সূরা হুদের তাফসীর – তাফসিরুল কুড়ান

সূরা হুদের তাফসীর – তাফসিরুল কুড়ান

সূরা হুদের তাফসীর – তাফসিরুল কুড়ান >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা হুদ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-১২ঃ সূরা হুদের তাফসীর

৩১০৯. আবু রাযীন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জীব সৃষ্টি করার আগে আমাদের প্রতিপালক কোথায় ছিলেন? তিনি বলেনঃ তিনি আমা [হালকা মেঘমালা]-এর মধ্যে ছিলেন। এর নিচেও বাতাস ছিল না এবং উপরেও বাতাস ছিল না। তিনি পানির উপর তার আরশ তৈরী করেন।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [২৭১],আহমাদ [রঃ]বলেনঃ ইয়াযীদ [রাদি.] বলেছেন, আমা শব্দের অর্থ, তাহাঁর সাথে কিছুই ছিল না হাম্মাদ ইবনি সালামা ও ওয়াকী ইবনি হুদুস এরকমই বলেন। শুবা, আবু আওয়ানা ও হুশাইম [রাবীর নামের উচ্চারণ] ওয়াকী ইবনি উদুস বলেছেন। আবু রাযীন এর নাম লাকীত ইবনি আমির। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১১০. আবু মুসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বারকাতময় আল্লাহ তাআলা যালিম-অত্যাচারীকে অবকাশ দেন অথবা সুযোগ দেন। অবশেষে তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর রেহাই দেন না। তারপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিলাওয়াত করিলেন : [অনুবাদ] “ এরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি। তিনি জনপদসমুহকে শাস্তি দান করেন যখন তারা সীমা লঙ্ঘন করে। নিশ্চয় তার শাস্তি মর্মন্তুদ , কঠিন -[সূরা হূদ ১০২]।

সহীহ : বোখারি [৪৬৮৬] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু উসামাও বুরাইদ হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে ইউমলী শব্দ বলেছেন। ইবরাহীম ইবনি সাঈদ আল-জাওহারী –আবু-উসামাহ হইতে, তিনি বুরাইদ ইবনি আবদুল্লাহ হইতে, তিনি তার দাদা আবু বুরাদাহ হইতে, তিনি আবু মূসা [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন । এতে সন্দেহমুক্তভাবে ইউমলী শব্দ উল্লেখ আছে। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১১. উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তাহাদের মধ্যে কেউ হইবে হতভাগ্য এবং কেউ হইবে ভাগ্যবান [সুরা হূদ ১০৫], এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নাবী! তাহলে আমরা কিসের উপর আমল করব, এমন জিনিসের উপর যে প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে অথবা এমন কোন জিনিষের উপর যে প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইনি? তিনি বলেনঃ হে উমর! না, বরং এমন জিনিষের উপর যা পূর্বেই চূড়ান্ত হয়ে আছে এবং যার সাথে কলম জারী হয়ে গিয়েছে। তবে প্রত্যেকের করনীয় বিষয় সহজসাধ্য করে রাখা হয়েছে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

সহীহ : আযযিলাল [১৬১ , ১৬৬]। আবু ঈসা বলেন , এ হাদীসটি এ সুত্রে হাসান গারীব। আমরা এ হাদীস শুধু আবদুল মালিক হইতে জেনেছি। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১২. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি মাদীনার শেষ প্রান্তে এক মহিলাকে স্পর্শ করেছি এবং আমি তার সাথে সহবাস ব্যতীত সবই করেছি। আমি এখন আপনার নিকট এসেছি। আপনি যা ইচ্ছা আমার ব্যাপারে ফাইসালা করেন। উমার[রাদি.] তাকে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা তোমার অপরাধ গোপন রেখেছেন, এখন তুমিও যদি তা গোপন রাখতে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কারো কথায় প্রতিউত্তর করিলেন না। লোকটি উঠে চলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনেন এবং এই আয়াত পাঠ করে শুনান [অনুবাদ] : “তুমি নামায কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। সৎকাজসমুহ অন্যায় কাজসমূহকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহন করে তাহাদের জন্য এটা এক উপদেশ [সুরা হূদ ১১৪]। উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বলল, এটা কি শুধু তার বেলায় প্রযোজ্য? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না, বরং সকলের জন্য।

হাসান সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৩৯৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটী হাসান সহীহ। এভাবেই ইসরাঈল সিমাক হইতে, তিনি ইব্রাহীমে হইতে, তিনি আলকামাহ ও আসওয়াদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সুফিইয়ান সাওরী [রঃ]সিমাক হইতে, তিনি ইব্রাহীম হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদ হইতে , তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সাওরীর রিওয়ায়াত অপেক্ষা এদের রিওয়ায়াত অনেক বেশি সহীহ। এটিকে সিমাক ইবনি হারব-ইব্রাহীম হইতে, তিনি আসওয়াদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে শুবাহও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াইহিয়া নায়সাবুরী –মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ হইতে, তিনি সুফইয়ান সাওরী হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনি সিমাক হইতে, তিনি ইব্রাহিম হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মাসউদ ইবনি গাইলান –আল –ফাযল ইবনি মুসা হইতে, তিনি সুফইয়ান হইতে, তিনি সিমাক হইতে, তিনি ইব্রাহিম হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রেও একই মর্মে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত বর্ণনায় অবশ্য আমাশের উল্লেখ নেই। এ হাদীস সুলাইমান আত-তাইমী [রঃ]আবু উস্মান আন-নাহদী হইতে, তিনি ইবনি মাস-উদ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩১১৩. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এক ব্যক্তি এক বেগানা নারীর সাথে যৌন মিলন ছাড়া আর সবই করেছে, তার প্রসঙ্গে আপনার কি মত? তখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তুমি নামায কায়িম কর দিনের দুই প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। সৎ কর্মসমূহ অবশ্যই অসৎ কর্মসমূহ দূর করে দেয়। যারা হিদায়াত গ্রহণ করে তাহাদের জন্য এটা হিদায়াত”[সূরাঃ হূদ- ১১৪]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ওযূ করে এসে নামায আদায়ের হুকুম দেন। মুআয [রাদি.] বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এই সুযোগ কি শুধু তার জন্যই না সাধারণভাবে সকল মুমিনের জন্য? তিনি বললেনঃ বরং সাধারণভাবে সকল মুমিনদের জন্য।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদসূত্র মুত্তাসিল [পরস্পর সংযুক্ত] নয়। আবদুর রহমান ইবনি আবু লাইলা [রঃ]মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে  কিছু শুনেননি। মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] উমার [রাদি.]-এর খিলাফাত কালে ইন্তেকাল করেন। উমর [রাদি.] যখন ইন্তেকাল করেন তখন আবদুর রহমান ইবনি আবু লাইলা ছয় বছরের বালক। তিনি উমার [রাদি.] হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন এবং তিনি তাকে দেখেছেন। শুবা [রঃ]এ হাদীসটি আবদুল মালিক ইবনি উমাইর হইতে আবদুর রহমান ইবনি আবু লাইলা-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১১৪. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক এক বেগানা মহিলাকে চুমা দিল, যা তার জন্য হারাম ছিল। সে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হয়ে এর কাফফারা প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করলো। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “ তুমি নামায কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। ন্যায় কাজসমুহ অন্যায় কাজসমূহকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহন করে তাহাদের জন্য এটা উপদেশ [সুরা হূদ ১১৪]। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এই সুযোগ কি শুধু আমার জন্য? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার জন্যও এবং আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি এরুপ কাজ করে বসে তার জন্যও।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১৫. আবুল ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা খেজুর ক্রয়ের জন্য আমার নিকট এলে আমি বললাম, ঘরের ভেতর এর চাইতে ভাল খেজুর আছে। অতএব সে আমার সাথে ঘরে প্রবেশ করে। আমি তার প্রতি আকৃষ্ট হলাম এবং তাকে চুমা দিলাম। অতঃপর আমি আবু বকর [রাদি.] এর নিকট এসে ঘটনা তাকে জানালাম। তিনি বলিলেন , এটা নিজের কাছেই গোপন রাখ, এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর এবং আর কাওকে বল না। কিন্তু আমি ধৈর্য্য ধারন করিতে পারলাম না। তাই আমি উমা র [রাদি.] এর নিকট এসে বিষয়টি তার জানালাম। তিনি বলিলেন, এটা নিজের কাছেই গোপন রাখ, এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর এবং এটা আর কারো নিকট বল না। কিন্তু আমি ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না। তাই আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এসে তার নিকট বিষয়টি প্রকাশ করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদে গমনকারী ব্যক্তির অনুপস্হিতিতে তার পরিবারের সাথে এই অপকর্ম করেছ? এ কথায় অনুতপ্ত হয়ে আবুল ইয়াসার আক্ষেপ করে বলেন যে, তিনি যদি ইতিপূর্বে ইসলাম গ্রহন না করে এই মুহূর্তে গ্রহন করিতেন। এমনকি তিনি নিজেকে জাহান্নামী বলে ভাবলেন। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীর্ঘক্ষণ নীরবে দৃষ্টি অবনমিত করে রইলেন। অবশেষে তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হল : “ তুমি নামায কায়েম কর দিনের দু প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। সৎ কর্মগুলো অসং কর্মগুলো দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহন করে এটা তাহাদের জন্য উপদেশ “-[সূরা হূদ -১১৪]। আবুল ইয়াসার [রাদি.] বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এলে তিনি আমাকে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে শুনান। তখন তাহাঁর সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি তার জন্যই নির্দিষ্ট না সাধারনভাবে সকলের জন্য? তিনি বললেনঃ বরং সাধারণভাবে সকলের জন্য।

আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। ক্বাইস ইবনির রাবী-কে ওয়াকী প্রমুখ হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। আবুল ইয়াসারের নাম কাব ইবনি আমর। শারীক [রঃ]উসমান ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ]হইতে এ হাদীস ক্বাইস ইবনির রাবী-র মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু উমামা, ওয়াসিলা ইবনিল আসক্বা ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদ হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা হুদের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস


Posted

in

by

Comments

One response to “সূরা হুদের তাফসীর – তাফসিরুল কুড়ান”

Leave a Reply