স্বভাব চরিত্র , মনের ঐশ্বর্য-সংকীর্ণতা, কৃপণতা, উৎফুল্ল মন ও সাহায্য করা
স্বভাব চরিত্র , মনের ঐশ্বর্য-সংকীর্ণতা, কৃপণতা, উৎফুল্ল মন ও সাহায্য করা << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ৬, দান্যতা, কৃপণতা ও দোষ
১৩৫. অনুচ্ছেদঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র।
১৩৬. অনুচ্ছেদঃ মনের ঐশ্বর্য।
১৩৭. অনুচ্ছেদঃ মনের সংকীর্ণতা।
১৩৮. অনুচ্ছেদঃ লোকজন প্রজ্ঞা অর্জন করিতে পারলে উত্তম চরিত্রে ভূষিত হয়।
১৩৯. অনুচ্ছেদঃ কৃপণতা।
১৪০. অনুচ্ছেদঃ উত্তম মাল উত্তম লোকের জন্য।
১৪১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিরাপদে রাত কাটালো।
১৪২. অনুচ্ছেদঃ উৎফুল্ল মন।
১৪৩. অনুচ্ছেদঃ দুস্থজনকে সাহায্য করা অপরিহার্য।
১৪৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি চরিত্রবান হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।
১৩৫. অনুচ্ছেদঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র।
২৭০
আবু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ওজনদণ্ডে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই হইবে না [দারিমি, তিরমিজী, আবু দাউদ, হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭১
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] নিজেও অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীলতাকে তিনি পছন্দও করিতেন না। তিনি বলিতেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের লোকই সর্বোত্তম [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭২
আমর ইবনি শুআইব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আমার নিকট প্রিয়তর এবং কিয়ামতের দিন আমার নিকটবর্তী আসনে উপবিষ্ট হইবে তোমাদের মধ্যকার এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করবো না? লোকজন চুপ থাকলো। তিনি দুই অথবা তিনবার কথাটি বলিলেন। লোকজন বললো, হাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি [মুসনাদ আহমাদ, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৩
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের পূর্ণতা দান করার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি [আবু দাউদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৪
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যখনই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দুইটি ব্যাপারের একটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, তখনই তিনি সহজতরটিকে বেছে নিয়েছেন, যতক্ষণ না তা পাপাচার হতো। যদি তা পাপাচার হতো তবে তিনি লোকজনের চেয়ে তা থেকে সর্বাধিক দূরে থাকতেন। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনো ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। অবশ্য আল্লাহ তাআলার বিধানের পরিপন্থী কোন কিছু হইতে দেখলে তিনি মহামহিম আল্লাহর জন্য তার প্রতিশোধ গ্রহণ করিতেন [বোখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা মালিক]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৫
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বণ্টন করিয়াছেন যেভাবে তোমাদের মধ্যে রিযিক বণ্টন করিয়াছেন। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসেন না তাহাদের সকলকেই সম্পদ দান করিয়াছেন। কিন্তু তিনি ঈমান দান করিয়াছেন কেবল যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন। অতএব যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয়ে কৃপণ, শক্রর বিরুদ্ধে জিহাদে ভীত এবং ইবাদতের মাধ্যমে রাত জাগরণে দুর্বল, সে যেন বেশি পাঠ করেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদু লিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার” [আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই । তিনি মহাপবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ মহান] [আবু দাউদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ
১৩৬. অনুচ্ছেদঃ মনের ঐশ্বর্য।
২৭৬
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য থাকলেই মানুষ ধনী হয় না। মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৭
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি দশটি বছর যাবত নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমত করেছি। কখনো তিনি আমাকে [বিরক্তিসূচক] উফ শব্দটিও বলেননি। তিনি আমাকে কোন কিছু করিতে বললে, [যদিও আমি তা করেছি,] কখনো বলেননিঃ তুমি এটা করলে না কেন বা যা করেছি তার জন্যও বলেননি যে, তুমি তা করলে কেন [বোখারী, মুসলিম]?
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭৮
আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাহাঁর কাছে যে-ই আসতো, তিনি তাকে প্রতিশ্রুতি দিতেন। তাহাঁর কাছে দেয়ার মত কিছু থাকলে তিনি অবশ্যই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিতেন। নামাযের ইকামত হয়ে গেলে এক বেদুইন এসে তাহাঁর পরিধেয় বস্ত্র চেপে, ধরে বললো, আমার সামান্য একটু প্রয়োজন আছে এবং আমার আশঙ্কা হয় যে, পাছে আমি তা ভুলে না যাই। তখন তিনি তার সাথে গেলেন এবং তার প্রয়োজন সেরে দিয়ে নামাযে মনোনিবেশ
করিলেন [বোখারী, মুসলিম]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৭৯
জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো “না” বলেননি [মুসলিম, দার, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮০
আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি আয়েশা [রাঃআঃ] ও আসমা [রাঃআঃ]-এর চাইতে অধিক দানশীলা আর কোন দুই মহিলাকে দেখিনি। তাহাদের দু’জনের দানের বৈশিষ্ট্য ছিল দুই রকম। আয়েশা [রাঃআঃ] একটু একটু করে সঞ্চয় করিতেন। সঞ্চিত বস্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হলে তিনি তা বণ্টন করে দিতেন। আর আসমা [রাঃআঃ] আগামী দিনের জন্য কিছু তুলে রাখতেন না [সাথে সাথে দান করে দিতেন]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৭. অনুচ্ছেদঃ মনের সংকীর্ণতা।
২৮১
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় [জিহাদের] ধুলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোন বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হইতে পারে না। অনুরূপভাবে মনের সংকীর্ণতা ও ঈমানও কোন বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হইতে পারে না [নাসায়ী, ইবনি মাজাহ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮২
আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দুইটি কুঅভ্যাস কোন মুমিন বান্দার মধ্যে একত্র হইতে পারে নাঃ কার্পণ্য এবং অসৎ চরিত্র [তিরমিজী]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৮৩
আবদুল্লাহ ইবনি রবীয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমরা আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। লোকজন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করলো। তারা তার চরিত্র সম্পর্কেও উল্লেখ করলো। আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেন, তোমরা যদি তার মাথা কেটে ফেলো, তবে কি তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, তার হাত কেটে ফেললে? তারা বলেন, না। তার পা কাটলে? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, তোমরা যদি কোন লোকের বাহ্যিক অবয়ব পরিবর্তন করিতে অক্ষম হও, তাহলে তার আভ্যন্তরীণ অবয়ব কি করে পরিবর্তন করিবে! বীর্য স্ব-অবস্থায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত জরায়ুতে অবস্থান করে। তারপর তা রক্তে পরিণত হয়, অতঃপর জমাট রক্তে, অতঃপর মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান, যিনি তার জীবিকা, চরিত্র এবং সে হতভাগা না ভাগ্যবান হইবে তা লিপিবদ্ধ করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৩৮. অনুচ্ছেদঃ লোকজন প্রজ্ঞা অর্জন করিতে পারলে উত্তম চরিত্রে ভূষিত হয়।
২৮৪
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্রের সাহায্যে কোন ব্যক্তি রাত জেগে ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করিতে পারে [আবু দাউদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৫
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি আবুল কাসিম [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যকার উত্তম চরিত্রের লোক প্রজ্ঞা অর্জন করিতে পারলে ইসলামের মানদণ্ডে সে তোমাদের সকলের চেয়ে উত্তম [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৬
সাবিত ইবনি উবাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি মজলিসে গাম্ভীর্য অবলম্বনকারী এবং নিজ বাড়িতে খোশমেজাজী লোক যায়েদ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] ব্যতীত আর কাউকে দেখিনি [ইসা বাযযার]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮৭
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন দ্বীন [ধর্মিত] মহামহিম আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলেনঃ সহজ সরল দ্বীন [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
২৮৮
আবদুল্লাহ ইবনি আমরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
চারটি গুণ যদি তোমাকে দান করা হয় তবে পার্থিব অন্য কিছু না পেলেও তোমার কোন ক্ষতি নেই। [১] উত্তম স্বভাব-চরিত্র, [২] উত্তম ও পরিচ্ছন্ন [হালাল] রিযিক, [৩] সত্য ভাষণ এবং [৪] আমানত সংরক্ষণ [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ
২৮৯
আবু হুরাইরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, কোন জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? সাহাবীগণ বলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি
বলেনঃ দুইটি ছিদ্র [১] লজ্জাস্থান ও [২] মুখ। অপরদিকে কোন জিনিসের বদৌলতে অধিক লোক বেহেশতে যাবে? আল্লাহর ভয় ও উত্তম স্বভাবের কারণে [আহমাদ, ইবনি মাজাহ, তিরমিজী]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৯০
উম্মু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক রাতে আবু দারদা [রাঃআঃ] নামায পড়তে দাড়ালেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলিতে থাকলেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমার দৈহিক গঠন সুন্দর করেছো, আমার স্বভাব-চরিত্রও সুন্দর করে দাও”। এই অবস্থায় তিনি ভোরে উপনীত হলেন। আমি বললাম, হে আবু দারদা! কাল সারা রাত ধরে আপনার দোয়া ছিলো সুন্দর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে। তিনি বলেন, হে উম্মু দারদা! মুসলিম বান্দা তার স্বভাব-চরিত্র সুন্দর করিতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সুন্দর স্বভাব-চরিত্র তাকে বেহেশতে প্রবেশ করায়। আবার সে তার স্বভাব-চরিত্র খারাপ করিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তা তাকে দোযখে প্রবেশ করায়। মুমিন বান্দাকে তার ঘুমন্ত অবস্থায় ক্ষমা করা হয়। আমি বললাম, হে আবু দারদা! ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে ক্ষমা করা হয় কিভাবে? তিনি বলেন, তার অপর ভাই শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে মহামহিম আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। সে তার অপর ভাইয়ের জন্যও দোয়া করে, আল্লাহ তার সেই দোয়াও কবুল করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৯১
উসামা ইবনি শরীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন বিভিন্ন স্থান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেদুইন আসলো। লোকজন নির্বাক ছিলো। কেবল বেদুইনরাই কথা বলছিলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! অমুক অমুক ব্যাপারে আমাদের কোন দোষ হইবে কি? তারা এমন কিছু মানাবীয় বিষয় জিজ্ঞেস করে যাতে দোষের কিছু ছিলো না। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ পাপকে রহিত করিয়াছেন। পাপ তো এমন লোকের হইতে পারে যে নিজের জন্য অত্যাচার-নির্যাতনকে অবধারিত করে নিয়েছে। এতে তার পাপ হয় এবং সে ধ্বংস হয়”। তারা বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা ঔষধপত্র ব্যবহার করবো কি? তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ঔষধ ব্যবহার করো। কেননা মহামহিম আল্লাহ এমন কোন রোগ রাখেননি, যার প্রতিষেধক রাখেননি, একটি রোগ ছাড়া। তারা বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি বলেনঃ বাৰ্ধক্য। তারা বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! মানুষকে প্রদত্ত সর্বোত্তম জিনিস কি? তিনি বলেনঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র [তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আবু দাউদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯২
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিলেন জনগণের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল। তাহাঁর এই দানশীলতা উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছতো রমযান মাসে। জিবরাঈল [আবু দাউদ] যখন তাহাঁর সাথে মিলিত হইতেন তখন তাহাঁর দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো। জিবরাঈল [আবু দাউদ] রমযানের প্রতি রাতে তাহাঁর সাথে মিলিত হইতেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁকে কুরআন পড়ে শুনাতেন। জিবরাঈল [আবু দাউদ] যখন তাহাঁর সাথে মিলিত হইতেন, তখন তাহাঁর দানশীলতার গতি বেগবান বাতাসের চেয়েও অধিক বেগবান হতো [বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৩
আবু মাসউদ আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী কালের এক ব্যক্তির আমলের হিসাব নেয়া হলো। কিন্তু তার আমলনামায় কল্যাণকর কিছুই পাওয়া গেলো না। তবে লোকটির জনগণের সাথে সংস্রব ছিল এবং সে ছিল সচ্ছল। সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিতো যে, তারা অভাবী দেনাদারকে যেন সময় দেয়। তখন মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমিই তার চাইতে এই গুণের বেশি যোগ্য। অতএব তোমরা [ফেরেশতাগণ] তাকে এড়িয়ে যাও [মুসলিম, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৪
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কিসের বদৌলতে অধিক সংখ্যক লোক বেহেশতে যাবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর ভয় এবং উত্তম স্বভাব-চরিত্র। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, কিসের কারণে বহু লোক দোযখে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি ছিদ্র, মুখ ও লজ্জাস্থান [তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, হাকিম, ইবনি হিব্বান]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৯৫
নাওয়াস ইবনি সামআন আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ পুণ্য হচ্ছে উত্তম স্বভাব-চরিত্র এবং পাপ হচ্ছে যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং লোকজন তা অবগত হোক তা তুমি পছন্দ করো না [মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ, দারিমি, হাকিম, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩৯. অনুচ্ছেদঃ কৃপণতা।
২৯৬
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে বনু সালামা! তোমাদের নেতা কে? আমরা বললাম, জুদ্দ ইবনি কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি। তিনি বলেনঃ কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কি হইতে পারে? বরং তোমাদের নেতা হলো আমর ইবনুল জামূহ। জাহিলী যুগে আমর ছিলেন তাহাদের পুরোহিত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিবাহ করলে তিনি তাহাঁর পক্ষ থেকে বিবাহ ভোজের আয়োজন করেন [আবু দাউদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৭
মুগীরা [রাঃআঃ]-র সচিব ওয়াররাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
মুআবিয়া [রাঃআঃ] মুগীরা [রাঃআঃ]-কে লিখে পাঠান, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যে হাদিস তুমি শুনেছো তা আমাকে লিখে পাঠাও। মুগীরা [রাঃআঃ] লিখেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গুজব ছড়াতে, সম্পদ ধ্বংস করিতে, অধিক যাঞ্চা করিতে, অপরের প্রাপ্য অধিকার বাধাগ্রস্ত করিতে, মাতাহাদের অবাধ্যাচারী হইতে এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করিতে নিষেধ করিয়াছেন [বোখারী, মুসলিম, দারিমি]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯৮
জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু প্রার্থনা করা হলে তিনি কখনো ‘না’ বলেননি [বোখারী, মুসলিম, দারিমি, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪০. অনুচ্ছেদঃ উত্তম মাল উত্তম লোকের জন্য।
২৯৯
আমর ইবনুল আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] লোক মারফত আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন পোশাকে ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাহাঁর নিকট উপস্থিত হই। অতএব আমি তাই করলাম। আমি যখন তাহাঁর নিকট এসে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি উযু করছিলেন। তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে গভীরভাবে দেখলেন, তারপর দৃষ্টি অবনত করে বলেনঃ হে আমর! আমি তোমাকে একটি বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করে পাঠাতে চাচ্ছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে গনীমতের অধিকারী করেন। আমি তোমার জন্য উৎকৃষ্ট মাল কামনা করি। আমি বললাম, আমি সম্পদের লোভে ইসলাম গ্রহণ করিনি। আমি ইসলামের আকর্ষণে মুসলমান হয়েছি, যাতে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে থাকতে পারি। তিনি বলেনঃ হে আমর! হাকিম, উত্তম লোকের জন্যই উত্তম সম্পদ [মুসতাদরাক আল হাকিম, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিরাপদে রাত কাটালো।
৩০০
উবায়দুল্লাহ ইবনি মিহসান আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি নিরাপদে ও সুস্থ দেহে রাত কাটালো এবং তার নিকট সে দিনের খাবারও মজুদ আছে, তাকে যেন গোটা দুনিয়াই দান করা হলো [তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, ইবনি হিব্বান]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪২. অনুচ্ছেদঃ উৎফুল্ল মন।
৩০১
মুআয ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হাবীব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের কাছে বের হয়ে এলেন, তাহাঁর দেহে ছিল গোসলের আলামত এবং তিনি ছিলেন আনন্দচিত্ত। আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার কোন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করিয়াছেন। আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে প্রসন্ন হৃদয় দেখছি। তিনি বলেনঃ হাঁ, আলহামদু লিল্লাহ। তারপর প্রাচুর্যের প্রসঙ্গ এলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্য ক্ষতিকর নয়। আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্য অধিক উপকারী। মনের প্রসন্নতাও নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত।-[ইবনি মাজাহ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২
নাওয়াস ইবনি সামআন আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেনঃ পুণ্য হলো উত্তম স্বভাব-চরিত্র এবং পাপ হলো যা তোমার অন্তরে দ্বিধার সৃষ্টি করে এবং সেটা লোকে জানুক তা তুমি পছন্দ করো না [মুসলিম, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, সর্বাধিক দানশীল এবং সর্বাধিক সাহসী বীর পুরুষ। এক রাতে মদীনাবাসীরা [এক বিকট শব্দে] ভীত-সন্ত্রস্ত হলো। লোকজন শব্দের অনুসরণ করে অগ্রসর হলো। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের সামনে পড়লেন। তিনি তাহাদের পূর্বেই শব্দের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ তোমরা ভীত হয়ে না। তোমরা ভয় পেও না। তিনি নিজ ঘাড়ে তরবারি ঝুলানো অবস্থায় আবু তালহার জিনপোষবিহীন ঘোড়ায় সওয়ার ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমি একে সমুদ্ৰবত পেয়েছি অথবা এটি তো একটি সমুদ্র [বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৪
জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাত স্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাত এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত [তিরমিজী]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪৩. অনুচ্ছেদঃ দুস্থজনকে সাহায্য করা অপরিহার্য।
৩০৫
আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ আল্লাহর উপর ঈমান এবং তার পথে জিহাদ। প্রশ্নকারী বললো, কোন গোলাম আযাদ করা সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ যা অধিক মূল্যবান এবং যে নিজ মনিবের প্রিয়তম। প্রশ্নকারী বললো, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি তার কতক করিতে না পারি? তিনি বলেনঃ দুস্থজনকে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞের কাজ সেরে দাও প্রশ্নকারী বললো, যদি আমি তাতে অপারগ হই? তিনি বলেনঃ তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ রাখো। কেননা তাও সদাকাস্বরূপ যা তোমার পক্ষ থেকে তুমি করিতে পারো [বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, দারিমি, আহমাদ, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৬
সাঈদ ইবনি আবু বুরদা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ প্রত্যেক মুসলমানকেই দান-খয়রাত করিতে হইবে। রাবী বলেন, যদি তার সেই সামর্থ্য না থাকে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে শ্রম নিয়োগ করে নিজেও উপকৃত হইবে এবং দান-খয়রাতও করিবে। রাবী বলেন, আপনি কি মনে করেন, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তা না করিতে পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে যেন কোন দুঃস্থজনকে সাহায্য করে। রাবী বলেন, আপনার কি মত, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তা করিতে না পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ করিবে। রাবী বলেন, আপনার কি মত, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তাও করিতে না পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা থেকে বিরত থাকিবে। কেননা তাও তার জন্য সদাকাস্বরূপ [বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি চরিত্রবান হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।
৩০৭
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পর্যাপ্ত পরিমাণে দোয়া করিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য, পুত-পবিত্র চরিত্র, আমানতদারি এবং তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারার সামর্থ্য প্রার্থনা করছি [বাযযার]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৮
ইয়াযীদ ইবনি ইয়াবানূস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমরা আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে মুমিন জননী! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য কি ছিল? তিনি বলেন, কুরআনই ছিল তার চরিত্র। আপনার সূরা মুমিনূন পড়ে থাকেন। তিনি বলেন, পড়ুনঃ “কাদ আফলাহাল মুমিনূন”। ইয়াযীদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি পড়লাম, “কাদ আফলাহাল মুমিনুন…. লিফুরূজিহিম হাফিযুন” পর্যন্ত [১-৫]। তিনি বলেন, এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর চরিত্র বৈশিষ্ট্য [নাসায়ী, হাকিম]।
স্বভাব চরিত্র -হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply