স্বপ্নের ব্যখ্যা
স্বপ্নের ব্যখ্যা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৯১, স্বপ্নের ব্যখ্যা, অধ্যায়ঃ (১-৪৮)=৪৮টি
৯১/১. অধ্যায় : রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ওয়াহীর শুরু হয় ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে ।
৯১/২. অধ্যায় : নেক্কার লোকদের স্বপ্ন ।
৯১/৩. অধ্যায় : রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর বাণী: ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় ।
৯১/৪. অধ্যায় : ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ ।
৯১/৫. অধ্যায় : সুসংবাদ বহনকারী বিষয়সমূহ
৯১/৬. অধ্যায়: ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন ।
৯১/৭. অধ্যায় : ইবরাহীম (আঃ)-এর স্বপ্ন
৯১/৮. অধ্যায় : একাধিক লোকের একই স্বপ্ন দেখা ।
৯১/৯. অধ্যায় : বন্দী, বিশৃঙ্খলাকারী ও মুশরিকদের স্বপ্ন ।
৯১/১০. অধ্যায় : যে লোক স্বপ্নে নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখে ।
৯১/১১. অধ্যায় : রাতের স্বপ্ন ।
৯১/১২. অধ্যায় : দিনে সপ্ন দেখা ।
৯১/১৩. অধ্যায় : নারীদের সপ্ন
৯১/১৪. অধ্যায় : খারাপ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে । কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাম দিকে থু থু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে ।
৯১/১৫. অধ্যায় : স্বপ্নে দুধ দেখা ।
৯১/১৬. অধ্যায় : যখন স্বপ্নে নিজের চারদিকে কিংবা নখে দুধ প্রবাহিত হইতে দেখে ।
৯১/১৭. অধ্যায়: স্বপ্নের মধ্যে জামা দেখা ।
৯১/১৮.অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে জামা হেঁচড়িয়ে চলতে দেখা ।
৯/১৯.অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে সবুজ রং ও সবুজ বাগান দেখা ।
৯১/২০. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর মহিলার নিকাব খুলে যাওয়া ।
৯১/২১. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর রেশমী কাপড় দেখা ।
৯১/২২. অধ্যায় : স্বপ্নে হইতে চাবি দেখা ।
৯১/২৩. অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে হাতল অথবা আংটায় ঝুলা ।
৯১/২৪. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর নিজের বালিশের নিচে তাঁবুর খুটিঁ দেখা ।
৯১/২৫. অধ্যায় : স্বপ্নে মোটা রেশমী কাপড় দেখা ও জান্নাতে প্রবেশ করিতে দেখা ।
৯১/২৬. অধ্যায় : স্বপ্নে বন্ধন দেখা ।
৯১/২৭. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর প্রবাহিত ঝর্ণা দেখা ।
৯১/২৮. অধ্যায় : স্বপ্নে কূপ থেকে এমনভাবে পানি তুলতে দেখা যে লোকদের পিপাসা মিটে যায় । নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ ব্যাপারে হাদীস আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন ।
৯১/২৯. অধ্যায় : স্বপ্নে দুর্বলতার সঙ্গে কূপ থেকে এক বা দুবালতি পানি তুলতে দেখা ।
৯১/৩০. অধ্যায় : স্বপ্নে বিশ্রাম করিতে দেখা ।
৯১/৩১. অধ্যায় : স্বপ্নে প্রাসাদ দেখা ।
৯১/৩২. অধ্যায় : স্বপ্নে ওযূ করিতে দেখা ।
৯১/৩৩. অধ্যায় : স্বপ্নে কাবা গৃহ তাওয়াফ করা ।
৯১/৩৪. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর নিজের বাকী পানীয় থেকে অন্যকে দেয়া ।
৯১/৩৫. অধ্যায় : স্বপ্নে নিরাপদ মনে করা ও ভীতি দূর হইতে দেখা ।
৯১/৩৬. অধ্যায় : স্বপ্নে ডান দিক গ্রহণ করিতে দেখা ।
৯১/৩৭. অধ্যায় : স্বপ্নে পেয়ালা দেখা ।
৯১/৩৮. অধ্যায় : স্বপ্নে কোন কিছু উড়তে দেখা ।
৯১/৩৯. অধ্যায় : স্বপ্নে গরু যবহ হইতে দেখা ।
৯১/৪০. অধ্যায় : স্বপ্নে ফুঁ দেয়া ।
৯১/৪১. অধ্যায় : কেউ স্বপ্নে দেখল যে, সে একদিক থেকে একটা জিনিস বের করে অন্য জায়গায় রেখেছে ।
৯১/৪২. অধ্যায় : স্বপ্নে কালো মহিলা দেখা ।
৯১/৪৩. অধ্যায় : স্বপ্নে এলোমেলো চুল ওয়ালা মহিলা দেখা ।
৯১/৪৪. অধ্যায় : স্বপ্নে নিজেকে তরবারী নাড়াচাড়া করিতে দেখা ।
৯১/৪৫. অধ্যায় : যে ব্যক্তি স্বীয় স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যা বলিল ।
৯১/৪৬. অধ্যায় : পছন্দনীয় নয় স্বপ্নে এমন কিছু দেখলে তা কারো কাছে না বলা এবং সে সম্পর্কে কোন আলোচনা না করা ।
৯১/৪৭. অধ্যায় : ভুল ব্যাখ্যাকারীর ব্যখ্যাকে প্রথমেই চূড়ান্ত বলে মনে না করা ।
৯১/৪৮. অধ্যায় : ফাজ্রের সলাতের পরে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়া
৯১/১. অধ্যায় : রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ওয়াহীর শুরু হয় ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে ।
৬৯৮২
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর ওয়াহীর শুরু হয় ঘুমের ঘোরে ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখিতেন তা ভোরের আলোর মত উদ্ভাসিত হতো। তিনি হেরা গুহায় গিয়ে সেখানে বেশ কয়েক রাত ইবাদাতে কাটিয়ে দিতেন এবং এজন্য খাদ্য দ্রব্যও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এরপর খাদীজাহ (রাদি.)-এর কাছে ফিরে আসতেন এবং তিনি তাকে এরূপ খাদ্য দ্রব্য তৈরি করে দিতেন। শেষে তাহাঁর কাছে সত্যের বাণী (ওয়াহী) আসল। আর এ সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন।
সেখানে ফেরেশতা এসে তাঁকে বলিল, আপনি পড়ুন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, আমি বললামঃ আমি তো পাঠক নই। তখন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এমনকি এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বলিলেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি পাঠক নই। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলিলেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পাঠক নই। এরপর তিনি তৃতীয়বার আমাকে শক্ত করে এমন চেপে ধরলেন যে, এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলিলেন, পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন……যা সে জানত না (সুরা আল-ইনশিরাহ ৯৪/১-৫) এ আয়াত পর্যন্ত।
এরপর তিনি তা নিয়ে খাদীজাহ (রাদি.)-এর কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন। আর বলিলেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। ফলে তাঁরা তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাহাঁর থেকে ভীতি দূর হয়ে গেল। এরপর তিনি বলিলেন, হে খাদীজাহ! আমার কী হল? এবং তাকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। আর বললেনঃ আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কাবোধ করছি। খাদীজাহ (রাদি.) তাকে বলিলেন, কক্ষনো না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা, আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্যকথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করেন এবং হকের পথে আগত যাবতীয় বিপদে সাহায্য করেন। অতপর খাদীজাহ (রাদি.) তাঁকে নিয়ে চললেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে ওরাকা ইবনু নাওফল ইবনু আসাদ ইবনু আবদুল উযযা ইবনু কুসাই-এর কাছে এলেন। আর তিনি, খাজীদাহ (রাদি.)-এর চাচার পুত্র (চাচাত ভাই) এবং তার পিতার পক্ষ থেকে চাচাও ছিলেন। তিনি জাহিলীয়াতের যুগে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী কিতাব লিখতেন। তাই সে ইন্জীল আরবীতে অনুবাদ করিতেন- যতখানি লেখা আল্লাহর মনযুর হত। তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ, দৃষ্টিশক্তিহীন লোক। খাদীজাহ (রাদি.) তাকে বলিলেন, হে আমার চাচাতো ভাই! তোমার ভাতিজার কথা শুন। তখন ওরাকা বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ?
নাবী সাঃআঃ যা কিছু দেখেছিলেন তা তাকে জানালেন। তখন ওরাকা বলিলেন, এতো আল্লাহর সেই নামুস (দূত) যাঁকে মূসা (আঃ)-এর কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। হায় আফসোস! যদি সেদিন আমি জীবিত থাকতাম যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন ঃ তারা কি আমাকে বের করে দেবে? ওরাকা বলিলেন, হ্যাঁ তুমি যা নিয়ে এসেছ, এমন বস্তু নিয়ে কোনদিনই কেউ আসেনি যার সঙ্গে শত্রুতা করা হয়নি। যদি তোমার জীবনকাল আমাকে পায়, তাহলে আমি সর্বতোভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই ওরাকার মৃত্যু হয়। আর কিছু দিনের জন্য ওয়াহীও বন্ধ থাকে। এমনকি নাবী সাঃআঃ এ অবস্থার কারণে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি পর্বতের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যাবার জন্য একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখনই নিজেকে ফেলে দেয়ার জন্য পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিব্রীল (আঃ) তাহাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলিতেন, হে মুহাম্মাদ! নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এতে তাহাঁর অস্থিরতা দূর হত এবং নিজ মনে শান্তিবোধ করিতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওয়াহী বন্ধ অবস্থা যখন তাহাঁর উপর দীর্ঘ হত তখনই তিনি ঐরূপ উদ্দেশে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিব্রীল (আঃ) তাহাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে আগের মত বলিতেন। [৩]
ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, فَالِقُ الإِصْبَاحِ অর্থ দিনের বেলায় সূর্যের আলো ও রাতের বেলায় চাঁদের আলো। (আঃপ্রঃ- ৬৪৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১১)
৯১/২. অধ্যায় : নেক্কার লোকদের স্বপ্ন ।
এবং আল্লাহর বাণী : আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে প্রকৃত সত্য স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন । আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্য অবশ্যই মাসজিদে হারামে প্রবেশ করিবে নিরাপদে, মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় ও চুল কেটে, ভয়ভীতিহীন হয়ে । আল্লাহ জানেন, যা তোমরা জান না । (সেই স্বপ্ন তো পূর্ণ হইবেই) তদুপরি তিনি দিলেন (হুদাইবিয়ার, চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে) তাৎক্ষণিক বিজয় । (সুরা আল-ফাতহ ৪৮/২৭)
৬৯৮৩
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ নেক্কার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। [১৪৫](আঃপ্রঃ- ,৬৪৯৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১২)
[১৪৫] নাবী ভিন্ন সাধারণ মানুষের কাছে ওহী আসে না, কিন্তু নেককার মানুষকে ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দেন যা আল্লাহ জানাতে চান । এটা নবুওতের ক্ষুদ্র একটা অংশ ।
৯১/৩. অধ্যায় : রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর বাণী: ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় ।
৬৯৮৪
আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।(আঃপ্রঃ- ৬৫০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৩)
৬৯৮৫
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এ জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে এবং অন্যের কাছে তা বর্ণনা করে। আর যদি এর বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়। আর কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিবে না। (আঃপ্রঃ- ৬৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৪)
৯১/৪. অধ্যায় : ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ ।
৬৯৮৬
আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে তখন যেন তার থেকে আশ্রয় চায় এবং বাম দিকে থু থু ফেলে। তাহলে স্বপ্ন আর তার কোন ক্ষতি করিবে না। [৩২৭২]
আবু আবদুল্লাহ (ইয়াহইয়া ইবনু আবু কাসীর)…..ক্বাতাদাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে একই রূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৫০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৫)
৬৯৮৭
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
সাবিত, হুমায়দ, ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ও শুআয়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে একই রূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [মুসলিম পর্ব ৪২/হাদীস ২২৬৪, আহমাদ ১২০৩৭] (আঃপ্রঃ- ৬৫০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৬)
৬৯৮৮
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। [৭০১৭; মুসলিম পর্ব ৪২/হাদীস ২২৬৩, আহমাদ ৭১৮৬] (আঃপ্রঃ- ৬৫০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৭)
৬৯৮৯
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (আঃপ্রঃ- ৬৫০৫ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৮)
৯১/৫. অধ্যায় : সুসংবাদ বহনকারী বিষয়সমূহ
৬৯৯০
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি। সু-সংবাদ বহনকারী বিষয়াদি ব্যতীত নবুয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, সু-সংবাদ বহনকারী বিষয়াদি কী? তিনি বলিলেন, ভাল স্বপ্ন। [১৪৬](আঃপ্রঃ- ৬৫০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৯)
[১৪৬] মুত্তাকী মুমিনদের অনেক স্বপ্ন সত্য হলেও তার উপর ভিত্তি করে কোন শারয়ী বিধান পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজন বৈধ নয় । সুতরাং কারো কোন বিষয়ে স্বপ্ন দেখা শারয়ী দলীল হিসাবে যেমন বিবেচিত হইবে না, তেমনি কোন কর্মের মূল উৎস স্বপ্ন হলেও তা ইসলামী বিধান হিসাবে বিবেচিত হইবে না । (ফাতহুল বারী)
৯১/৬. অধ্যায়: ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন ।
এবং আল্লাহর বাণী : স্মরণ কর, ইউসুফ যখন তার পিতাকে বলেছিল, হে আব্বাজান! আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারটি তারকা আর সূর্য ও চন্দ্র; দেখলাম তারা আমাকে সাজদাহ করছে । তার পিতা বলিলেন, হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না । যদি কর তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিবে । শাইত্বন তো মানুষের প্রকাশ্য দুশমন । (স্বপ্নে যেমন দেখেছ) এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন, তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন এবং তিনি তাহাঁর অনুগ্রহ তোমার প্রতি আর ইয়াকূব পরিবারের প্রতি পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি তা পূর্বে তোমার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই তোমার রব্ব সর্বজ্ঞ, বড়ই প্রজ্ঞাবান ।- (সুরা ইউসুফ ১২/৪-৬) । এবং আল্লাহর বাণী : সে তার পিতামাতাকে সিংহাসনে উঠিয়ে নিল আর সকলে তার সম্মানে সাজদাহয় ঝুঁকে পড়ল । ইউসুফ বলিল, হে পিতা! এ-ই হচ্ছে আমার সে আগের দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা । আমার রব্ব একে সত্যে পরিণত করিয়াছেন, তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন যে, তিনি আমাকে কয়েদখানা থেকে বের করে এনেছেন । আর শাইত্বন আমার আর আমার ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পরও তিনি আপানাদেরকে মরু অঞ্চল থেকে এখানে (মিশরে) এনে দিয়েছেন । আমার রব্ব যা করিতে ইচ্ছে করেন তা সূক্ষ্ম উপায়ে বাস্তবায়িত করে থাকেন, তিনি বড়ই বিজ্ঞ, বড়ই প্রজ্ঞাময় । হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্ব দান করেছ, আর আমাকে বিভিন্ন কথার ব্যাখ্যা বিদ্যা শিখিয়েছ । আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা! তুমিই দুনিয়া আর আখিরাতে আমার অভিভাবক, তুমি মুসলিম অবস্থায় আমার মৃত্যু দান করো এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করো । – (সুরা ইউসুফ ১২/১০০-১০১) ।
আবু আবদুল্লাহ বলেন, (আরবী) সবগুলোর অর্থ একই । (আরবী) অর্থ পল্লী হইতে ।
৯১/৭. অধ্যায় : ইবরাহীম (আঃ)-এর স্বপ্ন
এবং আল্লাহর বাণী : “অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফিরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহীম বলিল, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলিল, হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন । দুজনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল । আর ইবরাহীম তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিল । তখন আমি তাকে ডাক দিলাম, হে ইবরাহীম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে । এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি ।” (সুরা আস্-সাফফাত ৩৭/১০২-১০৫)
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আস্লামা শব্দের অর্থ তাদেরকে যে বিষয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা তারা মেনে নিল । আর তাল্লাহু শব্দের অর্থ তার চেহারা মাটিতে রাখল ।
৯১/৮. অধ্যায় : একাধিক লোকের একই স্বপ্ন দেখা ।
৬৯৯১
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একদল লোককে শবে কাদর (রমাযানের) শেষ সাত রাতের মধ্যে রয়েছে বলে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আর কিছু সংখ্যক লোককে তা শেষ দশ রাতের মাঝে আছে দেখানো হয়েছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা শবে কাদর শেষ সাত রাতের মধ্যেই খোঁজ কর। (আঃপ্রঃ- ,৬৫০৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২০)
৯১/৯. অধ্যায় : বন্দী, বিশৃঙ্খলাকারী ও মুশরিকদের স্বপ্ন ।
আল্লাহ বলেনঃ তার সঙ্গে দুযুবকও কারাগারে প্রবেশ করেছিল । তাদের একজন বলিল, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি মদ তৈরি করছি । অন্যজন বলিল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি মাথায় রুটি বহন করছি আর পাখী তাত্থেকে খাচ্ছে । আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলে দাও, আমরা দেখছি তুমি একজন সৎকর্মশীল লোক । সে (ইউসুফ) বলিল, তোমাদেরকে যে খাবার দেয়া হয় তা আসার আগেই আমি তোমাদেরকে তার ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব । আমার প্রতিপালক আমাকে যে জ্ঞান দান করিয়াছেন এটা সেই জ্ঞানেরই অংশ । যে সম্প্রদায় আল্লাহতে বিশ্বাস করে না আর আখিরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের নিয়ম নীতি পরিত্যাগ করেছি । আমি আমার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের আদর্শের অনুসরণ করি । আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা আমার কাজ নয় । এটা আমাদের প্রতি ও মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ লোকই শোকর করে না । হে আমার জেলের সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপালক ভালো, না মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যার ইবাদাত করছ তা কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যে নামগুলো তোমরা আর তোমাদের পিতৃ পুরুষরা রেখেছ । এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি । আল্লাহ ছাড়া কোন বিধান দাতা নেই । তিনি আদেশ করিয়াছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করিবে না, এটাই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না । হে আমার জেলের সঙ্গীদ্বয়! তোমাদের দুজনের একজন তার প্রভুকে মদ পান করাবে আর অন্যজনকে শূলে দেয়া হইবে, আর পাখী তার মস্তক ঠুকরে খাবে । তোমরা দুজন যে সম্পর্কে জানতে চেয়েছ তার ফায়সালা হয়ে গেছে । তাদের দুজনের মধ্যে যে জন মুক্তি পাবে বলে সে (ইউসুফ) মনে করিল তাকে বলিল, তোমার প্রভুর কাছে আমার সম্পর্কে বলিও । কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর কাছে ইউসুফের কথা উল্লেখ করিতে ভুলিয়ে দিল । ফলে ইউসুফ বেশ কয়েক বছর কারাগারে আটক থেকে গেল । রাজা বলিলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভী, সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী তাদেরকে খাচ্ছে । (আর দেখলাম) সাতটি সবুজ সতেজ শীষ আর অন্য সাতটি শুকনো । ওহে সভাষদগণ! আমার কাছে তোমরা আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কর যদি তোমরা ব্যাখ্যা করিতে পার । তারা বলিল, এতো অস্পষ্ট স্বপ্নের কথা, আর আমরা এ ধরনের স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই । দুজনের মধ্যে যে জন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিল আর দীর্ঘকাল পর যার স্মরণ হল সে বলিল, আমি তোমাদেরকে তার ব্যাখ্যা বলে দেব, তবে তোমরা আমাকে (জেলখানায় ইউসুফের কাছে) পাঠাও । সে বলিল, হে সত্যবাদী ইউসুফ! সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভী, যাদেরকে খাচ্ছে জীর্ণশীর্ণ সাতটি গাভী আর সাতটি সবুজ সতেজ শীষ আর অন্যগুলো শুকনো । (আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা জানিয়ে দাও) যাতে আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে পারি আর তারা জেনে নিতে পারে । সে (ইউসুফ) বলিল, সাত বছর তোমরা এক নাগাড়ে চাষ করিবে, অতঃপর যখন ফসল কাটবে তখন তোমরা যে সামান্য পরিমাণ খাবে তা বাদে শিষ সমেত সংরক্ষণ করিবে । এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর । এ সময়ের জন্য পূর্বে যা তোমরা সঞ্চয় করেছিলে তা লোকে খাবে, কেবল সেই অল্পটূকু বাদে যা তোমরা সঞ্চয় করিবে । এর পর আসবে একটা বছর যখন মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হইবে আর মানুষ প্রচুর ভোগবিলাস করিবে । রাজা বলিল, তোমরা তাকে (ইউসুফকে) আমার কাছে নিয়ে এসো । দূত যখন তার কাছে আসলো তখন ইউসুফ বলিল, তোমরা প্রভুর কাছে ফিরে যাও । (সুরা ইউসুফ ১২/৩৬-৫০)
(আরবী)-এর আসল রূপ (আরবী) শব্দ থেকে ইয়্তাকারা । (আরবী) অর্থ যুগ । (আরবী) ও পড়া যায়, অর্থ ভুলে যাওয়া । ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন (আরবী) আঙুর ও তেল নিংড়িয়ে রস বের করিবে । (আরবী) তোমরা সংরক্ষণ করিবে ।
৬৯৯২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ইউসুফ (আ:) যতদিন জেলে কাটিয়েছেন, যদি আমি ততদিন কাটাতাম, আর আমার কাছে (বাদশাহর) আহবানকারী আসত, সেক্ষেত্রে আমি অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দিতাম। [১৪৭](আঃপ্রঃ- ৬৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২১)
[১৪৭] রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যা বলেছেন, তাহাঁর সে কথা তাহাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয় ।
৯১/১০. অধ্যায় : যে লোক স্বপ্নে নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখে ।
৬৯৯৩
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি : যে লোক আমাকে স্বপ্নে দেখে সে শীঘ্রই জাগ্রত অবস্থাতেও আমাকে দেখবে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধরতে পারে না। [১১০; মুসলিম ৪২/১, হাদীস ২২৬৬, আহমাদ ৮৫১৬] (আঃপ্রঃ- ৬৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২২)
৬৯৯৪
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখল সে আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধরতে পারে না। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। [৬৯৮৩; মুসলিম পর্ব ৪২/হাদীস ২২৬৪, আহমাদ ১২০৩৭] (আঃপ্রঃ- ৬৫১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৩)
৬৯৯৫
আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ভালো স্বপ্ন আল্লাহর তরফ থেকে ও খারাপ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। কেউ এমন কিছু দেখল, যা সে অপছন্দ করে, সে যেন বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং শয়তান থেকে আশ্রয় চায়। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিবে না। আর শয়তান আমার আকৃতি ধরতে পারে না।(আঃপ্রঃ- ৬৫১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৪)
৬৯৯৬
আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে প্রকৃতই দেখে। ইউনুস ও ইবনু আখীয্ যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুবায়দীর অনুসরণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৫১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৫)
৬৯৯৭
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, যে আমাকে স্বপ্ন দেখে সে প্রকৃতই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধরতে পারে না।(আঃপ্রঃ- ৬৫১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৬)
৯১/১১. অধ্যায় : রাতের স্বপ্ন ।
সামুরাহ (রাদি.) এ সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন ।
৬৯৯৮
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ বিস্তারিত অর্থবহ বাক্য দান করা হয়েছে। এবং আমাকে ভীতি সঞ্চারক প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। এক রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সে সময় ভূপৃষ্ঠের সকল ভান্ডারের চাবি আমার কাছে এনে আমার হাতে রাখা হলো। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চলে গেছেন। আর তোমরা ঐ ভান্ডারগুলো সংগ্রহ করে চলেছ। [১৪৮] (আঃপ্রঃ- ৬৫১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৭)
[১৪৮] আল্লাহ তাআলা তাহাঁর শেষ নাবীকে অল্প কথায় বিস্তারিত অর্থবোধক কথা বলার যে শক্তি দিয়েছেন, কোন মানুষের পক্ষেই তা আয়ত্ত করা সম্ভব নয় । এক মাসের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা তাহাঁর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ত । নাবী (সাঃআঃ)র হাতে ভান্ডার সমূহের চাবি দেয়া হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে ওমর (রাদি.)র আমলেই অবস্থা এমন হয়েছিল যে যাকাত গ্রহণ করার লোক খুজেঁ পাওয়া যায়নি ।
৬৯৯৯
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এক রাতে আমাকে কাবার নিকট স্বপ্ন দেখানো হল। তখন আমি গৌর বর্ণের সুন্দর এক পুরুষকে দেখলাম। তার মাথায় খুবই সুন্দর লম্বা চুল ছিল, যেগুলো আঁচড়ে রাখা হয়েছে। চুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছিল। তিনি দুজনের ওপর অথবা বলেছেন,দুজনের কাধেঁর ওপর ভর করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিয়াছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হল : মাসীহ ইবনু মারইয়াম। এরপর আরেক লোকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটল। সে ছিল কোঁকড়ানো চুলওয়ালা, ডান চোখ কানা, চোখটি যেন (পানির ওপর) ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হল মাসীহ দাজ্জাল। (আঃপ্রঃ- ৬৫১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৮)
৭০০০
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, আমি রাতে স্বপ্ন দেখেছি। এরপর পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন। সুলায়মান ইবনু কাসীর, ইবনু আখীয যুহরী ও সুফিয়ান ইবনু হুসায়ন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী…..থেকে ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)এর অনুসরণ করিয়াছেন।
যুবায়দী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..ইবনু আব্বাস অথবা আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন শুআয়ব, ইসহাক ইবনু ইয়াহইয়া, আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিতেন। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রথম এ হাদীসের সনদ বর্ণনা করিতেন না। কিন্তু পরবর্তীতে করিতেন। (আঃপ্রঃ- ৬৫১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৯)
৯১/১২. অধ্যায় : দিনে সপ্ন দেখা ।
ইবনু আউন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, দিনের সপ্ন রাতের সপ্নের মত ।
৭০০১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রায়ই উম্মু হারাম বিনত মিলহান (রাদি.)-এর গৃহে যেতেন। আর সে ছিল উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.)-এর স্ত্রী। একদা তিনি তার কাছে এলেন। সে তাকে খানা খাওয়াল। তারপর তারঁ মাথার উঁকুন বাছতে শুরু করিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘুমিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর হেসে হেসে জেগে উঠলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৫১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩০)
৭০০২
উম্মু হারাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত সাগরের মধ্যে জাহাজের ওপর আরোহণ করে বাদশাহর সিংহাসনে অথবা বাদশাহদের মত তারা সিংহাসনে বসে আছে। ইসহাক রাবী সন্দেহ করিয়াছেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন,তিনি যেন আমাকে তাদের দলে অর্ন্তভুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার জন্য দুআ করিলেন। এরপর আবার তিনি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হেসে হেসে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, আপনি হাসলেন কেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত আমার একদল উম্মাতকে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। আগের মত এ দল সম্পর্কেও বলিলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে এ দলভুক্ত করে দেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দলের অন্তভূক্ত। উম্মু হারাম (রাদি.) মুআবীয়াহ ইবনু সুফ্ইয়ান (রাদি.)-এর আমলে সামুদ্রিক জাহাজে উঠেন এবং সমুদ্র থেকে পেরিয়ে আসার সময় আপন সাওয়ারী থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা যান।(আঃপ্রঃ- ৬৫১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩০)
৯১/১৩. অধ্যায় : নারীদের সপ্ন
৭০০৩
খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, উম্মুল আলা নামক এক আনসারী মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বাইআত গ্রহণ করেন। তিনি তাকেঁ জানান যে, আনসারগণ লটারির সাহায্যে মুহাজিরগণকে ভাগ করে নিয়েছিল। আমাদের ভাগে আসলেন উসমান ইবনু মাযউন (রাদি.)। আমরা তাকে আমাদের ঘরের মেহমান করে নিলাম। এরপর তিনি এমন এক ব্যথায় আক্রান্ত হলেন যে, সে ব্যথায় তার মৃত্যু হল। মৃত্যুর পর তাঁকে গোসল দেয়া হল। তাহাঁর কাপড় দিয়েই তাকেঁ কাফন পরানো হল। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এলেন। উম্মুল আলা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, তোমার ওপর আল্লাহর রহমত হোক, হে আবু সাইব! আমার সাক্ষ্য তোমার বেলায় এটাই যে আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করিয়াছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি কী করে জানলে যে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করিয়াছেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক! তাহলে কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তাহাঁর ব্যাপার তো হল, তার মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! তার জন্য আমি কল্যাণই আশা করি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসুল হওয়া সত্ত্বেও জানি না, আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হইবে? তখন উম্মুল আলা (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি আগামীতে কখনো কারো পবিত্র হওয়ার সাক্ষ্য দেব না। (আঃপ্রঃ- ৬৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩১)
৭০০৪
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এ হাদীসে বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি জানি না, তার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হইবে? উম্মুল আলা (রাদি.) বলিলেন, আমি এতে চিন্তিত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তখন আমি স্বপ্নে উসমান ইবনু মাযউন (রাদি.) এর জন্য প্রবহমান ঝর্ণা দেখিতে পেলাম। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে এ সম্পর্কে জানালাম। তিনি বললেনঃ এটা তার আমল। (আঃপ্রঃ- ৬৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩২)
৯১/১৪. অধ্যায় : খারাপ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে । কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাম দিকে থু থু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে ।
৭০০৫
আবু ক্বাতাদাহ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবী ও অশ্বারোহী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর তরফ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। যখন তোমাদের কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে অপছন্দনীয় মনে হয়, তখন সে যেন তার বামদিকে থু থু নিক্ষেপ করে এবং এ স্বপ্ন থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়। সেক্ষেত্রে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিবে না। (আঃপ্রঃ- ৬৫২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৩)
৯১/১৫. অধ্যায় : স্বপ্নে দুধ দেখা ।
৭০০৬
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার কাছে একটি দুধের পেয়ালা পেশ করা হল, আমি তা থেকে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করলাম। তৃপ্তির চিহ্ন আমার নখ দিয়ে প্রকাশ পেতে লাগল। অতঃপর বাকী অংশ অবশিষ্টাংশ উমারকে দিলাম। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর কী ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেনঃ ইল্ম।(আঃপ্রঃ- ৬৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৪)
৯১/১৬. অধ্যায় : যখন স্বপ্নে নিজের চারদিকে কিংবা নখে দুধ প্রবাহিত হইতে দেখে ।
৭০০৭
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। আমার কাছে দুধের একটি পেয়ালা হাজির করা হল। আমি পরিতৃপ্ত হয়ে তা থেকে পান করলাম। এমনকি তৃপ্তির চিহ্ন আমার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। অতঃপর বাকী অংশ উমার ইবনু খাত্তাবকে দিলাম। তাহাঁর পাশের লোকজন জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি এর কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ ইল্ম। [১৪৯] (আঃপ্রঃ- ৬৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৫)
[১৪৯] স্বপ্নের মধ্যে দুধ দেখলে তার কি ব্যাখ্যা করা হইবে-এ সম্পর্কে ইমাম মুহাল্লাব বলেন, দুধ ফিতরাত, সুন্নাত, কোরআন ও ইলমের প্রমাণ বহন করে । উল্লেখিত হাদীস হইতে আরও জানা যায়:
(১) বড়দের দেখা স্বপ্ন তাদের চেয়ে ছোটদের নিকট বর্ণনা করার বৈধতা ।
(২) আল্লাহ সম্পর্কে রাসুল (সাঃআঃ) এর জ্ঞানের যে পরিমাণ সে পর্যন্ত কেউ পৌছতে পারবে না । (ফাতহুল বারী)
স্বপ্ন মূলত তিন প্রকারঃ
১. ভাল ও সৎ স্বপ্ন : এ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ স্বরূপ এবং নবুওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ । [এ মর্মে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।
২. অপছন্দনীয় খারাপ স্বপ্নঃ এ স্বপ্ন শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে দেখানো হযে থাকে, যাতে এর দ্বারা আদম সন্তান চিন্তিত হয় এবং শয়তান তাকে নিয়ে ঘুমের মধ্যে খেলা করিতে পার ।
৩. জাগ্রত অবস্থায় যে বিষয়ে মানুষ নিজে নিজে কথা বলে অথবা চিন্তা করে সে বিষয়টি ঘুমের মধ্যে দেখা । এ তৃতীয় প্রকারের স্বপ্নের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বপ্ন দেখবে তার জাগ্রত অবস্থায় অভ্যাসগুলো অর্ন্তভুক্ত হইবে । যেমন কোন ব্যক্তির অভ্যাস হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য খাওয়া কিন্ত সে সে সময়ে ঘুমিয়ে গিয়ে স্বপ্নে দেখে যে, সে খাচ্ছে, অথবা সে পানাহার না করে ঘুমিয়ে গিয়ে স্বপ্নে দেখে যে বমি করছে ।
[উল্লেখ্য কোন ব্যক্তি মন্দ বা অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে, সে সে স্বপ্ন দেখার সময় যেদিকে কাত হয়ে শুয়ে ছিল সেদিক পরিবর্তন করে অন্য দিকে কাত হয়ে শুবে, তিনবার আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রজীম পাঠ করিবে, বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে । এতেও স্বাভাবিকতা ফিরে না আসলে বিছানা ছেড়ে উঠে অযু করে দুরাকআত নফল সলাত আদায় করিবে । এ ধরনের স্বপ্ন কাউকে জানাবে না । আর কোন খুশির স্বপ্ন দেখলে তা শুধুমাত্র সে ব্যক্তিকেই জানাবে যে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম ।]
৯১/১৭. অধ্যায়: স্বপ্নের মধ্যে জামা দেখা ।
৭০০৮
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়েছিলাম। একদল লোককে স্বপ্নে দেখলাম, তাদেরকে আমার কাছে আনা হচ্ছে। তাদের গায়ে ছিল জামা। কারো কারো জামা স্তন পর্যন্ত, আর কারো কারো তার নিচ পর্যন্ত।উমর ইবনু খাত্তাব আমার নিকট দিয়ে গেল। তার গায়ের জামা মাটিতে হেঁচড়ে চলছিল। সহাবাগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কী ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেনঃ দ্বীন। (আঃপ্রঃ- ৬৬২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৬)
৯১/১৮.অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে জামা হেঁচড়িয়ে চলতে দেখা ।
৭০০৯
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেনঃ আমি একসময় ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি দেখলাম, আমার কাছে একদল লোককে আনা হল, তাদের গায়ে ছিল জামা। কারো কারো জামা স্তন পযন্ত। আর কারো কারো এর নিচ পর্যন্ত। আর উমার ইবনু খাত্তাবকে এমন অবস্থায় আমার কাছে আনা হল যে, সে তার গায়ের জামা হেঁচড়িয়ে চলছিল। সাহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর কী ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেনঃ দ্বীন।(আঃপ্রঃ- ৬৫২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৭)
৯/১৯.অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে সবুজ রং ও সবুজ বাগান দেখা ।
৭০১০
কায়স ইবনু উবায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এক মজলিসে ছিলাম। যেখানে সাদ ইবনু মালিক (রাদি.) এবং ইবনু উমার (রাদি.)-ও ছিলেন। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকেরা বলিল, ঐ লোকটি জান্নাতবাসীদের একজন। আমি তাঁকে বললাম,লোকেরা এমন এমন বলছে। তিনি বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! তাদের জন্য উচিত নয় মতামত ব্যক্ত করা, যে বিষয় সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম, যেন একটা স্তম্ভ একটি সবুজ বাগানে রাখা হয়েছে এবং সেটা যেখানে রাখা হয়েছে তার উপর ভাগে একটি রশি ছিল। আর নিচের দিকে ছিল একজন খাদিম। মিনসাফ অর্থ খাদিম। বলা হল, এ স্তম্ভ বেয়ে উপরে উঠ। আমি উপরের দিকে উঠে রশিটি ধরে ফেললাম। এরপর এ স্বপ্ন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেনঃ আবদুল্লাহ মযবূত রশি ধরা অবস্থায় মারা যাবে। (আঃপ্রঃ- ৬৫২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৮)
৯১/২০. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর মহিলার নিকাব খুলে যাওয়া ।
৭০১১
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাকে আমায় দুবার স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, এক ব্যক্তি তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বয়ে নিয়ে আসছে আর বলছে ইনি আপনার স্ত্রী। আমি তার নিকাব উম্মোচন করে দেখিতে পাই যে ঐ মহিলাটি তুমিই এবং আমি বলেছি, যদি এটা আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তা হলে তিনি তা সত্যে পরিণত করবেন। (আঃপ্রঃ- ৬৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৯)
৯১/২১. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর রেশমী কাপড় দেখা ।
৭০১২
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাকে (আয়েশাহকে) বিয়ে করার আগে দুবার আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখেছি, একজন ফেরেশ্তা তোমাকে রেশমী এক টুক্রা কাপড়ে জড়িয়ে বয়ে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি নিকাব সরিয়ে দিন। যখন সে নিকার সরিয়ে দিল তখন আমি দেখিতে পেলাম যে, সেই মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম, এটা যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা সত্যে পরিণত করবেন। এরপর আবার আমাকে দেখানো হল যে, ফেরেশতা তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি (তার নিকাব) সরিয়ে দিন। সে তা সরিয়ে দিলে আমি দেখিতে পাই যে, সেই মহিলা তুমিই। তখন আমি বললাম : এটা যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি সত্যে পরিণত করবেন। (আঃপ্রঃ- ৬৫২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪০)
৯১/২২. অধ্যায় : স্বপ্নে হইতে চাবি দেখা ।
৭০১৩
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ বিস্তারিত অর্থবহ বাণী দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং ভীতি সঞ্চারকারী প্রভাব দিয়ে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। আমার কাছে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহের চাবি পেশ করে আমার সামনে দেয়া হল। (আবু আবদুল্লাহ) মুহাম্মাদ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, সংক্ষিপ্ত অথচ বিশদ অর্থবহ বাণী-এর অর্থ হল, আল্লাহর অনেক বিষয় যা আগের কিতাবসমূহে লেখা হত একটি অথবা দুটি বিষয়ে বিন্যস্ত করে দেন। অথবা এর অর্থ তেমনি কিছু। (আঃপ্রঃ- ৬৫২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪১)
৯১/২৩. অধ্যায় : স্বপ্নের মধ্যে হাতল অথবা আংটায় ঝুলা ।
৭০১৪
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি একটি বাগানে আছি। বাগানের মাঝে একটি স্তম্ভ। স্তম্ভের শিরোভাগে একটি হাতল। তখন আমাকে বলা হল, উপরের দিকে উঠ। আমি বললাম, পারছি না। তখন আমার কাছে একজন খাদিম আসল এবং আমার কাপড় গুটিয়ে দিল। আমি উপরের দিকে উঠতে উঠতে হাতলটি ধরে ফেললাম। হাতলটি ধরে থাকা অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। তারপর এ স্বপ্ন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ বাগান ইসলামের বাগান, ঐ স্তম্ভ ইসলামের স্তম্ভ, আর ঐ হাতল হল মযবুত হাতল। তুমি মৃত্যু অবধি ইসলামকে শক্তভাবে ধরে থাকবে। (আঃপ্রঃ- ৬৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪২)
৯১/২৪. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর নিজের বালিশের নিচে তাঁবুর খুটিঁ দেখা ।
৯১/২৫. অধ্যায় : স্বপ্নে মোটা রেশমী কাপড় দেখা ও জান্নাতে প্রবেশ করিতে দেখা ।
৭০১৫
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখিতে পাই, আমার হাতে যেন রেশমী এক টুক্রা কাপড়। জান্নাতের যেখানেই তা আমি নিক্ষেপ করি তা আমাকে সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যায়। এ স্বপ্ন আমি হাফসাহ (রাদি.)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। (আঃপ্রঃ- ৬৫৩০ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৩ প্রথমাংশ)
৭০১৬
হাফসাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আর হাফসাহ (রাদি.) তা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ভাই একজন নেককার লোক। অথবা বললেনঃ আবদুল্লাহ তো একজন নেককার লোক। (আঃপ্রঃ- ৬৫৩০ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৩ শেষাংশ)
৯১/২৬. অধ্যায় : স্বপ্নে বন্ধন দেখা ।
৭০১৭
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হইবে তখন মুমিনের স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তবায়িত থাকবে। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আর নবুয়তের কোন কিছুই অসত্য হইতে পারে না। রাবী মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি এমন বলছি। তিনি বলেন, এ কথা বলা হয় যে, স্বপ্ন তিন প্রকার, মনের কল্পনা, শয়তানের তরফ থেকে ভয় দেখানো এবং আল্লাহর তরফ হইতে সুসংবাদ। তাই যদি কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখে তবে সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। বরং উঠে যেন (নফল) সালাত আদায় করে নেয়। রাবী বলেন, স্বপ্নে শিকল দেখা অপছন্দনীয় মনে করা হত এবং পায়ে বেড়ি দেখাকে তারা পছন্দ করিতেন। বলা হত, পায়ে বেড়ি দেখার ব্যাখ্যা হলো দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা।
ক্বাতাদাহ, ইউনুস, হিশাম ও আবু হিলাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে উক্ত হাদীসকে বর্ণনা করিয়াছেন। আর কেউ কেউ এসবকে হাদীসের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত করিয়াছেন। (অপরদিকে) আউফের বর্ণনা কৃত হাদীস সুস্পষ্ট। ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমি বন্ধনের ব্যাখ্যাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর তরফ থেকেই মনে করি। আবু আবদুল্লাহ [ইমামু বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শিকল গলাতেই বাঁধা হয়।[মুসলিম পর্ব ৪২/হাদীস ২২৬৩, আহমাদ ১০৫৯৫] (আঃপ্রঃ- ৬৫৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৪)
৯১/২৭. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর প্রবাহিত ঝর্ণা দেখা ।
৭০১৮
উম্মুল আলা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে বায়আত করেছিলেন তিনি তাদের একজন। তিনি বলেন, যখন মুহাজিরদের বাসস্থান নির্ধারণের জন্য আনসারগণ লটারী দিলেন, তখন আমাদের ঘরে বসবাসের জন্য উসমান ইবনু মাযউন (রাদি.) আমাদের ভাগে পড়েন। তিনি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়লে আমরা তাহাঁর সেবা-শুশ্রূষা করি। অবশেষে তিনি মারা যান। এরপর আমরা তাকে তার কাপড় দিয়েই কাফন পরিয়ে দেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের ঘরে আসলেন। আমি বললাম, হে আবু সাঈব! তোমার ওপর আল্লাহর রহমত হোক। তোমার বেলায় আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করিয়াছেন। তিনি বললেনঃতুমি কী করে জানলে? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি জানি না। তিনি বললেনঃতার তো মৃত্যু হয়ে গেছে, আমি তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণই আশা করছি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসুল হওয়া সত্ত্বেও জানি না যে, আমার সঙ্গে এবং তোমাদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হইবে? উম্মুল আলা (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি আর কক্ষনো কারো পবিত্রতার প্রত্যয়ন করব না। উম্মুল আলা (রাদি.) বলেন, আমি স্বপ্নে উসমান (রাদি.)-এর জন্য প্রবাহিত ঝর্ণা দেখেছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)–এর কাছে এসে সেটা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃএটা তাহাঁর আমাল তার জন্য জারি থাকবে। (আঃপ্রঃ- ৬৫৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৫)
৯১/২৮. অধ্যায় : স্বপ্নে কূপ থেকে এমনভাবে পানি তুলতে দেখা যে লোকদের পিপাসা মিটে যায় । নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ ব্যাপারে হাদীস আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন ।
৭০১৯
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একবার (আমি স্বপ্নে দেখলাম) আমি একটি কূপের কাছে বসে কূপ থেকে পানি তুলছি। এমন সময় আমার কাছে আবু বাক্র ও উমার আসল। আবু বাক্র বালতিটি হাতে নিয়ে এক বা দুবালতি পানি উঠাল। আর তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর আবু বাক্রের হাত থেকে উমার তা নিল। তার হাতে বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। আমি কোন শক্তিশালী লোককে উমারের মত এত অভিজ্ঞ কর্মঠ দেখিনি। যার ফলে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল। [১৫০](আঃপ্রঃ- ৬৫৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৬)
[১৫০] ইসলামের নিয়ম নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধনকে এখানে বালতি দিয়ে পানি উঠানো দ্বারা বুঝানো হয়েছে । আল্লাহর রসূলের পর প্রথম খলীফা আবু বাকরের আমলে যুদ্ধ-বিদ্রোহের কারণে খেলাফাত পরিচালনা ও তা থেকে সুফল লাভের ধারা বিঘ্নিত হয় । অত:পর উমার (রাদি.) দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে খেলাফাত পরিচালনা করেন । ইসলামী হুকুমাত রাজ্যে রাজ্যে বিস্তৃতি লাভ করে এবং মানুষেরা এর সুফল লাভ করে চরমভাবে তৃপ্ত হয় ।
৯১/২৯. অধ্যায় : স্বপ্নে দুর্বলতার সঙ্গে কূপ থেকে এক বা দুবালতি পানি তুলতে দেখা ।
৭০২০
সালিমের পিতা [আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবু বাক্র ও উমার (রাদি.) সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)-এর স্বপ্ন বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি লোকদেরকে জড় হইতে দেখলাম। তখন আবু বাক্র দাঁড়িয়ে এক বা দুবালতি পানি উঠালো। আর তার উঠানোতে কিছু দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইবনুল খাত্তাব দাঁড়াল। আর তার হাতে বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। আমি লোকদের মধ্যে উমারের মত এতটা অভিজ্ঞ কর্মঠ কাউকে দেখিনি। যার ফলে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল। (আঃপ্রঃ- ৬৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৭)
৭০২১
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমি একটি কূপের কাছে আছি। আর এর নিকট একটি বালতি আছে। আমি কূপ থেকে পানি উঠালাম – যতখানি আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। এরপর বালতিটি ইবনু আবু কুহাফা নিলেন। তিনি কূপ থেকে এক বা দুবালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। তারপর বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। তখন তা উমার ইবনুল খাত্তাব নিলেন। আমি কোন শক্তিশালী লোককে উমারের মত পানি উঠাতে দেখিনি। অবশেষে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল।(আঃপ্রঃ- ৬৫৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৮)
৯১/৩০. অধ্যায় : স্বপ্নে বিশ্রাম করিতে দেখা ।
৭০২২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমি একটি হাউযের নিকট হইতে লোকদেরকে পানি পান করাচ্ছি। তখন আমার কাছে আবু বাক্র আসল। আমাকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য আমার হাত থেকে সে বালতিটি নিয়ে গেল এবং দুবালতি পানি উঠাল। আর তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইবনুল খাত্তাব এসে তার নিকট হইতে তা নিয়ে নিল এবং পানি উঠাতে থাকল। অবশেষে লোকেরা (তৃপ্ত হয়ে) ফিরে গেল, অথচ হাউযের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। (আঃপ্রঃ- ৬৫৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৯)
৯১/৩১. অধ্যায় : স্বপ্নে প্রাসাদ দেখা ।
৭০২৩
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি একবার নিদ্রিত ছিলাম। আমি আমাকে জান্নাতে দেখিতে পেলাম। একজন মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে উযূ করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই প্রাসাদটি কার? তারা বলিল, উমারের। তখন তার আত্মমর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। তাই আমি ফিরে এলাম। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, এ কথা শুনে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক! হে আল্লাহর রাসুল (আপনার কাছেও কি) আমি আত্মমর্যাদাবোধ প্রদর্শন করব? (আঃপ্রঃ- ৬৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫০)
৭০২৪
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আমি আমাকে একটা স্বর্ণের প্রাসাদের কাছে দেখিতে পেলাম। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কার? তারা বলিল, কুরাইশের এক লোকের। হে ইবনুল খাত্তাব! এ প্রাসাদে ঢুকতে আমাকে কিছুই বাধা দিচ্ছিল না। কেবল তোমার আত্মমর্যাদাবোধ, যা আমার জানা ছিল। উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছেও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ দেখাবো? (আঃপ্রঃ- ৬৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫১)
৯১/৩২. অধ্যায় : স্বপ্নে ওযূ করিতে দেখা ।
৭০২৫
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সময় আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি একবার নিদ্রিত ছিলাম। আমি আমাকে জান্নাতে দেখিতে পেলাম এবং (দেখিতে পেলাম) যে এক মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে ওযূ করছে। আমি বললাম : এ প্রাসাদটি কার? তারা বলিল, উমারের। তখন তার আত্মমর্যাদাবোধের কথা মনে করে আমি ফিরে এলাম। তা শুনে উমার (রাদি.) কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক। হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছেও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ দেখাব? (আঃপ্রঃ- ৬৫৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫২)
৯১/৩৩. অধ্যায় : স্বপ্নে কাবা গৃহ তাওয়াফ করা ।
৭০২৬
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা:) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি আমাকে কাবা গৃহ তাওয়াফরত অবস্থায় দেখিতে পেলাম। এমন সময় সোজা চুলওয়ালা একজন পুরুষকে দুজন পুরুষের মাঝে দেখলাম, যার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বলিল, ইবনু মারইয়াম। এরপর আমি ফিরে আসতে লাগলাম। এ সময় একজন লাল রঙ্গের মোটাসোটা, কোঁকড়ান চুলওয়ালা, ডান চোখ কানা ব্যক্তিকে দেখলাম। তার চোখটি যেন ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? তারা বলিল, এ হচ্ছে দাজ্জাল। তার সঙ্গে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান। আর ইবনু কাতান হল বনু মুস্তালিক গোত্রের খুযাআ বংশের একজন লোক। (আঃপ্রঃ- ৬৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৩)
৯১/৩৪. অধ্যায় : স্বপ্নের ভিতর নিজের বাকী পানীয় থেকে অন্যকে দেয়া ।
৭০২৭
আবদুল্লাহ ইবনু উমার হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি দেখলাম দুধের একটা পেয়ালা আমাকে দেয়া হল। তা থেকে আমি (এত অধিক) পান করলাম যে, আমা হইতে তৃপ্তির চিহ্ন প্রকাশিত হচ্ছিল। অতঃপর (অবশিষ্টাংশ) উমরকে দিলাম। সহাবাগণ বলিলেন, এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী দিলেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ ইল্ম।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৪)
৯১/৩৫. অধ্যায় : স্বপ্নে নিরাপদ মনে করা ও ভীতি দূর হইতে দেখা ।
৭০২৮
ইবনু উমার হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বেশ কজন সহাবী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে স্বপ্ন দেখিতেন। অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তা বর্ণনা করিতেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করিতেন। আমি তখন অল্প বয়সের যুবক। আর বিয়ের আগে মাসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাদের মত স্বপ্ন দেখিতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোন কল্যাণ আছে তাহলে আমাকে কোন একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) থাকলাম। দেখলাম আমার কাছে দুজন ফেরেশ্তা এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) এগোচ্ছে। আর আমি তাদের দুজনের মাঝে থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখান হল যে, একজন ফেরেশ্তা আমার কাছে এসেছেন। তাহাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলিল, তোমার অবশ্যই কোন ভয় নেই। তুমি খুবই ভাল লোক, যদি অধিক করে সলাত আদায় করিতে। তারা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তারা আমাকে জাহান্নামের (ধারে এনে) দাঁড় করাল, (যা দেখিতে) কূপের মত গোল আকৃতির। আর কূপের মত এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দুশিং-এর মাঝখানে একজন ফেরেশ্তা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের এক ব্যক্তিকে সেখানে আমি চিনে ফেললাম। অতঃপর তারা আমাকে ডান দিকে নিয়ে ফিরল। (আঃপ্রঃ- ৬৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৫)
৭০২৯
ইবনু উমার হইতে বর্ণিতঃ
এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফসাহ (রাদি.)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফসাহ (রাদি.) তা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করিলেন : তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আবদুল্লাহ তো নেক্কার লোক। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা অধিক করে (নফল) সলাত আদায় করিতেন। [১৫১](আঃপ্রঃ- ৬৫৪২ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৫)
[১৫১] হাদীসের শিক্ষা :
(১) নফল বা তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত ।
(২) নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমরের শিষ্টাচারিতা ও তাঁকে ভয় করা-যার কারনে তিনি স্বীয় স্বপ্ন বর্ণনা করেননি ।
(৩) স্বপ্ন বর্ণনা করার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের বৈধতা ।
(৪) মসজিদে রাত্রী যাপনের বৈধতা ।
(৫) সুন্নাত পরিহার সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন ।
(৬) কোন কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় না । (ফাতহুল বারী)
৯১/৩৬. অধ্যায় : স্বপ্নে ডান দিক গ্রহণ করিতে দেখা ।
৭০৩০
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমি মাসজিদেই রাত কাটাতাম। আর যারাই স্বপ্নে কিছু দেখত তারা তা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহ! যদি তোমার নিকট আমার জন্য কোন কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোন স্বপ্ন দেখাও, যাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আমি ঘুমিয়ে গেলাম, তখন দেখিতে পেলাম যে দুজন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে চলল, এরপর তাদের সঙ্গে অপর একজন ফেরেশতার সাক্ষাৎ ঘটল। সে আমাকে বলিল, তোমার কোন ভয়ের কারণ নেই। তুমি তো একজন নেক্কার লোক। এরপর তারা আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলল, এটি যেন কূপের মত গোলাকার নির্মিত। আর এর মধ্যে বেশ কিছু লোক রয়েছে। এদের কতককে আমি চিনতে পারলাম। এরপর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে চলল। যখন সকাল হল, আমি হাফসাহ (রাদি.)-এর নিকট সব ঘটনা উল্লেখ করলাম।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৩ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৬)
৭০৩১
হাফসাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
পরে হাফসাহ (রাদি.) বলিলেন যে, তিনি তা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি বলেছেন: আবদুল্লাহ নেক্কার লোক। (তিনি আরও বলেছেন) যদি সে রাতে অধিক করে সলাত আদায় করত। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এরপর থেকে আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) (রাদি.) রাতে অধিক করে সলাত আদায় করিতে লাগলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৩ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৬)
৯১/৩৭. অধ্যায় : স্বপ্নে পেয়ালা দেখা ।
৭০৩২
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমার কাছে দুধের একটি পিয়ালা আনা হল। আমি তা থেকে পান করলাম। এরপর আমার বাকী অংশ উমার ইবনু খাত্তাবকে দিলাম। সহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর ব্যাখ্যা কী দিলেন। তিনি বললেনঃ …..ইল্ম। (আঃপ্রঃ- ৬৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৭)
৯১/৩৮. অধ্যায় : স্বপ্নে কোন কিছু উড়তে দেখা ।
৭০৩৩
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে সব স্বপ্নের উল্লেখ করিয়াছেন আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৮)
৭০৩৪
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আমার কাছে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম, আমাকে দেখানো হলো যে আমার হাত দুটিতে স্বর্ণের দুটি চুড়ি রাখা হয়েছে। আমি সে দুটি কেটে ফেললাম এবং অপছন্দ করলাম। অতঃপর আমাকে অনুমতি দেয়া হল, আমাই উভয়টিকে ফুঁ দিলাম, ফলে উভয়টি উড়ে গেল। আমি চুড়ি দুটির এ ব্যাখ্যা করলাম যে, দুজন মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার বের হইবে। উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এদের একজন হল, আল আনসী যাকে ইয়ামানে ফায়রূয (রাদি.) কতল করিয়াছেন। আর অন্যজন হল মুসাইলিমা।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৫ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৮)
৯১/৩৯. অধ্যায় : স্বপ্নে গরু যবহ হইতে দেখা ।
৭০৩৫
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি মাক্কাহ থেকে এমন এক জায়গার দিকে হিজরাত করছি যেখানে খেজুর গাছ আছে। তখন আমার ধারণা হল, সেই জায়গাটি ইয়ামামা অথবা হাজার হইবে। অথচ সে জায়গাটি হল মাদীনাহ তথা ইয়াসরিব। আর আমি (স্বপ্নে) সেখানে একটি গরু দেখলাম। আল্লাহর কসম! এটা কল্যাণকরই। গরুর ব্যাখ্যা হল উহুদের যুদ্ধে (শাহাদাত প্রাপ্ত) মুমিনগণ। আর কল্যাণের ব্যাখ্যা হল এটাই, যে কল্যাণ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন এবং সত্যের বিনিময় যা আল্লাহ বদর যুদ্ধের পর আমাদেরকে প্রদান করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৯)
৯১/৪০. অধ্যায় : স্বপ্নে ফুঁ দেয়া ।
৭০৩৬
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমরা সর্বশেষ এবং সর্বপ্রথম। (আঃপ্রঃ- ৬৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬০)
৭০৩৭
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আরও বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমাকে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহ দেয়া হয়েছে। আর আমার হাতে স্বর্ণের দুটি চুড়ি রাখা হয়, যা আমার কাছে কষ্টকর মনে হল। আর আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল। তখন আমাকে নির্দেশ করা হল, যেন আমি চুড়ি দুটিতে ফুঁ দেই। তাই আমি ও দুটিতে ফুঁ দিলাম (চুড়ি দুটি উড়ে গেল)। আমি চুড়ি দুটির ব্যাখ্যা এভাবে করলাম যে, (নবুয়তের) দুজন মিথ্যা দাবিদার রয়েছে, যাদের মাঝখানে আমি আছি। সানআর বাসিন্দা (আলআনসী) ও ইয়ামামার বাসিন্দা (মুসায়লিমা)।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬০)
৯১/৪১. অধ্যায় : কেউ স্বপ্নে দেখল যে, সে একদিক থেকে একটা জিনিস বের করে অন্য জায়গায় রেখেছে ।
৭০৩৮
সালিমার পিতা আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি দেখেছি যেন এলোমেলো চুলওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়ে মাহইয়াআ নামক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আর এটিকে জুহফা বলা হয়। আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলাম যে, মাদীনাহর মহামারী সেখানে স্থানান্তরিত হল।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬১)
৯১/৪২. অধ্যায় : স্বপ্নে কালো মহিলা দেখা ।
৭০৩৯
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মাদীনাহ সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)-এর স্বপ্নের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন। তিনি বলেছেনঃ আমি দেখেছি এলোমেলো চুল ওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়েছে। অবশেষে মাহইয়ায়া নামক জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, মদীনার মহামারী মাহইয়াআহ তথা জুহফা নামক জায়গায় স্থানান্তরিত হল।(আঃপ্রঃ- ৬৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬২)
৯১/৪৩. অধ্যায় : স্বপ্নে এলোমেলো চুল ওয়ালা মহিলা দেখা ।
৭০৪০
সালিমার পিতা আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি। এলোমেলো চুলওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়ে মাহইয়ায়া তথা জুহফা নামক জায়গায় গিয়ে থেমেছে। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, মদীনার মহামারী সেখানে স্থানান্তরিত হল।(আঃপ্রঃ- ৬৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৩)
৯১/৪৪. অধ্যায় : স্বপ্নে নিজেকে তরবারী নাড়াচাড়া করিতে দেখা ।
৭০৪১
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর স্বপ্ন বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা তরবারী নাড়াচাড়া করছি। আর এ মধ্যভাগ ভেঙ্গে গেল। এর ব্যাখ্যা হল বিপদ, যা উহুদের যুদ্ধে মুমিনদের ভাগ্যে ঘটেছে। আবার আমি তরবারিটি নাড়লাম। এতে তরবারীটি আগের থেকে সুন্দর অবস্থায় ফিরে এল। এর ব্যাখ্যা হল আল্লাহর দেয়া বিজয় ও মুমিনদের ঐক্য। (আঃপ্রঃ- ৬৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৪)
৯১/৪৫. অধ্যায় : যে ব্যক্তি স্বীয় স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যা বলিল ।
৭০৪২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে লোক এমন স্বপ্ন দেখার ভান করিল যা সে দেখেনি তাকে দুটি যবের দানায় গিট দেয়ার জন্য বাধ্য করা হইবে। অথচ সে তা কখনও পারবে না। যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পছন্দ করে না অথবা বলেছেন, অথচ তারা তার থেকে পলায়নপর। ক্বিয়ামাতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢেলে দেয়া হইবে। আর যে কেউ প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে শাস্তি দেয়া হইবে এবং তাতে প্রাণ ফুঁকে দেয়ার জন্য বাধ্য করা হইবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। সুফ্ইয়ান বলেছেন, আইউব এ হাদীসটি আমাদেরকে মওসুল রূপে বর্ণনা করিয়াছেন।
কুতাইবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু আওয়ানা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে তাহাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি নিজের স্বপ্ন মিথ্যা বর্ণনা করে।
শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে তাহাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে কেউ ছবি আঁকে…..যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে…..যে কেউ কান লাগায়…..।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) যে কেউ কান লাগাবে…..যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করিবে…..যে কেউ ছবি আঁকবে…..অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন…..। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইকরামাহ থেকে ইবনু আব্বাস সূত্রে খালিদ এর অনুসরণ করিয়াছেন। [১৫২] (আঃপ্রঃ- ৬৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৬)
[১] এই হাদীসটিতে তিনটি হুকুম শামিল রয়েছে, যথা :
(১) মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা, (২) যে ব্যক্তি চায়, তার কথা কেউ শ্রবণ না করুক এমন কথা শ্রবণ করা এবং (৩) ছবি সংক্রান্ত।
ইমাম ত্ববারী মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, এ ব্যাপারে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা তীব্র হয়েছে। অথচ সজাগ থাকা অবস্থায় মিথ্যা বলা কখনও কখনও তার চাইতে অধিকতর মারাত্মক অন্যায়। যেমন : হত্যা, হাদ্দ অথবা সম্পদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া। কারণ স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যারোপ যেন আল্লাহর উপরেই মিথ্যারোপ করা যে আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন অথচ তা সে দেখেনি। আর আল্লাহর উপর মিথ্যা বলা সৃষ্টিকুলের উপর মিথ্যা বলার চাইতে অধিকতর গুরুতর।
এর প্রমাণ, আল্লাহ তাআলা বলেন :
{وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ} (هود: من الآية১৮)
আর স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা বলা যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপরেই মিথ্যা বলা। তার প্রমাণ, রাসুল (সাঃআঃ) বলেন الرؤيا جزء من النبوة সুতরাং যা নবুওয়াতের অংশ তা তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হইবে।
৭০৪৩
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হল আপন চক্ষু দিয়ে এমন কিছু দেখার (দাবি করা) যা চক্ষুদয় দেখিতে পায়নি।(আঃপ্রঃ- ৬৫৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৭)
৯১/৪৬. অধ্যায় : পছন্দনীয় নয় স্বপ্নে এমন কিছু দেখলে তা কারো কাছে না বলা এবং সে সম্পর্কে কোন আলোচনা না করা ।
৭০৪৪
আবু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে ফেলত। অবশেষে আমি আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে দিত। শেষে আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন এমন লোকের কাছেই বলবে, যাকে সে পছন্দ করে। আর যখন অপছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন যেন সে এর ক্ষতি ও শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায় এবং তিনবার থু থু ফেলে আর সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিবে না। (আঃপ্রঃ- ৬৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৮)
৭০৪৫
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, যখন কেউ এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তবে মনে করিবে যে তা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এজন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে। আর যখন এর বিপরীত কোন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, মনে করিবে তা শয়তানের তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিবে না। [১৫৩](আঃপ্রঃ- ৬৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৯)
[১] এই হাদীসের মধ্যে সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য তার বিরুদ্ধে অন্দোলন করিতে বের হওয়া পরিহার করার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি সরকার যদি অত্যাচারও করে। যেমন ত্ববারানীতে ইয়াযীদ ইবনু সালামা আল জুফী হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
يارسول اله إن كان علينا أمراء يأخذون بالحق الذي علينا ويمنعونا الحق الذي لنا أنقاتلهم؟ قال لا، عليهم ما حملوا وعليكم ما حملته
এবং ইমাম মুসলিম মারফু সূত্রে উম্মু সালামাহ থেকে বর্ণনা করেন :
سيكون أمراء فيعرفون وينكرون فمن كره برئ ومن أنكر مسلم، لكن من رضي وتابع قالوا، أفلا نقاتلهم؟ قال: لا، ما صلوا
ফিকাহবীদগণ সকলে একমত হয়েছেন যে, বিজয়ী সরকারের আনুগত্য করা ও তার জিহাদে অংশগ্রহণ করা ওয়াজিব। আর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বের হওয়ার চেয়ে তার আনুগত্য করা অতি উত্তম। কেননা আনুগত্যের মাধ্যমেই খুনা-খুনী রোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু যদি সরকারের মাঝে সুস্পষ্ট কুফর দেখা যায় তাহলে ঐ ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা জায়েয না। বরং তখন যাদের আন্দোলন করার শক্তি রয়েছে তাদের আন্দোলন করা ওয়াজিব। [এটিও শর্ত সাপেক্ষে]। (ফাতহুল বারী)
৯১/৪৭. অধ্যায় : ভুল ব্যাখ্যাকারীর ব্যখ্যাকে প্রথমেই চূড়ান্ত বলে মনে না করা ।
৭০৪৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, আমি গত রাতে স্বপ্নে একখণ্ড মেঘ দেখলাম, যা থেকে ঘি ও মধু ঝরছে। আমি লোকদেরকে দেখলাম তারা তা থেকে তুলে নিচ্ছে। কেউ অধিক পরিমাণ আবার কেউ কম পরিমাণ। আর দেখলাম, একটা রশি যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত মিলে রয়েছে। আমি দেখলাম আপনি তা ধরে উপরে উঠছেন। তারপর অন্য এক লোক তা ধরল ও এর সাহায্যে উপরে উঠে গেল। এরপর আরেক লোক তা ধরে এর দ্বারা উপরে উঠে গেল। এরপর আরেক লোক তা ধরল। কিন্তু তা ছিঁড়ে গেল। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেল। তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক! আল্লাহর কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ দিবেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি এর ব্যাখ্যা দাও। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, মেঘের ব্যাখ্যা হল ইসলাম। আর তার থেকে যে ঘি ও মধু ঝরছে তা হল কুরআন যার মিষ্টতা ঝরছে। কুরআন থেকে কেউ বেশি সংগ্রহ করছে, আর কেউ কম। আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত ঝুলন্ত দড়িটি হচ্ছে ঐ হক (মহাসত্য) যার উপর আপনি প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। আপনি তা ধরবেন, আর আল্লাহ আপনাকে উচ্চে উঠাবেন। আপনার পরে আরেকজন তা ধরবে। ফলে এর দ্বারা সে উচ্চে উঠবে। অতঃপর আরেকজন তা ধরে এর মাধ্যমে সে উচ্চে উঠবে। এরপর আরেকজন তা ধরবে। কিন্তু তা ছিঁড়ে যাবে। পুনরায় তা জোড়া লেগে যাবে, ফলে সে এর দ্বারা উচ্চে উঠবে। হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমাকে বলুন, আমি ঠিক বলেছি, না ভুল? নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ কিছু ঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন যা আমি ভুল করেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ কসম করো না।[মুসলিম ৪২/৩, হাদীস ২২৬৯, আহমাদ ১৮৯৪] (আঃপ্রঃ- ৬৫৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭০)
৯১/৪৮. অধ্যায় : ফাজ্রের সলাতের পরে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়া
৭০৪৭
সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রায়ই তাহাঁর সহাবীদেরকে বলিতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা, তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করিতেন। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দুজন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলিল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম, অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত আবার ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহানআল্লাহ! এরা কারা? তিনি বলিলেন, তারা আমাকে বলিল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শোয়া এক লোকের কাছে আসলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক লোক লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমণ্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র, চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। আওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কোন কোন সময় ইয়ুশারশিরু শব্দের পরিবর্তে ইয়াশুক্কু শব্দ বলিতেন। এরপর ঐ লোকটি শায়িত লোকটির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছে তেমনি আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও করে। ঐ দিক হইতে অবসর হইতে না হইতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সুবহানআল্লাহ! এরা কারা? তিনি বলেন, তারা আমাকে বলিল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলিল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক লোক আছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতারকারী লোকটি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে লোক কাছে এসে পৌঁছে যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ লোক তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে; আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তার বলিল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী লোকের কাছে এসে পৌঁছলাম, যে তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চতুর্দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ লোকটি কে? তারা বলিল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে হাজির হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখিতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চারপাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত অধিক আর কখনো আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলিল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলিল, এর ওপরে চড়ুন। আমরা ওপরে চড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা হাজির হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক সাক্ষাৎ করিল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী মনে হয়। তিনি বলেন, সাথীদ্বয় ওদেরকে বলিল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল প্রশস্ত প্রবাহিত নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তাদের এ শ্রীহীনতা দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলিল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্থান। তিনি বলেন, আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ আছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলিল, এটা আপনার বাসগৃহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এতে প্রবেশ করি। তারা বলিল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়। তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর বিষয় দেখিতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কী? তারা আমাকে বলিল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরয সলাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে। আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত, এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে হল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে যা চারদিকে ছড়িয়ে পরে। আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল। আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর। আর ঐ কুশ্রী ব্যক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চারপাশে দৌড়াচ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশ্তা। আর এ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (আঃ)। আর তাহাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিতরাতের (স্বভাবধর্মের) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। আর ঐসব লোক যাদের অর্ধাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধাংশ অতি কুশ্রী তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় কাজ মিশ্রিতভাবে করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। [৮৪৫; মুসলিম ৪২/৪, হাদীস ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫] (আঃপ্রঃ- ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭১)
Leave a Reply