সূরা জুমার তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন

সূরা জুমার তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন

সূরা জুমার তাফসীর । তাফসিরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা যুমার আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৪১ঃ সূরা জুমার তাফসীর

৩২৩৬. আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ]ঃ “তারপর ক্বিয়ামাতের দিন নিশ্চয় তোমরা নিজেদের প্রভুর সামনে পরস্পর বাক-বিতণ্ডায় জড়িত হইবে” – [সূরা যুমারঃ ৩১], তখন যুবাইর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! পার্থিব জীবনে আমাদের মধ্যে যে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে তার মীমাংসা হওয়ার পর কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যুবাইর [রাদি.] বলিলেন, তাহলে বিষয়টি তো খুবই কঠিন।

হাসানঃ সহীহাহ [৩৪০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ । সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩২৩৭. আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ আয়াত পাঠ করিতে শুনিয়াছি : “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, আল্লাহ তাআলার রাহমাত হইতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”। [সূরা: আয-যুমার -৫৩]। তিনি [ এ ব্যাপারে ] কারো ভয় করেন না।

আবু ঈসা বলেন : এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা হাওশাবের সূত্রে শুধুমাত্র সাবিত হইতেই এ হাদীসটি জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, শাহর ইবনি হাওশাব উম্মু সালমা আনসারিয়া হইতে হাদীস বর্ণনা করেন। উম্মু সালামা আনসারিয়ার নাম আসমা বিনতু ইয়াযীদ। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২৩৮. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , জনৈক ইয়াহুদী নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ ! আল্লাহ তাআলা আসমানসমূহ এক আঙ্গুলে, পাহাড়গুলা এক আঙ্গুলে , যামীনসমূহ এক আঙ্গুলে এবং অপরাপর সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলে ধারন করে বলবেনঃ আমিই রাজাধিরাজ। বর্ণনাকারী বলেন, তার এ কথায় নাবী [সাঃআঃ] হেসে দিলেন, এমনকি তাহাঁর সামনের মাড়ির দাঁতগুলা প্রকাশ হয়ে পড়ল। তিনি বলেনঃ “ এই লোকেরা আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত কদর করিল না। ক্বিয়ামাতের দিন গোটা পৃথিবী তাহাঁর মুঠোর মধ্যে আবদ্ধ থাকিবে এবং আকাশমণ্ডলী তাহাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায় থাকিবে “—[সূরা যুমার ৬৭]।

সহীহঃ আয যিলা-ল [৫৪১, ৫৪৪], বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৩৯. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] [ইয়াহুদীর কথায়] আশ্চর্য হয়ে এবং এর সমর্থন করে হেসে দিলেন।

সহীহঃ প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৪০. ইবনি আব্বাস [রা:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ এক ইয়াহূদী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]র নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ হে ইয়াহুদী! কিছু শুনাও। সে বলল, হে আবুল কাসিম! যখন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহ এক আঙ্গুলে, যমিনসমূহ এক আঙ্গুলে, পানি এক আঙ্গুলে, পাহাড়গুলো এক আঙ্গুলে এবং আর সকল সৃষ্টি এক আঙ্গুলে ধারণ করবেন এ প্রসঙ্গে আপনি কি বলেন? রাবী আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনিস সালত তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কনিষ্ঠা হইতে বৃদ্ধা আঙ্গুলী পর্যন্ত ইঙ্গিত করে দেখালেন। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন : “এই লোকেরা আল্লাহর প্রতি যতটুকু মর্যাদা দেয়া উচিত, তারা তাঁকে তা দেয়নি”। [সূরা আয-যুমার –৬৭]।

যইফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন : এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। এটা শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা জেনেছি। আবু কুদাইনার নাম ইয়াহইয়া ইবনিল মুহাল্লাব। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল এ হাদীস হাসান ইবনি শুজার সূত্রে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনিস সালতের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২৪১. মুজাহিদ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] [আমাকে] প্রশ্ন করেন, তুমি কি জান জাহান্নাম কত প্রশস্ত? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, হাঁ! আল্লাহর শপথ! তুমি জান না। “আয়িশাহ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে , তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে নিম্নের আয়াত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলেন [অনুবাদ]ঃ “ক্বিয়ামাতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাহাঁর কব্জার ভিতর থাকিবে এবং আকাশমণ্ডলী তাহাঁর ডান হাতে গুটানো থাকিবে” [সূরা যুমার ৬৭]। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সেদিন লোকেরা কোথায় থাকিবে? তিনি বললেনঃ জাহান্নামের উপরকার পুলসিরাতের উপর।

এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, উল্লেখিত সনদসুত্রে গারীব। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৪২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! “ক্বিয়ামাতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাহাঁর হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমণ্ডলী থাকিবে তাহাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায়”– [সূরা যুমার ৬৭], সেদিন মুমিনগণ কোথায় থাকিবে? তিনি বললেনঃ হে আয়িশাহ! পুলসিরাতের উপর।

সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ ।  এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৪৩. আবু সাঈদ আল–খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শিঙ্গা ফুঁৎকারকারী মুখে শিঙ্গা নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে কান খাঁড়া করে অপেক্ষায় আছেন, শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার আদেশ পাওয়া মাত্র তিনি ফুঁ দিবেন, এ অবস্হায় আমি কিভাবে নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারি? মুসলিমরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে দুআ করব? তিনি বললেনঃ “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকীল, তাওয়াককালনা আলাল্লাহি রাব্বিনা” আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই আমাদের অতি উত্তম অভিভাবক, আমরা আমাদের রব আল্লাহ তাআলার উপর নির্ভর করি। সুফইয়ান তার বর্ণনায় কখনো, “তাওয়াককালনা আলাল্লাহ” এর পরিবর্তে “আলাল্লাহি তাওয়াককালনা” বর্ণনা করিয়াছেন।

সহীহঃ সহীহাহ [১০৭৮, ১০৭৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আমাশ হাদীসটী আতিয়ার সুত্রে আবু সাঈদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৪৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সূর কি? তিনি বললেনঃ একটি শিং, তাতে ফুঁ দেয়া হইবে।

সহীহঃ সহীহাহ [১০৮০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা শুধু সুলাইমান আত-তাইমী কতৃক হাদীসটি সম্পর্কে জেনেছি। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৪৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী মাদীনার বাজারে উচ্চৈঃস্বরে বললঃ না! সেই সৃষ্টিকর্তার শপথ, যিনি মুসাকে মানবজাতির উপর মর্যাদা দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক আনসার লোক এ কথা শুনার সাথে সাথে হাত তুলে ইয়াহুদীর মুখে থাপ্পর মেরে দেয়। সে বলল, তুমি এ কথা বলছ, অথচ আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] আমাদের মধ্যে বর্তমান আছেন? [উভয়ে মহানাবীর নিকট উপস্থিত হলে] রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ “আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হইবে। তখন আসমান-জমীনের সকলে মূর্ছিত হয়ে পরবে, আল্লাহ তাআলা যাকে জ্যান্ত রাখতে চান সে ছাড়া। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হইবে। সহসা তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকিবে” [সূরা যুমার ৬৮]। আমিই সবার আগে মাথা তুলে দেখিতে পাবো যে, মুসা [আঃ] আরশের পায়াসমুহের একটি ধরে আছেন। আমি জানি না, তিনি কি আমার আগে মাথা তুলেছেন, না তিনি ঐ সব লোকের দলে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা [জ্ঞানশূন্য হওয়া হইতে] মুক্ত রেখেছেন। যে লোক বলে যে, আমি ইউনুস ইবনি মাত্তা [আঃ] এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ সে মিথ্যা বলে।

হাসান সহীহঃ তাখরীজুত তাহবিয়াহ [১৬২], বোখারি অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব । সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩২৪৬. আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ একজন ঘোষক [জান্নাতের মধ্যে] ঘোষণা দিবে, এখন হইতে তোমরা জীবিত থাকিবে, আর কখনো মরবে না। তোমরা সুস্থ থাকিবে, কখনো অসুস্থ হইবে না। তোমরা যুবক থাকিবে, কখনো বৃদ্ধ হইবে না। তোমরা অফুরন্ত ভোগবিলাসের ভিতর থাকিবে, অভাব-অনটন কখনো তোমাদের স্পর্শ করিবে না। এটাই আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীর তাৎপর্যঃ “তোমরা পার্থিব জীবনে যেসব কাজ করেছ তার বিনিময়ে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হলে” –[সূরা যুখরুফ ৭২]।

সহীহঃ মুসলিম [৮/১৪৮]আবু ঈসা বলেন, ইবনিল মুবারাক প্রমুখ সুফিয়ান সাওরীর সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু মারফুরুপে নয়। সূরা জুমার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply