সূরা আনআম তাফসীর । তাফশিরুল কুরআন

সূরা আনআম তাফসীর । তাফশিরুল কুরআন

সূরা আনআম তাফসীর । তাফশিরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা আন’য়াম আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৮ঃ সূরা আনআম তাফসীর

৩০৬৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আবু জাহল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলল, আমরা তো তোমাকে মিথ্যাবাদী বলি না, বরং তুমি যে জিনিস নিয়ে এসেছ তাকেই আমরা মিথ্যা মনে করি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “কিন্তু তারা তো তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে না, বরং যালিমরা আল্লাহ্ তাআলার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে….” [সূরাঃ আল-আনআম- ৩৩]।

সনদ দুর্বল। ইসহাক ইবনি মানসূর-আবদুর রহমান ইবনি মাহদী হইতে তিনি সুফিয়ান হইতে তিনি আবু ইসহাক এর সূত্রে নাজিয়া [রঃ]হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবু জাহল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলল…. এরপর এরকমই বর্ণনা করেন। তবে এই সনদে আলী [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই এবং এটাই বেশি সহীহ। পূর্বের হাদীসের ন্যায় এটিও দুর্বল।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৬৫. আম্‌র ইবনি দীনার [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কে বলিতে শুনেছেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ] : বল তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হইতে তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরন করিতে সক্ষম”, তখন নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ “[হে আলাহ!] আমি আপনার [মর্যাদাবান] মুখমণ্ডলের [সত্ত্বার] নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি”। পরে আবার অবতীর্ণ হল [অনুবাদ] : অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করিতে এবং এক দলকে অপর দলের সংঘর্ষের স্বাদ আস্বাদন করাতে সক্ষম —[সূরা আল-আনআম ৬৫]। তখন নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ এ দুটিই অপেক্ষাকৃত সহজতর।

সহীহ : সহীহ আবু দাউদ [২০৫৮ ,২০৫৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ ।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৬৬. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

“বল, তিনি তোমাদের উপর তোমাদের উপর হইতে অথবা তোমাদের পদতল হইতে শাস্তি প্রেরণে সক্ষম” [সূরাঃ আল-আনআম- ৬৫], এ আয়াত অবতীর্ণ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ প্রসঙ্গে বলেনঃ এরূপ সংঘটিত হইবেই কিন্তু তার ব্যাখ্যা এখনো বাস্তাব লাভ করেনি।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৬৭. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন অবতীর্ণ হল : “যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি— [সূরা আল-আনআম ৮২] , তখন মুসলিমদের নিকট তা খুবই কঠিন মনে হল। তাই তারা রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কে আছে যে নিজের উপর যুলুম করেনি? রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেনঃ বিষয়টি আসলে তা নয়। এখানে যুলুম অর্থ হল শিরক। তোমরা কি শুনোনি যা লোক্বমান তাহাঁর ছেলেকে বলেছিলেন : “হে পুত্র ! আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করিবে না। নিশ্চয় শিরক অতি বড় যুলুম “ –[সূরা লোকমান ১৩]।

সহীহ : বোখারি [৪৬২৯] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ ।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৬৮. মাসরুক [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.] এর নিকটে হেলান দিয়ে বসা ছিলাম। তিনি বলিলেন, হে আবু আয়িশাহ্‌! তিনটি বিষয় এমন যে, কোন ব্যক্তি এগুলার কোনটি বললে সে আল্লাহ তাআলার উপর ভীষণ [মিথ্যা] অপবাদ চাপালো। যে ব্যক্তি এ ধারনা পোষণ করে যে, মুহাম্মাদ [সাল্লালাহু আআলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর প্রভুকে দেখেছেন, সে আল্লাহ তাআলার উপর ভীষণ অপবাদ আরোপ করিল। কেননা আল্লাহ তালা বলেনঃ “ দৃষ্টিসমূহ তাঁকে প্রত্যক্ষ করিতে পারে না, কিন্তু তিনি দৃষ্টিসমূহকে অনুধাবন করেন। তিনি অতিশয় সূক্ষদর্শী, সম্যক ওয়াকিফহাল “— [সূরা আল-আনআম ১০৩]; “কোন মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তাআলা তার সাথে কথা বলবেন ওয়াহীর মাধ্যম ব্যতীত অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতীত “— [সূরা আশ-শুরা ৫১]। আমি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলাম। আমি উঠে সোজা হয়ে বসে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! থামুন, আমাকে বলার সুযোগ দিন। তাড়াহুড়া করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি? “ নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল“ – [সূরা আন্‌-নাজ্‌ম ১৩]। সে তো তাকে উজ্জ্বল দিগন্তে দেখেছে”- [সূরা আত্‌-তাকবীর ২৩]।

আয়িশা [রাদি.] বললেনঃ আলাহ্‌র শপথ! রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে আমিই সর্বপ্রথম এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেনঃ সে তো জিবরীল। আমি তাকে তার আসল আকৃতিতে এ দুবারি দেখেছি। আমি তাকে আসমান হইতে অবতরন করিতে দেখেছি। তার দেহাবয়ব এতো প্রকাণ্ড যে, তা আসমান ও যামীনের মাঝখানের সবটুকু স্হান ঢেকে ফেলেছিল। [দুই] যে ব্যক্তি এ ধারনা করে যে, আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ [সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর উপর যা অবতীর্ণ করিয়াছেন, তিনি তার কিছুটা গোপন করিয়াছেন, সেও আল্লাহ তাআলার উপর ভীষণ অপবাদ আরোপ করিল। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “ হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে তোমার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা [লোকদের নিকট] পৌঁছে দাও…“ [সূরা আল-মায়িদাহ্‌ ৬৭]।

[তিন] যে ব্যক্তি ধারনা করে যে, আগামী কাল কি ঘটবে তিনি [মুহাম্মাদ] তা জানেন, সেও আল্লাহ তাআলার উপর ভীষণ মিথ্যারোপ করিল। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “ ব , আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আসমান-যামীনে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না —[আন-নাম্‌ল ৬৫]।

সহীহ : বোখারি , মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ। মাসরুক ইবনিল আজদার ডাকনাম আবু আয়িশাহ্‌! তিনি হলেন মাসরুক ইবনি আবদুর রহমান।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর নিকট কয়েকজন লোক এসে বলল : হে আল্লাহর রাসুল! আমরা যা হত্যা করি তা খাবো আর আল্লাহ তাআলা যা হত্যা করেন তা খাবো না? তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করনে [অনুবাদ] : তোমরা তাহাঁর নিদর্শনসমূহে বিশ্বাসী হলে যার উপর আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয়েছে তা হইতে খাও…. তোমরা যদি তাহাদের কথামত চল তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে” [সূরা আল-আনআম ১১৮-১২১]।

সহীহ : সহীহ আবু দাউদ [২০৫৮, ২০৫৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব। এ হাদিসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে অন্যভাবেও বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আতা ইবনিস সায়িব হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি যুবাইর হইতে, তিনি নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে এই সুত্রে মুরসালরুপে বর্ণনা করিয়াছেন ।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৭০. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ যে সহীফার [ক্ষুদ্র পুস্তিকা] উপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মোহরাংকিত রয়েছে তার দেখা যাকে আনন্দ দেয় সে যেন এ আয়াতগুলো পাঠ করেঃ “বল! এসো, পড়ে শুনাই তোমাদের জন্য রব যা হারাম করিয়াছেন তা। এভাবে আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সতর্ক হও” [সূরাঃ আল-আনআম- ১৫১-১৫৩]।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৭১. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল্লাহ তাআলার বানী “ অথবা তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে [সূরা আনআম ১৫৮] প্রসঙ্গে বলেন, তা হচ্ছে পশ্চিম দিগন্ত হইতে সূর্যোদয়।

সহীহ : মুসলিম [১/৯৫], আবু হুরায়রা্‌ হইতে আরো পূর্ণাঙ্গ রুপে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব । কেউ কেউ এটিকে বর্ণনা করিয়াছেন তবে তা মারফু হিসাবে নয় ।  সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৭২. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তিনটি নিদর্শন যখন প্রকাশিত হইবে “তখন কারো ঈমান আনয়নে কোন উপকারে আসবে না – যারা ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি বা যারা নিজেদের ঈমান মতো নেক আমাল করেনি” [সূরা আনআম ১৫৮]। সেই তিনটি নিদর্শন হল দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরয ও পশ্চিম দিগন্ত হইতে সূর্যোদয়।

সহীহ : মুসলিম [১/৯৫-৯৬]। আবু,ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ। আবু হাযিম, তিনি হলেন আল-আশযাঈ আল-কুফী তাহাঁর নাম সালমান, তিনি আযযাহ্‌ আল-আশ জাঈয়্যার মুক্তদাস । সূরা আনআম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৭৩. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ বারাকাতময় আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তাহাঁর বাণী সম্পূর্ণ সত্য : আমার কোনো বান্দা যখন কোন ভালো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে তখনি [বলেন] হে ফেরেশতাগণ! তোমরা তার জন্য একটি নেকি লিখো এবং সে যখন কাজটি করে তখন তার দশ গুন নেকি তার জন্য লিখো। পক্ষান্তরে সে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে তবে তোমরা তার কোন গুনাহ লিখো না, যদি সে তা করে তবে একটি মাত্র গুনাহই লিখো এবং যদি সে তা বর্জন করে বা কার্যকর না করে তার জন্য একটি নেকি লিখো। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন [অনুবাদ] : “কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুন পাবে এবং কেউ কোন অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু এর প্রতিফল দেয়া হইবে —[সূরা আনআম ১৬০]।

সহীহ : রাওযুন নাযীর [২/ ৭৪২]। বোখারি , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ।  সূরা আনআম তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply