সূরা হজ্জ তাফসীর । তাফসিরুল কোরআন
সূরা হজ্জ তাফসীর । তাফসিরুল কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা হাজ্জ্ব আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-২৩ঃ সূরা হজ্জ তাফসীর
৩১৬৮. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“হে লোকেরা! তোমাদের প্রভুর গযব হইতে নিজকে রক্ষা কর। কিয়ামাতের কম্পন বড়ই ভয়াবহ ব্যপার। যেদিন তোমরা তা দেখিতে পাবে সেদিনের অবস্থা এমন হইবে যে, প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী নিজের দুধের শিশুকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করিবে এবং লোকদেরকে তোমরা মাতালের মতো দেখিতে পাবে, অথচ তারা নেশাগ্রস্থ নয়। বরং আল্লাহ্ তাআলার শাস্তিই এতদূর কঠোর হইবে” [সূরাঃ আল-হাজ্জ- ১-২]। রাবী বলেন, এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সফরে ছিলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটা কোন দিন? সাহাবীগন বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ও তাহাঁর রাসূলই সবচাইতে ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটা সেই দিন, যখন আল্লাহ্ তাআলা আদম [আঃ]-কে বলবেনঃ জাহান্নামের বাহিনী প্রস্তুত কর। আদম [আঃ] বলবেনঃ হে প্রভু! জাহান্নামের বাহিনীর সংখ্যা কত? তিনি বলবেনঃ [হাজারকে] নয় শত নিরানব্বই জন জাহান্নামের এবং একজন জান্নাতের বাহিনী। একথা শুনে মুসলমানরা কান্নায় ভেংগে পড়েন। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ সমতল পথে চলো, আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য খোঁজ কর, সোজা পথ ধর। প্রত্যেক নাবূয়্যাতের পূর্বেই রয়েছে জাহিলিয়াত। তিনি আরো বলেনঃ জাহিলিয়াত হইতেই বেশি সংখ্যক নেয়া হইবে। যদি এতে সংখ্যা পূর্ণ হয় তো ভালো, অন্যথায় মুনাফিকদের দিয়ে সংখ্যা পূর্ণ করা হইবে। অপরাপর উম্মাতের ও তোমাদের উদাহরণ হচ্ছে, যেমন পশুর বাহুর দাগ অথবা উটের পার্শ্বদেশের তিলক [অর্থাৎ তোমাদের সংখ্যা বেশি হইবে]। তিনি আবার বললেনঃ আমি আশা করি তোমরাই হইবে জান্নাতের এক-চতুর্থাংশ অধিবাসী। একথা শুনে তারা তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করেন। তারপর তিনি বললেনঃ আমি আশা করি তোমরাই হইবে জান্নাতের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী। একথা শুনে তারা তাকবীর ধ্বনি দেন। তিনি আবার বললেনঃ আমি আশা করি তোমরাই হইবে জান্নাতের অর্ধেক অধিবাসী। তারা এবারও তাকবীর ধ্বনি দেন। রাবী বলেন, তিনি দুই-তৃতীয়াংশের কথা বলেছেন কি-না তা আমার মনে নেই।
সনদ দুর্বল, তালীকুম রাগীব [৪/২২৯] সূরা হজ্জ তাফসীর -এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩১৬৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। চলার পথে তিনি ও তাহাঁর সাহাবিগণ আগে পিছে হয়ে গেলেন। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূরা হাজ্জ এর প্রথম এ দুটি আয়াতের মাধ্যমে নিজের আওয়াজ বড় করলেনঃ “হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। কিয়ামাতের প্রকম্পন এক ভয়াবহ ব্যাপার … বস্তুত আল্লাহ্ তাআলার শাস্তি বড় কঠিন”-[সূরা হাজ্জ ১-২]। তাহাঁর সাহাবীগন এই ডাক শুনতে পেয়ে নিজেদের জন্তু্যানের গতি দ্রুত করিলেন এবং জেনে নিলেন যে, তিনি কিছু বলবেন। [সাহাবীগন তাহাঁর নিকট পৌঁছালে] তিনি বললেনঃ তোমরা কি জানো সেই দিন কোনটি? তারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসুলই বেশী ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা সেই দিন যেদিন আল্লাহ্ তাআলা আদম [আঃ] কে ডেকে বলবেন- “হে আদম দোজখের ফৌজ তৈরি কর। তিনি বলবেনঃ হে আমার প্রতিপালক, দোজখের ফৌজ কারা এবং তাহাদের সংখ্যা কত? তিনি বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন দোজখে যাবে এবং একজন জান্নাতে যাবে”। সাহাবীগণ এই কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তখন কারো মুখে হাসি ছিলনা। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই অবস্থা দেখে বললেনঃ কাজ করিতে থাকো এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! তোমরা দুটি জীবের সাক্ষাৎ পাবে। তাহাদের সাথে যাদের সাক্ষাৎ হইবে তাহাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হইবে। এ দুটি জীব হল ইয়াযুজ ও মাযুজ এবং আদম সন্তান ও ইবলিশের সন্তানদের মধ্যে যারা মারা গেছে তারা। বর্ণনাকারী বলেন, এতে লোকদের চিন্তা ও বিষণ্ণতা কিছুটা দূর হয়ে গেলো। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কাজ কর এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রান! [অন্যান্য জাতীর তুলনায়] তোমাদের দৃষ্টান্ত হল, উটের পার্শ্বদেশের তিলক অথবা চতুষ্পদ জন্তুর বাহুর দাগের মত।
সহীহ বোখারি [৪৭৪১], মুসলিম [১/১৩৯] আবু ঈসা বলেন, হাদিস টি হাসান সহীহ। সূরা হজ্জ তাফসীর -এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৭০. আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [বাইতুল্লাহ্র] বাইতুল আতীক নাম এজন্য হয়েছে যে, কোন স্বেচ্ছাচারীই এর উপর কর্তৃত্ব প্রসার করিতে সমর্থ হয়নি।
জঈফ, যঈফা [৩২২২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। অন্য এক সূত্রে যুহরী হইতে এ হাদীস মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কুতাইবা হইতে তিনি লাইস হইতে তিনি আকীল হইতে তিনি যুহরী [রঃ]হইতে এই সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে। সূরা হজ্জ তাফসীর -এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩১৭১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে যখন মক্কাবাসীরা মক্কা হইতে নির্বাসিত করে, তখন আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, এই লোকেরা তাহাদের নাবীকে বের করে দিয়েছে। এদের নিঃসন্দেহে অনিষ্ট হইবে। এ কথার পটভূমিকায় আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে তাহাদেরকে অনুমতি দেয়া হল। কেননা তাহাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা অবশ্যই তাহাদের সাহায্য করিতে সক্ষম। এরা সেই লোক, যাদেরকে অন্যায়ভাবে নিজেদের ঘর-বাড়ী হইতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। তাহাদের দোষ ছিল এই যে, তারা বলতঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাদের রব” [সূরাঃ আল-হাজ্জ- ৩৯-৪০]। আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি বুঝে গেলাম, শীঘ্রই লড়াই বেধে যাবে।
সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আবদুর রহমান ইবনি মাহদী প্রমুখ-সুফিয়ান হইতে তিনি আমাশ হইতে তিনি মুসলিম আল-বাতীন হইতে তিনি সাঈদ ইবনি যুবাইর-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। মুহাম্মদ ইবনি বাশশার, আবু আহমাদ আয-যুবাইরী সুফইয়ানের সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তাতে ইবনি আব্বাসের উল্লেখ আছে। একাধিক রাবী-সুফিয়ান হইতে তিনি আমাশ হইতে তিনি মুসলিম আল-বাতীন হইতে তিনি সাঈদ ইবনি যুবাইর [রঃ]সূত্রে উক্ত হাদীস মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। সূরা হজ্জ তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩১৭২. সাঈদ ইবনি জুবাইর [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে মক্কা হইতে বের করা হলে এক ব্যক্তি বলেন, তারা তাহাদের নাবীকে বের করে দিয়েছে। তখন অবতীর্ণ হয়ঃ “যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাহাদেরকে যাদের সাথে যুদ্ধ করা হয়, কেননা তাহাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে; আর আল্লাহ্ তাহাদেরকে সাহায্য করিতে অবশ্যই সক্ষম; যারা বহিষ্কৃত হয়েছে অন্যায়ভাবে তাহাদের ঘর-বাড়ী থেকে” [সূরাঃ আল-হাজ্জ- ৩৯-৪০] অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীগণকে।
এই হাদিসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply