সূরা আনফাল তাফসীর – উল – কোরআন
সূরা আনফাল তাফসীর – উল – কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা আনফাল আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৯ঃ সূরা আনফাল তাফসীর
৩০৭৯. মুসআব ইবনি সাদ [রহঃ], তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন আমি একটি তলোয়ার নিয়ে আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা আমার হৃদয়কে মুশরিকদের পরাজিত করে প্রশান্তি দান করবেন, অথবা অনুরূপ বলেছেন। আপনি আমাকে এ তলোয়ারটি দিন। তিনি বললেনঃ এটা তো আমারও নয়, তোমারও নয়। আমি [মনে মনে] বললাম, তলোয়ারটি হয়তো এমন কাউকে দেয়া হইবে যে আমার মত পরীক্ষার মুখোমুখী হইতে পারবে না। এমন সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট এসে বললেনঃ তুমি আমার নিকট এ তলোয়ারটি চেয়েছিলে। তখন এটি আমার ছিল না, কিন্তু এখন তা আমার হয়েছে। অতএব এটি তোমাকে দিলাম। বর্ণণাকারী বলেম, এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হল [অনুবাদ] : “লোকেরা তোমার নিকট যুদ্ধলব্ধ মাল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। বল, যুদ্ধলব্ধ মাল আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের…” – [সুরা আল-আনফাল ১]।
হাসান সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৭৪৭], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সিমাক ইবনি হারব [রঃ]এ হাদীস মুসআব ইবনি সাদ [রঃ]হইতে বর্ণণা করিয়াছেন। উবাদাহ্ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০৮০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদর যুদ্ধ হইতে ফুরসত হলে তাঁকে বলা হল, আপনি কাফিলার উপর হামলা করুন। কারণ তাহাদেরকে রক্ষাকারী কেউ নেই। রাবী বলেন, আব্বাস [রাদি.] তখন কাফির কয়েদীদের সাথে আটক থাকা অবস্থায় বলেন, এটা উচিত নয়। কারণ, আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে দুই দলের মধ্যে যে কোন একটির উপর বিজয়দানের প্রতিশ্রুতি করিয়াছেন। আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা তো তিনি আপনাকে দান করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ আপনি সঠিক বলেছেন।
সনদ দুর্বল,আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৮১. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [বদর যুদ্ধের দিন] মুশরিকদের উপর নাবী [সাঃআঃ] দৃষ্টিপাত করিলেন। তারা [সংখ্যায়] ছিল এক হাজার। আর তাহাঁর সাথীরা ছিলেন তিন শত দশজনের কিছু বেশি। আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] ক্বিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে তাহাঁর প্রভুর নিকট দুআ করিতে লাগলেন : “হে আল্লাহ! তুমি আমার সাথে যে ওয়াদাহ করেছিলে তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তা দান কর যার ওয়াদাহ তুমি করেছ। হে আল্লাহ! যদি কতিপয় মুসলিমের এ ক্ষুদ্র দলটি ধ্বংস করে দাও তাহলে যমিনে তোমার ইবাদাত অনুষ্ঠিত হইবে না”। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্বিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে এমনভাবে তাহাঁর প্রভুর নিকট ফারিয়াদ করেন, তাহাঁর উভয় কাঁধ হইতে তাহাঁর চাদর গড়িয়ে পড়ে গেল। তখন আবু বকর [রাদি.] তাহাঁর কাছে এসে চাদরটি উঠিয়ে তাহাঁর কাঁধে তুলে দিলেন এবং তাহাঁর পেছন দিক হইতে তাঁকে চেপে ধরে বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রভুর সমীপে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ ফরিয়াদ করা হয়েছে। আপনার সাথে আল্লাহ তাআলা যে ওয়াদাহ্ করিয়াছেন তা অবশ্যই তিনি পূর্ণ করবেন। এ প্রসঙ্গে বারাকাত্ময় আল্লাহ তাআলা নিম্মোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “স্মরণ কর যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিলেন, আমি তোমাদেরকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব” [সূরা আল-আনফাল ৯]। অতএব আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাহাদের পাঠিয়ে তাহাদেরকে সাহায্য করেন।
হাসান : মুসলিম [৫/১৫৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। উমার [রাদি.] এর হাদীস বিষয়ে ইবনি আম্মার-আবু যুমাইল [রঃ]সূত্র ব্যতীত আমাদের কিছু জানা নেই। আবু যুমাইলের নাম সিমাক আল-হানাফী। বর্ণণাকারী [তিরমিজি] বলেন, এটা বদর যুদ্ধের সময়কার ঘটনা। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০৮২. আবু বুরদা ইবনি আবু মূসা [রাদি.], তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আমার উম্মাতের জন্য আমার উপর দুটি আমান বা সুরক্ষার উপায় অবতীর্ণ করেছেনঃ “আল্লাহ্ তাআলা এমন নন যে, তুমি তাহাদের মধ্যে হাযির থাকা অবস্থায় তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ্ তাআলা এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থণারত অবস্থায় তিনি তাহাদের শাস্তি দিবেন” [সূরাঃ আল-আনফাল- ৩৩]। আমি যখন চলে যাব তখন কিয়ামাত পর্যন্ত তাহাদের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থণার উপায়টি রেখে যাব।
সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। ইসমাঈল ইবনি ইবরাহীমকে হাদীস শাস্ত্রে জঈফ বলা হয়। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৮৩. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারে দাঁড়িয়ে এ আয়াত পাঠ করেন [অনুবাদ] : “তোমরা যথাসাধ্য তাহাদের মুকাবিলার জন্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে…” –[সূরা আল-আনফাল ৬০] তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ জেনে রেখ, শক্তি হল তীর নিক্ষেপ। তিনি তিন তিনবার এ কথা বলিলেন। তিনি আরো বললেনঃ জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা খুব শীঘ্রই দুনিয়াতে তোমাদেরকে বিজয় দান করবেন এবং তোমাদেরকে নিজেদের ব্যয়ভার সংকুলানের চিন্তা হইতে মুক্ত করে দেয়া হইবে। সুতরাং তীরন্দাজির অনুশীলন হইতে তোমাদের কেউ যেন কাতর হয়ে না পড়ে।
হাসান সহীহ : ইবনি মাজাহ [২৮১৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উসামা ইবনি যাইদ আল-লাইসী হইতে সালিহ ইবনি কাইসান সূত্রে কোন কোন বর্ণণাকারী বর্ণণা করিয়াছেন। উক্ববাহ্ ইবনি আমির হইতে আবু উসামা এবং আরো অনেকে এ হাদীসটি বর্ণণা করিয়াছেন। তবে ওয়াকীর রিওয়ায়াতটি অনেক বেশি সহীহ। সালিহ ইবনি কাইসান [রঃ]উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.]- এর সাক্ষাত পাননি। তবে তিনি ইবনি উমার [রঃ]এর সাক্ষাত পেয়েছেন। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন যুদ্ধবন্দীদের আনা হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এই যুদ্ধবন্দীদের বিষয়ে তোমাদের কি মত? তারপর রাবী এ হাদীসে একটি বিরাট ঘটনা বর্ণনা করেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ মুক্তিপণ আদায় বা শিরচ্ছেদ করা ছাড়া এদের মুক্তির বিকল্প কোন পথ নেই। আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! তবে সুহাইল ইবনি বাইযা ব্যতীত। যেহেতু আমি তাকে ইসলাম প্রসঙ্গে আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথায় নীরব থাকলেন। আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] বলেন, ঐ দিনের মত এরকম মারত্মক অবস্থা আমার আর কোন দিন ছিল না। ঐ দিন প্রতি মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল, আমার মাথার উপর বুঝি আকাশ হইতে পাথর বর্ষিত হইবে। অবশেষে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সুহাইল ইবনি বাইযা ব্যতীত। ইবনি মাসঊদ [রাদি.] বলেন, এদিকে উমার [রাদি.]-এর উক্তি মোতাবেক কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “কোন নাবীর জন্য উচিত নয় দেশে ব্যাপক হারে প্রতিপক্ষকে পরাজিত না করা পর্যন্ত আটক রাখা…….” [সূরাঃ আল-আনফাল- ৬৭]।
জঈফ, ১৭৬৭ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আবু উবাইদা ইবনি আবদুল্লাহ তার পিতা হইতে হাদীস শুনেননি। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৮৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মাতের লোকদের জন্য গানীমাতের সম্পদ বৈধ ছিল না। আকাশ হইতে আগুন অবতীর্ণ হত এবং তা পুড়িয়ে ফেলত। বর্ণণাকারী সুলাইমান আল-আমাশ বলেন, আজকের দিনে এ হাদীস আবু হুরায়রা্ [রাদি.] ব্যতীত আর কে বলিতে পারে? বদর যুদ্ধ সংঘটিত হলে লোকেরা গানীমাতের মাল ব্যবহারে লিপ্ত হন, অথচ গানীমাতের মাল তখন পর্যন্ত তাহাদের জন্য বৈধ ঘোষিত হয়নি। তখন আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলার পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ তজ্জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত” – [সূরা আনফাল ৬৮]।
সহীহ : সহীহাহ্ [২১৫৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আমাশের হাদীস হিসেবে গারীব। সূরা আনফাল তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply