সূরা আল লায়ল এর তাফসীর

সূরা আল লায়ল এর তাফসীর

সূরা আল লায়ল এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা লাইল আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

সূরা আল লায়ল এর তাফসীর

৬৫/৯২/১.অধ্যায়ঃ শপথ দিবাভাগের, যখন তা উদ্ভাসিত হয়। (সুরা আল-লাইল ৯২/২)

(92) سُوْرَةُ وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى

সুরা (৯২) : ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগশা- সূরা আল লায়ল এর তাফসীর )

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {وَكَذَّبَ بِالْحُسْنٰى} بِالْخَلَفِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {تَرَدّٰى} مَاتَ وَ {تَلَظّٰى} تَوَهَّجُ وَقَرَأَ عُبَيْدُ بْنُ عُمَيْرٍ تَتَلَظَّى.

ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, وَكَذَّبَ بِالْحُسْنٰى অর্থ প্রতিদানে অস্বীকার করিল। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, تَرَدّٰى যখন যে মরে যাবে। تَلَظّٰى মানে লেলিহান অগ্নি্। উবায়দ ইবনু উমায়র (রাদি.) শব্দটিকে تَتَلَظّٰى পড়তেন।

৪৯৪৩

আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর একদল সাথীর সঙ্গে সিরিয়া গেলাম। আবুদ্ দারদা আমাদের কাছে এসে বলিলেন, কুরআন পাঠ করিতে পারেন, এমন কেউ আছেন কি? আমরা বললাম, হাঁ, আছে। এরপর তিনি বলিলেন, তাহলে আপনাদের মাঝে উত্তম কারী কে? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিলে তিনি আমাকে বলিলেন, পড়ুন, আমি পড়লাম وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى তিলাওয়াত শুনে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি এ সুরা আপনার উস্তাদ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের মুখে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আমি এ সুরাটি নাবী (সাঃআঃ)-এর মুখে শুনিয়াছি। কিন্তু তারা (সিরিয়াবাসী) তা অস্বীকার করছে। [৩২৮৭] (আ.প্র. ৪৫৭৪, ই.ফা. ৪৫৭৯)

৬৫/৯২/২.অধ্যায়ঃ এবং শপথ তাহাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করিয়াছেন। (সুরা আল-লায়ল ৯৩/৩)

৪৯৪৪

ইব্রাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.)-এর কতক সঙ্গী আবুদ্ দারদা (রাদি.)-এর কাছে আসলেন। তিনিও তাদেরকে তালাশ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.)-এর কিরাআত অনুযায়ী কে কুরআন পাঠ করিতে পারে। আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আমরা সকলেই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস কররেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হাফিয কে? সকলেই আলক্বামার প্রতি ইশারা করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদকে وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى কীভাবে পড়তে শুনেছেন? আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আমি তাকে وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثَى পড়তে শুনিয়াছি। এ কথা শুনে আবুদ্ দারদা (রাদি.) বলিলেন, তোমরা সাক্ষী থাক, আমিও নাবী (সাঃআঃ)-কে এভাবেই পড়তে শুনিয়াছি। অথচ এসব (সিরিয়াবাসী) লোকেরা চাচ্ছে, আমি যেন আয়াতটি وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى পড়ি। আল্লাহর কসম! আমি তাদের কথা মানবো না। [৩২৮৭] (আ.প্র. ৪৫৭৫, ই.ফা. ৪৫৮০)

৬৫/৯২/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে। (সুরা আল-লাইল ৯২/৫)

৪৯৪৫

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাযায় আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। সে সময় তিনি বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। এ কথা শুনে সকলেই বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কি আমরা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বলিলেন, তোমরা আমাল করিতে থাক। কারণ, যাকে যে আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমাল সহজ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি পাঠ কররেন, সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলেও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, যার যা উত্তম তা ত্যাগ করলে, তার জন্য আমি সহজ করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। [১৩৬২] (আ.প্র. ৪৫৪৭৬, ই.ফা. ৪৫৮১)

৬৫/৯২/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে। (সুরা আল-লাইল ৯২/৬)

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ عَنْ أَبِيْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا قُعُوْدًا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ نَحْوَهُ.

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাঃআঃ-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তারপর তিনি উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিলেন। (আঃপ্রঃ ৪৫৪৭৭, ইঃফাঃ ৪৫৮২)

৬৫/৯২/৫.অধ্যায়ঃ

আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। (সুরা আল-লাইল ৯২/৭)

৪৯৪৬

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি কোন একটি জানাযায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি একটি কাঠি হাতে নিয়ে এর দ্বারা মাটি খোঁচাতে খোঁচাতে বলিলেন, তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই, যার স্থান জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্দিষ্ট হয়নি। এ কথা শুনে সকলেই বলিলেন, তাহলে কি আমরা ভাগ্যের উপর ভরসা করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বলিলেন, তোমরা আমাল করিতে থাক। কারণ, যাকে যে আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমালকে সহজ করে দেয়া হইবে। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, সুতরাং কেউ দান করলে, মুতআকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজপথ। আর কেউ কার্পণ্য কররে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে ও যার যা উত্তম তা ত্যাগ করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উপরোক্ত হাদীসটি আমার কাছে মানসূর বর্ণনা করিয়াছেন। তাকে আমি সুলায়মানের হাদীসের উল্টো মনে করেনি। [১৩৬২] (আ.প্র. ৪৫৭৮, ই.ফা. ৪৫৮৩)

৬৫/৯২/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে। (সুরা আল-লাইল ৯২/৮)

৪৯৪৭

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার স্থান জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্দিষ্ট হয়নি। এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কি আমরা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? তিনি বলিলেন, না তোমরা আমাল করিতে থাক। কারণ, যাকে যে আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে আমালকে সহজ করে দেয়া হইবে। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, কাজেই কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা ত্যাগ করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। [১৩৬২] (আ.প্র. ৪৫৭৯, ই.ফা. ৪৫৮৪)

৬৫/৯২/৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে। (সুরা আল-লাইল ৯২/৯)

৪৯৪৮

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরাও তাহাঁর চারপাশে গিয়ে বসলাম। এ সয় তাহাঁর হাতে একটি ছড়ি ছিল। তিনি তার মাতাখানা নামিয়ে, এর দ্বারা মাটি খুঁড়তে শুরু করিলেন। এরপর বলিলেন, তোমাদের কেউ এমন নেই অথবা বলিলেন, কোন সৃষ্টি এমন নেই) জান্নাতে বা জাহান্নামে যার স্থান নির্দিষ্ট হয়নি। কিংবা তাকে ভাগ্যবান বা হতভাগা লেখা হয়নি। এ কথা শুনে এক সহাবী বলিলেন, আমরা তাহলে আমাল ত্যাগ করে আমাদের লিখিত ভাগ্যের উপর কি নির্ভয় করে বসব? আমাদের মধ্যে যে সৌভাগ্যবান, সে তো সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের মাঝেই শামিল হয়ে যাবে, আর আমাদের মাঝে যে হতভাগ্য, সে তো হতভাগা লোকদের আমলের দিকেই এগিয়ে যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমাল সহজ করে দেয়া হইবে। আর দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার মত আমাল সহজ করে দেয়া হইবে। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে।” [১৩৬২] (আ.প্র. ৪৫৮০, ই.ফা. ৪৫৮৫)

৬৫/৯২/৮.অধ্যায়ঃ আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। (সুরা আল-লাইল ৯২/৭)

৪৯৪৯

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক জানাযায় নাবী (সাঃআঃ) উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি কিছু একটা হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার স্থান হয় জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়নি। এ কথা শুনে সবাই বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তাহলে আমাল বাদ দিয়ে আমাদের লিখিত ভাগ্যের উপর কি ভরসা করব? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা আমাল করিতে থাক, কারণ, যাকে যে আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমালকে সহজ করে দেয়া হইবে। যে ব্যক্তি সৌভাগ্যের অধিকারী হইবে, তার জন্য সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের আমালকে সহজ করে দেয়া হইবে। আর যে দুর্ভাগ্যের অধিকারী হইবে, তার জন্য দুর্ভাগা লোকদের আমালকে সহজ করে দেয়া হইবে। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। এবং কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা ত্যাগ করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ)। (আ.প্র. ৪৫৮১, ই.ফা. ৪৫৮৬)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply