স্বপ্ন নিয়ে হাদিস । মুওয়াত্তা ইমাম মালিক

স্বপ্ন নিয়ে হাদিস । মুওয়াত্তা ইমাম মালিক

স্বপ্ন নিয়ে হাদিস । মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, এই অধ্যায়ে হাদীস =৭ টি ( ১৭৮০-১৭৮৬ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৫২ঃ স্বপ্ন সম্পর্কিত

পরিচ্ছেদ ১: স্বপ্ন প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ২: শতরঞ্জ [দাবা] খেলা প্রসঙ্গে

পরিচ্ছেদ ১: স্বপ্ন প্রসঙ্গ

১৭২৩ আনাস ইব্নু মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, নেককার মানুষের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ সমতুল্য।

{১} [সহীহ, বুখারি ৬৯৮৩]আবু হুরায়রা [রাদি.] রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে অনুরূপ [হাদীস] করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} যেকোন ব্যক্তির স্বপ্ন যে ঠিক হইবে, এমন কথা বলা যায় না। তবে নেককার মানুষের ভাল স্বপ্ন সাধারণত ঠিক হয় অর্থাৎ যা দেখে তাই হয়। অত্র হাদীসে অনুরূপ স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে যে, যদি স্বপ্ন ভাল হয় এবং নেককার মানুষের হয় আর উহার তাবীর মুতাবিক ফলাফলও সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে সেই স্বপ্নের মর্যাদা এত অধিক যে, উহা নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ সমতুল্য। কিন্তু নবুয়তকে ভাগ করা যায় না। তাই এখানে নবুয়তের সময়কে ভাগ করিতে হইবে। অতএব নবুয়তের মোট সময় ছিল তেইশ বৎসর। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বের ছয় মাস পর্যন্ত সত্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। সুতরাং এই ছয় মাসকে এক ভাগ ধরলে মোট তেইশ বৎসরের ছেচল্লিশ ভাগ হয়। তাই অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, নেককার মানুষের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগের সমান।স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭২৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফজরের নামাজ শেষে [উপস্থিত সাহাবীগণকে] জিজ্ঞেস করিতেন, তোমাদের কেউ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর বলিতেন যে, আমার পরে ভাল [সত্য] স্বপ্ন ব্যতীত নবুয়তের কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না [অর্থাৎ ভাল স্বপ্নও নবুয়তের একটি অংশ]।

[সহীহ, আবু দাঊদ ৫০১৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবু দাঊদ}]স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭২৫ আতা ইব্নু ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আমার পরে মুবাশ্শাত [সুসংবাদসমূহ] ব্যতীত নবুয়তের কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! মুবাশ্শাত কি? রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, এমন ভাল ও শুভ স্বপ্ন যা কোন নেককার মানুষে দেখে কিংবা অপর কেউ তাঁর [উক্ত নেককার] সম্বন্ধে দেখে। ইহা নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।

[সহীহ, বুখারি ৬৯৯০, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭২৬ আবু কাতাদা ইব্নু রিবযী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হইতে হয় এবং দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হইতে হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে তা হলে সে যেন জাগ্রত হইতে বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং উহার অমঙ্গল হইতে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে আল্লাহ্ চাহেন তো উহা আর তার কোন অনিষ্ট করিতে পারবে না। আবু সালমা বলেন, আগে আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম, যা আমার উপর পাহাড়ের চাইতেও অধিক বোঝা হত। কিন্তু যখন হইতে এই হাদীস শ্রবণ করেছি, আমি আর সেই দিকে ভ্রুক্ষেপও করিনি।

[বুখারি ৫৭৪৭, মুসলিম ২২৬১]স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭২৭ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়া ইব্নু যুবাইর [রহঃ] এই আয়াত সম্বন্ধে لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ [তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ রয়েছে] বলেন যে, এর অর্থ হল ঐ সমস্ত ভাল স্বপ্ন, যা নেককার মানুষে দেখে কিংবা অপর কেউ তার সম্বন্ধে দেখে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ২: শতরঞ্জ [দাবা] খেলা প্রসঙ্গে

১৭২৮ আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে ব্যক্তি দাবা খেলা খেললো, সে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্‌র রাসূলের নাফরমানী করিল [অবাধ্য হল]। {১} [হাসান, আবু দাঊদ ৪৯৩৮, ইবনি মাজাহ ৩৭৬২, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন {সহীহ আল জামে ৬৫২৯}]

নবী করীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত; তাঁর বাড়ির একটি ঘরে কিছুসংখ্যক লোক বাস করত। তিনি শুনেছেন যে, উহাদের নিকট শতরঞ্জ রয়েছে। অতঃপর তিনি তাদের নিকট বলে পাঠালেন, তোমরা উহা [শতরঞ্জ] দূর কর। অন্যথায় আমি তোমাদেরকে আমার ঘর হইতে বাহির করে দিব। তিনি উহাকে অত্যন্ত খারাপ মনে করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} শতরঞ্জ বলিতে শুধু ছক্কা খেলাকেই বোঝায় না, বরং আমাদের দেশে প্রচলিত দাবা খেলা, তাস খেলা, বাঘ-গুটি খেলা ইত্যাদি সমস্তই এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত খেলার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শত্র“তাও পয়দা হয়। এতে মত্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যায়, নামাজ কাযা হয়ে যায় এবং আরও নানা রকমের পাপাচারে লিপ্ত হয়। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি শতরঞ্জ খেলেছে সে নিজের হস্তকে শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করেছে। এই জন্য আলেমগণ একে হারাম বলেছেন। ঈমাম আবু হানীফা [রাহিমাহুল্লাহ], ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] ও আহমাদ ইবনি হাম্বল [রাহিমাহুল্লাহ] এই জাতীয় খেলাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন। ঈমাম শাফিয়ী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যদি এই খেলার কারণে আল্লাহর কোন ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিংবা ইহা অভ্যাসে পরিণত হয়, তা হলে ইহা হারাম, অন্যথায় করূহ তান্যীহ।স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭২৯ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] তাঁর পরিবারের কাউকেও শতরঞ্জ খেলতে দেখলে তাকে মারতেন এবং শতরঞ্জ ভেঙ্গে ফেলতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহ্ইয়া [রহঃ] বলেন, আমি মালিক [রহঃ] হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, শতরঞ্জ খেলা ভাল নয়। তিনি উহাকে মাকরূহ মনে করিতেন। আমি [ঈমাম] মালিক [রহঃ]-এর কাছে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেন যে, শতরঞ্জ খেলা, অপরাপর সকল অনর্থ এবং উদ্দেশ্যহীন খেলা মকরূহ। অতঃপর এই আয়াত তিলাওয়াত করিতেন فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ [হক-এর পর পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নেই]।

স্বপ্ন নিয়ে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

Comments

One response to “স্বপ্ন নিয়ে হাদিস । মুওয়াত্তা ইমাম মালিক”

Leave a Reply