সূরা আল ইমরান তাফসীর – আল্লাহর বাণী

সূরা আল ইমরান তাফসীর – আল্লাহর বাণী

সূরা আল ইমরান তাফসীর – আল্লাহর বাণী>> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা ইমরান আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

৬৫/৩/২. অধ্যায়ঃ তাঁকে ও তার সন্তানদের তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করছি বিতাড়িত শয়তানের কবল থেকে বাঁচার জন্য। (সুরা আলু ইমরান ৩/৩৬)(আ.প্র. ৪১৮৭, ই.ফা. ৪১৮৮)
৬৫/৩/৩. অধ্যায়ঃ
৬৫/৩/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আপনি বলে দিনঃ হে আহলে কিতাব! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তা হল, আমরা যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করি- (সুরা আলু ইমরান ৩/৬৪)।
৬৫/৩/৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করিবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয়বস্তু থেকে ব্যয় করিবে, আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর, আল্লাহ তো তা খুব জানেন। (সুরা আলু ইমরান ৩/৯২)
৬৫/৩/৬. অধ্যায়ঃ বলুন, তাওরাত নিয়ে এস এবং তা পাঠ কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সুরা আলু ইমরান ৩/৯৩)
৬৫/৩/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানুষের হিতের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটান হয়েছে। (সুরা আলু ইমরান ৩/১১০)
৬৫/৩/৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমাদের মধ্যের দুটি দল সাহস হারাতে বসল, অথচ আল্লাহ তাদের সহায়ক ছিলেন। (সুরা আলু ইমরান ৩/১২২)
৬৫/৩/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। (সুরা আলু ইমরান ৩/১২৮)
৬৫/৩/১০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ রাসুল সাঃআঃ তোমাদের পেছনের দিক থেকে আহবান করছিলেন। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৫৩)
৬৫/৩/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ প্রশান্তিময় তন্দ্রা।
৬৫/৩/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/৩/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৭৩)
৬৫/৩/১৫. অধ্যায়ঃ
৬৫/৩/১৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হইতে ভালবাসে, তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৮৮)
৬৫/৩/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/৩/১৮. অধ্যায়ঃ
৬৫/৩/১৯. অধ্যায়ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে দাখিল করলে তাকে লাঞ্ছিত করলে; আর যালিমদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৯২)
৬৫/৩/২০. অধ্যায়ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আমরা শুনিয়াছি এক আহবানকারীকে ঈমান আনার জন্য আহবান করতেঃ তোমরা ঈমান আন তোমাদের রবের প্রতি। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৯৩)

৬৫/৩/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আপনি বলে দিনঃ হে আহলে কিতাব! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তা হল, আমরা যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করি- (সূরা আল ইমরান ৩/৬৪)।

৪৫৫৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) আমাকে সামনাসামনি হাদীস শুনিয়েছেন। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, আমাদের আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদকালে আমি ভ্রমণে বের হয়েছিলাম। আমি তখন সিরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের নিকট একখানা পত্র পৌঁছান হল। দাহ্ইয়াতুল কালবী এ চিঠিটা বসরার শাসককে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন। পত্র পেয়ে হিরাক্লিয়াস বলিলেন, নাবীর দাবীদার ব্যক্তির গোত্রের কেউ এখানে আছে কি? তারা বলিল, হ্যাঁ আছে। কয়েকজন কুরাইশীসহ আমাকে ডাকা হলে আমরা হিরাক্লিয়াসের নিকট গেলাম এবং আমাদেরকে তাহাঁর সম্মুখে বসানো হল। এরপর তিনি বলিলেন, নাবীর দাবীদার ব্যক্তির তোমাদের মধ্যে নিকটতম আত্মীয় কে? আবু সুফ্ইয়ান বলেন, উত্তরে বললাম, আমিই। তারা আমাকে তার সম্মুখে এবং আমার সাথীদেরকে আমার পেছনে বসালেন। তারপর দোভাষীকে ডাকলেন এবং বলিলেন, এদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি নাবীর দাবীদার ব্যক্তিটি সম্পর্কে (আবু সুফ্ইয়ানকে) কিছু জিজ্ঞেস করলে সে যদি আমার নিকট মিথ্যা বলে তোমরা তার মিথ্যা বলা সম্পর্কে ধরবে। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, যদি তাদের পক্ষ থেকে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণের আশঙ্কা না থাকত তাহলে আমি অবশ্যই মিথ্যা বলতাম। এরপর দোভাষীকে বলিলেন, একে জিজ্ঞেস কর যে, তোমাদের মধ্যে এ ব্যক্তির বংশ মর্যাদা কেমন? আবু সুফ্ইয়ান বলিলেন, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের অধিকারী। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন যে, তাহাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি রাজা-বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তাহাঁর বর্তমানের কথাবার্তার পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিয়েছ কি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তাহাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বলগণ? আমি বললাম, বরং দুর্বলগণ। তিনি বলিলেন, তাদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে। আমি বললাম, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলিলেন, তাহাঁর ধর্মে প্রবিষ্ট হওয়ার পর তাহাঁর প্রতি বিতৃষ্ণাবশতঃ কেউ কি ধর্ম ত্যাগ করে? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তোমরা তাহাঁর বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেছ কি? বললাম, জ্বী হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছে? আমি বললাম, আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল হল ঃ একবার তিনি জয়ী হন, আর একবার আমরা জয়ী হই। তিনি বলিলেন, তিনি প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেননি? বললাম, না। তবে বর্তমানে আমরা একটি সন্ধির মেয়াদে আছি। দেখি এতে তিনি কী করেন। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ! এটি ব্যতীত অন্য কোন কথা ঢুকিয়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বলিলেন, তাহাঁর পূর্বে এমন কথা কেউ বলেছে কি? বললাম, না। তারপর তিনি তাহাঁর দোভাষীকে বলিলেন যে, একে জানিয়ে দাও যে, আমি তোমাকে তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তির বংশমর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারপর তুমি বলেছ যে, সে আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত। তদ্রুপ রাসুলগণ শ্রেষ্ঠ বংশেই জন্মলাভ করে থাকেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাহাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি বলেছ না। তাই আমি বলছি যে, যদি তাহাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ রাজা-বাদশাহ থাকতেন তাহলে বলতাম, তিনি তাহাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব ফিরে পেতে চাচ্ছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, দুর্বলগণ তাহাঁর অনুসারী, না সম্ভ্রান্তগণ? তুমি বলেছ, দুর্বলগণই। আমি বলেছি যে, যুগে যুগে দুর্বলগণই রাসুলদের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এ দাবীর পূর্বে তোমরা কখনও তাঁকে মিথ্যাবাদিতার অপবাদ দিয়েছিলে কি? তুমি উত্তরে বলেছ যে, না। তাতে আমি বুঝেছি যে, যে ব্যক্তি প্রথমে মানুষদের সঙ্গে মিথ্যাচার ত্যাগ করেন, তারপর আল্লাহর সঙ্গে মিথ্যাচারিতা করবেন, তা হইতে পারে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাহাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাহাঁর প্রতি বিরক্ত হয়ে কেউ ধর্ম ত্যাগ করে কিনা? তুমি বলেছ, ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বলছি, ঈমান এভাবেই পূর্ণতা লাভ করে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তোমরা তাহাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ করেছ এবং তাহাঁর ফলাফল হচ্ছে পানি তোলার বালতির মত। কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই রাসুলদের পরীক্ষা করা হয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ, না। তদ্রুপ রাসুলগণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাহাঁর পূর্বে কেউ এ দাবী উত্থাপন করেছিল কিনা? তুমি বলেছ, না। আমি বলি যদি কেউ তাহাঁর পূর্বে এ ধরনের দাবী করে থাকত তাহলে আমি মনে করতাম এ ব্যক্তি পূর্ববর্তী দাবীর অনুসরণ করছে। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, তারপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি তোমাদের কী কাজের হুকুম দেন? আমি বললাম, সলাত কায়িম করিতে, যাকাত প্রদান করিতে, আত্মীয়তা রক্ষা করিতে এবং পাপকাজ থেকে পবিত্র থাকার হুকুম দেন। হিরাক্লিয়াস বলিলেন, তাহাঁর সম্পর্কে তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে তিনি ঠিকই নাবী (সাঃআঃ), তিনি আবির্ভূত হইবেন তা আমি জানতাম বটে তবে তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হইবেন তা মনে করিনি। যদি আমি তাহাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছার সুযোগ পেতাম তাহলে আমি তাহাঁর সাক্ষাৎকে অগ্রাধিকার দিতাম। যদি আমি তাহাঁর নিকট অবস্থান করতাম তাহলে আমি তাহাঁর পদযুগল ধুয়ে দিতাম। আমার পায়ের নিচের জমিন পর্যন্ত তাহাঁর রাজত্ব সীমা পৌঁছে যাবে।

আবু সুফ্ইয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পত্রখানি আনতে বলিলেন। এরপর পাঠ করিতে বলিলেন। তাতে লেখা ছিল ঃ

দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর পক্ষ থেকে রোমের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের প্রতি। হিদায়াতের অনুসারীর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এরপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করুন, মুক্তি পাবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাহলে সকল প্রজার পাপরাশিও আপনার উপর নিপতিত হইবে। “হে কিতাবীগণ! এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করব না, কোন কিছুতেই তাহাঁর সঙ্গে শরীক করব না। আর আমাদের একে অন্যকে আল্লাহ ব্যতীত প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করব না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম।”

যখন তিনি পত্র পাঠ সমাপ্ত করিলেন চতুর্দিকে উচ্চ রব উঠল এবং গুঞ্জন বৃদ্ধি পেল। তারপর তাহাঁর নির্দেশে আমাদের বাইরে নিয়ে আসা হল। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, আমরা বেরিয়ে আসার পর আমি আমার সাথীদের বললাম যে, আবু কাবশার সন্তানের তো বিস্তার ঘটেছে। রোমের রাষ্ট্রনায়ক পর্যন্ত তাঁকে ভয় পায়। তখন থেকে আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দ্বীন অতি সত্বর বিজয় লাভ করিবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করিলেন। ইমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একটি কক্ষে একত্রিত করিলেন এবং বলিলেন, হে রোমবাসী! তোমরা কি আজীবন সৎপথ ও সফলতার প্রত্যাশী এবং তোমরা কি চাও তোমাদের রাজত্ব অটুট থাকুক? এতে তারা বন্য-গর্দভের মত প্রাণপণে পলায়নরত হল। কিন্তু দরজাগুলো সবই বন্ধ পেল। এরপর বাদশাহ নির্দেশ দিলেন যে, তাদের সবাইকে আমার নিকট নিয়ে এসো। তিনি তাদের সবাইকে ডাকলেন এবং বলিলেন, তোমাদের ধর্মের উপর তোমাদের দৃঢ়তা আমি পরীক্ষা করলাম। আমি যা আশা করেছিলাম তা তোমাদের থেকে পেয়েছি। তখন সবাই তাঁকে সাজদাহ করিল এবং তাহাঁর উপর সন্তুষ্ট রইল। [৭] (আ.প্র. ৪১৯২, ই.ফা. ৪১৯৩)

৬৫/৩/৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করিবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয়বস্তু থেকে ব্যয় করিবে, আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর, আল্লাহ তো তা খুব জানেন। (সূরা আল ইমরান ৩/৯২)

৪৫৫৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মদিনায় আবু ত্বলহা (রাদি.)-ই অধিক সংখ্যক খেজুর গাছের মালিক ছিলেন। তাহাঁর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সম্পদ ছিল “বাইরুহা” নামক বাগানটি। এটা ছিল মাসজিদের সম্মুখে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সেখানে আসতেন এবং সেখানকার (কূপের) সুমিষ্ট পানি পান করিতেন। যখন لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ আয়াতটি অবতীর্ণ হল, তখন আবু ত্বলহা (রাদি.) উঠে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ বলছেন, “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করিবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয়বস্তু থেকে ব্যয় করিবে” (সূরা আল ইমরান ৩/৯২)। আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ বাইরুহা। এটা আল্লাহর রাস্তায় আমি দান করে দিলাম। আমি আল্লাহর নিকট পুণ্য ও তার ভাণ্ডার চাই। আল্লাহ আপনাকে যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবে তা ব্যয় করুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, বাহ! ওটি তো অস্থায়ী সম্পদ, ওটা তো অস্থায়ী সম্পদ, তুমি যা বলেছ আমি শুনিয়াছি। তুমি তা তোমার নিকটাত্মীয়কে দিয়ে দাও, আমি এ সিদ্ধান্ত দিচ্ছি। আবু ত্বলহা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তা করব। তারপর আবু ত্বলহা (রাদি.) সেটা তাহাঁর চাচাত ভাই-বোন ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইবনু উবাদাহ (রাদি.)-এর বর্ণনায় “ওটা তো লাভজনক সম্পত্তি” বলে উল্লেখিত হয়েছে। [১৪৬১] (আ.প্র. ৪১৯৩, ই.ফা. ৪১৯৪)

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট مَالٌ رَابِحٌ এর অর্থ পড়েছি অস্থায়ী সম্পদ। [১৪৬১] (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৪১৯৫)

৪৫৫৫

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এরপর আবু ত্বলহা (রাদি.) হাস্সান ইবনু সাবিত এবং উবাই ইবনু কাবের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আমি তাহাঁর নিকটাত্মীয় ছিলাম। কিন্তু আমাকে তা হইতে কিছুই দেননি। [১৪৬১] (আ.প্র. ৪১৯৪, ই.ফা. ৪১৯৬)

৬৫/৩/৬. অধ্যায়ঃ বলুন, তাওরাত নিয়ে এস এবং তা পাঠ কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা আল ইমরান ৩/৯৩)

৪৫৫৬

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ব্যভিচার করেছে এমন এক পুরুষ ও এক মহিলা নিয়ে ইয়াহূদীগণ নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হল। নাবী (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা কীভাবে শাস্তি দাও? তারা বলিল, আমরা তাদের দুজনের চেহারা কালিমালিপ্ত করি এবং তাদের প্রহার করি। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তাওরাতে কি প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলিল, আমরা তাতে এ ব্যাপারে কিছুই পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) তাদের বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলছ, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে তাওরাত আন এবং তা পাঠ কর। এরপর তাওরাত পাঠের সময় তাদের তাওরাত-শিক্ষক প্রস্তর নিক্ষেপ সম্পর্কিত আয়াতের উপর স্বীয় হস্ত রেখে তার উপর নীচের অংশ পড়তে লাগল। রজমের কথা লিখা আয়াতটি পড়ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) তার হাতটি রজমের আয়াতের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বলিলেন, এটা কী? যখন তারা এ অবস্থা দেখল তখন বলিল, এটি রজমের আয়াত। অনন্তর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন এবং মাসজিদের পার্শ্বে জানাযার স্থানের নিকটে উভয়কে রজম করা হল।

ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, আমি সেই পুরুষটিকে দেখলাম তার সঙ্গীনীর উপরে ঝুঁকে পড়ে তাকে প্রস্তরাঘাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। [১৩২৯] (আ.প্র. ৪১৯৫, ই.ফা. ৪১৯৭)

৬৫/৩/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানুষের হিতের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটান হয়েছে। (সূরা আল ইমরান ৩/১১০)

৪৫৫৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ আয়াত সম্পর্কে বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণকর তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে (আল্লাহর আনুগত্যের) শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে। অতঃপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে। [৩০১০] (আ.প্র. ৪১৯৬, ই.ফা. ৪১৯৮)

৬৫/৩/৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমাদের মধ্যের দুটি দল সাহস হারাতে বসল, অথচ আল্লাহ তাদের সহায়ক ছিলেন। (সূরা আল ইমরান ৩/১২২)

৪৫৫৮

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلاَ وَاللهُ وَلِيُّهُمَا আয়াতটি আমাদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুদল বানী হারিসা আর বানী সালিমা। যেহেতু এ আয়াতে وَاللهُ وَلِيُّهُمَا “আল্লাহ উভয়ের অভিভাবক” উল্লেখ আছে, সেহেতু এটা অবতীর্ণ না হওয়া আমরা পছন্দ করতাম না। সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর এক বর্ণনায় আছে وَمَا يَسُرُّنِي আমাকে ভাল লাগেনি। [৪০৫১] (আ.প্র. ৪১৯৭, ই.ফা. ৪১৯৯)

৬৫/৩/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। (সূরা আল ইমরান ৩/১২৮)

৪৫৫৯

সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে শুনেছেন যে, তিনি ফাজরের সলাতের শেষ রাকআতে রুকূ থেকে মাথা তুলে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ (আল্লাহ তাহাঁর প্রশংসাকারীর প্রশংসা শোনেন। হে আমাদের প্রতিালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা), রব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ বলার পর এটা বলিতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক, অমুক এবং অমুককে লানত করুন। তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ ….. فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ “তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাদের শাস্তি দিবেন, এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম।” ইসহাক ইবনু রাশিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এটা বর্ণনা করিয়াছেন। [৪০৬৯] (আ.প্র. ৪১৯৮, ই.ফা. ৪২০০)

৪৫৬০

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কারো জন্যে বদদুআ অথবা দুআ করার মনস্থ করিতেন, তখন সলাতের রুকূর পরেই কুনূতে নাযিলা (বদ্দুআ ও হিফাযাতের জন্য অবতারিত দুআ) পড়তেন। কখনো কখনো سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ, اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলার পর বলিতেন, হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদ, সালামাহ ইবনু হিশাম এবং আইয়াশ ইবনু আবু রাবিয়াহ্কে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর শাস্তি কঠোর করুন। এ শাস্তিকে ইউসুফ (আ.)-এর যুগের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষে পরিণত করুন। নাবী (সাঃআঃ) এ কথাগুলোকে উচ্চৈঃস্বরে বলিতেন। কখনো কখনো তিনি কয়েকটি গোত্রের ব্যাপারে ফাজরের সলাতে বলিতেন, হে আল্লাহ! অমুক এবং অমুককে লানাত দিন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন ঃ لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ । [৭৯৭] (আ.প্র. ৪১৯৯, ই.ফা. ৪২০১)

৬৫/৩/১০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ রাসুল সাঃআঃ তোমাদের পেছনের দিক থেকে আহবান করছিলেন। (সূরা আল ইমরান ৩/১৫৩)

وَهْوَ تَأْنِيْثُ آخِرِكُمْ. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : {إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ}: فَتْحًا أَوْ شَهَادَةً.

آخِرِكُمْ -এর স্ত্রীলিঙ্গ أُخْرَاكُمْ। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, দু কল্যাণের একটি, এর অর্থ হল বিজয় অথবা শাহাদাত লাভ।

৪৫৬১

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কিছু পদাতিক সৈন্যের উপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.)-কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এরপর তাদের কতক পরাজিত হলে পালাতে লাগল, এটাই হল, রাসুল (সাঃআঃ) যখন তোমাদের পেছন দিক থেকে ডাকছিলেন। মাত্র বারোজন লোক ব্যতীত আর কেউ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন না। [৩০৩৯] (আ.প্র. ৪২০০, ই.ফা. ৪২০২)

৬৫/৩/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ প্রশান্তিময় তন্দ্রা।

৪৫৬২

আবু ত্বলহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা উহূদ যুদ্ধের দিন সারিবদ্ধ অবস্থায় ছিলাম যখন তন্দ্রা আমাদের আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল। তিনি বলেন, আমার তরবারি আমার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল, আমি তা উঠাচ্ছিলাম, আবার পড়ে যাচ্ছিল, আবার তা উঠাচ্ছিলাম। [৪০৬৮] (আ.প্র. ৪২০১, ই.ফা. ৪২০৩)

৬৫/৩/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{اَلَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِلهِ وَالرَّسُوْلِ مِنْمبَعْدِ مَآ أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ط لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيْمٌ ج} {الْقَرْحُ} الْجِرَاحُ {اسْتَجَابُوْا} أَجَابُوْا : يَسْتَجِيْبُ يُجِيْبُ.

আহত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়, তাদের মধ্যে যারা ভাল কাজ করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরস্কার- (সূরা আল ইমরান ৩/১৭২)। الْقَرْحُ -যখম, الْقَرْحُ -ডাকে সাড়া দিন, يَسْتَجِيْبُ -সাড়া দেয়।

৬৫/৩/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। (সূরা আল ইমরান ৩/১৭৩)

৪৫৬৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। حَسْبُنَااللهُوَنِعْمَالْوَكِيلُ কথাটি ইবরাহীম (আ.) বলেছিলেন, যখন তিনি আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আর মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) বলেছিলেন যখন লোকেরা বলিল, “নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে কাফিররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। এ কথা তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলিল ঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কার্যনির্বাহক” (সূরা আল ইমরান ৩/১৭৩)। [৪৫৬৪] (আ.প্র. ৪২০২, ই.ফা. ৪২০৪)

৪৫৬৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, ইবরাহীম (আ.) যখন আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তখন তাহাঁর শেষ কথা ছিল ঃ حَسْبِيَاللهُوَنِعْمَالْوَكِيلُ অর্থাৎ “আল্লাহই যথেষ্ট” তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক! [৪৫৬৩] (আ.প্র. ৪২০৩, ই.ফা. ৪২০৫)

৬৫/৩/১৪

{وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَآ اٰتٰهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٰ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ ط بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ط سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٰ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ ط وَلِلهِ مِيْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ} سَيُطَوَّقُوْنَ كَقَوْلِكَ طَوَّقْتُهُ بِطَوْقٍ.

যারা কৃপণতা করে তাতে যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে, তারা যেন মনে না করে যে এ কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক। ঐ মাল যাতে তারা কৃপণতা করেছিল, ক্বিয়ামাতের দিন তা দিয়ে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরিয়ে দেয়া হইবে। আসমান ও যমীনের মালিকানা স্বত্ব একমাত্র আল্লাহর। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত- (সূরা আল ইমরান ৩/১৮০)। سَيُطَوَّقُوْنَ এটা আরবী বাক্য অর্থ তাকে বেড়ি লাগিয়ে দিয়েছি-এর মত।

৪৫৬৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যাকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দেন, তারপর সে তার যাকাত আদায় করে না ক্বিয়ামাতের দিন তার ধন-সম্পদকে তার জন্যে লোমবিহীন কালো-চিহ্ন যুক্ত সর্পে রূপ দেয়া হইবে এবং তার গলায় পরিয়ে দেয়া হইবে। মুখের দুদিক দিয়ে সে তাকে দংশন করিতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এই আয়াত তিলাওয়াত করিলেন ঃ وَلاَيَحْسِبَنَّالَّذِينَيَبْخَلُونَبِمَاآتَاهُمْاللهُمِنْفَضْلِهِ “এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক এটা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে ……” আয়াতের শেষ অংশ। [১৪০৩] (আ.প্র. ৪২০৪, ই.ফা. ৪২০৬)

৬৫/৩/১৫. অধ্যায়ঃ

{وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوْآ أَذًى كَثِيْرًا}.

আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের এবং মুশরিকদের নিকট হইতে অনেক কষ্টদায়ক কথা। (সূরা আল ইমরান ৩/১৮৬)

৪৫৬৬

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করেছিলেন, একটি ফদকী চাদর তাহাঁর পরনে ছিল। উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.)-কে তাহাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তিনি বানী হারিস ইবনু খাযরায গোত্রে অসুস্থ সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.)-কে দেখিতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন যে, যেতে যেতে নাবী (সাঃআঃ) এমন একটি মজলিসের কাছে পৌঁছলেন, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বিন সালুলও ছিলসে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। সে মজলিসে মুসলিম, মুশরিক, প্রতিমাপূজারী এবং ইয়াহূদী সকল প্রকারের লোক ছিল এবং তথায় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-ও ছিলেন। জন্তুর পদধূলি যখন মজলিসকে আচ্ছন্ন করিল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই আপন চাদরে নাক ঢেকে ফেলল। তারপর বলিল, আমাদের এখানে ধূলো উড়িয়ো না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এদেরকে সালাম করিলেন। তারপর বাহন থেকে অবতরণ করিলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং তাদের কাছে কুরআন মাজীদ পাঠ করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বলিল, এই লোকটি! তুমি যা বলছ তা যদি সত্য হয় তাহলে এর চেয়ে উত্তম কিছুই নেই। তবে আমাদের মজলিসে আমাদেরকে জ্বালাতন করিবে না। তুমি তোমার তাঁবুতে যাও। যে তোমার কাছে যাবে যাকে তুমি তোমার কথা বলবে। অনন্তর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের মজলিসে এগুলো আমাদের কাছে বলবেন, কারণ আমরা তা পছন্দ করি। এতে মুসলিম, মুশরিক এবং ইয়াহূদীরা পরস্পর গালাগালি শুরু করিল। এমনকি তারা মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার পর্যায়ে উপনীত হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে থামাচ্ছিলেন। অবশেষে তারা থামল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর পশুটির পিঠে চড়ে রওয়ানা দিলেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.)-এর কাছে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, হে সাদ! আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী বলেছে, তুমি শুনেছ কি? সে এমন বলেছে। সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাকে ক্ষমা করে দিন। তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। যিনি আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন, তাহাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনার উপর যা অবতীর্ণ করিয়াছেন তা সত্য। এতদঞ্চলের অধিবাসীগণ চুক্তি সম্পাদন করেছিল যে, তাকে শাহী টুপী পরাবে এবং নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করিবে। যখন আল্লাহ তাআলা সত্য প্রদানের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা অস্বীকার করিলেন তখন সে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে যা আপনি দেখেছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সহাবীগণ (রাদি.) মুশরিক এবং কিতাবীদেরকে ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্য ধারণ করিতেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহ্লে কিতাবের এবং মুশরিকদের নিকট হইতে অনেক কষ্টদায়ক কথা” (সুরা আল ইমরান ৩/১৮৬)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, “কিতাবীদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও তাদের অনেকেই ঈর্ষা বশতঃ তোমাদের ঈমান আনার পর আবার তোমাদের কাফিররূপে ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষা করে। যতক্ষণ না আল্লাহর কোন নির্দেশ আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১০৯)।

আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক নাবী (সাঃআঃ) ক্ষমার দিকেই ফিরে যেতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন বাদ্রের যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন এবং তাহাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কাফির কুরায়শ নেতাদেরকে হত্যা করিলেন তখন ইবনু উবাই ইবনু সালূল তার সঙ্গী মুশরিক এবং প্রতীমা পূজারীরা বলিল, এটাতো এমন একটি ব্যাপার যা বিজয় লাভ করেছে। এরপর তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ইসলামের বাইআত করে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করিল। [২৯৮৭] (আ.প্র. ৪২০৫, ই.ফা. ৪২০৭)

৬৫/৩/১৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হইতে ভালবাসে, তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আল ইমরান ৩/১৮৮)

৪৫৬৭

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হইতেন তখন কিছু সংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফিরে আসলে তাহাঁর কাছে শপথ করে ওজর পেশ করত এবং যে কাজ করেনি সে কাজের জন্য প্রশংসিত হইতে পছন্দ করত। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল ঃ لاَيَحْسِبَنَّالَّذِينَيَفْرَحُونَ …… “তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হইতে ভালবাসে, তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সূরা আল ইমরান ৩/১৮৮)। [মুসলিম ৫০/হাদীস ২৭৭৭] (আ.প্র. ৪২০৬, ই.ফা. ৪২০৮)

৪৫৬৮

আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর দারোয়ানকে বলিলেন, হে নাফি! তুমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর কাছে গিয়ে বল, যদি প্রাপ্ত বস্তুতে আনন্দিত এবং করেনি এমন কাজ সম্পর্কে প্রশংসিত হইতে আশাবাদী প্রত্যেক ব্যক্তিরই শাস্তি প্রাপ্য হয় তাহলে সকল মানুষই শাস্তিপ্রাপ্ত হইবে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, এটা তোমাদের মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। একদা নাবী (সাঃআঃ) ইয়াহূদীদেরকে ডেকে একটা বিষয় জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাতে তারা সত্য গোপন করে বিপরীত তথ্য দিয়েছিল। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের দেয়া উত্তরের বিনিময়ে প্রশংসা অর্জনের আশা করেছিল এবং তাদের সত্য গোপনের জন্যে আনন্দিত হয়েছিল। তারপর ইবনু আব্বাস (রাদি.) পাঠ করিলেন- يَفْرَحُونَبِمَاأَتَوْاوَيُحِبُّونَأَنْيُحْمَدُوابِمَالَمْيَفْعَلُوا ……. وَإِذْأَخَذَاللهُمِيثَاقَالَّذِينَأُوتُواالْكِتَابَ “স্মরণ কর, যখন আল্লাহ প্রতিশ্র“তি নিয়েছিলেন আহলে কিতাবের, তোমরা মানুষের কাছে কিতাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করিবে এবং তা গোপন করিবে না। কিন্তু তারা সে প্রতিশ্র“তি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল এবং তার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহণ করিল। সুতরাং তারা যা বিনিময় গ্রহণ করিল কত নিকৃষ্ট তা! তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হইতে ভালবাসে, তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সূরা আল ইমরান ৩/১৮৭-১৮৮)। বর্ণনাকারী আবদুর রায্যাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (আ.প্র. ৪২০৭, ই.ফা. ৪২০৯)

ইবনু মুকাতিল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……….. হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) অবহিত করিয়াছেন যে, মারওয়ান এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [মুসলিম ৫০/হাদীস ২৭৭৮, আহমাদ ২৭১২] (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৪২১০)

৬৫/৩/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ}الآيَةَ

নিশ্চয় আসমান ও যমীনের সৃজনে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য। (সূরা আল ইমরান ৩/১৯০)

৪৫৬৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি আমার খালা মাইমূনাহ (রাদি.)-এর কাছে রাত কাটিয়েছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে শুয়ে পড়লেন। তারপর রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে তিনি উঠলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করিলেন- إِنَّفِيخَلْقِالسَّمَوَاتِوَالأَرْضِوَاخْتِلاَفِاللَّيْلِوَالنَّهَارِلَآيَاتٍلِأُولِيالأَلْبَابِ। এরপর দাঁড়ালেন এবং উযূ করে মিসওয়াক করে এগার রাকআত সলাত আদায় করিলেন। এরপর বিলাল (রাদি.) আযান দিলে তিনি দু রাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারপর বের হলেন এবং ফাজ্রের সলাত আদায় করিলেন। [১১৭] (আ.প্র. ৪২০৮, ই.ফা. ৪২১১)

৬৫/৩/১৮. অধ্যায়ঃ

{الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ}

যারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে এবং চিন্তা করে আসমান ও যমীনের সৃজনের ব্যাপারে। (সূরা আল ইমরান ৩/১৯১)

৪৫৭০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার খালা মাইমূনাহ (রাদি.)-এর নিকট রাত কাটিয়েছিলাম। আমি স্থির করলাম যে, অবশ্যই আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সলাত আদায় করা দেখব। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জন্য একটি বিছানা বিছানো হল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সেটার লম্বালম্বি দিকে ঘুমালেন। এরপর জাগ্রত হয়ে মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের প্রভাব মুছতে লাগলেন এবং সুরা আলু ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করে শেষ করিলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের পানিপাত্রের নিকটে এসে তা ধরলেন এবং উযূ করে সলাতে দাঁড়ালেন, আমি দাঁড়িয়ে তিনি যা যা করছিলেন তা তা করলাম। তারপর আমি এসে তাহাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন, তারপর আমার কানে ধরে মলতে লাগলেন। তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন এবং তারপর বিতরের সলাত আদায় করিলেন। [১১৭] (আ.প্র. ৪২০৯, ই.ফা. ৪২১২)

৬৫/৩/১৯. অধ্যায়ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে দাখিল করলে তাকে লাঞ্ছিত করলে; আর যালিমদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল ইমরান ৩/১৯২)

৪৫৭১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, তিনি মাইমূনাহ (রাদি.)-এর নিকট রাত্রি যাপন করেন, তিনি হলেন তাহাঁর খালা। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমি বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়েছিলাম আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর পরিবারবর্গ লম্বালম্বির দিকে শুয়েছিলাম। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্য পূর্ব অথবা সামান্য পর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হলেন। এরপর দুহাত দিয়ে মুখ থেকে ঘুমের রেশ মুছতে লাগলেন। তারপর সুরা আলু ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করিলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের কাছে গেলেন এবং সুন্দরভাবে উযু করিলেন। এরপর সলাতে দণ্ডায়মান হলেন। তিনি যা যা করেছিলেন আমিও ঠিক তা করলাম। তারপর গিয়ে তাহাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান ধরে মলতে লাগলেন। এরপর তিনি দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত তারপর দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন এবং তারপর বিতরের সলাত আদায় করিলেন। তারপর তিনি একটু শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াযযিন আসল, তিনি হালকাভাবে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর বের হলেন এবং ফাজ্রের সলাত আদায় করিলেন। [১১৭] (আ.প্র. ৪২১০, ই.ফা. ৪২১৩)

৬৫/৩/২০. অধ্যায়ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আমরা শুনিয়াছি এক আহবানকারীকে ঈমান আনার জন্য আহবান করতেঃ তোমরা ঈমান আন তোমাদের রবের প্রতি। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। (সূরা আল ইমরান ৩/১৯৩)

৪৫৭২

কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাদি.) তাকে অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) সহধর্মিণী মাইমূনাহ (রাদি.)-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছিলেন। মাইমূনাহ (রাদি.) হলেন তাহাঁর খালা। তিনি বলেন, আমি বিছানায় আড়াআড়ি শুয়ে পড়লাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর পরিবার লম্বা দিকে শয়ন করিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিদ্রামগ্ন হলেন। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্য আগে কিংবা সামান্য পরক্ষণে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন এবং মুখ থেকে ঘুমের ভাব মুছতে মুছতে বসলেন। তারপর সুরা আলু ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করিলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের নিকট গিয়ে তাত্থেকে উত্তমরূপে উযূ করিলেন। এরপর সলাতে দণ্ডায়মান হলেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমিও দাঁড়ালাম এবং তিনি যা করিয়াছেন আমিও তা করলাম। তারপর আমি গিয়ে তাহাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান মলতে শুরু করিলেন। তারপর তিনি দুরাকআত, অতঃপর দুরাকআত, অতঃপর দুরাকআত, অতঃপর দুরাকআত, অতঃপর দুরাকআত, অতঃপর দুরাকআত, অতঃপর তিনি বিতরের সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। শেষে মুয়াযযিন ফাজ্রের আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্তভাবে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারপর বের হলেন এবং ফাজ্রের সলাত আদায় করিলেন। [১১৭] (আ.প্র. ৪২১১, ই.ফা. ৪২১৪)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply