সূরা মারিয়াম তাফসির । তাফসিরুল কোরআন
সূরা মারিয়াম তাফসির । তাফসিরুল কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা মারঈয়াম আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-২০ঃ সূরা মারিয়াম তাফসির
৩১৫৫. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে নাজরান নামক জায়গায় পাঠালেন। সে অঞ্চলের [খৃষ্টান] অধিবাসীরা আমাকে বললো, তোমরা কি পাঠ কর না : “হে হারূনের বোন”- [সূরা মারইয়াম ২৮]? অথচ মূসা ও ঈসা [আঃ]- এর মাঝখানে সময়ের যে ব্যবধান ছিল তাতো জানা কথা। তাহাদের এ প্রশ্নের কি জবাব যে আমি দিতে পারি তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাহাদেরকে এতটুকুও কি জানাতে পারলে না যে, তারা [বানী ইসরাঈল] নিজেদের নাম রাখতো তাহাদের পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও মহান ব্যক্তিদের নামানুসারে।
হাসান : মুখতাসার তুহফাতুল ওয়াদুদ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আমরা এ হাদীস শুধু ইবনি ইদরীসের সূত্রেই জেনেছি। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩১৫৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঠ করিলেন : “তাহাদেরকে সেদিনের ভয় দেখাও, যেদিন চূড়ান্ত ফায়সালা করা হইবে এবং পরিতাপ করা ব্যতীত আর কোন বিকল্প থাকিবে না”- [সূরা মারইয়াম ৩৯]। তিনি বললেনঃ [কিয়ামাত্বের দিন লোকদের সামনে] মৃত্যুকে হাযির করা হইবে, যেন তা সাদা ও কালো মিশ্রিত বর্ণের একটি মেষ। এটাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝের প্রাচীরের সাথে দাঁড় করিয়ে বলা হইবে, হে জান্নাতের অধিবাসীগণ, শোন। তারা মাথা তুলবে। তারপর বলা হইবে, হে জাহান্নামের বাসিন্দারা শোন। তারাও মাথা তুলবে। তারপর বলা হইবে, তোমরা কি এটাকে চিনতে পেরেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ, এটা মৃত্যু। তারপর এটাকে শুইয়ে যবেহ করা হইবে। আল্লাহ তাআলা যদি জান্নাতবাসীদের সেখানে চিরস্থায়ী জীবনের মীমাংসা না করিতেন, তাহলে তারা [এ দৃশ্য দেখে] আনন্দের আতিশয্যে মারা যেত। আল্লাহ তাআলা যদি জাহান্নামীদের সেখানে চিরস্থায়ী জীবনের মীমাংসা না করিতেন, তাহলে তারাও [এ দৃশ্য দেখে] অনুশোচনা ও অনুতাপ করিতে করিতে মারা যেত।
“আল্লাহ তাআলা যদি জান্নাতীদের সেখানে চিরস্থায়ী জীবনের ফায়সালা না করিতেন…” অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ। বোখারি, মুসলিম, দেখুন ২৫৫৮ নং হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫৭. ক্বাতাদাহ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
আল্লাহ তাআলার বাণী : “আর আমরা তাকে উচ্চতর স্থানে উন্নীত করেছি”- [সূরা মারইয়াম ৫৭] প্রসঙ্গে তিনি [কাত্বাদাহ] বলেন, আমাদের নিকট আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে যখন মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয় আমি তখন ইদরীস [আঃ]- চতুর্থ আসমানে দেখেছি।
সহীহ : মুসলিম [১/১০০], দীর্ঘ বর্ণনা। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাঈদ ইবনি আবী আরূবা- হাম্মাম প্রমুখ-ক্বাতাদাহ হইতে, তিনি আনাস হইতে, তিনি মালিক ইবনি সাসাআহ [রাদি.]-এর সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে মিরাজের হাদীসটি দীর্ঘ আকারে বর্ণনা করিয়াছেন। আমার মতে এটি তারই সংক্ষিপ্তরূপ। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জিবরীল [আঃ]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আপনি যে কতবার আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তার বেশি সাক্ষাৎ করিতে কিসে আপনাকে বাধা দেয়? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “আপনার রবের নির্দেশ ব্যতীত আমরা অবতীর্ণ হই না। আমাদের যা কিছু সম্মুখে আছে, আমাদের পিছনে যা কিছু আছে এবং এ দুয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে, সে সবের প্রভু তিনিই। আপনার প্রতিপালক কখনো ভুলে যান না” [সূরা মারইয়াম ৬৪]।
সহীহ : বোখারি [৪৭৩১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। হুসাইন ইবনি হুরাইস ওয়াকী হইতে তিনি আমর ইবনি যার হইতে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫৯. সুদ্দী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুররা আল-হামদানীকে আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তাআলার এ বাণী প্রসঙ্গে : “তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করিবে না”- [সূরা মারইয়াম ৭১]। তিনি আমাকে হাদীস বর্ণনা করে শুনান যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] তাহাদেরকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আগুনের উপর দিয়ে লোকজন অতিক্রম করিবে এবং যার যার কৃতকর্ম মোতাবেক তা অতিক্রম করিতে থাকিবে। বিজলি চমকানোর মতো তাহাদের প্রথম দল দ্রুত অতিক্রম করে যাবে। পরবর্তী দলটি বাতাসের বেগে, তারপর দ্রুতগামী ঘোড়ার বেগে, তারপর উষ্ট্রারোহীর বেগে, তারপর মানুষের দৌড়ের গতিতে, তারপর হেটে চলার গতিতে অতিক্রম করিবে।
সহীহ : সহীহাহ [৩১১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীস সুদ্দীর সূত্রে শুবাহ [রঃ]বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু এটাকে তিনি মারফূরূপে বর্ণনা করেননি। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৬০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আল্লাহ তাআলার বাণী : “তোমাদের সকলকেই তার উপর দিয়ে পার হইতে হইবে”- [সূরা মারইয়াম ৭১] প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লোকেরা ক্বিয়ামাত দিবসে তার [পুলসিরাত] উপর দিয়ে পার হইবে। তারা এটা পার হইবে নিজ নিজ কৃতকর্ম মোতাবেগ [বিভিন্ন গতিবেগে]।
সহীহ : মাওকূফ তবে মারফূ এর মতই তার হুকুম। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার-আবদুর রহমান ইবনি মাহদী হইতে, তিনি শুবাহ হইতে, তিনি সুদ্দী [রঃ]হইতে উপরের হাদীসের মতো বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রহমান বলেন, আমি শুবাহকে বললাম, উল্লিখিত হাদীসটি ইসরাঈল আমাকে সুদ্দীর সূত্রে, তিনি মুররার সূত্রে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.]-এর সূত্রে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। শুবাহ [রঃ]বলেন, আমি এ হাদীস সুদ্দীর নিকট মারফূভাবেই শুনিয়াছি। কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই [মারফূ হিসেবে বর্ণনা করা] ত্যাগ করেছি। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দাকে যখন আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন তখন জিবরীলকে ডেকে বলেনঃ আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসি। অতএব তুমিও তাকে ভালবাস। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আসমানবাসীদের মধ্যে জিবরীল তখন [এ কথা] ঘোষণা করেন। তারপর যমীনবাসীদের অন্তরে তার জন্য ভালবাসা অবতীর্ণ হয়। এটাই আল্লাহ তাআলার বাণীর মধ্যে ফুটে উঠেছেঃ “যারা ঈমান আনায়ন করেছে এবং উত্তম কার্য সম্পাদন করেছে খুব শীঘ্রই দয়াময় রহমান [লোকদের অন্তরে তাহাদের প্রতি] ভালবাসার উদ্রেক করবেন”।–[সূরা মারইয়াম ৯৬]। অপর দিকে যখন আল্লাহ তাআলা কাউকে ঘৃণা করেন তখন জিবরীলকে ডেকে বলেনঃ আমি অমুককে ঘৃণা করি। জিবরীল তখন আসমানবাসীদের মধ্যে এটা ঘোষণা করেন। তারপর যমীনের অধিবাসীদের মনে তার জন্যে ঘৃণা অবতীর্ণ হইতে থাকে।
সহীহঃ যঈফাহ [২২০৭] নং হাদীসের অধীনে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি আবদুর রহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রঃ]তার বাবা হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৬২. মাসরূক [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, খাব্বার ইবনিল আরাত্তি [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আমার একটি স্বত্ত্ব আস ইবনি ওয়ায়িল আস-সাহমীর যিম্মায় ছিল। এ ব্যাপারে তাগাদা দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি তার নিকট আসলাম। সে বলল, যে পর্যন্ত তুমি মুহাম্মাদের নবুওয়াত অস্বীকার না করিবে, সে পর্যন্ত আমি তোমার স্বত্ত্ব ফিরিয়ে দিব না। আমি বললাম, তুমি মৃত্যুর পর ক্বিয়ামত দিবসে আবার জীবিত হয়ে না উঠা পর্যন্ত তা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে বলল, আমি মৃত্যুবরণ করব এবং আবার জীবিত হব? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তাহলে আমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও সেখানে থাকিবে আর সেখানে তোমার পাওনাটা ফিরিয়ে দিব। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়ঃ “তুমি কি সেই লোককে দেখেছ, যে আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে এবং সে বলেছে, আমাকে তো ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে ধন্য করা হইবে”-[সূরা মারইয়াম ৭৭]।
সহীহঃ বোখারি [৪৭৩২], মুসলিম। হান্নাদ-আবু মুআবিয়াহ হইতে, তিনি আমাশ [রঃ]হইতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মারিয়াম তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply