সুরা ফুরকান এর তাফসীর
সুরা ফুরকান এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা ফুরকান আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা ফুরকান এর তাফসীর
৬৫/২৫/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/২৫/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/২৫/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ক্বিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হইবে এবং তথায় সে চিরকাল আপমানিত অবস্থায় থাকবে। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৬৯)
৬৫/২৫/৪.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৬৫/২৫/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতএব, অচিরেই নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৭৭)
৬৫/২৫/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
সুরা (২৫) : আল-ফুরক্বান
ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, هَبَاءً مَنْثُوْرًا যা কিছু বাতাস উড়িয়ে নেয়। مَدَّ الظِّلَّ ফজরের উদয় থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়। سَاكِنًا উপরস্থিত। عَلَيْهِ دَلِيْلًا সূর্যোদয়। خِلْفَةً যার রাতের আমাল ছুটে যায়, সে তা দিনে আদায় করে আর যার দিনের কাজ ছুটে যায়, সে তা রাতে আদায় করে। হাসান বলেন, هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَاআল্লাহর আনুগত্যে; মুমিনের চোখে এ ব্যতীত আর কিছু আনন্দদায়ক নয় যে, সে তার প্রিয়জনকে পায় আল্লাহর অনুগত। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, ثُبُوْرًاধ্বংস। কেউ বলেন, السَّعِيْرُ পুংলিঙ্গ, এবং التَّسَعُّرُ ও الاضْطِرَامُতীব্রভাবে, অগ্নি প্রজ্বলিত হওয়া। تُمْلٰى عَلَيْهِ তার প্রতি পড়া হয়। এ শব্দ أَمْلَيْتُ অথবা وَأَمْلَلْتُ থেকে নির্গত। الرَّسُّ খণি, এর বহুবচনرِسَاسٌ। مَا يَعْبَأُ যা গ্রাহ্য করা না হয়। غَرَامًا ধ্বংস। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, وَعَتَوْا তারা অবাধ্য হয়েছে। ইবনু উয়াইনাহ বলেন, عَاتِيَةٍ নিয়ন্ত্রণকারীর নিয়ন্ত্রণ লঙ্ঘন করেছে।
{الَّذِيْنَ يُحْشَرُوْنَ عَلٰى وُجُوْهِهِمْ إِلٰى جَهَنَّمَ أُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّأَضَلُّ سَبِيْلًا}
যাদেরকে নিজেদের মুখের উপর ভর করিয়ে জাহান্নামের দিকে একত্র করা হইবে, তাদেরই স্থান হইবে নিকৃষ্ট এবং পথের দিক দিয়ে তারা হইবে ভ্রষ্টতম। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৩৪)
৪৭৬০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)! ক্বিয়ামাতের দিন কাফেরদের মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করা হইবে? তিনি বলিলেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দুপায়ের উপর চালাতে পারছেন, তিনি কি ক্বিয়ামাতের দিন মুখে ভর করে তাকে চালাতে পারবেন না? ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নিশ্চয়ই, আমার রবের ইজ্জতের কসম! [৬৫২৩; মুসলিম ৫০/১১, হাদীস ২৮০৬] (আ.প্র. ৪৩৯৭, ই.ফা. ৪৩৯৯)
৬৫/২৫/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
والذين لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ – وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا لا} (الفرقان:68)
আর তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যের ইবাদাত করে না; আল্লাহ যার হত্যা হারাম করিয়াছেন সঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে এরূপ করিবে সে তো কঠিন আযাবের সম্মুখীন হইবেই। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৬৮)
৪৭৬১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, অথবা অন্য কেউ জিজ্ঞেস করলো, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বলিলেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি জবাব দিলেন, তোমার সন্তানকে এ আশংকায় হত্যা করা যে, তারা তোমার খাদ্যে ভাগ বসাবে। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বলিলেন,এরপর হচ্ছে তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর এ কথার সমর্থনে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় “এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ্কে আহ্বান করে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না।” [৪৪৭৭] (আ.প্র. ৪৩৯৮, ই.ফা. ৪৪০০)
৪৭৬২
কাসিম ইবনু আবু বাযযা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, যদি কেউ কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছাবশতঃ হত্যা করে, তবে কি তার জন্য তাওবা আছে? আমি তাঁকে এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম عَلَيْهِ وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ “আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করিয়াছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না।” সাঈদ (রাদি.) বলিলেন, তুমি যে আয়াত আমার সামনে পড়লে, আমিও এমনিভাবে ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর সামনে এ আয়াত পড়েছিলাম। তখন তিনি বলিলেন, এ আয়াতটি মাক্কী। সুরা নিসার মধ্যে মাদানী আয়াতটি একে রহিত করে দিয়েছে। [৩৮৫৫] (আ.প্র. ৪৩৯৯, ই.ফা. ৪৪০১)
৪৭৬৩
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুমিনের হত্যার ব্যাপারে কূফাবাসী মতভেদে লিপ্ত হল। আমি (এ ব্যাপারে) ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বলিলেন, (মুমিনের হত্যা সম্পর্কিত) এ আয়াত সর্বশেষে অবতীর্ণ হয়েছে। একে অন্য কিছু রহিত করেনি। [৩৮৫৫] (আ.প্র. ৪৪০০, ই.ফা. ৪৪০২)
[১] শির্কের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের যে কোন গুনাহ আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে থাকেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ হচ্ছে-শিরকের চেয়ে নিম্নমানের গুনাহর কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হইবে না। উল্লেখ্য যে, শিরকের চেয়েও উপরের স্তরের গুনাহ রয়েছে যেগুলো চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবার আরও শক্ত কারণ। আর সেগুলো হচ্ছে, কুফর তথা আল্লাহকে অস্বীকার করা, তাকযীব তথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বলা, তাহাঁর অস্তিত্ব অস্বীকার করা ইত্যাদি কাজগুলো শিরকের চেয়েও বড় গুনাহ। (তাফসীর ইবনু উসাইমিন ও তাহাঁর ফাতাওয়া গ্রন্থ ১২নং খন্ড ১৩৫-১৩৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
৪৭৬৪
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে আল্লাহ তাআলার বাণী ঃ فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ (তাদের পরিণতি জাহান্নাম) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তার জন্য তাওবাহর সুযোগ নেই। এরপরে আমি আল্লাহ তাআলার বাণী ঃ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে (নাযিল হয়েছে)। [৩৮৫৫] (আ.প্র. ৪৪০১, ই.ফা. ৪৪০৩)
৬৫/২৫/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ক্বিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হইবে এবং তথায় সে চিরকাল আপমানিত অবস্থায় থাকবে। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৬৯)
৪৭৬৫
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু আবযা (রাদি.) বলেন, ইবনু আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হল, আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম” এবং আল্লাহর এ বাণীঃ “এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত, তারা তাকে হত্যা করে না” এবং “কিন্তু যারা তাওবাহ করে” পর্যন্ত সম্পর্কে। আমিও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি উত্তরে বলিলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন মাক্কাহবাসী বলিল, আমরা আল্লাহর সাথে শারীক করেছি, আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করেছি এবং আমরা অশ্লীল কার্যে লিপ্ত হয়েছি। তারপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, “যারা তওবাহ করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।” إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا থেকে غَفُورًا رَحِيمًا পর্যন্ত। [৩৮৫৫; মুসলিম ৫৪/হাদীস ৩০২৩] (আ.প্র. ৪৪০২, ই.ফা. ৪৪০৪)
৬৫/২৫/৪.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئٰتِهِمْ حَسَنٰتٍ ط وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}.
তবে তারা নয় যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে; আল্লাহ এরূপ লোকের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৭০)
৪৭৬৬
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আব্যা (রাদি.) আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর কাছে এ দুটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا আমি তাকে (এ আয়াত সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করায় তিনি বলিলেন, এ আয়াতকে অন্য কিছু মানসূখ করেনি এবং وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম, তিনি [আব্বাস (রাদি.)] বলিলেন, এ আয়াত মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। [৩৮৫৫] (আ.প্র. ৪৪০৩, ই.ফা. ৪৪০৫)
৬৫/২৫/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ অতএব, অচিরেই নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৭৭)
৪৭৬৭
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, পাঁচটি ঘটনা ঘটে গেছে ধূম্রাচ্ছন্ন, চন্দ্র খণ্ডিত হওয়া, রোমানদের পরাজিত হওয়া, প্রবলভাবে পাকড়াও এবং ধ্বংস হওয়া। لِزَامًا ধ্বংস। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪০৪, ই.ফা. ৪৪০৬)
Leave a Reply