স্ত্রীদের হক বন্টন। স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে পালা বন্টন করা

স্ত্রীদের হক বন্টন

স্ত্রীদের হক বন্টন >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৫ঃ স্ত্রীদের হক বন্টন

পরিচ্ছেদ ০১. স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে পালা বন্টন করা শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ০২. স্ত্রীদের মাঝে পরিমানমত ন্যায়পরায়ণতা বজায় আবশ্যক
পরিচ্ছেদ ০৩. নতুন স্ত্রীর নিকট অবস্থান করার পরিমাণ
পরিচ্ছেদ ০৪. অকুমারী স্ত্রীর তিন বা সাত দিন যে কোন মেয়াদে পালা গ্রহণের স্বাধীনতা
পরিচ্ছেদ ০৫. কোন স্ত্রী তার সতীনকে তার পালা দান করিতে পারে
পরিচ্ছেদ ০৬. পালা নেই এমন স্ত্রীর নিকট গমন করা বৈধ যখন অন্য স্ত্রীদের সাথে সমতা বহাল থাকিবে
পরিচ্ছেদ ০৭. অসুস্থ অবস্থায় স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করা
পরিচ্ছেদ ০৮. স্ত্রীদের কোন একজনকে সফর সঙ্গী করিতে হলে সকলের মাঝে লটারী করা
পরিচ্ছেদ ০৯. স্ত্রীকে অধিক প্রহার করা নিষেধ

পরিচ্ছেদ ০১. স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে পালা বন্টন করা শরীয়তসম্মত

১০৫৫ – আয়িশা‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আপন স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফের সাথে [সব কিছু] সমানভাবে বন্টন করিতেন, অতঃপর বলিতেনঃ হে আল্লাহ! এ হলো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমার কাজ। যে বিষয়ে তোমার ক্ষমতা আছে, আমার সামর্থ্য নাই, সে বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করো না। – ইবনু হিব্বান ও হাকিম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন কিন্তু তিরমিজি হাদিসটির মুরসাল হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। {১১৫৪}

{১১৫৪} তিরমিজি ১১৪০, নাসায়ী ৩৯৪৩, আবূ দাউদ ২১৩৪, ইবনু মাযাহ ১৯৭১, আহমাদ ২৪৫৮৭, দারিমী ২২০৭। শাইখ আলবানী আবূ দাউদ গ্রন্থের [২১৩৪], ইরওয়াউল গালীল [২০১৮], এবং যয়ীফুল জামে` [৪৫১৩] গ্রন্থত্রয়ে হাদিসটিকে যয়ীফ মন্তব্য করিয়াছেন। ইমাম বুখারি ইলালুল কাবীর গ্রন্থের [১৬৫] তে বলেন হাদিসটি মুরসাল। বিন বায মাজমাউল ফাতওয়া [২৪৩-২১] তে বলেন, হাদিসটি প্রমাণিত। ইমাম শাওকানী ফাতহুর কাদীর [৭৮১/১], ইমাম সুয়ূতী আল জামিউস সগীর [৭১২৭] গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ ০২. স্ত্রীদের মাঝে পরিমানমত ন্যায়পরায়ণতা বজায় আবশ্যক

১০৫৬ – আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেন – যার দু`জন স্ত্রী আছে, আর সে তাহাদের একজনের চেয়ে অপরজনের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ে, সে ক্বিয়ামাতের দিন একদিকে বক্রভাবে ঝুঁকে থাকা অবস্থায় উপস্থিত হইবে। এর সানাদ সহীহ্‌। {১১৫৫}

{১১৫৫} আবূ দাউদ ২১৩৩, তিরমিজি ১১৪১, নাসায়ী ৩৯৪২, ইবনু মাযাহ ১৯৬৯, আহমাদ ৮৩৬৩, ৯৭৪০, দারিমী ২২০৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. নতুন স্ত্রীর নিকট অবস্থান করার পরিমাণ

১০৫৭ – আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন – নবী [সাঃআঃ] এর সুন্নাত হচ্ছে, যদি কেউ বিধবা স্ত্রী থাকা অবস্থায় কুমারী বিয়ে করে তবে সে যেন তার সঙ্গে সাত দিন অতিবাহিত করে এবং এরপর পালা অনুসারে এবং কেউ যদি কোন বিধবাকে বিয়ে করে এবং তার ঘরে পূর্ব থেকেই কুমারী স্ত্রী থাকে তবে সে যেন তার সঙ্গে তিন দিন কাটায় এবং তারপর পালাক্রমে। শব্দ বিন্যাস বুখারির। {১১৫৬}

{১১৫৬} বুখারি ৫২১৩, ৫২১৪, মুসলিম ১৪৬১, তিরমিজি ১১৩৯, আবূ দাউদ ২১২৩, ২১২৪, ইবনু মাযাহ ১৯১৬, আহমাদ ১১৫৪১, মালেক ১১২৪, দারিমী ২২০৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. অকুমারী স্ত্রীর তিন বা সাত দিন যে কোন মেয়াদে পালা গ্রহণের স্বাধীনতা

১০৫৮ – উম্মু সালামাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এটা সুন্নাত বা বিধিসম্মত হইবে – যখন মানুষ কোন কুমারীকে অকুমারীর উপর বিয়ে করিবে, তার সাথে সাত দিন অবস্থান করার পর তার স্ত্রীদের মধ্যে সমানভাবে পালা বন্টন করিবে। আর যখন কোন অকুমারীকে বিয়ে করিবে তখন তার সাথে একাধিক্রমে তিন দিন অবস্থান করার পর তাহাদের পালা সমভাবে বন্টন করিবে। {১১৫৭}

{১১৫৭} মুসলিম ১৪৬০, আবূ দাউদ ২১২২, ইবনু মাযাহ ১৯১৭, আহমাদ ২৫৯৬৫, ২৫৯৯০, মালেক ১১২৩, দারিমী ২২১০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. কোন স্ত্রী তার সতীনকে তার পালা দান করিতে পারে

১০৫৯ – আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সওদা বিনতে যাম`আহ [রাঃআঃ] তাহাঁর পালার রাত `আয়িশা [রাঃআঃ] কে দান করেছিলেন। নবী [সাঃআঃ] `আয়িশা [রাঃআঃ] এর জন্য দু`দিন বরাদ্দ করেন – `আয়িশা`র [রাঃআঃ] দিন এবং সওদা [রাঃআঃ]`র দিন।{১১৫৮}

{১১৫৮} বুখারি ২৫৯৪, ২৬৩৭, ২৬৬১, ২৬৬৮, ২৮৭৯, মুসলিম ১৪৪৫, ২৭৭০, আবূ দাউদ ২১৩৮, ১৯৭০, ২৩৪৭, আহমাদ ২৪৩১৩, ২৪৩৩৮, ২৫০৯৫, দারিমী ২২০৮, ২৪২৩। পূর্ণাঙ্গ হাদিসটি হচ্ছেঃ তিনি `আয়িশাহ [রাঃআঃ] এর ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। `আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, আমার পালার দিনই আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন এ অবস্থায় যে, আমার বুক ও গলার মাঝখানে তাহাঁর বুক ও মাথা ছিল এবং তাহাঁর মুখের লালা আমার মুখের লালার সঙ্গে মিশেছিল। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. পালা নেই এমন স্ত্রীর নিকট গমন করা বৈধ যখন অন্য স্ত্রীদের সাথে সমতা বহাল থাকিবে

১০৬০ – উরওয়াহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, `আয়িশা [রাঃআঃ] বলেছিলেন – হে আমার বোনের ছেলে, আমাদের নিকটে অবস্থান ব্যাপারে একজনকে অপরের উপরে নবী [সাঃআঃ] কোনরূপ অধিক প্রাধান্য দিতেন না। এমন দিন খুব কমই যেত – তিনি আমাদের সকলের নিকট আগমন ব্যতীত থাকতেন, অর্থাৎ সকলের নিকটে প্রায়ই আসতেন। আমাদেরকে তিনি স্পর্শ ব্যতীত সকলের নিকটবর্তী হইতেন। অবশেষে যার নিকটে রাত্রি যাপনের বারি [পালা] থাকতো তিনি তাহাঁর নিকটে উপস্থিত হয়ে রাত্রি যাপন করিতেন। – শব্দ বিন্যাস আবূ দাউদের; হাকিম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। {১১৫৯}

{১১৫৯} বুখারি ২৪৫০, ২৬৯৪, ৪৬০১, ৫২০৬, মুসলিম ৩০২১, আবূ দাউদ ২১৩৫। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১০৬১ – মুসলিমে `আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] `আসর সলাত পড়ে তাহাঁর সকল স্ত্রীর নিকটে যেতেন, তাতে তিনি সকলের নিকটে উপস্থিত হইতেন। [এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ] {১১৬০}

{১১৬০} বুখারি ৪৯১২, ৫২৬৭, ৫২৬৮, ৫৪৩১, ৫৫৯৯, ৫৬১৪, ৬৬৯১, মুসলিম ১৪৭৪, তিরমিজি ১৮৩১, নাসায়ী ৩৪২১, ৩৭৯৫, ৩৯৫৮, ইবনু মাযাহ ৩৩২৩, আহমাদ ২৩৭৯৫, ২৫৩২৪, দারিমী ২০৭৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. অসুস্থ অবস্থায় স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করা

১০৬২ – আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর যে অসুখে ইন্তিকাল করেছিলেন, সেই অসুখের সময় জিজ্ঞেস করিতেন, আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? তিনি আয়িশা [রাঃআঃ] এর পালার জন্য এরূপ বলিতেন। সুতরাং উম্মাহাতুল মু`মিনীন [স্ত্রীগণ] তাঁকে যার ঘরে ইচ্ছে থাকার অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি `আয়িশা [রাঃআঃ] এর গৃহে অবস্থান করেছিলেন। {১১৬১}

{১১৬১} বুখারি ৮৯০, ১৩৮৯, ৩১০০,৩৭৭৪, ৪৪৩৫,৫২১৭, মুসলিম ২১৯২, ২৪৪৩, ২৪৪৪, তিরমিজি ৩৪৯৬, ইবনু মাযাহ ২৬২০, আহমাদ ২৩৬৯৬, ২৩৯৩৩, ২৪২৫৩, মালেক ৫৬২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৮. স্ত্রীদের কোন একজনকে সফর সঙ্গী করিতে হলে সকলের মাঝে লটারী করা

১০৬৩ – আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সফরের মনস্থ করলে স্ত্রীগণের মধ্যে লটারি করিতেন। যার নাম আসত তিনি তাঁকে নিয়েই সফরে বের হইতেন। {১১৬২}

{১১৬২} বুখারি ২৫৯৩, ২৬৩৭, ২৬৬১, ২৬৮৮, ৪৭৪৯,৪৭৫০, ৫২১২, মুসলিম ২৪৪৫, ২৭৭০, আবূ দাউদ ২১৩৮, ইবনু মাযাহ ১৯৭০, ২৩৪৭, আহমাদ ২৪৩৩৮, ২৪৩১৩, ২৫০৯৫, দারিমী ২২০৮, ২৪২৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৯. স্ত্রীকে অধিক প্রহার করা নিষেধ

১০৬৪ – আবদুল্লাহ বিন যাম`আহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। {১১৬৩}

{১১৬৩} বুখারি ৫২০৪, ৩৩৭৭, ৫৯৪২, ৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫, তিরমিজি ৩৩৪৩, ইবনু মাযাহ ১৯৮৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারিমী ২২২০। পূর্নাঙ্গ হাদিসটি হচ্ছেঃ নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, لَ يجْلِدُ أََحدُ كُمْ اِمْرَ أََتَهُ جَلْدَ اعَبْدِ ثُمَّ يُجَا مِعُهَا فِيْ اَخِرِ الْيَوْمِ “তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তাহাঁর সঙ্গে তো মিলিত হইবে। ইমাম হাইসামী তাহাঁর মাজমাউয যাওযায়েদ ৫/৭ গ্রন্থে বলেন, এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে হাজ্জাজ বিন আরত্বাআ নামক বর্ণনাকারী রয়েছে সে মুদাল্লিস। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

3 responses to “স্ত্রীদের হক বন্টন। স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে পালা বন্টন করা”

Leave a Reply