সুরা ইনসান এর তাফসীর
সুরা ইনসান এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
৬৫/৭৭/১.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
(76) سُوْرَةُ الإنسان [هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ]
সুরা (৭৬) : ইনসান (আদ্-দাহর) কালের প্রবাহে মানুষের উপর এমন এক সময় এসেছিল কি?
يُقَالُ مَعْنَاهُ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ وَهَلْ تَكُوْنُ جَحْدًا وَتَكُوْنُ خَبَرًا وَهَذَا مِنَ الْخَبَرِ يَقُوْلُ كَانَ شَيْئًا فَلَمْ يَكُنْ مَذْكُوْرًا وَذَلِكَ مِنْ حِيْنِ خَلَقَهُ مِنْ طِيْنٍ إِلَى أَنْ يُنْفَخَ فِيْهِ الرُّوْحُ {أَمْشَاجٍ} الْأَخْلَاطُ مَاءُ الْمَرْأَةِ وَمَاءُ الرَّجُلِ الدَّمُ وَالْعَلَقَةُ وَيُقَالُ إِذَا خُلِطَ مَشِيْجٌ كَقَوْلِكَ خَلِيْطٌ وَمَمْشُوْجٌ مِثْلُ مَخْلُوْطٍ وَيُقَالُ {سَلَاسِلًا وَأَغْلَالًا} وَلَمْ يُجْرِ بَعْضُهُمْ {مُسْتَطِيْرًا} مُمْتَدًّا الْبَلَاءُ {وَالْقَمْطَرِيْرُ} الشَّدِيْدُ يُقَالُ يَوْمٌ قَمْطَرِيْرٌ وَيَوْمٌ قُمَاطِرٌ وَالْعَبُوْسُ وَالْقَمْطَرِيْرُ وَالْقُمَاطِرُ وَالْعَصِيْبُ أَشَدُّ مَا يَكُوْنُ مِنَ الْأَيَّامِ فِي الْبَلَاءِ وَقَالَ الْحَسَنُ {النُّضْرَةُ} فِي الْوَجْهِ وَالسُّرُوْرُ فِي الْقَلْبِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {الأَرَآئِكِ} السُّرُرُ وَقَالَ الْبَرَاءُ {وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا} يَقْطِفُوْنَ كَيْفَ شَاءُوْا وَقَالَ مَعْمَرٌ {أَسْرَهُمْ} شِدَّةُ الْخَلْقِ وَكُلُّ شَيْءٍ شَدَدْتَهُ مِنْ قَتَبٍ وَغَبِيْطٍ فَهُوَ مَأْسُوْرٌ.
অর্থাৎ কালের প্রবাহে মানুষের উপর এক সময় এসেছিল। هَلْ শব্দটি কখনো নেতিবাচক, আবার কখনো ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে এখানে অবহিতকরণ তথা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, এক সময় মানুষের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন বস্তু ছিল না। আর ঐ সময়টা হল মাটি থেকে সৃষ্টি করা হইতে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা পর্যন্ত। أَمْشَاجٍ সংমিশ্রণ। অর্থাৎ মাতৃগর্ভে পুরুষ ও মহিলার বীর্যের সংমিশ্রণে রক্ত এবং পরে জমাট বাঁধা রক্ত সৃষ্টি হওয়াকে أَمْشَاجٍ বলা হয়েছে। এক বস্তুর অপর বস্তুর সঙ্গে মিশ্রিত হলে তাকে مَشِيْجٌ বলে। তাকে خَلِيْطٌ ও বলা হয়। আর مَمْشُوْجٌ ও مَخْلُوْطٍ এর অর্থ একই। কেউ কেউ سَلَاسِلًا وَأَغْلَالًا পড়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কেউ এভাবে পড়াকে জায়িয মনে করেন না। مُسْتَطِيْرًا দীর্ঘস্থায়ী বিপদ। الْقَمْطَرِيْرُ ভয়ংকর ও কঠিন। সুতরাং يَوْمٌ قَمْطَرِيْرٌ এবং يَوْمٌ قُمَاطِرٌ উভয়ই ব্যবহৃত হয়। الْعَبُوْسُ، الْقَمْطَرِيْرُ، الْقُمَاطِرُ، এবং الْعَصِيْبُ বিপদের সবচেয়ে কঠিনতম দিনকে বলা হয়। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, النُّضْرَةُ চেহারায় সজীবতা ও হৃদয়ে আনন্দ। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, الْأَرَآئِكِ খাট-পালঙ্ক। আর বারা (রাদি.) বলেন, وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا তাদের ইচ্ছেমাফিক ফল পাড়বে। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, أَسْرَهُمْ সুদৃঢ় গঠন। উটের গদির সঙ্গে শক্ত করে যে জিনিস বাঁধা থাকে তাকে مَأْسُوْرٌ বলা হয় ।
(77) سُوْرَةُ وَالْمُرْسَلَاتِ
সুরা (৭৭) : আল-মুরসালাত
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {جِمَالَاتٌ} قَالَ مُجَاهِدٌ حِبَالٌ {ارْكَعُوْا} صَلُّوْا لَا يَرْكَعُوْنَ لَا يُصَلُّوْنَ وَسُئِلَ ابْنُ عَبَّاسٍ عَنْ قَوْلِهِ : {لَايَنْطِقُوْنَ}{وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ}{الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰٓىأَفْوَاهِهِمْ} فَقَالَ إِنَّهُ ذُوْ أَلْوَانٍ مَرَّةً يَنْطِقُوْنَ وَمَرَّةً يُخْتَمُ عَلَيْهِمْ
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, جِمَالَاتٌ উটের সারি। ارْكَعُوْا সালাত আদায় কর। لَا يَرْكَعُوْنَ তারা সালাত আদায় করে না। لَايَنْطِقُوْنَ (তার কথা বলিতে সক্ষম হইবে না), وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ (আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না) এবং الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٓٓى أَفْوَاهِهِمْ (আমি আজ মোহর লাগিয়ে দেব) এ আয়াত সম্বন্ধে ইবনু আববাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামাতের দিন বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের বিভিন্ন অবস্থা ঘটবে। কখনো সে কথা বলিতে পারবে এবং নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, আবার কখনো তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হইবে। তখন সে আর কোন কথা বলিতে পারবে না।
৪৯৩০
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ হল সুরা মুরসলাত। আমরা তাহাঁর মুখে শুনে সেটি শিখছিলাম। তখন একটি সাপ বেরিয়ে এল। আমরা ওদিকে দৌড়ে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের থেকে দ্রুত চলে গিয়ে গর্তে ঢুকে পড়ল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, ওটাও তোমাদের অনিষ্ট হইতে বেঁচে গেল, তোমরা যেন ওটার অনিষ্ট হইতে রক্ষা পেলে। [১৮৩০; মুসলিম ৩৯/৩৭, হাদীস ২২৩৪, আহমাদ ৪৩৫৭] (আ.প্র. ৪৫৬১, ই.ফা. ৪৫৬৫)
৪৯৩১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইসরাঈল সূত্রে আসওয়াদ ইবনু আমির পূর্বের হাদীসটির অনুসরণ করিয়াছেন। (অন্য সানাদে) হাফ্স, আবু মুআবীয়াহ এবং সুলাইমান ইবনু কারম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (অপর এক সানাদে) ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে ঠিক এমনি বর্ণনা করিয়াছেন। [১৮৩০] (ই.ফা. ৪৫৬৬)
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, এক গুহার মধ্যে আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ হল সুরা ওয়াল মুরসলাত। আমরা তাহাঁর মুখ থেকে সেটা গ্রহণ করছিলাম। এ সুরার তিলাওয়াতে তখনও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মুখ সিক্ত ছিঁঁল, হঠাৎ একটি সাপ বেরিয়ে এল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, “তোমরা ওটাকে মেরে ফেল।” আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, আমরা সেদিকে দৌড়ে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের আগে চলে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, ওটা তোমাদের অনিষ্ট হইতে বেঁচে গেল যেমনি তোমরা এর অনিষ্ট হইতে বেঁচে গেলে। (আ.প্র. ৪৫৬২, ই.ফা. ৪৫৬৭)
৬৫/৭৭/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যা অট্টালিকা সদৃশ বড় বড় স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করিবে। (সুরা আল-মুরসলাত ৭৭/৩২)
৪৯৩২
আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ঐ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের খণ্ড জোগাড় করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রাখতাম। এটাকেই আমরা বলতাম الْقَصَرَ। [৪৯৩৩] (আ.প্র. ৪৫৬৩, ই.ফা. ৪৫৬৮)
৬৫/৭৭/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যেন তা পীত বর্ণের বড় বড় উট। (সুরা আল-মুরসলাত ৭৭/৩৩)
৪৯৩৩
আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আমরা তিন গজ বা তার চেয়ে অধিক লম্বা কাষ্ঠ জড়ো করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রাখতাম। এটাকেই আমরা বলতাম الْقَصَرَ। جِمَالاَتٌ صُفْرٌ জাহাজের রশি, যা জমা করে রাখা হত। এমনকি তা মাঝারি গড়নের মানুষের সমান উঁচু হয়ে যেত। [৪৯৩২] (আ.প্র. ৪৫৬৪, ই.ফা. ৪৫৬৯)
৬৫/৭৭/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এটা এমন দিন, যে দিন তারা কথা বলিতে পারবে না। (সুরা আল-মুরসলাত ৭৭/৩৫)
৪৯৩৪
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক গুহায় আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ হল সুরা ওয়াল মুরসলাত। তিনি তা তিলাওয়াত করছিলেন, আর আমি তাহাঁর মুখ থেকে তা শিখছিলাম। তিলাওয়াতে তখনো তাহাঁর মুখ সিক্ত ছিল। হঠাৎ আমাদের সামনে একটি সাপ বেরিয়ে এলো। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওটাকে মেরে ফেল। আমরা ওদিকে দৌড়িয়ে গেলাম। কিন্তু সাপটি চলে গেল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওটা তোমাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে গেল তোমরা যেমন তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেলে। উমার ইবনু হাফস্ বলেন, এ হাদীসটি আমি আমার পিতার নিকট হইতে শুনে মুখস্থ করেছি। গুহাটি মিনায় অবস্থিত বলে উল্লেখ আছে। [১৮৩০] (আ.প্র. ৪৫৬৫, ই.ফা. ৪৫৭০)
Leave a Reply