হজ্জ অধ্যায় (ইহরাম শিকার তামাত্তু কিরান- হেদায়া কিতাব )
হজ্জ অধ্যায় (ইহরাম শিকার তামাত্তু কিরান- হেদায়া কিতাব ) >> তাহারাত অধ্যায় (উযূ গোসল তায়াম্মুম ) >> সালাত অধ্যায় (আযান জানাযা রমাযান ঈদ) >> যাকাত অধ্যায় (পশু সম্পদ উশর ফিতর) >> সিয়াম অধ্যায় (কাফফারা ইতিকাফ রোযা)
অধ্যায়: হজ্জ
- পরিচ্ছেদঃ ইহরামের স্থানসমূহ
- পরিচ্ছেদঃ উকুফের সাথে সংশ্লিষ্ট
- দ্বিতীয় অনুচ্ছেদঃ কিরান
- তৃতীয় অনুচ্ছেদঃ হজ্জে তামাত্তু
- চতুর্থ অনুচ্ছেদঃ অপরাধ ও ত্রুটি
- পরিচ্ছেদঃ ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী-সম্ভোগ
- পরিচ্ছেদঃ তাহারাত ব্যতীত তাওয়াফ সংশ্লিষ্ট বিষয়
- পরিচ্ছেদঃ শিকার
- পণ্চম অনুচ্ছেদঃ ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা
- ষষ্ঠ অনুচ্ছেদঃ ইহরামের সম্পর্ক সম্বন্ধে
- সপ্তম অনুচ্ছেদঃ অবরুদ্ধ হওয়া
- অষ্টম অনুচ্ছেদঃ হজ্জ ফউত হওয়া
- নবম অনুচ্ছেদঃ অপরের পক্ষে হজ্জ করা
- দশম অনুচ্ছেদঃ হাদী সম্পর্কে
হজ্জ ওয়াজিব সে সকল লোকের উপর যারা স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক ও সুস্থদেহের অধিকারী। যখন তারা পাথেয় ও বাহনে সক্ষম হয়, আর তা বাসস্থান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত আপন পোষ্য পরিজনের খোরপোষ থেকে অতিরিক্ত হয় আর পথও নিরাপদ হয়।
হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার এখানে ওয়াজিব শব্দটি ব্যবহার করেছেন অথচ তা অকাট্য ফরয এবং তার ফরয হওয়া কিতাবুল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো, আল্লাহ্ পাকের নিম্নোক্ত বাণী- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরয……….শেষ পর্যন্ত। এছাড়া আপনারা নিচের অধ্যায় গুলো পড়তে পারেন
জীবনে তা একবারই শুধু ফরয হয়। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। হজ্জ কি প্রতি বছর ফরয, না শুধু একবার? তখন তিনি বললেন, না, বরং একবার; এর অতিরিক্ত যা করা হবে তা নফল হবে।
তাছাড়া হজ্জ ফরয হওয়ার কারণ তো হলো বায়তুল্লাহ্ আর তা একাধিক নয়। সুতরাং বারংবার ওয়াজিব হতে পারে না।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে হজ্জ ওয়াজিব অবিলম্বে। ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে এক বর্ণনায় এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়।
আর ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর মতে তা বিলম্ব আদায় করা যায়। কেননা তা পূর্ণ জীবনে অর্পিত ওয়াজিব। সুতরাং হজ্জের ক্ষেত্রে পূর্ণ জীবন হলো নামাজের ক্ষেত্রে সময়ের মতো।
প্রথমোক্ত মতের দলিল এই যে, হজ্জ বিশেষ সময়ের সাথে নির্দিষ্ট। আর এক বছর সময়ের সাথে নির্দিষ্ট। আর এক বছর সময়ে মৃত্যু ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়, তাই সতর্কতার জন্য (সময়সীমা) সংকুচিত করা হইয়াছে। আর এই সতর্কতার প্রেক্ষিতেই তাড়াতাড়ি আদায় করা (সর্বসম্মতিক্রমে) উত্তম। নামাজের সময়ের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা এত অল্প সময়ে মৃত্যু ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক।
স্বাধীনতা ও প্রাপ্তবয়স্কতার শর্তের কারণ এই যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন-
যে কোন গোলাম যদি দশবারও হজ্জ করে অতঃপর স্বাধীন হয়, তাহলে তার উপর ইসলামের ফরয হজ্জ ওয়াজিব হবে। আর কোন নাবালিগ যদি দশবারও হজ্জ করে অতঃপর বালিগ হয় তাহলে তার উপর ইসলামের ফরয ওয়াজিব হবে। তাছাড়া এই জন্য যে, হজ্জ হলো একটি ইবাদত। আর যাবতীয় ইবাদত নাবালিগদের থেকে রহিত।
আর মস্তিষ্কের সুস্থতা শর্ত দায়িত্ব আরোপের বৈধতার জন্য। অনুরূপভাবে অংগ-প্রত্যংগের সুস্থতা (এরও শর্ত রহিয়াছে)। কেননা তাহা ছাড়া অক্ষমতা অনিবার্য। অন্ধ ব্যক্তি যদি এমন কাউকে পায়, যে তার সফরের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে(অর্থাত্ চলা-ফেরায় তাকে সাহায্য করবে)। এবং পাথেয় ও বাহনেও সমর্থ হয়, তবুও ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে না।
সাহেবাইন ভিন্নমত পোষণ করেন। নামাজ অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হইয়াছে।
পংগু সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত রহিয়াছে যে, তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে। কেননা, অপরের সাহায্যে সে সক্ষম। সুতরাং সে বাহনের সাহায্যে সক্ষমতা অর্জনকারীর সদৃশ।
ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে না। কেননা, সে নিজে হজ্জের রোকনসমূহ আদায় করিতে সক্ষম নয়। পক্ষান্তরে অন্ধ ব্যক্তিকে যদি পথ বাতলিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে নিজেই আদায় করিতে পারে। ফলে সে পথ হারিয়ে ফেলা ব্যক্তি সদৃশ হলো।
পাথেয় ও বাহন ব্যবস্থায় সক্ষম হওয়া জরুরী। বাহন সংগ্রহে সক্ষম হওয়ার অর্থ এই পরিমাণে অর্থ থাকা, যাতে হাওদার একাংশ এবং সামান পত্র বহনে একটি উট ভাড়া করিতে সমর্থ হয়।
যাওয়া ও আসার সময় পর্যন্ত খরচের ব্যবস্থায় সক্ষম হওয়া জরুরী। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত রাস্তার সক্ষম হওয়ার অর্থ কি? তখন উত্তরে তিনি বলেছিলেন- পাথেয় ও বাহন।
যদি সে পালাক্রমে সওয়ারী ভাড়া করিতে সক্ষম হয়, তাহলে তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে না। কেননা দুজন যদি পালাক্রমে সওয়ার হয় তাহলে পুরা সফরে বাহন পাওয়া হল না।
এই সম্পূর্ণ খরচ বাসস্থান ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজন হতে উদ্বৃত্ত থেকে হবে ।যেমন, খাদিম, ঘরের আসবাবপত্র ও কাপড়-চোপড়। কেননা এগুলো তার মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত।
(তদ্রুপ এই সম্পূর্ণ খরচ) তার ফিরে আসা পর্যন্ত তার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ থেকে উদ্বৃত্ত হতে হবে। কেননা ভরণ-পোষণ হলো স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার, আর শরীআতের নির্দেশ মতেই শরীআতের হকের উপর বান্দার হক অগ্রগণ্য।
মক্কাবাসীদের উপর এবং তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সওয়ারী শর্ত নয়। কেননা হজ্জ আদায় করার জন্য তাদের উপর অতিরিক্ত কষ্টে লিপ্ত হতে হয় না। সুতরাং তা জুমুআর জন্য পথ চলার অনুরূপ হলো। পথের নিরাপত্তা অপরিহার্য। কেননা এছাড়া সক্ষমতা সাব্যস্ত হয় না।
কোন কোন মতে এটা হলো হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত। এমনকি (মৃত্যুর সময়) ওসীয়ত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব নয়। এ মত ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত। কারো কারো মতে এটা হজ্জ আদায় করার শর্ত, ওয়াজিব হওয়ার জন্য নয়। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) সক্ষমতার ব্যাখ্যা করেছেন শুধু পাথেয় ও বাহন দ্বারা।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে শর্ত এই যে, তার সংগে তার স্বামী কিংবা কোন মাহরাম থাকতে হবে, যাকে সংগে নিয়ে সে হজ্জ করে আসবে। যদি তার ও মক্কা শরীফের মাঝে তিন দিনের দূরত্ব থাকে তাহলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্জ করিতে যাওয়া তার জাইয নয়।
শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, যদি কাফেলার সাথে রওয়ানা হয় আর তার সংগে নির্ভরযোগ্য কতিপয় স্ত্রীলোক থাকে, তাহলে তার জন্য হজ্জ করা জাইয হবে। কেননা সফর থাকার কারণে নিরাপত্তা পাবে।
আমাদের দলিল এই যে, নাবী করিম (সাঃআঃ) বলেছেন- কোন স্ত্রীলোক যেন মাহরাম ছাড়া হজ্জে না যায়। আর এ জন্য যে, মাহরাম ছাড়া তার ব্যাপারে ফিতনার আশংকা রহিয়াছে। আর অন্যান্য স্ত্রীলোক তার সংগে যুক্ত হওয়ার দ্বারা ফিতনার আশংকা আরো বৃদ্ধি পাবে। এ কারণেই সংগে অন্য স্ত্রীলোক থাকা সত্ত্বেও পর নারীর সংগে একান্তে মিলিত হওয়া হারাম। পক্ষান্তরে তার ও মক্কার মধ্যবর্তী দুরত্ব তিন দিনের কম হওয়ার বিষয়টি এর বিপরীত, কেননা সফরের কম দূরত্বে মাহরাম ছাড়া বের হওয়া তার জন্য জাইয রহিয়াছে।
যদি সে মাহরাম পেয়ে যায় তাহলে স্বামীর তাকে বাধা দেয়ার অধিকার থাকবে না।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, তার বাধা দেয়ার অধিকার থাকবে। কেননা, সফরে বের হওয়াতে তার হক নষ্ট হয়।
আমাদের দলিল এই যে, ফরযসমূহের ক্ষে্ত্রে স্বামীর অধিকার প্রকাশ পাবে না। আর হজ্জ ফরযসমূহের অন্তর্ভূক্ত। এমনটি নফল হজ্জের ক্ষেত্রে তার বাধা প্রদানের অধিকার রহিয়াছে।
মাহরাম যদি ফাসিদ হয় সেক্ষেত্রে ফকীহ্গণ বলেছেন যে, তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কেননা সফর সংগী হওয়ার উদ্দেশ্য তার দ্বারা হাছিল হবে না।
যে কোন মাহরামের সংগে বের হওয়া তার জন্য জাইয হবে। কিন্তু মাজূসী হলে জাইয হবে না। কেননা, সে তো তার সংগে বিবাহের বৈধতার কথা বিশ্বাস করে। বাচ্চা কিংবা বিকৃত মস্তিষ্ক মাহরাম গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তাদের পক্ষ থেকে হিফাজত হাসিল হবে না।
যে বালিকা যৌনাবেদনের সীমায় উপনীত হয়ে গেছে, সে প্রাপ্ত বয়স্কার সমতুল্য। কাজেই মাহরাম ছাড়া তাকে নিয়ে সফর করা জাইয নেই। মাহরামের ব্যয়ভার স্ত্রী লোকটিকেই বহন করিতে হবে। কেননা সে তার মাধ্যমেই হজ্জ আদায়ে সক্ষম হচ্ছে।
মাহরামের সংগে কি হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত, না হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত, এ বিষয়ে ফকীহ্গণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে- যেমন পথের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাদের মতভেদ রহিয়াছে।
ইহরাম বাধার পর নাবালক যদি সাবালক হয় কিংবা দাস স্বাধীনতা লাভ করে, তার পর হজ্জের ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন করে, তাহলে তা তাদের ফরয হজ্জের জন্য যথেষ্ট হবে না। কেননা তাদের ইহরাম তো নফল আদায়ের জন্য সংঘটিত হইয়াছে। সুতরাং তা ফরয আদায়ের ইহরামে পরিবর্তিত হবে না।
যদি নাবালক (বালেগ হওয়ার পর) ওকুফে আরাফার পূর্বে ইহরামের নবায়ণ করে ফরয হজ্জের নিয়্যত করে নেয়, তাহলে জাইয হবে। কিন্তু দাস এরূপ করলে জাইয হবে না। কেননা যোগ্যতা না থাকার কারণে বালকের ইহরাম অবশ্যপালনীয় নয়, পক্ষান্তরে দাসের ইহরাম অবশ্য পালনীয়। সুতরাং অন্য ইহরাম শুরু করার মাধ্যমে বর্তমান ইহরাম হতে বের হয়ে আসা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ্ উত্তম জানেন।
Leave a Reply