সুরা নাসর এর তাফসীর

সুরা নাসর এর তাফসীর

সুরা নাসর এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা ন’সর আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

সুরা নাসর এর তাফসীর

(110) سُوْرَةُ الفتح

সুরা (১১০) : সুরা নাসর এর তাফসীর

৪৯৬৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ সুরা অবতীর্ণ হবার পর নাবী (সাঃআঃ) (রুকু ও সাজদাহইতে) নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ ব্যতীত (রুকু ও সাজদাহইতে অন্য কোন দুআ দ্বারা) সলাত আদায় করেন নি। (আর তা হচ্ছেঃ) سُبْحَانَكَ اللهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِي “হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব। সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্ধারিত। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর।” [৭৯৪] (আ.প্র. ৪৫৯৮, ই.ফা. ৪৬০৩)

১. আঃপ্রঃর ৭৫০ নম্বর হাদীসের টীকায় লিখা হয়েছে “রুকূ ও সাজদাহ্য় এ দুআ নাবী (সাঃআঃ) ইসলামের প্রথম দিকে পড়তেন। তখন রুকুতে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম ও সাজদাহ্য় সুবহানা রব্বিয়াল আলা পড়ার নির্দেশ হয়নি। পরে এ দুটি দুআ নাযিল হলে এবং তা পড়বার আদেশ হলে পূর্বে উল্লেখিত দুআ মানসূখ বা বাতিল হয়ে যায়।”

এটি একেবারেই মনগড়া ও হাদীস বিরোধী কথা যার কোন দলীল নেই। ইমাম ইবনু কাইয়্যিম যাদুল মাআদে এবং নাসিরউদ্দিন আলবানী স্বীয় সিফাত গ্রন্থে রুকু ও সাজদাহর দুআর অর্থের পর লিখেছেনঃ “তিনি কুরআনের উপর আমাল করতঃ রুকু ও সাজদাহ্তে এ দুআটি বেশী বেশী করে পড়তেন।” (বুখারী হাদীস নং ৮১৭) আর এ সুরাহ্টি নাযিল হয়েছে আল্লাহর রসূলের ইন্তিকালের অল্প কিছুদিন পূর্বে। সুরা নাসর হচ্ছে সর্বশেষ নাযিলকৃত সুরা। তাই উক্ত টীকার দাবী সম্পূর্ণ অসত্য ও অজ্ঞতাপূর্ণ। অত্র হাদীস হইতেও বোঝা যায় যে, অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হবার পর তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উপরোক্ত দুআটিই পাঠ, করিয়াছেন অন্য কোন দুআ নয়।

৬৫/১১০/২.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।

৪৯৬৮

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুরা নাসর অবতীর্ণ হবার পর রাসুল سُبْحَانَكَ اللهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِي (হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব, সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য নির্দিষ্ট। তুমি আমাকে করে দাও।) দুআটি রুকূ-সাজদাহর মধ্যে অধিক অধিক পাঠ করিতেন। [৭৯৪] (আ.প্র. ৪৫৯৯, ই.ফা. ৪৬০৪)

৬৫/১১০/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং আপনি লোকদেরকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করিতে দেখবেন। (সুরা নাসর ১১০/২)

৪৯৬৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) লোকদেরকে আল্লাহর বাণী إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ -এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলিলেন, এ আয়াতে শহর এবং প্রাসাদসমূহের বিজয় গাঁথা বর্ণিত হয়েছে। এ কথা শুনে উমার (রাদি.) বলিলেন, হে ইবনু আব্বাস! তুমি কী বল? তিনি বলিলেন, এ আয়াতে ওফাত অথবা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর দৃষ্টান্ত এবং তাহাঁর শান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। [৩৬২৭] (আ.প্র. ৪৬০০, ই.ফা. ৪৬০৫)

৬৫/১১০/৪.অধ্যায়ঃ তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসার সহিত পবিত্রতা-মহিমা বর্ণনা করিতে থাকুন এবং তাহাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করিতে থাকুন। বস্তুতঃ তিনি তো অতিশয় তাওবা ক্বুবূলকারী। (সুরা নাসর ১১০/৩)

تَوَّابٌ عَلَى الْعِبَادِ وَالتَّوَّابُ مِنَ النَّاسِ التَّائِبُ مِنْ الذَّنْبِ.

تَوَّابٌ বান্দাদের তওবা কবূলকারী। التَّوَّابُ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে গুনাহ থেকে তওবা করে।

৪৯৭০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বদর যুদ্ধে যোগদানকারী প্রবীণ সহাবীদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করিতেন। এ কারণে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিল। একজন বলিলেন, আপনি তাকে আমাদের সঙ্গে কেন শামিল করছেন। আমাদের তো তার মত সন্তানই রয়েছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, এর কারণ তো আপনারাও অবগত আছেন। সুতরাং একদিন তিনি তাঁকে ডাকলেন এবং তাঁদের সঙ্গে বসালেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম, আজকে তিনি আমাকে ডেকেছেন এজন্য যে, তিনি আমার প্রজ্ঞা তাঁদেরকে দেখাবেন। তিনি তাদেরকে বলিলেন ঃ-

আল্লাহর বাণী ঃ إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনারা কী বলেন, তখন তাঁদের কেউ বলিলেন, আমরা সাহায্য প্রাপ্ত হলে এবং আমরা বিজয় লাভ করলে এ আয়াতে আমাদেরকে আল্লাহর প্রশংসা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আবার কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন। এরপর তিনি আমাকে বলিলেন, হে ইবনু আব্বাস! তুমিও কি তাই বল? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি কী চলতে চাও? উত্তরে আমি বললাম, এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসুল (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর ইন্তিকালের সংবাদ জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলে এটিই হইবে তোমার মৃত্যুর নিদর্শন। فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا “তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাহাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তাহাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো তাওবাহ কবূলকারী।” এ কথা শুনে উমার (রাদি.) বলিলেন, তুমি যা বলছ, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আমিও তা-ই জানি। [৩৬২৭] (আ.প্র. ৪৬০১, ই.ফা. ৪৬০৬)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply