃতির প্রাণী সমূহের বেলায়। সুতরাং যে প্রাণীর অত্যাচার বাস্তব রূপ লাভ করেছে, তাকে রোধ করার বেলায় অনুমতি হওয়া আরো যুক্তিযুক্ত। আর শরীআতের পক্ষ হতে অনুমতি থাকা অবস্থায় শরীআতের অধিকার হিসাবে শাখা ওয়াজিব হবে না।
হামলাকারী উটের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা অধিকার যার, অর্থাত(উটের) মালিকের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই।
আর মুহরিম যদি (ক্ষুধার্ত অবস্থায়) বাধ্য হয়ে কোন শিকার হত্যা করে, তাহলে তার উপর জাযা ওয়াজিব হবে। কেননা এক্ষেত্রে স্পষ্ট বাণী দ্বারা অনুমতির বিষয়টি কাফ্ফারার সাথে আবদ্ধ, যেমন ইতোপূর্বে আমরা তিলাওয়াত করে এসেছি।
মুহরিমের গৃহপালিতে বকরী, শুরু, উট, মুরগী ও হাস জাইয করায় কোন দোষ নেই। কেননা বন্যতার বৈশিষ্ট্য না থাকাতে এই প্রাণীগুলোকে শিকার ভুক্ত নয়। আর হাস দ্বারা ঐ হাস উদ্দেশ্য, যা বাড়ীতে কিংবা জলাশয়ে থাকে। কেননা জন্মগতভাবেই তা প্রতিপালিত।
যদি কেউ রোম কবুতর হত্যা করে তাহলে তার উপর জাযা ওয়াজিব হবে।
ইমাম মালিক (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার দলিল এই যে, তা পালিত, মানুষের সংগ লাভে আশস্ত এবং আপন ডানা দ্বারা আত্মরক্ষ্মা সমর্থ নয়। কেননা সে ধীরগতিসিম্পন্ন।
আমরা বলি, কবুতর সৃষ্টিগত ভাবেই বন্য স্বভাবের এবং উড্ডয়ন দ্বারা আত্মরক্ষায় সমর্থ, যদিও তা ধীরগতি সম্পন্ন। আর মানুষের সংগ লাভে অভ্যস্ত হওয়াটা অস্থায়ী। সুতরাং তা বিবেচ্য নয়।
তদ্রুপ গৃহপালিত হরিণ হত্যা করলে(দন্ড ওয়াজিব হবে) কেননা মূলতঃ তা শিকার। সুতরাং সংগ লাভের সাময়িক অভ্যস্থতা তার শিকার গুণ রহিত করবে না। যেমন উট যদি পালিয়ে গিয়ে বন্য হয়ে পড়ে, তাতে মুহারিমের জন্য হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে শিকারভূক্ত হবে না।
মুহরিম যদি কোন শিকার যবাহ করে, তাহলে তার যবাহকৃত পশু মুর্দার হিসাবে বিবেচিত হবে এবং তা খাওয়া হালাল হবে না।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, মুহরিম যদি অন্য কারো জন্য যবাহ করে তাহলে তা হালাল হবে। কেননা সে তো হলো অপর ব্যক্তিটির পক্ষ থেকে কার্যসম্পাদনকারী। সুতরাং তার কর্ম উক্ত ব্যক্তিটির সংগেই সম্পৃক্ত হবে।
আমাদের দলিল এই যে, যবাহ হলো শরীআতসম্মত একটি কর্ম। আর এটি (মুহরিমের জন্য) হারাম কর্ম। সুতরাং যবেহ রূপে বিবেচিত হবে না, যেন মাজূসীর যবাহকৃত জন্তু।
এটি এজন্য যে বিধান রূপে শরীআতসম্মত যবাহকেই গোশ্ত ও রক্তের মাঝে পার্থক্যকারী স্থলবর্তী গণ্য করা হইয়াছে। সুতরাং শরীআতসম্মত যবেহ না হলে পার্থক্যকারীরও থাকবে না।
যবাহকারী মুহরিম যদি উক্ত পশুর কোন কিছু ভক্ষণ করে,তাহলে ভক্ষিত অংশের মূল্য তার উপর ওয়াজিব হবে।
এটি ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইন বলেন, যা খেয়েছে, তার জাযা দিতে হবে না। অন্য কোন মুহরিম যদি তা থেকে খায়, তাহলে সকলের মতেই তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না।
সাহেবাইন দলিল এই যে, এটা তো মুর্দার। সুতরাং তা খাওয়ার কারণে তাওবা করা ছাড়া অন্য কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। অন্য কোন মুহরিম খেলে তা হুকুম হয় এটির সে হুকুম হবে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, আমরা একথা উল্লেখ করে এসেছি যে, মুহরিমের যবাহ্কৃত পশু হারাম হওয়ার কারণ হলো তা মুর্দার হওয়া। এবং এ কারণে যবাহ্ করাটা তার ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। কেননা তার ইহরামের শিকারকে যবাহ্ এর পাত্র হওয়া থেকে এবং যবাহ্কারীদের যবাহ্র যোগ্যতা থেকে বের করে দিয়েছে। সুতরাং ভক্ষণ হারাম হওয়ার বিষয়টি এ সকল মাধ্যম বিদ্যমান থাকার কারণে তার ইহরামের সংগে যুক্ত হবে ।অন্য মুহরিমের বেলায় এর হুকুম বিপরীত। মুহরিমের বিষয়টি এর বিপরীত। মুহরিমের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তার ভক্ষণ করাটা তার ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়।
কোন হালাল ব্যক্তি যে শিকার করা হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ইমাম মালিক(রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। তার দলিল এই যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- মুহরিম কোন শিকারের গোশত খেলে আপত্তি নেই, যদি সে নিজে শিকার না করে থাকে, কিংবা তার জন্য শিকার করা না হয়ে থাকে।
আমাদের দলিল এই যে, সাহাবায়ে কিরাম মুহরিমের ব্যাপারে শিকারে গোশতের বিধান সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) বলেছেন, তাকে কোন অসুবিধা নেই। আর ইমাম মালিক(রঃআঃ) যে হাদীস বর্ণনা করেছেন,তাতে ব্যবহৃত অব্যয়টি মালিকানা জ্ঞাপক। সুতরাং (তার জন্য শিকার করার) অর্থ হবে জীবন্ত শিকারটি তাকে দান করা (যবাহ্ করে) গোশত দান করা নয়। কিংবা অর্থ এই যে, তার আদেশে শিকার করা হইয়াছে।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) শিকার না দেখিয়ে দেয়ার শর্ত আরোপ করেছেন। এতে সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, (আামাদের মাযহাবে) শিকার দেখিয়ে দেয়া হারাম। কিন্তু মাশায়েখগণ বলেন যে, এ বিষয় দুটি বর্ণনা রহিয়াছে। হারাম হওয়ার দলিল হলো আবূ কাতাদা (রাঃআঃ) এর হাদীস। আর তা আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।
কোন হালাল ব্যক্তি যদি হরম শরীফ এলাকার শিকার যবাহ্ করে, তা হলে তার মূল্য ওয়াজিব হবে, যা সে দরিদ্রদের মাঝে সাদাকা করে দেবে। কেননা শিকার হরম এলাকার হওয়ার কারণে নিরাপত্তার অধিকারী। এক দীর্ঘ হাদীছে রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) বলেছেন- (হরমের শিকারকে তাড়া করা যাবে না)।
আর রোযা রাখা তার জন্য যথেষ্ট হবে না। কেননা এটা হলো অর্থদন্ড, কাফ্ফারার নয়। সুতরাং মালের ক্ষতিপূরণ সদৃশ হলো।
এ পার্থক্যের কারণ এই যে, ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হইয়াছে পাত্রের মাঝে (অর্থাত্ শিকারের মাঝে) বিদ্যমান একটি গুণ নষ্ট করার কারণে। আর তা হলো নিরাপত্তার অধিকার। পক্ষান্তরে কাফ্ফারার রূপে মুহরিমের উপর রোযা ওয়াজিব হইয়াছে, তা হলো তার কর্মের শাস্তি। কেননা হুরমাত(বা হারাম হওয়া) সাব্যস্ত হইয়াছে, তার মাঝে বিদ্যমান একটি গুণের কারণে। সেটা হলো তার ইহরাম। আর রোযা কর্মের সাজা হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিন্তু কোন বস্তুর ক্ষতিপূরণ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
আর ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন যে,রোযা রাখা তার জন্য যথেষ্ট হবে, -মুহরিমের উপর যা ওয়াজিব হইয়াছে, তার উপর কিয়াস করে। উভয় অবস্থার মাঝে পার্থক্য আমরা উল্লেখ করে এসেছি।
এ ক্ষেত্রে হাদী যথেষ্ট হবে কিনা, এ সম্পর্কে দুটি বর্ণনা রহিয়াছে।
যে ব্যক্তি হরম অঞ্চল কোন শিকার সংগে করে প্রবেশ করলো, তার কর্তব্য হবে হরম অ্ঞ্চলে তা ছেড়ে দেওয়া, যদি তা তার হাতে থাকে।
এ সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। তিনি বলেন, বান্দার প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বান্দার মালিকানাধীন জিনিসে শরীআতের হক প্রকাশ পায় না।
আমাদের দলিল এই যে, যখন সেটা হরম এলাকায় এসে গেছে তখন হরমের সম্মান রক্ষার্থে পাকড়াও পরিহার করা তার অবশ্য কর্তব্য হবে। কিংবা (বলা যায় যে,) তা হরমের শিকার হয়ে গেছে; সুতরাং বর্ণীত হাদীস এর কারণে নিরাপত্তার অধিকারী হয়ে গেছে।
যদি সে তা বিক্রি করে থাকে তাহলে শিকার বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বিক্রয় প্রত্যাহার করিতে হবে। কারণ বিক্রি জাইয হয়নি। কেননা এতে শিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ করার দিক রহিয়াছে, আর তা নিষিদ্ধ।
আর যদি শিকার অপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তাহলে তার উপর জাযা ওয়াজিব হবে। কেননা শিকার যে নিরাপত্তার অধিকারী হয়েছিলো, তা হরণ করার মাধ্যমে তার উপর হস্তক্ষেপ করা হইয়াছে।
আর এরূপই হুকুম, যদি মুহরিম অন্য মুহরিমের নিকট কিংবা হালাল ব্যক্তির নিকট শিকার বিক্রি করে। এর কারণ তা-ই, যা আমরা বলে এসেছি।
আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় ইহরাম বেধেছে যে, তার বাড়ীতে কিংবা তার সংগের খাচায় কোন শিকার আটক রহিয়াছে, তার জন্য উক্ত শিকার ছেড়ে দেয়া জরুরী নয়।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তা ছেড়ে দেয়া তার উপর ওয়াজিব। কেননা শিকারকে নিজের মালিকানায় আটকে রাখার মাধ্যমে শিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ করছে। সুতরাং এটা হয়ে গেল, যেমন শিকার তার হাতে রহিয়াছে।
আমাদের দলিল এই যে, সাহাবায়ে কিরাম এমন অবস্থায় ইহরাম বাধতেন যে, তাদের বাড়ীঘরে শিকার ও গৃহপালিত পশুসমূহে আটক থাকতো। আর তাদের থেকে সেগুলো ছেড়ে দেয়ার কোন ঘটনা বর্ণীত নেই। আর এই ছেড়ে না দেয়াই ব্যাপক রীতি হিসাবে চলে এসেছে। আর তা শরীআতের একটি দলিলরূপে বিবেচিত।
তাছাড়া এ কারণে যে, কর্তব্য হলো শিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ না করা। অথচ তার পক্ষ থেকে তো কোন রূপ হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। কেননা, শিকার তো তার হিফাজতে নেই বরং বাড়ীর এবং খাচার হিফাজতে রহিয়াছে। শুধু কথা এই যে, তার মালিকানায় রহিয়াছে। কিন্তু যদি সে খোলা প্রান্তরে ছেড়ে দেয় তবু তো সেটা তার মালিকানারই থেকে যায়, সুতরাং মালিকানায় থাকার বিষয়টি বিবেচ্য নয়।
কারো কারো মতে খাচা যদি তার হাতে থাকে তাহলে ছেড়ে দেয়া তার কর্তব্য হবে, তবে এমনভাবে যাতে তা নষ্ট না হয়।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন,কোন হালাল ব্যক্তি যদি শিকার ধরে, অতঃপর ইহরাম বাধে আর অন্য কেউ তার হাতে থেকে শিকারটি ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এটা আবূ ইমাম হানীফা (রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইন বলেন, ক্ষতিপুরণ হবে না। কেননা যে ছেড়ে দিয়েছে, সে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার এর পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে। আর সত্কর্মশীলদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, সে ব্যক্তি শিকার ধরার মাধ্যমে এমন মালিকানা অর্জন করেছে, যা সংরক্ষণীয়। সুতরাং তার ইহরামের কারণে উক্ত মালিকানার সংরক্ষণাধিকার রহিত হবে না। আর যে ছেড়ে দিয়েছে, সে তা বিনষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং তাকে এর ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
এর বিপরীত হুকুম হবে যদি ইহরাম অবস্থায় শিকারটি ধরে থাকে। কেননা সে শিকারের মালিক হয়নি। তার উপর ওয়াজিব হয় হস্তক্ষেপ করণ পরিহার করা। আর তা এরূপ হতে পারে যে, সে নিজের শিকারকে তার আবাসে ছেড়ে দিবে। সুতরাং যখন অন্য ব্যাক্তি তার মালিকানা নষ্ট করে দিলো, তখন সে সীমা লংঘনকারী হলো। এর নযীর হলো গান বাজনার উপকরণ ভেংগে ফেলা সংক্রান্ত ব্যাপারের মতবিরোধ।
কোন মুহরিম যদি শিকার ধরে আর কেউ তার হাত থেকে ছেড়ে দেয় তাহলে সর্বসম্মতিক্রমেই তার উপর কোন ক্ষতিপূরণ আসবে না। কেননা এই ধরার মাধ্যমে সে শিকারের মালিক হয়নি। কারণ মুহরিমের ক্ষেত্রে শিকার মালিকানা অর্জনের বস্তু থাকে না। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন- স্থলের প্রাণী তোমাদের জন্য হারাম করা হইয়াছে যতক্ষণ তোমরা মুহরিম থাকবে। সুতরাং তা হল যেমন কেউ মদ খরিদ করল।
যদি অন্য কোন মুহরিম উক্ত মুহরিমের হাতের শিকার হত্যা করে ফেলে তাহলে উভয়ের প্রত্যেকের উপর জাযা ওয়াজিব হবে। কেননা যে শিকার ধরেছে, সে নিরাপত্তা বিলুপ্ত করার মাধ্যমে শিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ করেছে। আর হত্যাকারী এর স্থায়িত্ব দান করেছে। আর ক্ষতিপূরণ প্রয়োগ হওয়ার ব্যাপারে স্থায়িত্ব দান করা প্রথম অপরাধে সমতুল্য যেমন স্বামী-স্ত্রীর মিলনের পূর্বে তালাক প্রদানের সাক্ষীগণ জামীন হয়, যখন তারা সাক্ষী প্রত্যাহার করে নেয়।
আর শিকার যে ধরেছে, সে হত্যাকারীদের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ উসূল করে নিবে। ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে না। কেননা শিকার পাকড়াওকারী তার কর্মের কারণে নিজেই অপরাধী। সুতরাং সে অন্যের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবী করিতে পারে না।
আমাদের দলিল এই যে, শিকার পাকড়াও করা ক্ষতিপূরণের কারণরূপে সাব্যস্ত হবে, যখন তার সংগে বিনষ্টি যুক্ত হয়। তাই হত্যাকারী হত্যা করার মাধ্যমে পাকড়াওকারীর কর্মটিকে কারণএ পরিণত করেছে। অতএব সে কারণের কারণ সম্পাদনকারীর সমপর্যায়ের হলো। সুতরাং ক্ষতিপূরণ বিষয়টি তার প্রতি প্রত্যাবর্তিত হবে।
যদি হরমের ঘাস বা মালিকানা বিহীন বৃক্ষ কেটে ফেলে, অর্থাত যে বৃক্ষ সাধারণতঃ মানুষ ফলায় না, তাহলে তার উপর উক্ত ঘাস বা বৃক্ষের মূল্য প্রদান ওয়াজিব হবে। তবে এগুলো শুকিয়ে গেলে (মুল্য প্রদান) ওয়াজিব হবে না। কেননা উল্লেখিত ঘাস ও বৃক্ষের কর্তন হারাম হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে হরম এর কারণে।
রাসূলূল্লাহ্(সাঃআঃ) বলেছেন- হরমের ঘাস উপড়ানো যাবে না এবং (কাটা ওয়ালা গাছ) ও কাটা যাবে না।
উক্ত মূল্যের ক্ষেত্রে রোযার কোন ভূমিকা নেই। কেননা ঘাস কর্তনের হুরমত হরম এর মর্যাদার কারণে, ইহরামের কারণে নয়। সুতরাং এ হলো স্থান হিসাবে ক্ষতিপুরণ, যেমন ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করে এসেছি।
আর তার মূল্য দরিদ্রদের মাঝে সাদাকা করবে।
আর যখন তা আদায় করবে, তখন সে উক্ত ঘাস বা বৃক্ষের মালিক হয়ে যাবে,যেমন হক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
অবশ্য কর্তনের পর তা বিক্রি করা মাকরুহ। কেননা শরীআতের নিষিদ্ধ উপায়ে তার মালিক হইয়াছে। এখন যদি তাকে বিক্রির অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে মানুষ এ ধরনের বিষয়টি কাজে উত্সাহিত হয়ে পড়বে। তবে মাকরূহ হলেও এ বিক্রী বৈধ হবে। শিকারের বিষয়টি এর বিপরীত। উভয়ের মাঝে পার্থক্য আমরা সামনে বর্ণনা করবো।
আর মানুষ স্বাভাবিকভাবে যা রোপন করে থাকে, তা নিরাপত্তা লাভের অধিকারী নয়। এর উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত । আর এ জন্য যে, নিষিদ্ধ হলো ঐ সমস্ত বৃক্ষ, যা হরম এর সাথে সম্পৃক্ত। আর পূর্ণরূপে সম্পৃক্তি সাব্যস্ত হবে, রোপনের মাধ্যমে অন্যের দিকে সম্পৃক্তি সাব্যস্ত না করা। যেগুলো সাধারণতঃ রোপন করা হয় না, সেগুলো যদি কোন মানুষ রোপন করে তাহলে তা ও ঐ সকল উদ্ভিদের সংগে যুক্ত, যেগুলো সাধারণতঃ রোপন করা হয়। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )
(সাধারণতঃ রোপন করা হয় না এমনি উদ্ভিদ) যদি কারো মালিকানাধীন জমিতে নিজে নিজেই অংকুরিত হয়, তাহলে কর্তনকারীর উপর তারও মূল্য প্রদান ওয়াজিব হবে, হরমের সম্মান রক্ষার্থে শরীআতের হক হিসাবে।
আরেকটি মূল্য ওয়াজিব হবে, মালিকের ক্ষতিপূরণ হিসাবে। যেমন হরম এর মালিকানাধীন শিকার হত্যা করলে হয়ে থাকে।
হরমের যে বৃক্ষ শুকিয়ে গেছে, তাতে কোন ক্ষতিপূরণ নেই। কেননা তা বর্ধনশীল নয়। হরম এর ঘাসে পশু চরানো যাবে না, আর ইযখির নামক উদ্ভিদ ব্যতীত কোন কিছু কাটাও যাবে না।
ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) বলেন, ঘাসে পশু চরানোতে আপত্তি নেই। কেননা এর প্রয়োজন রহিয়াছে। এবং তা থেকে পশুদেরকে বিরত রাখা দুষ্কর।
আমাদের দলিল হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হাদীস। আর পশুর দাতে কাটা কাস্তে দিয়ে কাটার সমতুল্য। আর হিল (হরমের বাহির এলাকা) থেকে ঘাস বহন করে অন্যান্য করে আনা সম্ভব। সুতরাং হরমের ঘাসে পশু চরানোর প্রয়োজন নেই।
ইযখির নামক ঘাসের হুকুম ভিন্ন। কেননা রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) নিষিদ্ধ ঘাস থেকে এটি বহির্ভূত করেছেন। সুতরাং তা কর্তন করা এবং তাতে পশু চরানো জাইয। ছত্রাক এর ভিন্ন। কেননা মূলতঃ এটা উদ্ভিদভূক্ত নয়।
কিরান হজ্জকারী যদি এমন কোন অপরাধ করে বসে, যে সম্পর্কে আমরা বলে এসেছি যে, এতে হজ্জে ইফরাদকারীর উপর একটি দম ওয়াজিব হবে, সেক্ষেত্রে তার উপর দুটি দম ওয়াজিব হবে। একটি হলো হজ্জের কারণে দম আর একটি হলো উমরার কারণে দম।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, একটা দম ওয়াজিব হবে। এ কারণে যে, তার মতে কিরানকারী একটি ইহরাম দ্বারা মুহরিম। পক্ষান্তরে আমাদের মতে সে দুটি ইহরাম দ্বারা মুহরিম। (কিরান অ্ধ্যায়ে) এ সম্পর্কিত আলোচনা অতিক্রান্ত হইয়াছে।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
(আমাদের দলিল এই যে,) মীকাতের সময় কর্তব্য ছিলো (হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্য) একটি ইহরাম বাধা। আর একটি ওয়াজিব বিলম্বিত করার কারণে একটি মাত্র জাযাই ওয়াজিব হতে পারে।
দুই মুহরিম যদি একটি শিকার হত্যায় শরীক হয়, তাহলে উভয়ের প্রত্যেকের উপর পূর্ণ জাযা ওয়াজিব হবে। কেননা হত্যা কর্মে শরীক হওয়ার মাধ্যমে উভয়ের প্রত্যেকে এমন একটি অপরাধকারী হলো, যা শিকার দেখিয়ে দেয়ার অপরাধের চেয়ে গুরুতর, সুতরাং অপরাধ একাধিক হওয়ার কারণে জাযা ও একাধিক হবে।
পক্ষান্তরে দুই হালাল ব্যক্তি যদি হরমের কোন শিকার হত্যা করার কাজে শরীফ হয়, তাহলে উভয়ের উপর একটি জাযা ওয়াজিব হবে। কেননা আলোচ্য ক্ষতিপূরণটি হলো স্থানের স্থলবর্তী, অপরাধের শাস্তি নয়। সুতরাং (হত্যার) স্থান এক হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণও এক হবে। যেমন লোক ভুলক্রমে একজন লোককে হত্যা করলো। এ অবস্থায় উভয়েরে উপর একটি দিয়্যত ওয়াজিব হয়ে থাকে। কিন্তু কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় উভয়ের প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে।
মুহরিম যদি শিকার বিক্রি করে কিংবা খরিদ করে, তাহলে বিক্রি বাতিল হয়ে যাবে। কেননা জীবিত অবস্থায় মুহরিমের বিক্রি করার অর্থ হলো নিরাপত্তা নষ্ট করার মাধ্যমে শিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ করা। পক্ষান্তরে হত্যা করার পর বিক্রি করার অর্থ হলো মুদা বিক্রি করা।
যে ব্যক্তি হরম অঞ্চল থেকে হরিনী ধরে নিয়ে গেল আর তা কয়েকটি বাচ্চা প্রসব করলো, অতঃপর হরিণীটি তার বাচ্চাগুলোসহ মারা গেল, তখন সব কটির মূল্য তার উপর ওয়াজিব হবে। কেননা হরম থেকে বের করার পরও শরীআতের দৃষ্টিতে উক্ত শিকার ওয়াজিব। আর এটি একটি শরীআত অনুমোদিত গুণ। সুতরাং শিকারের বাচ্চার মাঝেও তা সম্প্রসারিত হবে।
যদি উক্ত শিকারের জাযা আদায় করার পর বাচ্চা প্রসব করে, তাহলে বাচ্চার জাযা আদায করা তার উপর ওয়াজিব হবে না। কেননা জাযা আদায় করার পর তা আর নিরাপদ থাকে না। কেননা স্থলবর্তী পৌছে যাওয়া(অর্থাত্ মূল্য দরিদ্রদের নিকট পৌছে যাওয়া) মূল শিকার পৌছে যাওয়ার সমতূল্য।
সঠিক বিষয় আল্লাহই অধিক অবগত।
Leave a Reply