স্ত্রী হইতে দূরে থাকার কসম করা, স্ত্রী হইতে বিরত থাকা

স্ত্রী হইতে দূরে থাকার কসম করা, স্ত্রী হইতে বিরত থাকা

স্ত্রী হইতে দূরে থাকার কসম করা, স্ত্রী হইতে বিরত থাকা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৫. অধ্যায়ঃ স্ত্রী হইতে দূরে থাকার কসম করা, স্ত্রী হইতে বিরত থাকা ও তাদের অবকাশ দেয়া এবং আল্লাহ তাআলার বানী- “যদি তারা যিহারে লিপ্ত হয়” ইত্যাদি প্রসঙ্গে

৩৫৮৩. উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীগন থেকে সাময়িকভাবে পৃথক হয়ে গেলেন, তখন আমি মাসজিদে নবাবীতে প্রবেশ করলাম। আমি দেখিতে পেলাম লোকেরা হাতে কংকর নিযে নাড়াচাড়া করছে [যা দুশ্চিন্তার সময় স্বভাবিকভাবে ঘটে থাকে]। তাঁরা বলাবলি করছিল যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা ছিল তাঁদের উপর পর্দার নির্দেশ আসার পূর্বেকার। উমর [রাদি.] বলিলেন, আমি আজই প্রকৃত ঘটনা জেনে নিব। তাই আমি আয়িশা [রাদি.]-এর নিকটে গেলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু বাক্‌র তনয়া! তোমার অবস্হা কি এই পর্যায়ে নেমে গিয়েছে যে, তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কষ্ট দিচ্ছ? তিনি বলিলেন, হে খাত্ত্বাবের পূত্র! আমার ব্যাপার নিয়ে আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? আগে নিজের ঘরের খবর নিন। তিনি বলেন, তখনই আমি হাফ্‌সাহ্‌ বিনতু উমর [রাদি.]-এর কাছে এলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে হাফ্‌সাহ্‌! তোমার অবস্হা এই পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কষ্ট দিচ্ছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি জানতে পেরেছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাকে ভালবাসেন না। আর আমি না হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অবশ্যই তোমাকে তালাক দিয়ে দিতেন। একথা শুনে তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন আমি তাকে বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোথায় আছেন? সে {হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.]} বলিল, তিনি ঐ চিলেকোঠায় অবস্থান করছেন। আমি সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করলাম। তখন আমি দেখিতে পেলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চৌকাঠটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ড দিয়ে নির্মিত যা দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠানামা করিতেন। আমি রাবাহ-কে ডাকলাম এবং বললাম, হে রাবাহ! আমার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট থেকে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে এসো। তখন রাবাহ কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করিল। এরপর আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে কিছুই বলিল না। আমি বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। এরপর রাবহা কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করিল। এরপর আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে এবারও কিছুই বলিল না। তখন আমি উচ্চৈঃস্বরে বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। সে সময় আমি ভেবেছিলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হয়ত ধারণা করছেন আমি আমার কন্যা হাফ্‌সার কারণেই এখানে এসেছি। আল্লাহ কসম! যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার গর্দান উড়িয়ে দিবার নির্দেশ দিতেন তাহলে আমি অবশ্যিই তার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। এ সব কথা আমি উচ্চৈঃস্বরেই বলছিলাম। তখন সে [রাবাহ] আমাকে ইশারায় উপরে উঠতে বলিল। তখন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে প্রবেশ করলাম। সে সময় তিনি খেজুর পত্র নির্মিত একটি চাটাইয়ের উপর কাত হয়ে শোয়া ছিলেন। আমি সেখানে বসে পড়লাম। তিনি তাহাঁর চাদরখানি তাহাঁর শরীরের উপরে টেনে দিলেন। তখন এটি ছাড়া তাহাঁর পরনে অন্য কোন কাপড় ছিল না আর বাহুতে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি স্বচক্ষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামানাদির দিকে তাকালাম। আমি সেখানে একটি পাত্রে এক সা [আড়াই কেজি পরিমাণ] এর কাছাকাছি কয়েক মুঠো যব দেখিতে পেলাম। অনুরূপ বাবলা জাতীয় গাছের কিছু পাতা [যা দিয়ে চামড়ায় রং করা হয়।] কামরার এক কোণায় পড়ে আছে দেখলাম। আরও দেখিতে পেলাম ঝুলন্ত একখানি চামড়া যা পাকানো ছিল না। তখন তিনি বলেন, এই সব দেখে আমার দু চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, হে খাত্ত্বাবের পূত্র! কিসে তোমার কান্না পেয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কেন আমি কাঁদব না। এই যে চাটাই আপনার শরীরের পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। আর এই হচ্ছে আপনার কোষাগার। এখানে সামান্য কিছু যা দেখলাম তা ছাড়া তো আর কিছুই নেই। পক্ষান্তরে ঐ যে রোমক বাদশাহ ও পারস্য সম্রাট, কত বিলাস ব্যসনে ফলমূল ও ঝরণায় পরিবেষ্টিত হয়ে আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন করছে। আর আপনি হলেন আল্লাহর রসূল এবং তাহাঁর মনোনীত ব্যক্তি। আর আপনার কোষাগার হচ্ছে এই! তখন তিনি বলিলেন, হে খাত্ত্বাব তনয়! তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাত আর তাদের জন্য দুনিয়া [পার্থিব ভোগ বিলাস]। আমি বললাম, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। এরপর উমর [রাদি.] বলেন, আমি যখন প্রবেশ করেছিলাম তখন তাহাঁর চেহারায় রাগের ছাপ স্পষ্ট দেখিতে পাচ্ছিলাম। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার সহধর্মিনীগণের কোন আচরণ আপনার মনোকষ্টের কারণ হয়েছে কি? আপনি যদি তাঁদের তালাক প্রদান করে থাকেন [তাতে আপনার কিছু আসে যায় না] সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার সঙ্গে আছেন। তাহাঁর সকল মালাক, জিব্‌রীল, মীকাঈল, আমি, আবু বকর [রাদি.] সহ সকল ঈমানদার আপনার সঙ্গে আছেন। তিনি {উমর [রাদি.]} বলেন, আল-হামদুলিল্লাহ, আমি যখনই কোন কথা বলি তাতে প্রায়ই আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ আমার কথা সত্য প্রমাণিত করবেন। তখন ইখ্‌তিয়ার সম্পর্কিত এ আয়াত নাযিল হল- “যদি নবী [সাঃআঃ] তোমাদের সকলকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে তাকে তোমাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর সহধর্মিনী দিবেন।” [সুরা আত্‌ তাহরীম ৬৬ : ৫]।

“আর তোমরা দুজন যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের সাহায্য কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ই তার বন্ধু এবং জিব্‌রীল [আঃ], সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণও। অধিকন্তু সমস্থ মালায়িকাহ্‌ও তার সাহায্যকারী।” [সুরা আত্‌ তাহরীম ৬৬ : ৪]

আয়েশাহ বিনত আবু বকর [রাদি.] ও হাফ্‌সাহ্‌ [বিনতু উমর] [রাদি.] এ দুজন নবী [সাঃআঃ]-এর অন্যান্য সহধর্মিনীগণের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আসছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তাদের তালাক দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, না। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখিতে পেলাম মুসলিমরা [চিন্তাযুক্ত হয়ে] মাটির কংকর মারছে এবং বলছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি কি তাদের কাছে গিয়ে জানিয়ে দিব যে, আপনি আপনার সহধর্মিনীদের তালাক দেননি? তিনি বলিলেন, হাঁ তোমার মনে চাইলে। এভাবে আমি তাহাঁর সঙ্গে আলাপ করিতে লাগলাম। পরিশেষে দেখলাম তার চেহারা থেকে রাগের ছাপ একেবারে মুছে গেছে এবং তিনি এমনভাবে হাসি দিলেন যে, তার দাঁত দেখা গেল। তাহাঁর দাঁত ছিল সকলের চাইতে সুন্দর। এরপর নবী [সাঃআঃ] সেখান থেকে নিচে নেমে এলেন এবং আমিও খেজুর গাছের কাণ্ড নির্মিত [সিঁড়ির] কাষ্ঠ ধরে নিচে নেমে এলাম। তবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমনভাবে নিচে নামলেন যেন তিনি সমতল যমীনে হাঁটছেন। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে কাণ্ডটি স্পর্শ করেননি। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তো এই বালাখানায় ঊনত্রিশ দিন অবস্হান করছেন। তিনি বলিলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর আমি মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করলাম, তিনি তাহাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দেননি। তখন এই আয়াত নাযিল হল- “যখন শাস্তি কিংবা ভয়ের কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা প্রচার করে দেয়। যদি তারা বিষয়টি আল্লাহর রসূল এবং নেতৃত্ব স্হানীয় ব্যক্তিদের নিকট উপস্হাপন করত তাহলে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধানী তারা এর যথার্থতা নিরূপণ করিতে সক্ষম হত।” মোটকথা আমি {উমর [রাদি.} এই বিষয়টির সঠিক তথ্য নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলা ইখ্‌তিয়ার সস্পর্কিত আয়াত নাযিল করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৪]

৩৫৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ এক বছর যাবত ইচ্ছা পোষণ করে আসছিলাম যে, একটি আয়াত সম্পর্কে উমর উবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু আমি তার গাম্ভীর্যের কারণে তাঁকে জিজ্ঞেস করিতে সাহস পাইনি। একবার তিনি হজ্জ পালনের জন্য রওনা হলেন, আমিও তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। যখন আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলছিলাম এই সময় তিনি [প্রকৃতির] প্রয়োজনে পিলুগাছের ঝোপের দিকে গেলেন। আমি তাহাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি তাহাঁর প্রয়োজন পূরণ করে ফিরে এলেন। এরপর আমি তাহাঁর সঙ্গে রওনা করলাম। [এক সুযোগ পেয়ে] আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিনীগণের মধ্যে থেকে কোন্‌ দুজন তাহাঁর অপ্রিয় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করেছিল? তিনি বলিলেন, তারা ছিল হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.] ও আয়িশা [রাদি.]। তিনি {আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]} বলেন, আমি তাঁকে {উমর [রাদি.]-কে} বললামঃ আল্লাহ্‌র কসম! দীর্ঘ এক বছর যাবত এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করব বলে মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করে আসাছিলাম, কিন্তু আপনার ভয়ের কারণে সাহস পাইনি। তিনি {উমর রা]} বলিলেন, কখনো এরূপ করিবে না বরং আমার কাছে কোন বিষয়ের জ্ঞান আছে বলে তোমার ধারণা হলে তুমি অবশ্যই সে সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিবে। যদি তা আমার জানা থাকে তাহলে তোমাকে অবহিত করবই। রাবী {আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]} বলেন, তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! জাহিলিয়্যাত যুগে আমরা নারী জাতির জন্য কোন অধিকার স্বীকার করতাম না। এরপর আল্লাহ তাদের অধিকার সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার অবতীর্ণ করিলেন এবং তাদের জন্য যা নির্ধারণের ছিল তা নির্ধারণ করে দিলেন। তিনি বলেন, আমি কোন একদিন এক বিষয়ে চিন্তা করছিলাম। এমন সময় আমার স্ত্রী আমার কাছে এসে বলিল, আপনি যদি এরূপ এরূপ করিতেন তাহলে বেশ ভাল হত। আমি তাকে বললাম, তোমার কী হয়েছে? তুমি এখানে এলে কেন? আমি যে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি তাতে তুমি নাক গলাচ্ছ কেন? তখন সে বলিল, হে খাত্ত্বাবের পূত্র! আপনি তো আমাকে মুখ খুলতেই দিচ্ছেন না, কী আশ্চর্য! অথচ আপনার [স্নেহের] কন্যাটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে প্রতি উত্তর করে, যার ফলে তিনি সারা দিন রাগান্বিত অবস্হায় অতিবাহিত করেন। উমর [রাদি.] বলেন, এরপর আমি [তড়িঘড়ি] আমার চাদর গুটিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম এবং সোজা হাফ্‌সার কাছে পৌছলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে আমার কন্যা! তুমি নাকি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কথার প্রত্যুত্তর করে থাক, যাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সারা দিন রাগান্বিত থাকেন? হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা সত্যিই তাহাঁর কথার প্রত্যুত্তর দিয়ে থাকি। তখন আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহ্‌র শাস্তির ও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অসন্তুষ্টির ভীতি প্রদর্শন করছি। হে আমার কন্যা! ঐ মেয়েটি যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে যাকে তাহাঁর সৌন্দর্য ও তার প্রতি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অনুরাগ গর্বিতা করে ফেলেছে {এর দ্বারা তিনি আয়িশা [রাদি.]-কে বুঝাতে চেয়েছেন}। এরপর আমি সেখানে থেকে বেরিয়ে উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। তাহাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সস্পর্ক ছিল। আমি তাহাঁর সঙ্গে কথা বললাম। তখন উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] আমাকে বলিলেন, কী আশ্চার্য! হে খাত্ত্বাবের পূত্র! তুমি সব কিছুতেই দখল নিতে চাচ্ছ? এমন কি তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সহধর্মিনীগণের মধ্যকার বিষয়ে দখল নিতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, এই বিষয়ে উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-এর কথা আমাকে এমনভাবে জব্দ করিল যে, আমি হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। তাই আমি তার নিকট হইতে কেটে পড়লাম। এদিকে আমার একজন আনসারী বন্ধু ছিলেন। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মজলিসে অনুপস্হিত থাকলে তিনি আমাকে জানাতেন এবং তিনি তাহাঁর মজলিসে অনুপস্হিত থাকলে আমি তার কাছে এসে তাকে [আলোচ্য বিষয়ে] জানাতাম। সে সময়ে আমরা জনৈক গাস্‌সানী বাদশার আক্রমণের আশংকা করছিলাম। কারণ তখন আমাদের মাঝে সংবাদ [শুজব] ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সে আমাদের উপর হামলার পাঁয়তারা করছে তাই ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তায় আমাদের অন্তর ছিল আচছন্ন। ইত্যবসরে আমার আনসারী বন্ধুটি এসে দরজা খটখটাতে লাগলেন এবং বলিলেন, খুলে দিন! আমি বললাম, তাহলে গাস্‌সানীরা কি এসেই পড়ল। তিনি [আমার আনসারী বন্ধুটি] বলিলেন, [না, গাস্‌সানীরা আসেনি] তবে তার চাইতেও সাংঘাতিক কিছু। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়েছেন। উমর [রাদি.] বলিলেন, তখন আমি বললাম, হাফ্‌সাহ্‌ ও আয়িশার নাক ধূলোয় মলিন হোক। এরপর আমি আমার কাপড়-চোপড় পরিধান করলাম এবং ঘর থেকে বেরিয়ে  রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলাম। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর বালাখানায় দেখিতে পেলাম। সেটা ছিল এমন ছাদযুক্ত কামরা যাতে খেজুর কাণ্ড নির্মিত সিড়ি বেয়ে উঠতে হত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সিঁড়ির কামরার দরজায় পাহাড়ারত ছিল। তখন আমি তাকে বললাম, আমি উমর। আমাকে অনুমতি এনে দাও। সে অনুমতি নিয়ে এলে আমি ভিতরে প্রবেশ করে এই ঘটনা বিশদভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে খুলে বললাম। আমি যখন উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-এর ঘটনা পর্যন্ত পৌছলাম, তখন তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তিনি তখন একটি সাদামাটা চাটাইয়ের উপর [কাত হয়ে শায়িত] ছিলেন, তাহাঁর ও চাটাইয়ের মাঝখানে অন্য কিছুই ছিল না। তাহাঁর মাথার নিচে ছিল চামড়ার তৈরি একটি বালিশ যার মধ্যে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিল। তাহাঁর পায়ের কাছে ছিল স্তুপীকৃত বাবলা জাতীয় গাছের কিছু পাতা এবং শিয়রের কাছে ঝুলন্ত ছিল একটি কাঁচা চামড়া। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শরীরের পার্শ্বদেশে চাটাই-এর দাগ দেখিতে পেলাম, এতে আমি কাঁদলাম। তিনি বলিলেন, [হে খাত্ত্বাব তনয়] তুমি কাঁদছ কেন? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! পারস্য সম্রাট ও রোমক সম্রটি কত বিলাসব্যসনে কাটাচ্ছে আর আপনি হলেন আল্লাহ্‌র রসূল, [আপনার অবস্হা এই]। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, [হে উমর] তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নয় যে, তাদের জন্য কেবল দুনিয়া [পার্থিব ভোগ-বিলাস] আর তোমার জন্য রয়েছে আখিরাত [চিরস্হায়ী সুখ শান্তি]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৫]

৩৫৮৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর [রাদি.]-এর সঙ্গে রওনা হয়ে যখন মার্‌রুয্‌ যাহ্‌রান নামক স্হানে পৌছলাম, তখন তিনি বিস্তারিতভাবে হাদীস বর্ণনা করেন। সুলায়মান ইবনি বিলাল বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। অবশ্য তিনি {ইবনি আব্বাস [রাদি.]} বলেনঃ আমি উমর [রাদি.]-কে বললাম, সে দুজন মহিলার ঘটনা আমাকে বলবেন কি? তিনি বলিলেন, তারা ছিল হাফ্‌সাহ্‌ ও উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]। তিনি তার বর্ণনায় আরও উল্লেখ করেন যে, এরপর আমি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর] হুজরার দিকে এলাম তখন সব ঘরেই কান্নাকাটি অব্যাহত ছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীগণের সঙ্গে একমাস ঈলা করেছিলেন। যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। তখন তিনি তাদের কাছে ফিরে এলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৬]

৩৫৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি [দীর্ঘদিন যাবৎ] মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করে আসাছিলাম যে, ঐ দুজন মহিলা সম্পর্কে উমর [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করব যারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর অপ্রিয় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা দান করছিল। আমি একটি বছর অপেক্ষা করলাম কিন্তু আমি তাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলাম না। শেষ পর্যন্ত মাক্কায় রওনা হবার পথে আমি তার সফর সঙ্গী হলাম। পথযাত্রায় তিনি যখন মার্‌রুয্‌ যাহ্‌রান নামক স্হানে পৌছলেন তখন তিনি তার প্রযোজন পূরণের [ইসতিন্‌জা ইত্যাদির জন্য] ইচ্ছা ব্যক্ত করিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আমাকে এক বদনা পানি দাও। আমি এক বদনা পানি সহ তাহাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। যখন তিনি হাজত সমাধান করে ফিরে এলেন তখন আমি [ওযূর] পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য তাহাঁর কাছে গেলাম। তখন আমি সেই প্রশ্নের কথা স্মরণে আনলাম। এরপর আমি তাকে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! সে মহিলা দুজন কারা ছিল? তখন আমার কথা শেষ না হইতেই তিনি বলিলেন, সে দুজন ছিল আয়িশা [রাদি.] ও হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৭]

৩৫৮৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণের মধ্যে থেকে যে দুজন মহিলা সম্পর্কে উমর [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করার জন্য বহুদিন যাবৎ আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলাম যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ

“তোমাদের দুজনের হৃদয় অন্যায় প্রবণ হয়েছে মনে করে তোমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসো তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন”। [সুরা আত্‌ তাহরীম ৬৬ : ৪]

পরিশেষে উমর [রাদি.] হাজ্জ পালনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমিও হাজ্জ পালনের জন্য তাহাঁর সফরসঙ্গী হলাম। এরপর [হাজ্জ সমাপন করে ফেরার পথে] আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলার সময় উমর [রাদি.] এক পার্শ্বে মোড় নিলেন। আমিও পানির বদনাসহ তাহাঁর সঙ্গে রাস্তার পাশে গেলাম। তিনি তাহাঁর হাজত পূরণ করিলেন এবং আমার কাছে এলেন। আমি তাহাঁর উভয় হাতে পানি ঢাললাম, তিনি ওযু করে নিলেন। তখন আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণের সে দুজন মহিলা কারা ছিলো যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

উমর [রাদি.]বলিলেন, হে ইবনি আব্বাস! এতো তোমার জন্য আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হচ্ছে [তুমি এত বিলম্বে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কেন?] যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি {উমর [রাদি.]} জিজ্ঞাসিত বিষয়টি [ইবনি আব্বাসের এ বিষয়ে বিলম্বে প্রশ্ন করাকে] অপছন্দ করলেও তা বর্ণনা করিতে কিছুই গোপন করিলেন না। তিনি বলিলেন, তাঁরা দুজন ছিল হাফ্‌সাহ্‌ ও আয়িশা [রাদি.]। এরপর তিনি ঘটনার বিবরণ দিতে লাগলেন। তিনি বলিলেন, আমরা কুরায়শ বংশের লোকেরা [জাহিলিয়্যাত যুগে] আমাদের স্ত্রীদের উপর প্রভুত্ব করে চলতাম। যখন আমরা মাদীনায় এলাম তখন এমন লোকদের দেখিতে পেলাম যাদের উপর তাদের স্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছিল। এমনি পরিবেশে আমাদের নারীরা তাদের [মাদীনাহ্‌বাসীদের] নারীদের অভ্যাস রপ্ত করিতে শুরু করে দেয়। তিনি বলেন, সে সময় মাদীনার উচ্চভূমির অধিবাসী বানূ উমাইয়্যাহ্‌ ইবনি যায়দের বংশধরদের মধ্যে আমার বসতবাটি ছিল। এরপর একদিন আমি আমার স্ত্রীর উপর রাগান্বিত হলাম। সে আমার কথার প্রত্যুত্তর করিতে লাগল। আমি আমার সঙ্গে তার প্রত্যুত্তর করাকে খুবই অপ্রিয় মনে করলাম। সে বলিল, আপনার সঙ্গে আমার কথার প্রত্যুত্তর করাকে অপছন্দ করছেন কেন? আল্লাহর কসম! নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণও তো তাহাঁর সঙ্গে কথার প্রত্যুত্তর করে থাকে। এমনকি তিনি তাঁদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে। তখন আমি রওনা করে [আমার মেয়ে] হাফ্‌সার কাছে চলে এলাম। এরপর আমি তাকে বললাম, তুমি কি রসূলুল্লাহ [সাঃ,-এর সঙ্গে প্রত্যুত্তর কর? সে বলিল, হাঁ। আমি বললাম, তোমাদের মধ্যে কি কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে? সে বলিল, হাঁ। আমি বললাম, তোমাদের যে কেউ এরূপ আচরণ করে সে আসলেই দুর্ভাগা ও ক্ষতিগ্রস্ত। তোমাদের মধ্যে কি কেউ বিপদমুক্ত ও নিরাপদ হইতে পারে যদি আল্লাহ তাহাঁর রসূলের ক্রোধের কারণে ক্রুদ্ধ হন। এরূপ হলে তো তার ধ্বংস অনিবার্য। তুমি কখনো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে তাহাঁর কথার প্রত্যুত্তরে লিপ্ত হয়ো না এবং তাহাঁর কাছে কোন কিছু দাবী করিবে না, তোমার মনে যা চায় তা আমার কাছে চাইবে। তোমার সতীন তোমার চাইতে অধিকতর সুন্দরী এবং রসূলুল্লাহ-[সাঃআঃ] নিকট তোমার তুলনায় অধিকতর প্রিয়পাত্রী। সে যেন তোমাকে ধোঁকায় পতিত না করে ফেলে। এর দ্বারা তিনি {উমর [রাদি.]} আয়িশা [রাদি.]-কে বুঝাতে চাইছেন। তিনি বলেন, আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী ছিলেন। আমরা দুই বন্ধু পালাক্রমে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে [তাহাঁর মজলিসে] যেতাম। একদিন তিনি উপস্হিত থাকতেন, অপরদিন আমি উপস্হিত হতাম। এভাবে তিনি আমাকে ওয়াহী ইত্যাদির খবর দিতেন, আমিও অনুরূপ খবর তাকে পৌছাতাম। সে সময় আমরা বেশ করে আলোচনা করিতে ছিলাম যে, গাস্‌সানী বাদশাহ নাকি আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা জন্য ঘোড়ার ক্ষুরে নাল লাগাচ্ছে। একদিন আমার বন্ধু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন এবং ইশার সময় [রাত্রিকালে] আমার কাছে [ফিরে] এলেন। তিনি এসে আমার ঘরের দরজা খটখটালেন এবং আমাকে ডাকলেন। আমি তাহাঁর ডাক শুনে তাহাঁর কাছে ছুটে এলাম। তিনি বলিলেন, একটি বিরাট কাণ্ড ঘটে গেছে। আমি বললাম, সে কী? গাস্‌সানীরা তাহলে এসে গেছে নাকি? তিনি বললেনঃ না, তারা আসেনি বরং ব্যাপার তার চাইতেও সাংঘাতিক ও দীর্ঘতর। নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীদের তালাক দিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফ্‌সাহ্‌ হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি পূর্ব থেকেই ধারণা পোষণ করে আসছিলাম যে, এমন একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এরপর আমি ফাজরের নামাজ আদায় করে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় পরিধান করলাম। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে  হাফসার কাছে উপস্থিত হলাম। তখন সে কাঁদছিল। আমি বললাম, রসূলল্লাহ [সাঃআঃ] কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন। সে [শ্বাসরুদ্ধ করে] বলিল, আমি জানি না। তবে তিনি তাহাঁর ঐ বালাখানায় নির্জনবাস করছেন। আমি তাহাঁর কৃষ্ণাঙ্গ খাদিমের কাছে বললাম উমারের [প্রবেশের] জন্য অনুমতি প্রার্থনা করো। এরপর সে ভিতরে প্রবেশ করিল এবং পরক্ষনেই বেরিয়ে এসে আমার দিকে তাকাল। এরপর সে বলিল, আমি তাহাঁর [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর] কাছে আপনার কথা উত্থাপন করেছি কিন্তু তিনি নীরব আছেন [কিছুই বলছেন না]। অতঃপর আমি চলে এলাম এবং মিম্বারের কাছে এসে বসে পড়লাম। তখন আমি দেখিতে পেলাম সেখানে একদল লোক বসা আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। আমি খানিকটা বসলাম। এরপর আমার মনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করিল। তখন আমি সেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির কাছে চলে এলাম এবং তাকে বললাম, উমারের জন্য ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে এসো। সে ভেতরে প্রবেশ করিল এবং বেরিয়ে এসে আমাকে বলিল, আমি আপনার বিষয়টি তাহাঁর সামনে উত্তাপন করেছি কিন্তু তিনি নীরব আছেন। আমি যখন পিছনে ফিরে চললাম অমনি সে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি আমাকে ডাক দিয়ে বলিল, আপনি প্রবেশ করুন; তিনি আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি ভিতরে প্রবেশ করে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সালাম দিলাম। আমি দেখিতে পেলাম, তিনি খেজুর পাতার তৈরি একটি চাটাই এর উপর হেলান দিয়ে আরাম করছেন যা তাহাঁর পাঁজরে চাটাইয়ের দাগ বসিয়ে দিয়েছে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি আপনার সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি তাহাঁর মাথা উঁচিয়ে আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন এবং বলিলেন, না। আমি বললাম, আল্লাহ আকবার। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি বিষয়টি ভেবে দেখূনঃ আমরা যখন মাদীনায় এলাম তখন দেখিতে পেলাম, এখানকার পুরুষ লোকদের উপর তাদের স্ত্রীরা প্রভুত্ব বিস্তার করে আসছে। এতে তাদের দেখাদেখি আমাদের স্ত্রীরাও তাদের অভ্যাস রপ্ত করিতে শুর করে দিয়েছে। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত হলাম। অমনি সে আমার কথার প্রত্যুত্তর শুরু করে দিল। আমি তার প্রত্যুত্তর করাকে খুবই খারাপ মনে করলাম। সে বলে ফেলল, আপনার সঙ্গে প্রত্যুত্তর করাকে আপনি এত খারাপ মনে করছেন কেন? আল্লাহ্‌র কসম! নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণও তো তাহাঁর কথার প্রত্যুত্তর করে থাকে, এমনকি তাঁদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি বললাম, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন আচরন করলে সে হতভাগ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে থেকে কারো উপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাগান্বিত হওয়ার কারণে যদি আল্লাহ ক্রদ্ধ হয়ে যান তাহলে তার পতন ও ধ্বংস অনিবার্য। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মৃদু স্বরে হেসে উঠলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি হাফসার কাছে গিয়ে তাকে বলে দিয়েছি যে, তোমার সতীন সৌন্দর্যে তোমার তুলনায় অগ্রগামিনী এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে তোমার চাইতে অধিকতর আদরিনী- তা যেন তোমাকে ধোঁকার জালে আবদ্ধ করিতে না পারে। এতে আবার তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আপনার সঙ্গে একান্তে আলাপ করিতে চাই। তিনি বললেনঃ হাঁ, করিতে পার। অতঃপর আমি বললাম এবং মাথা উঠিয়ে তাহাঁর কোঠার [এদিক ওদিক] তাকিয়ে দেখলাম। আল্লাহ্‌র কসম! আমি সেখানে তিনখানি চামড়া ব্যতীত নয়ন জুড়ানো তেমন কিছু দেখিতে পাইনি। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দুআ করুন যেন তিনি আপনার উম্মাতকে প্রাচুর্য দান করেন। পারসিক ও রোমাকদের তো বৈষয়িক সুখ সমৃদ্ধি দান করা হয়েছে অথচ তারা আল্লাহ্‌র ইবাদাত [আনুগত্য] করে না। তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বলিলেন, হে খাত্ত্বাবের পুত্র! তুমি কি সন্দেহের জালে আচ্ছন্ন আছো। আসলে তারা তো এমন সম্প্রদায় যাদের পার্থিব জীবনে ক্ষণিকের তরে সুখ সমৃদ্ধি দান করা হয়েছে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি তাহাঁর সহধর্মিনীগণের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে কসম করেছিলেন যে, দীর্ঘ একমাস তাদের সঙ্গে একত্রে অতিবাহিত করবেন না। শেষাবধি আল্লাহ তাঁকে এ আচরণের জন্য তিরষ্কার করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৮]

৩৫৮৮. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উরওয়াহ্ [রাদি.] আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হল তখন প্রথমে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট আসলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তো কসম করেছিলেন একমাস পর্যন্ত আমাদের কাছে আসবেন না অথচ ঊনত্রিশ দিন পরই আপনি আমাদের কাছে ফিরে এলেন। আমি এই দিনগুলো হিসেব করে রেখেছিলাম। তিনি বলিলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। এরপর তিনি বলিলেন, হে আয়িশাহ্! আমি তোমাকে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সে সম্পর্কে তোমার পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। তখন তিনি আমাকে এই আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেনঃ

 يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ

“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও এর ভূষণ কামনা কর তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ বিলাসের উপকরণের ব্যবস্হা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দিই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাহাঁর রসূল ও পরকাল কামনা কর তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন”- [সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩ : ২৮-২৯] আর-বী. । আয়িশা [রাদি.] বলেন, এটা নির্ঘাত সত্য যে, আমার পিতামাতা কস্মিনকালেও আমাকে তাহাঁর [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দিবেন না। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ বিষয়ে কি আমি আমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করিতে যাব? নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, তাহাঁর রসূল ও পরকাল কামনা করি।

মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আইয়ূব আমাকে জানিয়েছেন যে, আয়িশা [রাদি.] বলেছেন, [হে আল্লাহ্‌র রসূল!] আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগনের কাছে বলবেন না যে, আমি আপনাকেই ইখ্তিয়ার করে নিয়েছি। তখন নবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, আল্লাহ আমকে মুবাল্লিগ [সত্য প্রচারক] রুপে প্রেরণ করিয়াছেন, বিপদে নিক্ষেপকারীরূপে পাঠাননি।

ক্বাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি][আরবী] এর অর্থ [আরবী] “তোমাদের হৃদয় [অন্যায় প্রবণতার দিকে] ঝুঁকে পড়েছিল” বলে উল্লেখ করিয়াছেন।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৮]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply