সূরা সাদ তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন

সূরা সাদ তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন

সূরা সাদ তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা সা’দ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৩৯ঃ সূরা সাদ তাফসীর

৩২৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আবু তালিব রোগাক্রান্ত হলে কুরাইশরা তার নিকটে আসে এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]ও আসেন। আবু তালিবের নিকট এক ব্যক্তির বসার মত স্থান ছিল। আবু জাহল তাকে মানা করিতে উঠে। রাবী বলেনঃ এসব লোক আবু তালিবের নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে। আবু তালিব বলেন, হে ভাতিজা! তুমি তোমার জাতির নিকটে কি চাও? তিনি বললেনঃ আমি তাহাদের কাছে একটি বাক্য মেনে নেয়ার ইচ্ছা করছি। তারা এটা মেনে নিলে আরবরা তাহাদের মতানুবর্তী হইবে এবং অনারবরা তাহাদেরকে জিযিয়া দিবে। আবু তালিব বলিলেন, একটি বাক্য? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, একটি বাক্য। তিনি আবার বললেনঃ হে চাচা! আপনারা বলুন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তারা বলল, শুধু মাত্র একজন মাবূদ? “এধরণের কথা তো আমরা নিকট অতীতের জাতিসমূহের নিকটে শুনিনি? এটা একটা অলীক উক্তিমাত্র” [সূরা: সাদ—৭]। রাবী বলেনঃ তাহাদের প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয় : “সাদ। উপদেশে পূর্ণ কুরআনের শপথ! বরং এই সত্য প্রত্যাখানকারী লোকেরাই চরম অহংকার ও হঠকারিতায় ডুবে আছে। এদের পূর্বে আমরা এমন কত জাতিকেই না ধ্বংস করেছি। তখন তারা চিৎকার করে উঠেছে। কিন্তু তখন আর মুক্তি পাওয়ার উপায় ছিল না। ……….এমন কথা তো আমরা নিকট অতীতের জাতিসমূহের নিকটে শুনিনি! এটা একটা অলীক কথামাত্র” [সূরা: সাদ – ১-৭]।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেন ; এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ সুফইয়ান আমাশের সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা সাদ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২৩৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আজ রাতে আমার মহান ও বারাকাতময় প্রভু সবচেয়ে সুন্দর চেহারায় আমার নিকট এসেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মতে তিনি বলেছেনঃ ঘুমের মধ্যে স্বপ্নযোগে। তারপর তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিবাদ করছে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি বললাম, না। তিনি তাহাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। এমনকি আমি আমার দুই স্তনের বা বুকের মাঝে এর শীতলতা অনুভব করলাম। আসমান-যামীনে যা কিছু আছে আমি তা অবগত হলাম। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিবাদ করছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, কাফফারাত নিয়ে বিবাদ করছে। কাফফারাত অর্থ “নামাযের পর মাসজিদে বসে থাকা, নামাযের জামাআতে উপস্থিতির জন্য হেঁটে যাওয়া এবং কষ্ঠকর সময়েও সুষ্ঠুভাবে উযু করা”। যে লোক এসব কাজ করিবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকিবে, কল্যাণের সাথে মরবে এবং তার জন্ম দিনের মত গুনাহ হইতে পবিত্র হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আরো বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি যখন সালাত আদায় করিবে তখন এই দুআ পড়বেঃ

“আল্লাহুম্মা ইন্নী আসাআলুকা ফিলাল খাইরাতি ওয়া তারকাল মুনকারাতি ওয়া হুব্বাল মাসাকীনি ওয়া ইযা আরাদতা বি-ইবাদিকা ফিতনাতান ফাক্‌বিযনী ইলাইকা গাইরা মাফতূনিন!”

[হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ভাল কাজ করার, খারাপ কাজ ত্যাগ করার এবং গরীব-নিঃস্বদের ভালবাসার মনোষ্কামনা চাই। তুমি যখন তোমার বান্দাদের কঠিন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করার ইচ্ছা কর, তখন আমাকে এ ফিতনায় জড়িয়ে পড়ার আগেই তোমার নিকট উঠিয়ে নাও]।

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরো বলেনঃ দারাজাত ও মর্যাদার স্তর বলিতে বুঝায়ঃ সালামের প্রচার প্রসার ঘটানো, মানুষকে খাওয়ানো এবং রাতের অন্ধকারে মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে তখন [তাহাজ্জুদ] নামায আদায় করা।

সহীহঃ আয্‌ যিলা-ল [৩৮৮], তালীকুর রাগীব [১/৯৮, ১২৬/১]। আবু ঈসা বলেন, বর্ণনাকারীগণ আবু ক্বিলাবাহ্‌ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর মধ্যখানে আরোও একজন বর্ণনাকারীর উল্লেখ করিয়াছেন। ক্বাতাদাহ্‌ এ হাদীস আবু ক্বিলাবাহ্‌ হইতে, তিনি খালিদ ইবনিল লাজলাজ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে, এই সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা সাদ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৩৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার প্রতিপালক প্রভু সর্বোত্তম চেহারায় আমার নিকট আসলেন। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, হে আমার রব! আমি উপস্থিত, আমি হাযির। তিনি প্রশ্ন করেনঃ ঊর্ধ জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিবাদ করছে? আমি উত্তর দিলাম, প্রভু! আমি জানি না। তিনি তাহাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। এমনকি আমি এর শীতলতা আমার উভয় স্তনের মধ্যখানে [বুকে] অনুভব করলাম। পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি জেনে নিলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, হে আমার রব! আমি আপনার সামনে উপস্থিত আছি। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, ঊর্ধলোকের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি জবাব দিলাম, মর্যাদা বৃদ্ধি, কাফ্‌ফারাত লাভ, পদব্রজে জামাআতে যোগদান, কষ্টকর অবস্থায়ও উত্তমরূপে উযূ করা এবং এক ওয়াক্তের নামায আদায় করার পর পরের ওয়াক্তের নামাযের অপেক্ষায় থাকা ইত্যাদি বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে [একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করছে]। যে লোক এগুলোর হিফাযাত করিবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকিবে, কল্যাণময় মৃত্যুবরণ করিবে এবং তার জননী তাকে প্রসব করার সময়ের মত গুনাহ মুক্ত হয়ে যাবে।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব। মুআয ইবনি জাবাল ও আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ –এর বরাতেও নাবী [সাঃআঃ] হইতে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীস মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.]-এর বরাতে নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনেক দীর্ঘাকারে বর্ণিত রয়েছে। তাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। ফলে আমার গভীর ঘুম এসে গেল। ঘুমের ভিতর আমি আমার প্রতিপালককে সুন্দরতম চেহারায় দেখিতে পেলাম। তিনি প্রশ্ন করিলেন, ঊর্ধজগতের অধিবাসীরা কি বিষয়ে বিবাদ করছে… শেষ পর্যন্ত। সূরা সাদ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৩৫. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন প্রত্যুষে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করিতে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হন। এমনকি আমরা সূর্য উদিত হয়ে যাওয়ার আশংকা করলাম। তিনি তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলে সালাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সংক্ষেপে সালাত আদায় করিলেন। তিনি সালাম ফিরানোর পর উচ্চৈঃস্বরে আমাদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা যেভাবে সারিবদ্ধ অবস্থায় আছ সেভাবেই থাক। তারপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসলেন অতঃপর বললেনঃ সকালে তোমাদের নিকট আসতে আমাকে কিসে বাধাগ্রস্ত করেছে তা এখনই তোমাদেরকে বলছি। আমি রাত্রে উঠে উযূ করলাম এবং সামর্থ্যমত নামায পড়লাম। নামাযের মধ্যে আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পরলাম। অতঃপর আমি ঘুমিয়ে পরলাম, এমন সময় আমি আমার বারাকাতময় প্রভুকে খুব সুন্দর অবস্থায় [স্বপ্নে] দেখিতে পেলাম। তিনি বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললামঃ প্রভু! আমি উপস্থিত। তিনি বলিলেন, ঊর্ধজগতের অধিবাসীগণ [শীর্ষস্থানীয় ফেরেশতাগণ] কি ব্যাপারে বিতর্ক করছে? আমি বললামঃ প্রভু! আমি জানি না। আল্লাহ তাআলা এ কথা তিনবার বলিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি তাঁকে দেখলাম যে, তিনি তাহাঁর হাতের তালু আমার দুই কাঁধের মাঝখানে রাখলেন। আমি আমার বক্ষস্থলে তাহাঁর হাতের আঙ্গুলের শীতলতা অনুভব করলাম। ফলে প্রতিটি জিনিস আমার নিকট আলোকোদ্ভাসিত হয়ে উঠল এবং আমি তা জানতে পারলাম। আল্লাহ তাআলা বলিলেন, হে মুহাম্মদ! আমি বললামঃ প্রভু! আমি আপনার নিকট হাযির। তিনি বলিলেন, ঊর্ধজগতের বাসিন্দাগণ কি ব্যাপারে বিতর্ক করছে? আমি বললামঃ কাফফারাত প্রসঙ্গে [তারা বিতর্ক করছে]। তিনি বলেন, সেগুলো কি? আমি বললামঃ হেঁটে সালাতের জামাআতসমূহে হাযির হওয়া, নামাযের পর মাসজিদে বসে থাকা এবং কষ্টকর অবস্থায়ও উত্তমরূপে উযূ করা। তিনি বলিলেন, তারপর কি ব্যাপারে [তারা বিতর্ক করছে]? আমি বললামঃ খাদ্যপ্রার্থীকে আহার্য দান, নম্রতার সাথে কথা বলা এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে সেই সময় সালাত আদায় করা প্রসঙ্গে। আল্লাহ তাআলা বলিলেন, তুমি কিছু চাও, বলঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ভাল ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদনের, মন্দ কাজসমূহ বর্জনের, দরিদ্রজনদের ভালবাসার তাওফীক চাই, তুমি আমায় ক্ষমা কর ও দয়া কর। তুমি যখন কোন গোত্রকে বিপদে ফেলার ইচ্ছা কর তখন তুমি আমাকে বিপদমুক্ত রেখে তোমার কাছে তুলে নিও। আমি প্রার্থনা করি তোমার ভালবাসা, যে তোমায় ভালবাসে তার ভালবাসা এবং এমন কাজের ভালবাসা যা তোমার ভালবাসার নিকটবর্তী করে দেয়।” রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ স্বপ্নটি অবশ্যই সত্য। অতএব তা পড়, তারপর তা শিখে নাও।

সহীহঃ মুখতাসার আল উলুব্বি [১১৯/৮০], আয্‌-যিলা-ল [৩৮৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ। আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, এ হাদীস হাসান সহীহ। তিনি আরো বলিলেন, আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ ইবনি জাবির হইতে ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম বর্ণিত হাদীসের তুলনায় উক্ত হাদীস অনেক বেশী সহীহ। খালিদ ইবনিল লাজলাজ-আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ আল-হাযরামী [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি…। এ হাদিসটি সংরক্ষিত নয়। ওয়ালীদ তার হাদীসে একই রকম উল্লেখ করিয়াছেন-আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ [রাদি.] বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে শুনিয়াছি। বিশর ইবনি বাক্‌র এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ ইবনি জাবির এই সনদে আবদুর রহমান ইবনি আয়িশ [রাদি.]-এর বরাতে নাবী [সাঃআঃ] হইতে। এটি অনেক বেশী সহীহ। আবদূর রহমান ইবনি আয়িশ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] হইতে কিছু শুনেননি।  এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply