সূরা কাহাফ তাফসীর । তাফসীর উল কুরআন
সূরা কাহাফ তাফসীর । তাফসীর উল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা কা’হফ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-১৯ঃ সূরা কাহাফ তাফসীর
৩১৪৯. সাঈদ ইবনি জুবাইর [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]- কে বললাম, নাওফ আল-বিকালী মনে করেন যে, খাযিরের সাথে যে মূসার সাক্ষাৎ হয়েছিল, তিনি বানী ইসরাঈলের নাবী মূসা [আঃ] নন [এরা দুজন ভিন্ন ব্যক্তি]। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলছে। উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বললেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : বানী ইসরাঈলের জনগণের সামনে মূসা [আঃ] বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, কে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী? তিনি বলেন, আমি সবচেয়ে বড় জ্ঞানী। এতে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন। কেননা তিনি আল্লাহ তাআলার সাথে জ্ঞানকে সম্পৃক্ত করেননি [অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সবচাইতে বড় জ্ঞানী এ কথা বলেননি]। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নিকট ওয়াহী পাঠান, আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত এক বান্দা দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আছে। সে তোমার চাইতে বেশি জ্ঞানী। মূসা [আঃ] বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি কি উপায়ে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করব? আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তুমি থলেতে একটি মাছ লও। মাছটি যেখানে হারিয়ে ফেলবে, সেখানেই সে আছে। অতএব তিনি রওয়ানা হলেন এবং ইউশা ইবনি নূন নামক তাহাঁর যুবক শাগরিদও তাহাঁর সফরসঙ্গী হলেন। মূসা [আঃ] থলের মধ্যে একটি মাছ ভরে নিলেন। তাঁরা দুজনে পায়ে হেঁটে চলতে চলতে একটি প্রকান্ড পাথরের নিকট [সমুদ্রের তীরে] এসে পৌঁছেন। এখানে দুজনই শুয়ে বিশ্রাম নিলেন। থলের মধ্যকার মাছটি নড়াচড়া করিতে করিতে তা হয়ে সমুদ্রে পতিত হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মাছটি দিয়ে পানির স্রোতধারা বন্ধ করে দিলেন। ফলে তা প্রাচীরবৎ হয়ে গেল এবং মাছটির জন্য এভাবে একটি পথের ব্যবস্থা হল। মূসা [আঃ] ও তাহাঁর যুবক সঙ্গীর নিকট এটা খুবই আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছিল। তাঁরা দিনের অবশিষ্ট সময় ও রাতে অগ্রসর হইতে থাকলেন। তাহাঁর সঙ্গী মাছের অবস্থা সম্পর্কে তাঁকে জানাতে ভুলে গেল। ভোর হলে মূসা [আঃ] তাহাঁর সঙ্গীকে বলিলেন, “আমাদের সকালের নাশতা নাও। আজকের সফরে আমরা অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি”-[সূরা কাহফ ৬২]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তাহাদেরকে যে স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সেখান পর্যন্ত পৌঁছতে তাঁরা ক্লান্ত হননি। কিন্তু নির্দেশিত স্থান পার হওয়ার পরই তাঁদেরকে ক্লান্তিতে পেয়ে বসে। “যুবক বলল, আমরা যখন সেই প্রস্তরময় প্রান্তরে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন কি ঘটনা ঘটেছে তা কি আপনি লক্ষ্য করেননি? মাছের প্রতি আমার কোন আমার কোন লক্ষ্য ছিল না। আর শাইতান আমাকে এমনভাবে ভুলিয়ে দিয়েছে যে, আমি আপনার নিকট তা উল্লেখ করিতেও ভুলে গেছি। মাছ তো আশ্চর্য রকমভাবে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেছে। মূসা বলিলেন, আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম”- [সূরা কাহাফ ৬৪]। তাঁরা দুজনেই তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে এলেন।
সুফইয়ান সাওরী [রঃ]বলেন, কিছু লোকের ধারণা যে, এই প্রস্তরময় ময়দানে [বা সমুদ্র তীরেই] আবে হায়াতের ঝর্ণা রয়েছে। এই পানি মৃত ব্যাক্তির উপর ছিটিয়ে দিলে সে জীবিত হয়ে উঠে। এই মাছের কিছু অংশ খাওয়াও হয়েছিল। ঐ ঝর্ণার পানির ফোঁটা মাছের গায়ে পড়লে সাথে সাথে মাছটি জীবিত হয়ে গেল।
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তাঁরা উভয়ে তাহাদের পায়ের চিহ্ন ধরে অগ্রসর হইতে হইতে পূর্বের সেই প্রান্তরে এসে পৌছালেন। তাঁরা দেখিতে পেলেন, এক ব্যক্তি চাদর লম্বা করে গায়ে দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছেন। মূসা [আঃ] তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলিলেন, তোমাদের এ জায়গায় তো সালামের প্রচলন নেই [তুমি মনে হয় একজন আগন্তুক]? তিনি বলিলেন, আমি মূসা [আঃ]। তিনি প্রশ্ন করিলেন, বানী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আপনার নিকট আল্লাহ তাআলার দানকৃত এক বিশেষ জ্ঞান আছে। আমি তা জানি না। আর আল্লাহ তাআলা আমাকেও এক বিশেষ জ্ঞান দিয়েছেন যা আপনি জানেন না। মূসা [আঃ] বললেনঃ “আপনাকে যে জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তা শিখার উদ্দেশে কি আমি আপনার সাথে থাকতে পারি? তিনি বললেনঃ আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। আর যে বিষয়ে আপনার কিছুই জানা নেই, সে বিষয়ে আপনি কেমন করেই বা ধৈর্য ধারণ করিতে পারেন? তিনি বলিলেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। কোন ব্যপারেই আমি আপনার নির্দেশের বিরোধিতা করব না”।– [সূরা কাহফ ৬৬-৬৯]। খাযির [আঃ] তাকে বলিলেন, “ঠিক আছে, আপনি যদি আমার সাথে চলতে থাকেন, তাহলে আপনি আমার নিকট কোন বিষয়ে প্রশ্ন করিতে পারবেন না, যতক্ষণ আমি আপনাকে তা না বলি”- [সূরা কাহফ ৭০]। তিনি [মূসা] বলিলেন, হ্যাঁ ঠিক আছে। খাযির ও মূসা [আঃ] সমুদ্রের তীর ধরে পায়ে হেঁটে চলতে থাকলেন। তাহাদের সামনে দিয়ে একটি নৌকা অতিক্রম করছিল। তাঁরা উভয়ে তাহাদের সাথে কথা বলিলেন এবং তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ করিলেন। তারা খাযিরকে চিনে ফেলল এবং কোন ভাড়া ছাড়াই তাহাদের দুজনকে নৌকায় তুলে নিল। খাযির নৌকার একটি তক্তা খুলে নিলেন। মূসা [আঃ] তাঁকে বলিলেন, লোকেরা আমাদেরকে ভাড়া ছাড়াই নৌকায় তুলে নিল, আর আপনি নৌকাটির ক্ষতি সাধন করিলেন! আপনি কি তাহাদের ডুবিয়ে দিতে চান? “আপনার এ কাজটি খুবই আপত্তিকর। খাযির বলিলেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না? মূসা বলিলেন, আমার ভুলের জন্য আপনি আমাকে পাকড়াও করবেন না। আমার ব্যাপারে আপনি অতটা কড়াকড়ি করবেন না”- [সূরা কাহফ ৭১-৭৩]। তারা নৌকা হইতে নেমে সমুদ্রের তীর ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন। পথিমধ্যে দেখা গেল, একটি বালক অপর কয়েকটি বালকের সাথে খেলাধূলা করছে। খাযির [আঃ] নিজের হাতে ছেলেটির মাথা ধরে তা ঘাড় হইতে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন এবং এভাবে তাকে হত্যা করেন। মূসা [আঃ] তাঁকে বলিলেন, “একটা নিষ্পাপ বালককে আপনি মেরে ফেললেন! অথচ সে তো কাউকে হত্যা করেনি? আপনি তো একটা বড় অন্যায় করে ফেলেছেন। খাযির বলিলেন, আমি কি তোমাকে বলিনি, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে চলতে পারবে না” – [সূরা কাহফ ৭৪-৭৫]? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পূর্বের কথার চেয়ে এ কথাটা বেশি শক্ত ছিল। মূসা [আঃ] বলিলেন, “অতঃপর আমি যদি আপনার নিকট কোন প্রশ্ন করি, তাহলে আপনি আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না। আমাকে প্রত্যাখ্যান করার মত ত্রুটি আপনি আমার মধ্যে পেয়েছেন। পুনরায় তাঁরা দুজনে সামনে এগিয়ে গেলেন এবং যেতে যেতে একটি জনপদে এসে পৌঁছলেন এবং সেখানকার মানুষদের নিকট খাবার চাইলেন। কিন্তু তারা মেহমান হিসেবে তাহাদের মেনে নিতে রাজী হয়নি। তাঁরা সেখানে একটি দেয়াল দেখিতে পেলেন, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল”- [সূরা কাহফ ৭৬-৭৭]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ দেয়ালটি ঝুঁকে পড়েছিল। খাযির তাহাঁর হাত দিয়ে দেয়ালটি ঠিক করে দিলেন। মূসা [আঃ] তাঁকে বললেনঃ আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট আসলাম, যারা আমাদেরকে মেহমান হিসেবেও গ্রহণ করেনি বা আহারও করায়নি। “আপনি ইচ্ছা করলে এই কাজের জন্য মজুরী নিতে পারতেন। খাযির বলিলেন, বাস! এখানেই তোমার ও আমার একত্রে ভ্রমন শেষ। তুমি যেসব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করিতে পারনি, এখন আমি তোমাকে সেসব বিষয়ের তাৎপর্য বলে দিব”- [সূরা কাহফ ৭৭-৭৮]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মূসা [আঃ]- এর উপর রাহমাত অবতীর্ণ করুন। আমাদের আশা ছিল যে, তিনি যদি ধৈর্য ধারণ করিতেন তাহলে আমাদেরকে তাহাদের এসব বিষয়ের তথ্য জানানো হত! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মূসা [আঃ] শর্তের কথা ভুলে যাওয়ার কারণেই প্রথম প্রশ্নটি করিয়াছেন। তিনি আরো বলেনঃ একটি চড়ুই পাখি এসে তাহাদের নৌকার কিনারে বসে, তারপর তা সমুদ্রে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। খাযির তাঁকে বলিলেন, এই চড়ুই পাখি সমুদ্রের পানি যতটুকু কমিয়েছে, আমার ও আপনার জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানভান্ডার হইতে ঠিক ততটুকুই কমিয়েছে।
সাঈদ ইবনি জুবাইর [রঃ]বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] পাঠ করিতেন : “তাহাদের সামনে ছিল এক বাদশাহ যে প্রতিটি নিখুঁত নৌকা জোরপূর্বক কেড়ে নিত”। তিনি আরো পাঠ করিতেন : “আর বালকটি ছিল কাফির”।
সহীহ : বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। যুহরী [রঃ]এ হাদীস উবাইদুল্লাহ ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি উতবাহ ইবনি আব্বাস হইতে, তিনি উবাই ইবনি কাব হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি আবু ইসহাক্ব আল-হামদানী [রঃ]সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস হইতে, তিনি উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু মুযাহিম আস-সামারকান্দী বলেন, আলী ইবনিল মাদানী বলেছেন, আমি হাজ্জে গিয়েছিলাম। আমার হাজ্জের সফরের উদ্দেশ্যই ছিল সুফইয়ান সাওরীকে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনব। তিনি এ হাদীসে একটি বিষয় বর্ণনা করিতেন। সুতরাং আমি তাকে বলিতে শুনিয়াছি, এ হাদীস আমর ইবনি দীনার আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। ইতোপূর্বে আমি এ হাদীস সুফইয়ানকে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি, কিন্তু তিনি উক্ত বিষয় এতে বর্ণনা করেননি। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫০. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ছেলেটিকে খাযির [আঃ] হত্যা করেন, সে আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত তাক্বদীর মতো [সৃষ্টির সূচনাতেই] কাফির ছিল।
সহীহ : যিলা-লুল জান্নাত [১৯৪,১৯৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খাযিরের নাম এজন্যই খাযির [সবুজ] রাখা হয়েছে যে, একদা তিনি শুকনা সাদা মাটির উপর বসলে তাহাঁর নীচের মাটিতে সবুজ, শ্যামলিমার উদগম হয়।
সহীহ : বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫২. আবুদ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলার বাণী, “এই প্রাচীরের নীচে এই ছেলে দুটির জন্য একটি সম্পদ রক্ষিত আছে” [সূরাঃ আল-কাহফ- ৮২]। এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এখানে কান্য অর্থ সোনা-রূপা।
অত্যন্ত দুর্বল, আর রাওযুন নাযীর [৯৪০], হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল-সাফওয়ান ইবনি সালিহ-ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম-ইয়াযীদ ইবনি ইউসুফ আস-সানআনী-ইয়াযীদ ইবনি জাবীর-মাকহূল [রঃ]হইতে এই সনদে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি গারীব। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৩১৫৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] [ইয়াজূয-মাজূযের] প্রাচীর প্রসঙ্গে বলেনঃ এরা প্রত্যেকদিন বাঁধার প্রাচীর খনন করিতে থাকে। যখন তারা এটাকে চৌচির করে ভেদ করার কাছাকাছি এসে যায়, তখন তাহাদের সরদার বলে, ফিরে চলো, কাল সকালে এটাকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলব। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রাচীরটিকে পূর্বের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ করে দেন। তারা প্রতিদিন এভাবে এই প্রাচীর খুঁড়তে থাকে। অবশেষে যখন তাহাদের বন্দীত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে জনবসতিতে পাঠানোর ইচ্ছা করবেন তখন ইয়াজূয-মাজূযদের সরদার বলবে, আজ চলো। আল্লাহ তাআলা চাইলে আগামী কাল সকালে আমরা এই দেয়াল ভেঙ্গে ফেলব। সে তার কথার সাথে ইনশাআল্লাহ বলবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারা ফিরে যাবে। গতকাল দেয়ালটিকে তারা যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিল, এবার ফিরে এসে ঠিক সেই অবস্থায়ই পাবে। এরা দেয়াল ভেদ করে জনপদে ছড়িয়ে পড়বে এবং সমস্ত পানি পান করে শেষ করে ফেলবে। মানুষজন এদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে যাবে। এরা আকাশের দিকে নিজেদের তীর ছুঁড়বে। তাহাদের তীরগুলোকে রক্ত-রঞ্জিত করে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। এরা বলবে, পৃথিবীর বাসিন্দাদের উপর আমরা প্রতিশোধ নিয়েছি এবং আকাশবাসীদের উপরও আধিপত্য বিস্তার করে তাহাদের অধীনস্ত করে নিয়েছি। আল্লাহ তাআলা এদের গলদেশে কীট সৃষ্টি করবেন। ফলে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যমীনের কীট-পতঙ্গ ও জীব-জন্তু এদের গোশত খেয়ে খুব মোটাতাজা হইবে, খুব পরিতৃপ্ত হইবে এবং এগুলোর দেহে বেশ চর্বি জমবে।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [৪০৮০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধু উপর্যুক্ত সনদেই অনুরূপভাবে জেনেছি। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫৪. আবু সাঈদ ইবনি আবী ফাযালাহ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি : আল্লাহ তাআলা যখন ক্বিয়ামত দিবসে, যে দিনের আগমন প্রসঙ্গে কোন সন্দেহ নেই, মানুষদেরকে একত্র করবেন, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করিবে : আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি কাজ করিতে এর মধ্যে কাউকে শারীক করেছে, সে যেন গাইরুল্লাহর নিকট নিজের সাওয়াব চেয়ে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা শারীকদের শিরক হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [৪২০৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীস শুধু মুহাম্মাদ ইবনি বাকর-এর সূত্রে জেনেছি। সূরা কাহাফ তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply