সূরা আত তাওবা তাফসীর উল কোরআন

সূরা আত তাওবা তাফসীর উল কোরআন

সূরা আত তাওবা তাফসীর উল কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা তাওবা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-১০ঃ সূরা আত তাওবা তাফসীর

৩০৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] কে বললাম, শত আয়াতের চাইতে ক্ষুদ্রতম সূরা আল-আনফালকে শত আয়াত সম্বলিত সূরা বারাআতের পূর্বে স্থাপন করিতে কিসে আপনাদেরকে উদ্দ্বুদ্ধ করিল? যার ফলে আপনারা এই দুটি সুরাকে একত্রে মিলিয়ে দিলেন, অথচ উভয়ের মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বাক্যটি লিখেননি এবং এটিকে সপ্ত দীর্ঘ সূরার মধ্যে রেখে দিয়েছেন। আপনাদের এরুপ করার কারণ কি? উসমান [রাদি.] বলিলেন, একই সময়কালে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উপর অনেকগুলো সূরা অবতীর্ণ হত। অতএব তাহাঁর উপর কোন আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি লেখকদের কাউকে ডেকে বলিতেন, এ আয়াতগুলো অমুক সূরায় যোগ কর যাতে এই বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। অতএব তার উপর আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি বলিতেন, ঐ সূরাতে এ আয়াতটি শামিল কর যাতে এই এই বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। সূরা আল-আনফাল ছিল মাদীনায় অবতীর্ণ প্রাথমিক সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর বারাআত ছিল [নাযিলের দিক হইতে] কুরআনের শেষ দিকের সূরা। সূরা বারাআতের আলোচ্য বিষয় সূরা আল-আনফালের আলোচ্য বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তাই আমার ধারণা হল, এটি [বারাআত] তার অন্তর্ভুক্ত। এদিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মৃত্যুবরণ করেন। অথচ তিনি আমাদের স্পষ্ট করে বলে যাননি যে, এ সূরা [বারাআত] আনফালের অন্তর্ভুক্ত কি না। তাই আমি উভয় সূরাকে একত্রে মিলিয়ে দিয়েছি এবং সূরা দুটোর মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বাক্যও লিখিনি, আর এটিকে সপ্ত দীর্ঘ সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা এ হাদীস শুধু আওফ হইতে, তিনি ইয়াযীদ আল-ফারিসী হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই সূত্রেই জেনেছি। ইয়াযীদ আল-ফারেসী বসরাবাসী তাবিঈগণের অন্তর্ভুক্ত। আর ইয়াযীদ ইবনি আবান আর-রাকাশীও বাসরাবাসী তাবিঈগণের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি পূর্বোক্ত জনের চাইতে কনিষ্ঠ। ইয়াযীদ আর-রাকাশী [রঃ]আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে হাদীস বর্ণণা করিয়াছেন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০৮৭. সুলাইমান ইবনি আম্‌র ইবনিল আহওয়াস [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার বাবা আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বিদায় হাজ্জে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে ছিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাহাঁর গুণগান বর্ণনা করিলেন, ওয়াজ-নাসীহাত করিলেন ও উপদেশ দিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আমি কোন দিনটির মর্যাদা বর্ণনা করছি, আমি কোন দিনটির মর্যাদা ঘোষণা করছি? বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! হাজ্জের মহান দিনের।তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-মাল, তোমাদের ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ তোমাদের উপর হারাম, যেরূপ তোমাদের এ দিনে এ শহরে ও এ মাসে হারাম। জেনে রেখ! অপরাধীই অপরাধ কর্মের জন্য দায়ী ও দোষী। ছেলের অপরাধের জন্য বাবা এবং বাবার অপরাধের জন্য ছেলে অপরাধী নয়। জেনে রেখ! এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। কাজেই এক মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ঐ জিনিসই হালাল যা সে স্বেচ্ছায় তার জন্য হালাল করে [দান করে]। জেনে রেখ! জাহেলী যুগের প্রাপ্য সকল প্রকার সুদ বাতিল ঘোষণা করা হল। তবে তোমাদের মূলধন ফেরত পাবে। তোমরা কারো প্রতি যুলুম করিবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হইবে না। আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিবের সুদের সকল পাওনা বাতিল ঘোষণা করা হল। জেনে রেখ! জাহিলিয়াতের সকল প্রকার রক্তের দাবি বাতিল করা হল। জাহিলিয়াতের সর্বপ্রথম যার রক্ত আমি বাতিল ঘোষণা করছি সে হচ্ছে হারিস ইবনি আবদুল মুত্তালিবের রক্ত। সে শিশু অবস্থায় বনূ লাইস গোত্রে দুধ পানরত অবস্থায় হুযাইল গোত্র তাকে হত্যা করেছিল। শোন! আমি তোমাদেরকে নারীদের সাথে ভালো ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি। তারা তোমাদের নিকট বন্দীর মত যুক্ত। তাহাদের উপর তোমাদের কোন কর্তৃত্ব নেই, যদি না তারা কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে। যদি তারা তাই করে তাহলে তোমরা তাহাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং একান্ত প্রয়োজন হলে হালকাভাবে আঘাত কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাহাদের প্রতি বাড়াবাড়ির পথ অন্বেষণ কর না। জেনে রেখ! তোমাদের যেরূপ অধিকার রয়েছে তোমাদের স্ত্রীদের উপর, তোমাদের স্ত্রীদেরও তদ্রুপ অধিকার রয়েছে তোমাদের উপর [কাজেই উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার আদায় করা কর্তব্য]। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের অপছন্দনীয় লোককে তোমাদের বিছানায় স্থান দিবে না এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোককে তোমাদের ঘরে যাতায়াতের অনুমতি দিবে না। আর তোমাদের উপর তাহাদের অধিকার এই যে, তোমরা [যথাসম্ভব] তাহাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও আহারের সুব্যবস্থা করিবে।

হাসান : ইবনি মাজাহ [১৮৫১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এটি শাবীব ইবনি গারক্বাদাহ্‌ হইতে আবুল আহ্‌ওয়াস [রঃ]বর্ণনা করিয়াছেন।  সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০৮৮. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জের মহান দিন প্রসঙ্গে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ কুরবানীর দিন।

সহীহ : [৯৫৭] নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৮৯. আলী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জের মহান দিন হচ্ছে কুরবানীর দিন।

সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, মুহাম্মাদ আবু ইসহাকের হাদিসের চাইতে এটি অনেক বেশি সহীহ। কেননা এ হাদীস বিভিন্ন সূত্রে আবু ইসহাক আল-হারিস হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে এই সূত্রে মাওকূফভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাকের সূত্র ব্যতীত অন্য কেউ এটিকে মারফূভাবে বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। শুবাহ্‌ এ হাদীসটি আবু ইসহাক হইতে, তিনি আবদুল্লাহ্‌ ইবনি মুররাহ্‌ হইতে, তিনি আল-হারিস হইতে, তিনি আলী হইতে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবু বাকর [রাদি.]-কে সূরা বারাআতের প্রাথমিক আয়াতগুলো সহকারে মক্কা মুআজ্জামায় পাঠান। তারপর তাকে ফেরত ডেকে এনে বললেনঃ আমার পরিবারের কোন সদস্য ব্যতীত অন্য কাউকে দিয়ে এটা পাঠানো উচিত নয়। এরপর তিনি আলী [রাদি.]-কে ডাকলেন এবং তাকেই এটি দিলেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান; আনাস [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসেবে গরীব। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০৯১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবু বাকর [রাদি.]-কে [আমীরুল হাজ্জ নিয়োগ করে] পাঠান এবং এই বাক্যগুলো ঘোষণার জন্যে তাকে নির্দেশ দেন। তারপর তিনি আলী [রাদি.]-কে পাঠান। আবু বাকর [রাদি.] পথিমধ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর উটনী কাস্‌ওয়ার শব্দ শুনতে পান। আবু বাকর [রাদি.] সন্ত্রস্ত হয়ে বের হলেন। তিনি ভেবেছিলেন হয়ত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন আলী [রাদি.]। আলী [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর লেখা ফরমানটি দিলেন এবং তাতে তাকে এসব বিষয় ঘোষণা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তারা দুজনেই গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং হাজ্জ সম্পন্ন করিলেন। আলী [রাদি.] আইয়্যামে তাশরিক্বে [কুরবানীর দিন] দাঁড়িয়ে বললেনঃ প্রত্যেক মুশরিকের সাথে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হল। অতএব তোমরা আর চার মাস দেশে চলাফেরা কর। এ বছরের পর আর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না। নগ্ন অবস্থায় কেউ বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করিবে না। শুধু মুমিন ব্যতীত আর কেউ জান্নাতে প্রবেশ করিবে না। আলী [রাদি.] এভাবে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়লে আবু বাকর [রাদি.] দাঁড়িয়ে একই রকম ঘোষণা দিতে থাকেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এই সুত্রে হাসান গরীব । সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯২. যাইদ ইবনি ইউসাই [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আলী [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম, আপনাকে হাজ্জ উপলক্ষ্যে কোন জিনিস সহকারে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলিলেন, আমাকে [হাজ্জে] চারটি বিষয় সহকারে পাঠানো হয়েছিল : [১] কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করিতে পারবে না; [২] যাদের সাথে নাবী [সাঃআঃ] -এর চুক্তি আছে তা তার নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত কার্যকর থাকিবে আর যাদের সাথে তাহাঁর কোন চুক্তি নেই তারা চার মাসের অবকাশ পাবে [নিরাপত্তা সহকারে বিচরণ করার]; [৩] মুমিন ব্যতীত কোন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না; [৪] এ বছরের পর মুসলিমগণ ও মুশরিকরা [হাজ্জে] একত্র হইতে পারবে না [এরপর হইতে মুশরিকদের জন্য হাজ্জে যোগদান চিরতরে নিষিদ্ধ]।

সহীহ : [৮৭১] নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এটি আবু ইসহাক হইতে আবু উয়াইনার বর্ণিত হাদীস। সুফ্‌ইইয়ান সাওরীও এটি আবু ইসহাক হইতে, তিনি তার কোন সহযোগী হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। নাসর ইবনি আলী প্রমুখ- সুফ্‌ইয়ান ইবনি উয়াইনাহ্‌ হইতে, তিনি আবু ইসহাক হইতে, তিনি যাইদ ইবনি ইউসাই হইতে, তিনি আলী [রাদি.] সূত্রে পূবোর্ক্ত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন। আলী ইবনি খাশরাম- সুফ্‌ইয়ান ইবনি উয়াইনাহ্‌ হইতে, তিনি আবু ইসহাক হইতে, তিনি যাইদ ইবনি উসাই হইতে, তিনি আলী [রাদি.] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উয়াইনাহ্‌ উভয় রিওয়ায়াত ইবনি উসাই ও ইবনি ইউসাই উভয়ের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সঠিক হল যাইদ ইবনি উসাই। শুবাহ্ [রঃ]উক্ত হাদীস ব্যতীত অন্য হাদীস আবু ইসহাকের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে সন্দেহে পতিত হয়েছেন এবং যাইদ ইবনি উসাইল নাম বলেছেন; কিন্তু এ ক্ষেত্রে শুবাহ্‌র অনুসরণ করা হয়নি। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কোন ব্যক্তিকে মাসজিদে যাতায়াতে অভ্যস্ত দেখলে তার ঈমানের সাক্ষী দিও। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “আল্লাহ্ তাআলার মাসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ তো তারাই করে যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান এনেছে……” [সূরাঃ আত-তাওবা- ১৮]।

দুর্বল, ২৭৫০নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ইবনি আবু উমার-আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াহ্‌ব হইতে তিনি আমর ইবনিল হারিস হইতে তিনি দাররাজ হইতে তিনি আবুল হাইসাম হইতে তিনি আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] এর সূত্রেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতে “তোমরা যাকে মাসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিতে দেখ” এরূপ বর্ণিত আছে। দুর্বল, দেখুন পূর্বের হাদীস, আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবুল হাইসামের নাম সুলাইমান ইবনি আমর ইবনি আবদুল উতওয়ারী। তিনি ইয়াতীম ছিলেন এবং আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.]-এর পরিবারে লালিত-পালিত হন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৯৪. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাহাদেরকে পীড়াদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও – [সূরা আত্‌-তাওবাহ্ : ৩৪], এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় আমরা নাবী [সাঃআঃ] -এর সাথে ভ্রমণে ছিলাম। কোন কোন সাহাবী বলেন, এ আয়াতটি সোনা ও রূপার সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোন্‌ সম্পদ উৎকৃষ্ট আমরা তা জানতে পারলে তা জমা করতাম। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন উৎকৃষ্ট সম্পদ হল [আল্লাহ তাআলার] যিক্‌রকারী জিহ্‌বা, কৃতজ্ঞ অন্তর ও ঈমানদার স্ত্রী, যে স্বামীকে দীনদারির ব্যাপারে সহযোগিতা করে।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৮৫৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান । আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে প্রশ্ন করে বললাম, সালিম ইবনি আবুল জাদ [রঃ]সাওবান [রাদি.] হইতে হাদীস শুনেছেন কি? তিনি বলিলেন, না। আমি তাকে বললাম, তাহলে তিনি নাবী [সাঃআঃ] -এর সাহাবীগণের মধ্যে কার নিকটে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর নিকট শুনেছেন। নাবী [সাঃআঃ] -এর আরো কয়েকজন সাহাবীর নামও তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯৫. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি গলায় স্বর্ণের ক্রুশ পরে নাবী [সাঃআঃ] -এর সামনে এলাম। তিনি বললেনঃ হে আদী! তোমার গলা হইতে এই প্রতীমা সরিয়ে ফেল। এই বলে আমি তাঁকে সূরা বারাআতের নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করিতে শুনলাম [অনুবাদ] : “তারা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত তাহাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসারবিরাগীগণকে তাহাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে” [সূরা আত্‌-তাওবাহ্‌ ৩১]। তারপর তিনি বললেনঃ তারা অবশ্য তাহাদের পূজা করত না। তবে তারা কোন জিনিসকে যখন তাহাদের জন্য হালাল বলত তখন সেটাকে তারা হালাল বলে মেনে নিত। আবার তারা কোন জিনিসকে যখন তাহাদের জন্য হারাম বলত তখন নিজেদের জন্য উহাকে হারাম বলে মেনে নিত।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমরা এ হাদীস শুধু আবদুস সালাম ইবনি হারবের সূত্রে জেনেছি। হাদীস শাস্ত্রে গুতাইফ ইবনি আইয়ান খুব একটা প্রসিদ্ধ নন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০৯৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু বাকর [রাদি.] তাকে বলেছেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে [সাওর] গিরিগুহায় অবস্থান কালে বললাম, যদি কাফিরদের কেউ তার পদদ্বয়ের দিকে [নিচের দিকে] তাকায় তাহলে সে নিশ্চিত আমাদেরকে তার পায়ের নিচেই দেখবে। তিনি বললেনঃ হে আবু বাকর! যে দুজনের সাথে তৃতীয়জন হিসেবে আল্লাহ তাআলা আছেন সে দুজনের ব্যাপারে আপনার কি ধারণা?

সহীহ : তাখরীজু ফিক্বহিস্‌ সীরাহ্‌ [১৭৩], বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। এ হাদীসটি হাম্মামের সূত্রেই বর্ণিত আছে। একমাত্র তিনিই এটি বর্ণনা করিয়াছেন। হাব্বান ইবনি হিলাল প্রমুখও হাম্মামের সূত্রে এ হাদীস একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন।  সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি : আবদুল্লাহ ইবনি উবাই মারা গেলে তার জানাযা আদায়ের জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আবেদন করা হয়। তিনি সেখানে যেতে শুরু করিলেন। তিনি জানাযার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে আমি ঘুরে গিয়ে তাহাঁর বুক বরাবর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলার দুশমন ইবনি উবাইর জানাযা কি আপনি আদায় করবেন, যে অমুক দিন এই কথা বলেছে, অমুক দিন এই কথা বলেছে? এভাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে উমার [রাদি.] বলিতে লাগলেন এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুচকি হাসি দিতে থাকলেন। এমনকি আমি যখন তাঁকে অনেক কিছু বললাম, তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে উমার! আমার সামনে হইতে সরে যাও। আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। কাজেই আমি [জানাযা আদায়ের] এখতিয়ার গ্রহণ করেছি। আমাকে বলা হয়েছে [আয়াতের অর্থ] : “তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর, এমনকি তুমি যদি সত্তর বারও তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তাআলা তাহাদের কখনো ক্ষমা করবেন না”-[সূরা আত্‌-তাওবাহ্ ৮০]। আমি যদি জানতাম তাহাদের জন্য সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাহাদের ক্ষমা করে দিবেন, তাহলে আমি তাই করতাম। উমার [রাদি.] বলেন, এরপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযা আদায় করিলেন এবং তার জানাযার সাথে গেলেন। তিনি তার ক্ববরের সামনে দাঁড়ান এবং সকল কাজ শেষ করেন। উমার [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে আমার দুঃসাহসিকতায় আশ্চর্যবোধ হল। আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ! কিছুক্ষণ পরেই এ দুটি আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “তাহাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তুমি কখনো তাহাদের জানাযা আদায় করিবে না এবং তার ক্ববরের পাশে কখনো দাঁড়াবে না। কেননা তারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী অবস্থায় এদের মৃত্যু হয়েছে [সূরা আত-তাওবাহ্‌ ৮৪]। উমার [রাদি.] বলেনঃ এরপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর কোন মুনাফিক্বের জানাযা আদায় করেননি এবং এদের ক্ববরের পাশেও দাঁড়াননি।

সহীহ : আহকা-মুল জানা-য়িয [৯৩, ৯৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।  সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ [রাদি.]-এর বাবা আবদুল্লাহ ইবনি উবাই মারা গেলে আবদুল্লাহ্ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] -এর সামনে এসে বলেন, আপনার জামাটি আমাকে দিন, তা দিয়ে তাকে [বাবাকে] কাফন দিব এবং আপনি তার জানাযা আদায় করুন, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে তাহাঁর জামা দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা [গোসল, কাফন ইত্যাদি হইতে] অবসর হলে আমাকে খবর দিও। তিনি নামায আদায়ের প্রস্তুতি নিলে উমার [রাদি.] তাঁকে টেনে ধরে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে মুনাফিক্বদের জানাযা আদায় করিতে নিষেধ করেন নি? তিনি বললেনঃ আমাকে দুটো ব্যাপারেই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে- “তুমি তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর। যাই হোক তিনি তার জানাযা আদায় করিলেন। আল্লাহ তাআলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “তাহাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তুমি কখনো তার জানাযা আদায় করিবে না এবং তার ক্ববরের পাশে কখনো দাঁড়াবে না… [সূরা আত-তাওবাহ্‌ ৮৪]। এরপর তিনি তাহাদের জানাযা আদায় করা ছেড়ে দেন।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৫২৩], বোখারি [৪৬৭০], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৯৯. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “যে মাসজিদ প্রথম দিন হইতেই তাক্বওয়ার ভিত্তির উপর নির্মিত হয়েছে [সূরা আত্‌-তাওবাহ্‌ ১০৮], সেই মাসজিদ প্রসঙ্গে দুই ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হয়। একজন বলল, তা হচ্ছে মাসজিদে কুবা। অন্যজন বলল, তা হচ্ছে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মাসজিদ [মাসজিদে নাববী]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তা আমার এই মাসজিদ।

সহীহ : মুসলিম, এর চেয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে [৩২৩] নং হাদীসে পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমরান ইবনি আবী আনাসের হাদীস হিসেবে গরীব। আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে এটি অন্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি উনাইস ইবনি আবী ইয়াহ্‌ইয়া তার পিতা হইতে, তিনি আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুবাবাসীর সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে [অনুবাদ] : “তথায় এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করিতে ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন- [সূরা আত্‌-তাওবাহ্‌ : ১০৮]। আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেন, এসব লোক পানি দিয়ে ইস্তিনজা করত। তাই তাহাদের ব্যাপারে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [৩৫৭]। আবু ঈসা বলেন, এ সূত্রে হাদীসটি গরীব। আবু আইয়ূব, আনাস ইবনি মালিক ও মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০১. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে তার [মৃত] মুশরিক পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিতে শুনলাম। আমি তাকে বললাম, তোমার মৃত পিতা-মাতার জন্য কি তুমি ক্ষমা প্রার্থনার দুআ করছ, অথচ তারা ছিল মুশরিক? সে বলল, ইবরাহীম [আঃ] কি তাহাঁর বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, অথচ তাহাঁর বাবা ছিল মুশরিক? আমি বিষয়টি নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট উল্লেখ করলাম। তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “নাবী ও ঈমানদার লোকদের পক্ষে শোভনীয় নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, তারা তাহাদের আত্নীয়-স্বজনই হোক না কেন….. – [সূরা আত্‌-তাওবাহ্ : ১১৩]।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৫২৩], বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সাঈদ ইবনিল মুসইয়্যাব [রঃ]হইতে তার বাবার সূত্রে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০২. কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যতগুলো যুদ্ধ করিয়াছেন, একমাত্র বদরের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য কোন যুদ্ধেই আমি অনুপস্থিত ছিলাম না। এভাবে তাবূকের যুদ্ধ সমুপস্থিত হয়। যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের কোনরূপ ভর্ৎসনা করেননি। কারণ তিনি বের হয়েছিলেন কাফিলা অবরোধের উদ্দেশ্যেই। ওদিকে কুরাইশরাও তাহাদের কাফিলার সাহায্যার্থে বের হয়েছিল। প্রতিশ্রুত স্থান ব্যতীত উভয় পক্ষ পরস্পর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়, যেমন আল্লাহ তাআল বলেছেন। আমার জীবনের শপথ! মানুষদের দৃষ্টিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর উপস্থিতির সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে বদরই কিন্তু আমি আক্বাবার রাতে আমার বাইআতের উপর মর্যাদা দিয়ে তাতে [বদরে] অংশগ্রহণ করাকে পছন্দ করিনি। কারণ সেই লাইলাতুল আক্বাবাতেই আমি বাইআত করেছি এবং আমরা এখানেই ইসলামের উপর সুদৃঢ হয়ে গিয়েছি। অতঃপর আমি কখনো রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে কোন অভিযান হইতে পেছনে ছিলাম না। এভাবে তাবূকের যুদ্ধের পালা আসে। আর তাবূক যুদ্ধই ছিল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বশেষ যুদ্ধ। যোদ্ধাদের যাত্রা শুরুর জন্যে নাবী [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলেন। তারপর বর্ণনাকারী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন।

আমি নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট গেলাম। তিনি তখন মাসজিদে বসা ছিলেন। তাহাঁর আশেপাশে মুসলিমগণ সমবেত ছিল। তাহাঁর মুখমণ্ডল চাঁদের ন্যায় চমকাচ্ছিল। তিনি কোন বিষয়ে আনন্দিত হলে তাহাঁর চেহারা মুবারাক দীপ্তিমান হয়ে উঠত। আমি উপস্থিত হয়ে তাহাঁর সামনে বসে পড়লাম। তিনি বললেনঃ “হে কাব ইবনি মালিক! তোমার মা তোমাকে প্রসব করার পর হইতে যতগুলো দিন তোমার কাছে এসেছে তার মধ্যে একটি সর্বোৎকৃষ্ট দিনের সুসংবাদ তোমার জন্য। আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে না আপনার পক্ষ হইতে? তিনি বললেনঃ বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে। তারপর তিনি এ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করিলেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা অবশ্যই অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা বড় দুঃসময়ে তার অনুসরণ করেছিল, এমনকি যখন তাহাদের মধ্যকার একদলের হৃদয় বক্র হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তারপর আল্লাহ তাআলা তাহাদের মাফ করিলেন। তিনি তো তাহাদের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু এবং অপর তিনজনকে যাদেরকে পিছনে রাখা হয়েছিল, যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাহাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গেল এবং তাহাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠল, তারা বুঝতে পারলো যে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশ্রয়স্থল নেই, অতঃপর তিনি তাহাদের প্রতি সদয় হলেন যাতে তারা ফিরে আসে। অবশ্যই আল্লাহ তাওবাহ্ ক্ববুলকারী দয়াময়। [সূরা আত্‌-তাওবাহ্ ১১৭-১১৮]।

বর্ণাকারী বলেন, এ আয়াতগুলোও আমাদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে [অনুবাদ] : “হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও-[সূরা আত্‌-তাওবাহ্ ১১৯]। কাব [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র নাবী! আমার তাওবার মধ্যে এও অন্তর্ভুক্ত যে, আমি সর্বদা সত্য কথাই বলব এবং আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলের উদ্দেশে দান করে দিব। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রাখ। এটাই তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, আমি আমার নিজের জন্য খাইবারের অংশটুকু রেখে দিচ্ছি। কাব [রাদি.] বলেন, ইসলাম ক্ববুল করার পর হইতে আল্লাহ তাআলা আমাকে যত নিআমাতে ধন্য করিয়াছেন আমার মতে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিআমাত হচ্ছে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আমার ও আমার সঙ্গীদ্বয়ের সত্য কথা বলা এবং আমাদের মিথ্যাবাদী না হওয়া। অন্যথায় তারা যেভাবে ধ্বংস হয়েছে আমরাও তদ্রুপ ধ্বংস হতাম। আমি আশা করি সত্য বলার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা যেন আমার ন্যায় এতো বড় পরীক্ষায় আর কাউকে না ফেলেন। আমি আর কখনো মিথ্যা বলিনি। আমি আরো আশা করি অবশিষ্ট দিনগুলোও যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে হিফাযাত করেন।

সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [১৯১২], বোখারি [৪৬৭৬], মুসলিম। এ হাদীস উপরোক্ত সনদের বিপরীত সনদে যুহরী [রঃ]হইতে বর্ণিত হয়েছে। কথিত আছে যে, সনদটি আবদুর রাহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক- তার চাচা উবাইদুল্লাহ হইতে, তিনি কাব [রাদি.] হইতে। আবার কেউ কেউ এ ব্যতীত অন্য সূত্রেও বর্ণনা করিয়াছেন। অনন্তর এ হাদীস যুহরী হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে এই সূত্রে ইউনুস ইবনি ইযাযীদ বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০৩. যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের শাহাদাতের যমানায় আবু বাক্‌র সিদ্দীক্ব [রাদি.] আমায় ডেকে পাঠান। আমি গিয়ে দেখলাম, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-ও তার নিকট উপস্থিত। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, উমার আমার নিকট এসে বলিলেন, অসংখ্য কুরআনের ক্বারী [হাফিয] ইয়ামামার যুদ্ধের দিন শহীদ হয়েছেন। আমার আশংকা হচ্ছে, সর্বত্র এভাবে ক্বারীগণ শাহীদ হয়ে গেলে কুরআনের অনেক অংশই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আমি মনে করি আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। আবু বকর [রাদি.] উমার [রাদি.]-কে বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে যে কাজ করে যাননি আমি কিভাবে তা করিতে পারি? উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর শপথ! এটা খুবই ভালো কাজ। তিনি আমার নিকট বারবার তার কথার পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে সেই কাজের জন্য আল্লাহ তাআলা আমার বক্ষও উন্মুক্ত করে দিলেন, যার জন্য তিনি [আগেই] উমারের বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমিও উক্ত কাজে সেই কল্যাণ লক্ষ্য করলাম যা তিনি [আমার আগেই] লক্ষ্য করেছিলেন। যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] বলেন, আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তুমি একজন জ্ঞানবান যুবক। আমি তোমাকে কোন বিষয়ে দোষারোপ করিনি। আর তুমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর জীবদ্দশায় কুরআন লিপিবদ্ধ করিতে। অতএব তুমি কুরআনের [বিভিন্ন অংশ] অনুসন্ধানে লেগে যাও। যাইদ [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা যদি আমাকে পর্বতমালার মধ্য হইতে কোন পাহাড় স্থানান্তরের কষ্টে নিক্ষেপ করিতেন তাও আমার জন্য এ মহা দায়িত্বের তুলনায় এত বেশি ভারবহ হত না। আমি বললাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে যে কাজ করেননি আপনারা তা কিভাবে করিতে পারেন? আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর শপথ! এটা খুবই ভালো কাজ। আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.] উভয়ে ঐ কথার পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা আবু বাক্‌র ও উমারের ন্যায় আমার বক্ষও উন্মুক্ত করে দিলেন। অতএব আমি চামড়ার টুকরাসমূহ, খেজুর পত্র, মসৃণ পাথর ও লোকদের অন্তকরণ হইতে খুঁজে খুঁজে সম্পূর্ণ কুরআন একত্র করলাম। সূরা বারাআতের শেষ অংশটুকু আমি খুযাইমাহ্‌ ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর নিকট পেলাম। তা হল [অনুবাদ] : “অবশ্যই তোমাদের মধ্য হইতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাহাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী এবং মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও অত্যন্ত করুণাসক্ত। এতদসত্ত্বেও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বল : আল্লাহ তাআলাই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তার উপরই নির্ভর করি এবং তিনিই মহান আরশের মালিক -[সূরা আত্‌-তাওবাহ্ ১২৮, ১২৯]।

সহীহ বোখারি [৪৬৭৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।  সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুযাইফাহ্ [রাদি.] উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। হুযাইফা [রাদি.] আর্মেনিয়া ও আযারবাইযান অভিযানে ইরাকীদের সঙ্গী হয়ে সিরীয়দের বিরুদ্ধে জিহাদ করছিলেন। তখন হুযাইফাহ্ [রাদি.] তাহাদের মধ্যে কুরআন নিয়ে মতের অমিল লক্ষ্য করেন। তিনি [ফিরে এসে] উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-কে বলিলেন, হে আমিরুল মুমিনীন! যেভাবে ইয়াহূদী-নাসারাগণ তাহাদের কিতাব নিয়ে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল, সেরূপ এই উম্মাতের লোকদের নিজেদের কিতাব নিয়ে মতভেদে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে তাহাদের খবর নিন। এরপর উসমান [রাদি.] এই কথা বলে হাফসাহ্ [রাদি.]-এর নিকট লোক পাঠান যে, আপনার নিকট রক্ষিত কুরআনের সহীফাখানি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। আমরা সেটি হইতে কপি করার পর তা আপনাকে আবার ফেরত দেব। উম্মুল মুমিনীন হাফসাহ্ [রাদি.] তার কপি উসমান ইবনি আফ্‌ফান [রাদি.]-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। উসমান [রাদি.] যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.], সাঈদ ইবনিল আস [রাদি.], আবদুর রাহমান ইবনিল হারিস ইবনি হিশাম [রাদি.], আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] প্রমুখের নিকট উক্ত সহীফাখানি পাঠিয়ে দিয়ে বলিলেন, আপনারা এ সহীফাখানি হইতে অনেকগুলো কপি করে নিন। তিনি উক্ত কমিটির তিন কুরাইশ সদস্যকে বলিলেন, কোন ক্ষেত্রে তোমাদের ও যাইদ ইবনি সাবিতের মধ্যে মতের অমিল হলে তা তোমরা কুরাইশের বাকরীতি মতো লিখবে। কেননা কুরআন তাহাদের বাকরীতিতে অবতীর্ণ হয়েছে। অবশেষে তারা পূর্ণ কুরআনের কয়েকটি কপি করেন। উসমান [রাদি.] সেগুলোর এক একটি কপি রাজ্যের এক এক এলাকায় পাঠিয়ে দিলেন।

যুহরী [রঃ]বলেন, খারিজা ইবনি যাইদ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন; যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] বলেছেন, আমি সূরা আল-আহ্‌যাবের একটি আয়াত পেলাম না, যেটি আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তিলাওয়াত করিতে শুনতাম। আয়াতটী এই [অনুবাদ] : “মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহ তাআলার সাথে তাহাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাহাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা নিজেদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি” [সূরা আল-আহ্‌যাব ২৩]।

আমি আয়াতটির খোঁজ করছিলাম। অবশেষে তা খুযাইমাহ্‌ ইবনি সাবিত [রাদি.] বা আবু খুযাইমাহ্ [রাদি.]-এর নিকট পেলাম। আমি সূরার যথাস্থানে আয়াতটি স্থাপন করলাম। যুহরী [রঃ]বলেন, তারা ঐ দিন তাবূত ও তাবূহ শবদ নিয়ে মতের অমিল করেন। কুরাইশীরা বলেন, তাবূত, আর যাইদ [রাদি.] বলেন, তাবূহ। তাহাদের মতের অমিলের বিষয়টি উসমান [রাদি.]-এর নিকট উত্থাপন করা হলে তিনি বলিলেন, তোমরা তাবূত লিখ। কেননা কুরআন কুরাইশদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।

যুহরী [রঃ]বলেন, আমাকে উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উত্‌বাহ্‌ খবর দিয়েছেন যে, যাইদ ইবনি সাবিতের কুরআন লিপিবদ্ধ করাকে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] অপছন্দ করিয়াছেন এবং বলেছেন, হে মুসলিমগণ! কুরআন লিপিবদ্ধ করা হইতে আমি বরখাস্ত হবো এবং আর তার দায়িত্বপ্রাপ্ত হইবে এমন ব্যক্তি, যে আমার ইসলাম গ্রহণের সময় এক কাফির পৃষ্ঠদেশে অন্তর্নিহিত ছিল। এ কথা দ্বারা তিনি যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন। তাই আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের নিকট রক্ষিত কুরআনের লিপিবদ্ধ সংকলন লুকিয়ে রাখ এবং তালাবদ্ধ করে রাখ। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, [অনুবাদ] : “এবং কেউ অন্যায়ভাবে কিছু আত্নসাৎ করলে, যা সে অন্যায়ভাবে আত্নসাৎ করেছে ক্বিয়ামাতের দিন সে তা নিয়ে উপস্থিত হইবে” – [সূরা আল-ইমরান ১৬১]। অতএব তোমরা তোমাদের সংকলনগুলোসহ আল্লাহ তাআলার সাথে মিলিত হইবে। যুহরী [রাদি.] বলেন, আমি জেনেছি যে, ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর এ উক্তিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর বহু প্রবীণ সাহাবী অপছন্দ করিয়াছেন।

সহীহ : বোখারি [৪৯৮৭, ৪৯৮৮] সহীহ মাকতূ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । এটি যুহরীর রিওয়ায়াত । আমরা এ হাদীস শুধু তার সূত্রেই জেনেছি। সূরা আত তাওবা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply