মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ – রিয়াদুস সালেহীন

মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ – রিয়াদুস সালেহীন

মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ – রিয়াদুস সালেহীন >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ -২০ : মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ অথবা অসৎপথের দিকে আহ্বান করার বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱدۡعُ إِلَىٰ رَبِّكَۖ ﴾ [القصص: ٨٧] 

অর্থাৎ “তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর।” [সূরা ক্বাসাস ৮৭ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥] 

অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” [সূরা নাহ্ল ১২৫ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [المائ‍دة: ٢] 

অর্থাৎ “সৎকাজ ও আত্মসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর।” [সূরা মায়েদাহ ২ আয়াত]

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ ﴾ [ال عمران: ١٠٤] 

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা [লোককে] কল্যাণের দিকে আহ্বান করিবে।” [সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াত]

1/178 وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ عُقبةَ بنِ عَمرٍو الأَنصَارِي البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ». رواه مسلم

১/১৭৮। আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনি ‘আমর আনসারী রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে।’’[1]

2/179 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئاً». رواه مسلم

২/১৭৯। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি [কাউকে] সৎপথের দিকে আহ্বান করিবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাহাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করিবে না। আর যে ব্যক্তি [কাউকে] ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করিবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাহাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করিবে না।’’[2]

3/180 وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيْ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ يَومَ خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجلاً يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ، يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا . فَلَمَّا أصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ الله ﷺ كُلُّهُمْ يَرْجُو أنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ: «أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب ؟»فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ . قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه»فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله ﷺ في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كأنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ، فأعْطاهُ الرَّايَةَ . فقَالَ عَليٌّ رضي الله عنه:  يَا رَسُول اللهِ، أقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بسَاحَتهمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

৩/১৮০। আবূল আব্বাস সাহ্‌ল ইবনি সা‘দ সায়েদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ খায়বার [যুদ্ধের] দিন বলিলেন, ‘‘নিশ্চয় আমি আগামীকাল যুদ্ধ-পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করিবেন, আর সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন।’’ অতঃপর লোকেরা এই আলোচনা করিতে করিতে রাত কাটিয়ে দিল যে, তাহাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে এটা দেওয়া হবে। অতঃপর সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট গেল। তাহাদের প্রত্যেকেরই এই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, পতাকা তাকে দেওয়া হোক। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘‘আলী ইবনি আবী ত্বালেব কোথায়?’’ তাঁকে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাহাঁর চক্ষুদ্বয়ে ব্যথা হচ্ছে।’ তিনি বলিলেন, ‘‘তাকে ডেকে পাঠাও।’’ সুতরাং তাঁকে ডেকে আনা হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার চক্ষুদ্বয়ে থুতু লাগিয়ে দিলেন এবং তাহাঁর জন্য দো‘আ করিলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন; যেন তাহাঁর কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তিনি তাঁকে যুদ্ধ-পতাকা দিলেন। আলী রাঃআঃ বলিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা আমাদের মত [মুসলিম] না হওয়া পর্যন্ত কি আমি তাহাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব?’ তিনি বলিলেন, ‘‘তুমি প্রশান্ত হয়ে চলতে থাক; যতক্ষণ না তাহাদের নগর-প্রাঙ্গনে অবতরণ করেছ। অতঃপর তাহাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর এবং তাহাদের উপর ইসলামে আল্লাহর যে জরুরী হক রয়েছে তাহাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করাও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তাআলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য [আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ] লাল উঁটনী অপেক্ষাও উত্তম।’’[3]

4/181 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ فتىً مِنْ أَسلَمَ، قَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ معي مَا أتَجَهَّز بِهِ، قَالَ: «ائتِ فُلاَناً فإنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ»فَأتَاهُ، فَقَالَ: إنَّ رسولَ الله ﷺ يُقْرِئُكَ السَّلامَ، وَيَقُولُ : أعْطني الَّذِي تَجَهَّزْتَ بِهِ، فَقَالَ : يَا فُلاَنَةُ، أعْطِيهِ الَّذِي تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلا تَحْبِسي مِنْهُ شَيئاً، فَواللهِ لاَ تَحْبِسِين مِنْهُ شَيئاً فَيُبَاركَ لَكِ فِيهِ . رواه مسلم

৪/১৮১। আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের এক যুবক বলিল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!  আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করছি; কিন্তু আমার কাছে তার প্রস্তুতির সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বলিলেন, ‘‘তুমি অমুকের কাছে যাও। কেননা সে [জিহাদের জন্য] প্রস্তুতি নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’’ সুতরাং সে [যুবকটি] তার নিকট এসে বলিল, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে সালাম দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, যে সরঞ্জাম তুমি [জিহাদের জন্য] প্রস্তুত করেছ, তা তুমি আমাকে দাও।’ অতএব সে [তার স্ত্রীকে] বলিল, ‘হে অমুক! আমি জিহাদের জন্য যে সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিলাম, তুমি সব একে দিয়ে দাও এবং তা হতে কোন জিনিস আটকে রেখো না। আল্লাহর কসম! তুমি তার মধ্য হতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না।’[4]


[1] মুসলিম ১৮৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯, আহমাদ ২৭৫৮৫, ২১৮৩৪, ২১৮৪৬, ২১৮৫৫

[2] মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬১৯, আহমাদ ৮৯১৫, দারেমী ৫১৩

[3] সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬, আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪

[4] মুসলিম ১৮৯৪, আবূ দাউদ ২৭৮০, আহমাদ ১২৭৪৮


Posted

in

by

Comments

One response to “মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ – রিয়াদুস সালেহীন”

Leave a Reply