সুরা কাহাফ এর তাফসীর
সুরা কাহাফ এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা কা’হফ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা কাহাফ এর তাফসীর
৬৫/১৮/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ কিন্তু মানুষ অতিরিক্ত কলহপ্রিয়। (সুরা কাহাফ ১৮/৫৪)
৬৫/১৮/২.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৬৫/১৮/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তারপর যখন তারা চলতে চলতে দুই সাগরের সংযোগস্থলে পৌঁছলেন, তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। আর মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সাগরের মধ্যে চলে গেল। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৬১)
৬৫/১৮/৪.অধ্যায়ঃ
৬৫/১৮/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আপনি বলে দিনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের পরিচয় দেব যারা আমালের দিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত? (সুরা কাহাফ ১৮/১০৩)
৬৫/১৮/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তারা এমন লোক, যারা অস্বীকার করছে স্বীয় রবের আয়াত সমূহকে এবং তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাতকে। ফলে তাদের যাবতীয় আমাল নষ্ট হয়েছে। (সুরা কাহাফ ১৮/১০৫)
৬৫/১৮/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ কিন্তু মানুষ অতিরিক্ত কলহপ্রিয়। (সুরা কাহাফ ১৮/৫৪)
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন تَقْرِضُهُمْ তাদের ছেড়ে যায়। وَكَانَ لَهচ ثُمُرٌ স্বর্ণ, রৌপ্য। অন্য হইতে বর্ণিত যে, এটি الثَّمَرُ-এর বহুবচন। بَاخِعٌ ধ্বংসকারী أَسَفًا লজ্জায়। الْكَهْفُ পর্বতের গুহা। وَالرَّقِيْمُ লিপিবদ্ধ। مَرْقُوْمٌ লিখিত। الرَّقْمُ [১] থেকে গঠিত। رَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ আমি তাদের অন্তরে সবর ঢেলে দিলাম। (অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন) لَوْلَآ أَنْ رَّبَطْنَا عَلٰى قَلْبِهَا (যদি আমি তাহাঁর অন্তরে সবর ঢেলে না দিতাম) شَطَطًا সীমা অতিক্রম।
الْوَصِيْدُ আঙ্গিণা, এর বহুবচন وَصَائِدُ وَوُصُدٌ আর বলা হয় الْوَصِيْدُ দরজা, مَوْصَدَةَ আবদ্ধ ও আটকানো, آصَدَ الْبَابَ وَأَوْصَدَه উভয়ই ব্যবহার হয়। بَعَثْنَاهُمْ আমি তাদের জীবিত করলাম। أَزْكٰى প্রাচুর্য বলা হয় أَحَلُّ যা অধিক হালাল অর্থে ব্যবহৃত এবং বলা হয়, أَكْثَرُرَيْعًا অধিক পরিবর্ধিত। ইবনু আববাস(রাদি.) বলেন, أُكْلَهَا অর্থাৎ ফল وَلَمْتَظْلِمْ ফলহরাস পায়নি। সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..ইবনু আববাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, الرَّقِيْمُ সীসার তৈরি ফলক; যার ওপর সে সময়ের রাজাদের নাম খোদিত করে এবং পরে তাহাঁর কোষাগারে রেখে দিত। فَضَرَبَ اللهُ عَلٰىاٰذَانِهِمْ তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেন। অন্যগণ বলেন, وَأَلَتْ تَئِلُ তোমরা নাজাহত পাবে। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, مَوْئِلًا সংরক্ষিত স্থান। لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ سَمْعًا তারা বুঝে না।
৪৭২৪
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একদা রাতের বেলা তাহাঁর ও ফাতেমাহ (রাদি.)-এর কাছে এসে বলিলেন, তোমরা কি সলাত আদায় করছ না? رَجْمًا بِالْغَيْبِ ব্যাপারটি অস্পষ্ট ছিল। فُرُطًا লজ্জিত। سُرَادِقُهَا তার বেষ্টনীর মত। অর্থাৎ ক্ষুদ্র কক্ষসমূহ, যা তাঁবু পরিবেষ্টন করে রেখেছে। يُحَاوِرُهُ শব্দটি مُحَاوَرَةِ থেকে গঠিত। অর্থ কথার-আদান-প্রদান। لَكِنَّا هُوَ اللهُ رَبِّي (কিন্তু আল্লাহই আমার প্রতিপালক।) এখানে আসলে ছিল لَكِنَّ أَنَا هُوَ اللهُ رَبِّي কিন্তু হামযাহ লোপ করে একটা নুন আর একটি নুনের সঙ্গে এদ্গাম যুক্ত করে দেয়া হয়েছে زَلَقًا অর্থ, যার ওপর পা টিকে থাকে না। هُنَالِكَ الْوِلاَيَةُ (এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার অধিকার) الْوِلاَيَةُ এটি وَلِيِّ শব্দের মাসদার عُقْبَةً-عُقْبَى-عَاقِبَةً-عُقُبًا সবগুলো এই অর্থে ব্যবহৃত। এর অর্থ আখিরাত। قَبْلاً-قُبُلاً-قِبْلاً সম্মুখ لِيُدْحِضُوا (সূচনা করা) الدَّحْضُ থেকে গঠিত। দূরীভূত করা, অর্থ পদস্খলন। [১১২৭] (আ.প্র. ৪৩৬৩, ই.ফা. ৪৩৬৫)
[১]رَّقِيْمُ লিখিত ফলক। গুহাবাসীর পরিচিতি এতে খোদাই করা ছিল।
[১] সলাত-এর মর্ম তাহাজ্জুদের সলাত (পরবর্তীতে) আলী (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আমাদের জেগে তাহাজ্জুদের সলাত আদায়ের তাওফীক দান করেননি। তখন রাসুলুল্লাহ وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا এ আয়াত পড়ে চলে গেলেন। (বুখারী, ১ম খন্ড, তাহাজ্জুদ অধ্যায়)।
[2]هُنَالِكَ الْوِلَايَةُ لُلّه الحق অর্থ, এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। (সুরা হিজর ১৫/৪৪)
৬৫/১৮/২.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
{وَإِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتّٰىٓ أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا} زَمَانًا وَجَمْعُهُ أَحْقَابٌ.
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ স্মরণ কর, যখন মূসা স্বীয় যুবক সঙ্গীকে বলেছিলেনঃ আমি অবিরত চলতে থাকব যে পর্যন্ত না দুই সাগরের মিলনস্থলে পৌঁছি, অথবা এভাবে আমি দীর্ঘকাল চলতে থাকব। (সুরা কাহাফ ১৮/৬০)
حُقُبًا অর্থ যুগ, তার বহুবচন أَحْقَابٌ।
৪৭২৫
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাসকে বললাম, নওফ আল-বাক্কালীর ধারণা, খাযিরের সাথী মূসা, তিনি বানী ইসরাঈলের নাবী মূসা (আ.) ছিলেন না। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা কথা বলেছে। [ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন] উবাই ইবনু কাআব (রাদি.) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, মূসা (আ.) একবার বানী ইসরাঈলের সম্মুখে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কোন্ ব্যক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বলিলেন, আমি। এতে আল্লাহ তাহাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা এ জ্ঞানের ব্যাপারটিকে তিনি আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেননি। আল্লাহ তাহাঁর প্রতি ওয়াহী পাঠালেন, দু-সমুদ্রের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, সে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আ.) বলিলেন, ইয়া রব, আমি কীভাবে তাহাঁর সাক্ষাৎ পেতে পারি? আল্লাহ বলিলেন, তোমার সঙ্গে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ, যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওনা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাহাঁর খাদেম ইউশা ইবনু নূন। তাঁরা যখন সমুদ্রের ধারে একটি বড় পাথরের কাছে এসে হাজির হলেন, তখন তারা উভয়েই তার ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের ভিতর লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। “মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।” আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ সেখান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয় গেল। যখন তিনি জাগ্রত হলেন, তাহাঁর সাথী তাঁকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকী সময় ও পরবর্তী রাত তাঁরা চললেন। যখন ভোর হল, মূসা (আ.) তাহাঁর খাদিমকে বলিলেন আমাদের সকালের আহার আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।” রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ যে স্থানের নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মূসা (আ.) ক্লান্ত হননি। তখন তাহাঁর খাদিম তাঁকে বলিল, “আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শায়ত্বনই এ কথা বলিতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি বিস্ময়করভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল ।”
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মূসা (আ.) ও তাহাঁর খাদেমকে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মূসা (আ.) বলিলেন ঃ “আমরা তো সে স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। তারপর তাঁরা নিজদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, তারা উভয়ে তাঁদের পদচিহ্ন ধরে সে শিলাখণ্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এক ব্যক্তিকে কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মূসা (আ.) তাকে সালাম দিলেন। খাযির (আ.) বলিলেন, তোমাদের এ স্থলে সালাম আসলো কোত্থেকে? তিনি বলিলেন, আমি মূসা। খাযির (আ.) জিজ্ঞেস করিলেন, বানী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বলিলেন, হাঁ, আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বলিলেন, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করিতে পারবে না।” হে মূসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জান না আর তোমাকে আল্লাহ তাহাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করিয়াছেন, তা আমি জানি না। মূসা (আ.) বলিলেন, “ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।” তখন খাযির (আ.) তাঁকে বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করিবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি। তারপর উভয়ে চললেন।” তাঁরা সুমদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন, তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নৌকার চালকদের সঙ্গে আলাপ করিলেন। তারা খাযির (আ.)-কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। “যখন তাঁরা উভয়ে নৌকায় উঠলেন” খাযির (আ.) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা ছিদ্র করে দিলেন। মূসা (আ.) তাঁকে বলিলেন, এ লোকেরা তো বিনা মজুরিতে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি নষ্ট করছেন। আপনি নৌকাটি ছিদ্র করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক অন্যায় কাজ করিলেন, (খাযির বলিলেন) আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করিতে পারবে না। মূসা বলিলেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরতা করবেন না।”
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, মূসা (আ.)-এর প্রথম এ অপরাধটি ভুল করে হয়েছিল। তিনি বলিলেন, এরপরে একটি চড়–ই পাখি এসে নৌকার পার্শ্বে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খাযির (আ.) মূসা (আ.)-কে বলিলেন, এ সমুদ্র হইতে চড়–ই পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তাঁরা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন। এমতাবস্থায় খাযির (আ.) একটি বালককে অন্য বালকদের সঙ্গে খেলতে দেখলেন। খাযির (আ.) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করিলেন। মূসা (আ.) খাযির (আ.)-কে বলিলেন, “আপনি কি প্রাণের বদলা ব্যতিরেকেই নিষ্পাপ একটি প্রাণকে হত্যা করিলেন? আপনি তো চরম এক অন্যায় কাজ করিলেন। তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না।” নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ অভিযোগটি ছিল প্রথমটির অপেক্ষাও মারাত্মক। [মূসা (আ.) বলিলেন] এরপর যদি আমি আপনাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আপনার কাছে আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছেছে। তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। শেষে তারা এক বসতির কাছে পৌঁছে তার বাসিন্দাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের আতিথেয়তা করিতে অস্বীকৃতি জানাল। তারপর সেখানে তারা এক পতনোন্মুখ দেয়াল দেখিতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খাযির (আ.) নিজ হাতে সেটি সোজা করে দিলেন। মূসা (আ.) বলিলেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম, তারা আমাদের খাদ্য দিল না এবং আমাদের আতিথেয়তাও করিল না। “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। তিনি বলিলেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটল। …..যে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ করিতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা।”
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আমার মনের বাসনা যে, যদি মূসা (আ.) আর একটু ধৈর্যধারণ করিতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) এভাবে এ আয়াত পাঠ করিতেন- وَكَانَ اَمَا مَهُمْ مَلِكٌ يَّاخُذُ كُلَّ سَفِيْنَةٍ صَالِحَةً غَصْبًا
নিচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করিলেন- وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ। [৭৪] (আ.প্র. ৪৩৬৪, ই.ফা. ৪৩৬৬)
[১] নওফ আল-বাককালী- সে একজন মুসলিম। ইবনু আববাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায়।
[2] স্থানঃ যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে।
৬৫/১৮/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তারপর যখন তারা চলতে চলতে দুই সাগরের সংযোগস্থলে পৌঁছলেন, তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। আর মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সাগরের মধ্যে চলে গেল। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৬১)
{فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوْتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيْلَه” فِي الْبَحْرِ سَرَبًا} مَذْهَبًا يَسْرُبُ يَسْلُكُ. وَمِنْهُ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ
তারপর যখন তারা চলতে চলতে দুই সাগরের সংযোগস্থলে পৌঁছলেন, তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। আর মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সাগরের মধ্যে চলে গেল। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৬১)
سَرَبًا চলার পথ يَسْرُبُ সে চলছে। এর থেকেই বলা হয়েছে سَارِبٌ بِالنَّهَارِ দিনে পথ অতিক্রমকারী।
৪৭২৬
সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর কাছে তাহাঁর ঘরে ছিলাম। তখন তিনি বলিলেন, ইচ্ছা হলে আমার কাছে প্রশ্ন কর। আমি বললাম, হে আবু আব্বাস! আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কূফায় নওফ নামক একজন কিচ্ছাকার আছে। সে বলছে যে, খাযির (আ.)-এর সঙ্গে যে মূসার সাক্ষাৎ হয়েছিল, তিনি বানী ইসরাঈলের (প্রতি প্রেরিত) মূসা নন। তবে, আমর্র ইবনু দীনার আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) এ কথা শুনে বলিলেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা কথা বলেছে। কিন্তু ইয়ালা (একজন বর্ণনাকারী) আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) এ কথা শুনে বলিলেন, উবাই ইবনু কাব আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল মূসা (আ.) একদিন লোকেদের সামনে নসীহত করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের অশ্র“ ঝরতে লাগল এবং তাদের অন্তর গলে গেল, তখন তিনি ওয়ায সমাপ্ত করিলেন। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! এ পৃথিবীতে আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী আর কেউ আছে কি? তিনি বলিলেন, না। এতে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা, তিনি এ কথাটি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করেনি। তখন তাকে বলা হল, নিশ্চয় আছে। মূসা (আ.) বলিলেন, হে রব! তিনি কোথায়? আল্লাহ বলিলেন, তিনি দু সমুদ্রের সংযোগস্থলে। মূসা (আ.) বলিলেন, হে রব! আপনি আমাকে এমন নিদর্শন বলুন, যার সাহায্যে আমি তার পরিচয় পেতে পারি। বর্ণনাকারী ইবনু জুরাইজ বলেন, আমর আমাকে এভাবে বলেছেন যে, তাকে (পাওয়া যাবে), যেখানে মাছটি তোমার নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর ইয়ালা আমাকে এভাবে বলেছেন, একটি মরা মাছ লও, যেখানে মাছটির মধ্যে প্রাণ দেয়া হইবে (সেখানেই তাকে পাবে)। তারপর মূসা (আ.) একটি মাছ নিলেন এবং তা থলের ভিতর রাখলেন। তিনি তার খাদেমকে বলিলেন, আমি তোমাকে শুধু এ দায়িত্ব দিচ্ছি যে, মাছটি যেখানে তোমার থেকে চলে যাবে, সে জায়গার কথা আমাকে বলবে। খাদেম বলিল, এ তো তেমন বড় দায়িত্ব নয়। এরই বিবরণ রয়েছে আল্লাহ তাআলার এ বাণীতে ঃ “আর যখন মূসা বলিলেন তাহাঁর খাদেমকে অর্থাৎ ইউশা ইবনু নূনকে”। সাঈদ (বর্ণনাকারী) এর বর্ণনায় নামের উল্লেখ নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, যখন তিনি একটি বড় পাথরের ছায়ায় ভিজা মাটির কাছে অবস্থান করছিলেন, তখন মাছটি লাফিয়ে উঠল। মূসা (আ.) তখন নিদ্রায় ছিলেন। তাহাঁর খাদেম মনে মনে বলিলেন, তাঁকে এখন জাগবে না। অবশেষে যখন তিনি জাগালেন, তখন তাকে মাছের কথা বলিতে ভুলে গেলেন। আর মাছটি লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল। আল্লাহ তাআলা মাছটির চলার পথে পানি সরিয়ে নিলেন যাতে পাথরের উপর চিহ্ন পড়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, আমর আমাকে বলেছেন যে, যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন এরূপ হয়ে রইল, বলে তিনি তাহাঁর দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পাশের আঙ্গুলগুলো এক সঙ্গে মিলিয়ে বৃত্তাকার বানিয়ে দেখালেন। [মূসা (আ.) বলিলেন] “আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।” ইউশা বলিলেন, আল্লাহ আপনার থেকে ক্লান্তি দূর করে দিয়েছেন। সাঈদের বর্ণনায় এ কথার উল্লেখ নেই। খাদেম তাঁকে মাছটির চলে যাবার খবর দিলেন। তারপর তাঁরা উভয়ে ফিরে এলেন এবং খাযির (আ.)-কে পেলেন। বর্ণনাকারী ইবনু যুরাইজ বলেন, উসমান ইবনু আবু সুলায়মান আমাকে বলেছেন যে, মূসা (আ.) খাযির (আ.)-কে পেলেন সমুদ্রের বুকে সবুজ বিছানার ওপর। সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, তিনি চাদর জড়িয়ে ছিলেন। চাদরের এক পার্শ্ব ছিল তাহাঁর দুপায়ের নিচে এবং অন্য পার্শ্ব ছিল তাহাঁর মাথার ওপর। মূসা (আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি তাহাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বলিলেন, আমার এ অঞ্চলে কোত্থেকে সালাম আসলো? কে তুমি? তিনি বলিলেন, আমি মূসা! খাযির (আ.) বলিলেন, বানী ইসরাঈলের মূসা? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তোমার খবর কী? মূসা (আ.) বলিলেন, আমি এসেছি, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দেয়া হয়েছে, তাত্থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন।” তিনি বলিলেন, তোমার কাছে যে তাওরাত আছে, তা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তোমার কাছে তো ওয়াহী আসে। হে মূসা! আমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা তোমার জানা ঠিক নয়। আর তোমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা আমার জনা উচিত নয়। এ সময় একটি পাখি এসে তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি নিল। খাযির (আ.) বলিলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর জ্ঞানের কাছে আমার ও তোমার জ্ঞান এতটুকু, যতটুকু এ পাখিটি সমুদ্র হইতে তার ঠোঁটে করে নিয়েছে। অবশেষে তাঁরা উভয়ে নৌকায় উঠলেন, তাঁরা ছোট খেয়া নৌকা পেলেন, যা এ-পারের লোকেদের ও-পারে এবং ও-পারের লোকেদের এ-পারে নিয়ে যেত। নৌকার লোকেরা খাযিরকে চিনতে পারল। তারা বলিল, আল্লাহর নেক বান্দা। ইয়ালা বলেন, আমরা সাঈদকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কি খাযির সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, (তারা বলিল) আমরা তাঁকে বহন করিতে পারিশ্রমিক নিব না। এরপর খাযির (আ.) তাদের নৌকা ছিদ্র করে দিলেন এবং একটি গোঁজ দিয়ে তা বন্ধ করে দিলেন। মূসা (আ.) বলিলেন, আপনি কি যাত্রীদেরকে ডুবিয়ে মারার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করিলেন? আপনি তো মারাত্মক কাজ করিলেন। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, اِمْرًا অর্থাৎ নিষিদ্ধ কাজ। “তিনি (খাযির) বলিলেন, আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করিতে পারবে না।” প্রথমটি ছিল মূসা (আ.)-এর পক্ষ থেকে ভুল, দ্বিতীয়টি শর্তস্বরূপ এবং তৃতীয় ইচ্ছাকৃত বলে গণ্য। “মূসা (আ.) বলিলেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে দায়ী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরতা করবেন না।” (এরপর) তাঁরা এক বালকের দেখা পেলেন, খাযির তাকে হত্যা করে ফেললেন। ইয়ালা বলেন, সাঈদ বলেছেন, খাযির (আ.) বালকদের খেলাধূলা করিতে দেখিতে পেলেন। তিনি একটি বুদ্ধিমান কাফের বালককে ধরলেন এবং তাকে পার্শ্বে শুইয়ে যবহ করে ফেললেন। মূসা (আ.) বলিলেন, “আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন জীবনের বদলা অপরাধ ব্যতীতই? “সে তো কোন গুনাহর কাজ করেনি। ইবনু আব্বাস (রাদি.) এখানে زَاكِيَّةً পড়তেন। زَاكِيَةً ভাল মুসলিম। যেমন তুমি পড় غُلاَمً زَكِيَّا তারপর তারা দুজন চলতে লাগল এবং একটি পতনোদ্যত প্রাচীর পেল। খাযির (আ.) সেটাকে সোজা করে দিলেন। সাঈদ তাহাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বলিলেন এরূপ এবং তিনি তাহাঁর হাত উঠিয়ে সোজা করিলেন। ইয়ালা বলেন, আমার মনে হয় সাঈদ বলেছিলেন, খাযির (আ.) প্রাচীরের ওপর দুহাত দ্বারা স্পর্শ করিলেন এবং প্রাচীর দাঁড়িয়ে গেল। মূসা (আ.) বলিলেন, لَوْ شِئْتَ لاَتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا আপনি ইচ্ছা করলে এ জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। সাঈদ বলেন, أَجْرًا দ্বারা এখানে খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয়েছে। وَكَانَ وَرَاءَهُمْ তাদের সামনে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) এ আয়াতে أَمَامَهُمْ (তাদের সম্মুখে ছিল এক রাজা) পড়েন। সাঈদ ছাড়া অন্য বর্ণনাকারীরা সে রাজার নাম বলেছেন “হুদাদ ইবনু বুদাদ” আর হত্যাকৃত বালকটির নাম ছিল “জাইসুর। সে রাজা প্রত্যেকটি (ভাল) নৌকা জোর করে ছিনিয়ে নিত। খিযির (আ.)-এর নৌকা ছিদ্র করার উদ্দেশ্য ছিল, (সে অত্যাচারী রাজা) ত্র“টিযুক্ত নৌকা দেখলে তা ছিনিয়ে নেবে না। তারপর যখন অতিক্রম করে গেল, তখন তাদের নৌকা মেরামত করে নিল এবং তা ব্যবহার উপযোগী করিল। কেউ বলে, নৌকার ছিদ্রটা মেরামত করেছিল সীসা গলিয়ে, আবার কেউ বলে, আলকাত্রা মিলিয়ে নৌকা মেরামত করছিল। “তার পিতা-মাতা ছিল মুমিন।” আর সে বালকটি ছিল কাফের। আমি শংকা করলাম যে, সে অবাধ্য আচরণ ও কুফরী করে তাদের জ্বালাতন করিবে। অর্থাৎ তারা তার প্রতি মুহাব্বতের কারণে তার দ্বীনের অনুসারী হয়ে যাবে। “এরপর আমি চাইলাম যে, তাদের প্রতিপালক যেন তাদেরকে তার বদলে এক সন্তান দান করেন, যে হইবে অধিক পবিত্র ও ভক্তি শ্রদ্ধায় নিকটতর।” খাযির (আ.) যে বালকটিকে হত্যা করেছিলেন সে বালকটির চেয়ে পরবর্তী বালকটির প্রতি তার পিতামাতা অধিক স্নেহশীল ও দয়াশীল হইবেন। (ইবনু জুরাইজ বলেন) সাঈদ ব্যতীত অন্য সকল বর্ণনাকারী বলেছেন যে, এর অর্থ হল, সে বালকটির পরিবর্তে আল্লাহ তাদের একটি কন্যা সন্তান দান করেন। দাউদ ইবনু আবু আসিম বলেন, একাধিক বর্ণনাকারী থেকে উল্লেখ করিয়াছেন, সন্তানটি ছিল কন্যা। [৭৪] (আ.প্র. ৪৩৬৫, ই.ফা. ৪৩৬৭)
[১] অর্থাৎ তিনি বলেননি যে, এ ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
৬৫/১৮/৪.অধ্যায়ঃ
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ اٰتِنَا غَدَآءَنَا ز لَقَدْ لَقِيْنَا مِنْ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا – قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَآ إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّيْ نَسِيْتُ الْحُوْتَ} إِلَى قَوْلِهِ {عَجَبًا}
অতঃপর যখন তারা উভয়ে সে স্থানটি অতিক্রম করে সামনে গেলেন, তখন মূসা তার সঙ্গীকে বললেনঃ আমাদের নাশতা আন, এ সফরে আমরা অবশ্যই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সঙ্গী বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন প্রস্তর খন্ডের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। এ কথা আপনাকে বলিতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। আর মাছটি সাগরের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে তার পথ ধরে চলে গেছে। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৬২-৬৩)
{صُنْعًا} عَمَلًا {حِوَلًا} تَحَوُّلًا {قَالَ ذٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ – فَارْتَدَّا عَلٰٓى اٰثَارِهِمَا قَصَصًا}{إِمْرًا}{وَنُكْرًا} دَاهِيَةً {يَنْقَضَّ} يَنْقَاضُ كَمَا تَنْقَاضُ السِّنُّ {لَتَخِذْتَ} وَاتَّخَذْتَ وَاحِدٌ {رُحْمًا} مِنْ الرُّحْمِ وَهِيَ أَشَدُّ مُبَالَغَةً مِنْ الرَّحْمَةِ وَنَظُنُّ أَنَّهُ مِنْ الرَّحِيْمِ وَتُدْعَى مَكَّةُ أُمَّ رُحْمٍ أَيْ الرَّحْمَةُ تَنْزِلُ بِهَا.
صُنْعًا কাজ حِوَلًا ঘুরে যাওয়া, পরিবর্তন হওয়া। قَالَ ذٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ ق صلـﮯ فَارْتَدَّا عَلٰٓى اٰثَارِهِمَا قَصَصًا মূসা (আঃ) বলিলেন- এ স্থানটিই তো আমরা খুঁজছিলাম। তারপর তারা উভয়ে নিজেদের পদচিহ্ন লক্ষ্য করে পেছনের দিকে ফিরে চললেন। (সুরা কাহাফ ১৮/৬৪)
إِمْرًا ও نُكْرًا উভয়ের একই অর্থ, অন্যায় কাজ يَنْقَضَّ শব্দের অর্থ-নিষ্পত্তি হইবে। اتَّخَذْتَ-لَتَخِذْتَ উভয়ের একই অর্থ। رُحْمًا শব্দটি رَحَمِ থেকে গঠিত। অত্যধিক দয়া ও করুণা। কারও মতে, এটা رَحِيْمِ থেকে গঠিত। মক্কা্কে বলা হয় أُمَّرُحْمِ কারণ এখানে রাহমাত অবতীর্ণ হয়।
৪৭২৭
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইব্নু আব্বাস (রাদি.)-কে বললাম, নওফূর বাক্কালীর ধারণা, বানী ইসরাঈলের মূসা আর খাযির (আ.)-এর সাথী মূসা একই ব্যক্তি নয়। এ কথা শুনে ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর শত্রু মিথ্যা বলেছে। উবাই ইবনু কাব রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে আমাকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, মূসা (আ.) বানী ইসরাঈলের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, আমি। আল্লাহ তাহাঁর এ কথায় অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা, তিনি এ কথাটি আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করেননি। আল্লাহ তাহাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করে বলিলেন, (হে মূসা!) দু সমুদ্রের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা আছে, সে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আ.) বলিলেন, হে রব! আমি তাহাঁর কাছে কীভাবে যেতে পারি? আল্লাহ বলিলেন, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওয়ানা হও। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই তার অনুসরণ করিবে। মূসা (আ.) রওয়ানা হলেন এবং তার সঙ্গে ছিল তাহাঁর খাদেম ইউশা ইবনু নূন। তারা মাছ সঙ্গে নিলেন। তারা চলতে চলতে সমুদ্রের পাড়ে একটি বিরাট শিলাখণ্ডের কাছে পৌঁছে গেলেন। সেখানে তারা বিশ্রামের জন্য থামলেন। বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আ.) শিলাখণ্ডের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। সুফ্ইয়ান বলেন, আমর ইবনু দীনার ব্যতীত সকল বর্ণনাকারী বলেছেন, শিলাখণ্ডটির তলদেশে একটি ঝরণা ছিল, তাঁকে হায়াত বলা হত। কেননা, যে মৃতের ওপর তার পানি পতিত হয়, সে অমনি জীবিত হয়ে ওঠে। সে মাছটির ওপরও ঐ ঝরণার পানি পড়ল এবং সঙ্গে সঙ্গে সে লাফিয়ে উঠল। তারপর মাছটি বের হয়ে সমুদ্রে ঢুকে গেল। এরপরে মূসা (আ.) যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। মূসা তাহাঁর খাদেমকে বলিলেন, আমাদের নাস্তা আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, যে স্থান সম্পর্কে তাঁকে বলা হয়েছিল সে স্থান অতিক্রম করার পর থেকেই তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন। তাহাঁর খাদেম ইউশা ইবনু নূন তাঁকে বলিলেন, “আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তাঁরা নিজেদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে আসলেন। তারা সমুদ্রে মাছটির চলে যাওয়ার জায়গায় সুড়ঙ্গের মত দেখিতে পেলেন, যা মূসা (আ.)-এর সাথী যুবককে বিস্মিত করে দিল। যখন তাঁরা শিলাখণ্ডের কাছে পৌঁছলেন, সেখানে এ ব্যক্তিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় দেখিতে পেলেন। মূসা (আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি বলিলেন, তোমাদের এলাকায় সালাম কীভাবে এল? মূসা (আ.) বলিলেন, আমি মূসা। তিনি [খাযির (আ.)] বলিলেন, বানী ইসরাঈলের মূসা (আ.)? মূসা (আ.) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তারপর বলিলেন, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন- এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি? খাযির (আ.) বলিলেন, হে মূসা! তুমি আল্লাহ থেকে যে জ্ঞান পেয়েছ, তা আমি জানি, না। আর আমি আল্লাহর থেকে যে ইলম প্রাপ্ত হয়েছি তাও তুমি জান না। মূসা (আ.) বলিলেন, আমি আপনার অনুসরণ করব। খাযির (আ.) বলিলেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করিবে না, যতক্ষণ না আমি সে বিষয়ে তোমাকে কিছু বলি। তারপর তাঁরা সমুদ্রের তীর দিয়ে চলতে লাগলেন। একটি নৌকা তাঁদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, নৌকার লোকেরা খাযির (আ.)-কে দেখে চিনতে পারল। তারা বিনা পারিশ্রমিকে তাঁদের নৌকায় উঠিয়ে নিল। তাঁরা নৌকায় উঠলেন। এ সময় একটি চড়–ই পাখি এসে নৌকার অগ্রভাগে বসলো। পাখিটি সমুদ্রে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। খাযির (আ.) মূসা (আ.)-কে বলিলেন, তোমার, আমার ও সৃষ্টিজগতের জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় অতখানি, যতখানি এ চড়–ই পাখি তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আ.) স্থান পরিবর্তন করেননি। খাযির (আ.) অগ্রসর হইতে চাইলেন। এমন সময় খাযির (আ.) নৌকা ছিদ্র করে দিলেন। তখন মূসা (আ.) তাঁকে বলিলেন, এরা আমাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে তাদের নৌকায় নিয়ে এল আর আপনি আরোহীদের ডুবানোর জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন। আপনি তো এক অন্যায় কাজ করিয়াছেন। তারপর তাঁরা আবার চলতে লাগলেন এবং দেখিতে পেলেন যে, একটি বালক কতকগুলো বালকের সঙ্গে খেলা করছে। খাযির (আ.) সে বালকটির শিরোেদ করে দিলেন। মূসা (আ.) তাঁকে বলিলেন, আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন জীবনের বদলা ব্যতীতই? আপনি তো এক অন্যায় কাজ করে বসলেন। তিনি বলিলেন, আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করিতে পারবে না? মূসা (আ.) বলিলেন, এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আমার ওযরের চূড়ান্ত হয়েছে। তারপর তাঁরা দুজনে চলতে লাগলেন। তাঁরা এক জনবসতির কাছে পৌঁছলেন এবং তাদের কাছে খাদ্য চাইলেন, তারা তাদের আতিথ্য অস্বীকার করিল। তারপর সেখানে তাঁরা পতনোদ্যত প্রাচীরটি সোজা করে দিলেন। মূসা (আ.) খাযির (আ.)-কে বলিলেন, আমরা যখন এ জনবসতিতে প্রবেশ করছিলাম, তখন তার অধিবাসীরা আমাদের আতিথেয়তা করেনি এবং আমাদের খেতে দেয়নি। এ জন্য আপনি ইচ্ছা করলে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। খাযির (আ.) বলিলেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। যে ব্যাপারে তুমি ধৈর্য ধরতে পারনি আমি তার রহস্য ব্যাখ্যা করছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, মূসা (আ.) যদি আর একটু ধৈর্য ধরতেন তবে আমরা তাদের দুজনের ঘটনা সম্পর্কে আরও জানতে পারতাম। সাঈদ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) وَرَأَهُمْ مَلِكُ এর স্থানে اَمَا مَهُمْ مَلُكٌ পড়তেন। অর্থ “তাদের (যাত্রাপথের) সম্মুখে ছিল এক রাজা, যে জোর করে সকল ভাল নৌকা ছিনিয়ে নিত। আর বালকটি ছিল কাফের।” [৭৪] (আ.প্র. ৪৩৬৬, ই.ফা. ৪৩৬৮)
৬৫/১৮/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আপনি বলে দিনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের পরিচয় দেব যারা আমালের দিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত? (সুরা কাহাফ ১৮/১০৩)
৪৭২৮
মুসআব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً এ আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা হল “হারূরী” গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলিলেন, না, তারা হচ্ছে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান। কেননা, ইয়াহূদীরা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল এবং খ্রিস্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করত এবং বলত, সেখানে কোন খাদ্য-পানীয় নেই। আর “হারূরী” হল তারা, যারা আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করার পরও তা ভঙ্গ করেছিল। সাদ তাদের বলিতেন ফাসিক। (আ.প্র. ৪৩৬৭, ই.ফা. ৪৩৬৯)
[১] সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস। [2] কুফার নিকট একটি গ্রামের নাম। যেখান থেকে খারিজী সম্প্রদায়ের আন্দোলন শুরু হয়।
৬৫/১৮/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তারা এমন লোক, যারা অস্বীকার করছে স্বীয় রবের আয়াত সমূহকে এবং তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাতকে। ফলে তাদের যাবতীয় আমাল নষ্ট হয়েছে। (সুরা কাহাফ ১৮/১০৫)
৪৭২৯
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন একজন খুব মোটা ব্যক্তি আসবে; কিন্তু সে আল্লাহর কাছে মশার পাখার চেয়ে ক্ষুদ্র হইবে। তারপর তিনি বলেন, পাঠ করো, “ক্বিয়ামাত দিবসে তাদের কাজের কোন গুরুত্ব দিব না। ইয়াহইয়াহ ইবনু বুকায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। [মুসলিম ৫০/হাদীস ২৭৮৫] (আ.প্র. ৪৩৬৮, ই.ফা. ৪৩৭০)
[১] পুণ্য মনে করে তারা যে সকল কর্ম করেছে, সেগুলো কোন কাজে আসবে না।
Leave a Reply