সুরা নাজম এর তাফসির । তাফসিরুল কুড়ান

সুরা নাজম এর তাফসির । তাফসিরুল কুড়ান

সুরা নাজম এর তাফসির । তাফসিরুল কুড়ান >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা নাজম আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৫৪ঃ সুরা নাজম এর তাফসির

৩২৭৬. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মিরাজের রাতে] যখন সিদরাতুল মুন্তাহায় পৌছালেন। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, সিদরাতুল মুন্তাহা হল একটি কেন্দ্র যেই পর্যন্ত পৃথিবীর যা কিছু উপরে চলে যায় এবং যেখান হইতে নিচের দিকে কোন কিছু অবতরণ হয়ে আসে। এখানে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এমন তিনটি জিনিস উপহার দেন যা তিনি ইতোপূর্বে কোন নাবীকেই দেননি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাহাঁর উপর ফরজ করা হয়, সুরা আল-বাকারার শেষের কয়টি আয়াত তাঁকে দেয়া হয় এবং তাহাঁর উম্মতের কাবীরাহ গুনাহসমূহ [তওবার মাধ্যমে] ক্ষমা করা হয়, যদি তারা আল্লাহ তাআলার সংগে কোন কিছু অংশীদার না করে থাকে। তারপর এ আয়াতটি ইবনি মাসঊদ [রাদি.] পাঠ করেন [অনুবাদ]ঃ “যখন কুলগাছটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল”-[সুরা নাজম ১৬]। তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ আকাশে সিদরাতুল মুন্তাহা অবস্থিত। সুফইয়ান [রঃ]বলেন, এটি সোনার পাখিসমূহ দ্বারা আচ্ছাদিত, এই বলে তিনি তার হাতের ইশারায় তাহাদের উড়ন্ত অবস্থা বুঝালেন। মালিক ইবনি মিগওয়াল ছাড়া অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ বলেন, সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত পৌছালে সৃষ্টির জ্ঞান শেষ হয়ে যায়, এর ঊর্ধ্বজগৎ সম্পর্কে সৃষ্টির কোন জ্ঞান নেই।

সহীহ মুসলিম [হাঃ ১/১০৯]আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহীহ হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৭৭. আশ-শায়বানি [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

আমি যির ইবনি হুবাইশ [রাদি.]-এর নিকট আল্লাহ তাআলার বাণী “তারপর তাহাদের মাঝে দুই ধনুক অথবা তারও কম পার্থক্য থাকল”- [সুরা নাজম ৯] প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম। তিনি বলেন, ইবনি মাসঊদ [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিবরীল [আঃ] কে দেখেছেন এবং ছয়শ ডানা ছিল।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহীহ গারীব হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৭৮. আশ-শাবী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ ইবনি আব্বাস [রাদি.] আরাফাতের ময়দানে কাব [রাদি.]-এর সাথে দেখা করে একটি কথা [আল্লাহ তাআলার দেখা প্রসঙ্গে] জিজ্ঞেস করেন। এতে তিনি এত উচ্চ স্বরে তাকবীর ধ্বনি দিলেন যে, পাহাড় পর্যন্ত উচ্চ গম্ভীর আওয়াজ করে উঠল [প্রতিশব্দ ভেসে এলো]। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেনঃ আমরা হাশিম গোত্রীয়। কাব [রাদি.] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর দীদার [দর্শন] ও কালাম [ সংলাপ] মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ও মূসা [আঃ]-এর মাঝে বাটোয়ারা করিয়াছেন। সুতরাং মূসা [আঃ] আল্লাহ তাআলার সাথে দুবার কথা বলেছেন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] দুবার তাহাঁর দেখা পেয়েছেন। মাসরূক [রঃ]বলেনঃ এ কথা শুনে আমি আইশা [রাদি.]-এর নিকটে গিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলাম, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কি আল্লাহ তাআলাকে দেখেছেন? তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি বিষয়ে কথা বললে যার ফলে আমার শরীরের লোম পর্যন্ত খাড়া হয়ে গেছে। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি এ আয়াত তিলাওয়াত করলামঃ “তিনি তো স্বীয় রবের মহান নিদর্শনসমূহ দর্শন করিয়াছেন। [সূরাঃ আন-নাজ্ম-১৮]। তিনি বললেনঃ তোমার বুদ্ধি তোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে! তিনি হলেন জিবরাঈল [যাকে তিনি দেখেছেন]। যে ব্যক্তি তোমাকে বলেছে যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর রবকে দেখেছেন বা এমন কোন বিষয় তিনি লুকায়িত করিয়াছেন যার [প্রচারের] হুকুম তাঁকে দেয়া হয়েছে অথবা সেই পাঁচটি বিষয়ে তাহাঁর জ্ঞান আছে, যে প্রসঙ্গে আলাহ তাআলা বলেনঃ “কিয়ামাতের জ্ঞান শুধু আল্লাহ তাআলার নিকট আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন…. “ [সূরাঃ লুকমান-৩৪], তাহলে সে একটি সাংঘাতিক অসত্য রটনা করেছে। বরং তিনি জিবরাঈল [আঃ]-কে তার আসল চেহারায় দুবার দেখেছেনঃ একবার সিদরাতুল মুন্তাহার সামনে, আর একবার জিয়াদ নামক জায়গায় [মক্কার একটি জায়গা]। তাহাঁর ছয় শত ডানা আকাশের দিগন্ত ঢেকে ফেলেছিল।

সনদ দুর্বল, হাদীসটি কাব ইবনি আব্বাসের ঘটনা ব্যতীত নাসাঈ সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, দাঊদ ইবনি আবু হিন্দ [রঃ]শাবী হইতে তিনি মাসরূক হইতে তিনি আইশা [রাদি.] হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। দাঊদের রিওয়ায়াত মুজালিদের রিওয়ায়াতের তুলনায় সংক্ষিপ্ততর। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২৭৯. ইকরিমা [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেনঃ মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর রবকে দেখেছেন। আমি বললাম, আল্লাহ কি বলেননি যে, “চোখের দৃষ্টি তাঁকে পরিবেষ্টন করিতে পারে না, কিন্তু তিনি পরিবেষ্টন করেন সকল দৃষ্টি” [সূরাঃ আল-আনআম-১০৩]? তিনি বললেনঃ তোমার জন্য আফসোস! তা তো সেই অবস্থায় যখন তিনি তাহাঁর সত্তাগত নূরে আলোকিত হইবেন। আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর প্রভুকে দুবার দেখেছেন।

জঈফ, যিলালুল জুন্নাহ্ [১৯০/৪৩৭]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২৮০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাআলার বাণীঃ “তিনি নিশ্চয়ই তাকে নিকটবর্তী কুল গাছের কাছে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন”-[সূরা নাজম ১৩-১৪]। “আল্লাহ তাআলা তখন তাহাঁর বান্দার জন্য যা ওয়াহী করার তা ওয়াহী করিলেন” -[সূরা নাজম ১০] এবং “ফলে তাহাদের মধ্যে দুই ধনুক পরিমাণ বা তারও কম পার্থক্য রইল” -[সূরা নাজম ৯]। আয়াতসমূহ প্রসঙ্গে ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, নিশ্চয়ই নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন।

হাসান সহীহঃ আযযিলাল [হাঃ ১৯১, ৪৩৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩২৮১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

“তিনি যা দেখেছেন, তার মন তা অস্বীকার করিতে পারেনি ”- [সূরা নাজম ১১] তিনি এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলাকে তার অন্তরের চোখ দ্বারা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন।

সহীহঃ প্রাগুক্ত, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৮২. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু যার [রাদি.]-কে বললাম, যদি আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দেখা পেতাম তাহলে একটি বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতাম। তিনি বলিলেন, তুমি তাঁকে কি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করিতে? আমি বললাম, আমি প্রশ্ন করতাম যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর রবকে দেখেছেন কি? আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি তাঁকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেন যে, তিনি [আল্লাহ তাআলা] হলেন নূর, তাকে আমি কিভাবে দেখিতে পারি!

সহীহঃ প্রাগুক্ত [১৯২-৪৪১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৮৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

“তিনি যা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন, তার মন তা অস্বীকার করেনি”- [সুরা নাজমঃ১১]; এ আয়াতটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিবরীল [আঃ] কে রেশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন। তিনি আকাশ ও মাটির মধ্যে অবস্থিত জায়গা পূর্ণ করে রেখেছিলেন।

সহীহঃ বোখারি [হাঃ ৪৮৫৮] সংক্ষেপিত। আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান হাদীস। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তারা ছোটখাট অন্যায় করলেও গুরুতর পাপ ও খারাপ কাজ হইতে বিরত থাকে” – [সুরা নাজম ৩২] এ আয়াতটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি আপনি মাফই করেন তাহলে সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন, আর আপনার এমন কোন বান্দা কি আছে যে অন্যায় করেনি।

সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [হাঃ ২৩৪৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমা[সাঃআঃ] যাকারিয়া ইবনি ইসহাক্বের সনদে অবহিত হয়েছি। সুরা নাজম এর তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply