সূরা আল ফাতিহার তাফসীর । তাফসিরুল কোরআন

সূরা আল ফাতিহার তাফসীর । তাফসিরুল কোরআন – অনু-২

সূরা আল ফাতিহার তাফসীর । তাফসিরুল কোরআন – অনু-২ >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা ফাতিহা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-২ – সূরা আল ফাতিহার তাফসীর

২৯৫৩- আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক নামায আদায় করলো, অথচ তাতে উন্মুল কুরআন [সূরা আল-ফাতিহা] পাঠ করলো না, তা [নামায] ক্ৰটিযুক্ত, তা ক্ৰটিযুক্ত, তা অসম্পূর্ণ। বর্ণনাকারী [আবদুর রাহমান] বলেন, আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা্! আমি তো অনেক সময় ইমামের পিছনে নামায আদায় করি। তিনি বলিলেন, হে পারস্য সন্তান! তুমি তা নীরবে পাঠ করিবে। কারণ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার ও আমার বান্দাদের মধ্যে নামাযকে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি। নামাযের অর্ধেক আমার এবং অর্ধেক আমার বান্দার। আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তা-ই তাকে দেয়া হয়। বান্দা যখন [নামাযে দণ্ডায়মান হয়ে] বলে, আলহামদু লিল্লাহ রব্বিল আলামীন [সমস্ত প্রশংসা সারা পৃথিবীর প্রভু আল্লাহ তাআলার জন্য], তখন কল্যাণের আধার আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বান্দা বলে, আর-রাহমানির রাহীম [তিনি দয়াময় পরম দয়ালু], তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। যখন বান্দা বলে, মালিকি ইয়াওমিদ্দীন [প্রতিফল দিবসের মালিক], তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছে। এটা হচ্ছে আমার জন্য। আর আমার ও আমার বান্দার জন্য যোগসূত্র হচ্ছেঃ ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন [আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য চাই], সূরার শেষ পর্যন্ত আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই যা সে প্রার্থনা করে। বান্দা বলে, “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম। সিরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায্‌ য-ল্‌লীন” আমাদেরকে সরল ও মযবুত পথ দেখাও। ঐ মানুষদের পথ যাদের তুমি নিয়ামাত দান করেছ। যারা অভিশপ্ত হয়নি, যারা পথহারা হয়নি।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [৮৩৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। শুবাহ, ইসমাঈল ইবনি জাফার প্রমুখ আলা ইবনি আবদুর রাহমান হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি জুরাইজ ও মালিক ইবনি আনাস [রঃ]আলা ইবনি আবদুর রাহমান হইতে, তিনি হিশাম ইবনি আবু যাহরার মুক্তদাস আবুস সায়িব হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি আবু উয়াইস-তার বাবা হইতে, তিনি আলা ইবনি আবদুর রাহমান হইতে, তিনি তার পিতা ও আবুস সাইব হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন।

আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক নামায আদায় করেছে অথচ তাতে উন্মুল কুরআন [সূরা আল-ফাতিহা] তিলাওয়াত করেনি, তার নামায ত্রুটিযুক্ত অপূর্ণাঙ্গ।সহীহ দেখুন পূর্বের হাদীস।ইসমাঈল ইবনি আবু উয়াইসের হাদীসে এর বেশি কিছু নেই। আমি এ হাদীস বিষয়ে আবু যুরআকে প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, দুটি হাদীসই সহীহ। তিনি ইবনি আবী উয়াইস কর্তৃক তার বাবা হইতে, তিনি আলা [রঃ]হইতে এই সূত্রে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন।

আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলাম। তখন তিনি মাসজিদে বসা ছিলেন। লোকেরা বলল, এই তো আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] । আর আমি কোনরূপ নিরাপত্তা লাভ বা লিখিত চুক্তিপত্র করা ছাড়াই এসেছিলাম। আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সমীপে হাযির করা হলে তিনি আমার হাত ধরলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিপূর্বে বলেছিলেন, আমি অবশ্যই আশা করি আল্লাহ তাআলা আমার হাতে তার হাত স্থাপন করবেন। আদী [রাদি.] বলেন, তিনি আমাকে সাথে নিয়ে উঠে চললেন। রাস্তায় এক মহিলা একটি বালকসহ তাহাঁর সাথে দেখা করে। তারা উভয়ে বলে, আপনার নিকট আমাদের একটি প্রয়োজন ছিল। তাহাদের প্রয়োজন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের সাথে দঁাড়িয়ে থাকলেন। তারপর তিনি আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে তাহাঁর ঘরে এলেন। একটি বালিকা তাকে একটি গদি পেতে দিল । তিনি তাতে বসলেন। আমি তার সামনাসামনি বসলাম। তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুনগান করিলেন, তারপর বললেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” [আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই]-এর স্বীকৃতি দান হইতে তোমাকে কিসে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করেছে? এক আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আরো কোন প্রভু আছে বলে কি তোমার জানা আছে? আমি বললাম, না। আদী [রাদি.] বলেন, আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহু আকবার [আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ] বলা হইতে পালাচ্ছ। আল্লাহ তাআলার চাইতে শ্রেষ্ঠতর কিছু আছে বলে তোমার জানা আছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ ইয়াহুদীরা অভিশপ্ত এবং নাসারাগণ পথভ্রষ্ট। আমি বললাম, আমি যে একজন একনিষ্ঠ মুসলিম [আত্মমর্পণকারী] হয়েই আগমন করেছি। আমি দেখলাম, তার চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। তারপর তার নির্দেশক্রমে এক আনসার সাহাবীর বাড়িতে আমাকে মেহমান হিসেবে রাখা হয়। আমি দিনের দুই প্রান্তে তার নিকট হাযিরা দিতাম, একদা বিকেলে আমি তার নিকট হাযির ছিলাম। তখন তার নিকট মেহমান হিসেবে রাখা হয়। আমি দিনের দুই প্রান্তে তার নিকট হাযিরা দিতাম, একদা বিকেলে আমি তার নিকট হাযির ছিলাম। তখন তার নিকট একদল লোক আসলো। তারা সাদা-কালো ডোরাযুক্ত পশমী কাপড় পরিহিত ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [তাহাদের নিয়ে] নামায আদায় করিলেন। তিনি নামায শেষে দাঁড়িয়ে এদেরকে সাহায্যের উদ্দেশ্যে লোকদের উদ্বুদ্ধ করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা এক সা, অর্ধ সা, এক মুঠো, এক মুঠোর অংশবিশেষ, একটি খেজুর বা খেজুরের অংশবিশেষ দান করে হলেও জাহান্নামের তাপ [আগুন] হইতে আত্মরক্ষা কর। কারণ আল্লাহ তাআলার সাথে তোমাদের সকলেরই সাক্ষাৎ হইবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তাই বলবেন যা আমি [এখন] তোমাদের বলছি। তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেনঃ আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি নিজের জন্য কি অগ্রিম পাঠিয়েছিলে? তখন সে তার সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে তাকাবে, কিন্তু সে জাহান্নামের তাপ হইতে বাঁচানোর মত কিছুই পাবে না। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকে যেন নিজেকে একটি খেজুরের অংশবিশেষ দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন হইতে রক্ষা করে। কোন ব্যক্তির যদি এই সামর্থ্যও না থাকে, তবে সে যেন অন্তত ভালো কথা বলে [তা হইতে আত্মরক্ষা করে]। আমি তোমাদের ব্যাপারে দুর্ভিক্ষের আশংকা করি না। কারণ আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাহায্যকারী ও দানকারী। এমনকি উষ্ট্রারোহিণী কোন মহিলা ইয়াসরিব [মাদীনা] হইতে হীরা বা ততোধিক দূরত্বের সফর করিবে এবং তার জন্তুযানের কিছু চুরি যাওয়ার ভয় থাকিবে না। আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] বলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাহলে তাঈ কবীলার চোরগুলো কোথায় যাবে?

হাসান।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারিব। আমরা সিমাক ইবনি হারব ব্যতীত আর কারো নিকট হইতে এটা অবহিত নই। হাদীসটি দীর্ঘভাবে শুবাহ-সিমাক ইবনি হারব হইতে, তিনি আব্বাদ ইবনি হুবাইশ হইতে, তিনি আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আল ফাতিহার তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৯৫৪ – আদি ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা অভিশপ্ত এবং নাসারাগণ পথভ্রষ্ট….তারপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন।

সহীহ : তাখরীজু শারহিল আক্বীদাতিত তাহাবীয়া [৫৩১], সহীহাহ্ [৩২৬৩]  সূরা আল ফাতিহার তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply