সুরা বারাআত তাফসীর

সুরা বারাআত তাফসীর

সুরা বারাআত তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> >> প্রায় ৫০ টি তাফসীর কিতাব ও সুচিপত্র পড়ুন

৬৫/৯/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর তাআলার বাণীঃ
৬৫/৯/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/৯/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতএব, তোমরা পূর্ণ করিবে তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিকে তাদের মেয়াদ পর্যন্ত। (সুরা বারাআত ৯/৪)
৬৫/৯/৯.অধ্যায়ঃ
৬৫/৯/১২.অধ্যায়ঃ
৬৫/৯/১৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ মুনাফিকদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার জন্য আপনি জানাযার সলাত কখনও পড়বেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না। (সুরা বারাআত ৯/৮৪)
৬৫/৯/১৪.অধ্যায়ঃ
৬৫/৯/১৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তারা তোমাদের সামনে কসম করিবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও তবুও আল্লাহ এসব ফাসিক লোকদের প্রতি রাজি হইবেন না। (সুরা বারাআত ৯/৯৬)
৬৫/৯/১৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নাবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে মুশরিকদের জন্য। (সুরা বারাআত ৯/১১৩)
৬৫/৯/১৮.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ কৃপাদৃষ্টি করিলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতিও, যারা তার অনুসরণ করেছিল অতি কঠিন মুহূর্তে এমনকি যখন তাদের এক দলের অন্তর বক্রতার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা ক্ববূল করিলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সুরা বারাআত ৯/১১৭)
৬৫/৯/২০.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও। (সুরা বারাআত ৯/১১৯)
৬৫/৯/২১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল। তার পক্ষে অতি দুঃসহ-দুর্বহ সেসব বিষয় যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তিনি তোমাদের প্রতি অতিশয় হিতকামী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, খুবই দয়ালু। (সুরা বারাআত ৯/১২৮)

৬৫/৯/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর তাআলার বাণীঃ

{فَسِيْحُوْا فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّاعْلَمُوْآ أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللهِ لاوَأَنَّ اللهَ مُخْزِي الْكٰفِرِيْنَ}

তারপর তোমরা এদেশে চার মাসকাল ঘুরে বেড়াও। আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহ্কে অক্ষম করিতে পারবে না এবং আল্লাহ অবশ্যই কাফিরদের অপদস্থ করে থাকেন। (সুরা বারাআত ৯/২)

سِيْحُوْا -سِيْرُوْا-পরিভ্রমণ করা

৪৬৫৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বাক্র (রাদি.) নবম হিজরীর হাজ্জে আমাকে এ আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন যে, আমি কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় (সমবেত লোকদের) এ ঘোষণা করে দেই যে, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না। আল্লাহর ঘর নগ্নদেহে তাওয়াফ করিবে না।

হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)-কে পুনরায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করিলেন যে, তুমি সুরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেন, মীনায় অবস্থানকারীদের মাঝে (কুরবানীর পর) আলী (রাদি.) আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং সুরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করিলেন, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না। কেউ নগ্ন অবস্থায় ঘর তওয়াফ করিবে না। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন ঃ اَذَنَهُمْ অর্থ, তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। [৩৬৯] (আ.প্র. ৪২৯৪, ই.ফা. ৪২৯৬)

৬৫/৯/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

৪৬৫৬

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু বাক্র (রাদি.) আমাকে সে কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় এ (কথা) ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পরে আর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না। আল্লাহর ঘর নগ্ন অবস্থায় কাউকে তওয়াফ করিতে দেয়া হইবে না। হুমাইদ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) পরে পুনরায় আলী ইবনু আবু ত্বলিবকে পাঠালেন এবং বলিলেন ঃ সুরায়ে বারাআতের নির্দেশাবলী ঘোষণা করে দাও। আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেন, আলী (রাদি.) আমাদের সঙ্গেই মীনাবাসীদের মধ্যে সুরায়ে বারাআত কুরবানীর দিন ঘোষণা করিলেন এ বছরের পরে কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না এবং নগ্নদেহে আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করিবে না। [৩৬৯] (আ.প্র. ৪২৯৫, ই.ফা. ৪২৯৭)

৬৫/৯/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতএব, তোমরা পূর্ণ করিবে তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিকে তাদের মেয়াদ পর্যন্ত। (সুরা বারাআত ৯/৪)

৪৬৫৭

ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিদায় হাজ্জের পূর্বের বছর আবু বাক্র (রাদি.)-কে যে হাজ্জের আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেই হাজ্জে তিনি যেন লোকেদের মধ্যে ঘোষণা দেন, এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না এবং নগ্নদেহে কেউ আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করিতে পারবে না।

হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান বলেন, [আবু হুরাইরাহ (রাদি.)]র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাজ্জুল আকবারের দিন হল কুরবানীর দিন। [৩৬৯] (আ.প্র. ৪২৯৬, ই.ফা. ৪২৯৮)

৬৫/৯/৫

আল্লাহর তাআলার বাণীঃ তবে তোমরা যুদ্ধ করিবে কাফিরদের প্রধানদের বিরুদ্ধে। কেননা তাদের কোন অঙ্গীকারই বহাল নেই।(সুরা বারাআত ৯/১২)

৪৬৫৮

যায়দ ইবনু ওয়াহ্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা হুযাইফাহ (রাদি.)-এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি বলেন, এ আয়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু তিনজন মুসলিম এবং চারজন মুনাফিক বেঁচে আছে। এমন সময় একজন বেদুঈন বলেন, আপনারা সকলে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর সহাবী। আমাদের এমন লোকদের অবস্থা সম্পর্কে খবর দিন যারা আমাদের ঘরে সিঁদ কেটে ঘরের অতি মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, কেননা তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানি না। হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, তারা সবাই ফাসিক। হ্যাঁ, তাদের মধ্য হইতে চার ব্যক্তি এখনও জীবিততাদের মধ্যে একজন এতই বৃদ্ধ যে, শীতল পানি পান করার পর তার শীতলতা অনুভব করিতে পারে না। (আ.প্র. ৪২৯৭, ই.ফা. ৪২৯৯)

৬৫/৯/৬

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ}.

আর যারা জমা করে রাখে স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে আপনি শুনিয়ে দিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ। (সুরা বারাআত ৯/৩৪)

৪৬৫৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো জমাকৃত সম্পদ (যার যাকাত আদায় করা হয় না) ক্বিয়ামাতের দিন বিষাক্ত সর্পের রূপ ধারণ করিবে। [১৪০৩] (আ.প্র. ৪২৯৮, ই.ফা. ৪৩০০)

৪৬৬০

যায়দ ইবনু ওয়াহ্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি একদা রাবাযা নামক স্থানে আবু যার (রাদি.)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি (তাকে) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কেন এ ভূমিতে এসেছেন? তিনি বলিলেন, আমি সিরিয়ায় ছিলাম, তখন আমি [মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর সামনে] এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম। وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ “আর যারা জমা করে রাখে স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে আপনি শুনিয়ে দিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ।” (সুরা বারাআত ৯/৩৪)

মুআবিয়াহ (রাদি.) এ আয়াত শুনে বলিলেন, এ আয়াত আমাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়নি। বরং আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও নাসারাদের) ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, এ আয়াত আমাদের ও তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (এ তর্কবিতর্কের কারণে চলে এসেছি।) [১৪০৬] (আ.প্র. ৪২৯৯, ই.ফা. ৪৩০১)

৬৫/৯/৭

আল্লাহর বাণীঃ

{يَّوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْ طهٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ}.

সে দিন যখন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হইবে এবং তা দিয়ে দাগিয়ে দেয়া হইবে তাদের কপাল, তাদের পাঁজর এবং তাদের পৃষ্ঠদেশ, বলা হবেঃ এগুলো হল তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং যা তোমরা জমা করে রাখতে তার স্বাদ গ্রহণ কর। (সুরা বারাআত ৯/৩৫)

৪৬৬১

খালিদ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাদি.)-এর সঙ্গে বের হলাম। তখন তিনি বলিলেন, এ আয়াতটি যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের। এরপর যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হলে আল্লাহ তা সম্পদের পরিশুদ্ধকারী করেন। [১৪০৪] (আ.প্র. ৪৩০০, ই.ফা. ৪৩০২)

৬৫/৯/৮

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় মাসসমূহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বার মাস, সুনির্দিষ্ট রয়েছে আল্লাহর কিতাবে সেদিন থেকে যেদিন তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন আসমান ও যমীন, এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মপথ। (সুরা বারাআত ৯/৩৬)

{ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ هُوَ الْقَائِمُ} القَيِّمُ : هُوَ القائمُ. [فَلَا تَظْلِمُوْا فِيْهِنَّ أَنْفُسَكُمْ].

القَيِّمُ শব্দটি القائمُ (প্রতিষ্ঠিত) অর্থে ব্যবহৃত হয়।

৪৬৬২

আবু বাক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিলেন, আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে যামানা ছিল তা আজও তেমনি আছে। বারমাসে এক বছর, তার মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ, যিলহাজ্জ ও মুর্হারম আর মুযার গোত্রের রাজব যা জামাদিউস্সানী ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। [৬৭] (আ.প্র. ৪৩০১, ই.ফা. ৪৩০২)

৬৫/৯/৯.অধ্যায়ঃ

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٰ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا}

তিনি ছিলেন দুজনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন যখন তিনি তার সাথীকে বলিলেন, চিন্তা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। (সুরা বারাআত ৯/৪০)

أَيْ نَاصِرُنَا السَّكِيْنَةُ فَعِيْلَةٌ مِنْ السُّكُوْنِ.

مَعَنَا আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী فَعِيْلَةٌ السَّكِيْنَةُ-এর সম ওযনে سَكُوْن থেকে, অর্থ প্রশান্তি।

৪৬৬৩

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বাক্র (রাদি.) আমার কাছে বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে (সওর) গুহায় ছিলাম। তখন আমি মুশরিকদের পদচিহ্ন দেখিতে পেয়ে [নাবী (সাঃআঃ)-কে] বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি তাদের কেউ পা উঠায় তাহলে আমাদের দেখে ফেলবে। তখন তিনি বলিলেন, এমন দুজন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ। [৩৬৫৩] (আ. প্র. ৪৩০২, ই.ফা. ৪৩০৩)

৪৬৬৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন তার ও ইবনু যুবায়র (রাদি.)-এর মধ্যে (বাইআত নিয়ে) মতভেদ ঘটল, তখন আমি বললাম, তার পিতা যুবায়র, তার মাতা আসমা (রাদি.) ও তার খালা আয়েশাহ (রাদি.), তার নানা আবু বাক্র (রাদি.) ও তার নানী সুফিয়া (রাদি.)। আমি সুফ্ইয়ানকে বললাম, এর সানাদ বর্ণনা করুন। তিনি বলিলেন, حَدَّثَنَا এবং ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলার আগেই অন্য এক ব্যক্তি তাকে ব্যস্ত করে ফেললেন। [৪৬৬৫, ৪৬৬৬] (আ.প্র. ৪৩০৩, ই.ফা. ৪৩০৪)

৪৬৬৫

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) ও ইবনু যুবায়র (রাদি.)-এর মধ্যে বাইআত নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হল, তখন আমি ইবনু আব্বাসের কাছে গিয়ে বললাম, আপনি কি আল্লাহ যা হারাম করিয়াছেন, তা হালাল করে ইবনু যুবায়রের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে চান? তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি, এ কাজ তো ইবনু যুবায়র ও বানী উমাইয়াহর জন্যই আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহর কসম! কখনও তা আমি হালাল মনে করব না, (আবু মুলাইকাহ বলেন) তখন লোকজন ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বলিল, আপনি ইবনু যুবায়রের পক্ষে বাইআত গ্রহণ করুন। তখন ইবনু আব্বাস বলিলেন, তাতে ক্ষতির কী আছে? তিনি এটার জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। তাহাঁর পিতা যুবায়র তো নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহায্যকারী ছিলেন, তার নানা আবু বাক্র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সওর গুহার সঙ্গী ছিলেন। তার মা আসমা, যার উপাধি ছিল যাতুন নেতাক। তার খালা আয়েশাহ (রাদি.) উম্মুল মুমিনীন ছিলেন, তার ফুফু খাদীজাহ (রাদি.) রাসুল (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন, আর রাসুল (সাঃআঃ)-এর ফুফু সফীয়্যাহ ছিলেন তাহাঁর দাদী। এ ব্যতীত তিনি (ইবনু যুবায়র) তো ইসলামী জগতে নিষ্কলুষ ব্যক্তি ও কুরআনের ক্বারী। আল্লাহর কসম! যদি তারা (বানী উমাইয়াহ) আমার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে তবে তারা আমার নিকটাত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখল। আর যদি তারা আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে তবে তারা সমকক্ষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরই রক্ষণাবেক্ষণ করিল। ইবনু যুবায়র, বানী আসাদ, বানী তুয়াইত, বানী উসামাএসব গোত্রকে আমার চেয়ে নিকটতম করে নিয়েছেন। নিশ্চয়ই আবিল আস্-এর পুত্র অর্থাৎ আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান অহঙ্কারী চালচলন আরম্ভ করেছে। নিশ্চয়ই তিনি অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) তার লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন। [৪৬৬৪] (আ.প্র. ৪৩০৪, ই.ফা. ৪৩০৫)

৪৬৬৬

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা কি ইবনু যুবায়রের বিষয়ে বিস্মিত হইবে না? তিনি তো তার এ কাজে (খিলাফতের কাজে) দাঁড়িয়েছেন। [ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন] আমি বললাম, আমি অবশ্য মনে মনে তার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করি, কিন্তু আবু বাক্র (রাদি.) কিংবা উমার (রাদি.)-এর ব্যাপারে এতটুকু চিন্তা-ভাবনা করিনি। সব দিক থেকে তাহাঁর চেয়ে তারা উভয়ে উত্তম ছিলেন। আমি বললাম, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর ফুফু সফীয়্যাহ (রাদি.)-এর সন্তান, যুবায়রের ছেলে, আবু বাক্র (রাদি.)-এর নাতি। খাদীজাহ (রাদি.)-এর ভাতিজা, আয়েশাহ (রাদি.)-এর বোন আসমার ছেলে। কিন্তু তিনি (নিজেকে বড় মনে করে) আমার থেকে দূরে সরে থাকেন এবং তিনি আমার সহযোগিতা কামনা করেন না। আমি বললাম, আমি নিজে থেকে এজন্য তা প্রকাশ করি না যে, হয়ত তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন এবং আমি মনে করি না যে, তিনি এটা ভাল করছেন। কারণ অন্য কোন ব্যক্তি দেশের শাসক হওয়ার চেয়ে আমার চাচার ছেলে অর্থাৎ আমার আপনজন শাসক হওয়া আমার নিকট উত্তম। [৪৬৬৪] (আ.প্র. ৪৩০৪, ই.ফা. ৪৩০৬)

৬৫/৯/১০

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। (সুরা বারাআত ৯/৬০)

قَالَ مُجَاهِدٌ يَتَأَلَّفُهُمْ بِالْعَطِيَّةِ.

মুজাহিদ বলেছেন, তাদেরকে দানের মাধ্যমে আকৃষ্ট করিতেন।

৪৬৬৭

আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বলিলেন, তাদেরকে (এর দ্বারা) আকৃষ্ট করছি। তখন এক ব্যক্তি বলিল, আপনি সুবিচার করেননি। (এটা শুনে নাবী (সাঃআঃ)) বলিলেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন সব লোক জন্ম নেবে যারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে। [৩৩৪৪] (আ.প্র. ৪৩০৫, ই.ফা. ৪৩০৭)

৬৫/৯/১১

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{الَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِي الصَّدَقَاتِ}

মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাহ দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ বস্তু ব্যতীত ব্যয় করার কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তাদের বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা বারাআত ৯/৭৯)

يَلْمِزُوْنَ يَعِيْبُوْنَ {وَجُهْدَهُمْ} وَجَهْدَهُمْ طَاقَتَهُمْ.

يَلْمِزُوْنَ-তাদের পরিশ্রমে ত্রুটি ধরে, وَجُهْدَهُمْ -তাদের সাধ্যমত, وَجَهْدَهُمْ তাদের ক্ষমতা।

৪৬৬৮

আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমাদের সদাকাহ দানের আদেশ দেয়া হল, তখন আমরা মজুরীর বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদিন আবু আকীল (রাদি.) অর্ধ সা খেজুর (দান করার উদ্দেশে) নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যক্তি (আবদুর রহমান ইবনু আওফ) তার চেয়ে অধিক মালামাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। মুনাফিকরা বলিতে লাগল, আল্লাহ এ ব্যক্তির সদাকাহর মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি [আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাদি.)] শুধু মানুষ দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় “মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাহ দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ বস্তু ব্যতীত ব্যয় করার কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সুরা বারাআত ৯/৭৯)। [১৪১৫] (আ.প্র. ৪৩০৭, ই.ফা. ৪৩০৮)

৪৬৬৯

আবু মাসঊদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সদাকাহ করার নির্দেশ দিলে আমাদের মধ্য হইতে কেউ কেউ অত্যন্ত পরিশ্রম করে, (গম অথবা খেজুর ইত্যাদি) এক মুদ্দ আনতে পারত কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে কারো কারো এক লাখ পরিমাণ (দিরহাম) রয়েছে। আবু মাসঊদ (রাদি.) যেন (এ কথা বলে) নিজের দিকে ইশারা করিলেন। [১৪১৫] (আ.প্র. ৪৩০৮, ই.ফা. ৪৩০৯)

৬৫/৯/১২.অধ্যায়ঃ

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ {اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً فَلَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَهُمْ}. আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন অথবা নাই করেন (উভয়ই সমান)। যদি আপনি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা তো কুফরী করেছে আল্লাহর সঙ্গে এবং তাহাঁর রাসূলের সঙ্গেও। আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দান করেন না। (সুরা বারাআত ৯/৮০)

৪৬৭০

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জামাটি দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জামা প্রদান করিলেন, এরপর তিনি জানাযার সলাত আদায়ের জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আবেদন জানালেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জানাযার সলাত পড়ানোর জন্য (বসা থেকে) উঠে দাঁড়ালেন, ইত্যবসরে উমার (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাপড় টেনে ধরে আবেদন করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি তার জানাযার সলাত আদায় করিতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব আপনাকে তার জন্য দুআ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে আমাকে (দুআ) করা বা না করার সুযোগ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তো ইরশাদ করিয়াছেন, “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তরবারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তবু আমি তাদের ক্ষমা করব না”। সুতরাং আমি তার জন্য সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমার (রাদি.) বলিলেন, সে তো মুনাফিক, শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার জানাযার সলাত আদায় করিলেন, এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। “তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি কক্ষণো তাদের জানাযাহ্র সলাত আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। [১২৬৯; মুসলিম ৪৪/২, হাদীস ২৪০০, আহমাদ ৯৫] (আ.প্র. ৪৩০৯, ই.ফা. ৪৩১০)

৪৬৭১

উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল মারা গেল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তার জানাযাহর সলাত আদায়ের জন্য আহ্বান করা হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন (জানাযার জন্য) উঠে দাঁড়ালেন, আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ইবনু উবাই-এর জানাযার সলাত পড়াবেন? অথচ সে লোক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে। উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) বলেন, আমি তার কথাগুলো রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামনে এক একটি করে উল্লেখ করছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বলিলেন, হে উমার! আমাকে যেতে দাও। আমি বারবার বলাতে তিনি বলিলেন, আল্লাহ আমাকে করা বা না করার অবকাশ দিয়েছেন। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি যদি জানতে পারি যে, সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন, তবে আমি সত্তরবারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করব। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার জানাযার সলাত আদায় করিলেন এবং (জানাযাহ) থেকে ফিরে আসার পরই সুরা বারাআতের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, “তাদের কেউ মারা গেলে কখনও তার জানাযাহর সলাত আদায় করিবে না। এরা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাস করেছে এবং ফাসিক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। (সুরা বারাআত ৯/৮৪)

উমার (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামনে আমার এ দুঃসাহসের জন্য পরে আমি আশ্চর্য হতাম। বস্তুতঃ আল্লাহ ও তার রাসুল অধিক জ্ঞাত। [১৩৬৬] (আ.প্র. ৪৩১০, ই.ফা. ৪৩১১)

৬৫/৯/১৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ মুনাফিকদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার জন্য আপনি জানাযার সলাত কখনও পড়বেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না। (সুরা বারাআত ৯/৮৪)

৪৬৭২

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন (মুনাফিক) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলেন। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] তার নিজ জামাটি তাকে দিয়ে দিলেন এবং এর দ্বারা তার পিতার কাফনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার জানাযার সলাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাপড় ধরে নিবেদন করিলেন, [হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)] আপনি কি তার (আবদুল্লাহ ইবনু উবাই)-এর জানাযাহর সলাত আদায় করবেন? সে তো মুনাফিক, অথচ আল্লাহ তাআলা তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিতে আপনাকে নিষেধ করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, (হে উমার!) আল্লাহ আমাকে করা বা না করার অবকাশ দিয়েছেন, অথবা বলেছেন, আল্লাহ আমাকে অবহিত করিয়াছেন এবং বলেছেন, “আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন অথবা নাই করেন (উভয়ই সমান)। যদি আপনি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না।” (সুরা বারাআত ৯/৮০)

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আমি সত্তরবারের চেয়েও অধিকবার ক্ষমা প্রার্থনা করব। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার জানাযাহর সলাত আদায় করিলেন। আমরাও তার সঙ্গে জানাযাহর সলাত আদায় করলাম। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হল, “তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি তার জানাযাহর সলাত কখনও আদায় করবেন না এবং তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকার করেছে এবং ফাসিক অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছে” (সুরা বারাআত ৯/৮৪)। [১২৬৯] (আ.প্র. ৪৩১১, ই.ফা. ৪৩১২)

৬৫/৯/১৪.অধ্যায়ঃ

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{سَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوْا عَنْهُمْ طفَأَعْرِضُوْا عَنْهُمْ جإِنَّهُمْ رِجْسٌ زوَّمَأْوٰﯨهُمْ جَهَنَّمُ ججَزَآءًم بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ}.

যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসবে তখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম করিবে যাতে তোমরা তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও; সুতরাং তোমরা তাদের থেকে বিরত থাক। তারা তো অপবিত্র। আর তাদের বাসস্থান হল জাহান্নাম। (সুরা বারাআত ৯/৯৫)

৪৬৭৩

আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি যখন তাবূকের যুদ্ধে পিছনে রয়ে গেলেন, আল্লাহর কসম! তখন আল্লাহ আমাকে এমন এক নিয়ামত দান করেন যে মুসলিম হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এত বড় নিয়ামত পাইনি। তা হল রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে সত্য কথা প্রকাশ করা। আমি তাহাঁর কাছে মিথ্যা বলিনি। যদি মিথ্যা বলতাম, তবে অন্যান্য (মুনাফিক ও) মিথ্যাচারী যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, আমিও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে সময় ওয়াহী অবতীর্ণ হল “তারা তোমাদের সামনে কসম করিবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও তবুও আল্লাহ এসব ফাসিক লোকদের প্রতি রাজি হইবেন না” (সুরা বারাআত ৯/৯৬)। [২৭৫৭] (আ.প্র. ৪৩১২, ই.ফা. ৪৩১৩)

৬৫/৯/১৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তারা তোমাদের সামনে কসম করিবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও তবুও আল্লাহ এসব ফাসিক লোকদের প্রতি রাজি হইবেন না। (সুরা বারাআত ৯/৯৬)

৬৫/৯/১৬

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًا طعَسَى اللهُ أَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْ طإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ}.

আরও কিছু লোক আছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা এক নেক কাজের সঙ্গে অন্য বদ-কাজ মিশ্রিত করেছে। আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বারাআত ১০২)

৪৬৭৪

সামূরাহ ইবনু জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের বলেছেন, রাতে দুজন মালাক এসে আমাকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করিলেন। এরপর আমরা এমন এক শহরে পৌঁছলাম, যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। সেখানে এমন কিছু সংখ্যক লোকের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ ঘটল, যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুশ্রী যা তোমরা কখনও দেখনি এবং আর এক অর্ধেক এত কুৎসিত যা তোমরা কখনও দেখনি। মালাক দুজন তাদেরকে বলিলেন, তোমরা ঐ নহরে গিয়ে ডুব দাও। তারা সেখানে গিয়ে ডুব দিয়ে আমাদের নিকট ফিরে আসল। তখন তাদের বিশ্রী চেহারা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল এবং তারা সুশ্রী চেহারা লাভ করিল। মালাকদ্বয় আমাকে বলিলেন, এটা হল জান্নাতে আদন এটাই হল আপনার আসল ঠিকানা। মালাকদ্বয় বলিলেন, (আপনি) যেসব লোকের দেহের অর্ধেক সুশ্রী এবং অর্ধেক বিশ্রী (দেখেছেন), তারা ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে সৎকর্মের সঙ্গে অসৎকর্ম মিশিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। [৮৪৫] (আ.প্র. ৪৩১৩, ই.ফা. ৪৩১৪)

৬৫/৯/১৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নাবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে মুশরিকদের জন্য। (সুরা বারাআত ৯/১১৩)

৪৬৭৫

মুসাইয়্যাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু ত্বলিবের মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে গেলেন। এ সময় আবু জাহ্ল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবু উমাইয়াহও সেখানে বসা ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে চাচা! আপনি পড়ুন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আপনার মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট এটা দলীল হিসেবে পেশ করব। এ কথা শুনে আবু জাহ্ল ও আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়াহ বলিল, হে আবু ত্বলিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করে দিবে? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে চাচা! আমি আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হইবে ততক্ষণ ক্ষমা চাইতে থাকব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় “নাবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী।” (সুরা বারাআত ৯/১১৩) [১৩৬০] (আ.প্র. ৪৩১৪, ই.ফা. ৪৩১৫)

৪৬৭৫

মুসাইয়্যাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু ত্বলিবের মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে গেলেন। এ সময় আবু জাহ্ল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবু উমাইয়াহও সেখানে বসা ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে চাচা! আপনি পড়–ন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আপনার মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট এটা দলীল হিসেবে পেশ করব। এ কথা শুনে আবু জাহ্ল ও আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়াহ বলিল, হে আবু ত্বলিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করে দিবে? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে চাচা! আমি আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হইবে ততক্ষণ ক্ষমা চাইতে থাকব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় “নাবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী।” (সুরা বারাআত ৯/১১৩) [১৩৬০] (আ.প্র. ৪৩১৪, ই.ফা. ৪৩১৫)

৬৫/৯/১৮.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ কৃপাদৃষ্টি করিলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতিও, যারা তার অনুসরণ করেছিল অতি কঠিন মুহূর্তে এমনকি যখন তাদের এক দলের অন্তর বক্রতার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা ক্ববূল করিলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সুরা বারাআত ৯/১১৭)

৪৬৭৬

আবদুর রহমান ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

কাব (রাদি.) যখন অন্ধ হয়ে পড়লেন, তখন তার ছেলেদের মধ্যে যার সাহায্যে তিনি চলাফেরা করিতেন, সেই আবদুল্লাহ বিন কাব বলেন, আমি (আমার পিতা) কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-এর কাছে وَعَلَى الثَلاَثَةِ এ আয়াত- সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তিনি তার ঘটনা বর্ণনার সর্বশেষে বলিতেন, আমি আমার তওবা কবূল হওয়ার খুশীতে আমার সকল মাল আল্লাহ ও তার রসূলের পথে দান করিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দাও। এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর হইবে। [২৭৫৭] (আ.প্র. ৪৩১৫, ই.ফা. ৪৩১৬)

৬৫/৯/১৯

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর ঐ তিন ব্যক্তির প্রতিও তিনি কৃপাদৃষ্টি করিলেন যাদের ব্যাপার (তাওবাহ) স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি যখন যমীন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের উপর সংকুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবনও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে পড়ল। আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া ব্যতীত কোন আশ্রয় পাওয়ার উপায় নেই, তখন তিনি তাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি করিলেন, যাতে তারা তাওবাহ করে। নিশ্চয় আল্লাহই মহান তাওবাহ ক্ববূলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা বারাআত ৯/১১৮)

৪৬৭৭

আবদুর রহমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কাব ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি, যে তিনজনের তাওবাহ কবূল হয়েছিল, তার মধ্যে তিনি একজন। তিনি বাদরের যুদ্ধ ও তাবূকের যুদ্ধ এ দুটি ব্যতীত অন্য কোন যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পশ্চাতে থাকেননি। কাব ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাবূক যুদ্ধ হইতে সূর্যোদয়ের সময় মদিনায় ফিরে আসলে আমি (মিথ্যার পরিবর্তে) সত্য প্রকাশের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলাম। তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] যে কোন সফর হইতে সাধারণত সূর্যোদয়ের সময় ফিরে আসতেন এবং সর্বপ্রথম মাসজিদে গিয়ে দুরাকআত নাফল সলাত আদায় করিতেন। (তাবূকের যুদ্ধ থেকে এসে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার সঙ্গে এবং আমার সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলেন, অথচ আমাদের ব্যতীত অন্য যারা যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলায় কোন প্রকার বাধা প্রদান করিলেন না। সুতরাং লোকেরা আমাদের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে লাগলেন। আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল যে, যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু এসে যায়, আর নাবী (সাঃআঃ) আমার জানাযাহর সলাত আদায় না করেন, অথবা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ওফাত হলে আমি মানুষের কাছে এই অবস্থায় থেকে যাব তারা কেউ আমার সঙ্গে কথাও বলবে না, আর আমার জানাযার সলাতও আদায় করিবে না। এরপর (পঞ্চাশ দিন পর) আল্লাহ তাআলা আমার তওবা কবূল করে তাহাঁর [নাবী (সাঃআঃ)-এর] প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেন। তখন রাতের শেষ-তৃতীয়াংশ বাকী ছিল। সে রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উম্মু সালামাহ (রাদি.)-এর কাছে ছিলেন, উম্মু সালামাহ (রাদি.) আমার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে উম্মু সালামাহ! কাবের তাওবাহ কবূল করা হয়েছে। উম্মু সালামাহ (রাদি.) বলিলেন, তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য কাউকে তার কাছে পাঠাব? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এখন খবর পেলে সব লোক এসে জমা হয়ে যাবে। তারা তোমাদের ঘুম নষ্ট করে দিবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজরের সলাত আদায়ের পর আমাদের তওবা কবূল হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চেহারা খুশীতে এমন চমকাচ্ছিল যেন চাঁদের টুকরা।

যেসব মুনাফিক মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর অসন্তুষ্টি থেকে] রেহাই পেয়েছিল, তাদের চেয়ে তাওবাহ কবূলের ব্যাপারে আমরা তিনজন পিছনে পড়ে গিয়েছিলাম, এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদের তওবা কবূল করে আয়াত অবতীর্ণ করেন।

(তাবূকের যুদ্ধে) অনুপস্থিতদের মধ্যে যারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে এবং যারা মিথ্যা অজুহাত দেখিয়েছে তাদের জঘন্যভাবে নিন্দাবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “তারা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করিবে যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসবে। আপনি বলে দিনঃ তোমরা ওযর পেশ করো না, আমরা কখনও তোমাদের বিশ্বাস করব না; আল্লাহ তো আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন তোমাদের খবর; আর ভবিষ্যতেও আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য রাখবেন এবং তাহাঁর রাসুলও” (সুরা বারাআত ৯/৯৪)। [২৭৫৭] (আ.প্র. ৪৩১৬, ই.ফা. ৪৩১৭)

৬৫/৯/২০.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও। (সুরা বারাআত ৯/১১৯)

৪৬৭৮

আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যিনি কাব ইবনু মালিক (দৃষ্টিহীন হওয়ার পরে)-এর পথপ্রদর্শক হিসেবে ছিলেন। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-কে, তাবূক যুদ্ধে যারা পশ্চাতে থেকে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম! হয়ত আল্লাহ (রাসুলুল্লাহর কাছে) সত্য কথা প্রকাশের কারণে, অন্য কাউকে এত বড় সুন্দর পরীক্ষা করেননি যতটুকু আমাকে পরীক্ষা করিয়াছেন।

যখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তাবূক যুদ্ধে না যাওয়ার সঠিক কারণ বর্ণনা করেছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ওপর এ আয়াতটি নাযিল করেন لَقَدْ تَابَ اللهُ…. وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি ……….. এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” (সুরা বারাআত ৯/১১৭-১১৯) (আ.প্র. ৪৩১৭, ই.ফা. ৪৩১৮)

৬৫/৯/২১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল। তার পক্ষে অতি দুঃসহ-দুর্বহ সেসব বিষয় যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তিনি তোমাদের প্রতি অতিশয় হিতকামী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, খুবই দয়ালু। (সুরা বারাআত ৯/১২৮)

৪৬৭৯

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যিনি ওয়াহী লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি বলেন, আবু বাক্র (রাদি.) (তার খিলাফাতের সময়) এক ব্যক্তিকে আমার কাছে ইয়ামামার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করিলেন। (আমি তার কাছে চলে আসলাম) তখন তার কাছে উমার (রাদি.) বসা ছিলেন। তিনি [আবু বাক্র (রাদি.) আমাকে] বলিলেন, উমার (রাদি.) আমার কাছে এসে বলিলেন যে, ইয়ামামার যুদ্ধ তীব্র গতিতে চলছে, আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের অভিজ্ঞগণ (হাফিযগণ) ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান নাকি! যদি আপনারা তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করেন তবে কুরআনের অনেক অংশ চলে যেতে পারে এবং কুরআনকে একত্রিত সংরক্ষণ করা ভাল মনে করি। আবু বাক্র (রাদি.) বলেন, আমি উমার (রাদি.)-কে বললাম, আমি এ কাজ কীভাবে করিতে পারি, যা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) করে যাননি। কিন্তু উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! এটা কল্যাণকর। উমার (রাদি.) তাহাঁর এ কথার পুনরুক্তি করিতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ কাজ করার জন্য আমার অন্তর খুলে দিলেন এবং আমিও উমার (রাদি.)-এর মতোই মতামত পেশ করলাম। যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেন, উমার (রাদি.) সেখানে নীরবে বসা ছিলেন, কোন কথা বলছিলেন না। এরপর আবু বাক্র (রাদি.) আমাকে বলিলেন, দেখ, তুমি যুবক এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। আমরা তোমার প্রতি কোনরূপ খারাপ ধারণা রাখি না। কেননা, তুমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সময়ে ওয়াহী লিপিবদ্ধ করিতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত কর। আল্লাহর কসম! তিনি কুরআন একত্রিত করার যে নির্দেশ আমাকে দিলেন সেটি আমার কাছে এত ভারী মনে হল যে, তিনি যদি কোন একটি পর্বত স্থানান্তর করার আদেশ দিতেন তাও আমার কাছে এমন ভারী মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজটি নাবী (সাঃআঃ) করে যাননি, সে কাজটি আপনারা কীভাবে করবেন? তখন আবু বাক্র (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! এটাই কল্যাণকর। এরপর আমিও আমার কথার উপর বারবার জোর দিতে লাগলাম। শেষে আল্লাহ যেটা বুঝার জন্য আবু বাক্র (রাদি.) ও উমার (রাদি.)-এর অন্তর খুলে দিয়েছিলেন, আমার অন্তরকেও তা বুঝার জন্য খুলে দিলেন। এরপর আমি কুরআন সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং হাড়, চামড়া, খেজুর ডাল ও বাকল এবং মানুষের স্মৃতি থেকে তা সংগ্রহ করলাম। অবশেষে খুযাইমাহ আনসারীর কাছে সুরায়ে তাওবার দুটি আয়াত পেয়ে গেলাম, যা অন্য কারও নিকট হইতে সংগ্রহ করিতে পারিনি। لَقَدْ جَاءَكُمْ থেকে শেষ পর্যন্ত।

এরপর এ একত্রিত কুরআন আবু বাক্র (রাদি.)-এর ওফাত পর্যন্ত তাহাঁর কাছেই জমা ছিল। তারপর উমার (রাদি.)-এর কাছে। তার ওফাত পর্যন্ত এটি তার কাছেই ছিল। তারপর ছিল হাফসাহ বিনত উমার (রাদি.)-এর কাছে। উসমান এবং লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) خُزَيْمَةَ শব্দের বর্ণনায় শুআয়ব-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

অন্য এক সনদেও ইবনু শিহাব থেকে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে খুযাইমার স্থলে আবু খুযাইমাহ আনসারী বলা হয়েছে। মূসা-এর সনদে عَنْ ابْنِ شِهَابٍ এর স্থলে حَدَّثَنَا ابْنُ شِهَابٍ এবং আবু খুযাইমাহ বলা হয়েছে। ইয়াকূব ইবনু ইব্রাহীম এর অনুসরণ করিয়াছেন।

অন্য এক সনদে সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর عَنْ إِبْرَاهِيمَ এর পরিবর্তে حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ বলেছেন এবং খুযাইমা অথবা আবু খুযাইমা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আয়াতটির অর্থ হল ঃ “এতদসত্ত্বেও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলে দিন আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তাহাঁরই উপর আমি ভরসা করি এবং তিনি বিরাট আরশের অধিপতি” (সুরা বারাআত ৯/১২৯)। [২৮০৭] (আ.প্র. ৪৩১৮, ই.ফা. ৪৩১৯)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply